ভ্যাম্পায়ার কুইন পর্ব-২+৩

0
293

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ২
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমি স্বপ্ন দেখতে ছিলাম মনে হচ্ছে। এরকম কোনো কিছু আমার সাথে বাস্তবে হবে বলে মনে হয় না। বাস্তবে তো কোনোদিনও ভ্যাম্পায়ার থাকে না। মাথাটা এবার বেশী ব্যথা করতে লাগলো। আমি আমার সিটেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। চোখ খুলতেই মেয়েটার মুখ দেখতে পেলাম। ভয়ে আমি সরে বসলাম।
।।।
।।।
.
–কি হলো তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো এতো?(এনা)
.
–না কিছু হয় নি। ট্রেন মনে হয় থেমে গেছে। তাহলে কি আমরা গন্তব্যে চলে এসেছি?(আমি)
.
–হ্যা।(এনা)
.
–ওকে।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি আমার ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে সোজা ট্রেন থেকে বেরিয়ে আসলাম। ট্রেন স্টেশনের পিছনেই বিশাল বড় বড় পুরানো আমলের অনেক গুলো প্যালেসের মতো দেখতে ভবন। সব কিছু দেখে আমার হ্যারি পটার মুভির কথা মনে পরে গেলো। আমার মতো অবস্থা ওর ও হয়েছিলো। শুধু আমার সাথে একটু বেশী আজব জিনিস হয়ে গেলো। দূর আমার ভুল ভাবনা হয়তো এটা। হয়তো আমি স্বপ্ন দেখছি
।।।।
।।।।
স্টেশন টা এতোটা বড় ও না। কিন্তু খুব সুন্দর করে সাজানো। মনে হয় যে বানিয়েছিলো সব যত্ম করেই বানিয়েছিলো। পুরো দেওয়াল জুরে সাদা টাইলস দিয়ে বাধানো। আর সেই টাইলসের উপরে বিভিন্ন মনস্টার এর ছবি আঁকা। এতো নিখুত ছবি আঁকা যে দেখে বাস্তবই মনে হচ্ছে। আমি স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলাম। সামনে কিছুটা খোলা জায়গা আর তারপরই লোচার্ট একাডেমী নামক পুরো বিশাল একটা কলেজ। কলেজের চারপাশ দিয়ে ঘন সবুজ বন রয়েছে। এমন জায়গায় এতো বড় একটা কলেজ রয়েছে। জায়গাটা মোটেও সুন্দর বলা যাবে না। বরং দেখলেই শরীরে কাটা দিয়ে আসে। আমার পা কাপতেছিলো ভয়ে। কারন আমি চারিদিকের মানুষ জন কে দেখে মোটেও স্বাভাবিক ফিল করছি না। তাদের মধ্য দিয়ে কেমন জানি একটা বিদঘুটে গন্ধ আসছিলো।
।।।
তারা আমার দিকেও কেমন করে যেনো তাকাচ্ছিলো৷ আমি সব কিছুর মধ্যে নিজেকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করছি।
।।।
।।।
.
–কি হলো এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?(পিছন থেকে এনা এসে বললো)
.
–আ।(আমি চিল্লিয়ে উঠলাম ভয় পেয়ে)
.
–মনে হচ্ছে তুমি খুব ভিতু।(এনা)
.
–ও তুমি।(আমি)
.
–তারাতারি ক্লাসে চলো। নাহলে প্রথম দিনের ক্লাসটা আমরা মিস করে ফেলবো।(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার দুই হাতেই ব্যাগ। আর এনা আমার বাম হাতের কনুইতে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো। আমার ভয় লাগছে অনেক। অনেক আজব একটা জায়গা। কিন্তু কেনো জানি জায়গাটা থেকে চলে যাওয়ার জন্য নিজের মনকে তৈরী করতে পারছি না। আমার ভিতরে থেকে কেউ একজন আমায় সাহস দিচ্ছে। আমার সাথে আজব জিনিস এর আগেও হয়েছে অনেক। কিন্তু আজকে বেশী হয়ে যাচ্ছে।
।।।।
।।।।
.
–তোমার রুম নং কতো?(এনা)
.
–রুম নং মানে?(আমি)
.
–আরে হোস্টেল এর রুম নং জিজ্ঞাসা করলাম।(এনা)
.
–আমি জানি না।(আমি)
.
