ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব-২৭+২৮

0
29

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ২৭
#লেখিকা_দিশা_মনি

রাফসানকে এখনো অব্দি ভীষণ উদ্বিগ্ন লাগছে৷ এলিসের নিখোঁজ হবার পর ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এদিকে এলিজা নিজের বোনকে খুঁজে না পেয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে মিষ্টি পড়েছে দোটানায়। মিষ্টি রাফসানকে উদ্বিগ্ন দেখে তার কাধে হাত রেখে বলে,
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না। এই সমস্যা সমাধান করার কোন না কোন উপায় ঠিকই বের হবে। মিস এলিসকে আমরা খুঁজে পাবোই!”

“কিন্তু কিভাবে?”

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জানতে চায় রাফসান। এরইমধ্যে হঠাৎ করে থানায় হুলস্থুল বেধে যায়। সবাই একস্থানে হয়ে হট্টগোল করছিল। কি হয়েছে বুঝতে না পেরে মিষ্টি ও রাফসান সেদিকে এগিয়ে যেতেই থমকে যায়। সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ আনা হয়েছে। কিছু সময় পরেই এলিজা ছুটে এসে লাশের মুখ থেকে কাপড় ছড়ায়। অতঃপর দেখা যায় এলিসের নিথর দেহ। বেচারি মেয়েটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা কষ্ট দিয়ে তাকে মারা হয়েছে। এলিজা নিজের বোনের লাশ দেখে হু হু করে কেঁদে ওঠে। মিষ্টি ও রাফসানও হতবাক হয়ে যায়। মিষ্টি বলে ওঠে,
“ঐ সন্ত্রাসীরা মিস এলিসকে শেষ করে দিল!”

রাফসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“আমরা পারলাম না মিস এলিসকে বাঁচাতে। নিজেকে ভীষণ ব্যর্থ মনে হচ্ছে।”

মিষ্টি ক্রোধের সাথে বলে,
“কি চায় এসমস্ত সন্ত্রাসীরা? কেন তারা এই পৃথিবীকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে? কেন এত এত নীরিহ মানুষকে হ–ত্যা করছে? কি উদ্দ্যেশ্য তাদের? আর কারাই বা রয়েছে এসবের পেছনে? সকলের খোঁজ আমাদের বের করতেই হবে। নাহলে এভাবে আরো হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাতে থাকবে। আমাদের নিজেদের কাজের গতি বাড়াতেই হবে মিস্টার রাফসান। এত মানুষকে আমরা কিছুতেই ম*রতে দিতে পারি না।”

রাফসানও বলে,
“ঠিক বলেছ তুমি। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধরতে হবে। এরা আরো কোন বড় ক্ষতি করার আগেই আমাদের এদের ধরতে হবে। নাহলে যে গোটা মানব সভ্যতা বিপদের মুখে পড়বে।”

মিস্টার ল্যুঁই প্যারিস থেকে কিছু সময় আগেই ফিরলেন। সেখান থেকেই সরাসরি থানায় এলেন তিনি। এসেই নিজের মেয়ের মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে মিষ্টির ভীষণ খারাপ লাগল। মিষ্টি বলল,
“নাহ, এভাবে আর কোন বাবার বুক খালি হতে দেয়া যাবে না। আমাকে এবার কোন স্টেপ নিতেই হবে।”

★★
এলিসের দেহের পোসমর্টেমের পর মার্সেই শহরের একটি খ্রিষ্টান কবরস্থানে এলিসকে দাফন করা হয়। এলিসের শেষকৃত্য সেখানেই সম্পন্ন হয়। ফাতিমা বিবি, আমিনা সবাই এসেছিল সেখানে। কিন্তু ইয়াসিন আসেনি। মিষ্টি ব্যাপারটা লক্ষ করেছে৷ তার মনে ব্যাপারটা নিয়ে কেমন খটকা লাগছিল। কারণ সে যতদূর বুঝেছে এলিস মেয়েটা ভীষণ ভালোবাসত ইয়াসিনকে। ইয়াসিনের মনে হয়তো সেরকম অনুভূতি ছিল না। কিন্তু তাই বলে মেয়েটা মরে যাবার পরেও একবার দেখতে এলো না। মিষ্টি এব্যাপারে জানতে ফাতিমা বিবির কাছে যান। ফাতিমা বিবি এলিসের জন্য দুফোটা অশ্রু বিসর্জন করেন। এলিস গিয়ে ফাতিমা বিবিকে জিজ্ঞেস করে,
“আন্টি, আপনার ছেলে কোথায়?”

