ভ্যাম্পায়ার কুইন ২ পর্ব-৯+১০+১১

0
34

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ০৯
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমার পুরো ডান হাত ঝুরে ড্রাগনের ছবি হয়ে গেছে। প্রথমে ছবিটা আগুনের মতো লাল থাকলেও পরে সেটা কালো হয়ে যায়। আমি তলোয়ারটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তলোয়ারটা পুরো খোপ মুক্ত লম্বা ব্লেডের৷ আমার উচ্চতা অনুযায়ী তলোয়ারটা একদম ঠিক আছে। কিন্তু এটা ব্যবহার করতে হলে আমাকে এটা নিয়ে অনেক ট্রেনিং করতে হবে। তলোয়ারটার হাতলের একদম প্রথম অংশে একটা ড্রাগনের মুখ দেওয়া আছে। আর সেটা দেখতে অনেকটা ফায়ার ড্রাগন ইগড্রাসিলের মতোই দেখতে। আমার তলোয়ারটার একটা নাম দিতে মন চাইলো। কি নাম দিবো এটা বুঝতে পারছিলাম না। ভাবতে ভাবতে কেনো জানি মনের মধ্যে ভিরুদা নামটা চলে আসলো, নামটা আজব হলেও আমার মাথার মধ্যে এই নাম ছাড়া আর কোনো নাম এখন আসছে না। তাই আমি আমার তলোয়ারের নাম দিয়ে দিলাম ভিরুদা। অবশ্য এই তলোয়ার এবং ড্রাগনের ব্যাপারটা আমাকে গোপন রাখতে হবে। কেউ যদি জানতে পারে আমি ফায়ার ড্রাগনকে মুক্ত করেছি তাহলে আমার কঠোর শাস্তি হবে। তাই আমাকে এই ব্যাপারটা পুরো গোপন রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ হলো আমাকে এই তলোয়ারটাকে গোপন রাখতে হবে। সেই সাথে আমার এই হাতের ড্রাগনের ছবিটাও গোপন রাখতে হবে। আমি ড্রাগনদের সম্পর্কে বেশী কিছু জানি না। ইগড্রাসিলের সাথে কি হয়েছে আমি এটাও সঠিক বলতে পারছি না। কিন্তু আমি আশা করছি খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে। আমাকে ড্রাগনদের সম্পর্কেও সব তথ্য জানতে হবে। মোট কথা আমাকে এই তলোয়ার সম্পর্কে জানতে হবে। তলোয়ারটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এর ভিতরে গুহার মধ্যে থাকা ইগড্রাসিলের সব ম্যাজিক রয়েছে। আমি একটু ফোকাস করে তাকালে যে কোনো জিনিসেরই ম্যাজিক পাওয়ার দেখতে পারি। এটা অনেকটা পানির স্রোতের মতো দেখতে। যে জিনিসের স্রোত বেশী সেটার ম্যাজিক পাওয়ার বেশী। এখন প্রতিটা ম্যাজিক পাওয়ার আমি হলুদ রঙের দেখতে পাই। কিন্তু ড্রাগনের ম্যাজিক পাওয়ারটা ছিলো টকটকে লাল। যারফলে আমি তলোয়ারের ম্যাজিক পাওয়ার দেখেই বুঝতে পারছি এটার মধ্যে ড্রাগনের পাওয়ার রয়েছে।
।।।
।।।
সবমিলিয়ে আমার মাথায় একটা কথা আসছে না সেটা হলো আমার হাতে এই ভিরুদা নেওয়ার পর আমার হাতে ড্রাগনের ছবি আসলো কেনো? ছবিটা পুরো আমার ডান হাত জুরে খোদায় করা অবস্থায় আছে। এজন্য আমি বলতে পারছি এটা কখনো মুছে যাবে না। ঠিক এরকম ড্রাগনের ছবি আমি আরো দুইজনের শরীরের দেখেছি কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না। হয়তো আমার স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার ফলে আমি ঠিক মতো মনে করতে পারছি না। কিন্তু তাদের সাথে আবার কখনো দেখা হলে আমি তাদেরকে এই ছবির সিকরেট সম্পর্কে জানতে পারবো। আমাকে আপাতোতো ভিরুদার সাথে ট্রেনিং করতে হবে। নামটা অনেক অদ্ভুদ তারপরও আমি এটা বাদে অন্য কোনো নাম ভাবতে পারি নি, দেখা যাক এটার কোনো ক্ষমতা আছে নাকি এটাও স্বাভাবিক।
।।।
।।।
আমি ভিরুদাকে নিয়ে ট্রেনিং করতে লাগলাম আগে কখনো তলোয়ার হাতে নেওয়া হয়নি মনে হয়, তাই আমার একটা কোপ দেওয়ার পর পরেরটাই তেমন জোর হয় না। এভাবে তিন চারটা দেওয়ার পর আমার শরীরে কোনো জোরই থাকলো না। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো অনেক ভারি হয়ে গেছে ভিরুদা। একটু আগেই যাকে একদম পাতলা মনে হচ্ছিলো, হঠাৎ সেই আমার কাছে এখন ভারী মনে হচ্ছে। আমি আর সময় নষ্ট করলাম না। তলোয়ারটা নিয়ে সোজা আমার রুমের মধ্যে চলে গেলাম। আমি বুঝতে পারলাম আমার শরীরের মধ্যে যে ম্যাজিক পাওয়ার ছিলো সেটা শেষ হয়ে গেছে কয়েকটা স্লাস দিতে গিয়ে। রাত অনেক গভীর হয়ে গেছে। হ্যারি গভীর ঘুমে ব্যস্ত। আমি ভিরুদাকে একটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলাম। তারপর আমার ডান হাতেও আমি কালো একটা কাপড় পেচিয়ে দিলাম। ব্যাপারটা আশ্চর্য দেখাবে শুধু আমার ডান হাত পেঁচিয়ে রাখলে, তাই আমি একটা ছোট চারকোনা সাদা কাপড় কেটে নিলাম। এবং সেটা দিয়ে আমার মুখ ঢাকার জন্য রাখলাম। যদি আমি এটা স্টাইলের জন্য পরি তাহলে হয়তো কেউ আশ্চর্য হবে না। আমার চোখ আর থাকতে পারলো না। আমি আমার বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে উঠলাম আমি হ্যারির ডাকে। হ্যারি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমার বিছানার পাশে রাখা তলোয়ারের দিকেও তাকিয়ে আছে।
.
–হাতে কি হয়েছে জ্যাক তোমার?(হ্যারি)
.
–ও হাতে তেমন কিছু না। কালকে রাতে এই তলোয়ার নিয়ে একটু ট্রেনিং করতে গিয়ে হালকা আঘাত পাই। পরে একটু বেন্ডেজ করেছি।(আমি)
.
–পুরো হাতে?(হ্যারি)
.
–না একটু পেচানোর পর মনে হলো এটা সুন্দর একটা স্টাইল হবে আমার জন্য। তাই পুরো হাত পেচিয়ে ফেলেছি। আর সাথে একটা মাস্কও বানিয়েছি মুক ঢাকার জন্য।(আমি)
.
–ওয়াও।।। সো কুল। আমিও পরবো তাহলে। এটা আমাদের টিমের জন্য খুব ভালো একটা পোষাক হবে।(হ্যারি)
.
–হ্যা। আমি আলাদা একটাও বানিয়ে রেখেছি তুমি চেষ্টা করে দেখো।(আমি)
.
–তুমি ডান হাত ঢেকেছো আমি বাম হাত ঢাকবো তাহলে।(হ্যারি)
।।।
।।।
হ্যারিও ওর বাম হাত পেচিয়ে ফেললো কালো কাপড় দিয়ে। মাস্ক পরার পর দুজনকে অনেকটা একরমই দেখাচ্ছে। আমাদের দেহের আকার এক রকম, শুধু দুজনের চোখ দেখে আলাদা করা যাবে এখন দুজনকে। হ্যারির চোখের মনি হালকা লালচে। আর আমারটা হালকা নীল। আমরা দুজনেই নাস্তা করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কাল রাত জেগে অনেক ক্ষুদা লেগেছে আমার। আর এমনিতেই অনেক ম্যাজিক পাওয়ার হারিয়েছি রাতে। কিছু না খেলে সেটা পূরন হবে না।
.
–তো জ্যাক আমি তো তোমার কাছে কোনো তলোয়ার দেখি নি আগে? কোথায় পেলে সেটা? হয়তো অনেক পাওয়ারফুল হবে সেটা।(হ্যারি)
.
