#ভেতরে_বাহিরে
পর্বঃ০৩
লেখিকাঃ #রুবাইদা_হৃদি
মাধুর্য আবেশকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ৷ বিড়বিড় করে বলল,
‘ আমাকে নিয়ে চলুন,আবেশ ভাইয়া ৷ ‘
আবেশের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে৷ পেছনে থেকে সবার হাসাহাসির শব্দ কানে আসছে ৷ এই মেয়ের কী কমনসেন্স নেই ? করছে টা কী? আবেশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ তোমাকে মেরে ফেলতে নিয়ে আসি নি ৷ তোমার বাড়ি এসেছি ৷ ‘
‘ আমি বাড়িতে যাবো না ৷ চলুন ফিরে যাই৷ ‘
‘ বাবা! বিয়ে হতে না হতেই এতো ভালোবাসা ৷’ মাহমুদ আবেশের হাতে কুনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বলতেই মাধুর্যের সম্ভিৎ ফেরে ৷ নিজেকে আবেশের একদম কাছে পেয়ে সরে দাঁড়াতে গেলে নাজিফা সাইডে থেকে দাঁড়িয়ে আটকে দেয়৷ মুখে চওড়া হাসি টেনে বলল,
‘ ছোট ভাইয়া তোমাদের দারুণ মানিয়েছে৷ মেইড ফর ইচ আদার একদম ৷ ‘
‘একদম কারেক্ট শালিকা৷ ‘
‘ ভেতরে চলো৷ ‘ নাবিহা কিছুটা রাগী স্বরে বলে মাধুর্যের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো৷ কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ যেখানে-সেখানে এইভাবে জড়িয়ে ধরা দৃষ্টিকটু লাগে৷ এইসব বিষয় মাথায় রাখবে ৷’
মাধুর্য কী বলবে বুঝতে পারলো না ৷ তবে নাবিহার কথা গ্রাহ্য না করে আবেশের হাত আবারো আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে ৷ আবেশ হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে দেখতে পেলো মাধুর্য কাঁপছে ৷ পা টেনে টেনে হাটছে৷ কিছু বলতে চেয়েও চুপ করে হেটে গেলো সামনের দিকে ৷ তার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, নিজের বাড়িতে আসতে এতো ভয় কেন,তার?
মাঝারি ধরণের একটা ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই ৷ ওয়ালে সদ্য পেইন্ট করালে যেমন গন্ধ আসে ঠিক তেমন গন্ধের অস্তিত্বে মাধুর্যের গা গুলিয়ে এলো ৷ আবেশের হাত খাঁমচে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার বাইরে৷ মাহমুদ ডোর বেল চেপে মৃদু আলোচনায় মজে উঠলো নাজিফার সাথে৷
‘ হাত ছাড়ো ৷’
মাধুর্য শুনলো না আবেশের কথা ৷ দরজা খোলার আওয়াজে সামনের দিকে তাকালো আবেশ৷ মধ্যবয়সী ভদ্র মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন ৷ মাধুর্যের মা ৷ উনি তাদের দেখে খুশি হলেও মাধুর্যের মুখে খুশি না দেখে সবাই বেশ অবাক হলো ৷ এমনকি একটা কথাও মাধুর্য বললো না লতা বেগমের সাথে৷ ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবেশের সাথে ৷ মাধুর্যের ভাই-ভাবী এগিয়ে আসলে তাদের সাথেও কথা না বলে আবেশকে বলল,
‘ আমি রুমে যাবো,আবেশ ভাইয়া ৷ ‘
‘ হয়েছে টা কী? এমন ভাব করছো দেখে মনে হচ্ছে আমি তোমাকে উনাদের কাছে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি ৷ ‘
‘ আপনি বুঝবেন না ৷ ‘ মাধুর্যের বিড়বিড় করে বলা কথা আবেশের কানে যেতে আবেশ রেগে বলল,
‘ তাহলে বুঝাও ৷ আর তোমার শরীরে মারের দাগ কেন? ‘
আবেশের প্রশ্ন শুনে মাধুর্য ভয়ে চুপসে গেলো ৷ চোখ তুলে চারদিকে তাকাতেই ঝিমিয়ে থাকা ব্যথা বেড়ে গেলো ৷ পা টলছে তার ৷ কী করে বলবে সে? তার জীবন যে নরকীয় এক ব্যথায় পরিপূর্ণ৷
______
অর্ধচন্দ্র নিকষ কালো আঁধারে জ্বলজ্বল করঁছে সু-বিশাল আকাশে৷ ঝিঁঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে ৷ দক্ষিণের জানালা খোলা সেখান থেকে চাঁদের নম্র আলোর সাথে ভেসে আসছে কোমল বাতাস ৷ মাধুর্য এসে থেকে বেডের উপর বসে আছে ৷ এক পা ও নীচে নামাচ্ছে না ৷ হাটুর মাঝে মাথা গুজে নির্লিপ্ত ভাবে বসে কাঁদছে৷
