#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১৯
🍁🍁🍁
সকাল ১১.৩৬ বাজে হসপিটালের বেডে শুয়ে কুয়াশা, কুশ আর শান বকবক করছে। তুষার বসে ফোন টিপছে। মেঘ ঔষধের ডোজে ঘুমিয়ে আছে। মেঘা ঘুরঘুর করছে একবার এরুম তো একবার ওরুম বসতে বলেও বসছে না। সকালে একবার তুষার ১ ঘন্টার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলো সাওয়ার নিয়ে আবার এসেছে এককথায় কুয়াশাকে একা ছাড়তে নারাজ।
আজ সকাল সকাল তুষারের ফেন্ডরা কুয়াশার ফেন্ডরা এসে দেখা করে গেছে। পাখি ওদের জন্য রান্না করে আনতে গেছে কুশ আর শানকেও নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু ওরা যায় নি। কুশান অফিসে জরুরি মিটিং থাকায় অনিচ্ছা থাকার পরও যেতে হলো।
-সোনা বাবাইরা কি কাল ভয় পাইছিলে (কুয়াশা)
-উহুম আমলা তো সাহসী (কুশ)
-তাই না (কুয়াশা)
-হ্যাঁ আমলা তোমাল মতো ভিভিভি (শান)
-ভীতু (তুষার)
-হ্যাঁ ওটা না (শান)
-ঠিক ঠিক (মেঘা)
-কি বললি আমি ভীতু দাঁড়া আজ তোদের (কুয়াশা)
কুয়াশা ওদের ধরতে গেলেই ওরা বেড থেকে উঠে মেঘার সাথে নিয়ে কেবিন থেকে কুয়াশা ব্যাথা পেয়ে ‘আহ’ করে মৃদু আওয়াজ করলো। তুষার সেটা দেখে বলল
-ব্যাথা পাইছো খুব ভালো হইছে (তুষার)
-কিহ? আমি ব্যাথা পাইছি বলে আপনি খুশি হচ্ছেন (কুয়াশা)
-তা না তো কি করতাম কান্না করতাম হাহ ঠেকা পড়ে নাই সারাদিন ক্যাঙ্গারুর মতো লাফাবা এটাই ঠিক আছে (তুষার)
-কিহ? আমি ক্যাঙ্গারু (কুয়াশা)
-গুড তাহলে তুমি শিকার করলে তুমি ক্যাঙ্গারু (তুষার)
কুয়াশা বোকা বনে গেলো তুষার ওকে কথার জালে ফাঁসিয়েছে বুঝতে পেরে বলল
-এটা মটেও ঠিক না (কুয়াশা)
আর কিছু বলার আগে কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে আসলো তুতুলের মা (তিশা)। উনি হাসিমুখে এসে কুয়াশার পাশে দাঁড়ালো। তুষারের মুখের রংটা মুহুর্তেই পাল্টে গেলো
-কেমন আছো আন্টি (কুয়াশা)
-ভালো আছি তুমি কেমন আছো মামনি (তিশা)
-আমিও ভালো আছি আন্টি তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো বসো আন্টি (কুয়াশা)
তিশা বসে বলল
-এখনো আমাকে আন্টি ডাকবি (তিশা)
কুয়াশা কিছু বুঝতে না পেরে বলল
-মানে আন্টি ছাড়া কি ডাক…(কুয়াশা)
কুয়াশাকে না বলতে দিয়ে তুষার বলল
-আপনি এখন আসতে পারেন কুয়াশার এখন রেস্টের প্রয়োজন (তুষার)
-না না আন্টি থাকুক আন্টির সাথে কতদিন পর দেখা হলো আমার রেস্টের দরকার নেই (কুয়াশা)
-জাস্ট সাট আপ। তোমার এতো কথা বলতে বলে কে? একদম চুপ থাকো একটা কথাও বলবা না আর আপনি এখন আসতে পারেন (তুষার)
তুষারের ধমকে কুয়াশা ভয় পেয়ে গেলো
-তুষার কুয়াশার সাথে এমন বিহেভ করছো কেনো ও বাচ্চা মেয়ে তুমি… (তিশা)
-আমি ওর সাথে কেমন বিহেভ করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার আমাদের পার্সোনাল মেটারে আপনি কথা না বললে খুশি হবো (তুষার)
-আপনি আন্টির সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন কেনো (কুয়াশা)
-আমার এখন তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে কার সাথে কেমন ভাবে কথা বলবো (তুষার)
-এখানে চিল্লাছ কেনো এটা হসপিটাল তোমার বাড়ি না আর আমার ওপরের রাগ ওর ওপরে ঝাড়ছো কেনো (তিশা)
ওদের চিল্লানিতে তুতুল,মেঘা,কুশ,শান আসলো
-কি হইছে (তুতুল)
-কিছু হইনি (তিশা)
-কিছু হইনি মানে এই তোর মাকে এখান থেকে নিয়ে যা জাস্ট নিতে পারছি না আমি (তুষার)
-আমার মা মানে তোর মা না? সম্মান দিয়ে কথা বল ভাইয়া (তুতুল)
-না উনি আমার মা না ইনফেক্ট কেউ-ই না (তুষার)
তিশা ছলছল চোখে তুষারের দিকে তাকালো। তুষার পিছন ফিরে দাঁড়ালো তুষারের চোখেরও পানি সবার থেকে আড়াল করে মুছে নিলো। তিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
-ভাইয়া তুই সবসময় এমন করিস কেনো? জানিস মম কতটা কষ্ট পাই? জানবি কি করে কখনো বোঝার চেষ্টাই করিস নি (তুতুল)