–আসলে কাল রাতে আমি বাইরে বের হয়েছিলাম একটু। আর হাটতে হাটতে আমি সাগরের কিনারায় চলে গিয়েছিলাম। আর সেখানেই এক কিনারায় আমি তলোয়ারটা পরে থাকতে দেখি।(আমি)
.
–ওয়াও। আমিও তাহলে আজ রাতে সেই খানে যাবো তোমার সাথে। যদি আমি কোনো কিছু পেয়ে যায়।(হ্যারি)
.
–হুমমম পেয়ে যেতে পারো। আর এমনিতেই রাতের সময়টা ট্রেনিং এর জন্য অনেক ভালো সময়।(আমি)
.
–হ্যা সেটা ঠিক। আমি স্কুলে থাকার সময় সব সময় রাতেই ট্রেনিং করেছি একা একা।(হ্যারি)
.
–তুমি কি তলোয়ার চালাতে পারো? আমার অনেক সমস্যা হচ্ছে ভিরুদাকে নিয়ে।(আমি)
.
–ভিরুদা! সেটা আবার কে?(হ্যারি)
.
–ও তোমাকে তো বলা হয়নি। আমি তলোয়ারটার নাম দিয়েছি ভিরুদা।(আমি)
.
–অনেক আনকমন একটা নাম। এরকম নাম আমি কখনো শুনি নি।(হাসতে হাসতে হ্যারি বললো)
.
–হ্যা নাম দেওয়ার সময় আর কোনো নাম আমার মনে আসে নি এটা ছাড়া। আর যখন একটা নাম দিয়েছি তাই আর বদলাবো না।(আমি)
.
–আমার মনে হয় না এলেক্স এবং কহিল স্যার আমাদের তেমন কিছু শিখাবে? মিলিটারি স্কুলেও আমাদের যে অফিসার ট্রেনিং দিয়েছে সে তেমন কিছু শেখায় নি। আমাদেরকেই কষ্ট করে শিখতে হয়েছে সবকিছু। আমার মনে হচ্ছে এখানেও আমাদের সেটাই করতে হবে।(হ্যারি)
.
–আমার যতদূর ভাবনা যায় তারা তাদের ক্ষমতা আমাদেরকে দেখিয়ে উৎসাহিত করছে শক্তিশালী হওয়ার জন্য। আর আমাদের সেটাই করতে হবে, এটার জন্য যদি আমাদের নিজেদেরই একা একা কষ্ট করতে হয় তারপরও আমরা শক্তিশালী হবো।(আমি)
.
–হ্যা। ভালো কথা। তুমি তো তলোয়ার চালানো শিখবে তাই না? এলিহার কাছে সাহায্য চাইতে পারো।(হ্যারি)
.
–হ্যা এলিহা তো তলোয়ার দিয়ে লড়াই করে। আর ও তো অনেক ভালো করেই চালাতে পারে। ওকেই বলতে হবে আমাকে শিখানোর কথা।(আমি)
।।।
।।।
আমরা কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনের মধ্যে চলে আসলাম। আমাদের দেখে এলিনা বলতে লাগলো।
.
–তোমাদের দুজনের আজ কি হয়েছে। এরকম আজব গেটআপ নিয়ে রাখছো কেনো?(এলিহা)
.
–আমাদেরকে চিনে ফেলছো? আমি তো ভাবছি এই গেটআপে চিনবে না আমাদের।(হ্যারি)
.
–মাথা লাগাও হ্যারি। আমরা আমাদের পরিচয় লুকানোর জন্য এই গেটআপ নেই নি। এতে আমাদের অনেক কুল লাগবে এজন্য। আর ওরা তো বুঝবেই। এই পুরো জায়গার মধ্যে আমরা ছয়জনই আছি যারা এক সাইজের। আর পাঁচজন আমরাই। একজন কহিল স্যার। কিন্তু তিনি অফিসার।(আমি)
.
–একটা জিনিস বলতে হবে আমাদের পাঁচজনের মধ্যে মাথা আছে জ্যাকের।(হ্যারি)
.
–তাহলে কি আমাদের মাথা নেই(হ্যারির মাথায় একটা ঠাপ্পর দিয়ে বললো এলিহা)
.
–না না আমি সেটা বলতে চাই নি। জ্যাকের সাথে প্রথম যেদিন আমার দেখা সেদিন থেকেই আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি সেটা হলো জ্যাক ওর মাথার বুদ্ধির অনেক কাজ করে, যেটা আমরা করে পারি না।(হ্যারি)
.
–হ্যা এটা ঠিক। সেদিনের যুদ্ধে আমরা সিওর মারা যেতাম জ্যাকের প্লান অনুযায়ী কাজ না করলে।(লুসি)
.
–এটা বলতেছো কেনো? আমরা পাঁচজন একসাথে কাজ করেছি বলে আমরা সেদিন জীবিত ছিলাম। আমার মনে হয় আমাদের সারা জীবনই এভাবে একসাথে কাজ করা দরকার। তোমরা কি বলো।(আমি)
.
–হ্যা আমিও এটাই মনে করে। আপাতোতো আমাদের কাছে আছে এলিহার ফ্রন্ট আক্রমন, আমার ম্যাজিক স্পেল ব্যাকআপ, জ্যাকের মাস্টারমাইন্ড প্লান, এবং লুসি এবং লুসানার সাপোর্ট ম্যাজিক।(হ্যারি)
.
–আমরা আপাতোতো আমাদের নিজ নিজ দিকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে এবং একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। আমরা পাঁচজন একসাথে থাকলে যেকোনো জিনিসই করতে পারবো।(আমি)
.
–অবশ্য আমার সাথে আরেকজন সামনে লড়াই করলে অনেক ভালো হতো। আমার ম্যাজিক পাওয়ার খুব তারাতারি শেষ হয়ে যায় বেশীক্ষন একসাথে লড়াই করলে।(এলিহা)
.
–সেটার জন্য জ্যাক পারফেক্ট চয়েজ হবে। জ্যাক কালকে একটা তলোয়ার পেয়েছে সাগরের কিনারায়। আর ও এখন তলোয়ার চালানো শিখতে চাই। এলিহা তুমি ওকে একটু সাহায্য করো।(হ্যারি)
.
–আমার যে ক্ষমতা রয়েছে সেটা খুবই বেকার। একদম মারাত্মক মুহুর্তে সেটা কাজ করে। আর সাধারন ম্যাজিক আমি আপাতোতো ব্যবহার করতে পারি না। তাই আমাদের টিমকে শক্তিশালী করতে হলে আমাকেও কিছু করতে হবে। আর আমি ভেবে দেখলাম এটা আমার জন্য খুব ভালো একটা পদ হবে টিমের জন্য। কিন্তু এটার জন্য আমাকে ট্রেনিং নিতে হবে তোমার কাছে এলিহা।(আমি)
.
–ওকে সমস্যা নেই। আমি তোমাকে শিখাবো তলোয়ার কিভাবে চালাতে হয়। আর আমাকে এলি ডাকতে পারো তোমরা।(এলি)
.
–এই আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।(হ্যারি)
।।।
।।।
আমরা তারাতারি নাস্তা করে বের হয়ে আসলাম মাঠের উপরে। আজকে প্রবল বেগে হাওয়া বইছে বাতাসে। আর আজকে অফিসার কহিল স্যার আসেন নি। তার বদলে এলেক্স স্যার আমাদের কাছে আসলেন।
.
–আজকে অফিসার কহিলের অন্য একটা কাজ আছে এজন্য সে তোমাদের ট্রেইন করতে পারবে না। তার বদলে আমি আছি আজকে।(এলেক্স)
.
–কি করবো আজ আমরা স্যার?(হ্যারি)
.
–তোমাদের জন্য একটা মিশন রয়েছে।(এলেক্স)
.
–কি মিশন স্যার?(এলি)
.
–দুই বছর সময় দেওয়া হবে তোমাদের রয়েল ক্যাপিটালে থাকার জন্য। এই দুই বছরে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে তোমরা।(এলেক্স)
.
–মানে এটাই আমাদের মিশন? আর আমাদের কোনো মিলিটারি নিয়ম মানতে হবে না?(আমি)
.
–সেটা না। জেনারেলের আদেশ তোমাদের দুই বছর একদম সাধারন একটা জীবন দেওয়া। আর এই দু বছরে মিলিটারি কোনো প্রকার নিয়ম করবে না তোমাদের উপরে। কিন্তু রাজ্যের কোনো আইন ভাঙা যাবে না।(এলেক্স)
.
