ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব-২৩+২৪

0
34

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ২৩(ধামাকা)
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল রাফসান। তার চোখে ছিল নানান অজানা প্রশ্নের উত্তর জানার কৌতুহল। সেই কৌতুহল বাড়াতেই বোধহয় মিষ্টি একটু অস্পষ্ট স্বরে বলল,
“এদিকের সমস্যা মিটলে আশেপাশে কোন ক্যাফেতে গিয়ে বসবেন চলুন। সেখানে অনেক সত্য জানতে পারবেন আপনি।”

রাফসানকে কথাটা বলে দ্বিধার মধ্যে ফেলে একটু সামনের দিকে এগিয়ে যায় মিষ্টি। রাফসানও কৌতুহলকে পাশে ঠেলে নিজের কাজের মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করে। আপাতত তাকে এই সমস্ত বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদেরকে ঠেকাতে হবে।

★★
কফিশপে মুখোমুখি বসে আছে মিষ্টি এবং রাফসান। দুজনের মুখেই কোন কথা নেই। দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে মিষ্টিই বলে ওঠে,
“আপনার সাথে আমার বিয়ে হওয়া, অতঃপর আমার মার্সেইতে আসা, আপনার সাথে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যাওয়া সবটাই ছিল আমার পূর্ব পরিকল্পনার অংশ!”

রাফসান স্তম্ভিত হয়ে মিষ্টির দিকে তাকায়। মিষ্টি কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলে,
“আপনি হয়তো জানেন যে, আমার বাবা মোর্শেদ চৌধুরী একজন নামী বিজনেসম্যান তবে তার আরো একটা গোপন পরিচয় আছে। তিনি একজন আন্ডারকভার ডিটেকটিভ এজেন্সির সদস্য। যিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত চতুরতার সাথে গোয়েন্দাকিরি করে এসেছেন। এমনকি তার পরিবারের লোকজনও এ ব্যাপারে জানত না! আমি নিজেও জেনেছি আমার ১৭ বছর বয়সে। তাও আকস্মিক ভাবে৷”

রাফসান শিকদার বলেন,
“তার মানে তোমার বাবার মাধ্যমেই কি তুমি এই মিশন সম্পর্কিত তথ্য পেয়েছ?”

মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলে,
“অনেকটা সেরকমই বলা চলে। একদিন বাবার রুমে প্রবেশ করে তার বিছানার উপর একটা ফাইল দেখে কৌতুহলবশত সেটা খুলে ফেলি আমি। আর তখনই আমি বাবার আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারি। বাবা এমনিতে এমন ভুল করার মানুষ নয় কিন্তু সেদিন তার তাড়াহুড়োয় করায় একটা ভুল আমাকে সত্যের সামনে নিয়ে আসে। অতঃপর আমি বাবার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাই। তখন বাবা আমায় সব খুলে বলে। যে কিভাবে কিছু মানুষ পরিকল্পনা করছে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে দেবার। আর কিভাবে কিছু সাহসী ব্যক্তি পৃথিবীকে এই সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে গোপন মিশন শুরু করেছে। বাবার কাছ থেকেই আমি এসব তথ্য সম্পর্কে জানতে পারি৷ এসব জেনে আমি অবাক হয়ে যাই! তবে আমার মনেও হঠাৎ করে ইচ্ছা ভেসে ওঠে এই মিশনে যোগ দেয়ার। বাবাকে এই ব্যাপারে জানাতেই তিনি আমায় সাথে সাথে নিষেধ করে দেন। কারণ এই মিশনে জীবনের অনেক ঝুঁকি আছে তাছাড়া তিনি ভাবেন, আমি এই মিশনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নই৷ কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকেই বেশ একরোখা ছিলাম৷ তাই আমার জেদের কাছে বাবার বারণ বেশিক্ষণ টিকল না। একসময় বাবা আমায় অনুমতি দিয়েই দিল এই মিশনে যুক্ত হবার।তারপর থেকেই আমি নিজেকে এই মিশনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য গোপনে ট্রেনিং নিতে শুরু করি। দীর্ঘ ৫ টা বছর আমি এই মিশনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। অতঃপর আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি কিভাবে এই মিশনে সম্পৃক্ত হবো৷ বাবা আমাকে জানায়, এই মিশনে আমাকে ফ্রান্সে পাঠানোর জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্সের মার্সেই শহরে। কেননা,এই শহরে অনেক পারমাণবিক স্থাপনা থাকায় সেসকল সন্ত্রাসীদের অন্যতম প্রধান টার্গেট ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এই মার্সেই শহর। তবে আমার এই মিশনে যোগ দেয়াটা এতটা সহজ ছিল না। কারণ আমার মা তখনো অব্দি এই ব্যাপারে কিছু জানতেন না। তিনি বাবার আসল পরিচয়ও জানতেন না। তাই তার কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে আমার এভাবে মার্সেই শহরে আসাটা সম্ভব ছিল না। এসবের জন্যই মূলত আমি বাবাকে বলি কোন একটা উপায় বের করতে। এমন সময় বাবা আপনার ব্যাপারে জানতে পারেন যে আপনিও এই মিশনের সাথে যুক্ত। আর যেহেতু আপনার বাবার সাথে আমার বাবার আগে থেকেই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তাই তার খাতিরেই আমাদের বিয়েটা ঠিক করেন উনি। সবটা পরিকল্পনামাফিকই চলে। আপনি আমাকে বিয়ে করার পর মার্সেইতে চলে আসেন। অতঃপর আমি অবলা নারী হওয়ার অভিনয় চালিয়ে যাই। মাসখানেকের মধ্যে আপনার মৃত্যুর খবর আসতেই আমি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করি। আপনাকে খোঁজার কথা বলে এই মার্সেই শহরে পা রাখি। এটা বলায়, এই মার্সেই শহরে আসার একটা অজুহাতও পাওয়া গেছে এবং কেউ কিছু সন্দেহও করে নি।”

