ভালোবাসি বলেই তো পর্ব-২০+২১

0
1359

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২০

জ্ঞান ফিরতেই চোখ পিট পিট করে তাকায় পূর্ণতা । চারপাশের পরিবেশ দেখতে মাথা ঘোরাতে চেষ্টা করতেই ব্যথায় “আহ” করে কুকিয়ে উঠল ।

রুমে উপস্থিত নার্স পূর্ণতাকে বলল ,

– এখন কেমন লাগছে তোমার ?

পূর্ণতা নার্সের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমি হসপিটালে কেন আপু ??

নার্স কি উত্তর দেবে ভেবে না পেয়ে বলল ,

– বাহিরে তোমার পরিবারের লোকজন দাঁড়িয়ে আছে । আমি ডেকে দিচ্ছি ।

এই বলে সে রুমের বাহিরে চলে গেল ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে মনে করতে চেষ্টা করছে কি হয়েছিল ওর সাথে ।

নার্স গিয়ে মিলি রহমান , আধিরা আনজুম আর প্রেনার মা ঈশিতা আলম কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– পেসেন্টের জ্ঞান এসেছে । আপনারা এখন দেখা করতে পারেন ।

মিলি রহমান বসা থেকে উঠে জলদি জলদি ভেতরে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল ,

– পূর্ণ মা !! কেমন আছিস ??

পূর্ণতা ভাবনা থেকে বের হয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দিতে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল মিলি রহমান টলটলে চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ।

আধিরা আনজুম মিলি রহমানকে আস্তে করে কানে কানে বলল ,

– চোখের পানি ফেলিস না ওর সামনে , এমনিতেই ওর উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে । নিজের ইমোশন কে কন্ট্রোল কর ।

মিলি রহমান হালকা মাথা ঝাকালেন ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– কেমন আছিস মা ??

পূর্ণতা আস্তে করে বলল ,

– ভালো । তুমিও আছো দেখছি এখানে ?

আধিরা আনজুম পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ,

– আমাকে তুই পর মনে করিস তাই না ?? এইজন্য ভাবতে পারছিস না যে আমি তোর জন্য হসপিটালে আছি ।

পূর্ণতা নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আপু , আমার বেডটা উচু করে দিন না , আমার শুয়ে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ।

নার্স আরো একজন ওয়ার্ডবয়কে ডেকে পূর্ণতার কথা মতো বেডের মুড ঠিক করে দিয়ে ওকে বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে ওকে ধরে বসিয়ে চলে গেল ।

পূর্ণতা ঈশিতা আলম কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল ,

– আন্টি , কাছে আসতে ভয় পাচ্ছো ??

ঈশিতা আলম চোখের পানি মুছে কাছে এগিয়ে এসে বললেন ,

– ধুর , বোকা ! ভয় পাবো কেন ?? তোকে দেখে বুকটা কষ্টে ফেটে যাবে তাই কাছে আসতে পারছিলাম না ।

– তোমার মেয়ে কোথায় ?? আমাকে তো ভুলেই গিয়েছে তাই না ??
আর আম্মু ভাইয়া কোথায় ?? ভাইয়া ও এলো না ??
আর বাকি সবাই কোথায় ?? আমাকে সবাই ভুলে গিয়েছে তাই না ??

এর‌ই মধ্যে হৈ চৈ শোনা গেল । আধিরা আনজুম রুম থেকে বের হয়ে দেখলেন বাহিরে শাদমান চৌধুরী দাঁড়িয়ে । সাথে আবরন আর জিব্রান‌ও আছে । একটু পেছনে ফাহিম , তাসিন , আয়মান আর প্রেণা । আর একদম পেছনে লাইট , ক্যামেরা , মাইক নিয়ে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে ।
আধিরা আনজুমের বুঝতে বাকি র‌ইল না এরা মিডিয়ার লোক ।

আধিরা আনজুম পথ আটকে বললেন ,

– ঐখানেই দাঁড়াও শাদমান !! আর এক পা-ও এগোবে না । এখন মিডিয়া নিয়ে এখানে এসেছো কোন ধান্দায় ??

আবরন এগিয়ে এসে বলল ,

– আম্মু , ব্যাপারটা ওমন না যেমনটা তুমি ভাবছো ।

আধিরা আনজুম রেগে বললেন ,

– তুই চুপ কর । তোর বাবা এদের নিয়ে এখানে কেন এসেছে ?? চলে যেতে বল নাহলে আমি কিন্তু কিছু করে বসবো !!

জিব্রান এগিয়ে এসে বলল ,

– আন্টি , শাদমান আঙ্কেলকে ভুল বুঝবেন না । আঙ্কেল তো নিজের ভুল শুধরাতে মিডিয়া নিয়ে এসেছে ।

আধিরা আনজুম একটু মাথা ঠান্ডা করে বললেন ,

– মানে ??

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– আমাকে তুমি মাফ করে দিও আধিরা । শাকিলার কথা শুনে আমি আমাদের পরিবারের মাঝে অনেক ফাটল তৈরি করেছি । আমি বুঝি নি যে ও লাই পেয়ে এতোটা নিচে নামবে । আজ আমার লাই পেয়ে ও যতটুকু না নিচে নেমেছে তার চেয়ে বেশি নিচে নেমেছে ওর মেয়ে জল ।
হ্যাঁ , আধিরা , জল‌ই এই সকল সাইবার অপরাধের মূলে ছিল । ওর‌ জন্যই আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে এত বড় শাস্তি পেল । ওর জন্যই আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো । ওর জন্য একটা মেয়ের হাজারো স্বপ্ন ভেঙে গেল ।

আমি এমন একটা মেয়েকে আমার ছেলের জীবনসাথী হিসেবে ঘোষণা করেছিলাম ভাবতেই আমার খারাপ লাগছে । আমাকে পারলে তুমি মাফ করে দিও । আসলে পরিবারে তৃতীয় ব্যক্তির কথা শুনে কখনোই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না । আমার আগে এই ব্যাপারে তোমার সাথে এবং আবরনের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল । আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আধিরা । তুমি আমাকে মাফ করে দিয়ে ঘরে ফিরে চলো । প্লিজ ‌।

আর আমি প্রমিজ করছি তোমার ছেলে যার জন্য আজ এত কিছু করলো তার জীবনের সব কালো দাগ আমি তুলে দেব । এই দায়িত্ব আমার । তুমি চিন্তা করবে না ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– কিভাবে তুলবে তুমি পূর্ণতার জীবনের কালো দাগ ??