–কিন্তু স্যার আমাদের এভাবে হঠাৎ দুই বছরের জন্য ছুটি দেওয়া হবে কেনো? আমাদের তো ট্রেনিং ভালো মতো এখনো শুরুই হয় নি।(আমি)
.
–জেনারেলের সরাসরি আদেশ এটা। আমি এটার সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারবো না। তবে এটা তোমাদের জন্য একটা মিশন থাকবে। দুইবছর ক্যাপিটালে বাস করতে হবে।(এলেক্স)
.
–স্যার শুধু কি আমাদের দু বছর সাধারন জীবন কাটাতে হবে? নাকি অন্য কোনো মিশনও আছে?(এলি)
.
–তোমাদের খুব কম বয়সে মিলিটারি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে খুব কম জানো এই দুনিয়া সম্পর্কে। হয়তো জেনারেল তোমাদের দুই বছর সময় দিয়েছে এই দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞান ধারনা করার জন্য। আমি বলতে পারছি না কি। দুবছর তোমাদের দেওয়া হয়েছে, দুবছর নিজেদের মতো কাটাও।(এলেক্স)
.
–আমরা সবাই থাকবো কোথায় স্যার?(লুসি)
.
–তোমাদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আমি সঠিক জানি না। কিন্তু জেনারেল বলেছেন তোমাদের থাকার ব্যবস্থা তিনি নিজেই করবেন।(এলেক্স)
.
–তাহলে আজই কি আমাদের যেতে হবে?(হ্যারি)
.
–না কালকে তোমাদের পৌছিয়ে দেওয়া হবে। তাই আজকে সারাদিন এই পুরো দ্বীপ ঘোরার জন্য ছুটি দিয়ে দিলাম আমি।(এলেক্স)
।।।।
।।।।
এটা বলেই এলেক্স স্যার টেলিপোর্ট হয়ে গেলো। আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম এরকম কোনো মিশন আমাদের আসবে আমি সেটা ভাবতে পারি নি।
.
–আমার তাদের কাজকর্ম মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। কথা ছিলো আমাদের স্পেশাল ট্রেনিং দেওয়ার, কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না। বরং আমাদের এখন দুবছরের ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে।(লুসানা)
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ১০
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
–জ্যাক তোমার কি মনে হচ্ছে?(এলি)
.
–আমার মনে অনেক ভাবনা আসছে আপাতোতো। কিন্তু জেনারেলের চিন্তার সাথে আমার চিন্তা কখনো মিলবে না। এজন্য আমি সঠিক বলতে পারছি না।(আমি)
.
–আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। যদি ছুটিই দিতো আমাদের তাহলে নিজেদের বাসাতেই যেতে দিতো, কিন্তু ক্যাপিটাল শহরে কেনো থাকতে হবে?(লুসি)
.
–যায় হোক না কেনো? আমার ক্যাপিটালে যাওয়ার অনেক ইচ্ছা ছিলো ছোট থেকে। আর কালকে সেটা পূরন হচ্ছে।(হ্যারি)
.
–আমাদের উত্তেজিত হলে হবে না। আমার মনে হচ্ছে জেনারেল আমাদের একটা কঠিন মিশনে ফেলছে, যেটা আমাদের নিজেদেরই বের করে নিতে হবে। আপাতেতো আমি বেশী কিছু বলতে পারছি না। তবে কালকে কিছুটা ধারনা পাবো হয়তো।(আমি)
.
–জ্যাক তুমি ছোট ছোট বিষয়ে একটু বেশীই চিন্তা করো। বাদ দাও চিন্তা। আমরা এই দ্বীপ এখনো ঘুরে দেখতে পারি নি, চলো ঘুরি একসাথে।(হ্যারি)
.
–হ্যা এটা ভালো চিন্তা। আর এমনিতেও আমাদের এখনো বেশী বয়স হয় নাই বেশী চলে চিন্তা করার। এই বয়সে একটু ঘুরাফেরা না করলে হয়?(এলি)
.
–তোমরা দাড়াও আমি আসছি।(আমি)
.
–আবার কোথায় যাচ্ছো তুমি?(হ্যারি)
.
–যাবো আর আসবো।(আমি)
.
–জ্যাক।(হ্যারি)
।।।
।।।
আমি দৌড় দিয়ে আমার রুমের মধ্যে পৌছে গেলাম। আমার ছোট ব্যাগটা আমি কাধে নিলাম। ব্যাগের মধ্যে তিনটা বই রয়েছে শুধু। ব্যাগটা নেওয়ার কারন হলো আমি ভিরুদাকে বহন করতে চাই। হাতে করে নেওয়ার থেকে ব্যাগের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখলে ভালো হবে। আমি ভিরুদাকে ব্যাগের মধ্যে রেখে আবার দৌড়ে চলে আসলাম বাকি চারজনের কাছে।
.
–তলোয়ার আনতে গিয়েছিলে?(এলি)
.
–হ্যা।এটা ভিরুদা।(আমি)
.
–নামটা অনেক আজব।(সবাই নাম শুনে হাসতে লাগলো)
.
–দেখতে পারি তোমার তলোয়ারটা?(এলি)
.
–হ্যা অবশ্যই।(আমি)
।।।
।।।
আমি তলোয়ারটা খুলে এলির হাতে দিতে গেলাম। এলি হাতল ধরার পর আমি ছেড়ে দিলাম। আর সাথে সাথেই ভিরুদা মাটিতে পরে গেলো। এলি হাতল ধরে উঠানোর চেষ্টা করেও পারছে না।
.
–এটা আমার দ্বারা উঠবে না।(এলি)
.
–তোমার শক্তি নাই এলি এজন্য উঠাতে পারছো না। দেখো কিভাবে উঠাতে হয়।(হ্যারি)

।।।
হ্যারিও চেষ্টা করলো উঠানোর কিন্তু একটুও নারাতে পারছে না। লুসি এবং লুসানাও চেষ্টা করেছে কিন্তু কেউ সামান্য পরিমান নারাতেও পারে নি। আমি ভিরুদার হাতল ধরে উঠিয়ে ফেললাম।
.
–আমি এ পর্যন্ত অনেক তলোয়ার সম্পর্কে পড়েছি, কিন্তু এমন কোনো তলোয়ার আমার জ্ঞানের বাইরে একদম।(এলি)
.
–এটা অনেক স্পেশাল তলোয়ার মনে হচ্ছে।(লুসি)
.
–একদম আনকমন একটা তলোয়ার, জ্যাক ছাড়া কেউ এটাকে উঠাতে পারে না। ওয়াও, আমারও এমন একটা তলোয়ার লাগবে।(হ্যারি)
.
–আমি বুঝতে পারছি না, এটা আমরা উঠাতে পারছি না, কিন্তু জ্যাক খুব সহজেই উঠাচ্ছে।(লুসি)
.
–আমার মনে হচ্ছে এই তলোয়ার প্রথম যে স্পর্শ করবে শুধু সেই এটা উঠাতে পারবে। এবং সে মারা যাবার পর, আবার যে প্রথম এটা স্পর্শ করবে সেই উঠাতে পারবে।(এলি)
.
–সেসব কথা বাদ দাও। এলি আমি এটা এনেছি তোমার থেকে তলোয়ার এর ব্যাসিক শিখতে। আমি এটা দিয়ে কয়েকটা স্লাইস দিলেই আমার সব ম্যাজিক পাওয়ার শেষ হয়ে যায়। এর জন্য প্রথমটার পরে আর আমার জোর হয় না।(আমি)
.
–ও আচ্ছা। চলো আমার সাথে যেখানে ঠিক মতো শিখতে পারবে।(এলি)
.
–কোথায়?(আমি)
.
–তোমরা যাও তাহলে যেহেতু তলোয়ার চালানো শিখবে শেখানে আমাদের কিছু করার নেই। বরং আমরা তিনজন আমাদের স্পেলের প্রাকটিস করি এখানে। তোমাদের হলে এখানে এসো তারপর আমরা একসাথে ঘুরতে যাবো।(হ্যারি)
.
–ওকে।(আমি)
।।।
।।।
আমি এলিহার সাথে হাটতে হাটতে বনের পাশে চলে আসলাম। এলি এবার ওর কোমড়ে থাকা তলোয়ার বের করলো এবং সামনে থাকা দুটো ভেদ গাছের(সরু এক ধরনের গাছ যার কাঠ অনেক শক্ত হয়, এটার ফল অনেক বিষাক্ত হয়) দিকে একটা স্লাইস দিলো অনেকটা দূর থেকেই। ছোট একটা তরঙ্গ গেলো সামনের দিকে। এবং সেটা ভেদ গাছ দুটোর গায়ে লাগলো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কেটে যাবে। কিন্তু না কেটে কিছুটা ক্ষত হয়েছে শুধু গাছে। এরকম আরো বিশটা শক্তিশালী স্লাইস দিলে হয়তো কেটে যাবে।
.
–ওয়াও।(আমি)
.
–এইযে দেখতে পেলে এটা আমার এয়ার স্লাইস স্পেল। আমি স্পেলের দিক দিয়ে অনেকটা দুর্বল। এই একটা স্পেল ব্যবহার করলে আমি আর কোনো স্পেলই ব্যবহার করতে পারি না।(এলি)
.
–কেনো? আমি তো শুনেছি ভ্যাম্পায়াররা অনেক শক্তিশালী হয় ম্যাজিক পাওয়ারের দিক দিয়ে।(আমি)
.
–হ্যা সেটা হয়। কারন সব ভ্যাম্পায়ারই জন্মের পর কারো না কারো রক্ত পান করে। কিন্তু আমার পরিবার রক্ত খেতে পছন্দ করে না। এর জন্য আমরা পর্যাপ্ত পরিমান ম্যাজিক পাওয়া জোগাড় করতে পারি না। যেহেতু একটার বেশী স্পেল আমার দ্বারা হয় না। তাই আমি কাছের লড়াই বেছে নিয়েছি। আর সেটার জন্য অনেক ট্রেনিং এর প্রয়োজন হয়। তলোয়ার দিয়ে স্লাইস দিলে তলোয়ারের ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিটা স্লাইসে তলোয়ার শরীর থেকে ম্যাজিক পাওয়ার শুষে নিবে আর সেটা শক্তিশালী স্লাইসে পরিনত করবে। তোমার তলোয়ারের ক্ষমতা বেশী বলে কয়েকটা স্লাইসে তোমার পুরো ম্যাজিক পাওয়ার শেষ হয়ে যায়। আর তুমি যদি সেটা নিয়ন্ত্রন করতে পারো তাহলে এই গাছগুলো কেনো স্পেল ছাড়াই স্লাইস দিয়ে কেটে ফেলতে পারবে।(এলি)
.
–সত্যি?(আমি)
.
–হ্যা। নিজের ম্যাজিক পাওয়ার নিয়ন্ত্রন করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। সেটার জন্য তলোয়ার নিয়ে দাড়ানোর যে স্টাইল সেটা তোমার চেন্জ করতে হবে। প্রথমত যখন লম্বা কোনো তলোয়ার হাতে নিলে বাম পায়ে নিজের শরীরের সমস্ত ভর রাখতে হয়। তারপর যখন একটা স্লাইস মারতে যাবে তখন শরীরের সমস্ত ভর ডান পায়ে নিয়ে স্লাইস মারতে হয়। এতে করে যেকোনো তলোয়ারই স্বাভাবিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায়। এবং প্রতিটা স্লাইস আরো শক্তিশালী এবং দ্রুত হয়।(এলি)
.
–ও। চেষ্টা করে দেখি।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার ডান পা আগিয়ে দিয়ে দারালাম যেভাবে এলি দাড়িয়েছিলো। তারপর আমার সকল ভর বাম পায়ের মধ্যে রাখলাম। এবং ভিরুদাকে দিয়ে একটা স্লাইস দেওয়ার আগেই সমস্ত ভর ডান পায়ে নিয়ে একটা স্লাইস দিলাম। আসলেই এলির কথা মতো আগের থেকে অনেক দ্রুত এবং শক্তিশালী হলো এটা। আমি এভাবে একসাথে অনেকগুলো দিতে লাগলাম। এখন আগের থেকে আমার ম্যাজিক পাওয়ার কম যাচ্ছে তলোয়ারের মাঝে। কিন্তু বিশ ত্রিশটা স্লাইসের পর আর আমার শরীর কুলাতে পারলো না। শরীরের ম্যাজিক পাওয়ার শেষ হয়ে গেলো আমার। বুঝতে পারলাম অনেক ট্রেনিং এর প্রয়োজন আমার। যত বেশী ট্রেনিং করবো ততই শক্তিশালী হয়ে যাবে তলোয়ার নিয়ে।
.
–একটু সময় লাগবে তোমার। আমার জানা মতে তলোয়ার চালানোর এটাই সবচেয়ে কমন টেকনিক যেটা আমার পূর্ববর্তী পরিবারের সদস্যরা অতীত থেকে শিখে আসছে। আমিও প্রথম যখন তলোয়ার হাতে নি তখন আমি দুটোর বেশী স্লাইস দিতে পারতাম না। কিন্তু এখন প্রতিরাতেই আমি এক হাজার স্লাইস করে প্রাকটিস করি।(এলি)
.
–ওয়াও। এক হাজার।(আমি)
.
–হ্যা। কিছু সাধারন টেকনিক আছে সেগুলোর বই আছে আমার কাছে। তুমি চাইলে আমি শিখাতে পারি।(এলি)
.
–বই আছে?(আমি)
.
–হ্যা। সাথেই রাখি সবসময় আমি এটা।(এলি)
।।।
।।।
আমি এলির থেকে বইটা নিয়ে পড়তে লাগলাম। একটা গাছের নিচে দুজনে বসে রইলাম। অনেকটা সময় কাটছে, কিন্তু আমি বইতে থাকা সবগুলো টেকনিকই পরে ফেললাম। আমি এলির সময় বেশী নষ্ট করতে চাই না। আমি জানি ও ওর সমস্ত চেষ্টা করছে তলোয়ার নিয়ে শক্তিশালী হওয়ার। তাই ওর উপরে আমাকে শিখানোর চাপ দিতে চাই না। আর এখানে আছিই একদিন। এরপর দুবছরের জন্য কে কোথায় থাকবো সেটা আমার সন্দেহ। হয়তো আলাদা জায়গায় আমাদের থাকতে হবে। যাইহোক এলিহার বইতে প্রায় উনিশটি ছোট ছোট টেকনিক রয়েছে তলোয়ার ব্যবহারের। আমি সেগুলো একবার করে পড়ে নিলাম। আর একবার পড়াতেই আমার মুখস্ত হয়ে গেলো। আমি জানি না হয়তো এটা আমার কোনো ক্ষমতা হবে। আমি কোনো বই একবার পড়লেই সেটা আমার মুখস্ত হয়ে যায়। জ্ঞান বারানোট ক্ষেত্রে এটা অনেক কাজের একটা জিনিস। কিছুক্ষন পর পড়া শেষ করে।
.
–নাও শেষ। অনেকক্ষন হলো আমরা এখানে একা চলো বাকিদের কাছে যাওয়া যাক। এতোক্ষনে আমার ম্যাজিক পাওয়ারও অনেকটা হয়ে গেছে।(আমি)
.
–একবার করে পড়াতেই হবে তোমার?(এলি)
.
–কোনো বই একবার পড়লে সেটা আমার সবসময় মনে থাকে। তাই কোনো সমস্যা হবে না আমার। পরে সময় মতো টেকনিকগুলো শিখে নিবো।(আমি)
.
–ঠিক আছে।(এলি)
।।।
।।।
আমরা দুজনই হাটতে হাটতে চলে আসলাম হ্যারি, লুসি, লুসানার কাছে। ওরাও ট্রেনিং করছে। হ্যারি ওর ছোট ছোট স্পেল গুলো ছুড়ে মারছে লুসি এবং লুসানার দিকে এক এক করে। আর লুসি এবং লুসানা ঢালের ব্যবহার করে সেটা আটকে দিচ্ছে।
.
–অনেক কড়া ট্রেনিং হচ্ছে মনে হয়।(আমি)
.
–হ্যা। তোমাদের তলোয়ার ট্রেনিং শেষ নাকি?(হ্যারি)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–তাহলে চলো ঘুরে দেখি দ্বীপটা।(হ্যারি)
।।।
।।।
আমরা পাঁচজন ঘুরতে লাগলাম পুরো দ্বীপ। রাতের দিকে আমরা ফিরলাম আমাদের রুমের মধ্যে। সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নি। হ্যারি কিছুটা খেয়েই ঘুমিয়ে গেলো। আর আমি খেয়ে ভিরুদাকে নিয়ে বাইরে চলে আসলাম। আমি এলির দেখানো মতো প্রাকটিস করতে লাগলাম। আমাকে আমার স্লাইসের সংখ্যা বারাতে হবে, এবং সেটা অনেক দ্রুত করতে হবে। শুধু তাই নয় আমার নিজের চলাচলও দ্রুত করতে হবে। সব মিলিয়ে অনেক কড়া ট্রেনিং করতে হবে। আমি এলির বই থেকে অনেকটা তথ্য পেয়েছি কিভাবে নিজের এবংতলোয়ার দ্রুত করা যায়। কিন্তু সময় লাগবে সেটার জন্য। এখন থেকেই ট্রেনিং করলে কয়েক বছরের ভিতরে অনেক শক্তিশালী হয়ে যেতে পারবো।
।।।
।।।
ট্রেনিং শেষ করে আমিও রুমের মধ্যে চলে আসলাম। তলোয়ার চালানো যে এতোটা কষ্ট হবে সেটা আগে জানতাম না। আগে তো ভাবতাম শুধু এদিক সেদিক করলেই হয়, কিন্তু প্রতিটা স্লাইস এবং পদক্ষেপ একদম ঠিক না হলে শরীরের ম্যাজিক পাওয়ার সব তলোয়ারই চুষে নিবে। অবশ্য সাধারন তলোয়ারে এরকম হয় না। এখন সবারই কাছে ম্যাজিকাল তলোয়ার রয়েছে। আর ম্যাজিকাল তলোয়ার ব্যবহার কারীর ম্যাজিকাল পাওয়ারের দ্বারাই চলে।
।।।
।।।
যাইহোক আমি রুমে এসে ভিরুদাকে ড্রেস পরিয়ে দিলাম। এরপর আমি ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমি নিজেকে একটা ম্যাজিকাল যানের ভিতরে আবিষ্কার করলাম। বুঝতে পারছি না এখানে কিভাবে আসছি। আমার সামনেই একজন অফিসার বসে আছেন। একটা ব্যাচ ওয়ালা অফিসার তিনি। মানে সবচেয়ে নিচের পদের অফিসার। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম।
.
–স্যার আমি কোথায়? এখানে আসলাম কিভাবে?(আমি)
.
–তাহলে এতোক্ষন পর ঘুম ভাঙলো তোমার। আমি দুঃখিত তোমার ঘুম না ভাঙাতে পারায় আমি তোমাকে এবং তোমার জিনিসপত্রকে সোজা এখানে টেলিপোর্ট করে নিয়ে এসেছি।(অফিসার)
.
–আমার ব্যাগ স্যার?(আমি)
.
–আমি ব্যাগটা উঠাতে পারি নি। তাই সেটাকে ধরে টেলিপোর্টেশন গেইটের মাধ্যমে আমি এখানে নিয়ে এসেছি। এই যে পাশেই রয়েছে।(অফিসার)
.
–আমরা কোথায় এখন স্যার?(আমি)
.
–আমরা ২ নং শহরে আছি এখন। একটু পরই রয়েল ক্যাপিটালে পৌছে যাবো।(অফিসার)
.
–ওওওও।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার ব্যাগ চেক করে নিলাম। জামা কাপড়ের ব্যবস্থা আমাদের মিলিটারি থেকেই হতো, তাই আমাকে জামাকাপড় বহন করতে হতো না। ব্যাগের মধ্যে আপাতোতো তিনটা বই এবং ভিরুদা রয়েছে।
.
–স্যার আমার বন্ধুরা কোথায়?(আমি)
.
–তাদেরকে নেওয়ার জন্য অন্য অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক একজনের জন্য আলাদা অফিসার পাঠিয়েছেন জেনারেল।(অফিসার)
.
–রয়েল ক্যাপিটালে কোথায় যাচ্ছি আমরা এখন?(আমি)
.
–রয়েল প্যালেসে।(অফিসার)
।।।।
।।।।
আমি আর অফিসারকে কিছু বললাম না। কারন আমি বাইরের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি এই যান থেকে। অনেক আশ্চর্যজনক একটা যান এটা। দেওয়ালের বাইরেও দেখা যাচ্ছে ভিতর থেকে। মনে হচ্ছে কাঁচের তৈরী এটা। কিন্তু বাইরের কোনো আলো আবার ভিতরে আসছে না। তাই এটাকে কাঁচও বলা যাচ্ছে না। নতুন কোনো বস্তু হবে হয়তো। কিছুক্ষনের ভিতরে আমরা রয়েল ক্যাপিটালে পৌছে গেলাম। যেটা আশা করেছিলাম সেরকমই। বিশাল একটা শহর। বড় তো অবশ্যই হবে কারন রাজ্যের প্রধান শহর এটাই। এখানেই রাজ্যের রাজা এবং তার পরিবার থাকে। তাছাড়া বাকি সকল শহরের লোকেরা এখানে ব্যবসা করতে আসে। এ ছাড়াও এখানের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এখানে এই রাজ্যের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরাই বসবাস করে। গরীবরা বেশীর ভাগ ধনীদের কাজকর্ম করেই জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের যানটা অনেক স্পিডে যাচ্ছে যার জন্য আমি ঠিক মতো কিছু লক্ষ করতে পারছি না। তবে এক ঝাপসায় যা দেখছি তাতেই আমি মুগ্ধ হচ্ছি। দূরে বিশাল প্যালেস দেখতে পাচ্ছি যার দিকেই আমাদের যান চলে যাচ্ছে। আমি খুব উত্তেজিত কি থেকে কি হবে সেটা নিয়ে। এই প্রথম আমার নিজ রাজ্যের প্যালেসে যাবো তার জন্য আমি অনেক নার্ভাসও হয়ে গেলাম।
।।।
।।।
দেখতে দেখতে আমাদের ম্যাজিকাল যানটা প্যালেসের সামনে থামলো। বাইরে বের হয়ে অবাক হলাম, কারন যানটার বাইরে থেকে ভিতরে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ভিতর থেকে বাইরে একদম স্পষ্ট দেখা যায়। হয়তো প্যালেসের লোকদের জন্য এসব যান ব্যবহৃত হয়। অফিসার তাকে ফলো করতে বললেন। আমিও তার পিছন পিছন আশেপাশের সব কিছু দেখতে দেখতে হাটতে লাগলাম। প্যালেসটা বিশাল বড়। একদম নিচ থেকে দেখে মনে হচ্ছে এটার মাথা একদম আকাশ ছুয়ে ফেলছে। আমাকে প্যালেসের ভিতরে নিলো না অফিসার। বরং পাশ দিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে গেলো। পিছনের দিকে বিশাল বড় মাঠ রয়েছে। আর প্যালেসের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার গার্ড ম্যাজিকাল বন্ধুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ম্যাজিকাল বন্ধুক শুধু রয়েল গার্ডদের জন্য প্রস্তুত হয়। এটা একদম আধুনিক একধরনের অস্ত্র যেটার মধ্য থেকে ছোট ছোট পাথরের টুকরার মতো একধরনের শক্ত পদার্থ বের হয়, যেটা অনেক ভয়ঙ্কর হয়। মূলত একজনের ম্যাজিক পাওয়ার যত হবে তার বন্ধুক থেকে তত বেশী গুলি বের হবে৷ এরকম অস্ত্র সামনে দেখতে পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। ভবিষ্যতে তীর, তলোয়ার হয়তো সব উঠে এরকম অস্ত্রেরই যুদ্ধ হবে।
।।।
।।।
আমাকে একটা বেঞ্চের উপরে বসতে বলে চলে গেলো আমার সাথের অফিসার। বুঝতে পারছি না এখানে আনলো কিসের জন্য। আমাকে কি প্যালেসে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি সেটা বুঝতে পারছি না। আমি আমার আমার ব্যাগটা কাধ থেকে কোলে নিয়ে বসে পরলাম। আসে পাশে তাকিয়ে আছি সব গার্ড আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ এটা দেখে আমি আরো বেশী নার্ভাস হয়ে গেলাম। ঢোক গিলতে লাগলাম। ঘাম বের হতে লাগলো শরীর থেকে। হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বলতে লাগলো,
.
–কে তুমি? তোমাকে তো এখানে কোনোদিন দেখি নি?(আমার সমান একটা মেয়ে)
.
–আমার নাম জ্যাক। আমাকে এখানে একজন অফিসার এনেছেন।(আমি ভয়ে উত্তর দিলাম)
।।।
।।।
হঠাৎ দুজন ছেলে আসলো এবং আমার শরীরে লাথি দিয়ে আমাকে বেঞ্চ থেকে ফেলে দিয়ে বলতে লাগলো,
.
–সাহস হয় কিভাবে প্রিন্সেস এর সাথে এভাবে কথা বলতে?(দুজন ছেলের একজনকে চিনতে পারলাম সে হলো কহিল স্যার। আরেকজন কে চিন্তে পারলাম না)
.
–কহিল, আখিল পিছনে যাও। আমি কথা বলছি তো ওর সাথে।(মেয়েটা)
.
–জ্বী প্রিন্সেস।(দুজনই একসাথে বলে উঠলো)
।।।
।।।
আমি দুজনের লাথিতেই অনেক ব্যথা পেয়েছি। নিচে পরে আমার হাতে অনেকটা কেটে গেছে। মেয়েটা একটা হাত দিলো আমার দিকে। আমি সেটা ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কহিল স্যার বললো সে প্রিন্সেস তাই সেটা ঠিক হবে না। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি যে এটা প্রিন্সেস হবে। নাহলে কখনো এতো ক্রাজুয়ালি কথা বলতাম না। আমি উঠে আমার ব্যাগটা কাধে দিয়ে হাটু গেড়ে দিয়ে সম্মান জানালাম। রাজ্যের এটাই নিয়ম। রাজা এবং তার পরিবারকে এভাবেই সম্মান জানাতে হবে।
.
–তুমি একটু আগে বললে তোমার নাম জ্যাক তাই না?(প্রিন্সেস)
.
–জ্বী প্রিন্সেস। আমি অনেক দুঃখিত আমি আপনাকে চিনতে পারি নি। এজন্য আমি ঔভাবে কথা বলেছি আপনার সাথে।(আমি)
.
–কোনো সমস্যা নেই। তাহলে তুমি জ্যাক। ঠিক আছে দেখা হবে আবার জ্যাক।(প্রিন্সেস)
।।।
।।।
প্রিন্সেস চলে গেলো। তার সাথে আখিলও পিছন পিছন যেতে লাগলো। আমি প্রিন্সেস এর একটা জিনিস বুঝলাম না। আমার নামটা শোনার পর তাকে অনেক খুশি মনে হলো। যাইহোক কহিল স্যার আমাকে বলতে লাগলো,
.
–ভাগ্য ভালো প্রিন্সেস এর জন্য বেঁচে গেলে আজকে। আমি কখনো দেখি নি প্রিন্সেস এভাবে কারো সাথে কথা বলতে। তারপরও সাবধান। আমি কিছু না করলেও প্রিন্সেস এলিনার রয়েল গার্ড এরপর তোমাকে প্রিন্সেস এর সাথে কথা বলা দেখলেই মেরে ফেলবে।(কহিল)
.
–ওকে স্যার।(আমি)
.
–কিন্তু তুমি এখানে কেনো? তোমাদের তো— বইলো না জেনারেল তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।(কহিল)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–বাবার সাথে যে কি করবো আমি।(কহিল)
.
–সরি স্যার কিন্তু জেনারেল কি আপনার বাবা?(আমি)
.
–হ্যা। আচ্ছা বাদ দাও। এখানে অপেক্ষা করো জেনারেল একটু পরেই এখানে চলে আসবে।(কহিল)
.
–জ্বী স্যার।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি বসে ছিলাম বেঞ্চের উপরে। কিন্তু কারো কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। অনেকক্ষন পর প্রায় প্যালেস থেকে অনেকেই আমার দিকে আসছে। আমি জানি না কেনো সবাই এদিকে আসছে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও আমার ভালো লাগছে না। সকলের সামনে আমি দশ স্টার ওয়ালা অফিসার দেখতে পেলাম। তারমানে তিনিই জেনারেল। আমি জানি না কেনো, কিন্তু তার চেহারা আমার চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আমি সঠিক বলতে পারছি না, কিন্তু আমার হারানোর মেমোরীর মধ্যে তার কোনো না কোনো স্মৃতি অবশ্যই আছে। সকলে আমার কাছেই আসলো। সকলে বলতে রাজাও এখানে এসেছেন। আমি অবাক সোজা রাজাকে এখানে দেখে। আমি আমার হাটু গেড়ে সম্মান জানালাম।
.
–জ্যাকসন।(জেনারেল)
.
–জ্বী স্যার।(আমি)
.
–তোমাকে এখানে আনা হয়েছে কেনো সেটা জানো?(জেনারেল)
.
–না স্যার।(আমি)
.
–মূলত বলা হয়েছিলো তোমাদের পাঁচজনকে দুবছরের জন্য ক্যাপিটালে থাকতে হবে। সেটা কেনো বলা হয়েছিলো এটা কি জানো?(জেনারেল)
.
–না স্যার।(আমি)
.
–তোমার বাকি বন্ধুদের ক্যাপিটালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের বাসায় পাঠানো হয়েছে। তারা চাইলে তাদের সারা জীবন কাটাতে পারবে। আর তোমার ক্ষেত্রে সেটা আলাদা। কারন ক্যাপিটালে তোমার নিজের পরিবার আছে।(জেনারেল)
.
–আমার পরিবার?(আমি)
.
–হ্যা তোমার পরিবার।(জেনারেল)
.
–সরি স্যার। কিন্তু আমার স্মৃতিতে এমন কোনো জিনিস সম্পর্কে কিছু নেই। একটু খুলে বলুন।(আমি)
.
–তোমার বাবার সম্পর্কে কিছু জানো?(জেনারেল)
.
–জানলেও আমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে, যার জন্য আমি মনে করতে পারছি তাকে।(আমি)
.
–তোমার ডান হাতের তালুতে একসাথে চারটা তিল আছে দেখো।(জেনারেল)
.
–হ্যা।(আমি)
।।।
।।।
জেনারেল আমার দিকে এগিয়ে এসে তার ডান হাত ও দেখালো আমাকে। তার ডান হাতেও আমার হাতের যেখানে চারটা তিল সেখানেই তিল আছে। আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম।
.
–তার মানে, আপনি আমার..(আমি)
.
–হ্যা।(বাবা)
।।।
।।।
আমি আর কিছু বললাম না। তিনি আমার বাবা এটা জেনে আমার কোনো কিছু ফিলও হলো না। আমাদের দুজনের চেহারায় অনেকটা মিল রয়েছে। কিন্তু বাবাকে কিভাবে ফিল করতে হয় এটা বুঝতে পারছি না। আর তাছাড়া তারা যা বলছে তাতে আমি এখনি বিশ্বাস করতে পারি না। তিনি আমার সত্যিকারের বাবা হলে অনেক আগেই আমার সাথে দেখা করতেন। আর দেখা করলে আমি তার চেহারা ঠিকই মনে রাখতাম। সব মিলিয়ে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। কিন্তু আমি কোনো রকম আর কথা বললাম না। আমাকে সোজা প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হলো। নিজের দিকে একটা বিশাল রুম আমাকে দেওয়া হলো। হঠাৎ একদিনের মধ্যে আমার ভাগ্য একদম খুলে গেলো।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ১১
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
প্যালেসের মধ্যে আমার এক সপ্তাহ সময় কেটে গেলো। এর মধ্যে আমি এখানের অনেক তথ্য সম্পর্কে জেনেছি। মূলত জেনারেলের সাথে আমার কথা হয়েছে। তার কথা মতে, তিনি হলেন রাজার ছোট ভাই। যেহেতু তে রাজ্যের প্রিন্স ছিলো তাই তাকে কম বয়সেই বিয়ে করতে হয়েছিলো। সেই বিয়েতে তার কোনো ইচ্ছা ছিলো না, কিন্তু তখন সে তার বাবার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে নি। তারপর তার দেখা হয় আমার আম্মার সাথে। আমার আম্মাকে ভালোবেসে ফেলে সে। কিন্তু গোপন রাখে তার প্রথম বিয়ে এবং নিজের পরিচয় সম্পর্কে। আমার আম্মাকে নিয়ে সে পালিয়ে যায় এবং বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু আমার জন্মের কিছুদিন আগেই আমার আম্মা জেনারেলের সব তথ্য জানতে পারে, এবং সে তাকে তার জীবন থেকে একদম তারিয়ে দেই। এরপর জেনারেল রয়েল প্যালেসে চলে আসেন। এবং আমাদের ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। দেখতে দেখতে সে জেনারেল হয়ে গেলো। যেহেতু আমার আম্মা তাকে আমাদের কাছে আসতে দিবে না, তাই জেনারেল প্লান করেছে আমাদেরই তাদের কাছে নিয়ে আসবেন। এজন্য মিলিটারি স্কুলের ব্যবস্থা করে প্রথমে আমাকে এখানে এনেছে। এরপর সে চেষ্টা করবে আম্মা এবং আমার দুই বোনকে এখানে আনার।
