#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ২১
#লেখিকা_দিশা_মনি
মিষ্টি হাসপাতালের বেডেই শুয়ে ছিল। তার শরীর স্বাস্থ্য তখনো অব্দি খুব একটা ভালো হয়নি। এমন সময় নার্সটি তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনার কি কোন সাহায্যের প্রয়োজন?”
মিষ্টির এই মুহুর্তে ইয়াসিনদের কথা মনে পড়ে। এই মার্সেই শহরে তাদের থেকে আপন মিষ্টির আর কেউ নেই। তাই মিষ্টি বলে ওঠে,
“আপনি কি আমাকে দয়া করে আপনার ফোন থেকে একটা ফোনকল করতে দেবেন?”
“কেন নয়, এই নিন।”
বলেই নার্সটি মিষ্টির দিকে তার ফোনটা বাড়িয়ে দেয়। মিষ্টি ফোনটা হাতে নিয়েই ইয়াসিনের নম্বরটা ডায়াল করে। অতঃপর সেই নাম্বারে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হবার পর বিপরীত দিক থেকে ফোনটা রিসিভ হতেই মিষ্টি বলে ওঠে,
“হ্যালো, ইয়াসিন।”
মিষ্টি কন্ঠ শুনেই ইয়াসিন হতবাক সুরে বলে,
“হ্যালো, মিষ্টি! আপনি কোথায় আছেন? ঠিক আছেন তো? নিউজে এসব কি দেখাচ্ছে..আপনাকে নাকি গ্রেনেডসহ ধরা হয়েছিল তারপর নাকি আপনাকে ক্রসফায়ার করা হয়েছে..আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
মিষ্টি নম্রভাবে বলে,
“একটু শান্ত হন,ইয়াসিন। আমি আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।”
বলেই মিষ্টি সব ঘটনা ইয়াসিনকে খুলে বলে। সব শুনে ইয়াসিন রেগে বলে,
“ঐ ইন্সপেক্টর পলকে আমি ছাড়ব না। ও কিভাবে পারল আপনার সাথে এমন করতে? ভাগ্য ভালো আপনি বেঁচে আছেন। নাহলে কি হয়ে যেত?”
মিষ্টি বলে,
“আমি ঠিক আছি। আর ওনার হয়তোবা কোন দোষ নেই। উনি তো আমাকে একজন সন্ত্রাসীই ভেবেছেন। তাই একজন সন্ত্রাসীর মতোই ব্যবহার করেছেন আমার সাথে।”
“আপনি মোটেই সন্ত্রাসী নন, মিষ্টি। একথা আমি মোটেই বিশ্বাস করি না। আপনি কিছুতেই একজন সন্ত্রাসী হতে পারেন না।”
“এতটা বিশ্বাস আমার উপর?”
মিষ্টি এমন প্রশ্নে ইয়াসিন কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। ব্যাপারটা সামাল দিতে বলে,
“আপনি এখন কোথায় আছেন মিষ্টি? আমায় বলুন, আমি যাব আপনার সাথে দেখা করতে। আপনাকে আবার নিয়ে আসবো আমার বাড়িতে। আম্মু, আমিনা ওরা ভীষণ উদ্বিগ্ন আপনার জন্য।”
“আপনারা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন ইয়াসিন। আমি চাই না,আমার জন্য আপনাদের উপর কোন বিপদ নেমে আসুক।”
“এসব আপনি কি বলছেন?”
“ঠিকই বলছি। আপনার মা এবং বোনকে বলে দেবেন আমি ঠিক আছি। সুযোগ পেলে ওনাদের সাথে দেখা করে আসব। আপনি নিজের আর নিজের পরিবারের খেয়াল রাখবেন।”
বলেই মিষ্টি ফোনটা রেখে দেয়। ইয়াসিন এদিক থেকে হ্যালো হ্যালো করতে থাকে। কিন্তু মিষ্টি ফোনটা রেখে দিয়েই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ইয়াসিনের নাম্বারটা ব্লকলিস্টে রেখে নার্সের হাতে ফোনটা তুলে দিয়ে বলে,
“এরপর যদি কেউ আপনার কাছে ফোন করে আমার ব্যাপারে কিছু জানতে চায় তাহলে আপনি বলবেন আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছি। কোথায় গেছি সে ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন না।”
“আচ্ছা।”
★★★
ইতিমধ্যেই মিষ্টিকে যে ফাঁসানো হয়েছিল সেই ভিডিওটা ফ্রান্সে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে যায়। নানান মানুষ ব্যাপারটা নিয়ে নানান মত দিচ্ছিল।
বর্তমানে এলিজা ও পল মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এলিজা পলের সামনে নিজের মাথাটা নিচু করে আছে। পল হতাশ স্বরে বলে,
“কি যেন বলেছিলেন আপনি মিস এলিজা? আপনি ফ্রান্সের সেরা গোয়েন্দা,আপনার তদন্তে কোন ভুল হতেই পারে না। এই তার নমুনা?”