– হয়তো আমি ওর কষ্ট গুলো মুছতে পারবো না কিন্তু আমি ওর ভবিষ্যত জীবনগুলোতে অন্য কোনো দাগ লাগতে দেব না এই বিষয়ে । কারন ও বরাবর‌ই নির্দোষ । এটা প্রমাণ করতে আমি মিডিয়া সাথে নিয়ে এসেছি । আমাদের সকলের কথা এবং পূর্ণতার সকল কথা ওরা লাইভ ভিডিও তে প্রচার করবে যেন সবাই সঠিকটা জানতে পারে । আর আসল অপরাধীর বিষয়টা ইতোমধ্যে নেটে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে । আর আমি সাইবার ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলে যেসব ওয়েবসাইট থেকে মিথ্যা ভিডিও টা ভাইরাল হয়েছিল সেটা মুছে ফেলতে বলেছি । এর ফলে কেউ পূর্ণতার দিকে আঙ্গুল তুলবে না ।

আর বাকি র‌ইল আমার ছেলে দায়িত্ব কাধে নিয়ে তা পালন করতে না পারার কথা !! সেই দায়িত্ব কি করে পালন করতে হয় তা আমি নিজে শেখাবো আমার ছেলেকে !!

আধিরা আনজুম ভ্রু কুচকে বললেন ,

– কোন দায়িত্বের কথা বলছো ??

– তা সময় হলেই জানবে । এখন আমাদের কি যেতে দেবে ভেতরে ??

জিব্রান বলল ,

– আঙ্কেল ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড !! আমি আর আবরন আগে একটু ওর সাথে একা কথা বলে আসি তারপর নাহয় বাকি কাজ গুলো করবেন !!

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– সিওর , সিওর । যাও তোমরা ।

জিব্রান আর আবরন রুমে প্রবেশ করতেই দেখল পূর্ণতা বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে । মিলি রহমান ওর পাশে বসে আছে আর ঈশিতা আলম পাশে দাঁড়িয়ে আছে ।

পূর্ণতা জিব্রান কে দেখে বলল ,

– এতক্ষন পর আমাকে দেখতে আসতে মন চাইলো ??
জিব্রান ওর মাথায় হাত রেখে হেসে চোখের পানি লুকিয়ে বলল ,

– এখন কেমন আছিস ??

– দেখছোই তো !! সবাই আমার কি অবস্থা করে দিয়েছে !! আমি কি আর কখনো ঘাড় নাড়াতে পারবো না ?? আমাকে এই কলার কতক্ষন পড়ে থাকতে হবে ?? আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে এটা পড়ে থাকতে !!

জিব্রান বলল ,

– অল্প কিছুদিন পড়তে হবে পুচকি !!

আবরন চুপচাপ পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওর বাচ্চামো দেখছে আর মনে মনে ভাবছে ,

– তোমাকে যে ভালোবাসি সেই খাতিরে আজ আসল অপরাধী ধরতে কত কিছু করলাম !! তোমাকে এই অবস্থায় দেখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । মন চাইছে যারা তোমার এই অবস্থা করেছে তাদেরকেও এমন অবস্থায় নিয়ে আসি । আর পুলিশ যদি ওদের শাস্তি না দেয় আমার হাত থেকে ওদের নিস্তার নেই । আই প্রমিজ ইউ ।

জিব্রান বলল ,

– শোন , তোর সাথে এসব কেন হয়েছে আমি তোকে খুলে বলি । তুই ঠান্ডা মাথায় শুনবি প্রমিজ কর ।

পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল ,

– প্রমিজ ।

জিব্রান ওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতেই পূর্ণতা চমকে উঠল , চোখের পানি ওর বাঁধ মানছে না । ও মনে মনে ভাবছে ,

– বাহিরে এতো ঘটনা ঘটে গেল , মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেল আর আমি কিচ্ছু জানি না ??

আর আমি কিছুদিন আগে লক্ষ্য করেছিলাম আমার মেসেঞ্জারে অনেক নটিফিকেশন এসেছে কিন্তু সময়ের অভাবে তা দেখিনি , ঐদিন যদি দেখতাম তাহলে আজকে হয়তো আমার এই অবস্থা হতো না । সত্যিই আমি খুব বোকা ।

ওর ভাবনার মাঝেই আবরন বলল ,

– মিস . পূর্ণতা জামান । মাঝে মাঝে ফোনটা নেড়ে চেড়ে দেখবেন তো নাকি ?? আর যদি সোসাল এপস গুলো ইউজ করতেই না জানেন তাহলে দরকার কি তা রাখার । না রাখলেই তো পারেন !!

পূর্ণতা বলল ,

– আমি ভুল করেছি জানি তো । এক কথা আর আমাকে কতবার বলবেন সবাই মিলে । আমি কিন্তু আর নিতে পারছি না ।

এর‌ মধ্যে প্রেনা , আয়মান , তাসিন , ফাহিম সবাই রুমে প্রবেশ করলো ।

মিলি রহমান বললেন ,

– আমি আর প্রেনার আম্মু বাহিরে যাই । এত মানুষ কেবিনে থাকা ঠিক হবে না ।

এই বলে উনারা দুজন বেরিয়ে গেলেন । প্রেনা পূর্ণতার কাছে এসে বসে বলল ,

– সরি রে !! তোর বিপদের সময়‌ই আমি তোর পাশে থাকতে পারি নি । আমি বান্ধবী নামে কলঙ্ক , সত্যিই কলঙ্ক ।

পূর্ণতা বলল ,

– হ্যা , ঠিক‌ই বলেছিস !! তুই বান্ধবী নামে কলঙ্ক আর ফাহিম ভাইয়া গার্ডিয়ান নামে কলঙ্ক !!

ফাহিম বলল ,

– আয়হায় , আমি কি করলাম ??

– কি করেন নি তা বলেন ?? আপনি সাথে থাকা অবস্থায় আমার উপর হামলা হলো আর আপনি আমায় একা ফেলে উধাও হয়ে গেলেন !! ঐ মূহুর্তে তো আপনি‌ই আমার গার্ডিয়ান ছিলেন !!

আবরন বলল ,

– আসলে ভুলটা আমার‌ই । আমি ই যদি তোমাকে আনতে যেতাম তাহলে কারো সাহস ছিল না আমাকে ভেদ করে তোমাকে ছোঁয়ার !!

– অ্যাহ ! এসেছে আমার বডিগার্ড !!

জিব্রান বলল ,

– তুই প্রমিজ করে সেটা রাখতে পারিস নি । তোর সাথে কথা নেই ।

ফাহিম , তাসিন , আয়মান আর প্রেনা‌ও বলল ,

– ঠিক , প্রমিজ ভুলে কাজকে গুরুত্ব দেওয়া মোটেও ঠিক হয় নি ।

আবরন কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– ভুলের শাস্তি কি এখন ??

