ভুল শুধু ভুল পর্ব-০১

0
16

ভুল_শুধু_ভুল (১)
নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

পঁয়ত্রিশ বছরের বড় বাবার মামার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হলো মায়ার। এই বিষয়ে জানতে পেরে মায়া তৎক্ষনাৎ তার মাকে বলে,“আমি এই বিয়ে করবো না মা। এত বড়, তাছাড়া সম্পর্কে দাদু হয়। তেমন একজন মানুষের সঙ্গে তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করলে কিভাবে?”
আমার কথা শুনে মা শান্ত গলায় বললেন,“দেখ মা, আমরা ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুই ভালো থাকবি।”
মায়ের মুখে এই কথা শুনে মায়া হতাশ হয়। সে অসহয় চোখে মায়ের দিকে তাকায়। তার মা তাকে সাধ্যমতো বোঝায়। তার বাবা, মায়ের ভাষ্যমতে ছেলের অনেক টাকা। পঁচিশ বছরের মতো বিদেশ ছিলো। অনেক অর্থ, সম্পদ করেছে। জীবনে টাকার মূল্য অনেক। এই বিয়ে হলে মায়া খুবই সুখে থাকবে। মায়া এসব কথা শুনে রাগান্বিত গলায় বলে,“অসম্ভব। এমন একটা লোকের সাথে আমি সারাজীবন কিছুতেই থাকতে পারবো না। তাছাড়া টাকাই কি সব?”

“হ্যাঁ টাকাই সব। টাকা না থাকলে দুনিয়ায় কোন দাম নাই।”
মায়ের এই কথায় মায়া কিছুটা কঠিন গলায় বলে,“তুমি এই কথা কিভাবে বলছো? আমাকে এমন একটা লোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছো কিভাবে? যেখানে তুমি জানো আমার একজন ভালোবাসার মানুষ রয়েছে। তাছাড়া তুমি তো পলাশের সঙ্গে কথাও বলেছো। তার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা বাবার সাথে বলবেও বলেছো। তাহলে এখন এসব কেন বলছো?”

“আগের কথা ধরে রাখলে চলবে? আগে বলছিলাম কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে আশরাফ মামা তোর জন্য ঠিক। এত ধনী পাত্র তোর জন্য আমরা পেতাম। নেহাৎ আত্মীয় বলে তারা তোর সাথে বিয়ের কথা ভাবছে।”
এই কথা শুনে মায়ার মাথাই গরম হয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে মাকে বোঝায়, সে পলাশকে ভালোবাসে। তাছাড়া সে এমন একজন লোকের সাথে বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু মা শোনে না। তাদের কথা হলো আশরাফের অনেক টাকা আছে। তার সাথে বিয়ে হওয়া মানে সারাজীবন সুখে থাকা। এখানেই মায়াকে বিয়ে করতে হবে।

___
উপরোক্ত কথাগুলো পুলিশ অফিসার কবিরের সামনে মায়া বলে। মায়া কান্নারত অবস্থায় কবিরকে বলে,“স্যার আমি আমার বাবা, মাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা বোঝেনি। তারা টাকা দেখে আমার বাবার চেয়েও দুই বছরের বড় একজনের সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। এই অবস্থায় আমার কাছে অন্য কোন উপায় ছিলো না। সেজন্য আমি পলাশের সাথে পালিয়ে এসেছি। আপনি দয়া করে আমাদের ছেড়ে দিন। আমরা বিয়ে করে সংসার করতে চাই।”
কবির মায়ার কথা শুনে তার দিকে শান্ত চোখে তাকায়। অতঃপর নিজের পেশাগত ভাষায় বলে,“তুমি যে সত্যি বলছো তা কিভাবে বিশ্বাস করবো? এই ছেলে ভয় দেখিয়েও তো তোমাকে দিয়ে এসব বলাতে পারে?”