রাফসানের কাছে এবার সবটা ধীরে ধীরে পরিস্কার হতে থাকে। সে এবার মিষ্টির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি তো দেখছি অনেক বুদ্ধিমতী! আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এতটা ধুরন্ধর বের হবে!”

মিষ্টি একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলে,
“আমার ধুরন্ধরতা সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়া নেই! আপনি আপনার মাকে যেই চিঠিটা দিয়ে এসেছিলাম সেখানে তো শুধু এটাই লিখে রেখেছিলেন যেন আপনাকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করি। এদিকে আমার একটা বিশেষ গুণ আছে জানেন? আমি মানুষের হাতের লেখা হুবহু নকল করতে পারি। এই গুণটাকে কাজে লাগিয়েই আমি মার্সেইতে আপনার গোপন মিশনে থাকার কথা আর আপনাকে খুঁজতে যাওয়ার কথা জুড়ে দেই! আর এতেই মার্সেইতে আসার আরো শক্তপোক্ত কারণ দাঁড় করাতে পারি। তারপর এখানে এসেই নিজের মোবাইল ফোনটা ফেলে দেই যাতে বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। নিজেরই ঠিক করা লোককে দিয়ে নিজের পাসপোর্ট, ভিসা সব অপহরণও করাই! কারণ আমি চাই নি, এখানে কোন ভাবে আমার আসল পরিচয় প্রকাশ পাক।”

রাফসান শিকদার মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে ইয়াসিন আল খলিলিদের সাথে তোমার দেখা হওয়া থেকে শুরু করে বাকি ঘটনার মানে কি?”

মিষ্টি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“জানি না, এ ব্যাপারে আমি আন্দাজ করিনি কিছুই। যখন আমি নিজের পাসপোর্ট, ভিসা সব ছিনতাই করাই তখনই ভেবে নিয়েছিলাম মার্সেইতে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে থাকব। কিন্তু কোথা থেকে যেন ইয়াসিন নামক ব্যক্তিটার সাথে হঠাৎ দেখা হলো। উনি আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ আর তারপর তো এত কিছু ঘটে গেল। ছেলেটা ভীষণ ভালো জানেন, আর ওনার পরিবারও।”

মিষ্টির মুখে এভাবে অন্য একটা ছেলের প্রশংসা শুনে রাফসান শিকদার বেশ জেলাস হয়। সেটা তার মুখ চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। মিষ্টিও সেটা বুঝতে পেরে মনে মনে বেশ হাসে। এদিকে রাফসান গম্ভীর স্বরে বলে,
“কিন্তু এলিজা যে তোমায় সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করল এর মানে কি?”