প্রেনা বলল ,

– আপনি ৭ দিন পূর্ণতার সামনে আসবেন না , ওকে ডিস্টার্ব করবেন না !!

পূর্ণতা বাদে জিব্রানসহ বাকি সবাই ডেভিল হাসি দিল । আবরন চোখ বড় বড় করে বলল ,

– what ?? Are you serious ??

সবাই দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– We are damn serious ..😁

আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,

– আজকে সারাদিন তোমার থেকে দূরে থেকেই আমার অবস্থা টাইট হয়ে গিয়েছে , আর এরা আমাকে শাস্তিস্বরূপ তোমার থেকে ৭ দিন দূরে থাকতে বলছে ।

Impossible !! আমি এক্ষুনি গিয়ে বাবাকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করছি । দেখি তোমরা কেমন পারো আমাকে শাস্তি দিতে !!

এসব মনে মনে ভেবে আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । সেটা পরে দেখা যাবে । এখন বাহিরে যারা আছে তাদের ডেকে কাজ সেড়ে ফেলি , কি বলো জিব্রান ভাইয়া ??

জিব্রান বলল ,

– ঠিক আছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– বাহিরে কারা আছে ভাইয়া ??

– মিডিয়ার লোকজন । ওরা তোর মুখে হামলা হ‌ওয়ার ঘটনা শুনবে আর আমাদের সকলের থেকে সত্য ঘটনার সাক্ষী নেবে ।

আর হ্যা , এসব কিছু আবরনের বাবা শাদমান আঙ্কেল করবেন ।

পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে বলল ,

– মানে ?? উনি এখানে এসেছেন ??

আবরন বললেন ,

– বাবা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে । এখন ভুলের মাসুল দিতে তোমার জীবনে লাগা দাগ কে মুছে তোমাকে আবার আগের পূর্ণতা বানিয়ে দেবে ।

পূর্ণতার নিজের অজান্তেই কেমন যেন স্বস্তি ফিল হচ্ছে আবরনের মুখে এই কথা গুলো শুনে ।

কথা মতো জিব্রান শাদমান চৌধুরী কে ভেতরে ডাকলেন ।

পূর্ণতা শাদমান চৌধুরী কে দেখে সালাম দিল । শাদমান চৌধুরী সালাম নিয়ে পূর্ণতাকে বলল ,

– মা , তুমি সব ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছো তো ??

পূর্ণতা মাথা নেড়ে “হা” জানালো ।

ডাক্তারের পার্মিশন নিয়ে পূর্ণতার কেবিনে মিডিয়ার লোকজন বিনা শব্দে শুধু মাত্র জরুরি প্রশ্নের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও করে ঘটনা রেফারেন্স হিসেবে পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরল ।

সবাই সঠিক তথ্য সহ লাইভ প্রচার করে জাতিকে জানিয়ে দিল পূর্ণতা জামান নির্দোষ ।

…………………………………………………..

পূর্ণতাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে ঘুমের জন্য । কারন , রাতে ব্যথা তুলনামূলক বেশি হ‌ওয়াতে ওর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে । মিলি রহমান ওকে খাইয়ে দিয়েছে আর নার্সরা প্রয়োজনীয় ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে । ডাক্তার এসে চেকআপ করে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে চলে গিয়েছে ।

রাতে অন্য বেডে মিলি রহমান থেকেছে । আর তাসিন , ফাহিম , আয়মান রাতে চলে গিয়েছে বাসায় । জিব্রান‌ও বাসায় গিয়েছে ফ্রেশ হতে ।
ওদিকে প্রেনার মা আর প্রেনা‌ও চলে গিয়েছে ।

শাদমান চৌধুরী আধিরা আনজুমের মান অভিমান ভেঙে তাকে আবার বাসায় নিয়ে গিয়েছে । আবরন‌ও বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার হসপিটালে গিয়েছে সারারাত পূর্ণতার কাছে থাকবে বলে ।

মিলি রহমান ঘুমুচ্ছিলেন । আর পূর্ণতা তো ঘুমে বেহুশ । আবরন আস্তে আস্তে ধীর পায়ে কেবিনে ঢুকে মিলি রহমানকে ডেকে বলল ,

– আন্টি , ঘুমিয়েছেন ?? একটু শুনবেন প্লিজ ??

মিলি রহমান ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে আবরনকে দেখে বলল ,

– বাবা , তুমি আবার এসেছো ??

– আন্টি , এসেছি । আমি ঐ সোফায় ঘুমালে আপনার কোনো অসুবিধা হবে কি ??

– না না , অসুবিধা কেন হবে ?? তোমার কষ্ট হবে তো বাবা ! তুমি বাসায়‌ই থাকতে । আবার সকালে চলে আসতে ।

– না , আন্টি । বাসায় আমার ঘুম আসতো না । আচ্ছা , আপনি ঘুমান ।

– আচ্ছা । তুমি শুয়ে পড়ো ।

আবরন গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল । কিন্তু ওর ঘুম আসছে না । ও মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো মিলি রহমান ঘুমুচ্ছে ।
তাই আবরন আস্তে করে উঠে পূর্ণতার পাশে বেডে গিয়ে বসল ।

হালকা আলোতে পূর্ণতা ঘুমুচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে । আবরন তাকিয়ে দেখল ওর কপালে ব্যান্ডেজ , হাতে অনেক গুলো ব্যান্ডজ । কলার পড়ে ওর অস্বস্তি লাগছে সেটা আবরন ভালোই বুঝতে পারছে । ওকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি এসে জমা হলো ।

আবরন ওর কপালের এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে নিয়ে দিল ।
ওর গালে আস্তে আস্তে স্লাইড করে বলল ,

– সরি মিস পূর্ণতা । আমি তোমাকে দেখে রাখতে পারি নি । আমার ভুলের কারণে তোমাকে আজ এখানে কষ্ট করতে হচ্ছে । আমি কি করে বাসায় এসির নিচে ঘুমাতাম বলো !! তোমার ব্যথা গুলো আমি ফিল না করলেও তুমি যেখানে ঘুমিয়ে কষ্ট করছো অন্তত সেই কষ্টটুকু তো ভাগ নিতে পারি ।

তুমি কি বোঝোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি ?? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকো ?? আমি বলি না তোমাকে কারন আমি সময়ের অপেক্ষা করছি ।

আমি তোমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি , এই ভুল আমি আর কখনো করবো না । তোমাকে আর এক মূহুর্ত্তের জন্য চোখের আড়াল করবো না । সেই ব্যবস্থা করছি মিস পূর্ণতা ।

আবরন ঘুমন্ত পূর্ণতার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ওর পাশের জায়গাতেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল ও টের‌ই পেল না ।

…………………………………………………..

