#মনাকাশে_ধ্রুবতারা_বেশে
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি
৭.
“চলো‚ তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে যাই।”
“মানে?” ভড়কে গিয়ে আফসোস-আক্ষেপ পালাল সানার।
হাসি আটকে মুখের অভিব্যক্তি দুর্বোধ্য করল শারফান‚ “আমার কাজিন আসছে দেশে বিয়ে করতে৷ তোমাকে দেখাই ওকে‚ চলো।”
“আরে কে আপনি!” বিস্মযোক্তি করে উঠল সানা‚ “পাগল না-কি মাথা খারাপ? রাস্তায় ছেড়ে রেখেছে কে আপনাকে?”
কথাটিতে কিন্তু মোটেও রাগল না শারফান। অধিকন্তু দুষ্টুমির ভূত শক্তভাবে চেপে বসল তার ঘাড়ে। “পাগল হই আর মাথা খারাপ”‚ গম্ভীর চেহারায় বলল‚ “তোমাকে তো বাড়ি নিয়েই যাব আর আজকেই কবুল পড়াব আমার ভাইয়ের সাথে। চলো…” বলেই হাতটা বাড়াল সানার দিকে।
গতকালের রাগই শেষ হয়নি সানার৷ তার মধ্যেই আবার ওকে বিরক্ত করছে শারফান। সে এবার ভয় তো পেলোই না বরঞ্চ শারফানকে উত্তম মধ্যম দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সহসা চিৎকার করে উঠল একটানা “আআআআ” শব্দে।
শীতের সকালে রাস্তা নিরিবিলি হলেও মেয়ে লোকের চিৎকারে কানে গেলে লোকজন তো বেরিয়ে আসবেই। এই ভরসা থেকেই সানা চিৎকার করছে তা বুঝতে পেরেও শারফান বিকারশূন্য৷ উপরন্তু ওর মাসুম কণ্ঠের সঙ্গে নিজের অত্যধিক ভারী কণ্ঠস্বর মিলিয়ে দিলো সে৷ ওর মতোই “আআআআ…” করে চিৎকার জুড়ল।
এ একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল সানার কাছে৷ বিস্মিত হয়ে আপনা আপনিই নিচে নেমে গেল ওর কণ্ঠ। সঙ্গে সঙ্গেই থামল শারফানও। কপট চিন্তিত মুখ করে বলল ওকে‚ “থামলে কেন? ভালো হয়নি আমারটা?”
“আরে কোন দেশের পাগল আপনি?” হতবুদ্ধি বনে গেছে সানা‚ “শুধু আমার সাথেই কেন ছিটিয়ালগিরি করছেন?”
“বিকজ আই লাইক ইউ‚ বেব”‚ সানার কথার ন্যানোসেকেন্ডের মধ্যেই জবাব দিলো শারফান। ঘাড়টা ওর দিকে এগিয়ে নিয়ে ফিসফিসাল সে‚ “অ্যান্ড আই ওয়ানা টু ম্যারি ইউ…” এক পলের জন্য তারপর থেমে গিয়ে বলল‚ “টু মাই ব্রাদার৷ ওন্ট ইউ অ্যাগ্রি?”
“আপনি না খুব বাড়াবাড়ি করছেন”‚ সানা কঠিন গলায় বলল‚ “বুঝেছি‚ ছেড়ে দিলে আপনি শুধু বাড়বেনই। আপনার নাম-ধাম বলুন তো।”
“ইউ ক্যান কল মি হান”‚ শারফান এক চোখ টিপে মুচকি হাসল‚ “লাইক আই কলড ইউ হানি।”
চোখ-মুখ শক্ত বানিয়ে সানা কেবল কয়েক পল তাকিয়ে দেখল শারফানের মিটিমিটি হাসি৷ আর কিছু বলল না৷ চুপচাপ নিজের গন্তব্যের পথে পা বাড়াল। মনে মনে ভেবে রাখল‚ আরেকবার এরকম বিরক্ত করলে নালিশ করবে বাবাকে৷ ফারনাজের বোন বলেই এসব করছে শারফান‚ সেটাও বলবে।
“এই এই এই… তোমার চাদরে কী ঝুলছে ওটা?” আচমকা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠল শারফান সানার পেছন থেকে‚ “ও মাই গড! কেউটে সাপের বাচ্চা ঝুলছে!”