এলিজা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমার কাছে যেই রিপোর্ট ছিল আমি সেই অনুযায়ীই কথা বলেছি। আর মাঝে মাঝে এমন সামান্য ভুল হতেই পারে,,”
পল রেগে বলে,
“সামান্য? এত বড় একটা ভুলকে আপনার কাছে সামান্য মনে হচ্ছে? শুধুমাত্র আপনার দেয়া ভুল ইনফরমেশনের জন্য একজন নিরপরাধ মানুষকে মরতে হয়েছে।”
“আচ্ছা, মেনে নিচ্ছি যে আমার দেয়া রিপোর্ট ভুল ছিল৷ কিন্তু ঐ মেয়েটাকে যে সন্ত্রাসী হিসেবে ফাঁসানো হয়েছিল সেটাও কি আমার দোষ? আপনি তো ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতেই মেয়েটাকে এনকাউন্টার করেছেন। তাহলে আমাকে কেন দোষ দিচ্ছেন?”
এবার এলিজা কিছুটা প্রতিবাদ জানিয়ে বলল। এলিজার এই কথার জবাবে পল কিছু বলতে পারল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আপনি এখন আমার সামনে থেকে চলে যান মিস এলিজা।”
এলিজা যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। হঠাৎ কি মনে করে যেন আবার পিছন ফিরে বলে,
“আচ্ছা৷ একটা কথা সত্য করে বলুন তো, ঐ মিষ্টি নামের মেয়েটাকে কি আপনি কোন ভাবে চিনতেন? ওর সাথে কি আপনার কোন সম্পর্ক ছিল?”
“নান অফ ইউর বিজনেস।”
পলের এই জবাবে এলিজা ভীষণ অপমানিত বোধ করে রাগে গজগজ করতে করতে স্থানত্যাগ করে।
পল এলিজাকে যেতে দেখে বিড়বিড় করে বলে,
“ঠিকই ধরেছেন আপনি মিস এলিজা। মিষ্টির সাথে আমার একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাও যে সে সম্পর্ক না, জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক।”
★★
এক সপ্তাহ পর,
পুরো মার্সেই শহর মেতে উঠেছে উৎসবের আমেজে। আর এক সপ্তাহ পরেই ক্রিসমাস। মার্সেই শহরে ক্রিসমান অনেক বড় পরিসরে পালিত হয়। এখন থেকেই মার্সেইয়ের সাধারণ লোকেরা ক্রিসমাসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
এলিসও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সে আজ এসেছে ক্রিসমাস মার্কেটে। তার উদ্দ্যেশ্য ক্রিসমাস উপলক্ষে কিছু শপিং করবে। নিজের গাড়িতে না এসে ইয়াসিনের ক্যাব বুক করে এই ক্রিসমাস মার্কেটে এসেছে সে। ইয়াসিন পুরোটা রাস্তা মুখ ভাড় করে এসেছে। অথচ তার এই গম্ভীর মুখটা দেখতেই ভীষণ ভালো লাগছে এলিসের৷ সে বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইয়াসিনের দিকে। এলিসকে ক্রিসমাস মার্কেটে নামিয়ে দিয়েই ইয়াসিন অপেক্ষা করছিল তার ফিরে আসার জন্য। কারণ এলিস তার ক্যাব তিন ঘন্টার জন্য ভাড়া করেছে।
ইয়াসিনের সময় কাটছিল উদাসীন ভাবে। তাই সে ক্যাব থেকে নেমে বাইরে আসল। এলিস তখন কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিল। একপলক এলিসের দিকে তাকিয়েই ইয়াসিন নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।
এমন সময় হঠাৎ করে চোখ ঘুরিয়ে মার্কেটের অন্য পাশে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় ইয়াসিন। কারণ এখানে সে স্পষ্ট মিষ্টিকে দেখতে পায়। একটি বর্ণিল আলোক সজ্জার দোকানে কাজ করছিল মিষ্টি। তাকে দেখামাত্রই ইয়াসিন মিষ্টির কাছে ছুটে যায়। মিষ্টি ইয়াসিনকে দেখে অবাক হয়। ইয়াসিন হাপাতে হাপাতে বলে,
“আপনি এখানে কি করছেন মিষ্টি? আপনি জানেন, আপনাকে এক সপ্তাহ ধরে আমি কোথায় কোথায় খুঁজেছি?”