ফাতিমা বিবি মিষ্টিকে দেখে অবাক হন। বলেন,
“মিষ্টি মা, তুমি এখানে? তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?”

“সেসব অনেক কথা। আপনাকে পড়ে নাহয় বলব। কিন্তু এখানে আপনারা সবাই এসেছেন অথচ মিস্টার ইয়াসিন আসেনি। ব্যাপারটা কেমন জানি খটকা লাগছে আমার।”

ফাতিমা বিবি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমিনা তার সামনে এসে বলে,
“ভাইয়া কিছু জরুরি কাজে মার্সেই শহরের বাইরে আছে। তাই আসতে পারে নি।”

এ কথা শুনে মিষ্টি আর তেমন একটা মাথা ঘামায় না। কিন্তু রাফসান কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে সন্দেহের দৃষ্টিতে আমিনার দিকে তাকায়। আমিনা নজর যায় রাফসানের দিকে। তাকে নিজের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমিনা ভয়ে ঘামতে শুরু করে।

এলিসের শেষকৃত্যের কার্যক্রম মিটে যেতেই মিষ্টি ও রাফসান সেখান থেকে একসাথে রওনা দেয়। অতঃপর মিষ্টিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রাফসান বলে,
“আমাকে এখন কিছু জরুরি কাজে বাইরে যেতে হবে। তুমি সাবধানে থেকো।”

“আচ্ছা,আপনিও সাবধানে যাবেন।”

“হুম।”

বলেই রাফসান রওনা দেয়। তার মনে হচ্ছে সে সত্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এবার তাকে সমস্ত সত্যটা জানতেই হবে।

রাফসান খুব দ্রুত বেগে গাড়ি চালাতে থাকে। অতঃপর ভীষণই সংরক্ষিত একটি গোপন স্থানে গিয়ে বলে,
“এসে গেছি। কিন্তু ও কি এখনো এসেছে?”

একটু পরেই একটা নারীর আগমন ঘটে। তার আগমন টের পেয়েই রাফসান বলে ওঠে,
“আপনি তাহলে এসেছেন!”

“জ্বি।”

“তো মিস ডিটেকটিভ নাকি আমিনা? কি নামে ডাকব আপনাকে?”

আমিনা মাথা নত করে বলে,
“যেটা ভালো মনে করেন।”

“দেখুন, আপনি আমাদের মিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন সহকর্মী। আপনার অতীত গোয়েন্দা রিপোর্টের অনেক ভালো ফাইলস দেখেই আপনাকে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মিশনের অংশ করা হয়েছিল৷ এই মিশনে যুক্ত হওয়ার সময় আমরা সবাই সব পিছুটান ত্যাগ করি। নিজের অতীতের সব সম্পর্কের থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোটাকেই নিজেদের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য ভাবি। আমি আশা রাখি, আপনিও এই একই চিন্তাভাবনা করেন। শুরুর দিকে আপনার ইন্টেলিজেন্স আমায় এতোটা মুগ্ধ করেছিল বলেই আমি আপনাকে নিজের বিশ্বস্ত গোয়েন্দা বানিয়েছিলাম। একারণেই মিষ্টি এই দেশে আসার পর আমি আপনাকে দায়িত্ব দেই ওকে দেখে রাখার। আর আপনিও নিজের ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে মিষ্টিকে আশ্রয় দিয়ে ওকে সব সময় নজরে রাখেন। এজন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু…আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই পর্যায়ে এসে আপনি কোন কারণে আমার সাথে, এই মিশনের সাথে বেঈমানি করছেন। আমার এই ধারণাটা কি সঠিক মিস আমিনা? আপনি কি কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছেন?”

“..”

“চুপ করে থাকবেন না মিস আমিনা। আপনার এই চুপ থাকার জন্য ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ঐ সন্ত্রাসী চার্চে হামলা করে নিরপরাধ ১৬ জন মানুষকে মেরে ফেলেছে। যার মধ্যে ৩ বছর বয়সী একটা বাচ্চাও আছে। এবার অন্তত কিছু বলুন। নাহলে এভাবে আরো অনেক নিরপরাধ মানুষ খু**ন হবে। তাই আমি আপনাকে রিকোয়েস্ট করছি, এবার অন্তত কিছু বলুন।”

★★
মিষ্টি চুপচাপ সোফায় বসে ছিল। তার মনে অনেক ভাবনাই খেলা করছিল। হঠাৎ করে বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠতেই মিষ্টি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়৷ অতঃপর ইয়াসিনকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“আপনি!”