“না। পলাশ আমাকে ভয় কেন দেখাবে? ও তো আমাকে ভালোবাসে।”
মায়ার এই কথায় কবির ম্লান হেসে বলে,“ভালোবাসা? এই কথা তো তুমি বলছো। কিন্তু তোমার পরিবার তো ভিন্ন কথা বলছে। তাদের কথা অনুযায়ী এই ছেলে তোমাকে কিডন্যাপ করেছে।”

“না। আমার বাবা, মা মিথ্যা বলছে স্যার। আমাকে পলাশ কিডন্যাপ করেনি। আমি নিজ ইচ্ছায় পলাশের সঙ্গে পালিয়ে এসেছি। উল্টো পলাশ পালাতে চায়নি। সে আমাকে বাবা, মাকে আরও কিছুটা সময় বোঝাতে বলেছিলো। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাই তো ওর সঙ্গে পালিয়ে এসেছি।”
মায়ার এক নিঃশ্বাসে বলা কথাগুলো কবির বিশ্বাস করে নেয়। মায়ার চোখ দেখে তাকে মোটেও মিথ্যাবাদী মনে হয় না কবিরের। কবির শান্ত গলায় বলে,“তোমার এসব কথার কোন দাম নেই। তুমি তো নাবালক।তোমার বয়স এখনো আঠারো বছর হয়নি। তাই তোমার এসব কথা আদালতে বিশেষ কোন গুরুত্ব পাবে না। তাছাড়া আমরা যে বসে মিমাংশা করে বিয়ে পড়িয়ে দিবো সে উপাও নেই। যেহেতু তোমার বয়স হয়নি।”

“কী বলছেন এসব স্যার? আমি তো নাবালক নই। আমার বয়স উনিশ বছর। আমার তো আঠারো বছর অনেক আগেই হয়েছে।”
মায়ার এই কথায় কবির চমকে উঠে। সে বিষ্ময় নিয়ে বলে,“তোমার বয়স উনিশ? কিন্তু তোমার বাবা, মা তো বলেছে ষোলো।”

“না। মিথ্যা কথা। তারা আমাকে এবং পলাশকে আলাদা করতে এসব বলেছে। আমার সঙ্গে ঐ লোকটার বিয়ে দিতে।”
কবির মায়ার মুখে এসব কথা শুনে ঠান্ডা মাথায় ভাবে। অতঃপর বলে,“তোমার যে উনিশ বছর বয়স সেটা তুমি প্রমাণ করতে পারবে?”

“হ্যাঁ। আমার ব্যাগে সকল সার্টিফিকেট রয়েছে। তাতে আমার জন্ম সাল দেওয়া আছে। তাছাড়া সেখানে বার্থ সার্টিফিকেটও আছে।”

“ব্যাগ কোথায়?”
কবিরের এই প্রশ্নের জবাবে মায়া জানায় পলাশের বন্ধুর বাড়ি। যেখানে পলাশ এবং সে পালিয়ে উঠেছিলো। পুলিশ তাদের সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসে। সেখানেই ব্যাগ রয়ে গেছে। কবির এটা জেনে একজন কনস্টেবলকে ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়ে দেয়। তারপর পলাশের মুখোমুখি বসে। শান্ত গলায় বলে,“এই মেয়ে যা বলছে তা যদি সঠিক হয় তাহলে তুই বেঁচে গেলি। নয়তো একজন নাবালক মেয়েকে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে তুলে নেওয়া, তার বাবা মায়ের কাছে মুক্তিপণ দাবি করার অপরাধে তোর অনেক বড় শা স্তি হবে।”

“স্যার আমি কিছু করিনি। আমরা দুজন ভালোবেসে একে-অপরের সঙ্গে এসেছি। মায়া যা বলছে সব সত্যি।”
পলাশ এসব বলে মায়ার দিকে তাকায়। মায়া মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে সত্যি বলছে। কবির ঠান্ডা মাথায় ভেবে বলে,”তো তোকে ছেড়ে দিচ্ছি। এই মেয়েকে ছেড়ে চলে যা।”