শোনা মাত্রই সানা ভয়ে চিৎকার করতে করতে চাদর গা থেকে খুলে ছুঁড়ে মারল। সাপ‚ কেঁচো‚ জোঁক‚ বিছা‚ এসবে মারাত্মক ফোবিয়া ওর। অল্প কয়েক কদমই এগিয়েছিল সে৷ চাদরটা পড়ল তাই শারফানের পায়ের সামনেই৷ হাসতে হাসতে শারফান চারদটা তুলে নিয়ে বলল‚ “ইস্সিরে… এত সুন্দর চাদরটা রাস্তায় ফেলে দিলে? তার থেকে আমাকে দান করে যেতে।”
নিজের নির্বোধিতা আর শারফানের শয়তানি দেখে সানা হয়ে থাকল কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এমন শয়তান‚ বদমাশের পাল্লায় জীবনে কোনোদিন পড়েছে?
“নিয়ে নিলাম আমি৷ তোমার মতো তোমার চাদরটাও আমার ভাল্লেগেছে। কিন্তু তোমার কি ঠান্ডা লাগবে না?” আবারও চিন্তার ভান করল। তাকাল সানার স্তম্ভিত চেহারায়। রাগে না-কি শীতে কে জানে‚ মৃদু কাঁপছিল তখন সানা। তা দেখে নিজেই জবাব দিলো শারফান‚ “লাগছে নিশ্চয়ই? আহা! এখনই তো দেখি কাঁপাকাঁপি করছ। এক কাজ করো…” বলে গা থেকে চাদরটা খুলে সানার কাছে এগোলো‚ “তোমার চাদরটা যেহেতু ফেলে দিলে তাই তুমি আমারটা নাও।” সানা ধরল না দেখে সেই ওর কাঁধে ঝুলিয়ে দিলো আর বলল‚ “যদি কোনো সময় তোমার চাদরকে মিস করো তাহলে একটা মিসড কল দিয়ো আমাকে‚ কেমন? নাও‚ আমার নাম্বারটা বলে দিচ্ছি। ফোন আছে তো সাথে?”
“আমার চাদর আমাকে ফেরত দিন বলছি”‚ প্রচণ্ড রেগেই বলল সানা। কিন্তু বলতে গিয়ে গলাটা কাঁপল ওর৷ আর শারফান ভাবল‚ কান্না পেয়ে গেছে মেয়েটার৷ তাতে মায়া তো হলোই না। বরং আরও বেশি মজা পেয়ে জ্বালানোর ধান্দা করল সে৷ কোনো কথা না বলেই চাদরটা নিয়ে হাঁটা দিলো নিজের বাড়ির পথে। যেতে যেতে বলল‚ “চাদর চাইলে আমার বাড়ি আসো৷ না আসলে চাদর আজ থেকে আমার।”
“ভালো করছেন না আপনি”‚ পেছন থেকে চেঁচাল সানা‚ “ফিরিয়ে দিয়ে যান বলছি।”
কে শোনে কার কথা! শারফান দাঁড়ালও না‚ ফিরে চাইলোও না। নির্বিকারভাবে হেঁটে চলে গেল বাড়ির পথে। তা দেখে রাগের চোটে আশেপাশে পাটকেল খুঁজতে থাকল সানা। পেলোও পথের ধারে। তুলে নিয়েই শারফানকে চিৎকার করে ডেকে উঠল‚ “এই শালাআআ…!”