সকাল ৭ টা ,

তখন‌ও মিলি রহমানের ঘুম ভাঙে নি । এমনকি পূর্ণতা আর আবরন‌ও নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে ।

জিব্রান আস্তে করে বিনা শব্দে রুমে ঢুকে আবরনকে দেখে মুচকি হেসে ওদের একসাথে কয়েকটা ছবি তুলে নিল । তারপর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে চোখে মুখে মিথ্যা রাগ নিয়ে আবরনের কান টেনে আস্তে আস্তে কানের সামনে বলল ,

– শালা , বিয়ের আগেই তুই আমার বোনের পাশে ঘুমুচ্ছিস ?? হবু শাশুড়ি যে এই রুমে তার কোনো খবর আছে ??

আবরন চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল ও পূর্ণতার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিল । জিব্রানের কথা শুনে জলদি জলদি উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– সরি , সরি , সরি । আসলে ভাইয়া কখন যে ওর সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম !!

জিব্রান ওর কাধে বারি মেরে বলল ,

– আস্তে কথা বল । আম্মু শুনলে সর্বণাশ হয়ে যাবে ।

আর কি যেন বলছিলি তুই পূর্ণতার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়েছিস ??

আমাকে তোর বলদ মনে হয় ?? ও তো তখন ঘুমিয়ে ছিল , তুই কি করে কথা বললি ??

আবরন থতমত খেয়ে বলল ,

– ইয়েমানে ভাইয়া !! ঘুমের মধ্যেই একা একা কথা বলছিলাম ।

– পাগলামি বাদ দিয়ে ওকে নিজের ঘরের ব‌উ করে নিয়ে গিয়ে ওর সাথে সারারাত জেগে কথা বলিস !!

আবরন কিছু বলবে এর আগেই মিলি রহমানের গলা শোনা গেল ।

– জিব্রান এসেছিস ??

– হ্যা , আম্মু ।

– তুই থাকবি একটু । আমি একটু বাসায় যেতাম !!

– তুমি যাও । আমি আর আবরন ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখি ওকে রিলিজ করে বাসায় নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা !!

– আচ্ছা । দেখ । আমি বাসায় যাই । একটু কাজ আছে । আমাকে ফোন করে জানাস ।

– তুমি চিন্তা করো না যাও ।

মিলি রহমান বাসায় চলে যাওয়ার আধ ঘন্টা পরেই আয়মান , প্রেনা , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা এসে উপস্থিত হলো ।

সবার সাথে ভাব বিনিময় করে জিব্রান বলল ,

– তোরা জানিস আমি হসপিটালে সকালে এসে কি দেখেছি ??

আবরন জিব্রানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে আস্তে করে বলল ,

– ভাইয়া , এই কথা ওরা জানলে আমার মান-ইজ্জত প্লাস্টিক !!

জিব্রান হেসে বলল ,

– ওকে যা প্রমিজ করলাম । মুখ দিয়ে কিছু বলবো না ।

আবরন জিব্রানের কথায় স্বস্তির নিংশশ্বাস ফেলল ।

আয়মান বলল ,

– ভাইয়া , কি দেখেছো বলো তো ??

জিব্রান পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা বের করে ফোনের স্ক্রিনটা সবার দিকে ঘুরিয়ে দেখাতেই সবাই তা দেখে ৪৪০ ভোল্টের শক খেল ।

আবরন জিব্রানের পাশ থেকে উঠে বাকিদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখল স্ক্রিনে জিব্রান ওর আর পূর্ণতার একসাথে ঘুমানোর ছবি তুলেছে ।

ছবিটা কিছুটা এমন যে আবরন আর পূর্ণতা এক‌ই বালিশে উপর নিচ করে শুয়েছে। পূর্ণতা একটু উপরে আর আবরন একটু নিচে । পূর্ণতা ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমুচ্ছে আর আবরন মনের শান্তিতে মাথার নিচে হাত রেখে পূর্ণতার কলারের সাথে লেগে ঘুমুচ্ছে ।

সবাই ছবিটা দেখে মুচকি হাসছে আবরনের দিকে তাকিয়ে । আবরন ছবির থেকে চোখ তুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে কেমন কেমন করে যেন হাসছে ।

এর‌ই মধ্যে পূর্ণতার গলা শোনা গেল ।

– এই , তোমরা সবাই হাসছো কেন ??

জিব্রান ফোনটা পকেটে ভরে বলল ,

– এমনি । দেখ তোর সাথে দেখা করতে সাত সকালে সবাই চলে এসেছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– নার্সকে বলো আমার বেডে বসার মুড করে দিতে ।

আবরন বলল ,

– এটা করতে নার্সকে লাগে ?? আমি আর ফাহিম‌ই পারবো ।

– তো করে দিন ।

ফাহিম আর আবরন বেডে বসার মুড সেট করে দিল । আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– আমি ধরে তুললে সমস্যা আছে কি আপনার ??

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– আমাকে সেদিন কিস করার আগে তো জিজ্ঞেস করেন নি যে “পূর্ণ , ক্যান আই কিস ইউ ?? ” আর এখন সবাই সামনে আছে বলে দেখাচ্ছেন যে আপনি খুব ভালো !! হুহ্ !!

পূর্ণতা আবরন কে বলল ,

– তাকিয়ে দেখছেন কি ? তুলুন আমায় ??

আবরন ওকে ধরে বসাতে বসাতে আস্তে করে বলল ,

– এমন ভাবে বলছেন যেন আপনি আমার ব‌উ লাগেন ??

পূর্ণতা রেগে আস্তে করে জবাব দিল ,

– এই আপনি আমাকে তখন থেকে “আপনি” করে বলছেন কেন ??

– আমার ইচ্ছা তাই ।

আবরন ওকে বসিয়ে দিয়ে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– ভাইয়া চলো , ডাক্তার এর সাথে আলাপ করে দেখি রিলিজের বিষয়টা নিয়ে ।

– ঠিক আছে চল । নাস্তাও আনতে হবে ।
তোরা সবাই খালি পেটে এসেছিস না ?

