#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_২০
🍁🍁🍁
দেখতে দেখতে ১টা মাস কেটে গেলো। কুয়াশা আর মেঘ অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তুষার অফিসে জয়েন্ট করছে। মাঝে মাঝে রাতে কুয়াশার কাছে থাকে আর যেদিন থাকে না সেদিন সারারাত ভিডিও কলে থাকে ওদের দুজনের সম্পর্ক আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু সেদিনের পর তিশাকে নিয়ে কথা বলতে চাইলে তুষার এড়িয়ে গেছে বারং বার। কুয়াশা এই একমাস কলেজে যাই নি কিন্তু মেঘা গিয়েছে রিদ মেঘাকে অনেক চেষ্টা করেও মানাতে পারেনি। কিন্তু মেঘা মনে মনে রিদকে ভালোবেসে ফেলছে কিন্তু প্রকাশ করছে না। তন্নি মেঘকে ভালোবাসতে শুরু করছিলো তুতুল আর মেঘের রিলেশন আছে এ কথা শুনে একটু কষ্ট পাইছিলো কিন্তু এখন মানিয়ে নিয়েছে। বার বার নিজ মনেই বলছে সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাই না আর যারা পাই তারা ভাগবতী আর যারা পাই না তাদের জন্য হয়তো বা অন্য ভালোবাসার মানুষ পাঠিয়ে দিবে
রাত ১১:১৫ বাজে তুষার ল্যাপটপে কাজ করছে কুয়াশা বেডে গালে হাত দিয়ে বসে ওর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। তুষার কুয়াশা কোনো সারা শব্দ না পেয়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে দেখলো কুয়াশা রোবটের মতো বসে আছে। তুষার ল্যাপটপ রেখে কুয়াশার মেডিসিন নিয়ে কুয়াশার সামনে ধরলো তাও কুয়াশার ধ্যান নে। তুষার চোখ ছোট ছোট করে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কুয়াশার সামনে হাত নাড়ালো কুয়াশা লাফিয়ে বেডের ওপর উঠে দাঁড়ালো
-আবার ক্যাঙ্গারুর মতো লাফাচ্ছ (তুষার)
-এই আপনি একদম আমাকে এসব বলে ডাকবেন না আর এভাবে মুখের সামনে হাত নাড়ালে যে কেউই ভয় পাবে (কুয়াশা)
-তুমি যে ভীতু সেটা সব সময় প্রমান করার কোনো দরকার নাই পাবলিক সেটা জানে (তুষার)
-আচ্ছা ওসব বাদ দেন আপনার কাছে একটা কথা শুনবো (কুয়াশা)
-না এই নাও মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে যাও (তুষার)
তুষার আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। কুয়াশা মুখ ফুলিয়ে ঔষধ টা খেয়ে নিলো। কুয়াশা আস্তে আস্তে তুষারের পাশে গিয়ে বসলো তুষার একবার আড় চোখে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। তুষার জানে কুয়াশা এখন তিশা আর তুহিনের ব্যাপারে জানতে চাইবে। কিন্তু তুষার ওসব কথা বলে বা শুনতে চাই না বিরক্ত লাগে ওর তাই কুয়াশাকে বার বার এড়িয়ে যায়।
-বলেন প্লিজ (কুয়াশা)
-আমি তোমাকে ঘুমাইতে বলছি এসব বাদ দিয়ে ঘুমাও গিয়ে না হলে মাথা ব্যাথা করবে। (তুষার)
-আপনি এমন করেন কেনো সবসময় ভালো লাগে না একটু বললে কি হয় (কুয়াশা)
তুষার কিছু বললো না চুপচাপ বসে নিজের কাজ করছে। কুয়াশা কিছুক্ষণ বসে থেকে বলল
-সরি আপনার পার্সোনাল ম্যাটার নিয়ে জানতে চাওয়ার জন্য (কুয়াশা)
কথাটা মন খারাপ করে বলে গিয়ে বেডের একপাশে শুয়ে পড়লো। কুয়াশার হঠাৎ কান্না পেলো কোনো অজানা কারণ ছাড়ায় নিঃশব্দে কান্না করতে লাগলো। তুষার কুয়াশার কথা শুনে থামকে গেলো। কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থেকে কুয়াশা যে দিকে মুখ করে শুয়ে আছে ঔ দিকে গিয়ে এক টানে কুয়াশাকে বসিয়ে দিলো। কুয়াশা চোখে পানি নিয়ে তুষারে দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তুষার কুয়াশাকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। তুষার বারান্দার সোফায় বসে কুয়াশাকে কোলে বসিয়ে কাধে থুতনি রেখে জড়িয়ে ধরলো। কুয়াশা উঠতে নিলেও পারলো না। তুষার গম্ভীর কণ্ঠে বলল
-একদম নড়াচড়া করবে না যা বলবো মন দিয়ে শুনবে (তুষার)
-না আমি কিছু শুনবো না আপনি আমাকে ছাড়েন এভাবে সাপের মতো পেচিয়ে ধরে রাখছেন কেনো (কুয়াশা)
তুষার নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল
-আমি সাপ তাই (তুষার)
কুয়াশা অবাক হয়ে বলল
-সত্যি (কুয়াশা)
তুষার দাঁত কটমট করে বলল
