মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
223

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১৬

কিরে তুই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছিস, বিয়েটা তাহলে তুই করছিস? তোকে এই এক সপ্তাহ অনেক বলেছি বিয়েটা করিস না। একটা ছোট বাচ্চাকে বুঝালেও এতদিনে বুঝে যেতো আমি কেনো মানা করছি। এতো বড় মেয়ে ফিরোজ ভাইকে চিনলি না?

দেখো শাফখাত ভাইয়া আজকে তোমাকে না বলে পারতেছি না। ফিরোজ স্যার আমাকে ভালোবাসলে আমাকে এভাবে ফেলে যেতোনা। আমি বিয়েতে মত দিয়েছিলাম এই কারণে যদি ফিরোজ আমাকে সত্যিই ভালোবাসে সেই এই বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বড়আব্বুর সামনে বুক ফুলিয়ে বলতো ফিহা শুধু আমার। কোথাও বিয়ে হবেনা তার। কিন্তু সে কি করলো? সেতো পালিয়ে গেলো? ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

তুই ফিরোজ ভাইয়াকে ভালোবাসিস কিনা সেইটা বল?

এখন তোমাকে এসব বলে কি হবে? সে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে আমাকে বিয়ে করবে? সেতো আর নাই।

তুই যদি কখনো ফিরোজ ভাইয়াকে বলতেছিস আমিয়ো তোমাকে ভালোবাসি। সে কখনো এরকম করতো না। যাওয়ার আগে নিশ্চয় তোকে সবটা বলে গেছে। ফিরোজ ভাইয়া তোর চোখে তার জন্য ভালোবাসা অনুভব করে নাই। শুধু তোর চোখে তার জন্য কঠোরতা দেখছে।

তাহলে শুনো ভাইয়া তোমাকে যেহেতু সবটা বলে গেছে ও আমিয়ো তোমার কাছে সত্যি টাই স্বীকার করবো। আমার দিকে ভালোভাবে চেয়ে রও। এই এক সপ্তাহ তার জন্য আমার চোখে ঘুম নাই। আমি তাকে ভালোবাসি বলতে যেয়েও বারবার থেমে গেছি। কারণ সে এই পরিবারের বড় ছেলে । একদিন কিচেনে যেয়ে শুনতে পাই মায়া আম্মু তার বোনের মেয়ের সঙ্গে ফিরোজ এর বিয়ে দিবে বলে ভেবেছে। ফোনে মায়া আম্মু তার বোনকে এসব বলছে। ফাহিম আব্বুর মত আছে। সেখানি আমি তাকে কিভাবে বলি আমি তাকে ভালোবাসি। সে যে, অন্য কারো জন্য সৃষ্টি। যে ভালোবাসায় প্রাপ্তি হবে না জেনেশুনে সর্ম্পকে যেয়ে মায়া বাড়িয়ে লাভ কি? কিন্তু আমি জানতাম সে আসলে দেশছেড়ে চলে যাবে। আমি ভেবেছিলাম এই বিয়ে নামক নাটক করলে সে বাড়িতে জানাবে আমি শুধুই তার। তখন উপায় না পেয়ে ফাহিম আব্বু বিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু সে যে, এই খবরে এভাবে পালাবে কখনে ভাবি নাই। তারজন্য ভালোবাসা শুধু আমার গোপনেই রেখেছিলাম। প্রথম যখন ওনি আমাকে জানায় ভালোবাসি তখন থেকে তার প্রতি আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়ে গেছিলো। মনের অজান্তেই তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলাচালীন বুঝতে পারছি। যখন ওনি কোনো ম্যাডাম বা ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতো। আমার দমবন্ধ হয়ে আসতো, অস্থির অস্থির লাগতো। পানি খেতাম আর অস্থিরতা কমাতাম । তখন আমি বুঝে গেছি ফিরোজ ছাড়া ফিহা অচল। কিন্তু ডেসটিনি আমাদের এক হওয়া লিখছে কিনা সন্দেহ। মায়া আম্মু ফাহিম আব্বু যে তার বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করছে তার অজান্তেই। তখন থেকেই তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় কুড়িয়ে কুড়িয়ে খাচ্ছে। এরজন্য সুযোগে সদ্য ব্যবহার করি। কিন্তু সে আমার চোখের ভাষা বুঝলো না শাফখাত ভাইয়া। কথাগুলো বলা শেষ করে ফিহা তপ্তশ্বাস ছাড়ে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল পড়ে। এরপরে হাতে রাখা টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে।

তাহলে আজকে কি করবি? বিয়েটাতো আজ। সেজেও এসেছিস অন্যর জন্য। ভালোবাসা মনে জমিয়ে রাখতে হয়না ফিহা। হারিয়ে ফেলার আগেই প্রকাশ করতে হয়। তুই হয়তো জানিস না তোর মুখ থেকে ফিরোজ ভাইয়া ভালোবাসি শোনার জন্য কত ছটফট করতো। আমায় ভিডিও কল দিয়ে তোকে আড়ালে দেখে। যুক্তরাষ্ট্রতে সে ভালো নাই ফিহা। তোর এই বিয়ের জন্য সাতদিন থেকে খাওয়া দাওয়া করেনা। ফর্সা চেহেরার যুবকের চোখের নিচে কালসিটে দাগ পড়ছে। গালদুটোতে বরুণ উঠছে। তোর বিয়ের চিন্তা চিন্তায় ৭২ থেকে ৬২ কেজি হয়ে গেছে। মাত্র সাতদিনে এই অবস্থা তাহলে ভাব তুই অন্য জায়গায় বিয়ে করলে এই পৃথিবীতে সে ১ মাস সার্ভাইভ করে কিনা সন্দেহ। কিছুক্ষণ আগেই তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হইছে। এখন মুখে অক্সিজেন মাক্স রেখে ঘুমের ইনজেকশন পুস করিয়ে ডক্টর তাকে ঘুম পাড়াচ্ছে। অতিরিক্ত নিজের প্রতি অযত্নের কারণে আজ সে শয্যাশয়ী।

ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো? কাল অব্দি তো বললে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। এতোটা ভেঙ্গে পড়ছে সে তুমিতো জানালে না আমাকে। বাড়ির সকলের সঙ্গে কথা বললো আড়ালে তার কন্ঠ শুনেছি। তার কন্ঠে তো এতো করুণ লাগলো না। আমার জন্য এই হাল অযচো আমি আজকে জানছি।

তোকে জানানোর মতো পরিস্থিতি নাই। বাড়িতে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। এই মুহূর্তে এগুলে বলে আনন্দঘন পরিবেশটা নষ্ট করতে পারিনা।

কিসের বিয়ে। কার বিয়ে? আমি কাউকে করছি না বিয়ে। এ জীবনে যদি ফিরোজকে না পাই একা থাকার সিদ্ধান্ত নিছি। আমি তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আপনি এক্ষুনি তাকে কল করুন আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। সে কেনো এরকম করছে। তারকিছু হলে আমি এমনিতেও বাঁচবো না। আমার মন বলছে তাকে যদি আমি বলি আপনাকে আমি ভালোবাসি। এই কথা শুনলে সে অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবে৷

ফিহা এসব কি পাগলামো? এমপির বাড়িতে বিয়ে ভাঙ্গার খবর বেড়ালে কতগুলো হেডলাইন হবে জানো? আর লিটনের বাবা ছাড় দেওয়ার লোক না আমার নামে গুজব রটাবে। জনগন আমাকে ভূল বুঝতে পারে। তোমাকে এই সাতদিনে কতবার বলছি বিয়েটা করোনা। এখন শেষ পর্যায়ে এসে আমার ক্যারিয়ারের সঙ্গে মজা করছো?

ভাইয়া বিয়ে তো হবে। কিন্তু বিয়েটা আমি করবো না। বিয়েটা অন্য কারো সঙ্গে হবে।

ফিহা তোমার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কার সঙ্গে লিটনের বিয়ে হবে? আর লিটন বা অন্য কাউকে বিয়ে করবে কেনো?

ভাইয়া এতোকিছু বলতে পারবো না এখন আপনি আমাকে সেভ জায়গায় রেখে আসুন। আমাকে ভরসা করেন বরং আমি এইটা না করলে আমাদের পরিবারের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হতো। আর হ্যা আপনার ফোনটা আজকে আমাকে দিন।

শাফখাত ব্রু কুঁচকে ফিহার দিকে তাকায় এরপরে বলে ঠিক আছে।

(★)

দুই পরিবার তাদের নিজেদের মান সম্মান রাখার জন্য লিটনের সঙ্গে ডিলনাসিনের বিয়ে দেয়। কারণ এই বিয়ের কনে ফিহা পালিয়ে গেছে। প্রথম প্রথম লিটন কোনোমতে রাজি ছিলো না। কিন্তু পরে তার বাবার জোড়াজুড়িতে মানসম্মান রাখতে ১৮ বছরের অবুঝ বালিকাকে বিয়ে করতে রাজি হয় লিটন। কিন্তু মন থেকে এই বিয়ে মানতে পারছেনা লিটন। লিটন মনেমনে বলে ফিহা আমিতো তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি। তোমাকে তো জোড়াজুড়ি করিনাই কখনো। তাহলে এরকম করলা ক্যান? তোমার যদি বিয়ে করতে ইচ্ছে ছিলো না সম্বন্ধ ভেঙ্গে দিতা। এতো কষ্ট সম্ভবত পেতাম না।

ডিলনাসিন মুখো ঘোমটা দিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ফিহাআপু তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোরজন্য আমি লিটনের ওয়াইফ হতে পারলাম। লিটন তুমি আমাকে প্রত্যাখিত করছে বারংবার। এখন সেই মেয়ে তোমার বউ। ওই বাড়ি যেয়ে আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার সময়গুলো তোমাকেও ফিরিয়ে দিবো বলে দন্ত চেপে হাসে ডিলনাসিন।

শাফখাত পারিজাতের দিকে ইশারা করে উপরে আসতে বলার জন্য। পারিজাত এমপি সাহেবের ইশারায় এমপির পিছনে পিছনে এমপির রুমে আসে! এমপি সাহেব দরজার ছিটকানি লাগিয়ে বলে পারিজাত তুই এসব প্লানের অংশীদার আমি ভালোমতেই জানি। এখন বল ফিহা কি এই বিয়েতে হ্যা করেছিলো ডিলনাসিনকে লিটনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য।

পারিজাত চোখ নিচু করে ফেলে। কারণ সে শাফখাত আর ফিরোজকে খুব ভয় পায়। আবার শাফখাত এখন এমপি তাই ভয় দ্বিগুন চেপে বসলো। মিথ্যাও বলতে পারেনা এই দুটি মানুষকে। তবুও বুকে সাহস সঞ্চয় করে বলে ভাইয়া কি বলছো তোমার কথা বুঝতেছি না আমি।