–কি বলো তোমার এই কার্ডটা কোথায়?(এনা আগের কার্ডটা আবার দেখালো)
.
–কার্ড?(আমি পকেটে হাত দিয়ে একটা কার্ড পেলাম)
.
–এইতো এটা।(এনা)
.
–কিন্তু এটা আসলো কিভাবে আমার পকেটে?(আমি)
.
–এইটা তোমার মনস্টার আইডি কার্ড।(এনা)
.
–কি কার্ড?(আমি)
.
–মনস্টার আইডি কার্ড। আমি একজন ভ্যাম্পায়ার তাই দেখো আমার কার্ডে Vampire y লেখা।(এনা)
.
–মজা করছো তুমি তাইনা?(আমি)
.
–মজা করবো কেনো? দেখো তোমার কার্ডে তোমার তথ্য দেওয়া আছে।(এনা)
.
–আমি একজন মানুষ তাই আমার কার্ডে Human লেখায় থাকবে।(আমি কার্ডে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে হিউম্যান লেখা নেই)
.
–এটা কখনো সম্ভব না। একজন মানুষ কখনো এই জায়গায় আসতে পারে না। অনেক মনস্টার আছে যারা ছোট থেকেই মানুষদের জগতে বড় হয়। কিন্তু পূর্ন বয়স্ক হলে তাকে এখানে আসতে হয় পড়তে।(এনা)
.
–তাহলে আমি একজন মনস্টার? না এটা কখনো সম্ভব নয়।(আমি আমার ব্যাগ ফেলে দিলাম। তারপর হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম. কিভাবে আমি একজন মনস্টার?)
.
–তোমার মনস্টার আইডি কার্ডে লেখা A class classified। মানে তোমার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।(এনা)
।।।।।
।।।।।
আমি এনার কথা শুনে ভেঙে পরলাম। তাহলে কি সত্যি আমি একটা মনস্টার? কিন্তু কিভাবে? একজন মানুষের কাছে যা আছে তাই তো আমার আছে। বেশী কিছু তো নেই আমার। তাহলে এনা তো বললো এখানে মনস্টার ছাড়া কেউ আসতে পারবে না। হয়তো ভুলে আমি এখানে চলে এসেছি। আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে এখন। কিন্তু কিভাবে এনা তো বললো এখানে মনস্টার ছাড়া কেউ আসতে পারবে না তাহলে তো আমার আশেপাশের সবাই মনস্টার। আমি যদি এখানে অস্বাভাবিক কিছু করি তাহলে তো আমার ঘাড় মটকে খাবে এরা। কিন্তু আমার মাথায় একটা জিনিস যাচ্ছে না। সবাই যদি মনস্টার হয় তাহলে এরা মানুষের মতো দেখতে কেনো। হয়তো এরা রূপ বদলাতে পারে। কিন্তু আমার আপন দাদা আমাকে এমন একটা জায়গায় আনবে কেনো। তাহলে কি সত্যি আমি একজন মনস্টার? কিন্তু কিভাবে আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।
।।।।
।।।।
.
–তুমি একজন A Class মনস্টার তাহলে।(এনা)
.
–A class মনস্টার মানে?(আমি)
.
–তুমি কি একদম ছোট থেকেই মানুষদের দুনিয়ায় ছিলে?(এনা)
.
–আমার আপন বাবা-মা কে আমি জানি না। আমার বাবা-মা যারা আমাকে বড় করেছে তারা নাকি আমাকে নদীতে কুড়িয়ে পেয়েছে।(আমি)
.
–ও এজন্যই তো তুমি কিছু জানো না। অবশ্য আমি অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার আর অর্ধেক মানুষ। আমিও অনেকটা সময় তোমাদের দুনিয়াতে ছিলাম।(এনা)
.
–আচ্ছা?(আমি বলতে যাবো তার আগেই এনা বলতে শুরু করলো)
.