কথাটা বলে তুতুলও বেরিয়ে গেলো। এখন রুমটাতে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে মেঘা, কুয়াশা, কুশ, শান ওরা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওরা কিছুই বুঝলো না। কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ওরা তিনজন চলে গেলো। কুয়াশা বলল
-উনি আপনার মা? (কুয়াশা)
তুষার কোনো উত্তর দিলো না।
-এমন করলেন কেনো উনি কতটা কষ্ট পেলো (কুয়াশা)
তুষার এবারও কিছু বললো না।
-আমার মাম্মা পাপা থাকলে আমি কখনোই এমন করতাম না আমার মাম্মা পাপা থাকলে কোথাও যেতে দিতাম না সবসময় জড়িয়ে ধরে থাকতাম যেনো কেউ না নিয়ে যেতে পারে। যার আছে সে অবহেলা করে আর যার নাই সে ফিরে পেতে চাই। ঔ যে কথায় আছে না ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্জাদা দেই না’ হারিয়ে গেলে কদর বোঝা যায় ঠিক অমন টাই। ইস যদি ফিরে পেতাম একবার জাস্ট একবার সব ভুল গুলো শুধরে নিয়ে নতুন করে শুরু করতাম (কুয়াশা)
কুয়াশা আনমনে বলতে বলতে চোখ দিয়ে টুপটাপ বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে। তুষারেরও বুকের ভিতর ধাক্কা লাগলো কুয়াশার কথা গুলো। আবারও নিরবতা ঘিরে ধরে আছে ওদের মাঝে। তুষার কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর পাখি আসলো কুয়াশাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে বলল
-কি রে কি হইছে শরীর খারাপ করছে নাকি (পাখি)
-না ভাবিপু (মলিন হেসে বলল কুয়াশা)
-তাহলে মন খারাপ কেনো (পাখি)
-কই না তো আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো ঘুম পাচ্ছে (কুয়াশা)
-কিছু খাবি (পাখি)
-না ঘুম থেকে উঠে খাবো (কুয়াশা)
-আচ্ছা শুয়ে পর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি (পাখি)
কুয়াশা আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেলো। তুষার এসে দেখলো কুয়াশা ঘুমিয়ে গেছে।
-তুষার তোমরা কি ঝগড়া করছো (পাখি)
-কই না তো ভাবিপু কেনো হঠাৎ এ প্রশ্ন (তুষার)
-না আসলে আমি এসে দেখি ও মন খারাপ করে বসে আছে তাই শুনলাম আচ্ছা ওকে বেশি প্রেশার দিও না মাথায় ব্যাথা পাইছে একে তে (পাখি)
-হ্যাঁ বুঝতে পারছি (তুষার)
.
কুয়াশার ঘুম ভাঙ্গলো ৩.৪০শে। কেউ কুয়াশাকে ডিস্টার্ব করেনি। কুয়াশা চোখ খুলে দেখলো কুশান ওর পাশে বসে আছে। কুয়াশা হাসলো কুশান আদুরে স্বরে বলল
-কেমন আছিস বাবুইপাখিটা (কুশান)
-ভালো আছি ভাইয়া। ভাইয়া আমি ভাইয়াকে দেখবো জানো আমাকে কেউ যেতে দেই নি (কুয়াশা)
-আচ্ছা যাস কিছু তো খাস নাই খেয়ে নে তারপর নিয়ে যাবো (কুশান)
-হুম যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি (পাখি)
-আচ্ছা (কুয়াশা)
কুয়াশা ফ্রেশ হতে গেলো তুষারকে কেবিনে না পেয়ে মন খারাপ লাগলো একটু ঘুমারও আগে চলে গেছে এখনো আসেনি ভেবে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে মেঘের কেবিনে গেলো তুষারকে মেঘের কেবিনে দেখে কুয়াশার মুখে হাসি ফুটলো। মেঘ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো দরজা খোলার শব্দে তাকালো কুয়াশাকে দেখে বলল
-বাহ বাহ এক রুগী আরেক রুগীকে দেখতে আসছে এই প্রথম দেখলাম দেখে ভালোই লাগলো (মেঘ)
-তুমি এই অবস্থায় ও মজা করছো (কুয়াশা)
-শুধু মজা না প্রেমটাও করছে (মেঘা)
-পাম কি? (শান)
শানের কথা শুনে হেসে দিলো সবাই।
-বড় হলে বুঝা আবার করবেও (মেঘ)
-তুই আমার ছেলেদের আবার উল্টো পাল্টা শিখাচ্ছিস (কুশান)
-এটা ভালো জিনিস ভাইয়া নট উল্টো পাল্টা (মেঘা)
একটা খুশি পরিবারের একজন ভালো না থাকলে কেউই আর তখন ভালো থাকতে পারে না। আবার এরা একটু সুখকে অনেক বড় করে দেখে। সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের কথা চিন্তা করতেই ভুলে যায় তারা। পরিবার জিনিস টাই এমন সুখ দুঃখ কষ্ট গুলো ভাগ করে নিয়ে একসাথে বাঁচতে শেখাই। খারাপ দুঃস্বপ্ন গুলো ভুলে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করে।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।]