মনের কোণে পর্ব-৩২+৩৩

0
260

#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_৩২
.
‘এক বাবা পছন্দ করেন তো আরেক বাবা করেন অপছন্দ।একজনকে রাজি করানো গেলে আরেকজন হয়ে যান নারাজ।
কেন যে ঐ নকল রেজিস্ট্রির পাল্লায় পড়তে গেলাম আর কেনোই বা এত বড় ঘরের মেয়েকে বিয়ে করতে গেলাম।চোর পুলিশ খেলা ভালোই চলছিল।
সব দোষ লিখির,
না সে আমার জুতা চুরি করত আর না আমাদের দেখা হতো আর নাই বা ওকে ধরার উপায় খুঁজতে আমার জীবনের পথ আমি নিজে পাল্টাতাম।বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম কিসের উদ্দেশ্যে আর এখন কিসের উদ্দেশ্যে ঢাকা টু বরিশালের কাউনিয়াতে পৌঁছে গেলাম।হায়রে জীবনের মোড়!!!’

নাবিল গালে হাত রেখে আফসোস করছিল লিখির রুমের শেষ প্রান্তে বসে।ওখান থেকে নিচের বাগানটা গোটা দেখা যায়।গুটি কয়েক নাম না জানা ফুলের বাগানের মাঝে পায়ের উপর পা তুলে বসে পান খাচ্ছিলেন রুহুল আমিন।
হাতে পিতলের বাটি।যেখানে সেখানে পিক ফেলেননা তিনি।
নাবিল তার পান খাওয়া দেখে তার ও পান খাওয়ার স্বাদ জাগলো।রুহুল আমিন এত সুন্দর করে পান চিবোন যে তার পাশে বসে যে তার পান খাওয়া দেখবে,, সে পান খাইতে চাইবে।কোনে বাধা মানবেনা।নাবিলেরও হয়েছে তাই।চোখ বুজে আবার মেলতেই দেখলো চোখের সামনে বানানো পানের খিলি।
চোখ ডলে সে আবারও তাকালো।ওমা সত্যি পানের খিলি।যে ধরে রেখেছে সে হলো লিখি।মুখে হাসি ফুটিয়ে নাবিলের গালে পান ভরে বললো,’বাবার বাটুয়া থেকে নিয়ে এসেছি।আমাদের রেওয়াজ আছে,নতুন জামাই ঘরে ঢুকলে পান খাওয়াতে হয়।’

নাবিল পান চিবোতে গিয়ে স্বাদ পেয়ে চোখ বুজে ফেললো।তারপর বললো,’আহা এত স্বাদ!বাবাকে সবার আগে পান খাইয়ে নেওয়াতে হবে তাহলে আর ধরে কিছু বোঝাতে হবেনা’

‘যখন শুনবেন পানে জর্দা দেওয়া খুব বকবে কিন্তু’

‘কে শোনাবে?শোনাতে হবেনা।স্বাদ পেলে উপকরণ জিজ্ঞেস করবেনা।তুমি বাটুয়া সাজিয়ে রাখো।বাবা এলে জোর করে পান খাইয়ে দিবে’

লিখি হঠাৎ নাবিলের পাশে বসে হা করে বললো,’দিন পান’

‘পাগল নাকি!!মুখের পান খাবে?’

‘মায়ের থেকে অনেক খেয়েছি,মা বলেছে বিয়ের ওর বরের থেকে নিয়ে খেতে,আমার মাও খায়।এতে নাকি প্রেম বাড়ে’

নাবিল ঠোঁট খিঁচিয়ে বললো,’আরেহনা,এটা হয়না।তুমি ক্যান আমার মুখের পান খাবে?
ধরো নতুন খিলি খাও’

‘না,না,আমার আপনার মুখেরটাই চাই।প্রেম বাড়াতে চাই’

নাবিল তাও দিলোনা।লিখির বাচ্চামোতে সাঁই দেয়নি বলে লিখি গেলো চটে।রাগ করে চলেই গেছে।নাবিল বিছানায় হেলান দিয়ে ওর রুমের দিকে ভাল মতন তাকালো এবার।এতক্ষণ দেখা হয়নি।
একটা দেয়াল জুড়ে লিখির অনেক পুরোনো একটা বিশাল বড় ছবি ঝোলানো।তারপর এপাশের দেয়ালে ওর স্কুলের /কলেজের সার্টিফিকেট ফ্রেম আকারে বাঁধাই করে ঝোলানো।এর বেশি দেয়ালে আর তেমন কিছু নেই।নাবিলের ফোন বাজছে,বাবার কল।সে রাগ করে রিসিভ করলোনা।বাবা আবারও কল দিলো, এবার তো ধরতেই হবে।

(দুজনেই চুপ।)

‘কি হলো কথা বলছোনা কেন?’