শাফখাত চোখগুলো বড় বড় করে তাকায় পারিজাতের দিকে। এরপরে চোখগুলো লাল করে ধমকের স্বরে বলে থা’প্প’র খেলে সব মনে পড়বে তোর? আমিতো জানতাম ডিল লিটুর পিছনে ঘুড়ঘুড় করতো ক্লাস টেন থেকে। আর লিটু আমার বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমার সঙ্গে মজা করতো। ডিলের কারণে বন্ধুসমাজে হেয় প্রতিপণ্ণ মনে হতে নিজেকে। লিটু তোদের দুইজনকে বোন ভেবে বাড়িতে কিছু বলতো না। এই নিয়ে আমিতো একবার ডিলের গায়ে হাত তুলেছিলাম। এরপরে তো ডিল লিটুর জন্য এরকম পাগলামো বন্ধ করছে। লিটু এই ব্যাপারে তেমন কিছু বলতো না। আমিতো ভেবেছিলাম ডিলের কৈশোর বয়স ভূল করেছে। কিন্তু ডিল যে জিদ ধরে এরকম একটা কিছু ঘটাবে আকস্মিক ভাবি নাই। আর ফিহা তাদের এভাবে মিলিয়ে দিলো? একবারো ভাবলো না এই সম্পর্কের পরিণত কি হবে? লিটুকে যতদূর চিনি ও এই সম্পর্ক সহজে মানবে না। কারণ ডিলকে কখনো এ চোখে দেখে নাই। বল এখন ফিহা আসলে সম্পর্কের সমীকরণের সঙ্গে জড়িত কি?

পারিজাত আমতা আমতা করে বলে জ্বি ভাইয়া। এগুলা ফিহাআপুর প্লান। ফিহাআপু কিছুতেই লিটু ভাইয়াকে বিয়ে করতো না। ডিল যখন আপুকে এসে বলে তুমি যদি লিটুকে বিয়ে করো। তাহলে সেদিনেই ডিলের মরা লাশ বের হবে। লিটু ছাড়া আমার জীবন অন্ধকার। আমি তাকে খুঁব ভালোবাসি ফিহা আপু। পরে ফিহা আপু সবকিছু ডিলের কাছে শুনে। ডিল তখন সবকিছু বলে। ফিহা আপু রাগ করে বলে বেটা তোকে এতো অবহেলা করে। তোকে কথা দিলাম ওই ব্যাডা শুধুই তোর হবে। আর বিয়ের পর ব্যাডার থেকে এগুলার প্রতিশোধ নিবি। ফিহাআপু ডিলকে সাহায্য করেছে। তাই বিউটিপার্লারে ফিহা আপু নয় ডিলনাসিন বউ সেজেছিলো। আর তুমি একবার ডিলকে দেখে বলেছিলে কিরে বিয়েটা তোর নাকি এভাবে সেজেছিস যে।

শাফখাতের মনে পড়ে যায়। এরপরে ফিহার শেষ কথা মনে করে বিয়েটা হবে। আমাদের পরিবারের মান সম্মান রাখতে আমার সঙ্গে নয় অন্যকারো সঙ্গে। তাহলে এই সারপ্রাইজ ছিলো?

পারিজাতের নম্বরে শাফখাতের মেসেজ আসে। তা দেখে পারিজাত বলে ভাইয়া তুমি আমাকে মেসেজ করছো ক্যান?

পারিজাতের থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দেখে ফিহা মেসেজ করছে।

এমপি সাহেব আমাকে ভূল বুঝবেন না। আসলে ডিলনাসিন লিটুকে অনেক ভালোবাসে। সেদিন ওর কথায় আমি বুঝে গিয়েছি। ডিলনাসিন লিটুকে ছাড়া কাউকে নিয়ে এগোতে পারবেনা। আর এই প্রস্তাব যদি আমি রিজেক্ট করতাম, ওই বাড়ির লোক কখনো এই বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আনতো না লিটু ভাইয়ার জন্য। তাই আমি আমাদের বোন যাতে কোনোদিন সুসাইড এটেম না করে, এই বুদ্ধি খাটিয়ে ডিলের সঙ্গে আজ লিটুর বিয়ে দিলাম। কারণ আমি জানতাম আমি এই বিয়ে থেকে পালালে দুই পরিবার নিজেদের মান সম্মান রাখতে ডিলের সঙ্গে লিটুর বিয়ে দিবে। ঠিক তাই হলো। এরপরেও যদি কোনো ভূল করে থাকি এমপি সাহেব ক্ষমা করবেন। আর লিটু ভাইয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাবে ডিল আসলেই অনেক ভালো মেয়ে। ডিল ছাড়া আসলেই সে অচল।

শাফখাত পারিজাতকে ফোনটা দিয়ে দেয় মেসেজ ডিলিট করে। এরপরে নিচে আসে। নিচে এসে দেখতে পায় ডিলনাসিন কাঁদতেছে। লিটু বিয়ে করে বউ রেখে চলে গেছে। কিছুতেই বিয়ে মানতে পারছেনা। তাই সে নাকি পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে যাচ্ছে। বাড়ির সব লোক লিটুকে বুঝাতে অক্ষম হয়েছে। লিটুর বাবা মা ভরসা দেয় ডিলকে তিনমাস পর লিটু আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

শাফখাত মনে মনে বলে এটা হওয়ারই ছিলো। মাথামোটা মেয়েগুলো ক্যান বুঝেনা জোড় করে ভালোবাসা হয়না।

