ভোরের শিশির পর্ব-০৪

0
485

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:৪

সময় কারো জন্য বসে থাকে না।সে তার আপন গতিতে চলে।সময় এর পালা পরিবর্তনে কত লোক ধরণী ত্যাগ করেছে।আবার অনেকে এই ধরণীতে নতুন পা ফেলেছে।দেখতে দেখতে কখন যে শীতকাল সবার ঘরে এসেছে, তা গরিব মানুষ ছাড়া কেউ কি উপলদ্ধি করেছে?এই কনকনে শীতে কাথা মুড়িয়ে ঘুমানোর স্বাদেই আলাদা।হাড় কাপাঁনো শীতে রাদিকা স্কুল থেকে ফিরে শাওয়ার নিল।গায়ে পাতলা চাদর জরিয়ে ছাদে আসে রোদের তাপে শরীরটা গরম করতে ।কিন্তু আজ সূর্যের তেজ এত বেশি নেয়।তাই রাদিকা মূহুর্তে মূহুর্তে কেঁপে ওঠছে।মাহিন ছাদে এসে রাদিকার এমন অবস্হা দেখে নিজের চাদর তার গায়ে জরিয়ে দিল।রাদিকা কিছু বলতে চাইলে মাহিন বলে ওঠে অকালে মরে আমাকে সবার কাছে দোষী বানিও না।তাই এত কথা না বলে চাদরটা গায়ে জরিয়ে নাও।

রাদিকা মাহিনের কথার শুরু শেষ কিছুই বুজেনি।পরক্ষনে কোনো প্রশ্ন ও করেনি।মাহিন কফির মগটা রাদিকার দিকে বাড়িয়ে বলল কফিটা খেয়ে নাও।

রাদিকা তার শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বলল আমি আপনারটা খাব কেনো।

মাহিন রাদিকার কিছুটা কাছে এসে বলল তাহলে কি আমি তোমার জন্য বানিয়ে আনব।

আমি সেটা বলেনি,আমি বলতে চাচ্ছি আপনারটা আপনি খান।

শীতে কাপঁছ যে পরিমাণে কফি না খেলে আরো কাপঁবে।

কফি খাওয়ার দরকার নেই ।আমি কফি খাওয়া ছাড়াই ঠিক আছি।

মাহিন রাদিকার জিদে অটল দেখে আর কথা বাড়ালো না।সে কফি এক ঢোক খেয়ে বলল ঘুরতে যাবে?

রাদিকা মাহিনের এমন প্রস্তাব শুনে অবাক না হয়ে পারল না।কিন্তু সে মনে মনে অনেক খুশি হয়।কত দিন হয়ে গেছে তার কোথাও যাওয়া হয় নি।সর্বদায় চটপট করছে মুক্ত আকাশের নিশ্বাস নিতে।রাদিকা হাসজ্জ্বল্য মুখে বলল যাব।

মাহিন ভেবেছিল রাদিকা মুখের ওপর না করবে।রাদিকার কাছ থেকে সম্মতি বাক্য শুনে বলল রেডি হও এখনিই বের হব।

রাদিকা বিলম্ব না করে রেডি হতে চলে গেল।

গাড়ি তার আপন গতিতে চলছে।নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া সে কোথাও তামবে না।শীত বেশি পড়াই লোকজনের এত চলা ফেরা নেই।রাস্তাগুলো হরর মুভির মত সুনসান।হরর মুভির জন্য পরিবেশটা পারফেক্ট।মাহিন নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়ি তামালো।রাদিকা গাড়ি থেকে নেমে মুক্ত আকাশে লম্বা করে শ্বাস নিল।রাদিকা কিছু দূরে নদী দেখে সেদিকে পা বাড়ালো।কত দিন ধরে সে নদী দেখে না।নদীতে হাঁসগুলোর সাতাঁরানো,পদ্মা ফুলের মেলা দেখে তার ঠোঁটের কিণারায় হাসি ফুটে ওঠল।এই সময়ে গ্রাম বাংলাই নানার ধরণের পিটা বানানো হয়।চুলার পাশে বসে পিটা খাওয়ার মজাই আলাদা।এই সময়ে তো সে জলপাই কুড়ানোর জন্য পাশের বাড়িতে যেত।তার বান্ধবিদের সাথে দড়িঁ লাফ খেলত।কত দিন হয়ে গেছে এই সব করা হয়নি।রাদিকা এইসব ভেবে হু হু করে কেঁদে ওঠল।গ্রামের প্রতি তার মায়া একটুও কমে নি।মাহিন রাদিকার কান্না দেখে বলল কি হয়েছে? এখানে এসে খুশি হও নি।

রাদিকা তার কান্না বন্ধ করার জন্য প্রয়াস চালাই।তবুও যেন তার কান্না আজ বন্ধ হচ্ছে না।মাহিন তার হস্ত রাদিকার গালে রেখে বলল বল কি হয়েছে এভাবে কান্না করছ কেনো?

রাদিকার কথা যেন তার কন্ঠনালি দিয়ে বের হচ্ছে না।কন্ঠনালিতে তার কথা আটকিয়ে যাচ্ছে।বহু কষ্টে তার কন্ঠনালি থেকে বের হলো গ্রামের কথা খুব মনে পড়ছে।

এই কথা এর জন্য এত কাদতে হয়।

রাদিকা ফুপিঁয়ে বলল আমি গ্রামে যাব।এই শহর আমার ভালো লাগে না।

মাহিন রাদিকার চোখের জল মুছে বলল অবশ্যয় নিয়ে যাব।

কখন নিয়ে যাবেন?

মাহিন রাদিকার চটপট ভাব দেখে বলল তুমি টেনে পরিক্ষা দাও তারপর।

মাত্র টেনে ওঠলাম,এখনোও বহু দূর।

বেশি দিন তো আর নেই।

রাদিকা মাহিনের হাত ধরে বলল আজ যাব দয়া করে আজ নিয়ে যান।

রাদিকা মাহিনের হাত ধরায় মাহিন সামান্য অবাক হলো।ছোট বাচ্চারা যেভাবে বায়না ছলে হাত ধরে রাদিকাও মাহিনের সাথে তেমনটি করেছে।রাদিকার বাচ্চা সুলভ দেখে বলল আজ গেলে কাল চলে আসব।আর পরিক্ষার পরে গেলে বহু দিন তাকতে পারবে।

রাদিকা পরিক্ষার পরে যাওয়াটায় ভালো মনে করে বলল আচ্ছা তাহলে পরিক্ষার পরে নিয়ে যাবেন।

মাহিন মৃদ হেসে বলল পরিক্ষার পর যেখানে বলবে সেখানে নিয়ে যাব।

________________________________________________

রাদিকার মা বহুদিন ধরে খেয়াল করছে রানুর স্বামী হাবীব তার দিকে খারাপ নজরে তাকায়।রাদিকার মা রাবেয়া হাবীবকে দেখলেই ঘৃণা হয়।সকাল দশটায় সবাই যে যার কাজ শেষ করে চলে গেছে।রাবেয়া রুমে বসে পান চিবুচ্ছেন।পানের বাটা তার সামনে।হাবীব তার রুমে ঢুকে বলেন পান খাচ্ছেন ?

রাবেয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেন।হাবীব শয়তানি হাসি দিয়ে বলেন আমিও খাব।

আপনাকে কে মানা করেছে খেতে।

হাবীব অনুমতি পেয়ে রাবেয়ার কাছে আসে।পানের বাটা নেওয়ার বদলে তিনি রাবেয়ার গায়ে হাত দেন।রাবেয়া অকস্মিৎ স্পর্শে দাড়িঁয়ে বলেন সাহস তো কম না আপনার।বের হন বলছি।

হাবীব শব্দ করে হেসে বলল বের হব কেনো?
হাবীব দরজার কাছে এসে দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে ফেলল।রাবেয়া চিৎকার করে বলেন আপনি দরজা লাগালেন কেনো?

এটাও বুজি বলে দিতে হবে।

হাবীব রাবেয়ার আচঁল ধরে পুনরায় বলেন প্যাক্টিক্যাল দেখিয়ে দেয়।

রাবেয়া হাবীবকে ধাক্কা দিয়ে দরজায় ছিটকিনি খোলে চলে যান।গ্রামের মেয়েরা সরল হলেও তারা কৌশলে সব পারে।আবার তিনি হাওরের কন্যা।হাওরের কন্যারা রাত বারোটাও নদী সাতঁরিয়ে পার হতে পারে।তারা হাওরে বড় হওয়াই কোনো ভয় তাদের আজ পর্যন্ত কাবু করতে পারে না।সকল ঝড়ে তারা বাচঁতে শিখেছে।ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গা ,পুরুষের সাথে সমান তালে ধান কাটা,মাছ ধরা তা হাওরের মেয়েদের দ্বারা সম্ভব।হাবীব রাবেয়ার এমন সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারল না ।বেচারা ধাক্কায় এখন ফ্লোর থেকে ওঠতে পারছেনা।কোমড় মনে হয় ভেঙ্গে গেছে।মনে মনে সে শপথ নিল আর সে রাবেয়ার ধারে কাছে আসবে না।

রাবেয়া মাহিনের মায়ের কাছে এসে বিস্তারিত ঘটনা বলে বলল আপনি একটা কিছু করুন।

তুমি যাও আমি দেখছি।

রাবেয়া যেভাবে এসেছিল সেভাবে চলে গেলো।

মাহিন রাদিকাকে তার রুমে উঁকি দিতে দেখে বলল এই ভাবে উঁকি না দিয়ে ভিতরে আসো।
রাদিকা মাথা নিচু করে মাহিনের রুমে ঢুকে।মাহিন ল্যাপটপ টিপতে টিপতে বলল কিছু কি বলবে?

না কিছু বলব না

মাহিন ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল তাহলে কেনো এসেছ?

এমনেই,ভালো লাগছে না তাই আসলাম।

আমার জন্য কফি এনে দিতে পারবে।

রাদিকা ছোট করে উত্তর দিল পারব।

কিছু সময় পর কফি এনে মাহিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল আপনার কফি।

মাহিন যেই নিতে যাবে তখন রাদিকার হাত ফসকে কফিটা পড়ে যায় পরোটা কফি মাহিনের গায়ে পড়ে।মাহিন ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠল।রাদিকা ভয়ে মাহিনের শরীর তার ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বলল আমি দেখতে পায়নি।

মাহিন যতটুকু ব্যাথা পেয়েছিল রাদিকার স্পর্সে যেন তা দূর হয়ে গেল।রাদিকার চিন্তিত্ব মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল এভাবে প্রতিদিন কফি পেলে যদি মুছে দাও তাহলে আমি প্রস্তুত আছি তোমার তুলতুলে হাতের স্পর্শ পেতে।কফির গরমের স্পর্শ থেকে তোমার তুলতুলে হাতের স্পর্শ আরো গাঢ়।

রাদিকা মাহিন কথা কিছুই বুজতে পারল না। ভয়ে রাদিকা কেদে ওঠল।মাহিন রাদিকার চোখের জল মুছে বলল দামি সম্পদ কেনো অহেতু খরচ করছ।

চলবে,,,,,,,,,