সবাই হা সূচক মাথা নাড়ল ।

পূর্ণতা কে খেয়াল রাখতে বলে আবরন আর জিব্রান চলে গেল ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ।

আর সবাই পূর্ণতার সাথে গল্প করতে শুরু করলো ।

#চলবে ♥️

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২১

বিকেল ৪ টার সময় আজ পূর্ণতা কে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়েছে পরিবারের সবাই ।

ডাক্তারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই ডিসিশন নিয়েছে সবাই । সকল পরামর্শ মেনে চললে ১ মাসেই পূর্ণতা সুস্থতা লাভ করবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার ।

এই দুইদিন হসপিটালে পূর্ণতার দম বন্ধ হয়ে এসেছে । আজ বাসায় এসে খুব‌ই কমফোর্টেবল ফিল করছে পূর্ণতা । মিলি রহমান সমস্ত যত্ম নিচ্ছে । জিব্রান‌ও ঠিক মতো দেখাশোনা করছে । মেডিক্যাল এ যেতে না পারলেও পড়া গুলো প্রেনার কাছ থেকে কালেক্ট করে নিয়েছে পূর্ণতা ।

পড়াশোনা বলতে সব কিছুই নতুন । তার উপর ও নিজে ক্লাস গুলো পায় নি আর কোচিং ও করছে না । এসব পড়ার বিষয় গুলো যেন ওর ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

পূর্ণতা কে চিন্তিত দেখে জিব্রান বলল ,

– কিরে তুই কি এত চিন্তা করিস ??

পূর্ণতা কিছুটা মন খারাপ করে বলল ,

– আমার পড়াশোনা সব শেষ !! সবাই এগিয়ে যাচ্ছে আর এদিকে আমি না পারছি মেডিক্যাল এ যেতে আর না‌-ই বা পারছি কোচিং করতে । বাসায় একজন টিচার রাখা জরুরি ভাইয়া !!

– তাই নাকি ?? টিচার তো রেডি । কবে থেকে পড়াতে আসতে হবে বল শুধু । বাকি ব্যবস্থা আমি করছি !

– সত্যি বলছো ?? তাহলে আজ সন্ধ্যায় ই আসতে বলো । আমি তো সারাক্ষন ফ্রি । সব ক্লাসের পড়া গুলো আমার কালেকশন এ আছে । শুধু বুঝিয়ে দিতে হবে ।

– ঠিক আছে । চিন্তা করিস না তুই । আমি ম্যানেজ করছি । তুই সন্ধ্যায় রেডি থাকিস ।

– থ্যাংকস ভাইয়া ।

– ইটস ওকে পুচকি ।

দুপুরে খেয়ে দেয়ে পূর্ণতা একটা শান্তির ঘুম দিয়েছে । ঘুম ভাংলো একদম মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে ।

তড়িঘড়ি করে উঠে কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে মিলি রহমানকে ডেকে বলল ,

– আম্মু চুলটা বেধে দাও ।

– খোপা করবি ??

-না , দুইটা বেনি করে দাও ।

– আচ্ছা ।

মিলি রহমান বেনি করে দিয়ে পূর্ণতার কলার টা খুলে ঘাড়ে একটু গরম সেঁক দিয়ে একটু ঔষধ মালিশ করে দিয়ে আবারো কলার পড়িয়ে দিলেন । পূর্ণতা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল ,

– আর কতদিন পড়তে হবে এই ছাতা নাতা ??

মিলি রহমান বললেন ,

– ঘাড় যখন ব্যথা ছাড়া নাড়াচাড়া করতে পারবি সেদিন থেকে আর এটার দরকার হবে না । তাই বলে আবার ইচ্ছে করে নাড়াতে গিয়ে ঘাড় ভাঙ্গিস না বলে দিচ্ছি ।

পূর্ণতা একটু হেসে বলল ,

– ধুর , তুমিও না ।

এর মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো । পূর্ণতা বলল ,

– আম্মু আমি আমার রুমে যাচ্ছি । তুমি একটু দরজাটা খুলে স্যারকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও ।

– ঠিক আছে । তুই গিয়ে টেবিলে বস ।

পূর্ণতা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ভালো করে নিজেকে আয়নায় দেখে নিল ।

– না , সব পারফেক্ট ।

তারপর নিজের টেবিলে চেয়ার টেনে বসতে যাবে তখন‌ই শব্দ পেল কেউ ওর রুমে প্রবেশ করেছে । ওর বুঝতে বাকি র‌ইল না রুমে টিচার প্রবেশ করেছে । ও উল্টো ঘুরে মুচকি হেসে সালাম দিয়েই স্যারকে দেখে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল । স্যার সালাম গ্ৰহণ করে বলল ,

– কেমন আছেন মিস পূর্ণতা ??

পূর্ণতা স্যারকে পা হতে মাথা পর্যন্ত দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল ,

– এই এই , আপনি এখানে কি করছেন ??

– আমি আপনার বাসার প্রাইভেট টিউটর শাহরিদ আহনাফ আবরন । এখন কথা না বাড়িয়ে টেবিলে বসুন , নাহলে আমি কিন্তু ভালোই জানি বাঁকা স্টুডেন্ট কে কিভাবে সোজা করতে হয় !!

পূর্ণতা আর কিছু করার না পেয়ে ভেংচি কেটে চুপচাপ টেবিলে বসে পড়লো ।

আবরন অপর পাশের চেয়ার টেনে বসে বলল ,

– কি কি নোটস কালেক্ট করেছেন ??

পূর্ণতা নোটস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল ,

– এখানে পুরো এক সপ্তাহের নোটস আছে । আমি তো ক্লাসে যেতে পারি নি তাই এগুলোর আগা গোড়া কিছুই মাথায় ঢুকছে না ।

– ওকে , সাতদিনের পড়া তো একসাথে আপনার মাথায় ঢোকানো যাবে না । আমি আজকে ১ম ক্লাসের নোটস গুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছি ।

– ওকে ।

আবরন ওকে একটু একটু করে নোটস বুঝিয়ে দিচ্ছে আর পূর্ণতা তা মনোযোগ দিয়ে বুঝে নিচ্ছে । পড়ার মাঝখানে মিলি রহমান রুমে প্রবেশ করলেন চা নাস্তা হাতে নিয়ে ।

– সরি , একটু ডিস্টার্ব করলাম । খাবার গুলো খেতে খেতে পড়ো ।

আবরন বলল ,

– আচ্ছা আন্টি ।

পূর্ণতা চোখ ঘুরিয়ে মিলি রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে । ও চোখের ইশারায় মিলি রহমানকে বোঝাতে চাইছে যে ,

– তার মানে তোমরা মিলে ঝিলে আমার সাথে এত বড় ষড়যন্ত্র টা করেছো ??