ডাকটা পৌঁছল স্পষ্টই শারফানের কানে। মুহূর্তেই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। মেয়ে লোকের মুখে গালাগাল শোনাটা অবাক করেনি তাকে৷ করেছে সানার বলার ধরনটা। কোমল‚ চিকন কণ্ঠে ‘শালা’ গালিটা শোনাল যেন স্রেফ নাম ধরেই ডাকছে সানা ওর কোনো পরিচিতকে। যেমনটা কোনো বন্ধু তার বন্ধুকে দূর থেকে ওঠে।
সেদিন নিছক মজার ছলেই বলছিল শারফান অনিকে‚ এমন কচি‚ মাসুম স্বরে তার সঙ্গে যদি ঝগড়াও করে মেয়েটা। তবুও মনেই হবে না আদৌ ঝগড়া করছে তার সঙ্গে। সেটা যে সত্যিই এমন‚ তা দেখেই বিস্মিত হয়েছে সে।
আর শারফানের এই বিস্ময়বোধের মাঝেই সানা দারুণ নিরিখে পাটকেলটা ছুঁড়ে মারল তার চোখ বরাবর। তবে অত্যন্ত দ্রুত শারফান ধরে ফেলল সেটা। হিসাব করল সে‚ মাত্র দু’আড়াই সেকেন্ড দেরি করলে ওই মাঝারি পাটকেলটা তার এক চোখ কানা করে ফেলতে পারত—যদি না দ্রুত রিফ্লেক্সে হাতটা তুলত সে মুখের ওপর। বিস্ময় বাড়ল তার। এই আলা-ভোলা সুন্দরী এত চমৎকার ঢিল ছোঁড়া শিখল কীভাবে? আর এত সাহসীই বা হলো কী করে? প্রথম সাক্ষাতে তো বোকাসোকা‚ সাদাসিধে ছাড়া কিছুই মনে হয়নি।
বিস্ময়টুকু হজম করে নিলো আপাতত। হাতের মুঠোয় ধরা পাটকেটলটা একবার দেখে তাকাল সানার দিকে। দৃষ্টি বড়োই তীক্ষ্ণ। “খুব ভালো টার্গেট জানো তো”‚ বলতে বলতে এগোলো আবার সানার দিকে। “কী বলে ডাকলে যেন? আবার ডাকো”‚ শেষ কথায় উৎসাহ দেওয়ার ভঙ্গিতে মাথাটা নাড়াল সে।
ভয় লাগতে শুরু করল সানার। খেয়াল করল‚ একটু আগের হাবভাবের সঙ্গে এখনের মুখভঙ্গির কোনো মিল নেই শারফানের৷ শালাটা নির্ঘাত খেপে গেছে! পরিস্থিতি তাহলে ভালোর দিকে যাবে না বুঝতে পেরেই রাগ‚ ক্ষোভ ভুলে গেল সে।
শারফান প্রায় কাছাকাছিই চলে এসেছে আর অমনি সানা বাড়ির পথে দৌড় লাগাল গতকালের মতোই। দৌড়তে দৌড়তে ভেবে ফেলল‚ বাবার কাছে নালিশ আজই করবে। তার মাঝেই পেছন থেকে শুনতে পেলো শারফানের কৌতুকপূর্ণ উচ্চস্বর‚ “হেই সানা পোনা‚ হোয়েন ইউ রান‚ ইউ লুক লাইক আ বেবি পেঙ্গুইন।”
শোনার পরও আর থামল না সানা। তবে দাঁড়ালে দেখতে পেত‚ গতকালের মতোই শারফান হাসতে হাসতে তার দৌড়নোর চিত্রটা ফোনের ক্যামেরাতে ধারণ করে নিচ্ছে।
ফোনের ক্যামেরা থেকে চোখ তুলে শারফান তাকাল সামনে। “কিউট পেঙ্গুইন”‚ বিড়বিড়াল সহাস্যে সানাকে দেখতে দেখতে।
কেজি স্কুলে যখন পড়ত সেবারই শেষ দৌড়েছিল সানা। দৌড়ে প্রথম স্থানও পেয়েছিল। তখন ছিল বছর পাঁচেকের আর এখন বিশের মাঝামাঝি। এই বিশ বছরে এসে কোনো প্রতিযোগী ছাড়াই দুবার দৌড়তে হলো আর দুবারই সে প্রথম। অথচ এই বিজয়ে সে একটুও খুশি না। ঘরে ঢুকেই শারফানের চাদরটা দিলো মেঝেতে ছুঁড়ে। চাদরটার ওপর জুতো পায়ে দাঁড়িয়েই আচ্ছামতো পায়ের নিচে চটকাল সেটাকে। এর মধ্যে লেপ গা থেকে নামিয়ে হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠে বসল দিনা। গতরাতেও সে থেকে গিয়েছিল এখানে। সানাকে লাফালাফি করতে দেখে চোখ কচলাল একবার। সানা নাকি মেহাকে দেখছে সেটাই নিশ্চিত হলো আরকি। “ও কী রে! অমন ফাল পাড়ছিস কেন? পড়তে যাস নাই?”