মিষ্টি হেসে বলে,
“মিস এলিজার সাথে আমার এখানে আসার আগেই যোগাযোগ হয়েছিল। আমি চাই নি, আমাকে এখানে কেউ সন্দেহ করুক যে আমি কোম গোপন মিশনে আছি। বিশেষ করে সন্ত্রাসীরা। আর সেজন্যই নিজের পরিচয় লুকাতে এই নাটক করেছি। আর এর ফলটাও হাতেনাতে পেয়েছি। যখন এখানকার সন্ত্রাসীরা বুঝতে পেরেছে পুলিশ আমাকে সন্ত্রাসী বলে সন্দেহ করছে তখন তারা আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার ব্যাগে গ্রেনেড রেখে গেছে। আমি তো অল্পের জন্য তাদের ধরেও ফেলেছিলাম কিন্তু চোখের নিমেষে তারা যেন হারিয়ে গেল! অতঃপর না জানি কে রেলস্টেশন থেকে আমায় কিডন্যাপ করেছিল। তবে সেই সময় আমার আবছা আবছা জ্ঞানে আমি কিছু কথা শুনি৷ তারা পরিকল্পনা করছিল ক্রিসমাসের কিছুদিন আগেই মার্সেই এর এই ক্রিসমাস বাজারে হামলা করার! আর এটা শুনেই মূলত আমি এই বাজারে চলে আসি। যাতে করে সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাচাতে পারি।”

“আর ভূমধ্যসাগরের তীরে তোমায় কে গুলি করেছিল? এই ব্যাপারে কিছু জানো?”

“না, এটাও একটা অমিমাংসীত রহস্য। তবে এসব রহস্যের সমাধান খুব শীঘ্রই হবে। আমার মনে হয়, ঐ সন্ত্রাসীরা এই বার ক্রিসমাসের দিন বড় কোন হামলার পরিকল্পনা করছে। আমাদের এখনই দ্রুত একশন নিতে হবে। যাতে তাদের ঠেকাতে পারি।”

‘ঠিক বলেছ তুমি। আমাদের মিশনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় এসে গেছে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ২৪
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টি ও রাফসান একসাথে বসে কিছু সময় কথা বলে। অতঃপর মিষ্টি বলে ওঠে,
“আমি তাহলে এখন উঠি।”

রাফসান জানতে চায়,
“কোথায় যাবে এখন তুমি?”

“আমাকে এখন এই বাজারেই অবস্থান করতে হবে। এখানে নজর রেখে দেখতে হবে যদি ওদের পরবর্তী গতিবিধি সম্পর্কে কোন তথ্য পাই।”

রাফসান কিছুটা উদ্বিগ্ন স্বরে বলে,
“এখানে থাকাটা এতটা নিরাপদ নাও হতে পারে৷ এমনিতেই তোমার উপরে একবার প্রাণঘাতী হামলা হয়েছিল। যদি আবারো ওরা তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।”

“এই মিশনে তো সব পিছুটান ভুলেই নাম লিখিয়েছিলাম আমরা, মিস্টার রাফসান। তাহলে এখন কি আর এত ভয় পেলে চলবে?”

মিষ্টির এই কথার পরে রাফসান আর কিছু বলতে পারে না। তবে তার মিষ্টির জন্য চিন্তাও দূর হচ্ছিল না। অনেক ভেবে রাফসান বলে,
“আমি এদিকে নজর রাখছি। নতুন কোন তথ্য পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আপাতত তুমি আমার সাথে চলো।”

“কিন্তু..”