‘কি বলবো?’

‘তুমি চাও আমি বরিশাল আসবো?আমি অনাবিল কিনা মেয়ের বাবার সাথে দেখা করতে বরিশাল যাবো?’

‘বড়লোক মেয়ে খুঁজছো,এখন পেয়ে সামাল দিতে পারতেছোনা?’

জনাব অনাবিল এবার থতমত খেয়ে বললেন,’আচ্ছা আমি জানাচ্ছি’

নিজেই কল কেটে দিলেন।নাবিলের কথা তার মনে ধরেছে এবং লজ্জাও পেয়েছেন।
ওদিকে লিখি যে রাগ করে কই চলে গেছে সেদিকে নাবিল খবরই রাখলোনা।লিখির আবার রাগ হলে ঘর ছাড়ার অভ্যাস আছে।নাবিল সেটা ভুলেই গেছিলো।
রুহুল আমিনের কানে এ কথা গেছে যে লিখি বাসা থেকে চলে গেছে।তিনি ভাবলেন নাবিলকে নিয়ে পালিয়েছে।তিনি তো দলবল তৈরি করা ধরছিলেন ঠিক সেসময়ে নাবিলকে দোতলা থেকে নেমে আসতে দেখে বুঝলেন লিখি তাহলে পালায়নি, তবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় বা যাচ্ছিলো।
নাবিল ওনার সাথে কথা বলে ফ্রি হবার জন্য চেয়ার টেনে বসে গেছে, উনি ও বসলেন।দুজনেই চুপ হয়ে ছিল প্রথমে।এরপর তিনি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন,’তোমার বাবাকে কি ফোন করেছিলে?’

‘না,, তবে করবো ‘

‘সমস্যা নেই,সময় করে কল দিবা। তা আমাদের এখানে কেমন লাগছে তোমার? ‘

‘ভালই,তবে কিছু ভাষা বুঝতে কষ্ট হয় এই আর কি।’

‘লিখি বুঝি তোমার ওপর রাগ করে আছে?আসলে ও ছোট বেলা থেকেই এমন।রাগী অনেক।রাগ হলেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে।বেশি দূর যেতোনা বলে আমরা ওর এই স্বভাবটাকে বদলানোর চেষ্টা করিনি।কিন্তু দেখলে তো!!ওর এই স্বভাব কিসের রুপ নিলো!! আর সে এতগুলো দিন আমাদের থেকে পালিয়ে ছিল।’

নাবিলের ভয় হলো।লিখি আবার কোনদিকে গেছে কে জানে।ছুটে এক দৌড় দিয়েছে সে বাসা থেকে।বেরিয়ে প্রথমে ডান দিকে গেলো।সেখানে পথ শেষ হওয়া অবধি দৌড়েছে তাও পায়নি, শেষে বাম দিকের রোডটাতে গিয়ে দেখা পেলো লিখির।এক বাাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আরামসে।নাবিল ওর পাশে এসে দাঁড়াতেই সে মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে চললো।

‘আরে হয়েছে টা কি? ‘

‘পান দেননি, রাগ করেছি’

‘আচ্ছা দিব আসো ‘

‘এবার দিলে খাবোনা।লিখি একটা জিনিস একবারই চায় এরপর আর পেলেও গ্রহণ করেনা’

‘আরে তোমার বাবা আর আমার বাবার অভিমান ভাঙতে আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে আর তুমি কিনা এর মাঝে রাগ দেখাচ্ছো?’

‘সবার জায়গা আলাদা,আর আমার জায়গা আলাদা’

নাবিল লিখির হাতটা ধরে বললো,’চলো যাই, বাবাকে কল করে মানিয়ে এখানে আনতে হবে’

লিখি মুখে হাসি ফুটিয়ে চললো ওর সাথে সাথে।খুুব অভিমান ছিল কিন্তু যখনই নাবিল তার হাত ধরেছে সে গলে পানি হয়ে গেছে।

পথ চলতে চলতে নাবিল ফোন দেখছিল,লিখি সেই সুযোগে ওকে শক্ত করে ধরে ফেলেছে।প্রথমে সে টের পায়নি যখন ফোন থেকে মনযোগ হটালো ওমনি দেখলো লিখি তার ডানহাতটা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে চোখ বুজে হাঁটছে তার সাথে সাথে।

‘এরকম দূর্বল হইওনা,তোমার বাবা কিংবা আমার বাবা না মানলে আমাদের আবার আলাদা হয়ে যেতে হবে,তখন নিজেকে সামলাবে কি করে?’