”না। স্যার আমি এখান থেকে একা যেতে পারবো না। মায়াকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়ে আমি ওকে নিয়ে পালিয়ে আসছি। এখন ওকে একা রেখে আমি যেতে পারবো না।”
পলাশের এই কথা শুনে মায়া খুব খুশি হয়। কবির আর কোন বাক্য বিনিময় না করে এদের আলাদা সেলে রাখতে বলে মায়ার বাবা, মাকে ডাকতে বলে। পলাশ এবং মায়াকে নিয়ে যাওয়া হয়। মায়া এবং পলাশ আলাদা যেতে চাচ্ছিলো না। তারা একসাথে থাকতে চাচ্ছিলো। পলাশ অনুরোধ করে বলে,“স্যার আমাদের এক সেলে রাখুন। প্লীজ আমাদের অনুরোধ রাখুন।”

“মামার বাড়ির আবদার? শোন ছেলে ভালোভাবে আমার কথা শুনে চল তাহলে দেখবি সব সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। আর ঘাড় ত্যাড়ামি করলে ফল সেভাবে ভোগ করতে হবে। তাই ভেবে দেখ কোনটা করবি।”
কবিরের এই কথা শুনে পলাশ এবং মায়া ভয় পেয়ে যায়। তারা তার কথামতো চলার জন্য রাজি হয়ে যায়। কবির তাদের আলাদা সেলে পাঠিয়ে মায়ার বাবা, মায়ের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। মায়ার বাবা, মা সাথে আশরাফ ছিলো। এটা দেখে কবির শান্ত গলায় বলে,“ইনি কে? সবসময় আপনাদের সঙ্গেই দেখি।”

“আমার মামা স্যার। আমাদের পরিবারের একজন সদস্যর মতো।”
মায়ার বাবা শান্ত গলায় জবাব দেয়। কবির মাথা নাড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,“মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে একদম পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বুঝি?”
এই কথা শুনে মায়ার বাবা, মা চমকে যায়। আশরাফ এসব দেখে কিছুটা কঠিন গলায় বলে,“স্যার আমাদের মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার কেস করেছি আমরা। এখন যখন মেয়েকে পেয়েছেন তখন আমাদের সঙ্গে তাকে দিয়ে দিন। আমরা আমাদের মেয়ে নিয়ে যাই।”

”আচ্ছা। বিয়ে করার খুব তাড়া বুঝি? তাড়া থাকবে না। নিজের থেকে এত ছোট মেয়ে পাচ্ছেন। তাড়া তো থাকবেই।”
কবিরের এই কথা শুনে আশরাফ তার দিকে গভীর নজরে তাকায়। মায়ার বাবা বলে,“এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়।”

“আচ্ছা। পারিবারিক বিষয় নিয়ে নাই বা বললাম। বাদ দেই। কিন্তু আপনারা তো বলছিলেন আপনাদের মেয়ে নাবালক। কিন্তু সে তো বলছে তার বয়স উনিশ। তা নাবালক বলে একটু বেশি এডভান্টেজ নিতে চাচ্ছিলেন নাকি?”
এই কথায় দ্বিমত পোষণ করে মায়ার বাবা, মা। তাদের কথা অনুযায়ী মায়ার বয়স ষোলো। মায়ার মাথায় ভুলবাল কথা ঢুকিয়েছে ঐ ছেলে। কবির এসব শুনে বলে,“সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। মায়ার বার্থ সার্টিফিকেট আসছে। সেটা দেখলে সবটা প্রমাণ হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ মায়া যতি উনিশ বছরের হয় তবে সে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে। এই অধিকার তার আছে। কোর্টে এই মামলা উঠলে কোর্ট থেকে তাদের বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হবে। আশা করি আপনারা পুরো বিষয়টা বুঝছেন। এখন নিশ্চয় মেয়ে পেয়ে গেছেন, মেয়ে দিন, বাড়ি যাই এই কথাটি বলবেন না।”
কোর্ট মায়া এবং পলাশের বিয়ে দিয়ে দিতে পারে এই কথাটি জেনে মায়ার বাবা, মা হতাশ হয়। আশরাফও হতাশ হয়। তবে সে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। অতঃপর কবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,“স্যার দুই লাখ টাকায় হবে?”


চলবে,