পূর্ণতার চাহনি দেখে আবরন ভালোই বুঝলো যে পূর্ণতার চোখ কি বলছে । মিলি রহমান রুম থেকে চলে যেতেই আবরন কলম দিয়ে স্বজোরে পূর্ণতার আঙ্গুলের উপর বারি দিতেই পূর্ণতা ব্যথায় চেচিয়ে উঠল ।

– আউউচ !!

তারপর আঙ্গুল ডলতে ডলতে বলল ,

– কি সমস্যা ?? মারলেন কেন ??

আবরন বলল ,

– আন্টির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলেন যেন আন্টিকে চোখ দিয়েই গিলে খাবেন ?? কেন ?? কি সমস্যা ?? আন্টি কি করেছে ??

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কি করে নি তা বলেন ?? ভাইয়া আর আম্মু মিলে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে আমার টিউটর বানিয়েছে !!

-তো আমি কি টিউটর হিসেবে খারাপ ??

পূর্ণতা জিহ্বে কামড় দিয়ে বলল ,

– এ বাবা !! খারাপ কখন বললাম ??

– তাহলে আমার কাছে পড়তে কি সমস্যা ??

– সমস্যা আর কি ??

এইটুকু বলে মনে মনে ভাবল ,

– খালি তো পারেন বকা দিতে । আর টিউটর হয়ে কখন যেন মেরে বসেন তার ঠিক নাই !! হায়রে , কখন মারার কথা কি বলছি ?? একটু আগেই তো মারলেন !! আবার বলছেন আপনার কাছে পড়তে কি সমস্যা ?? ভাইয়াকে পড়া শেষ হলে ধোলাই দিতে হবে !!

আবরন পূর্ণতা কে চুপ চাপ অন্যমনস্ক হতে দেখে আবার‌ও কলম দিয়ে হাতে বারি মারতেই পূর্ণতা বলল ,

– এই , আপনি খালি মারেন কেন ??

– পড়ানোর সময় আপনি অমনোযোগী হবেন কেন ??

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি তো খাচ্ছেন । তাই ভাবলাম রিল্যাক্স টাইম দিয়েছেন ।

আবরন খেতে খেতে বলল ,

– রিল্যাক্স টাইমে আপনাকেও খেতে ঈশারা করেছি , কিন্তু আপনি কোন ধ্যানে চলে গিয়েছেন আপনি‌ই ভালো জানেন । তাই ধ্যান ভাংতে ছোট্ট একটা মাইর আরকি !!

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে মনে মনে ভাবছে ,

– এই লোকটা ইদানিং আমাকে আপনি করে বলে কেন ?? না চাইতেও কেন যেন আপনি আপনি শুনতে খারাপ লাগে ??

পূর্ণতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল ,

– একটা কথা বলি ??

আবরন বলল ,

– বলেন !!

পূর্ণতা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল ,

– আপনি আমাকে “আপনি” করে কেন বলেন ??

আবরন বলল ,

– সম্মান করি তাই ।

– ( আহ , আসছে আমার সম্মানদাতা রে !! )

মনে মনে ভেবে পূর্ণতা জবাব দিল ,

– আপনি না কেমন যেন বিহেইভ করেন আমার সাথে !!

আবরন ওর মুখের সামনে খাবার তুলে ওকে খেতে ঈশারা করে মুখে বলল ,

– কেমন বদলেছি ??

পূর্ণতা হা করে খাবারটা খেয়ে নিয়ে বলল ,

– আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না ।

আবরন ওর মুখের সামনে আবার‌ও খাবার তুলে বলল ,

– আমি এমন‌ই । মেডিক্যাল এর ভিতরে এক রকম , মেডিক্যাল এর বাহিরে আরেক রকম । হসপিটালে যতক্ষন থাকি তখন এক রকম আবার বাসায় যতক্ষন থাকি ততক্ষন আরেক রকম ।

পূর্ণতা হা করে এই খাবারটুকুও মুখে নিয়ে বলল ,

– আমাদের বাসায় সবার সাথে যতক্ষন থাকেন ততক্ষন এক রকম , আমার সাথে যতক্ষন থাকেন ততক্ষন আরেক রকম !!

পূর্ণতা খাবার চিবাতে চিবাতে নিজের অজান্তেই কথা গুলো বলে খাবার তালুতে উঠতেই কাশি দিতে লাগল । আবরন পানি এগিয়ে দিতেই ও ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফেলল ।

আবরন বলল ,

– আপনি কখন কি বলেন তা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না !!

পূর্ণতা চুপ করে আছে । তারপর নোটস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল ,

– আমাকে এই দিকটা একটু বুঝিয়ে দিন ।

আবরন বলল ,

– বুঝাই পরে । আগে আমার জন্য পানি আনুন । আমার পানি তো আপনিই সব শেষ করে দিলেন ।

পূর্ণতা ওর ফ্লাক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলল ,

– আমি আপনার পানি খেয়েছি , আপনি বরং আমার পানিটা খেয়ে নিন ।

এইটুক বলে থেমে দেখল আবরনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । তাই আবার বলল ,

– আচ্ছা , আমার পানি খেতে হবে না । আমি আবার ডায়নিং রুম থেকে পানি নিয়ে আসছি ।

এই বলে পূর্ণতা গ্লাস হাতে উঠে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন ওকে হঠাৎ টান দিয়ে আবার চেয়ারে বসিয়ে বলল ,

– আমি বলেছি আপনাকে ডায়নিং রুমে গিয়ে পানি আনতে ?? আপনার ফ্লাক্স থেকেই খেয়ে নিচ্ছি ।

এই বলে আবরন পূর্ণতার ফ্লাক্স থেকেই পানি খেতে শুরু করলো ।

পূর্ণতা তাকিয়ে তাকিয়ে আবরনের পানি খাওয়া দেখছে আর মনে মনে ভাবছে ,

– লোকটা এমন কেন ?? সবসময়‌ই উপর উপর এক কথা বললেও ভিতরে ভিতরে অন্যরকম চিন্তা ভাবনা করে ।

আবরন পানি খেতে খেতে লক্ষ্য করল পূর্ণতা এক ধ্যানে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । মনে মনে কিছু একটা ভেবে কোনো কিছু না দেখার ভান করে পানি খেয়ে ফ্লাক্সটা অফ করে পাশে রেখে ওকে বলল ,

– এখন বলেন !! কোন দিকটা বুঝিয়ে দেব ??