“আপনার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে মিসেস মিষ্টি। আমার সাথে আসবেন একটু?”

“কি কথা?”

“সেসব এখানে বলা যাবে না। আপনি দয়া করে আমার সাথে আসুন।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি আসছি।”

বলেই মিষ্টি নিজের ফোন ও কিছু জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়। রাফসান নিজের ক্যাবে করে মিষ্টিকে কোথাও নিয়ে যেতে থাকে।

এদিকে,
রাফসান আমিনাকে চুপ থাকতে দেখে ভীষণ রেগে যাচ্ছে। এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে। রাফসান ফোনটা রিসিভ করতেই মিষ্টি বলে ওঠে,
“হ্যালো, আপনি শুনছেন? আমি মিস্টার ইয়াসিনের সাথে একটু বের হয়েছি। অনেকক্ষণ থেকে আপনাকে ফোন করছি কিন্তু আপনি কলটা রিসিভ করছেন না..”

এটুকু বলার পরই কলটা কেটে যায়। ফোন লাউড স্পিকারে থাকায় আমিনা সবটা শোনে। সে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে ওঠে,
“স্যার, আপনি মিষ্টি আপুকে আটকান। ও যেন ভাইয়ার সাথে না যায়।”

“মানে?”

“ভাইয়া ঐ সন্ত্রাসী সংগঠনের একজন সদস্য যারা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে চায়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#ভূমধ্যসাগরের_তীরে
#পর্বঃ২৮
#লেখিকা_দিশা_মনি

মিষ্টির জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে আবিষ্কার করে অন্ধকার একটা কুঠুরিতে। চোখ মেলে তাকিয়েই সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। হঠাৎ করেই কারো পায়ের শব্দে মিষ্টি অবাক হয়ে যায়। কোনরকমে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াতেই খোলা দরজা থেকে আগত আবছা আবছা আলোয় ইয়াসিনের অববয় স্পষ্ট দেখতে পায় মিষ্টি। ইয়াসিনকে দেখেই খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিষ্টি বলে,
“আপনি তাহলে এখানেই আছেন। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। আপনাকে দেখে একটু সাহস সঞ্চার হলো মনে। কিন্তু এ আপনি আমায় কোথায় নিয়ে এসেছেন?”

ইয়াসিন বলল,
“আপনার নিরাপত্তার জন্যই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি মিসেস মিষ্টি। একজন বন্ধু হিসেবে আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।”

“আপনার উপর আমার অগাধ বিশ্বাস আসে। আপনি যেভাবে আমায় অতীতে সাহায্য করেছিলেন তা আমি কখনো ভুলব না। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারছি না, আমার এমন কি বিপদ হতে পারে যে আপনি আমায় এখানে নিয়ে এলেন! আর রাফসানকেও তো কিছু জানালো হলো না৷ উনি তো চিন্তা করবেন আমার জন্য।”

এপর্যায়ে ইয়াসিন বলে,
“মিস্টার রাফসান শিকদারের আদেশেই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি। আসলে, এখানকার সন্ত্রাসীরা আপনাদের উপর টার্গেট করছে। তাই আপনাকে বাঁচাতেই এই উদ্যেগ নেয়া হয়েছে!”

“ওহ আচ্ছা। আমাকে এভাবে কতদিন লুকিয়ে থাকতে হবে?”

“যতদিন না আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

মিষ্টি অকপটে ইয়াসিনের বলা কথাগুলো বিশ্বাস করে নেয়। কারণ তার চোখে ইয়াসিন একজন বিশ্বস্ত বন্ধু। ইয়াসিন মিষ্টির দিকে একটা টিফিন বক্স বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“এই নিন,এখানে কিছু খাবার আছে। এগুলো খেয়ে নিন।”

“আপনি খেয়েছেন?”