এমন সময় সেই দোকানের মালিক তথা একজন বৃদ্ধা বলে ওঠেন,
“তুমি কি এনাকে চেনো, মা শেরি(প্রিয়)”
মিষ্টি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আপনাকে বলেছিলাম না গ্রান্ড-মেরে(দাদিমা) এই মার্সেই শহরে যখন আমি এসেছিলাম তখন কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল৷ ইনিই সেই শুভাকাঙ্ক্ষী মোহাম্মদ ইয়াসিন আল খলিলি।”
বৃদ্ধা হেসে বলেন,
“ওকে এখানে বসতে দাও।”
ইয়াসিন মিষ্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“আপনি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে ফিরে চলুন মিষ্টি। আম্মু এবং আমিনা আপনাকে দেখে খুশি হবে।”
মিষ্টি বিনয়ের সাথে বলে,
“জ্বি, অবশ্যই। আমি শীঘ্রই তাদের সাথে দেখা করতে যাব। তবে এখন নয়৷ এখন আমার এই মার্কেটে কিছু জরুরি কাজ আছে।”
“এখানে আপনার কি জরুরি কাজ মিষ্টি?”
মিষ্টি ব্যাপারটা এড়ানোর জন্য বলে,
“আপনার মা কেমন আছেন? আর আমিনা?”
“ওরা সবাই ভালো আছে। তবে আপনাকে দেখলে হয়তো আরো ভালো হয়ে যাবে।”
“আর আপনি?”
মিষ্টির এহেন প্রশ্নে ইয়াসিন থতমত খেয়ে যায়। তার মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছিল না। এমন সময় এলিস সেখানে এসে বলে,
“ইয়াসিন, তুমি এখানে! আর আমি তোমাকে সব যায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি৷ আমার শপিং হয়ে গেছে, চলো এখন যাই এখান থেকে।”
কথা বলতে বলতেই এলিসের নজর যায় মিষ্টির দিকে। মিষ্টিকে দেখে সেও ভীষণ অবাক হয়৷ মিষ্টি ইয়াসিনকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“আপনি এখন যান। আমি কাল-পরশুর মধ্যে আপনার পরিবারের সাথে দেখা করে আসব।”
এলিস মিষ্টিকে প্রশ্ন করে,
“আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন? ইয়াসিন আপনাকে কতো খুঁজেছে!”
“আমি মার্সেইতেই ছিলাম। সঙ্গত কারণে আত্মগোপনে ছিলাম। তবে খুব শীঘ্রই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরব। আশা করছি, এখানকার কাজ শেষ করে শীঘ্রই নিজের দেশে ফিরতে পারব।”
বলেই সে স্মিত হাসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ২২
#লেখিকা_দিশা_মনি
মিষ্টি ভূমধ্যসাগরের তীরের ঐ ক্রিসমাস বাজারেই কাজ করছিল৷ দোকানে ঘুরতে আসা সকল ব্যক্তিসহ আশেপাশে দৃশ্যমান সকল মানুষের দিকেই তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল৷ দোকানের মালকিন বৃদ্ধা মিষ্টির উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“কি হলো? তুমি কি কাউকে খুঁজছ?”
মিষ্টি বলে,
“না, কাউকে খুঁজছি না৷ আচ্ছা, ক্রিসমাসের আর কয়দিন বাকি?”