এক লাথি মেরে চাদরটাকে দূরে সরিয়ে বিছানায় এসে বসল সানা। ক্ষোভ গলায় জিজ্ঞেস করল‚ “আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের মালিকের ছেলের নাম জানিস তুই?”
“আমি কি তোদের এলাকায় থাকি? হয়েছে কী?”
“মেহা নিশ্চয় জানবে। ও কই?”
“ছোটো কাকির সাথে মনে হয় রান্নাঘরে।”
“রান্নাঘরে!”
“হুঁ‚ তুই ওঠার পর পরই ও-ও উঠে পড়ল জলদি। বলল‚ কাকি একা একা রান্নাবান্না করছে৷ হেল্প করা দরকার। আমি তো ঘুম চোখে বেশি অবাক হতে পারি নাই৷ তাই এখন তোর সাথে হচ্ছি। আইলসার গুরুঠাকুর হঠাৎ ভালো হলো ক্যামনে?”
“এই খাইশ্টা ছেমড়িকে এত বুঝলাম কাল”‚ বিড়বিড়িয়ে বকল সানা মেহাকে‚ “সেই ফারনাজ সোয়ামির আদর আপ্যায়নে লেগে পড়ছে।”
“কী কস? জোরে জোরে ক‚ শুনি। তুই না পড়তে গেলি একটু আগে?”
“গেছিলাম”‚ দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল‚ “ছাতাওয়ালা ব্যাটার ভাতিজা না ভাগনা ওই শালা? ও আমার পিছু লেগেছে। শালা কুত্তা আমার চাদর নিয়ে চলে গেছে আর ওর চাদর আমাকে গছিয়ে দিয়েছে।”
“কীহ্! খুলে বল। বুঝলাম না।”
তপ্ত মেজাজের দীর্ঘশ্বাস ফেলল সানা৷ গতকাল সন্ধ্যার ঘটনা দিনাকে জানানো হয়নি৷ সেই ঘটনাসহ আজকের ঘটনা বলতে শুরু করল তাকে। দিনা তাজ্জব বনে বলল‚ “গতকাল বাড়ি এসে যেভাবে ধমক লাগিয়েছে মেহাকে তখনই বোঝা উচিত ছিল রে‚ ওই শালা বিশাল একটা চিজ।”
পাশের ঘরটা দাদী জোহরা খাতুনের। সে ঘরেই ফারনাজ আর মোস্তফা সাহেব ঘুমিয়েছিলেন। মোস্তফা সাহেব সকাল সকাল উঠে পড়েন। তাই আপাতত ফারনাজই সেখানে ঘুমাচ্ছিল৷ হঠাৎ সানার উচ্চস্বর শুনতে পেয়ে ঘুমটা হালকা হয়ে এলো তার। আধো জাগরণের মাঝেই দু বোনের কথাবার্তা শুনতে থাকল৷ কিন্তু ‘ছাতাওয়ালা ব্যাটার ভাতিজা’ কথাগুলো শোনা মাত্রই কান খাঁড়া হয়ে গেল তার৷ সানার জোরে জোরে বলা সমস্ত কথা শুনতে পেলো অনায়াসেই। তড়াক করে উঠে বসল। রাগের সীমা অতিক্রম করতে চাইছে তার। পুরো একটা বছর হতে চলল সানার জন্য কোনো পাত্রপক্ষ এ বাড়ির প্রবেশদ্বার পেরোতে পারেনি। এমনকি বাইরে কোথাও কোনো ছেলের সাথে সানা খুব বেশি মিশছে কিনা সেদিকেও নজর রাখতে ভোলেনি একটা দিন৷ সেখানে শাকিবুল হকের ভাতিজা মাত্র একদিন এলাকাতে এসেই কিনা সানার গায়ের চাদর ছিনিয়ে নিয়ে গেল! তার বারণকে ইচ্ছাকৃত অমান্য করে দেখাল ছেলেটা। এত স্পর্ধা কেন দেখাল ওই ছেলে? নিশ্চয় ধরেই বসে আছে যে‚ ভোটে ওর চাচাই জিতে যাবে? এত আত্মবিশ্বাস আর এত স্পর্ধা তবে তো ভেঙে চুরমার করতে হয়!
বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়েই একটা নাম্বার ডালাল করে ফোনটা কানে ঠেকাল ফারনাজ।
***
বেলা ৩:২০ ।
অবশেষে রোদ কুমারী ছাড়া পেয়েছে মেঘ কুমারের কাল কুঠুরি থেকে৷ পেয়েই লাফিয়ে বেড়াচ্ছে শারফানের ঘরের আনাচে-কানাচে। জানালা আর ব্যালকনির থাই গ্লাস লাগিয়ে ঘুমাতে ভুলে গিয়েছিল শারফান৷ নরম রোদের ঝলক চোখে-মুখে পড়তেই কচ্ছপের মতো মাথাটা কমফোর্টারের নিচে ঢুকিয়ে ফেলল সে। কিন্তু আরাম বেশিক্ষণ কপালে জুটল না তার। “ওই শায়াফ‚ জলদি ওঠ ব্যাটা৷ সর্বনাশ…” দরজার ওপাশ থেকে বলা রিহানের কথাগুলো এই অবধিই কানে এলো। কিন্তু চোখ মেলার তাগিদ পেলো না৷ নড়চড়ে অন্য পাশ ফিরে শুলো৷
তারপরই শুরু হলো দরজায় গুঁতাগুঁতি। উবু হয়ে ঘুমাচ্ছিল শারফান। আচমকা দরজা ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ শুনে চমকাল। মাথাটা তুলে দরজার দিকে তাকানোর চেষ্টা করল ভ্রু‚ কপাল কুঁচকে। “ওই কী হয়েছে?” ধমকে উঠল রিহানকে।
“ওরে দরজাটা খোল তাড়াতাড়ি। তোর রেস্ট্রন্টে কারা যেন ঢুকে ভাংচুর করতে চাইছে৷ অলরেডি সামনের ডেকোরেশন লন্ডভন্ড…” এতটুকু বলা মাত্রই দরজাটা খুলে গেল।
ভাংচুরের কথা শুনেই শারফান লাফিয়ে উঠে এসেছে৷ রিহানের ফরসা মুখটাতে প্রচণ্ড চিন্তার আভাস বুঝল সে। “কী হয়েছে?” মাথার মধ্যে ঝড় শুরু হলেও খুব ঠান্ডা স্বর শোনাল শারফানের।
“জারা কলেজ শেষে ওর ফ্রেন্ডস নিয়ে তোর রেস্ট্রন্টে ঢুকেছে লাঞ্চ করতে৷ খাওয়া দাওয়া শেষে বের হওয়া মাত্রই কতগুলো ছেলেপুলে ছুটে আসে হাতে লাঠি লুঠা নিয়ে। এসেই আচমকা রেস্ট্রন্টের সামনে রাখা সমস্ত চেয়ার-টেবিল উলটে পালটে ভাঙতে শুরু করে৷ জারা চিৎকার‚ কান্নাকাটি করে সবাইকে ডাকাডাকি করলে ওর গায়ে নাকি কে হাত তুলেছে। ওকে ফেলে দিতেই তোর ম্যানেজারসহ স্টাফবয়গুলো বেরিয়ে এসে…”
কথা শেষ করতে দিলো না শারফান। অবিলম্বে জিজ্ঞেস করল‚ “জারা কোথায় এখন?”
“ওকেসহ ওর ফ্রেন্ডদের নিয়ে ভেতরে স্টোররুমে ঢুকিয়ে দিয়েছে এক স্টাফ৷ তারপরই তোকে কল করেছে৷ তুই তুলিসনি৷ তাই ছোটো মামাকে কল করে জানিয়েছে সে৷”
নিচে থেকে তখনই ভেসে এলো জেসমিন বেগমের কান্নাকাটি।
চলবে।