চলবে,,,,

®️ রিয়া জান্নাত

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_
পর্বঃ- ১৭ ও ১৮

ফিহার খুব খারাপ লাগছিলো।নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। চোখ গুলো নিভু নিভু হয়ে আসছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ফিহার এইভেবে কেনো ফিরোজকে বললাম না আমিয়ো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। হয়তো এই কথাটা বলতে পারলে ফিরোজ আজ যুক্তরাষ্ট্র যেতোনা। মাথায় চিন্তা এসে ভর করলো ফিরোজতো হসপিটালে ফোন দিলে ফোন ধরবে তো? তবুও কোনো কারণ না পেয়ে ভিডিও কল দেয় ফিরোজকে। বেশ কয়েকবার কল করার পরেও ফিরোজের কোনো রেসপন্স পাচ্ছেনা। ফিহা শাফখাতের গ্যালারি থেকে ফিরোজের পিক বের করলো। পিকগুলো দেখে অঝরে কান্না শুরু করলো। পিকগুলোকে বলে আমি মেয়েমানুষ আমি নাহয় আপনাকে বলতে পারিনাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আপনি কি চোখের ভালোবাসা বুঝেন না। আমি কি এতোটাই কঠোর ছিলাম আপনার প্রতি। আপনি ভার্সিটিতে যেয়ে কোনো ম্যাডাম বা ছাত্রীর সঙ্গে কথা বললে কিভাবে হজম করতাম। আপনি এসব বুঝেন না। এই লোকটা শুধুই আমার। মানুষের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বললে আমার হৃদয়ে এসে আঘাত লাগতো । ফিহা গভীর মনোযোগ দিয়ে ফিরোজকে দেখে আর কান্না করে।

এমন সময় ফিহার হাতে থাকা ফোনটি বেজে উঠে। ফিহা লক্ষ্য করে ফিরোজ কল করছে। ফিহা আনন্দে বিমোহিত। ফিহার দুই চক্ষুর পানি নিজের ওরনা দ্বারা মুছে। এরপরে অধর কামড়ে ধরে ফোনটা রিসিভ করে। ফিহা ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পায় ফিরোজ বেডে শুয়ে আছে। বুকের উপর অক্সিজেন মাক্স রাখছে নার্স। ফিরোজকে এভাবে দেখে বুক ফেটে কান্না আসে ফিহার। নিজের চোখকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারেনা। ফিহা অঝরে কাঁদতেছে। তা দেখে ফিরোজ বলে ___

কি ব্যাপার প্রেয়সীর চোখে পানি কার জন্য? আজকে না প্রেয়সীর বিয়ে। তাহলে প্রেয়সী এতো হালকা সাজে কেনো? প্রেয়সীর চোখে কারজন্য কালসিটে দাগ পড়েছে? কারজন্য ঘুম হয়না প্রেয়সীর।

ফিরোজের প্রশ্নগুলো ফিহার হৃদয়ে এসে আঘাত করছে। ফিহা চোখ বন্ধ করে ফিরোজকে অনুভব করে কেনো এরকম করছে। এরপরে ফিহা চোখ খুলে ফিরোজকে বলে ___

আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে সখা?

ফিরোজের বিশ্বাস হচ্ছে না ফিহা তাকে এই কথা বলছে? ফিরোজ নার্সকে বলে চিমটি কাটতে। নার্স ফিরোজের হাতে চিমটি কাটে। ফিরোজ ব্যাথা পায়। মনে মনে আশস্ত হয় সত্যি ফিহা এই কথা বলছে তো নাকি আমি ভূল শুনলাম। স্যার থেকে সখা হয়ে গেছি তার কাছে? দ্বিতীয়বার ফিহার মুখ থেকে এই কথা শোনার জন্য ফিরোজ আবার বলে কি বলছিলে একটুআগে আরেকবার বলবে?

ফিহা অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে ___

আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে সখা? আপনি শুধু প্রেয়সীর কাঠিন্যে দেখতে পেয়েছেন? প্রেয়সীর ভালোবাসা অনুভব করতে পারেন নাই। আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আপনাকে ভালোবাসি বলতে বারবার থেমে গেছি মায়া আম্মু ও ফাহিম আব্বুর কথা ভেবে। ওরা আপনার বিয়ে মায়া আম্মুর বোনের মেয়ের সাথে করাতে চায়। আমি ভেবেছিলাম আপনার সামনে লিটুকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করলে আপনি বাড়িতে সবাইকে বলবেন। ফিহা শুধু আমার, আমি তাকে ভালোবাসি। ফিহার বিয়ে হলে আমার সাথে হবে। কিন্তু তা আর হলো কই? আপনিতো আমাকে ফেলে রেখে চলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন নিজের এই অবস্থা করেছেন?

ফিরোজ খুশিতে বুকে রাখা অক্সিজেন মাক্সস ফেলে দিয়ে বেড থেকে লাফিয়ে উঠে। তা দেখে নার্স বলে ___

Sir you don’t do that. you are sick Keep quick oxygen maxes with you. Otherwise you will suffer from breathlessness.

ফিরোজ নার্সকে বলে ___

nothing happened to me Here comes my card to pay the hospital bill. I am completely healthy now.