“কোন কিন্তু নয়। এই মিশনটা সফল ভাবে শেষ করতে হলে আমাদের দুজনকেই সুস্থ থাকতে হবে। সেটা মাথায় রেখো।”

মিষ্টি আর অমত করতে পারে না। অতঃপর রাফসান মিষ্টিকে নিজের গাড়িতে করে ভূমধ্যসাগরের তীরের রাস্তা ধরে নিয়ে যেতে থাকে। মিষ্টি গাড়ির জানালা দিয়ে মার্সেই বন্দরের দৃশ্যগুলো দেখছিল। এদিকে রাফসান গাড়ি চালাতে চালাতে বারংবার আড়চোখে মিষ্টিকে দেখছিল। এই মেয়েটাকে বিয়ে করেই দেশে ফেলে চলে এসেছিল সে, বাবার বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কখনো সেরকম কথা বা দেখা সাক্ষাৎও হয়নি। অথচ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরে মার্সেইতে সাক্ষাতের পরই এই মেয়েটার প্রতি এক আকাশ সমান মায়া অনুভব করছে রাফসান। একথা ভাবতেই রাফসান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে৷ আসলেই কি সব পিছুটানের উর্দ্ধে যাওয়া সম্ভব মানবজাতির পক্ষে?

এরইমধ্যে মিষ্টি হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়? এরপর কি ঐ সমস্ত সন্ত্রাসীরা আরো ভয়াবহ কোন পরিকল্পনা করছে? আগের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় এখন নতুন করে তারা কি ভাবতে পারে? আরো ভয়াবহ কিছু কি ঘটাতে পারে তারা?”

“এব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমি যতদূর শুনলাম গোটা মার্সেই শহরজুড়ে ক্রিসমাসের সময়টা রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে এবং শহরজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। ফ্রান্স সরকার গোটা ব্যাপারটা নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। ব্যাপারটাকে গুরুত্ব নিয়েই দেখছে তারা। আশা করি, বড় কোন দূর্ঘটনা এড়ানো যাবে।”

মিষ্টি তবুও নিশ্চিত হতে পারে না। এদিকে রাফসান একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে বলে,
“নামো এখন।”

মিষ্টি গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে বলে,
“এটা কার বাড়ি?”

“আমার।”

“কি?”

“মানে ইন্সপেক্টর ইমানুয়েল পলের। ইমানুয়েল পল বলতে ফ্রান্সে আসলেই একজন ছিলেন। যতদূর শুনেছি তিনি বেশ সাহসী এবং দূর্ধষ পুলিশ অফিসার ছিলেন। তবে কিছু বছর আগেই হঠাৎ করে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। তিনিও এই মিশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। আর আমাকে যখন ফ্রান্সে পাঠানো হয় তখন তার পরিচয়েই পাঠানো হয়।”

মিষ্টি রাফসানের কথা শুনে খানিক অবাক হয়। রাফসান মিষ্টিকে বলে,”আর কতক্ষণ এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে? ভেতরে চলো।”

“আচ্ছা।”

অতঃপর দুজনেই বাড়ির ভেতরে পা রাখে। মিষ্টিকে একটা সোফায় বসতে বলে রাফসান ভেতরে চলে যায়। অতঃপর নিজের পোশাক পরিবর্তন করে বাইরে এসে মাথা চুলকে বলে,
“তোমার পড়ার মতো কোন পোষাক নেই আমার কাছে..বাইরে থেকে হয়তো কিনতে হবে।”

“ব্যাপার না।”

“আচ্ছা, চলো। আমরা লাঞ্চটা করে নেই একসাথে। আসলে এখানে সবকাজ আমার নিজেকেই করতে হয়৷ রান্নাবান্নায় তো আমি ওতোটা পটু না। কোন রকমে একটু চিকেন স্টু বানিয়েছি। একটু খেয়ে দেখতে পারো, আশা করি খারাপ হবে না খেতে। আর রাজি না থাকলেও বলতে পারো, আমি বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দেই।”

“থাক, তার কোন প্রয়োজন নেই৷ আমি আপনার বানানো খাবারই খাবো।”

মিষ্টির এই কথায় রাফসান হালকা হাসে। অতঃপর মিষ্টিকে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে। রাফসান নিজেই মিষ্টিকে সব খাবার পরিবেশন করে দেয়৷ অতঃপর নিজেও খেতে বসে। মিষ্টি রাফসানের চিকেন স্টুটা বেশ আয়েশ করেই খাচ্ছিল। রাফসান জিজ্ঞেস করে,
“কেমন হয়েছে চিকেন স্টু টা?”