-আর একটা যদি কথা বলো তোমাকে বারান্দা থেকে ফেলে দিবো (তুষার)
কুয়াশা তুষারের হাত খামছে ধরলো। তুষার কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-জানো যখন আমার বয়স ১০ বছর আর তুতুলের বয়স ৬ বছর। বাবা-মা প্রায় ঝগড়া করতো প্রায় বলছি কেনো সবসময়ই ঝগড়া করতো! বাবা কেনো মাকে সময় দেই না? কেনো বাসায় থাকে না? কিসের এতো কাজ? সবসময় সন্দেহ করতো বাবা অন্য মেয়েকে পছন্দ করে কিনা সেটা নিয়েও অনেক ঝগড়া করছে। মাকে লুকিয়ে কাঁদতে দেখছি। একদিন বাবা রাত করে বাসায় আসে মা তাতে অনেক রেগে যায় কিন্তু কিছু বলে না চুপচাপ থাকে পরের দিন বাবার শার্টে লিপটিকের দাগ দেখে মা রেগে গিয়ে বাবাকে চড় মারে তুহিন অবাক হয়ে চেয়ে থাকে তিশার দিকে। তুষার আর তুতুল দূরে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।
-তুমি আমাকে মারলে (তুহিন)
-তো তোকে নিয়ে নাচবো (তিশা)
-একদম উল্টো পাল্টা বলবা না আর তুই তোকারি করছো কেনো (তুহিন)
-আমি? আমি? আমি উল্টো পাল্টা বলছি তাহলে এটাকি? কার সাথে রং লিলা করছিস? আমাকে আর ভালো লাগে না তোর তাই না তুই দুটা সন্তানের বাপ হয়ে গেছিস এই বয়সে তুই বাইরে মেয়েদের নিয়ে ছিঃ (তিশা)
তুহিন শার্টার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর বলল
-তিশা তুমি ভুল বুঝছো এটা একটা এক্সিডেন… (তুহিন)
-তুই থাম আর নাটক করতে হবে না কাল রাতে দেরি করে ফিরছিস কিছু বলি নাই কিন্তু আজ বুঝতে পারছি কাল কেনো দেরি করে বাসায় আইছিস আগেই বলে দিতে পারতিস আমাকে আর ভালো লাগছে না তোর জীবনে অন্য কেউ চলে আসছে আমি চলে যেতাম এতো কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না (তিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল)
-তিশা তুমি ভু….(তুহিন)
তুহিন আর কিছু বলার আগে তিশা ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তুহিন ভয় পেয়ে দরজা বারংবার ধাক্কাতে লাগলো কিছুক্ষণ পর তিশা দরজা খুলে বাহিরে এলো। তিশার হাতে ব্যাগ।
-তিশা তুমি ঠিক আছো তো দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমার এমন কারোর সাথে কোনো রিলেশন নেই আমি অফিসের কাজে বিজি ছিলাম বাসায় সময় দিতে পারি নাই প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না এই তোমার হাতে ব্যাগ কেনো তুমি কোথায় যাচ্ছো দেখো আ্…..(তুহিন)
-স্টপ আর একটাও মিথ্যা কথা বলবেন না (তিশা)
তিশা আর কোনো কথা না বলে তুষার আর তুতুলকে নিয়ে যেতে নিলে তুহিন তিশাকে বাধা দিয়ে বলল
-ওদের কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি? তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছো? একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে এতো বড় কাহিনী করার কোনো মানে দেখছি না আমি (তুহিন)
-এটা ছোট ব্যাপার তোর শার্টে অন্য মেয়ের লিপস্টিক কেনো থাকবে? তুই বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা কাল বিয়ে করে এনে বলবি এটা ছোট ব্যাপার! অন্য মেয়ের পেটে তোর বাচ্চা থাকবে সেটাও ছোট ব্যাপার তাই না মিস্টার তুহিন আবরার (তিশা)
তিশার কথা শেষ হতে না হতে তুহিন তিশার গালে ঠাস করে চড় মেরে বলল
-ব্যাস অনেক বলে ফেলছিস তুই যা কোথায় যাবি যা মোট কথা কি জানিস তুই আমার কাছে থাকতে চাইছিস না তাই প্রতিদিন নিত্যনতুন কাহিনী বানাছিস আমার ওপর দোষ দিয়ে চলে যেতে চাইছিস ওকে ফাইন যা কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের কোথাও নিয়ে যেতে পারবি না (তুহিন)
তুহিন তুষার আর তুতুলের হাত ধরে। তিশা ছলছল চোখে রাগি মুখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তিশা তুতুলকে তুহিনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তুষারের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো। তুষার সেদিন অনেক কেঁদে ছিলো তার মায়ের জন্য কিন্তু তার মা ফিরেনি। ভাবেনি তার কথা।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন]