মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
206

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১৩

ফিরোজ গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছে। গাড়ি ড্রাইভিং করছে আর ফিহার কথা ভাবছে। ফিহাকে আমি ভালোবাসি। অনেক লেট করে ফেলেছি আমি ফিহাকে এই কথা জানাতে। তাই আজকে এই সিচুয়েশনে পড়তে হচ্ছে। আজকে যেভাবেই হোক প্রেয়সীকে আমার মনের কথা জানাবো। একা একা এই যন্ত্রণা ভোগ করতে পারছিনা।

❝ ভালোবাসলে মানুষের হৃদয় এতোটা পোড়ায় তোমাকে না ভালোবাসলে আমি বুঝতাম না প্রেয়সী। ❞

ফিরোজ গাড়িটা পার্ক করে ভেতরে ঢুকে। ফিরোজকে দেখে মায়া খান দৌড়ে এসে বলে, তোকে এতো কল করছিলাম ধরছিলি না কেনো? আর তোকে এতো বিধস্ত লাগছে কেনো?

মায়া খানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে মা ওরা কারা এখানে বসে আছে কেনো? ফিরোজ তুই ভূলে গেলি। আজকে ফিহাকে দেখতে আসার কথা ছিলো। ওনারাই ফিহাকে দেখতে এসেছে। মা ওরা কারা। সামনে গেলেই বুঝতে পারবি।

ফিরোজের পায়ের শক্তি নুইয়ে পড়ে। সামনে পা ফেলতেও কষ্ট লাগছে। প্রেয়সীকে অন্য বাড়ি থেকে অন্য কেউ দেখতে আসছে এই কথা কিছুতেই মানতে পারছেনা ফিরোজ। নিশ্বাস ছোট হয়ে আসে ফিরোজের। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জ্বমছিলো।টিস্যু দিয়ে ঘামগুলো মুছে সামনের দিকে আস্তে আস্তে পা ফেলাতেই অবাক হয়ে যায় ফিরোজ। ফিরোজ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ফিহা অন্য কারো জন্য পার্পল কালারের শাড়ি পড়ছে। মাথায় একহাত ঘোমটা টেনে বামহাত দিয়ে পানের প্লেট ধরে নিচে আসছে ফিহা। ফিহার দুপাশের কাধ ধরে আসছে জেবা খান ও ফাতেমা খান। পিছনে পিছনে পারিজাত ও ডিলনাসিন আসছে? ফিরোজ একদৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলছে আমি কি খুব দেরি করে ফেললাম।

ফিরোজকে এইভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শাফখাত ডাকে। এই ফিরোজ ভাইয়া ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি সামনে আসবি না। সামনে এসে দেখবি না ফিহা কার অদৃষ্টে লেখা আছে। ফিরোজ শাফখাতের কথার কোনো রেসপন্স করছে না। একদৃষ্টিতে প্রশ্নবোধক চাহনি ফিহার উপর রেখে। নিজের মনকে তটস্থ করতেছে। মায়া খান ছেলের এই অবস্থা দেখে ডান হাত ধরে ফিরোজকে সামনে নিয়ে আসে।

ফিহা সোফায় বসে। এরপরে টি টেবিলে পানের প্লেটটি রেখে। মাথায় একহাত ঘোমটা টেনে বলে আসসালামু আলাইকুম।

ছেলের বাবা সালাম নেয়। ডিলনাসিন লিটনকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে জড়িয়ে ধরে পারিজাতকে। কানে কানে বলে ও কেনো এখানে আসছে পারি। তাহলে শুক্রবারের সকালের স্বপ্ন টা কি সত্যি হবে। পারি ডিলের মাথায় আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলে বুদ্ধ চুপ থাক। তোর স্বপ্নপূরণ নয় আমি স্বপ্ন ভঙ্গের আভাস পাচ্ছি।

লিটনের বাবা লিটনকে দেখে পারিজাত ও ফিরোজ অনেক শক্ড খায়। মনে মনে আন্দাজ করে তাহলে ফিহা কি লিটনের বউ হতে যাচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধ ডিলের মাথায় এসব চিন্তা আসে নাই। ক্রাসকে সামনে দেখে বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে।

লিটনের বাবা বলে সবই তো জানি আমি এমপি সাহেব। আমার একমাত্র ছেলে লিটনের বউ করে নিতে চাই আপনার ভাইজি ফিহাকে। এতে কি আপনাদের কোনো আপত্তি আছে। ফাহিম খান ফুয়াদ ও ফাতেমার মুখের দিকে চেয়ে রয়। এরপরে সম্মতি দেয় আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তি নাই। তবে আমার ভাইজি যদি এই বিয়ে করতে চায় তবেই হবে বিয়ে। কারণ ফিহার মতামত এখনো আমরা জানিনা।

এই কথা শুনে লিটনের বাবা ফিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ফিহা তোমার অভয় থাকলে মতামত টা কি জানতে পারি এক্ষুণি। ফিহা ঘোমটা সরিয়ে ছেলের দিকে এক নজর দেখে চোখ নিচু করে ফেলে।মনে মনে বলে এইটা সেই ছেলেটা না। যে পাড়ার বাচ্চা ছেলেদের সঙ্গে সেদিন বল খেলতেছিলো। হুট করে ছাঁদে বলটা চলে আসে। সেই বলের কারণে আজকে এই অঘটন। ডিলনাসিনের নাকি ক্রাস। এখন আমি কি করবো? বাড়ির সকলের মত রয়েছে এখানে কিভাবে না করি।

ফিহাকে চুপ থাকতে দেখে লিটন এবার মুখ খোলে। আপনার সময় লাগলে নিতে পারেন ফিহা। তবে আজকে অভয় দেন কিছু বলে। ছেলের আকস্মিক কথাটা ভালো লাগলো না লিটনের বাবার। এরপরে ফাহিম খানকে বলে দেখুন এমপি সাহেব বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধনে তাড়াহুড়ো করতে নেই আমরাও জানি। কিন্তু রাজি থাকার প্রশ্ন উঠছে এখানে। আর লিটন আমি এখানে এমনি আসি নাই তুমি চুপ থাকো। বড়দের মাঝে কথা বলতে নেই।

ফাহিম খান ফিহাকে প্রশ্ন করে, তোমাকে জোড় করবো না। তোমার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। এখন তুমি বলো লিটনকে তুমি জীবন সাথি বানাতে পারবে।

ফিরোজের ভেতর অস্থিরতা বেড়ে যায়।ফিহা কি বলবে এসব ভেবে। মনে মনে বলে প্রেয়সীকে লিটন দেখলো কিভাবে?? ক্যান যে ছোট থেকে এখানে থাকলো না প্রেয়সী। এতো লোকের নজরে পড়তো না।

ফিহা বাড়ির সবার কথা ভেবে বলে। আমাকে কিছুদিন সময় দিন ১৭ দিন পর আমার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষা টা আগে স্বাভাবিক ভাবে দিতে চাই। তারপরে এসব নিয়ে ভাববো কথা দিলাম ।

ফাহিম খান আর কিছু বলেনা ফিহাকে। জেবা আর ফাতেমাকে ইশারা করে ফিহাকে নিয়ে যেতে। ফিহাকে জেবা আর ফাতেমা নিয়ে যায় উপড়ে। মন খারাপ করে আগেই ওখান থেকে ডিলনাসিন চলে আসছিলো। পিছনে পিছনে পারিজাত আসে। মায়া খান লিটু ও লিটুর বাবাকে মিষ্টি এগিয়ে দেয়। ফাহিম খান মিষ্টি খেয়ে লিটু আর লিটুর বাবা মুখে তুলে দেয়। মায়া খান একে একে ফুয়াদ, সিয়াম,শাফখাতকে মিষ্টি দেয়। ফিরোজের দিকে মিষ্টি নিতেই ফিরোজ বলে মা আমি মিষ্টি খেতে পারবো না উপড়ে যাচ্ছি।

ফাহিম খান সরকার পরিবারকে বলে,আপনারা নিশ্চিতে থাকেন পরীক্ষা পর কাজ হয়ে যাবে আশা করা যায়। লিটু মনে মনে বলে আমি জানি ফিহা আপনি লজ্জা পেয়েছেন। এই কয়দিন সময়ের মধ্যে আমি আপনাকে নিজের করে ফেলবো ইনশাআল্লাহ। লিটুর বাবা উঠে বলে এই কথায় থাকলো এমপি সাহেব। আমরা তাহলে আসি। চল লিটু। লিটু যাওয়ার আগে শাফখাতকে জড়িয়ে ধরে বলে বেষ্ট ফ্রেন্ড আজ থেকে শ্লা! আসিরে পরে কথা হবে। শাফখাত লিটুকে কিছু বলেনা। কারণ শাফখাত ফিরোজকে এভাবে চুপচাপ থাকতে দেখে কিছুটা খটকা লাগছে।

(★)

সেই বিকালে ফিরোজ নিজের রুমে ঢুকেছিলো। এরপরে আর বের হয়নাই। মায়া খান কয়েকবার রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ফিরোজকে ডাকে। ফিরোজ শুধু বলে মা আজকে আমার ক্ষুধা নেই তোমরা খেয়ে নাও। মায়া খান ছেলের জন্য চিন্তিত। ছেলের ব্যবহার কেমন জানি লাগছিলো। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় ছেলের কাছে এসে বলতে পারেনাই। কেনো এরকম করছে সে।

রাত বারোটা। ফিরোজের ভালো লাগছে না রুমে। নিশ্বাস ছোট হয়ে আসছিলো ফিরোজের। ফিরোজ ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ছাঁদে আসে। কষ্টগুলো ধোয়া হিসাবে বের করে দিতে। ছাঁদে এসে ফিহাকে দেখতে পাবে কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নাই ফিরোজ। ফিহাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার এতো রাতে একা একা ছাঁদে বসে আছো? ভয় করছে না।

পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে পিছন ফিরে তাকায়। ফিরোজকে দেখে বলে স্যার পড়তে বসছিলাম। কিন্তু রুমে দম বন্ধ লাগছিলো। তাই ছাদে এসেছি। কিসের ভয় লাগবে। জীবনটাই তো এক প্রকার ভয়। তো স্যার আজকে খেতে আসলেন না যে। শরীর ঠিক আছে আপনার?

ফিহার এমন প্রশ্নে আৎকে উঠে ফিরোজ। হাতে থাকা সিগারেটের প্যাকেট টি পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকে রাখে। এরপরে ফিহাকে বলে ভালো লাগছিলো না তাই খাইনাই। তো ফিহা বিয়ে নিয়ে কি ভাবলে? লিটুকে কেমন লাগলো তোমার? অবশ্য লিটু তো অপছন্দ হওয়ার মতো ছেলে না।

ফিরোজের মুখে বিয়ে নিয়ে কথা বলতে দেখে ফিহা বলে স্যার আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাইনা। কিছুদিনের মধ্যে পরীক্ষা। এসব নিয়ে ভেবে নিজের পরীক্ষা খারাপ করতে পারিনা। কিন্তু স্যার আজকে আপনাকে আমি কিছু প্রশ্ন করবো উত্তর দেওয়ার মতো হলে দিবেন। কিন্তু বিরক্তি প্রকাশ করবেন না আমার উপর।

আচ্ছা বলো।

আচ্ছা স্যার আমার প্রথম প্রশ্ন শাফখাত ভাইয়া আপনার ভাইয়া হওয়া সত্বেও গোপন রেখেছিলেন কেনো? দ্বিতীয় প্রশ্ন আপনি কাব্যকে কিসের জন্য হুমকি দিতে চেয়েছিলেন?তৃতীয় প্রশ্ন আমাকে এতো শাসন করার পিছনে কোনো কারণ আছে কি? প্রশ্ন তিনটা করে চুপসে যায় ফিহা। সাহস করে আজকে প্রশ্নগুলো করছে ফিহা। কারণ এই প্রশ্নগুলো ফিহার মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। এই অস্থিরতার কারনগুলো জানতেই হবে ফিহাকে।

ফিরোজ দুই হাতের তালু মুষ্টিবদ্ধ করে। চোখমুখ বন্ধ করে ফেলে। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে অনেক দেরি হয়ে গেলো ফিহা। এখন এসবের পিছনের কারণ বললেও সমাধান আসবে না। এরপরেও তুমি যেহেতু প্রশ্ন করছো উত্তরগুলো তুমি পাবে। তারআগে তোমাকে কথা দিতে আজকে আমি তোমাকে যেই কথাগুলো বলবো। কথাগুলো দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

ফিরোজের কথা ফিহার কাছে কেমন জানি লাগা শুরু করলো। এরপরেও ফিহা বলে ঠিক আছে স্যার বলেন। কাউকে জানাবো না আমি।

ফিহা আমি চাইনাই আমার পরিচয় টা লীগ হোক। কারণ আমার পরিচয় লীগ হলে তিহা ও শাফখাতের মধ্যে সম্পর্ক টা স্বাভাবিক থাকতো না। তাছাড়াও তোমরা মজা নিতে আমাকে দেখে দেখে। আর এসব বিষয় আমার কাছে একদম ভালো লাগেনা। দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রশ্নের কারণটা অনেক বড় ফিহা।

কি কারণ আমিয়ো জানতে চাই?

আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে চিনি ফিহা। তোমার মনে আছে কিনা জানিনা। তবে মনে করার চেষ্টা করলে অবশ্যই মনে পড়বে। আমার সঙ্গে তোমার প্রথম দেখা হয়েছিলো তুমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলে। আমি বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার আগে তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। তুমি চা এনে দিয়েছিলে। সেই থেকে তোমাকে আমি চিনি।

ফিরোজের এরকম কথায় কিছু মনে করতে পারেনা ফিহা। কারণ তখন বয়স অনেক কম ছিলো। আর বাসায় অনেক লোক আসতো সেভাবে কাউকে মনে রাখার মতো না।

ফিরোজ নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। এরপরে চোখগুলো আবার খুলে। দেশ থেকে ফেরার পর তোমার খোঁজ নিই। তুমি যেই ভার্সিটিতে অধ্যয়নরত সেই ভার্সিটির লেকচারার হিসাবে জয়েন করি। তোমার উপর নজর রাখার জন্য।

ফিহা মনেমনে বলে কি বলছে ফিরোজ। আমার উপর নজর রাখবে কিসের জন্য?

ফিরোজ আবারো বলে কাব্য হুমকি দেওয়ার কারণ একটাই ও তোমাকে প্রপোজ করার সাহস পায় কি করে? তাও আবার আমার চোখের সামনে।

ফিরোজের এমন কথায় ঢোক গিলে ফিহা। এরপরে বলে আমাকে কেউ প্রপোজ করলে আপনার কি? কি হই আমি আপনার।

ফিরোজ আজকে আর চুপ থাকতে পারেনা। ফিহার দুইহাত ধরে হাটুগেড়ে ছাঁদে বসে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি ফিহা। এই কথাটা বলার জন্য অনেক সময় লেগে দিছি আমি। যার কারণে আজকে তোমাকে লিটু বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস পায়।

ফিহা ফিরোজের মুখ থেকে এরকম কথা শুনবে কস্মিনকালেও ভাবতে পারেনাই। ফিহা এবার মুখ খোলে বলে, এই কথাটা বলার জন্য এতো সময় লাগালেন কেনো?

অনেক কারণ আছে ফিহা। আমি যদি তোমাকে এই প্রস্তাবটা দিতাম পড়াশোনায় মন দিতে পারতেনা। তোমাকে ভালোবাসি আমি। তোমার পড়াশোনার ক্ষ’তি করতে পারিনা। এছাড়া আমি তোমার লেকচারার তোমাকে ভালোবাসি বললে এই কথাটা বাতাসের গতিতে ছড়ার ভয় ছিলো। এই একটা কারণ ছিলো।

এখন কিভাবে বললেন। আমার পড়াশোনার ক্ষ’তি আর সরার ভয় করছে না আপনার।

ভালোবাসি শব্দটা বলতে অপেক্ষা করতে হয়না ফিহা। এই কথাটা বলতে এতো সময় লাগালাম বলে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সুযোগ আসলো। ভালোবাসা হারানোর ভয় মানুষকে উন্মাদ বানায়। সেই উন্মাদনা থেকে আজকে সাহস করে বলা। তোমাকে ভালোবেসে একা সেই দহন ভোগ করতে পারছিনা। বলো ফিহা আমি কি তোমার হাত ধরার যোগ্য না। ভরসা বাড়িয়ে দেও তোমার দুটি হাত, সারাজীবন আগলে রাখবো তোমাকে আমার বাহু দ্বারা।

ফিহা কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা। হঠাৎ শরীর ঘামা শুরু করে। হৃদপিণ্ড খুবই কাপাকাপি শুরু করে। বুকের ধরফরানি বেড়েই যাচ্ছে।আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে হয়তো কাঁপা-কাঁপির শব্দ ফিরোজের কান অব্দি যাবে। ফিহা হাতদুটি মুষ্টিবদ্ধ করে বলে স্যার আমি আসি। আমাকে যেতে দেন।

ফিরোজ এবার বলে ফিহা একটি কথা শুনে যাও।

❝ ভালোবাসি বলতে শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে নেই। ভাদ্র মাসের পূর্নিমার জন্য অপেক্ষা করতে নেই।
ভালোবাসি বলতে ফাল্গুনের হাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে নেই। ভালোবাসলে অপেক্ষা করতে নেই। নাহলে প্রতিপক্ষ চলে।❞

যেমন আজকে লিটু এসেছে। কাল হয়তোবা আবার অন্য কেউ চলে আসতে পারে। ভালোবাসি বলতে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে নেই। আমার মতো করে তোমাকে কেউ ভালেবাসবে না। তোমার কৈশোরত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। অনেকদিনের ভালোবাসা তিল তিল করে এই মনে জমিয়েছিলাম। আজকে সব প্রকাশ করে দিলাম। তোমার উত্তর জানার অপেক্ষায় থাকবো।

চলবে,,,,
®️ রিয়া জান্নাত

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১৪

সকাল থেকে সূর্যের তেজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সূর্যের প্রখর তাপ। সেই তাপে ফিহা রিকশা করে ভার্সিটি আসছে। ফিহাকে এইভাবে দুই সপ্তাহ ধরে ভার্সিটি আসতে দেখতেছে তিহা ও মোহনা। মোহনার দিকে তিহা তাকায় কিছু বলতে চেয়েও বলেনা। এমন সময় তিহা মোহনাকে বলে তুই এখানে দ্বারা আমি আসতেছি।

ফিহা রিকশা থেকে নেমে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে মুছে। এরপরে রিকশাওয়ালা মামাকে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেয়। ফিরোজ সেইসময়ে কালো গাড়ি করে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ঢুকে। গাড়ির লুকিং গ্লাস নামিয়ে ফিহাকে দেখে মনে মনে বলে। প্রেয়সী তুমি আমাকে যতটা অবহেলা করছো। তা আজ অব্দি কোনো মেয়ে করেনাই। কি দোষ ছিলো আমার? তোমাকে প্রপোজ করে এমন কি ভূল করলাম যারজন্য রিকশাতে যাতাযাত করে ফর্সা গাল দুটো লাল করে ফেলছো।

ফিরোজ গাড়িটা পার্ক করে গাড়ি থেকে বের হয়। ফিরোজ আজকে সাদা শার্ট। সাদা প্যান্ট। সাদা চেইনের ঘড়ি। কালো সানগ্লাস পড়ে ভার্সিটিতে আসছে। ঠিক যেমন করে প্রথমদিন এই ভার্সিটিতে পা রেখেছিলো ঠিক সেইভাবে। ক্যাম্পাসের মেয়েগুলো ফিরোজকে হা করে দেখতো থাকে। ফিরোজ শার্টের উপরের বাটন টা লাগাই নাই। ক্যাম্পাসের মেয়েগুলো ফিরোজের লোমশবুক দেখার চেষ্টা করছে। একে অপরকে বলাবলি করছে, এই রোদের তাপে হার্টথ্রোব যদি এরকম করে আসে তাহলে আমাদের মতো সিঙ্গেল মেয়েদের কি হবে? আমরা তো এমনি পুড়ছি, ফিরোজ স্যার লোমশ বুক, গালভর্তি দাড়ি, গ্লামার কিং আমাদের পুড়িয়ে ছাই করার প্লান করছে।

ফিহার কানে এই কথাটি ভেসে আসে। দৌড়ে যেয়ে একটি মেয়েটিকে বলে, এই মেয়ে তুমি কি ভার্সিটিতে এসব করতে আসো। স্যারকে স্যারের নজরে দেখো। স্যার কি পড়ে আসলো এসবের দিকে কিসের নজর তোমার? মেয়েটি ফিহাকে বলে তোমার পুড়ছে কেনো? স্যার তোমাকে পাত্তা দেয়না বলে , দেখতেছি তো কয়েকদিন আগে স্যারের গাড়ি করে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আসলে। নিজেকে বিশেষ কিছু ভাবিয়ো না স্যার তোমার আসল স্থান দেখাই দিছে তো।

মেয়েটির এমন কথায় ফিহার মাথায় ৪৪০ ভোল্টেজ রাগ উঠে। কিন্তু ফিরোজকে দেখে চুপ করে থাকে। এখন বেফাঁস কিছু বলে ফেললে ফিরোজের কানে যাবে। যা ফিহার জন্য লজ্জাজনক। ফিরোজ দুই বাহু ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে ক্যাম্পাস থেকে অফিসে যায়।

এমন সময় মেয়েটি বলে দেখো ফিহা তোমার বান্ধবীকে প্রপোজ করছে একটি ছেলে। ফিহা মেয়েটির কথা শুনে সেদিক টায় তাকিয়ে দেখে মোহনাকে প্রপোজ করছে বাইরের বখাটে ছেলে।

আমি তোমাকে ভালোবাসি মোহনা। আমার হাতের এই লাল টুকটুকে গোলাপ শুধু তোমার জন্য। এই গোলাপগুলো নিয়ে আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো। মোহনা ছেলের হাতে থাকা গোলাপগুলি নিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে। এরপরে ডানপা দিয়ে গোলাপগুলোকে পিষে দেয়। এই দৃশ্য দেখে ছেলেটি রাগ হয়ে যায়। মোহনার ডানহাত টেনে ধরে বলে তোমার এতবড় সাহস। আমার ভালোবাসাকে অবমাননা আজকে তোমাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। মোহনাকে ছ্যাচড়ার মতো হাত টানতে থাকে বখাটে ছেলে। এই দৃশ্য সবাই দেখছে। তা দেখে ফিহা অবাক হয়ে যায়। এতগুলো ছেলে কেউ ছেলেটিকে বাধা দিচ্ছেনা কেনো? মোহনার যদি কিছু হয়ে যায়। ফিহা দৌড়ে দৌড়ে মোহনার কাছে আসতে থাকে। ছেলেটিকে বাধা দেওয়ার জন্য।

মেহেদী এসে বখাটে ছেলের হাতে ঘুসি দেয়, যেই হাত দিয়ে মোহনার হাত ধরেছিলো। মোহনা মেহেদীর পিছনে যেয়ে লুকায়।মেহেদী তার ঘামগুলো মুছে এরপরে ছেলের মুখোমুখি হয়। মেহেদী ছেলেটিকে নাক বরাবর একটা ঘুসি দেয়। ছেলেটির নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। মেহেদী মধ্যমা আঙুল দ্বারা কিছুটা রক্ত ছেলেটার সামনে আনে। এরপরে ছেলেটি মেহেদীকে বলে তোর এতো বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস। তোর গায়ে হাততোলা টা বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপার হচ্ছে তুই আমার লাভ অ্যান্ড ফার্স্ট সাইড গালের দিকে বাজে নজর দিছিস। তোর ক্ষমা নাই। এরপরে ছেলেটিকে কিল ঘুসি মারতে থাকে ছেলেটি লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তা দেখে মোহনা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মেহেদীকে। মেহেদীর কোমড় দুই বাহু দ্বারা মুষ্টিবদ্ধ করে বলে ওকে ছেড়ে দাও। আরও মারলে ও মারা যাবে। ওর শাস্তি হয়ে গেছে।

মোহনার এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে মুচকি হাসে মেহেদী এরপরে মোহনার হাত সরিয়ে মোহনাকে সাইটে এনে বলে বেচে গেলি তুই। লাভ অ্যান্ড ফার্স্ট সাইট মানা করলো বলে,, এরপরে ক্যাম্পাসে থাকা সবাইকে বলে আমি মোহনাকে ভালোবাসি। মোহনার দিকে যে এভাবে নজর তুলবে তার এই অবস্থা করবো। মোহনা শুধু আমার। মোহনার দিকে বাজে নজর দেওয়ার আগে মেহেদীর মুখোমুখি হতে হবে।

ফিহা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না। মোহনা মেহেদীকে সবার সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরলো। তাহলে কি মোহনা জুনিয়র মেহেদীকে ভালোবেসে ফেললো। তিহাও এসে এসব দেখে জিহ্বায় কামড় দেয় দন্ত দ্বারা। ক্যাম্পাসে থাকা প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে বলাবলি করলো জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে কিভাবে পটাতে হয় মেহেদীর থেকে সবার শিখা উচিত?

বখাটে ছেলে দৌড়ে পালায় সেখান থেকে। কারণ এইখানে থাকা তার জন্য রিস্ক। এইভয়ে দৌড়ে চলে যায়।

মোহনা অধর কামড়ে ধরে জিহ্বা দ্বারা। মনে মনে বলে এ আমি কি করলাম। আমিতো ছেলেটিকে ভালোবাসি না তাহলে এইরকম আহাম্মকি কাজ করলাম কেনো? এখন আমি আমার বন্ধুদের ও মেহেদীকে কি বলবো?

মেহেদী তার দুইহাত প্যান্টের পকেটে রেখে মোহনার মুখোমুখি হয়। এরপরে বলে,,

❝ একজন নারীই পারে পুরুষকে রাগাতে।
নারীই পারে পুরুষকে ভালোবাসা দিয়ে কাবু করতে।
আমার প্রেম মজিলো শুধুই তোমার জন্য। ❞

মেহেদীর এমন কথায় চুপসে যায় মোহনা কি বলবে মাথাতে কোনো বুদ্ধি আসছে না। নিজের বিবেক কে বলে মেহেদীকে তো অন্যভাবে শান্ত করা যেতো। এখন এই ছেলেকে আমি কি বলবো? এই ছেলে তো এখন সবার সামনে বলবে ভালিবাসি শুধুই মোহনাকে। এভাবে আমার তো মান সম্মান মাটিতে লুটোপুটি খাবে। সিনিয়রকে জুনিয়র এভাবে বলবে।

মোহনাকে চুপ থাকতে দেখে মেহেদী বলে সখী তুমি চুপ কেনো? তোমার মুখোমুখি অন্য কেউ হওয়ার আগে আমার মুখোমুখি হতে হবে। আজকে তা দেখিয়ে দিলাম। এরপরেও বলবে আমার এইটা পাগলামো বা লাভ অ্যান্ড ফার্স্ট সাইড। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি মোহনা। জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে ভালোবাসা যাবেনা এমন কোনো নিয়ম আছে কি? প্রেম সৃষ্টি মন থেকে। তোমার জন্য আমার প্রেম সৃষ্টি হয়েছে মন থেকেই। আমি তোমাতেই মজিছি।

দেখো মেহেদী তোমাকে শান্ত করার জন্য আমি এভাবে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। শুনেছিলাম প্রেমিক পুরুষের রাগ স্পর্শ করতে পারেনা প্রিয়র ছোয়ায়। আর তুমিতো সেই মূহুর্তে অনেক রেগেছিলে আমি চাইনাই আমার জন্য তুমি বিপদে পড়ো। যেভাবে ছেলেটিকে মারতেছিলে আর কিছুক্ষণ মারলে মারা যেতো। এরজন্য তোমাকে এইভাবে ধরা। এটাকে ভালোবাসা হিসাবে ধরিয়ো না এটা জাস্ট ফ্যাসিনেশন।

মেহেদী পকেট থেকে হাতগুলো বের করে ভাজ করে বুকে গুজে বলে, সব ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়না। কিছু কিছু ভালোবাসা প্রিয় মানুষের স্পর্শতে বোঝা যায়। আর শুনো ___

❝ ভালোবাসলে নিলর্জ্জ হতে হয়। তাহলে সম্পর্কটি অনেক মজবুত হয়। ❞

ফিহা ও তিহা এসে এই মূহুর্তে থেকে মোহনাকে বের করার জন্য বলে এই ছেলে এখান এভাবে দাড়িয়ে থাকোনা আমার বান্ধবী লজ্জা পাচ্ছে।

ফিহা তিহার কথায় ভাবলেশহীনভাবে মোহনাকে দেখে বলে আমি আসছি মোহনা। আর লজ্জা পেতে হবেনা আমি বুঝি গেছি সব। এরপরে মেহেদী সেখান থেকে চলে যায়।

ফিহা তিহা মোহনার মাথায় আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলে বুদ্ধ কোথাকার। সবার সামনে ছেলেটিকে এভাবে ধরতে হয়। সবাই কি ভাবলো তুই ছেলেটিকে ভালোবাসিস। এখন সবার মতো আমাদের ধারণা আসলে তুই ওর প্রেমে পড়েছিস। নাহলে আজকের পরিস্থিতি এইভাবে সামাল দিতিনা।

দেখ আমি ওকে হারে হারে চিনি। কারন পিছুটা ও আমার নেয়। তাই তার কোন রাগ কিভাবে পড়ছে, কিভাবে শান্ত করতে হবে সবই বুঝি আমি।

ফিহা ও তিহা দুজনেই একে অপরকে দেখে। এরপরে ফিহা তিহাকে বলে বান্ধবী তাহলে লিটল মেহেদী আমাদের চঞ্চল মেয়েকে আমাদের থেকে কেড়ে নিলো। তিহা বলে হুম তাইতো। নাহলে লিটল মেহেদীকে কিভাবে শান্ত করতে হয় তা জানার বাইরে থাকতো। ঠিক আমাদের মতো। যাইহোক ফিহা চল ওকে অভিনন্দন জানাই।

এই তোরা চুপ থাকবি। ছেলেটা কতদিন থেকে আমার পিছনে লেগে আছে তোরাতো জানিস। তাই এই ছোটছোট বিষয় গুলো জেনে গেছি জাষ্ট এতটুকু।

তিহা ফিহাকে বলে দেখ এইটা নাকি জাষ্ট এতটুকু। তাহলে কম্পাউন্ড বিষয় কোনগুলো মোহনা। এদিকে আমি একবছর ধরে শাফখাতকে ভালেবাসি তবুও কোনোদিন ওকে জড়িয়ে ধরলাম না। হাতটা অব্দি ধরলাম না। জাষ্ট করেকবার রিকশা করে ঘুড়ছি তাও দুরত্ব বজায় রেখে। তোর কাছে নাকি জড়িয়ে ধরাটা জাষ্ট এতটুকু। তাহলে আমি একবছর প্রেম করে করলাম কি জীবনে। আবারো জীবনযুদ্ধে একধাপ পিছিয়ে গেলাম আমি।

তোদের যা ভাবার ভেবে নে। কারণ আমি এখন অন্যকিছু বললে তোরা টেনে এই কথায় টানবি। তবে মেহেদী ছেলেটার ভালোবাসা মোহ নয়। ভার্সিটি যাওয়া আসার সময় আমার পিছনে পিছনে সাইকেল নিয়ে আমাকে প্রটেট করা। আমাকে স্পেশাল ফিল করানো। ভার্সিটিতে এতো বড় শাস্তি দিলাম এরপরেও আমার পিছনে লেগেই আছে। বন্ধের দিন আলুর চপস বিক্রেতা সেজে আমাদের বাড়ির সামনে সারাদিন থাকা। এগুলা মোহ নয়রে এগুলা আসলেই ভালোবাসা।

মোহনার এই কথাগুলো শুনে তিহা বলে ভালোবাসার সম্পর্কে বিশ্বাস জিনিসটাই আসল রে মোহনা। এগুলাতো শাফখাত আমার জন্যও করে আমাকে পটিয়েছে। কিন্তু এখন অবিশ্বাস করে আমার সঙ্গে কথা বলে বন্ধ করে কিভাবে কাটাচ্ছে সে। বাই দ্যা ওয়ে তুই আমার থেকে বেটার করে মেহেদীকে চিনিস। তোর মন যা চায় তাই করিস।

তিহার এই কথাগুলো শুনে ফিহা ও মোহনা অবাক হয়ে যায়। ফিহা তিহাকে বলে এরজন্য ভাইয়াকে এরকম বৃদ্ধস্ত লাগে, চেহেরার কোনো যত্ম নেয়না প্রায় তিন সপ্তাহ থেকে দেখছি। আমিতো মনে করেছিলাম রাজনীতির কাজের চাপে এরকম করছে। খাওয়া দাওয়ার ঠিক নাই সেই যে সকালে খাওয়ার টেবিলে ভাইয়াকে একটুখানি দেখি। এরপরে আর ভাইয়ার মুখ দেখিনা। আমরা সবাই মনে করেছিলাম ভাইয়া এবার বড়আব্বুর পরিবর্তে সংসদ নির্বাচন করবে বলে টেনশনে এই অবস্থা।নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে কি পারবে না এইভেবে। তাহলে আসলে কারণ এইটা। তুই কেনো ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস তিহা।

খুব খুশি লাগলো তোর কথা শুনে। অবশেষে তার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। আমি চাই সে এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়ন করুক। এখন বড়আব্বুর হয়ে যেভাবে করছে। কিন্তু তোর ভাইয়াকে আমি অবিশ্বাস করছি না। সে একটা ভূল নিয়ে এভাবে অভিমান করে বসে আছেরে তিহা। জানিস ফিহা ভালোবাসার মানুষের অভিমানগুলো ভূল ধারণা প্রমান না করলে সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়ে যায়।

ভাইয়া আজকে নমিনেশন আনতে গেছে। আমি থাকতে চিন্তা করিস না অভিমানগুলো মিটিয়ে দিবো। ভাইয়াকে এভাবে দেখতে বাড়ির কারো ভালো লাগেনা। আসলে আমরা যত বড় হচ্ছি তত নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। আর মানুষ এইগুলো অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সব কিছু শিখে।

মোহনা এবার বলে বাকি কথা পরে হবে বান্ধবী দুইদিন পর পরীক্ষা। অতিরিক্ত চিন্তা মাথায় না আনায় ভালো। পরীক্ষা হবে সাইত্রিশদিন ব্যাপী। এই একমাস আমরা ভালোভাবে পরীক্ষা গুলো দিই। পরে এসব নিয়ে ভাববো। আর দুইদিন তো ভার্সিটি আসা হবে না। চল আজকে যেয়ে এটমিড কার্ডটা তুলি।

চলবে,,,,
®️ রিয়া জান্নাত

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১৫

খান বাড়ির পরিবেশ আজকে খুবই উত্তেজিত। কারণ শাফখাত খান গতকাল এই এলাকার এমপি নির্বাচিত হয়েছে। ফাহিম খান এইটা নিয়ে গর্ব করে বলছে রাজনীতি আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে থাকুক। এতদিন আমি যেই ধারা অব্যাহেত রাখছি আজ আমার প্রজন্ম সেই ধারার অধিকারী। আমি জানতাম শাফখাত পারবে। দেখলি সিয়াম শাফখাতকে একদম মনের মতো করে তৈরি করেছি। শাফখাত ক্যান যে তোর ছেলে হলো।

সিয়াম খান ভারাক্রান্ত মনে বলে ভাইজান এইটার কি খুব দরকার ছিলো? তুমিতো জানো রাজনীতিতে কত বিপদ এরপরেও শাফখাতকে সেই পথেই নিয়ে গেলে। ছেলেটাকেও কত করে বলছি কারখানায় যাও। যেয়ে সব দেখাশোনার দায়িত্ব বুঝে নাও। কিন্তু ওতো তোমার ছেলে আমার কথা শুনে আর কবে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম রাজনীতির গন্ধ খান বাড়ি থেকে মুছে যাক। কিন্তু তোমার জন্য আর হলো কই।

ফাহিম খান রাগ করে বলে ভাই দ্বিতীয়বার মুখ দিয়ে এই কথা উচ্চারণ করবি না। আমাদের বাবা ছিলো এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে এমপি হয়েছি ধীরে ধীরে। আমাদের ছেলে এমপি থেকে মন্ত্রী হবে। কারণ রাজনীতি খান বংশের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। ফিরোজকে ছেলেবেলা থেকে দেখেছি রাজনীতিতে তোদের মতো অনীহা। তাই বৃথা চেষ্টা করিনি। শাফখাতকে নমিনেশন পাইয়ে দিয়েছি আমি। শাফখাতের পুরো ইচ্ছে ছিলো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার। এখন তুই রাস্তা দিয়ে হাটলে সবাই বলবে এমপি শাফখাত স্যারের বাবা যাচ্ছে। এটা গর্বের বিষয় না।

সেতো তুমি এমপি থাকাকালীন থেকেই শুনতেছি। আমার ভয়ের কারণ অন্য।

রাজনীতিতে বিপদ থাকবেই। শাফখাত সেই বিপদ নামক ভূত উপড়ে ফেলবে। আমার পুরো ভরসা আছে, জনগন শাফখাতকে ভোট দিয়েছে। শাফখাত সেই ভোটগুলোর মান রাখবে।

ভাইয়া লিটনের বাবা মি. সরকার ফিহাকে ছেলের বউ বানিয়ে নিতে চাইছে। গতকাল ভোটের সময় এই আলোচনা করেছে। মেয়েটার তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হলো এক সপ্তাহ হয়েছে। এখনতো বিয়েটা দেওয়া যায়। ফাতেমাকে দিয়ে মেয়ের কথা শুনছি মেয়েও রাজি আছে। তোমরা লিটনের বাবাকে ডেকে দিনক্ষণ ঠিক করো।

তাহলে তো বাড়িতে আনন্দ বিরাজ করবে ফুয়াদ। তিনমাস পর শাফখাত সংসদে শপথ গ্রহন করবে। এরআগেই শুভ কাজটা সেরে ফেলি। বাবা দিন দিন খুবই অসুস্থ হচ্ছে। তাকেও তো সুখবর দেওয়া তার শরীরের জন্য ভালো দিক।

ভাইয়া লিটন নাকি পাকিস্তানে যাবে ভিসা রেডি করছে। ফিহার তো ভিসা আছেই। তাই ওরা বিয়েটা এক সপ্তাহের মধ্যে করাইতে চাচ্ছে। লিটন পাকিস্তান যাবে তিনমাসের জন্য। এখন যদি বিয়েটা না করানো হয় আরো তিনমাস অপেক্ষা করতে হবে।

মেয়ে রাজিতো ডাকো কাজী। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বাড়ি সাজিয়ে ফেলবে শাফখাত আর ফিরোজ। ওদেরকে যেয়ে বলো সামনের শুক্রবারে চারহাত এক করে দেওয়া হবে।

আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে।

(★)

সবাই ডাইনিং বসে আছে সকালের খাবারের জন্য। ফিরোজ খেতে আসছে না দেখে মায়া খান ফিরোজকে ডাকার জন্য পারিজাতকে রুমে যেতে বলে। কিন্তু সেইসময়ে ফিরোজ ল্যাগেজ গুছিয়ে নিচে আসে। ল্যাগেজ দেখে মায়া খান বলে। কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমাকে তো কিছু বলো নাই।

ফিরোজ প্রেয়সীর দিকে আড়চোখে চায়। ফিহা কাটা চামচ দিয়ে সকালের নাস্তা করছে একমনে। সবাই যে ফিরোজের দিকে চেয়ে থাকলেও ফিহা সেদিকে চেয়ে নাই। হয়তো তার কান অব্দি কথাটা যায় নাই। আমি কোথাও যাচ্ছি। এরপরে ড্রয়িং এ থাকা সবাইকে বলে আমি যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছি। ভার্সিটি থেকে একটা কোর্সের উপর প্রশিক্ষণ নিতে। আপনাদের কাউকে জানাতে পারিনাই। কারণ খবরটা রাতেই এসেছে । আমি আবেদন করেছিলাম, আবেদন মঞ্জুর করেছে। কালকে রাত ১২.০০ টায় মেজেসে জানিয়েছে। আজকে আমার ফ্লাইট দুপুর বারোটায়। তাই এক্ষুনি আমাকে বেড়াতো হবে। ঢাকা শহরের রাস্তা অনেক যানজট। সো দ্রুত এয়ারপোর্টে আমাকে পৌঁছাতে হবে।

মায়া খান, ফাহিম খান ছেলের এই কথায় অবাক হয়ে চেয়ে রয়। মায়া খান বলে কালকে তুমি আমাকে রাতে জানালে হতো না বিষয়টা। জেবা, ছোট, খাবারের বাটিতে খাবার তুলো। এখনতো খাবার সময় নাই। এয়ারপোর্টে খেয়ে নিয়ো।

ঠিক আছে মা। নিজের খেয়াল রাখিয়ো। বাবা তুমি কিছু বলবে না। অবশ্য আমিতো তোমার কথা কোনোদিন শুনিনি। আমার প্রফেশন নিয়ে বরাবর তোমার চিন্তা কম।

ফাহিম খান ছেলের কথা শুনে বললো কতদিন থাকবে তুমি এবার।

এইতো বাবা একবছর।

আচ্ছা ওইখানে পৌঁছে ফোন করে জানাইয়ো।

ঠিক আছে।

ফাহিম খান আর লিভিং রুমে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। দ্রুত পায়ে উপরে চলে গেলো। সে একজন প্রাক্তন এমপি হলেও সন্তানের জন্য তার হৃদয় একদম ভঙ্গুর। সেই ১৮ বছর বয়স থেকে ছেলেটা বাড়িছাড়া হয়েছিলো। এইতো সেদিনেই ফিরলো ১.৫ বছর হতে না হতেই আবার বিদেশ। তাও আবার একবছরের জন্য। কিন্তু ছেলেকে তো দেখাতে পারবে না তার হৃদয় এতো ভঙ্গুর। তাই দুঃখগুলো আড়াল করার জন্য সেখান থেকে চলে যায়।

ফিরোজ বুঝতে পারলো কিছুটা। জেবা, ফাতেমা খাবারের বক্স সাজিয়ে মায়ার হাতে তুলে দিলো। ফিরোজ তার দুই চাচাকে বললো তোমরা ভালো থেকো আবার দেখা হবে। দাদা দাদির সঙ্গে দেখা করে আসছি।

ফুয়াদ খান ও সিয়াম খান বলে যাই করো এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলেই তোমাকে বিয়ে দিয়ে ঘরে রাখার পারমেন্ট ব্যবস্থা করবো আমরা। প্রস্তুতি নিয়ে এবার দেশে ফিরবা বাবা। ফিহার বিয়েতে তো তোমার থাকা হলোনা। ওর জন্য দোয়া করিয়ো

ফিরোজ মুচকি হাসি দিয়ে বলে কপালের লিখন খন্ডাতে পারেনা কেউ। প্রস্তুতি নিয়ে আসবো। তোমরা আমার ফিরা অব্দি তৈরি থাকিয়ো। ফিহার জন্য সবসময় ভালোবাসা থাকবে।