নার্স আর কিছু না বলে কার্ড নিয়ে রিসিভশনে যায়। ফিরোজের সমস্ত বিল পেমেন্ট করতে।

ফিরোজ ফিহাকে বলে কাঁদবে না ফিহা। এক সপ্তাহেই নিজের এই অবস্থা করবে জানলে কখনো যুক্তরাষ্ট্র আসতাম না। প্রেয়সীকে আগের মতো প্রাণবন্ত চাই।

ফিহা কেঁদে কেঁদে বলে সে তো আপনিয়ো নিজের অবস্থা খারাপ বানিয়ে ফেলছেন। ধলাবিলাই থেকে কালোবিলাই হয়ে গেছেন। গালদুটিতে চার-পাঁচটা ব্রনের দাগ। চোখে এতো পরিমাণ কালি পড়ছে না জানি ০৪ মাস থেকে ঘুম নাই আপনার।

সব তো হয়েছে তোমার জন্য প্রেয়সী। যদি একবার বলো ভালোবাসি আমি আমারো হবো কালাবিলাই থেকে ধলাবিলাই।

ফিহা দন্ত দ্বারা নিজের অধর কামড়ে ধরে বলে ভালোবাসি আপনাকে প্রচুর ভালোবাসি।

ফিরোজ নিজের চোখ বন্ধ করে ফিহার ভালোবাসি কথাটা অনুভব করে এরপরে বলে তাহলে লিটুকে কে করবে বিয়ে?

এরপরে ফিহা ফিরোজকে ডিলনাসিনের সঙ্গে লিটুর বিয়ের সব কথা বলে। ফিরোজ রেগে যেয়ে বলে ডিলতো কিশোরি তিনমাস পর এইচএসসি। এখন বিয়ে দিলে পরীক্ষাতে ডাব্বা মারবে।

ফিহা সবকিছু বুঝিয়ে বলার ফিরোজ বুঝতে পারে ভালোবাসি শব্দটা আসলে কোনো বাধা মানেনা। মনে মনে কষ্ট পায় নিজের বোনের বিয়েতে থাকতে না পেরে। এরপরে ফিহাকে বলে তুমি এখন কোথায় আছো? বাড়ির লোককে যেয়ে কি বলবে?

আমি একটা হোস্টেলে আছি আপাতত। বাড়ির লোককে শাফখাত ভাইয়া ম্যানেজ দিবে। শাফখাত ভাইয়া আমাকে এই জায়গায় পাঠিয়েছে। আপনি এসব চিন্তা করবেন না শাফখাত ভাইয়া ঠিক কিছু বলে বাড়ির লোককে ম্যানেজ দিবে। এখন আপনি বলেন কবে আসছেন বাংলাদেশে?

ফিহার এমন প্রশ্নে চুপসে যায় ফিরোজ। চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে এরপরে বলে আমি ফিরবো না ফিহা। তুমি গ্রাজুয়েশন শেষ করে ভালো রেজাল্ট করলে তবেই ফিরবো আমি বাংলাদেশে। এর আগে নয়।

ফিহা অবাক হয়ে যায়। আরো একবছর আপনাকে না দেখে আমি থাকবো কি করে?

থাকতে পারবে প্রেয়সী। এইটাই তোমার শাস্তি। কাছে যখন ছিলাম নানান অযুহাতে আমাকে দূরে ঠেলে দিতে। ভালোবাসার দহনে একাই পুড়ছি। সেই দহনের আংশিক শাস্তি দূর থেকে সখার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করা। কথা হবে প্রতিদিন, কিন্তু আমাকে দেখার তৃষ্ণা তোমার মধ্যে দেখতে চাই।

আমি পারবোনা সখা। আমাকে এতোবড় শাস্তি দিয়েন না।

আমার যেমন তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হবে। তোমার ও হবে আমি জানি। কিন্তু আমাদের পারতে হবে ফিহা। ভালো থেকো হসপিটাল থেকে ফিরে তোমার সঙ্গে কথা হবে।

ধুম করে ফোন কেটে দেয় ফিরোজ। ফিহা ফিরোজের কাঠিন্যে সহ্য করতে পারলো না। তাই ফোন রেখে বাথরুমে টিউবের পানি ছেড়ে বুকফাটা কান্না করতে লাগলো ফিহা।

(★)

বাড়ির পরিস্থিতি কিরকম শাফখাত ভাইয়া? আমাকে খোঁজার চেষ্টা চলছে নাকি?

বাড়ির পরিস্থিতি আপাতত অস্থির ডিলনাসিনের জন্য। ডিলনাসিনের জামাই ডিলকে ফেলে আজকে চলে গেছে পাকিস্তানে। ডিলকে সবাই নানান কথার আলে রাখছে। এইরকম বাচ্চা মেয়েকে কেউ বউ মানতে রাজি হয়নাকি? বাড়িতে থাকলে ডিলের পাগলামি দেখতি। আমার মনে হয়না লিটু ডিলকে মানবে। কারণ ডিল লিটুর পিছনে অনেকদিন থেকে ঘুড়ে। শাসনে রেখে আমিই ওকে চাপে রেখেছিলাম। এমনকি ডিলের কারণে লিটু আমার বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও বাড়িতে আসা কমে দিয়িছিলো। এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাকে বলতি। তাহলে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতোনা ডিলকে৷

ভাইয়া মনে রাখবা ডিল যেভাবে পাগলামি করছে লিটু ও পাগলামি করবেন একদিন। লিটু শুধু ডিলের বাচ্চামো দেখছে ভালোবাসা নয়। এরকম ভালোবাসা সব পুরুষ পায়না। যেইটা ডিল লিটুর জন্য অনুভব করে। লিটু পাকিস্তান সফর শেষ করে আসলে ডিলে মুগ্ধ হবে দেখে নিয়ো। কারণ আমাদের ডিলের মধ্যে দ্রুত আপন করে নেওয়ার শক্তি আছে। আর ডিলকে সাহায্য করবে লিটুর বাবা মা।

এইজন্য মানুষ বলে মেয়েদের বুদ্ধি হাটুর নিচে। তোকে দেখে আজকে তা প্রমাণ হলো। তবে শুনে রাখ ডিলের যদি সংসার না টিকে ওখানে আমি তোকে ছাড়বো না। সবাইকে বলে দিবো এইটা আসলে তোর প্লান। এখন ভাব বাড়িতে যেয়ে কি বলবি? হোস্টেলে তো বেশিদিন এভাবে থাকতে পারবি না। বাড়ির লোক জানে আমার লোকজন লাগিয়েছি তোকে খুজার জন্য?