“হুম।”

বলেই ইয়াসিন বেরিয়ে যায়। ইয়াসিন বাইরে আসতেই তার টিমের একজন সদস্য ক্রিস্টোফার বলে ওঠে,
“এই মেয়েটাকে কেন বাঁচিয়ে রেখেছ? একেও মেরে ফেলো। এর বেঁচে থাকা আমাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।”

ইয়াসিন ক্রিস্টোফারকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,
“চুপ! একদম চুপ। ওর কোন ক্ষতি করার কথাও ভাববি না।”

ক্রিস্টোফার রেগে বলে,
“গতকাল তো ঠিকই একটা মেয়েকে এখানে নিয়ে এসে নির্মমভাবে মেরে ফেললে, তাহলে আজ হঠাৎ এই মেয়েটাকে এত দয়া দেখাচ্ছ কেন? মেয়েটা নিশ্চয়ই তোমার দয়ার পাত্র না। আর এমনিতেও আমরা যেখানে গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছি সেখানে একটা মেয়ের প্রতি এত দরদ তোমার আসছে কোথা থেকে? এমনিতেও যখন এই পৃথিবী ধ্বংস হবে তখন সবাইকেই মরতে হবে৷ এটাই তো আমাদের উদ্দ্যেশ্য। এই পৃথিবী একটা নোংরা যায়গা। এই পৃথিবীর টিকে থাকার কোন প্রয়োজন নেই৷ এই পৃথিবী শুধুই আমাদের কষ্ট দিয়েছে। তাই আমরা চাই না যে, আরো কোন মানুষ এই পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকুক। আর কেউ এত কষ্ট পাক। মরে যাওয়া মানেই সব সমস্যার সমাধান হওয়া৷ তাই এই পৃথিবীর সব মানুষের মরে যাওয়া উচিৎ। তাহলেই আর কোন সমস্যা থাকবে না কারো। ঐ মেয়েটাকেও মেরে ফেলো। মুক্তি দাও ওকে এই নোংরা পৃথিবী থেকে।”

ইয়াসিন এপর্যায়ে ক্রিস্টোফারকে ধমক দিয়ে বলে,
“এই মুহুর্তে আমার সামনে থেকে দূর হও। তোমার পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য নই আমি। গেট লস্ট।”

ক্রিস্টোফার ইয়াসিনের মুখে এমন ধমক শুনে রেগেমেগে চলে যেতে পা বাড়ায়। ইয়াসিন ক্রিস্টোফারের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“যদি ওকে আমার মারারই হতো তাহলে সেদিনই মারতাম যেদিন মার্সেই শহরে ওকে প্রথম দেখি। সেদিন তো ওকে মারার উদ্দ্যেশ্যেই আমি মেট্রোরেল স্টেশনের দিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু জানি না কেন..সেদিন ওকে দেখার পর আর ওকে মারতে পারিনি। এই নোংরা পৃথিবী থেকে মুক্তি দিতে পারি নি ওকে। কেন জানি আমার মন আমায় বলেছিল, এই মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমি আজও চাই, এই মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পৃথিবীর সব বিপদ থেকে। কিন্তু কেন? কেন আমার মধ্যে এই পরিবর্তন হলো?”

নিজের মনে চলা এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পায় না ইয়াসিন। সে শুধু এটাই জানে যে, সে গোটা পৃথিবীর সবাইকে এমনকি নিজের পরিবারের সবাইকে শেষ করতে এক বার না ভাবলেও মিষ্টির গায়ে একটা আঁচড় কাটতেও তার হাত কাপবে।

★★★
রাফসান উদ্ভ্রান্তের মতো চারিদিকে মিষ্টিকে খুঁজে বেরাচ্ছে। দীর্ঘ ১২ ঘন্টা যাবত মিষ্টির কোন খোঁজ নেই। আমিনার কাছ থেকে ইয়াসিনের সত্যতা জেনে এবং মিষ্টিকে ইয়াসিন কোথাও একটা নিয়ে গেছে এটা জানার পর থেকে রাফসাম দুদণ্ডও শান্তিতে থাকতে পারছে না। রাফসান চারিদিকে অসহায়ের মতো খুঁজে চলেছিল মিষ্টিকে। কিন্তু তার কোন খোঁজ এখনো অব্দি নেই।

আমিনা রাফসানের সামনে নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে। তার চোখে জল স্পষ্ট। সে কাতর স্বরে বলে,
“নিজের ভাইকে বাঁচাতে আমি আপনাদের সাথে বেঈমানী করেছি। তার সত্যটা লুকিয়ে রাখার জন্যই আজ এতো গুলো নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এমনকি মিষ্টি আপুর জীবনও আজ সংকটে।”