পূর্ণতা নোটস এ আঙ্গুল রেখে দেখিয়ে দিতেই আবরন বিষয়গুলো আবার বুঝিয়ে দিল ।

টানা ২ ঘন্টা পড়িয়ে লিখিয়ে বুঝিয়ে আবরন অবশেষে পূর্ণতা কে বলল ,

– আজকে যা যা পড়িয়েছি এবং বুঝিয়েছি তাতে কোনো প্রবলেম আছে ??

পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল ,

– উহু ।

আবরন বলল ,

– ওকে তাহলে আগামীকাল আমি এলে আমাকে আপনি এই পড়া গুলো বুঝিয়ে দেবেন । কাল আমি হবো আপনার স্টুডেন্ট আর আপনি হবেন আমার টিউটর । ওকে ??

পূর্ণতা মাথা নাড়ল ।

আবরন চেয়ার থেকে উঠে বলল ,

– ওকে । আজকের জন্য এখানেই আল্লাহ হাফেজ ।

আবরন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই পূর্ণতা ব‌ই খাতা গুছিয়ে মিলি রহমানের রুমে গেল ।

মিলি রহমান কারো সাথে ফোনে কথা বলছে । পূর্ণতা বলল ,

– কার সাথে কথা বলো আম্মু ??

মিলি রহমান বললেন ,

– তোর বাবার সাথে কথা বলি । তুই কথা বলবি ??

পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,

– হা , দাও । একটু কথা বলি ।

মিলি রহমান ফোন এগিয়ে দিতেই পূর্ণতা ফোনটা হাত থেকে নিয়ে কানে দিয়ে বলল ,

– আসসালামু আলাইকুম আব্বু । তুমি কেমন আছো ?

ওপাশ থেকে আফতাব‌ উজ্জামান এর গলা শোনা গেল ।

– ওয়ালাইকুমুসসালাম মা । আমি ভালো নেই । তুই কেমন আছিস ?

– আছি কোনো রকম আরকি !! তুমি ভালো নেই কেন আব্বু ?? কি হয়েছে তোমার ??

– কতদিন তোকে দেখি না । তোর সাথে এর মধ্যে এত কিছু হয়ে গেল আর আমি তোর পাশে নেই । কিন্তু আমি আসছি খুব শীঘ্রই ।

– সত্যি বলছো ?? কবে আসছো ??

– সেটা নাহয় সারপ্রাইজ থাক ।

– এখন তো আমার রাতে ঘুম আসবে না । মনে হবে এই বুঝি তুমি চলে এসেছো ।

– হা হা হা । আমি আসছি খুব শীঘ্র‌ই ।

– এলে কতদিন থাকবে ??

– এক দেড় মাস থাকবো । তারপর জিব্রান কে সাথে করে নিয়ে আসবো ।

জিব্রানকে সাথে করে নিয়ে যাবে শুনে পূর্ণতার মন খারাপ হয়ে গেল ।

– আব্বু ! একটা কথা বলি ??

– বল মা । কি বলবি ??

– আব্বু !! ভাইয়াকে কি না নিলেই নয় ??

– তোর ভাইয়া যদি ব্যবসার হাল না ধরে , আমার তো কয়দিন পর আর কাজ করার সামর্থ‍্য থাকবে না । তখন সংসারটা চলবে কি করে মা ??

– হুম , বুঝতে পারছি । কিন্তু আমি আর মা যে একা হয়ে যাবো !!

– একা কেন হবি ?? তোকে বিয়ে দিয়ে দেব । বিয়ে করে নতুন পরিবারে যাবি সাথে পড়াশোনা ও করতে থাকবি দেখবি আর একা লাগবে না । আর র‌ইল বাকি তোর মায়ের কথা ! তোর মায়ের জন্য তো আমি আছি নাকি ?? আর জিব্রানকে বিয়ে করালে ওর ব‌উ থাকবে বাড়িতে । তোর মা সময় পেলে আবার তোর শশুর বাড়ী যাবে । এভাবেই বাকি জীবন টুকু কাটিয়ে দিতে পারবে । তুই চিন্তা করিস না ।

পূর্ণতা শুধু ছোট্ট করে বলল ,

– হুম । তো ভাইয়াকে কবে বিয়ে করাবে ??

– তোর ভাইয়া ফ্রান্স এসে ৬ মাস বিজনেস করে নিজে কিছু ইনকাম করুক তারপর ‌ই বিয়ে করাবো । কিন্তু মা , তোর যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি এলে তোর বিয়েটা সেড়ে ফেলব ।

পূর্ণতা বলল ,

– তোমরা সবাই যা ভালো বোঝো আব্বু , আমি তা‌ ই করবো সমস্যা নেই । কারন , পরিবার তো আর আমার খারাপ চাইবে না ।

– হু মা । আচ্ছা এখন বল চকোলেট বাদে আর কি কি আনবো তোর জন্য ??

– আমার আর কিচ্ছু লাগবে না । তুমি শুধু সুস্থ ভাবে ফিরে এসো ।

– আচ্ছা মা । তাহলে রাখছি । নিজের যত্ম নিস । খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস আর ঔষধ গুলো ঠিকমতো খেয়ে নিস ।

– আচ্ছা ।

এই বলে ফোনটা কেটে মিলি রহমানের দিকে এগিয়ে দিল পূর্ণতা ।

তারপর নিজের রুমে গিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো । আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল আকাশটা অন্ধকার , মেঘাচ্ছন্ন হ‌ওয়ায় তারা গুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না ।

রাস্তার দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলো মেইন গেইটের সামনে একটা বড় গাড়ি থামানো । গাড়িটা চিনতে ভুল হলো না পূর্ণতার । ও বুঝলো , তারমানে আবরন এখনো যায় নি ।

বারান্দা থেকে বেরিয়ে পূর্ণতা সোজা হেঁটে গুটি গুটি পায়ে জিব্রানের রুমে গেল । দেখল আবরন সেখানেই আছে ।

জিব্রান পূর্ণতা কে ওর রুমের দরজার সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল ,

– কিরে , পুচকি !! ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?? ভেতরে আয় !!

আবরন উল্টো ঘুরে বসাতে পেছনে পূর্ণতা কে দেখলো না । আবার ওকে দেখতে উল্টোও ঘুরলো না ।

পূর্ণতা আবরনের সামনে দিয়ে জিব্রানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,

– ভাইয়া , আব্বু আসবে নাকি !

জিব্রান হেসে বলল ,

– জানি তো ।

– ভাইয়া , ইদানিং তোমরা সব কিছু আমাকে না জানিয়েই করছো । সব কথাই দেখছি তোমরা জানো কিন্তু আমি ছাড়া । কেন ??