বৃদ্ধা ভেবে বলেন,
“এই তো, আর মাত্র ২ দিন পরেই ক্রিসমাস।”
বৃদ্ধার কথা শুনেই মিষ্টি মনে মনে কিছু একটা হিসাব নিকাশ করে। অতঃপর মনে মনে বলে,
“তাহলে আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। চারিদিকে আরো ভালো করে নজর রাখতে হবে। যেকোন সময় যেকোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।”
এই ভাবনা থেকেই মিষ্টি বৃদ্ধাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“আপনি একটু এখানে থাকুন। আমি একটু আসছি।”
বলেই সে বাইরে আসে। একটু দূরে সরে এসে খেলায় করে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটছে নাকি কোথাও৷ হঠাৎ করে মিষ্টি কারো একটা সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ডান হাটুতে বেশ খানিকটা চোট পেয়ে সে আহ করে ওঠে। আর ঠিক সেই সময়েই কাছে পিঠে কোথাও একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
মিষ্টি সজাগ হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“তাহলে যার আশংকা করছিলাম সেটা ঘটেই গেল! হে আল্লাহ, আপনি আমার সহায় হোন৷ আমাকে কিছু একটা করতে হবে।”
★★
ইয়াসিন এলিসকে ক্যাবে নিয়ে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,
“আপনার বাসায় এসে গেছি। এখন আপনি নামতে পারেন।”
এলিস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিন্তু আমি তো তোমার ক্যাব ৩ ঘন্টার জন্য বুকড করেছিলাম। আর তিন ঘন্টা হতে এখনো পাঁচ মিনিট বাকি আছে।”
এলিসের কথা শুনে ইয়াসিন বিরক্ত হয়৷ কিছুটা রাগী স্বরেই বলে,
“তো এখন কি এই পাঁচ মিনিটের জন্য আপনাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে?”
“নাহ, তার দরকার নেই৷ আমি বরং এই পাঁচ মিনিট তোমার গাড়িতেই বসে থাকি৷ আরো পাঁচটা মিনিট ধরে দুচোখ ভড়ে তোমায় দেখি!”
ইয়াসিন এবার তীব্র রাগে ফেটে পড়ে নিজের আসন থেকে নেমে এলিসকে গাড়ি থেকে টেনে নামায়। ঘটনার আকস্মিকতায় এলিস হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ ইয়াসিন তীব্র ক্রোধের সহিত বলে ওঠে,
“এই শুনুন, এতদিন আপনার অনেক নাটক আমি সহ্য করেছি৷ কিন্তু আর নয়। আজ আপনাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমার আপনার প্রতি কোন আগ্রহ নেই৷ আপনি যদি ভেবে থাকেন এমন এমন কথা বলে আমার মন জয় করতে পারবেন তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমার আপনার বা আপনার এসব কথা নিয়ে কোন ভাবান্তর নেই। আপনি এভাবে আমায় বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলে সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।”
ইয়াসিনের থেকে এহেন কথা শুনে এলিস ব্যথিত স্বরে বলে,
“এভাবে কেন বলছ ইয়াসিন? আমাকে কি তোমার সত্যিই একটুও ভালো লাগে না? কেন আমি কি দেখতে অসুন্দর? আমার মধ্যে কি ভালো লাগার মতো কোন কিছু নেই? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না?”
“না, যায়না। হতে পারে আপনি সুন্দরী। হতে পারে আপনি গুণবতী। কিন্তু আপনার আর আমার মধ্যে কোন কিছু হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই, আমি আপনাকে আজ শেষ বারের মতো বললাম, এরপর থেকে আমার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন।”
এলিসের চোখে জল চলে আসে৷ সে হাতের উল্টোপিঠে চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে বলে,
“বেশ, আমি এখন থেকে তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলব। এতেই যদি তুমি সুখী হও তাহলে তাই হবে। আমি আর তোমার ত্রীসীমানাতেও আসব না। তবে একটা কথা জেনে রেখো, নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমি শুধু তোমাকে আর তোমাকেই ভালোবেসে যাব। আমার এই ভালোবাসা মিথ্যা নয়। একদিন তুমিও সেটা উপলব্ধি করবে দেখো।”
বলেই সে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমের দিকে দৌড় দেয়। ইয়াসিন সেখানেই দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে৷ অতঃপর নিজের গাড়ি চালিয়ে রওনা দেয় বাড়ির দিকে।
★★
মার্সেইয়ের ক্রিসমাস বাজারে আজ বেশ হট্টগোল লেগে গেছে। যতদূর জানা গেছে, বিস্ফোরণটা বেশ লঘু মাত্রার ছিল এবং এতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তবে এই ঘটনাতে অনেক মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকজন সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
পুলিশের একটা টিম ঘটনার তদন্তে সেখানে উপস্থিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইমানুয়েল পলও ছিল। দূর থেকে ইমানুয়েল পলকে দেখতে পায় মিষ্টি। সাথে সাথেই নিজের মুখটা নিকাবে আবৃত করে নেয়।
মিষ্টি সরু চোখে ইমানুয়েলের দিকেই তাকিয়ে ছিল৷ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নেয়৷ অতঃপর নিজের দোকানে ফিরে যায়। সেখানে ঐ বৃদ্ধা মহিলা মিষ্টিকে দেখে বলেন,
“তুমি ঠিক আছ তো? শুনলাম বাজারে নাকি একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে? আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। তার মধ্যে আবার তোমাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে আমার ভয় আরো বেড়ে গেছিল। আচ্ছা, কে বা কারা এই ঘটনাটা ঘটালো?”