রাফসান রাগী কন্ঠে বলে,
“তুমি সত্যটা লুকিয়ে যা অপরাধ করেছ তার শাস্তি তুমি অবশ্যই পাবে। তবে সবার আগে আমাদের মিষ্টিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে হবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

“মিষ্টি আপুকে উদ্ধার করার জন্য যা করার আমি তাই করবো। আমি আপনার সঙ্গে আছি।”

“একবার শুধু আমি মিষ্টিক উদ্ধার করি তারপর ঐ ইয়াসিনকে ওর কাজের জন্য উপযুক্ত শাস্তি দেব।”

★★
মিষ্টি দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা ধরে এভাবে থাকতে থাকতে ভীষণ বিরক্ত হয়ে উঠল। সে তো এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না কি কারণে এভাবে তাকে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। তার উপর ইয়াসিনের ব্যবহারও এখন জানি তার কিরকম ঠেকছে। সবথেকে বড় কথা, মিষ্টি এখানে এসেছে থেকে ইয়াসিন ছাড়া আর কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। অথচ রাফসানের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ভেতরটা ছটফট করে চলেছে। মিষ্টি এসব ভাবনা থেকেই বলে,
“রাতে ইয়াসিন এলে ওনাকে বলতে হবে যে আমি রাফসানের সাথে কথা বলব। এভাবে থাকতে একদমই ভালো লাগছে না।”

★★
“কি ইনফরমেশন পেয়েছ?”

গম্ভীর কন্ঠে কথাটি জানতে চায় রাফসান। তার সামনে দাঁড়ানো একজন গোয়েন্দা বলেন,
“আমি এই সন্ত্রাসী সংগঠনের একজন সদস্যের আসল পরিচয় জানতে পেরেছি। তার নাম ক্রিস্টোফার। সে মার্সেই শহরেরই বাসিন্দা। এখানকার একটি চার্চে কাজ করে। ছেলেটা অনাথ, একটি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। একদম সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে থাকে। তাকে দেখে কেউ বুঝবেই না সে এতো বড় একজন অপরাধী।”

“বুঝলাম। এখন কোথায় গেলে তার সন্ধান পাবো?”

“আমাদের টিম তাকে ধরতে ইতিমধ্যেই চার্চের দিকে রওনা দিয়েছে। হোপফুলি, খুব শীঘ্রই আমরা তাকে পেয়ে যাব।”

রাফসান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“গাড়ি বের করো। আমিও যাব সেখানে।”

“ওকে।”

রাফসান গাড়িতে করে চার্চের দিকে রওনা দেয়। চার্চে পৌঁছেই দেখে একটা ছেলে একজন পুলিশ সদস্যকে গানপয়েন্ট করে পালানোর চেষ্টা করছে। রাফসান সুকৌশলে নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি করে ছেলেটির হাতে। যাতে করে ছেলেটির হাত থেকে বন্দুক পড়ে যায়। এই সুযোগে অন্যান্য পুলিশ অফিসাররা ছেলেটিকে গ্রেফতার করে নেয়। রাফসান এগিয়ে এসে বলে,
“তোমার খেলা শেষ ক্রিস্টোফার। এবার ভালোয় ভালোয় সব সত্য স্বীকার করো। নাহলে…”

ক্রিস্টোফার তবুও তেজ দেখিয়ে বলে,
“আমায় ধরে কোন লাভ নেই। আমি কোন কথা স্বীকার করবো না। এই ফা**ক দিস ওয়াল্ড৷ এই পৃথিবী ধ্বংস হোক। সব মানুষ মারা যাক। কেউ না বাচুক।”

বলেই সে একটা পুলিশ সদস্যের হাত থেক বন্দুক কেড়ে নিয়ে নিজেই নিজের কপালে গু**লি করে নিজেকে শেষ করে দেয়। রাফসান হতবাক হয়ে সমস্ত দৃশ্য দেখে। ক্রিস্টোফারের সন্ধান পেয়ে মিষ্টিকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষীণ আশা জন্মেছিল রাফসানের মনে। অথচ সেই আশাটাও যেন ক্রিস্টোফারের মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে গেল।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