।।।
।।।
তার কাহিনীতে সেন্টিমেন্টাল রয়েছে কিন্তু আমিও মেনে নিতে পারছি না সে আমাদের সাথে এতো বড় প্রতরনা করবে। তার একটা পরিবার থাকা সত্যেও সে আমার আম্মার জীবন নষ্ট করেছে। মানলাম আমরা তার জন্যই এই দুনিয়াতে জন্ম নিয়েছি কিন্তু আমি তাকে এটার জন্য ক্ষমা করতে পারবো না। আমার মন জয় করার জন্য জেনারেল অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমি তাকে কোনো পাত্তাই দেই না। তার একটা কথায়, সে আমার মুখে বাবা ডাক শুনতে চাই। কিন্তু তাকে বাবা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। প্যালেসে আমি সুন্দর জীবন কাটাচ্ছিলাম। কারন আমি অনেক ধরনের বই পড়তে পারি প্যালেসের মধ্যে। রাজ্যের বেশীরভাগ বই প্যালেসের লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়। লাইব্রেরীটাও বিশাল। বইয়ের অভাব নেই এখানে। আমি প্রথম দিন থেকেই লাইব্রেরীতেই সময় কাটায় আমার। প্যালেসের অন্যান্য কাজে আমার কোনো নজর নাই। আমার জন্য একজন গার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে যে কিনা আমার খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে। লাইব্রেরীতেই আমার খাওয়া, দাওয়া, ঘুম হয়। এভাবেই আমি এক সপ্তাহ সময় কাটিয়েছি। কিন্তু আজকে আমার আর লাইব্রেরীতে বসে থাকতে মন চাচ্ছে না। এখানে আমাকে কোনো মিলিটারি নিয়ম মানতে হয় না। তবে একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি। কহিল স্যারের নজর বেশ কিছুদিন আমার উপরেই আছে। মাঝে মাঝে লাইব্রেরীতে এসে আমার সাথে দেখা করে যায়। কিন্তু কোনো কথা বলে না। কহিল হচ্ছে জেনারেলের প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান। বড় জনের নাম আখিল। আর ছোট একটা মেয়ে আছে, নামটা আমার জানা হয় নাই। আখিল বর্তমানে প্রিন্সেস এলিনার রয়েল গার্ডের পদে আছে। প্রিন্সেস এর সকল নিরাপত্তার কাজ তার। আমি এখনো উপরে যায় নি। আমাকে অনেকবার বলা হয়েছিলো উপরে যেতে। কিন্তু আমি লাইব্রেরীতেই থাকতে পছন্দ করি তাই উপরে এখনো আমার যাওয়া হয় নি।
।।।
।।।
আজকে আমি বের হয়েছি প্যালেস থেকে। দূরে আমি প্রিন্সেস এলিনা এবং সাথে বড় আরেকটা মেয়েকে দেখতে পেলাম। হয়তো সেটা প্রথম প্রিন্সেস হবে। যায়হোক আজকে আরআমার ভালো লাগছে না তাই আমি বের হয়েছি আমার ব্যাগ এবং ভিরুদা নিয়ে। আজকে আমি ক্যাপিটাল ঘুরে দেখবো। শুধু বই পরে আমি ক্যাপিটাল সম্পর্কে ধারনা পাবো না। আমাকে নিজ চোখেও দেখতে হবে। আমার ট্রেনিংও শুরু করতে হবে। সেটা আমি প্যালেসে করতে পারবো না। আমাকে নিজেই শক্তিশালী হতে হবে এখন। প্যালেসের সামনের দেওয়াল পার হলাম টপকিয়ে। কারন গেইটের সামনে অনেক গার্ড আর আমি চাই না কেউ আমাকে দেখুক আমি বের হচ্ছি। মনে হচ্ছেও না কেউ দেখেছে।
।।।
।।।
আমি টপকানোর পর হাটতে হাটতে শহরের দিকে যেতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পিছনে হাটছে। আমার মনে হলো কেউ আমাকে দেখে ফেলেছে দেওয়াল টপকানো, তাই আমার পিছে আসছে। আমি পিছে ঘোরার পর অনেক অবাক হলাম। কারন পিছনে প্রিন্সেস এলিনা দাড়িয়ে আছে। রাজ্যের দ্বিতীয় প্রিন্সেস আমার পিছনে এটা দেখে অনেক অবাক হলাম। মুখটা ঢেকে রাখলেও তার ড্রেসের জন্য আমি সহজেই চিনতে পেরেছি। অবশ্য আমার মুখটা সেই প্রথম থেকেই ঢাকা একটা মাস্ক দিয়ে। এখনো আমার চেহারা দেখে নি কেউ প্যালেসের মধ্যে। শুধু কহিল ছাড়া। আমি এখন প্রিন্সেস এর সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলাম না। কারন আমি তার গার্ডের থেকে পিটুনি খেতে চাই না। আমি আবার আমার মত চলতে লাগলাম, কিন্তু প্রিন্সেস আমাকে ফলো করেই যাচ্ছে। এটা একদম ঠিক হবে না। প্রিন্সেস কেনো আমার পিছু নিচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি না। যায়হোক আমি আমার মতো হাটতে লাগলাম। আমি অনেকটা সামনে এসে ডান দিকে একটা ছোট অন্ধকার গলির ভিতরে ঢুকে গেলাম। এবং সেখানে দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম প্রিন্সেস কি করে সেটা দেখতে। প্রিন্সেস আরো কিছুটা এগিয়ে একটু দাড়ালো, আমাকে হারিয়ে ফেলছে তাই কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু হঠাৎ তাকে একটা স্পেল ব্যবহার করতে দেখলাম আমি। কিসের স্পেল আমি বুঝলাম না, কিন্তু আমি যে গলির দিকে দাড়িয়ে ছিলাম ঠিক এখানে এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম.
.
— আপনি আমাকে পেলেন কিভাবে?(আমি)
.
–ও এটা সহজ ছিলো। এটাকে ফাইন্ডিং স্পেল বলে, যেটা আমাকে আমার পরিচিত যে কাউকে খুজতে সাহায্য করে।(প্রিন্সেস)
.
–কিন্তু আমি তো আপনার পরিচিত না।(আমি)
.
–এটা কাউকে আমি একবার দেখলেই কাজ করে। আর কে বললো তুমি আমার পরিচিত না। তোমার বাবা তো আমার বাবারই আপন ভাই। সেই দিক দিয়ে আমরা পরিচিত।(প্রিন্সেস)
.
–আমার কোনো বাবা নেই। আর আমরা পরিচিতও না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আপনি প্যালেসে চলে যান। গার্ড দেখলে ঝামেলা হবে।(আমি)
.
–প্যালেস থেকে আমার বের হওয়া নিষিদ্ধ। তাই তোমার পালানো দেখে আমিও বের হয়ে এসেছি। এখন আমি যাবো না প্যালেসে।(প্রিন্সেস)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি প্যালেসে না যান। যেখানে মনে হয় সেখানে যান। কিন্তু আমাকে ফলো করবেন না।(আমি)
.
–আসলে আমি প্যালেসের বাইরে কিছুই চিনি না। যেতে হলে আমার গার্ড সাথে যায় তখন কিছুই দেখা হয় না আমার। তাই একা কোথাও গেলে আমি হারিয়ে যাবো।(প্রিন্সেস)
.
–দেখুন অন্য কাউকে। আমাকে একা রাখুন।(আমি)
.
–এমন কেনো তুমি। এতো সুন্দরী একটা মেয়ে তোমার সাহায্য চাচ্ছে শহরটা ঘোরার জন্য, কিন্তু তুমি মানা করছো
অন্য কেউ হলে তো এক কথাতেই রাজি হয়ে যেতো।(প্রিন্সেস)
.
–দেখুন আমাকে একা ছেড়ে দিন।(আমি)
।।।
।।।
আমি হাটতে লাগলাম গলির ভিতর দিয়ে। আর তখন প্রিন্সেস আমাকে বলতে লাগলো,
.
–ঠিক আছে আমি আমার মতো যাচ্ছি, প্যালেস থেকে গার্ড যখন দেখবে আমরা দুজনই প্যালেসের মধ্যে নেই, তখন গার্ড আমাদের খুজতে আসবে, আর আমি তখন বলে দিবো তুমি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছিলে।(প্রিন্সেস)
.
–আমি এটা কখনো করি নি।(আমি)
.