–এখানে দাড়ালে আমাদের দেরী হয়ে যাবে। তোমার কার্ডে দেওয়া তোমার রুম নং ১০৩। ছেলেদের হোস্টেলের ২য় তলার ৩ নং রুমটা তোমার।(এনা একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো)
।।।।।।
।।।।।।
আমার মোটেও যেতে মন চাচ্ছে না। কিন্তু এই মেয়েটাকে যত দেখছি ততই ভালো লাগছে। ওর কথা শুনলে শুধু শুনতেই মন চাই। মেয়েটার গায়ের রং একদম ফর্সা। মুখটা অনেক মায়াবী। সাদা চোখের মধ্যে নীল রঙের দুটো মনি দেখা যায়। চুল গুলো ঘন কালো। সব চেয়ে ভালো লাগার জিনিস হলো ওর লম্বা চুল। মায়াবী কন্ঠ যে কোনো ছেলের মন গলিয়ে দিতে পারে।
।।।।
এনা আমাকে আমার হোস্টেল দেখিয়ে দিলো। আমাদের হোস্টেলের পিছনেই ওদের হোস্টেল। আমি রুমে গিয়ে ব্যাগ ট্যাগ সব কিছু রাখলাম। এনা মেয়েটার উপরে কেমন একটা মায়া চলে এসেছে। ওর মতো সুন্দর মেয়ে আমি কখনো দেখি নি। আর ওর কন্ঠটা শুনলেই মনটা গলে যায়। কিন্তু কিছুতেই মানতে পারছি না মেয়েটা একটা ভ্যাম্পায়ার। দেখতে তো পুরো মানুষের মতো৷ কোনো লক্ষন নেই ভ্যাম্পায়ার এর। শুনেছি ভ্যাম্পায়ার এর লম্বা লম্বা দুটো দাত থাকে। আমি তো ওর দাত দেখি নি। হয়তো ট্রেনে একা ছিলো বলে ভয় পেয়ে আমার কাছে মিথ্যা বলেছে।
।।।।
।।।।
আমি আমার শার্টটা খুললাম। গলার এক জায়গায় দুটো দাঁতের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আয়নায়। কেমন কালো হয়ে গেছে সেখানে। এবার আর এনার কথা মিথ্যা বলে মনে হলো না। আসলেই ও একটা ভ্যাম্পায়ার। আমি আমার রুমের জানালাটা খুললাম। খুলেই অবাক হয়ে গেলাম। কারন জানালার ঔ পাশে মেয়েদের হোস্টেল। আর আমার জানালার সামনেই এনার রুম। এনা ও জানালা খুলেছে সে সময়ে। দুজনের টাইমিং একই সময়ে। এনা আমাকে দেখে অনেকটা লজ্জা পেলো কারন আমি খালি গায়ে দাড়িয়ে আছি। ওর লজ্জা পাওয়া দেখে আমিও লজ্জা পেলাম।
।।।।
।।।।
.
–তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আসো। আর ২০ মিনিট আছে ক্লাস শুরু হওয়ার।(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
।।।
।।।
আমি বিছানার উপরে রাখা কলেজের ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে পরলাম। কাধে ব্যাগ নিয়ে চলে আসলাম নিচে। আমার আসার আগেই এনা দাড়িয়ে ছিলো নিচে। আমার আসার দিকে তাকিয়ে আছে এনা।
.
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?(আমি)
.
–না আসলে আমি অনেক খুশি আমার রুমের পিছনেই তোমার রুম।(এনা)
.
–হ্যা বলতে হবে দুজনের ভাগ্য অনেক ভালো।(আমি)
.
–হ্যা। চলো ক্লাসের দিকে যায়।(এনা)
।।।।
।।।।
আমি আর এনা দুজনেই আমাদের ক্লাসের ভবনের দিকে রওনা দিলাম। বিশাল বড় ক্যাম্পাস। এখানে সব ধরনের সুবিধায় আছে। ফুটবল মাঠ, ক্রিকেট মাঠ, বাস্কেটবল মাঠ। আমরা সবচেয়ে বড় ভবন টার দিকে রওনা হলাম। দূর থেকে দেখতে বিশাল গির্জার মতো লাগে। মাথার দিকটা চুচালো অনেক। আমাদের ক্লাস রুম প্রথম তলাতেই। তাই আমরা আমাদের ক্লাসের দিকে রওনা হলাম সোজা।
।।
এনার রুম আমার রুমের পিছনে এতে মোটেও ভালো লাগছে না। আমি শুনেছি ভ্যাম্পায়াররা রাতের বেলা বাদুরের মতো উড়তে পারে। তাহলে তো আমার রক্ত খাওয়ার জন্য সোজা উড়ে চলে আসবে। না না মোটেও জানালা খোলা যাবে না রাতে। জানালা খুললেই আমার সব রক্ত চুষে খেয়ে ফেলবে। আচ্ছা আমি শুনেছি ভ্যাম্পায়ার কামড় দিলে মানুষ ও নাকি ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়।(( আমি আমার গলায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম))। তাহলে তো আমি ও একটা ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবো। না এই টা হতে পারে না। আমি একজন ভ্যাম্পায়ার হতে পারবো না
।।।
।।।
সব ভাবতে ভাবতে ক্লাসের মধ্যে চলে আসলাম। ক্লাসের মধ্যে একজন স্যার আর একজন ম্যাডাম ল্যাকচার দিচ্ছিলেন। আমাদের দেখে বলতে লাগলেন।
.
–স্বাগতম। তোমাদের কার্ড দুটো দেখি।(স্যার আমাদের হাত থেকে আমাদের কার্ড নিলেন)
.
–তো মিস্টার জ্যাকসন ব্রিট আর মিস এলিনা কোয়াডার্ট তোমাদের দুজনের জায়গা ঔযে পিছনে।(স্যার আমাদের কার্ড আমাদের ফেরত দিয়ে বললো)
.
–ধন্যবাদ স্যার।(এনা)
.
–মিস্টার জ্যাকসন ব্রিট তাহলে তুমি A Class Classified মনস্টার। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারো। সব ধরনের সমস্যা সমাধান করে দিবো।(স্যার)
।।।।
।।।।
আমার নামটা কার্ডে কিভাবে জ্যাকসন ব্রিট হলো বুঝলাম না, হয়তো এটাই আমার আসল পরিচয়,
স্যারের কথাটা শুনে ক্লাসে থাকা সবাই আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি রসগোল্লা আর ওরা সবাই মাছি। আমাকে খাওয়ার জন্য ওরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আমি আর এনা আমাদের জায়গায় গিয়ে বসলাম। আমি বসলাম সবার পিছনে। আর আমার সামনে এনা বসলো।
.
–আচ্ছা এনা এই A Class classified মনস্টার মানে কি একটু বুঝিয়ে বলবা? এটা শোনার পর সবাই আমার দিকে ঔভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?(আমি)
.
–দেখো মনস্টার দের এক এক টা বংশ থাকে। A class, B class, C class, D class এরকম করে বংশের নাম থাকে। সব বংশের মধ্যে A class বংশটা সবচেয়ে উচু। এদের মধ্যে রয়েছে সব ধনী, রাজা, বাদশা, বড় বড় সৈনিকদের বংশ। মান হিসাবে আবার তাদের এক একটা গোত্রে ভাগ করা হয়। আমরা ভ্যাম্পায়ার হলাম ভ্যাম্প গোত্রের। আমাদের গোত্রকে A class এর মধ্যে ৩য় মানের ধরা হয়। পুরো A class বংশের মধ্যে পাচঁ গোত্র আছে। এই পাচঁ গোত্রের মধ্য থেকে যদি কোনো পরিবার তার সন্তানকে এই মনস্টার জগৎ থেকে সরিয়ে রাখে তাহলে তাকে A class classified মনস্টার বলে। যেমন তুমি। আমাদের যে পাচঁ গোত্র আছে তাদের মধ্যেই তুমি একজন। শুধু সেটা তোমার মনস্টার ফর্মের উপরে ডিপেন্ড করবে তুমি কোন গোত্রের(এনা)
.
–তাহলে আমার গোত্র জানার জন্য আমাকে আমার মনস্টার রূপ জানতে হবে?(আমি)
.
–হ্যা। আর ওরা তাকিয়ে আছে কারন classified মনস্টার দের শরীর দিয়ে মানুষের রক্তের ঘ্রান পাওয়া যায়, বেশীরভাগ মনস্টার তাদের মেরে ফেলে,(এনা)
.
–কি?(আমি)
।।।।
।।।।
যাক আমার কোনো রূপ না থাকায় ভালো। এভাবেই থাকা ভালো। যদি আমার আসল রূপ একটা হাতি হয় তাহলে? কিংবা যদি একটা গাধাঁ হয় আমার আসল রূপ তাহলে কি হবে? না না আমি একজন মানুষ। আমি কোনো মনস্টার নয়। এরা সবাই শুধু মেয়াদ শেষ হওয়া নেশা সেবন করেছে যার জন্য এমন বক বক করছে। কিংবা আমিই হয়তো সেবন করে স্বপ্নে আছি। কিন্তু কোনো রূপ না থাকলেও তো ঝামেলা এরা আমাকে মামুষ ভেবে খেয়ে ফেলবে, তখনি আমাদের ক্লাসের ম্যাম কথা বলতে শুরু করলেন।
.
–দেখো তোমাদের প্রথমেই কলেজের কিছু রুলস বলে দি। সব সময় মনে রাখবা এগুলো,
১)কখনো কারন ছাড়া নিজের আসল মনস্টার রূপে পরিবর্তন হবে না কলেজ ক্যাম্পাসে। হলে ভয়ানক শাস্তি হবে।
.
২)কাউকে ভয় দেখানো যাবে না।
.
৩)এবং অবশ্যই তিনদিনের মধ্যে যে কোনো একটা ক্লাবে যোগ দিতে হবে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৩
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
যত সময় যাচ্ছে তত আমার ভয় বারছে। আমি বাইরে থেকে সাহসী হওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছি কিন্তু কোনো কিছুতেই লাভ হচ্ছে না। আমি ক্লাসের বাকি সবাইকে দেখে ঘামছি। সবাই আমার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ক্লাসে অনেক কিউট কিউট মেয়ে আছে তবে সবাইকে এখন কিউট লাগছে না। আমি মনে মনে ওদের আসল রূপ চিন্তা করতে লাগলাম। হয়তো এক এক জন এক এক রকম মনস্টার হবে। এখনো কোনো আসল মনস্টার দেখি নি আমি। আমার আসে পাশের সবাই নিজের মানুষের রূপে বসে আছে। ক্লাসের স্যার আর ম্যাম কি পড়াচ্ছেন সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই।
.
–মিস্টার জ্যাকসন।(ম্যাম হঠাৎ ডাক দিলেন)
.
–……(আমার সেইদিকে কোনো সাড়া নেই। আমি আমার পাশে থাকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম)
.
–তোমাকে ম্যাম ডাকছে।(এনা আমাকে খোচা মেরে বললো)
.
–মিস্টার জ্যাকসন। আদৌও ক্লাসে আছো?(ম্যাম)
.
–জ্বী। সরি ম্যাম।((আমার নামটা ঝামেলায় ফেলে দিলো। জ্যাকসন বলে ডাকলে আমি কিভাবে সাড়া দিবো)
.
–মনযোগ কোথায়?(স্যার)
.
–সরি স্যার?(আমি)
.
–ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করো।(স্যার)
.
–ওকে স্যার।(আমি)
.
–সিট ডাউন।(ম্যাম)
.
–ধন্যবাদ।(আমি বসে পরলাম)
।।।
।।।
আমি বসে যাওয়ার পর এনা আমার দিকে ঘুরে বলতে শুরু করলো,
.
–কি হলো তোমাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে?(এনা)
.
–ক্লাসের পরে কথা বলবো তোমার সাথে।(আমি)
.
–ওকে।(এনা)
।।।
।।।
মাথাটা হালকা ঘুরাচ্ছে। বুঝতে পারলাম এনা আমার রক্ত খেয়েছে সেটার জন্যই হয়তো। তাছাড়া আমার মাথায় এখন ভয় ঢুকে গেছে। আসলেই যদি আমি একজন মনস্টার হয় তাহলে কি হবে? আমার বাবা মা তারা কি আমাকে মেনে নিবে? আমার এখন এখান থেকে বের হতে হবে। যে করেই হোক। এখানে আমি থাকলে হয়তো এই মনস্টার গুলো আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে। তাছাড়া আমি একজন মনস্টার নয়। আমি একজন মানুষ। হয়তো ভুল করেই এসেছি আমি এখানে। আমার জায়গা এখানে না। ক্লাসটা শেষ হলো।
।।।
।।।
সবার নজর আমার দিকেই। বুঝতে পারতেছি না আমার দিকে এভাবে ওরা তাকিয়ে আছে কেনো? আমি মানুষ হয়তো ওরা বুঝতে পেরেছে তাই আমাকে মারবে বলে তাকিয়ে আছে। আমি সোজা ম্যাম আর স্যারের পিছনে চলে গেলাম। এনা আমাকে বললো ক্যাম্পাসে ও অপেক্ষা করবে। স্যার আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলেন। ম্যাম চলে গেলেন নিজের রুমে। আমি দরজা দিয়ে ভিতরে ঢোকার পরই হঠাৎ করে দরজা লক হয়ে গেলো।
.
–অনেক দিন পরে দেখা হলো তোমার সাথে। তো এখানে আসতে কোনো সমস্যা হয় নি?(স্যার)
.
–মানে আপনি আমাকে চিনেন?(আমি)
.
–এটা কেমন কথা নিজের ভাতিজাকে চিনবো না।(স্যার)
.
–ভাতিজা মানে?(আমি)
.
–ভাতিজা মানে ভাইয়ের ছেলে, আজব তো এইটুকু ও কি জানো না?(স্যার)
.
–আপনি আমার?(আমি)
.
–হ্যা আমি তোমার বাবার ছোট, একদম ছোট ভাই।(স্যার)
.
–তাহলে আমার বাবা-মা কোথায়? তারা কি বেঁচে আছে? আর আমার একটা পরিবার থাকার পরও আমাকে কেনো ত্যাগ করেছে তারা?(আমি)
.
–জ্যাকসন ব্রিট একটা কথা শুনে রাখো সব প্রিয় জিনিসকে সব সময় আগলে রাখা যায় না। কিছু সময় আসে যখন তাকে ছেড়ে দিতে হয়।(স্যার)
.
–মানে?(আমি)
.
–তোমার আর আমার মধ্যে কি সম্পর্ক শুধু তোমাকেই বল্লাম। আশা করি এটা কাউকে জানাবে না। ক্যাম্পাসে অনেক বিপদ হবে তোমার উপরে। সাবধানে থেকো।(স্যার)
.
–আমি এখান থেকে যেতে চাই। আমি আমার সাধারন জীবনেই চলে যেতে চাই।(আমি)
.
–বাচ্চার মতো করছো। ভুলে যেয়ো না তোমার শরীরে তোমার বাবার রক্ত। আর তোমার মায়ের শেষ জিনিসটা তোমার হাতে কিছুই হবে না তোমার। নিজের পরিচয়টা খোজার চেষ্টা করো। এবং নিজের অধিকার নিজের করে নিয়ো।(আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো)
.
–আমার মাথায় কিছুই যাচ্ছে না। আপনি একটু ক্লিয়ার করে বলবেন?(আমি)
.
–উহু আমার এখানে আর কিছুই বলার নাই। প্রশ্ন গুলো তোমাকেই বের করতে হবে। এবং উত্তর ও তোমাকে বের করতে হবে।(স্যার)
।।।।
।।।।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। দরজা এমনিতেই খুলে গেলো। এবং আমি বাইরে বেরিয়ে আসলাম এমনিতেই। লোকটা আমার বাবার ভাই বলে পরিচয় দিলো। আমার আঙ্কেল। কিন্তু বড় আজব। নিজের ভাতিজাকে এভাবে কেউ ট্রিট করে। আমাদের দুনিয়া হলে জরিয়ে ধরে হয়তো কেদে দিতো। আমিও এমন কিছু একটা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার চাচা সে কোনো দিক দিয়ে মনে হয় না। আমি হাটতে হাটতে বাইরে চলে আসলাম। বাইরে এনা দাড়িয়ে ছিলো।
.
–কি বললেন মিস্টার অরিয়ান তোমাকে?(এনা)
.
–স্যারের নাম অরিয়ান?(আমি)
.
–হ্যা। তুমি তো তাকে চিনবে না। সে লংস্টার রাজ্যের ত্বিতীয় প্রিন্স।(এনা)
.
–কিইই? তিনি প্রিন্স হয়ে এখানে জব করছেন?(আমি)
.
–বল্লাম তুমি চিনবে না। আর কিছু জানোও না। একজন D Class monster কে ভালোবাসার জন্য লংস্টরার রাজ্যের রাজা অষ্টম ডিউক তাকে রাজ্য থেকে বের করে দিয়েছে।(এনা)
.
–ও এটা তো অনেক খারাপ ব্যাপার। একজন বাবা কি করে পারেন তার ছেলেকে রাজ্য থেকে বের করে দিতে।(আমি)
.
–রাজা অষ্টম ডিউক মিস্টার অরিয়ান এর বাবা নয়। বড় ভাই।(এনা)
.
–কি?(আমি)
.
–হ্যা। আমি শুনেছি তার আসল নাম জ্যাসন।(এনা)
.
–কার?(আমি)
.
–লংস্টার রাজ্যের রাজার।(এনা)
.
–ও।(আমি)
.
–আচ্ছা এসব পরেও বলা যাবে।(এনা)
.
–আমাকে একটা হেল্প করতে পারবা?(আমি)
.
–হুমমম তবে এক শর্তে।(আমার দিকে বাকা হয়ে তাকিয়ে এনা বললো)
.
–কি শর্ত?(আমি)
.
–আরেকটু রক্ত খেতে দিতে হবে।(এনা)
.
–কি? আমাকে মেরে ফেলবে?(আমি)
.
–একটু রক্ত খাবো শুধু।(এনা)
.
–না একদম ই না। আমি আমাকে কামড় দিতে দিবো না।(আমি)
.
–আসলে আমি কখনো কারো রক্তের স্বাধ নি নাই। তোমার টাই প্রথম। আর আমাদের মতো ভ্যাম্পায়ার যারা তারা একবার যাদের রক্ত খায় তাকেই….(এনা লজ্জা পেয়ে)
.
–তাকেই কি?(আমি)
.
–কিছু না। বাদ দাও।(এনা)
.
–ওকে আচ্ছা যদি সামান্য রক্তের বিনিময়ে আমাকে হেল্প করো তাহলে ঠিক আছে।(আমি)
।।।
।।।

এনা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে আমার গলার বাম দিকে ওর দুটো দাত বসিয়ে দিলো। দাত দুটো তেমন বড় না। তবে স্বাভাবিক দাতের চেয়ে দুটো বড়। কামড়ে আমার শরীর শিরশির করে উঠলো। আমাকে একদম জরিয়ে ধরেছে। হয়তো কোনো ছেলের প্রথম এমন স্পর্শ পেয়েছে। আমিও এতো কাছ থেকে কোনো মেয়ের স্পর্শ পেলাম। দাত বসিয়েই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে। হাটতে হাটতে আমরা একটু লোকশূন্য জায়গাতেই চলে এসেছি। তাই আসে পাশে কেউ নেই। আমার ও এনাকে ছারতে মন চাচ্ছে না। ওকে আরো জরিয়ে ধরতে মন চাচ্ছে। কিন্তু মনে পরলো আমরা তো চুমু দিচ্ছি না। বরং এনা আমার রক্ত খাচ্ছে। আমি এনাকে ধাক্কা দিলাম একটা।
.
–বল্লা একটু খাবে? কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি আমার পুরো রক্ত খেয়ে ফেলেছো।(আমার মাথা এখন ঘুরতে লাগলো একটু)
.
–সরি। আসলে আমি ভাবি নি কারো রক্ত খেতে এতো সুস্বাদু হবে। প্রথম কারো রক্ত খাচ্ছি তো। তাই হারিয়েই গিয়েছিলাম।(এনা)
.
–কিন্তু জরিয়ে ধরলে কেনো আমাকে? আমি তো ওটার জন্য তোমাকে ছারাতেই পারি নাই।(আমি)
.
–জানি না। মন বললো একটু জরিয়ে ধরতে। তাই ধরেছিলাম।(এনা)
.
–আচ্ছা হয়েছে। বাদ দাও। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই।(আমি)
.
–কোথায়?(এনা)
.
–যেখান থেকে এসেছি।(আমি)
.
–সেটা সম্ভব নয়।(এনা)
.
–কেনো?(আমি)
.
–কারন এখানে আসলে এক বছরের আগে তুমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে না। এই জায়গাটা মনস্টার দুনিয়া এবং মানুষের দুনিয়া থেকে আলাদা একটা জায়গায়। এক বছর না হলে তুমি কোথাও যেতে পারবে না।(এনা)
.
–কোনো উপায় নেই এখান থেকে যাওয়ার?(আমি)
.
–হ্যা আছে যদি তুমি কোনো রাজার ছেলে কিংবা মেয়ে হও। অবশ্য সেটার জন্য রাজার আদেশের প্রয়োজন হবে।(এনা)
.