ফিরোজ আবার আড়চোখে প্রেয়সীর মুখপানে চায়। দেখতে পায় ফিহা খাবার খাওয়া বন্ধ করে মোবাইলের দিকে মুখ গুজে রয়েছে। বাচ্চাদের মতো টেম্পল রান খেলছে । ফিরোজ মনে মনে বলে তোমার অবহেলা, তিতিক্ষা সহ্য করার শক্তি আমার নেই। তাইতো আমি বিদেশ যাচ্ছি। এবার তোমার পালা ভালোবাসার দহন যন্ত্রণা ভোগ করার। কাছে ছিলাম বলে পাত্তা পাইনাই, দূরে গেলাম দেখি তুমি ছটফট করো না কিনা। অবশ্য এগুলো আমার ভূল ধারণা তুমিতো লিটনকে বিয়ে করতে রাজি হইছো। পারিজাত আর ডিলনাসিনকে ডাক দেয় ফিরোজ। দৌড়ে ভাইয়ের কাছে আসে। ফিরোজ বলে আমিতো থাকতে পারছিনা কয়েকমাস পরে তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা। ভালোভাবে পড়াশোনা করো। সুন্দর একটা রেজাল্ট করতে পারো যেনো। আর শুনো শাফখাতকে তোমরা অনেক জ্বালা দেও। এখন থেকে ভূলে যাইয়ো না ও এই এলাকার এমপি। তাই সাবধান। পারিজাতকে একটা চাবি দিয়ে বলে আমার লকার খুলে গিফট টা নিয়ো। পারিজাত দৌড়ে ফিরোজের ঘরে যায়। ডিলনাসিনের কানে এসে ফিরোজ বলে, তোমাকে যদি কখনো ফিহা আমার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করে তখন বলবে শূন্যতার পরে পূর্ণতা আসে। আর তোমার গিফ্ট পারিজাতের সঙ্গেই আছে ডিলনাসিন।

ফিহা এবার মোবাইল টিপা বন্ধ করে দিয়ে ফিরোজের দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে আপনি সত্যি ভার্সিটি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন? নাকি আপনি পালাতে চাইছেন আপনার সামনে লিটনকে বিয়ে করার মত দিয়েছিলাম বলে। ফিরোজ আবারো ফিহার দেখে তাকায়। তা দেখে ফিহা চোখ নিচু করে ফেলে। ফিরোজ শাফখাতকে ডাক দেয় এমপি সাহেব আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে পারবেন?

শাফখাত ফিরোজের কথা শুনে বলে ভাইয়া এসব তুই কি বলছিস? তুই না বললেও আমি তোকে নিয়ে যেতাম।

ফিরোজ শেষবারের মতো মায়া খানকে জড়িয়ে ধরে বলে। মা আমার জন্য টেনশন করবা না। ঠিকমতো খাবার খাবে। বাবার দিকে নজর রাখিয়ো। মানুষটার বয়স বেড়েছে বাচ্চাদের মতো স্বভাব হয়েছে। একটা বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে। ফিরোজ খাবারের বক্সটা হাতে নিয়ে পা ফেলে। শাফখাত ল্যাগেজ টেনে গাড়িতে আগেই উঠে।

মায়া খান ছেলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। এরপরে কান্না করে ফেলে। জেবা ও ফাতেমা এসে শান্তনা দেয় মায়াকে।

এমন সময় ফিহার ফোনে মেসেজে আসে ফিরোজের নম্বর থেকে। মেসেজে লেখা রয়েছে __

তোমার অবহেলা নিতে পারছিলাম না। দিনের পর দিন প্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা না বলতে পারার ব্যাপারটা অনেক পীড়া দেয় আমাকে। আমার কি দোষ ছিলো? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটি বলে অনেক পাপ করেছি আমি তাইনা? এরজন্য কথা বলোনা। আগে যদি জানতাম এই কথা বলার জন্য যোগাযোগ তৃষ্ণায় ভূগতে হবে কখনো বলতাম না তোমাকে ভালোবাসি। দিন দিন তোমার এই কঠোর রুপ দেখে আমি অগ্নিদহনে দগ্ধ। গতকাল শুনলাম তুমি লিটনকে বিয়ে করার জন্য মত দিছো। স্বচক্ষে এই দৃশ্য দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ভালো থাকো তাকে নিয়ে। আমি তোমাকে চিঠির সাদাপাতা ভেবে ভূলার চেষ্টায় চলে গেলাম দেশের বাইরে। তবে এখনো তোমাকে এই কথাটি বলতে আমার দ্বিধা থাকবে না!

❝ ভালোবাসি তোকে প্রেয়সী ❞

ফিহা মেসেজ টা পেয়ে লিভিং রুমে থাকা সোফায় বসে পড়ে। মেসেজ টা পড়তেই ফিহার বুক ফেটে যায়। চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পড়ে গালে।

(★)

ভাইয়া এভাবে বিদেশ যাওয়া যায়না। আমি ভালো করেই জানি ভার্সিটি থেকে তোকে পাঠালে এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দিতো। তুই কার থেকে পালাইতেছিস ভাইয়া।

পালিয়ে যদি থাকতে পারতাম তবুও হতো রে শাফখাত। আমি যে তাকে ভীষণ ভালোবাসি। সে যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করে নেয় তোর ভাই কখনো আর বাংলাদেশে আসবে না। যতই তার কাছে যাচ্ছি, সে যে আমাকে না বুঝেই দূরে ঢেলে দিচ্ছে। গতকাল শুনলাম সে বিয়েতে মত দিছে। এখন তুই বলতো তুই কি পারবি চোখের সামনে তিহা অন্য কারো হচ্ছে তুই তা দেখতে। আমি জানি কোনো পুরুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সে যদি এভাবেই সুখে থাকে। তাহলে আমি দূরে যেয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করি।

ফিরোজের কথা শুনে বুঝতে পারে শাফখাত কার কার কথা বলছে। এরপরে শাফখাত বলে ভাইয়া তুই ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। ও তোর ভালোবাসা বুঝতে পারবে না তুই এভাবে কাছে থাকলে। তোর অনুপস্থিতি ওকেও পোড়াবে আমি হানড্রেড পার্সেন্ট শিউর। তোকে এমপি সাহেব কথা দিলো আমি থাকতে তোর ভালোবাসা অন্য কারো হবেনা। তবে দূরে যতই যা যোগাযোগ রাখিস।

ফিরোজ পিটপিট করে শাফখাতকে দেখে বলে তুই আমাকে বুঝে গেলি। তবুও সে বুঝলো না তাকে আমি সত্যিই ভালোবাসি।

ভাইয়া ভালোবাসা গুলো এমনই যখন তুমি বুঝবে। তখন যাকে ভালোবাসো সে বুঝেনা। যখন সে ভালোবাসে তখন তুমি বুঝবে না। ভালোবাসা শব্দটা চার বর্ণের হলেও দহনে পোড়ায় অনেক। কিছুকিছু দুরত্ব হয় ভালোবাসার সৃষ্টির জন্য। কথা দিলাম ফিহা তোমারই থাকবে।

চলবে,,,,
®️ রিয়া জান্নাত