‘কালকের এত বড় ঘটনার পরেও যখন আলাদা হইনি তখন আর আমার কিছুর ভয় নেই’

নাবিল থেমে গিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললো,’একটা কথা বলোতো!!আমার প্রেমে পড়েছো?’

লিখি হাত ছেড়ে বললো,’মোটেও না’

নাবিল ব্রু কুঁচকে বললো,’আর একবার হাত ধরলে ধরে নেবো প্রেমে পড়েছো’

কথাটা বলে নাবিল গেট দিয়ে বাসায় চলে গেলো।লিখি চেঁচিয়ে বললো,’এটা আবার কেমন নিয়ম!আপনি কি পড়েননি?নিজে তো স্বীকার করবেই না উল্টে আমাকে বিপদে ফেলে দিলো’
—–
দুপুরের দিকে অনাবিল আবারও নাবিলকে ফোন করলেন।এতসময় ধরে ঘেঁটে দেখেছেন কোন বিখ্যাত তেলের ব্যবসায়ী লিখির বাবা।
পরে দেখলেন সত্যি তাই।ইনফরমেশন সত্য।এবার আর তাকে ধরে রাখে কে।কিন্তু সবার আগে বেয়াই বেয়াইনের সাথে আলাপ জরুরি মনে করে তিনি নাবিলকে জানাতে ফোন করেছেন যে তিনি আসতেছেন।
——
‘বলেন’

‘রেগে আছিস?’

‘হুম প্রচুর’

‘আমি যদি তোর মন ভাল হবার খবর দেই?’

‘কি খবর?’

‘আমি আসতেছি😎’

‘সিওর?’

‘ড্রাইভারকে তেল ভরতে বলেছি।ট্যুর দিব বরিশালে।নাহিদ আর তোর আম্মু ও আসবে।বেয়াইকে বল তৈরি হতে’

‘হঠাৎ মত পাল্টে নিলে?কি এমন ঘটলো?’

‘কি ঘটবে?আমার মনে হলো ছেলের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

নাবিল তাচ্ছিল্য করে কলটা কাটলো।বাবাকে তার চেনা আছে।
—–
লিখি মায়ের একটা শাড়ী নিয়ে পরবে বলে পা ধরে বসে আছে তখন থেকে।মা দিতে চাইছেননা কারণ লিখি শাড়ী পরতে জানেনা,পরতে গিয়ে শাড়ীটাই নষ্ট করে দিবে।এমন করে অনেক শাড়ী নষ্ট করেছে।
লিখি চায় ওর শ্বশুর আসবে যখন সে একটু বউয়ের মতন সেজে থাকবে যাতে আজই সবাই সব মেনে নেয়।
মা বললো পরে দিবে যখন জনাব অনাবিল আসবেন তার কিছুক্ষণ আগে শাড়ী পরিয়ে দেবেন নিজের হাতে।
লিখি সেটার জন্য চাইছিলনা।সে চাইছিল শাড়ী পরে নাবিলের সামনে ঘুরাঘুরি করবে।কিন্তু মা তো শাড়ী নষ্ট হবার ভয়ে এত জলদি ওকে দিতেই চাইলেননা।
চুরি করতে লিখি শীর্ষে, মা তো এটা জানেননা।সে সোজা মায়ের রুমে গিয়ে আলমারি খুলে পছন্দ মতন শাড়ী নিয়ে পা টিপে টিপে রুমে ফেরত চলে আসলো।এসে দেখলো নাবিল ফোন টিপছে ওখানে।ওকে দেখেই শাড়ীটা সে পেছনে লুকিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে পড়েছে।

নাবিল খেয়াল করেনি,সে গেমস খেলতে ব্যস্ত। লিখি লুকিয়ে ওয়াশরুমে থেকে শাড়ীটা পরা শুরু করলো।যে লাউ সেই কদু।
সে পরতে তো পারলোই না উল্টে শাড়ী পরার পর যে সৌন্দর্য্য বিরাজমান থাকে সেটাই বিনষ্ট।
গেমস খেলা শেষ বলে নাবিল ফোন রেখে বসে বসে আড়মোড়া ভাঙছিল,তখন পাশে এলোমেলো শাড়ীতে লিখিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দম ছেড়ে দিলো সে।হাসি আর বাঁধ মানলোনা।হাসতে হাসতে সে বিছানা থেকে নেমে ভাল করে দেখে বললো,’এ কি অবস্থা!এখনও শাড়ী পরা শিখলেনা?এই শাড়ী পরে বউ সেজে বাবাকে ইমপ্রেস করতে বুঝি এত আয়োজন?’

‘চোপপপ!আমি কেন শ্বশুরকে ইমপ্রেস করতে যাব?আমি তো !!!’

‘আমাকে?আমাকে শাড়ী পরে ইম্প্রেস করতে চাও?’

‘না!তা কখন বললাম?আমি তো ঐ আমার খালাতো ভাই আসিফ আসবে,ওর জন্য শাড়ী পরেছি।ও শাড়ী অনেক পছন্দ করে’

‘তুমি যেভাবে পরেছো, এই অবস্থা দেখলে ওর আজীবনের জন্য পছন্দ উঠে বাপ বাপ বলে পালাবে’

চলবে♥

#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_৩৩
.
‘আমায় কি এতটাই খারাপ লাগছে দেখতে?’

লিখির অভিমানের সুরে বলা কথাটা নাবিল বুঝতে পারলো।সে হাসি তামাশা বন্ধ করে বললো,’আচ্ছা আমি পরিয়ে দেই??’

লিখি তখন পিছিয়ে চলে গেছিলো।

‘এই মেয়ের রাগ সারাদিন নাকের ডগায় থাকে।কিছু হলেই রাগ করে চলে যাবে।সামান্য মজাও কি করা যাবেনা?’
———-
লিখি বের হতেই মায়ের সামনে গিয়ে পড়েছিল।মা তো নিজের শাড়ীর এমন বেহাল অবস্থা দেখে প্রথমে রাগ দেখালেন তারপর রুমে যেতে বলেছেন ঠিক ভাবে শাড়ী পরিয়ে দেবেন বলে। লিখি ভয়ে ছিল।বাবার কানে গেলে আরও বকা খেতো।

ওসমান নাবিলকে পছন্দ করত না কিন্তু বাবার চাপে পড়ে সে এখন নিরব।বাবা যদি রাজি না হতো তাহলে নাবিলকে ইচ্ছামত টাইট দিতো।সেবার কত দৌড়িয়েছিল ওকে এটা কি ভোলার মতন?এই গলি থেকে ঐ গলি কত গলি যে ঘুরিয়েছে নাবিল।ওদের জন্য সারারাত পাহারা দিতে হয়েছে ঐ এলাকার চায়ের দোকানে বসে।কত শত মশার কামড় খেয়েছে সে জানে আর তার রাত জানে।নাবিলকে একটা টাইট না দিলে তার মশার কামড়ের দাগ যাবেনা।এখন সারাদিন চোখের সামনে নাবিলকে দেখে তার একটুও সহ্য হচ্ছেনা।মন চাইছে ওরে কিছু একটা করে ফেলতে।

নাবিল রুম থেকে বেরিয়ে দেখছিল লিখিকে কোন রুমে দেখা যায়।
তার সামনে ডাইনিং।ডান পাশে দুইটা রুম।একটাতে ওসমানের বাচ্চাকে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে হাত পা নাড়ছে।মনে হয় এক/ দুবছর হবে।আর অন্য রুমে রুহুল আমিন পানের বাটুয়া নিয়ে বসেছেন।এবার সে বাম পাশে তাকালো।ওখানে রান্নাঘর আর আরেকটা রুম।সেটার দরজা বন্ধ।সে ভাবলো হয়ত ওখানেই লিখি আছে।সে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো ওসমান তার বউকে নিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায়।
তবে বাচ্চাটা যে রুমে ঐ রুমটা কার?নাবিলের মাথা ফুটবলের মতন ঘুরে গেলো।
লিখি আসলে বাচ্চা যে রুমে ঐ রুমেই ছিল।আয়না দেখতে সামনে ঐ রুম পেয়ে ঢুকে গেছিলো।নাবিলকে এই কান্ড ঘটাতে সে দেখেছে আয়নায়।হাসতে হাসতে একটু কাছে এসে বললো,’আমি ওখানে না এখানে’

নাবিল জিভে কামড় দিয়ে ঐ জায়গা থেকে সরে এসে বললো,’কি লজ্জায় পড়ে গেলাম’
নাবিল আরও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু লিখিকে পরিপূর্ণ ঠিকঠাক ভাবে শাড়ী পরতে দেখে সে কথা হারিয়ে ফেলেছে।
লিখি ওর চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,’কি?কোথায় হারিয়ে গেলেন?সুন্দর লাগছে?’