–তাহলে মনে হয় না আমি এখান থেকে আর যেতে পারবো।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার মাথা ঘুরতে ছিলো। আমি কখন বেহুস হয়ে পরে গেছি নিজেও জানি না। পুরো সুন্দর একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিলাম। আমি আর এনা খোলা আকাশে পাখির মতো উড়ে বেরাচ্ছিলাম। হঠাৎ এনা কোথাও উধাও হয়ে গেলো। আমার সামনে সব হঠাৎ করেই সাদা হয়ে গেলো। আমি দূরে একজন মহিলাকে দেখতে পেলাম। পিছনে ফিরে দাড়িয়ে আছে। পিঠে দু পাশ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে তার পিঠে পাখা ছিলো এবং সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে কিংবা টেনে তুলে ফেলা হয়েছে। মহিলাটা হঠাৎ ফিরলেন আমার দিকে। এতো সুন্দর তার রূপ। খুব পরিচিত লাগলো তার চেহারাটা। কিন্তু আমি চিনতে পারছি না তাকে আমি। তার গলায় একটা নেকলেস দেখতে পেলাম। হ্যা ঠিক সেই চিঠিতে আসা নেকলেসের মতো। একদম একই রকম। কি জানি এক মায়ার টানে আমি দৌড়ে যেতে লাগলাম মহিলার দিকে। মুখ থেকে একটা কথায় বের হয়ে আসলো “মা”। তার কাছে যেতে যেতেই ধুলো হয়ে উড়ে গেলো। সাথে সাথে আমার স্বপ্ন ও ভেঙে গেলো। আমি আমার রুমের বিছানায় শুয়ে আছি। এটা কিরকম স্বপ্ন ছিলো। আমি আগে এরকম স্বপ্ন কখনো দেখি নি। সত্যি কি মহিলাটা আমার মা ছিলেন। তার কি হয়েছে। পিঠ দিয়ে ঔভাবে রক্ত পরছিলো কেনো?
.
–আমি তো ভয় পেয়েই গিয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে। আমি ভাবছি আমি তোমার রক্ত খেয়ে তোমাকে মেরেই ফেলেছি।(এনা)
.
–ও এনা তুমি। ওয়েট এ মিনিট। তুমি আমার রুমে কি করছো?(আমি)
.
–কি করছি মানে? তোমাকে প্রোটেকশন দিচ্ছি। তোমাকে রুমে রেখে আমি চলে গিয়েছিলাম। তখন আমার রুমের জানালা দিয়ে দেখি একজন ছেলে তোমার রুমের দরজা খুলে ঢুকে পরেছে। তখন আমি আমার আসল রূপে এসে ছেলেটাকে ইচ্ছামত মারলাম। তারপর ভাবলাম তোমার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত এখানেই থাকি।(এনা)
.
–ও তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু ঔ ছেলে আমার রুমে কেনো ঢুকেছিলো?(আমি)
.
–কারন তোমাকে মারতে।(এনা)
.
–কি আমাকে মারতে?(আমি ভয় পেয়ে গেলাম)
.
–হ্যা। তুমি A class মনস্টার। আর তুমি নিজেই জানো না তুমি কি মনস্টার। এখন আমাদের নিচের বংশের মনস্টার রা চাইবে তোমাকে হত্যা করতে। কারন তোমাকে হত্যা করলে তারা অনেক টাকার মালিক হবে।(এনা)
.
–আচ্ছা আমাদের লাইব্রেরী টা কোথায়?(আমি)
.
–আমাদের ক্লাস রুমের দোতলায়।(এনা)
.
–ধন্যবাদ তোমাকে।(আমি)
.
–তুমি রেষ্ট নাও। আর কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো। আর দরজা সব সময় লক করে রেখো।(এনা)
.
–ঠিক আছে।(আমি)
।।
।।
এনা চলে গেলো আমি দরজা লক করে বিছানায় এসে বসলাম। মাথায় হাত দিয়ে আমি বসে আছি বিছানায়। তাহলে আমার আসল বাবার নাম জ্যাসন। হ্যা হতে পারে। আমার নামটা জ্যাকসন, নামের দিক দিয়ে তো মিল রয়েছে। এনা বললো তিনি লংস্টার রাজ্যের রাজা। তাহলে কি আমি একজন প্রিন্স। নিজের কাছে ভালো লাগলো হঠাৎ নিজেকে প্রিন্স ভেবে। কিন্তু না আমি যদি সত্যিই প্রিন্স হতাম তাহলে আমাকে মানুষদের দুনিয়ায় কেনো পাঠাবে। না এসব মনস্টারদের মোটেও মন টন বলতে কিছু নাই। কিন্তু আমি এরকম নই। আমি একজন মানুষ। আর আমার পরিবার আছে। আমি তাদের কাছেই চলে যাবো।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))