জিব্রান বলল ,

– আরে আমার বোকা বোন রে !! তুই অসুস্থ তাই তোকে প্রেসার দিই না । এখন শোন তোর মন খারাপ হলে আমাকে বল আমি তোকে খুশি করার ব্যবস্থা করছি ।

পূর্ণতা বলল ,

– এখন ক’টা বাজে ??

জিব্রান ঘড়ি দেখে বলল ,

– ৮ টা ৫০ বাজে ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমার মন চাইছে আমার হবু ভাবীর সাথে দেখা করতে !!

জিব্রান একবার পূর্ণতা আরেকবার আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– এখন ??

পূর্ণতা বলল ,

– হ্যা , আজ‌ই , এখন , এই মূহুর্তে ।

জিব্রান আবরনের দিকে তাকিয়ে পূর্ণতা কে জবাবে বলল ,

– ঠিক আছে । আজকে রাতে আমি , তুই , আবরন আর তোর ভাবী একটা জায়গায় যাবো !!

পূর্ণতা আবরনের দিকে এক পলক তাকিয়ে জিব্রানকে বলল ,

– সত্যি বলছো ??

– হু সত্যি । শোন আমার একটা প্ল‍্যান আছে । আমি তোর ভাবিকে ঐ জায়গায় নিয়ে সারপ্রাইজ দিব আর সেই জায়গাতে তুই আর আবরন‌ আগেই চলে যাবি ।

– সত্যি ?? ইয়েএএএ !! রাতে অন্যরকম একটা মজা হবে তাই না ??

– হুম ।

আবরন বলল ,

– এসব ছোট খাটো সারপ্রাইজের চেয়ে চলো একটা বড় কোনো সারপ্রাইজের প্ল‍্যান করি । কারন তুমি তো চলে যাবে , তাই যাওয়ার আগে ভাবির সাথে তোমার কিছু আলাদা সময় কাটানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি ।

পূর্ণতা জিব্রানের পাশে বসল । জিব্রান বলল ,

– কি প্ল‍্যান করছিস তুই আবরন ??

– চলো একটু দূরে কোথাও যাই ।

– দূরে বলতে !!

– যেমন ধরো ঢাকার বাহিরে দূরে কোথাও !! উমমমম , ধরো চট্টগ্রাম গেলাম !!

– ঐখানে গিয়ে কোথায় থাকবো , কি করবো ??

– আরে ঐখানে আমাদের নতুন বাংলো আছে । অনেক মজা হবে । আর অনেক অনেক ঘুরতে যাওয়ার জায়গা ও আছে । আমরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে এই চারজন ঘুরতে গেলে কিন্তু মজাই হবে । এই ধরো একদিন সকালে গেলাম । তারপর সেখানে গিয়ে সেদিন বাংলোতেই থাকলাম । পরদিন ঘুরলাম ‌ এর পরদিন কিছু শপিং করে আবার রাতে র‌ওনা হয়ে চলে এলাম ঢাকায় ।

জিব্রান ভেবে বলল ,

– আইডিয়াটা কিন্তু দারুন দিয়েছিস । তাহলে কবে যাবি বল !!

– শোনো , আরেকটা কাজ করা যেতে পারে । সাথে যদি ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা আর আয়মান , প্রেনাকে নেওয়া যায় তাহলে আরো মজা হবে ।

– ওয়াও । জাষ্ট গ্ৰেট । তাহলে সবার সাথে কথা বলে ডেট ঠিক কর । আমাকে জানাস । অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে তো ।

– সেটা ঠিক । তবে আমাদের ভার্সিটি মিস দেওয়া যাবে না । আজকে তো ২৩ শে মার্চ । সামনে ২৬ শে মার্চ । হিসাব মিলিয়ে আমি ছুটি বুঝে তোমাকে জানাচ্ছি ।

– ওকে । কিরে পূর্ণতা তুই কি বলিস !!

– হুম , মজা হবে অনেক । লং জার্নি আমার খুব ভালো লাগে সেটা তো জানোই ।

আবরন বলল ,

– আপনি আবার বমি করতে করতে যাবেন নাকি ??

পূর্ণতা বলল ,

– জি নো । আমার অভ্যাস আছে ।

– গুড গুড ।

জিব্রান হাসছে ওদের কথা শুনে । আবরন বলল ,

– চলো এখন নাহয় পুরান ঢাকায় ঘুরে আসি !!

– যাবি তুই ??

– চলো যাই । তুমি ভাবীকে নিয়ে নাও । রাতে পুরান ঢাকার দৃশ্য‌ই বদলে যায় । অনেক মজা হবে । তবে ওখানে শুধু হিমুর মতো হাঁটতে হবে । রাজি আছো ??

জিব্রান বলল ,

– আগে দেখি আমার মিসেস কি বলে !!

– ওকে ।

জিব্রান নাদিরাকে কল করে কনফার্ম হলো ও সাথে যাবে ।

পূর্ণতা একটা কালো প্লাজো সাথে লাল একটা শর্ট কামিজ পড়ে কালো একটা ওরনা শরীরে পেচিয়ে রেডি হয়ে নিল ।

জিব্রান রেডি হয়ে আবরন আর পূর্ণতা কে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেল । আজিমপুর মোড় থেকে ওরা নাদিরাকে পিক করবে গাড়িতে । তারপর যাবে পুরান ঢাকার দিকে ।

যেমন ভাবনা তেমনি কাজ । প্ল‍্যান মোতাবেক ওরা বেরিয়ে পড়ল ।

জিব্রান গাড়ির পেছনে আগেভাগে উঠে পূর্ণতা কে সামনে বসতে বাধ্য করলো ।

জিব্রান বলল ,

– সামনে নাদিরাকে পিক করলে ও আমার সাথে বসবে ।

আবরন গাড়িতে উঠে ড্রায়ভিং সিটে বসে নিজের সিট বেল্ট বেধে গাড়ি স্টার্ট দিতেই পূর্ণতা বলল ,

– আমার সিট বেল্ট কে বেঁধে দিবে ?? আমি তো মুভ করতে পারি না ।

আবরন ওর দিকে তাকিয়ে ওর সিট বেল্ট টা বেঁধে দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করতে শুরু করলো । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– লোকটা ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করছে কেন ??
অন্যসময় তো নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে দেয় !! আবার আমার হাত দিয়ে ড্রাইভিং এর গিয়ার ইউজ করে !! আজ হলো কি ??

এরকম হাজারো ভাবনা মনের মধ্যে গুনতে গুনতে ওরা গন্তব্যের দিকে এগোতে লাগল ।

#চলবে ♥️

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️