–কিন্তু তারা এটাই মেনে নিবে।(প্রিন্সেস)
।।।
।।।
প্রিন্সেস এর কথাও ঠিক। সে গার্ডদের যা বলবে তারা সেটাই মেনে নিবে। আমি আমার জীবন ঝুকির মুখে রাখতে চাই না। আর জেনারেল আমাকে নিজের ছেলে দাবী করলেও রাজার আদেশ থাকলে আমাকে ঠিকই মরতে হবে, আর প্রিন্সেসকে কিডন্যাপ করা অনেক বড় অন্যায়। যদিও করি নাই, তারপরও নাম আমার উপরে আসবে। আমি বুঝতেছি না কি করবো।
.
–আচ্ছা ঠিক আছে আসুন আপনি আমার সাথে।(আমি)
.
–দেখছো কিভাবে কথা শোনাতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি, তো তোমার কি মনে হয় সিংহাসন কি আমি পাবো?(প্রিন্সেস)
.
–দেখুন এসব জিনিসে আমি কিছুই জানি না। সিংহাসন, প্যালেস এসবের মধ্যে আমার কোনো আগ্রহ নেই। তাই আমি বলতে পারছি না।(আমি)
.
–ও তা তুমি কি করতে চাও?(প্রিন্সেস)
.
–আমি শক্তিশালী হতে চাই। এমন শক্তিশালী হতে চাই যে আমি আমার আম্মা এবং দুই বোনকে সবসময় সুরক্ষা করতে পারি।(আমি)
.
–ও।।। আচ্ছা জ্যাক, তুমি কি রাতে কোনো আজব স্বপ্ন দেখো?(প্রিন্সেস)
.
–হঠাৎ এই প্রশ্ন প্রিন্সেস?(আমি)
.
–এমনি, আমি তো রোজই অনেক আজব স্বপ্ন দেখি। বুঝতে পারি কিসের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু একটা নাম সবসময় আমার স্বপ্নে দেখতে পাই, আর একটা চেহারা সব সময় আমার চোখে ভাসে।(প্রিন্সেস)
.
–ওওও।(আমি)
.
–তোমার মাস্কটা খুলবে একটু?(প্রিন্সেস)
.
–কিসের জন্য? দেখবেন আপনার স্বপ্নের সেই লোকের সাথে আমার চেহারা মিলে নাকি? কখনো মিলবে না। আমি সাধারন একজন মানুষ, যে কিনা কোনো ম্যাজিক স্পেল ব্যবহার করতে পারে না, সে কখনো কোনো প্রিন্সেস এর স্বপ্নে দেখা দিবে না।(আমি)
.
–ওওও।(প্রিন্সেস)
।।।
।।।
কথায় কথায় আমি প্রিন্সেসকে প্যালেসের গেইটের সামনে নিয়ে এসেছিলাম। কেউ খেয়াল করে নি ভিতর থেকে। কারন গেইটের সামনে তেমন গার্ড ছিলো না এখন। কিন্তু খেয়াল খুব তারাতারিই করবে। প্রিন্সেস আমার উত্তরে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলো। আমি এই সুযোগে পাশ কেটে চলে গেলাম। আমাকে হয়তো গার্ড খেয়াল করে নি। কিন্তু প্রিন্সেসকে এতোক্ষনে ঠিকই খেয়াল করেছে তারা। আমি এবার দৌড়ে চলে আসলাম একদম শহরের মধ্যখানে। আমি শুধু ক্যাপিটাল সম্পর্কে বইয়েই পড়েছি। আজ প্রথম নিজের চোখে দেখতে পেলাম। ভালোই বড় বড় বাসা রয়েছে চারিদিকে। শুধু বাসা নয় চারিদিকে বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা রয়েছে। বেশীরভাগ বিস্টম্যান এবং ডয়ারফসদেরই আমি দেখতে পাচ্ছি। আশে পাশে বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। খাবার এবং অস্ত্রের দোকানই সবচেয়ে বেশী। আমি কি থেকে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। প্রথমত ক্ষুদা লেগেছে। কিন্তু কিছু কেনার মতো অর্থ আমার নেই। আপাতোতো আমাকে কিছু টাকা অর্জন করতে হবে। আমার জেনারেলের ক্ষমতার উপরে পরে থাকলে লাভ হবে না। নিজের জীবন নিজেকেই ধরতে হবে। দুই বছর এখানে থাকতে হবে সেটা বলেছিলো, দুইবছর আমার অর্থেই আমাকে ক্যাপিটালে থাকতে হবে। আমি সামনে একটা ঘোড়ার যান দেখতে পেলাম যেটার কাঠের চাকা মাটির গর্তে আটকে গেছে। লোকটা তার যানের মধ্যে কিছু ফল বহন করছে। সে একা ধাক্কিয়ে উঠাতে পারছে না। তাই আমি গিয়ে একটু সাহায্য করলাম। দুজনের ধাক্কার ফলে উঠে গেলো,
.
–ধন্যবাদ তোমাকে। বলতে হবে মানুষ হয়ে এইটুকু বয়সে ভালোই জোর আছে তোমার শরীরে। কষ্ট করে যাও অনেক শক্তিশালী হতে পারবে।(লোকটা একজন বিস্টম্যান)
।।।
।।।
আমার হাতে দুটো আপেল দিলো লোকটা।
.
–ধন্যবাদ ফলের জন্য। আমাকে একটা সাহায্য করবেন?(আমি)
.
–হ্যা বলো।(লোকটা)
.
–এখানে আমি কিভাবে উপার্জন এবং সেই সাথে শক্তিশালীও হতে পারবো?(আমি)
.
–অনেক কাজই আছে ক্যাপিটালে, তবে তোমার পিঠের তলোয়ার দেখে মনে হচ্ছে তোমার জন্য আর্কাইব ভালো হবে।(লোকটা)
.
–আর্কাইব?(আমি)
.
–আর্কাইবে যোগ দিকে বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় মিশন দিবে তারা, সেগুলো পূরন করলে তারা তোমাকে অর্থ দিবে।(লোকটা)
.
–ও তাহলে রাস্তাটা দেখাবেন আমাকে।(আমি)
.
–ঔযে লাল কাপড় দেখতে পাচ্ছো ঔটাকে ফলো করো। ঔটাই আর্কাইব হল।(লোকটা)
.
–ধন্যবাদ।(আমি)
।।।
।।।
আমি আপেল দুটো খেয়ে লাল কাপড় ঝুলানো উচু বাসার দিকে যেতে লাগলাম। আর্কাইব আমার ধারনা করা মতে আসলে অনেক বড়। আমি একটা বইয়ে আর্কাইব সম্পর্কে পড়েছি। আর্কাইব মূলত একটা সংস্থা যারা সাধারন লোকদের সাহায্য করে। এখানে বিভিন্ন শহরের লোকেরা এসে বিভিন্ন ধরনের মিশন এবং অর্থ দিয়ে যায়, এবং আর্কাইবের বোর্ডে সেটা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এবং যারা আর্কাইবের সদস্য তারা সে মিশনগুলো শেষ করে কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে। এটা আমার জন্য ভালো একটা জায়গা হবে আয়ের জন্য। আমি অর্থও উপার্জন করতে পারবো, আবার শক্তিশালীও হতে পারবো। এখানের বেশীর ভাগ মিশনই হয় বন্য পশু শিকার করা যেগুলো সবার ক্ষতি করে। অনেক হিংস্র ম্যাজিকাল বিস্টও রয়েছে তাদের মধ্যে। আমি ভিতরে গিয়ে রেজিস্টার করে ফেললাম। অবশ্য এখানে দশ বছরই সর্বোনিম্ন বয়স যোগ দেওয়ার জন্য। আর আমি সেটার জন্য অনেক লাকি। দুটো মাঝারি সাইজের মেমথ(হাতির মতো দেখতে কিন্তু তার থেকেও দ্বিগুন সাইজের সেগুলো) শিকার করার মিশন পেয়েছি। মেমথ গুলো ক্যাপিটালের বাইরে যেসব লোক যায় সবাইকে মেরে ফেলে, তাই তাদের শিকার করা এখন জরুরী, অবশ্য আর্কাইবের তথ্য এটা। কিন্তু আমি জানি মেমথ গুলোর দুটো বিশাল শিং থাকে যেটা খুবই মূল্যবান হয়, আর এটার জন্যই তাদের শিকার করা হয়। আমার ও কিছু করার নাই এখন, এটা ছাড়া আমার বয়স অনুযায়ী আর কোনো মিশন নেই। অনেক মিশনই পরে আছে আরো, কিন্তু তারা আমাকে সেসব মিশন নিতে দিবে না, কারন আমার বয়স কম।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।