বাড়িতে ফিরে বলবো আমি একজনকে ভালোবাসি। এরপরে যা হয় হবে। এরজন্য আমি লিটুকে বিয়ে করতে পারিনাই। বিবেক এসে বাড়বাড় নাড়া দিছে।

কার কথা বলবি তুই?

ক্যান তোমার ভাইয়ের কথা?

সাহস আছে তোর?

কেনো থাকবেনা। আমি সখার প্রেমে মজেছি। বাড়িতে যদি ঝামেলা হয় এরজন্য হোক। সত্যি টা একদিন প্রকাশ হবেই তাই ফিরোজের আগে নাহয় আমিই বললাম। প্রত্যেক প্রেমে যে ছেলেদের আগে বলতে হবে বাড়িতে এমন নিয়ম আছে নাকি?

যাক অবশেষে বুঝলি। কয়েকদিন আগে এরকম চিন্তা করলে আজকে এই দিনটা আসতো না। বাদ দে সময় যেয়ে তোদের মাথায় বুদ্ধি এসেছে এইটায় অনেক।

শাওয়ার নিয়ে তিহা বের হয় বাথরুম থেকে। শাফখাতকে দেখে থমকে যায় তিহা। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে ফিহাকে বলে __

ফিহা আমার বাসায় একটু কাজ আছে। খুব জরুরি কাজ কেবল মনে পড়ছে। কাজটা শেষ করে তোর কাছে আসবো ঠিক আছে।

ফিহা আঁড়চোখে তিহার দিকে তাকায় এরপরে তিহার কাছে যেয়ে বলে দেখ তুই যদি এরকম করিস তাহলে এমপি সাহেবের বউ বানাবো না তোকে?

তোদের এমপি সাহেব যে আমাকে অবিশ্বাস করে। আমি নাকি তার অগোচরে রাহাতের সঙ্গে গোপন প্রেম করি।

শাফখাত অনেকদিন পর তিহাকে চোখের সামনে দেখে ঘামে। দমবন্ধ হয়ে আসে। তিহার কর্মকান্ড দেখে তিহাকে প্রচুর ঘৃণা করে শাফখাত। এরজন্য সেদিনের পর আর কোনোদিন মুখোমুখি হয়নাই দুজন। এমনকি ফোনেও কথাবার্তা হয়নাই। আজকে এখানে এভাবে তিহাকে দেখে ঘাবড়ে যায়। মাথার চুলগুলো হাতের তালু দিয়ে নেড়ে তিহাকে বলে ___

এখানে আসছো ক্যান?

অনেকদিন পর শাফখাত তিহাকে এভাবে প্রশ্ন করবে তা কখনো ভাবে নাই তিহা। তাই উত্তর টা সংযতভাবেই দিলো। ফিহার একা একা ভালো লাগছিলো না তাই ফোন করে আমাকে ডেকেছে এখানে। একটুআগেই আসছি।

শাফখাত আর কিছু বলেনা তিহাকে। একদৃষ্টিতে তিহাকে দেখছে। শাওয়ার নিয়ে আসা তিহাকে যেনো একটু বেশি সুন্দর লাগছে। ভিজা চুলে স্যাম্পুর গন্ধ শাফখাতকে কাছে ডাকছে। শাফখাত পুরাই বিমোহিত হয়ে বলে এমপি সাহেবকে পাগল করার প্লান করছো নাকি?

আচমকা এমন প্রশ্নে শক খায় তিহা। ফিহা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে বাহ! ভাইয়া তিহার প্রতি সব অভিযোগ শেষ হয়ে গেলো নাকি? তিহাকে বলবে না রাহাত সেদিন আসলে কি করছিলো তিহার সঙ্গে?

ফিহার প্রশ্নে শাফখাত সজ্ঞানে ফিরে। এরপরে তিহাকে বলে ___

এতো ভালোবাসার পরেও তুমি কিভাবে পারলে রাহাতের সঙ্গে মেলামেশা করতে।

শাফখাতের এমন প্রশ্নে তিহা কপাল কুচকিয়ে বলে ফিহা এমপি সাহেবকে বল। কথাবার্তা সাবধানে বলতে নাহলে সাধারণ পাবলিকের হাতে থা’প্প’র খাবে যেকোনো সময়ে?

ফিহা শাফখাতের ডানহাত ধরে বলে ভাইয়া তুমি যেমন আমার ভাই। ও আমার বন্ধু। আমি দুজনকে ভালোভাবে চিনি। তুমিইতো বলেছিলে অভিমানগুলো দ্রত মিটিয়ে নেওয়া ভালো হারিয়ে ফেলার আগে। তাহলে আজকে শুনতে হবে তোমাকে। শান্ত হয়ে বসো।

শাফখাত ফিহাকে কিছু বলেনা। তিহার পাশে বসে তিহার স্যাম্পুর গন্ধ নাক দিয়ে নিচ্ছিলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে। ফিহা রাহাতকে কল করে হোস্টেলে ডাকে। ততক্ষণে অনেক দেরি হবে বলে শাফখাতকে বলে ভাইয়া এসেছো যেহেতু খাবার নিয়ে আসো একসঙ্গে খাবো।

শাফখাত ফিহাকে বলে এমপি সাহেবের ওতো সময় নেই আমি উঠলাম। আর ফিহা শুন দ্বিতীয়বার আমি এখানে আসার আগে যেনো থার্ড পার্সনকে দেখতে না পাই।

শাফখাতের এমন কথায় বড্ড কষ্ট পায় তিহা। মনেমনে বলে এমপি সাহেবের মন এতো কঠোর কেনো? আমাকে এখনো অবিশ্বাস করে একটুআগে মনে হচ্ছিলো তিনি বোধহয় তার ভূল বুঝছে। কারণ তার দৃষ্টি আমাতে আসক্ত ছিলো? তাহলে এমপি সাহেব কি সব মেয়েদের দিকে এমন দৃষ্টি ফেলে মেয়েদের কাবু করে এভাবে । যেমন আমাকে করেছে।

ফিহা শাফখাতের হাত টেনে ধরে বলে আচ্ছা খাবার আনতে হবেনা। তুমিএখানে ১০ মিনিট বসে থাকবে এরমধ্যে যদি রাহাত না আসে তাহলে চলে যাইয়ো আপত্তি থাকবে না।

শাফখাত ফিহার হাত ফেলতে পারেনা। তাই বসে থাকে রাহাতের অপেক্ষায়। তিনজনের মধ্যে নীরবতা। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছেনা। ফিহা মনে মনে আল্লাহকে বলে আল্লাহ আজকে ওদের মধ্যে দুরত্ব ঘুচিয়ে দাও। শাফখাত শুধু টাইমের দিকে দেখছে। তিহা মাথা নিচু করে আছে। এমন সময় রাহাত নক করে। ফিহা দরজা খুলে রাহাতকে ভিতরে ঢুকতে বলে। এরপরে ফর্মালিটি ম্যান্টন করে সেদিন আসলে কি হয়েছে তা শেয়ার করতে বলে ফিহা।

ক্যান তিহা আপনাদের বলে নাই?

ফিহা বলে না?

তিহা চোখ রাঙিয়ে রাহাতকে বলে তুই এখানে আসছিস ক্যান? ফিহা ঢেকেছে বলে ওমনি চলে আসতে হবে? বাড়িতে যা যার আমার প্রতি বিশ্বাস নাই। সে যে তোর বলা কথা বিশ্বাস করবে তার কি গ্যারান্টি? এখানে সময় নষ্ট করতে হবেনা তোকে।

তিহার এমন কথায় রাগ উঠে শাফখাতের। জানার ইচ্ছে আরো দ্বিগুন হয়ে যায়। রাহাতকে বলে ঢং না করে সেদিন কি হয়েছিলো জানতে পারি?

তাহলে শুনুন ভাইয়া!

সেদিন আপনার জন্মদিন উপলক্ষে একটা আয়োজন করেছিলাম আমরা। আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিহার পক্ষে তো একাই সেগুলো করা সম্ভব নয়। তাই আমার সাহায্য নিতে হয়েছিলো তিহাকে। সেদিন শুক্রবার ছিলো তিহা আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ফোন দিতে মানা করেছিলো। আর তিহা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো ইমপোর্টেন্স ক্লাসের কথা বলে ফিহা ও মোহনার নাম বলে। কারণ এই নামদুটা বললে বাড়ির লোক মানা করবে না। কোনো প্রশ্ন করতো না বলে এই নাম দুটো সেদিন ইউজড করেছিলো।

যদি আপনার সঙ্গে সেদিন ফোনে কথা বলতো কোনো না কোনো ভাবে আপনাকে বলেই দিতো সারপ্রাইজ দেওয়ার কথাটা। এতে মজা নষ্ট হয়ে যেতো। এরজন্য আপনার সঙ্গে সেদিন কথা হয়নাই। আর আপনাকে ফোন দিতে মানা করছিলো এরজন্য। কিন্তু উল্টো আপনি তিহাকে সারপ্রাইজ দিলেন। এতো কষ্ট করে একটা আয়োজন করলাম আর আপনি তিহাকে সন্দেহ করলেন কিছু ছবির ভিত্তিতে। আপনাকেে যেই ছবি তুলে পাঠানো হয়েছিলো আমি সেই ছবিতে তিহার হাতে ফুলের পাপড়ি দিচ্ছিলাম উপরে সাজানোর জন্য। যাতে কেক কাটার সময় আপনাকে ফুল দিয়ে আলিঙ্গন করানো যায়। কিন্তু সেই ছবি দেখে ভেবেছেন আমি নাকি তিহাকে প্রপোজ করতেছি। এখন আপনি বলেনতো ফুলের পাপড়ি দিয়ে কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে প্রপোজ করে?

রাহাতের এসব কথায় শাফখাতের লোম দাড়িয়ে যায়। মনেমনে বলে যে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো, আমি তাকে সন্দেহ করলাম কিছু ভূল এভিডেন্সের কারণে। যাকে ভালোবাসলাম তাকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। এখন আমি তাকে কি বলবো?