” দারুণ। আমার তো খুব ভালো লেগেছে। আপনি বেশ ভালোই রান্না করেন।”

“পাম দিচ্ছ?”

“আরে না..সত্যি..আমি নিজেও এত ভালো রান্না করতে পারি না। এত ভালো কেন..আমি তো কিছুই পারি না বলতে গেলে।”

“আহারে! আমার কত শখ ছিল বউয়ের হাতে রান্না খাওয়ার আর আমার বউ কিনা বলছে সে তেমন ভালো রান্নাই পারে না..”

কথাটা বলেই থেমে যায় রাফসান৷ মিষ্টির মুখে খানিক অস্বস্তি লক্ষ্য করে সে। মিষ্টি হঠাত বলে ওঠে,
‘কোন ব্যাপার না। আমি খুব শীঘ্রই ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করবো। অতঃপর আপনাকে সেই খাবারটা বানিয়ে খাওয়াবো। শুনেছি ফ্রান্সে অনেক সুন্দর সুন্দর ডিশ রয়েছে।’

“যতো যাই বলো, আমার কাছে বাঙালি খাবারই সেরা।”

“সে তো হবেই।”

এরপর দুজনেই হাসি মজা গল্পে মেতে ওঠে।

★★
ক্রিসমাসের আর মাত্র এক দিন বাকি। গোটা মার্সেই শহরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক জোরদার করা হয়েছে৷ মিষ্টি ও রাফসান আজ বেরিয়েছে একসাথে। মার্সেইয়ের সারা রাস্তা জুড়ে নানান বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত রয়েছে৷ এত উৎকন্ঠার মাঝেও উৎসবের আমেজে তেমন ভাটা পড়ে নি। যদিও মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম তবে পরিস্থিতি বেশ শান্ত এবং স্বাভাবিক। মিষ্টি খেয়াল করল হালকা হালকা তুষার এসে পড়ছে তার শরীরে। রাফসান সতর্ক কন্ঠে বলে,
“মনে হচ্ছে এখন তুষারপাত হবে। চলো আমরা নিরাপদ কোন স্থানে যাই।”

মিষ্টি রাফসানের হাতটা শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে,
“আমার খুব ইচ্ছা ছিল, তুষারপাত দেখার। একটু অপেক্ষা করবেন কি? এখানে থেকে আমি তুষারপাতের অনুভূতি নিতে চাই।”

“বেশ।”

কিছু সময়ের মধ্যেই আকাশ বেয়ে তুষার বর্ষিত হতে থাকে। তুষারপাত হতে দেখে মিষ্টি এখন বাচ্চাদের মতো খুশি হয়। রাফসান শুধু মুগ্ধ চোখে মিষ্টিকে দেখে যায়। ধীরে ধীরে তুষারপাতের পরিধি বাড়ে। মিষ্টির এবার ঠান্ডা লাগতে পারে ভেবে রাফসান বলে,
“এবার চলে এসো। বেশিক্ষণ এভাবে থাকা ঠিক নয়।”

“আর একটু থাকি না..”

রাফসান মিষ্টির হাত ধরে হেচকা একটা টান দেয়। যার ফলে মিষ্টি একদম তার বুকের উপর এসে পড়ে। মিষ্টি সেখান থেকে রাফসানের হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারছিল৷ তার নিজের হৃদস্পন্দনও যেন দ্বিগুণ হচ্ছিল। ধীরে ধীরে সে মুখ তুলে তাকায়। রাফসানও কিছুটা ঝুঁকে আসে। তাদের মধ্যে আর অল্প কিছুই দূরত্ব ছিল। দুজনেই দুজনের নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছিল। এই তুষারপাত যেন তাদের জন্য আরো বেশি প্রেমময় পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছিল।

রাফসান এবার নিজের ঠোঁট মিষ্টির ঠোঁটের আরো কাছে নিয়ে আসে। আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে মিষ্টির ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ঘটনায় আকস্মিকতায় মিষ্টি নিজের দুচোখ বন্ধ করে নেয়। মিষ্টি ও রাফসানের এই প্রণয় চলে তুষারপাতের তালে। দুজন যেনো একে অপরের মাঝে হারিয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