আবেশের সব কিছুতে বিরক্ত লাগছে৷ ইচ্ছা হচ্ছে চলে যেতে ৷ কিন্তু মাহফুজার কড়া রোধের জন্য সব মাটিচাপা দিয়ে বসে আছে ৷ নিজের বাড়িতে এসে ভয়ের কী আছে বুঝতে পারছে না সে! বাড়ির সবাইকে দেখে অত্যন্ত ভালোই মনে হচ্ছে তার ৷ রুমের মধ্যে ঢোকার আগে নাজিফা বলল,
‘ ছোট ভাইয়া ভাবী খাবে না? ‘
‘ আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন? আমাকে তার বেতন ভুক্ত কর্মচারী মনে হয়,তোর? ‘
‘ অবশ্যই! তুমি ভাবীর বিনা পয়সার কর্মচারী৷ কারণ সে তোমার বউ৷ তার দায়িত্ব,খোজ খবর রাখা তোমার কর্তব্য ৷ ‘
‘ যেখানে বিয়ে টাই মানি না সেখানে আবার বউ৷’
আবেশ তাচ্ছিল্যের স্বরে বলতেই নাজিফা অবাক হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে মাধুর্যের ভাবী ইকরা কোথা থেকে এসে বলল,
‘ আপনাদের জন্য বাসর ঘর সাজানো হয়ছে ৷ ‘
বলেই নাজিফার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপু তুমি একটু আমার সাথে এসো তোমার শোয়ার রুম টা দেখিয়ে দিচ্ছি৷’
নাজিফা হাসি মুখে এগিয়ে যাওয়ার আগে ফিসফিস করে বলল,
‘ টেক ইউর টাইম ব্রাদার ৷ আই নো,ইউ আর মাই বেস্ট ব্রাদার৷ তুমি সব সামলাতে পারবে৷ ‘
নাজিফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবেশ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ যতক্ষণ না সব কিছু জানবে তার শান্তি হবে না ৷ সব কিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে ৷ এর শুরুটা কোথায়? আর শেষ কোথায়?
_______
‘ তোমার শরীরে এতো মারের দাগ কেন? ‘ আবেশ রুমে ঢুকে সরাসরি প্রশ্ন করলো মাধুর্যকে ৷ মাধুর্য চুপ করে ওইভাবেই বসে ছিলো ৷ আবেশের হঠাৎ করা প্রশ্নে চমকে উঠে ৷ থরথর করে কাঁপছে ভেতরে ৷অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ কো..কোথায়? ‘
‘ মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে,না ৷ ‘
আবেশের কথায় তেজ ৷ মাধুর্য শাড়িটা ভালো ভাবে প্যাচিয়ে নিলো শরীরে ৷ সেই সাথে অজানা ভয়ে ভরে উঠলো মন ৷ আবেশ কী করে দেখতে পেলো ? তবে কী কাল রাতে…
‘ এই মেয়ে চুপ করে,আছো কেন? উত্তর দাও৷ ‘
‘ আমার শরীরে কোনো দাগ নেই ৷ ‘ মাধুর্য কেঁপে উঠে উত্তর দিলো ৷ আবেশ মাধুর্যের সামনে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে রাখা হাত টেনে বের করে বলল,
‘ এইসব কী? ‘
মাধুর্য হায় লুকানোর চেষ্টা করে বলল,
‘ গ..গরম তেল পড়েছিলো ৷ ‘
আবেশ কিছু না বলে ঘোমটা টেনে সরিয়ে দিয়ে মাধুর্যকে টেনে তার রুমে থাকা আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল,
‘ গলায় আর পিঠে কে মেরেছে তোমায়? ‘
মাধুর্য নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ ভয়ে তার আত্মা কেঁপে উঠছে ৷ দরজার বাইরে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ আবেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাধুর্যের চোখ অনুসরণ করে পেছনে ফিরে তাকালো ৷ কাউকে দেখতে না পেয়ে ধমকে উঠে বলল,
‘ কথা বলো না,কেন? ‘
‘ কেউ..কেউ মারে নি ৷ আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি,আবেশ ভাইয়া ৷ ‘
মাধুর্য কী বলে সম্মোধন করবে ভেবে পায় না ৷ ভাইয়া বলাটা কতোটা যৌক্তিক সে জানে না৷ তবে আবেশের কড়া প্রশ্নের মুখে থেকে বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সে ৷ আবেশ উত্তর না দিয়ে দরজার কাছে গেলো ৷ দরজা আটকে দিতেই মাধুর্য হড়বড় করে বলল,
‘ দরজা আটকাচ্ছেন কেন! দরজা খুলুন ৷ ‘
‘ আমার উত্তর চাই এট এনি কোস্ট৷ ‘
আবেশ এগিয়ে গেলো মাধুর্যের দিকে ৷ মাধুর্য ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে বলল,
‘ আমি উত্তর দিতে বাধ্য নই৷ ‘
মাধুর্যের ছোট একটা কথায় ৷ তখুনি সবচেয়ে বড় আরেকটা ভুল করে বসে আবেশ৷
চলবে…