মিষ্টি তাকে আশ্বস্ত করে বলে,
“আমি একদম ঠিক আছি। পুলিশ এসেছে ঘটনার তদন্ত করতে। আশা করি, এসবের সাথে জড়িতরা ধরা পড়বে।”
এমন সময় কিছু পুলিশ সদস্য তাদের দোকানের সামনে আসে। তাদের মধ্যে একজন মিষ্টিকে আপাদমস্তক দেখে বলে,
“আপনি বোরকা কেন পড়েছেন? আপনার মুখটা দেখতে চাই। আপনার বোরকাটা সরান তো।”
মিষ্টি তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই নিজের মুখ থেকে বোরকাটা সরিয়ে দেয়। মিষ্টিকে দেখেই তো দুজন পুলিশ সদস্য অবাক হয়ে যায়। তারা কিছু বলতে যাবে এমন সময় বাজারের মধ্যে আরো কিছু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকলেই সজাগ হয়ে ওঠে। মানুষ এলোপাতাড়ি দৌড়াতে শুরু করে। মিষ্টি সাবধানে বৃদ্ধাকে আকড়ে ধরে বলে,
“আপনি আমার সাথে আসুন। আপনাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
বলেই সে বৃদ্ধাকে নিয়ে রওনা দেয়। এদিকে মার্সেই বাজারে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটছিল৷ পুলিশি নিরাপত্তা সত্ত্বেও সকলের চোখ এড়িয়ে এধরণের ঘটনা ঘটছিল। কে বা কারা রয়েছে এর পেছনে সে নিয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
★★
ইমানুয়েল পল একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করেছে। এই লোকটাকে গত কয়েকদিন থেকে বাজারের চারপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। ইমানুয়েল পল এই মুহুর্তে তাকে সরাসরি প্রশ্ন করে,
“বলুন, আপনি কি এসবের সাথে কোন ভাবে জড়িত? মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন না। নাহলে আপনার বিপদ বাড়বে।”
আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ ঐ ব্যক্তিটি মুখ খোলে না। যা ইমানুয়েল পলকে আরো রাগিয়ে দেয়। সে ঐ ব্যক্তিটিকে সজোরে একটা থাপ্পড় মে*রে বলে,
“ভালো চাইলে মুখ খোল, নাহলে তোর বিপদ বাড়বে।”
এতক্ষণে লোকটা মুখ খুলে বলে,
“বিপদ আমার নয়, বিপদ হবে তোদের। এই মার্সেই শহর, ফ্রান্স, এই গোটা পৃথিবী সব..সহ ধ্বংস হয়ে যাবে। কিচ্ছু টিকে থাকবে না। তোরা কিচ্ছু করতে পারবি না কিচ্ছু না।”
“তবে রে..তোর এত বড় সাহস..”
ইমানুয়েল পল আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে বাজারে কিছু বন্দুকধারী ব্যক্তি প্রবেশ করে। তারা এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে। সবটা এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটে যায় যে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকে প্রাণ হারায়
ইমানুয়েল পলের দিকেও কেউ একটা গুলি ছুড়ে মা*রে তবে সঠিক সময়ে মিষ্টি এসে পলকে ধাক্কা দিয়ে রক্ষা করে। অতঃপর তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“আপনি ঠিক আছেন তো রাফসান?”
মিষ্টির মুখে নিজের আসল নাম শুনে রাফসান হতবাক হয়ে যায়। মিষ্টি রহস্যময় একটা চাহনি দিয়ে বলে,
“এখনই এতোটা অবাক হবেন না। এখনো অনেক অবাক হওয়া বাকি আছে আপনার।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