রাহাত বললো শাফখাত ভাইয়া আশা করি আপনার ভূল ভেঙ্গেছে। আমি তিহার কাজিন আমরা একে অপরকে ভালোবাসবো কিভাবে? আমরা দুজনেই পিটাপিটি হলেও একজন ইট ছুড়লে আরেকজন পাটকেল প্লান বানাতে ব্যস্ত থাকি। আপনার বিষয়ে সেদিনেই আমাকে ফার্স্ট জানিয়েছিলো। আমিয়ো এক্সসাইডমেন্ট নিয়ে সব কিছু করেছিলাম। কিন্তু আপনার ব্যবহার আমাদের ক্রদিত করেছে। আসি ভাইয়া কখনো প্রয়োজন পড়লে আবার ডাক দিয়েন চলে আসবো।

রাহাত চলে যায় সেখান থেকে। কারণ রাহাতের খুব খারাপ লাগছিলো। যেই তিহা তার থেকে সাতদিনের বড় তাকে নিয়ে সন্দেহ কিভাবে করে?

তিহা ও শাফখাত মাথা নিচু করে আছে। ফিহা দুজনের মুখশ্রী দেখে শঙ্কায় পড়ে গেলো। মনে মনে বললো এখন কি শাফখাত ভাইয়াকে বলে দিতে হবে এমপি সাহেব ক্ষমা চাও? কি করছে সে এভাবে বসে থাকলে হবে। ভাইয়া উঠে তিহার হাত ধরে ক্ষমা চাও।

শাফখাতের শরীর দিয়ে ঘাম ছুটছে। নিজের উপর নিজেই রাগ করছে। সামনে তিহা ও ফিহা বসে না থাকলে নিজের দুই হাত দিয়ে দুই গালে দুইটা থা’প্প’র দিতো। কিন্তু ওরা সামনে বসে থাকাতেও তা পারছেনা। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেলো কপালে। গালের ঘামগুলো দাড়িতে চুয়ে পড়ছে। মাথাটা উচু করে ফিহার দিকে তাকালো।

ফিহা ইশারা করলো যাও ক্ষমা চাও?

শাফখাত ফিহার ইশার বুঝতে পেরে তিহার কাছে গেলো। কোনোকিছু না ভেবে তিহার সামনে হাটুগেড়ে বসে খাটে থাকা তিহার হাত দুটি ধরলো। এরপরে বললো আমাকে ক্ষমা করা যায়না তিহা। কথা দিচ্ছি তোমার কাছে না জেনে শুনে সন্দেহ কখনো করবোনা। এতো বড় অবিশ্বাস জীবনেও করবোনা। কথাগুলো বলতে শাফখাতের চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি বেরোলে।

পুরুষালীর হাতের স্পর্শে কাঁপতে থাকে তিহা। মাথা উঁচু করতেই শাফখাতের মুখ দেখে লজ্জা পায় তিহা। কারণ তার জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ তার হাত ধরেছে এভাবে। তবুও মনকে কঠোর করে বললো এমপি সাহেব হাতটা ছাড়ুন।

তিহার কাঠকাঠ গলা শুনে শাফখাতের চোখের টপাটপ গাল বেয়ে পড়ে।

তিহা আবার বলে কি হলো এমপি সাহেব কি কথা বললাম শুনতে পান নাই। নাকি রাজনীতিতে পড়ে কালা হয়ে গেছেন?

ফিহা এরকম দৃশ্য দেখে বাথরুমে চলে যায়। কারন আজকে তারও কষ্ট হচ্ছে সেওতো কাছের মানুষটিকে ভালোবাসি না বলে দূরে ঢেলে দিছে। শাওয়ার ছেড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে ফিহা।

তিহা খেয়াল করলো তার হাতগুলির উপড় শীতল কিছু পড়ছে। তা দেখে তিহা হাতের দিকে লক্ষ্য করে। দেখতে পায় হাতে পানি পড়ছে। তিহা চোখ তুলে ছাঁদে তাকায়। কিন্তু ছাঁদে তো পানি নাই তাহলে পানি উপচে পড়ছে কোথা থেকে। এরপরে সামনে থাকা মানুষটার মুখ দেখতেই বলে এমপি সাহেব আপনি কাঁদছেন?

শাফখাত হাতগুলি ছেড়ে দিয়ে তিহাকে অনুনয় করে আমাকে আরেকটাবার সুযোগ দেওয়া যায়না প্রিয়তমা।

পছন্দের মানুষের কাছে অনেকদিন পর প্রিয়তমা ডাক শুনে হৃদপিণ্ড কেপে উঠে তিহার। বেডে থাকা রুমাল দিয়ে শাফখাতের কপালের ঘামগুলো ও চোখের পানি মুছে দেয়। এরপরে দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলে আপনার প্রিয়তমা এতোটাও নিষ্ঠুর না। এভাবে বলে আমাকে পাপী করবেন না। আমিয়ো আপনাকে অনেক ভালোবাসি।

তিহার মুখে এমন কথা প্রশান্তি এনে দেয় শাফখাতের মনে। অনেকদিন পর শাফখাতের বুকের বা পাশের ব্যাথাটা মুহূর্তেই উবে গেলো। শাফখাত তিহাকে জড়িয়ে ধরার জন্য বাহু ঝাকিয়ে এগিয়ে আসলো।

তিহা সরে গিয়ে দাঁড়ালো। এমপি সাহেব আজকাল বড় নিলজ্জ হইছেন। ভূলে যাবেন না আমরা এখনো স্বামী স্ত্রী নই। বিয়ের আগে এসব অধিকার হারাম।

শাফখাত নিজের অধর কামড়ে ধরলেন। এরপরে তিহাকে বললো আমি বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারবোনা। নাহলে আমার ভালোবাসা অন্যকিছু চেয়ে বসবে? ফিহা বাথরুম থেকে বের হলে, বলে দিয়ো শাফখাত চলে গেছে।

চলবে,,,,,
®️রিয়া জান্নাত