‘হ্যাঁ এখন ঠিক আছে।শাড়ী পরলে সবাই সুন্দর’

‘তার মানে শাড়ী ছাড়া আমি সুন্দর না?’

নাবিল জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট টা ভিজিয়ে মুচকি হেসে যেতে যেতে বললো,’ওভাবে তো দেখিনি’

কথাটা এত জোরে গিয়ে কানে লাগলো লিখির লজ্জায় সে চোখের পলক ফেলার সাহসটা খোয়া দিয়ে ফেলেছে।কি বললো নাবিল এটা??সে বুঝাতে চাইলো জামা,সেলোয়ার সুটে সে সুন্দর না কেবল শাড়ীতেই সুন্দর নাকি।কিন্তু নাবিল যেভাবে উত্তর দিল সেটাই তো আশ্চর্যকথা!!
এরকম মিনিং বের করবে সে একেবারে কল্পনাও করতে পারেনি।লজ্জা শেষ করে ছুটে নাবিলের পিছু এসে বললো,’আপনি একটা খারাপ লোক’

‘সঠিক’

‘আপনি ডাবল মিনিং বের করেন সবসময়’

‘এটাও সঠিক ‘

‘আপনি একটা!!!আর কিছু বলবোনা আমি”
—-
জনাব অনাবিল আসতে আসতে অনেক রাত হবে অথচ বাড়িতে এমন আয়োজন চলছে যেন তিনি গেটের বাহিরে।
রুহুল আমিন বড্ড খুশি ওনার আসার কথা শুনে।তার মতে তিনি একজন নিরহংকারী মানুষ।এত বড় লোক হয়েও অহংকার করেননি এতে তিনি সন্তুষ্ট হলেন।তাই লোক লাগিয়ে দিলেন বিশাল আয়োজনের জন্য।
লিখি নাবিলকে চোখে চোখে রাখছে।নাবিল নিজেও প্রেমে পড়েছে অথচ সেটা বুঝতে দিচ্ছেনা।উল্টে লিখির মুখ দিয়ে কথা বের করার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে।
কিন্তু সে তো জানেনা,লিখির চালাকির কাছে তার চালাকি সাদা পানি।
লিখি বুদ্ধি করে সত্যি সত্যি আসিফকে কল করে বাসায় আসতে বললো।আসিফ লিখির চেয়ে দু বছরের ছোট,এ কথা নাবিল জানেনা আর ওকে দেখে বোঝাও যায়না সে এত ছোট।নাবিলের মামাতো ভাই বাবুর বয়সী।
আসিফকে দিয়েই কাজ করে নাবিলের মুখ দিয়ে কথা বের করবে লিখি।আসিফদের বাসা একেবারে কাছে।আসতে সময় লাগবেনা।
লিখিকে কোণায় দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসতে দেখে নাবিলের মনে ঘটকা লাগলো।কারণ লিখি যখন এমন করে হাসে তখন আসল ঘটনা ঘটে।নাবিল টিভি অন করে সোফায় বসে বললো,’তোমায় শাড়ীতে দেখে যে দিওয়ানা হয়ে যায় তোমার সেই খালাতো ভাই কোথায়?’
—–
‘আমার কথা বলছেন নাকি দুলাভাই?’

আসিফকে দেখে নাবিল একটুও খুশি হয়নি।ওর স্বাস্থ্য বলে দিচ্ছে তার বয়স লিখির চেয়ে অনেক বেশি।নাবিল তো ভাবলো,, না জানি কোন কালের প্রেমিক।
আসিফ নাবিলের পাশে বসে ওর ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো,’আমি হলাম আসিফ মায়ান।লিখির খালাতো ভাই’

‘ওর থেকে নাম শুনেছি ।তা তোমার বউ বাচ্চা কোথায়?’

‘আরেহ আমি সিঙ্গেল।’

‘ওহ’

আসিফ সিঙ্গেল এটা শুনে নাবিল মুখটা আরও কালো করে ফেলেছে।লিখি আসিফকে ইশারা করে চলে গেছে সামনে ঘেকে।ইশারা পেয়ে আসিফ নাবিলের দিকে ফিরে বসে বললো,’তো লিখিকে কেমন রাখছেন?ভাল রাখছেন তো?হুট করে বিয়ে করে ফেললেন, আমাদের তো সুযোগ দিলেননা’

নাবিল চমকে গেলো।কিসের সুযোগ,কার সুুযোগ??লিখির ব্যাপারে সুযোগ?আশ্চর্যবোধ করে সে আসিফের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো কিসের সুযোগের কথা বলছে।

আসিফ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,’আরে এত ভাবার কিছু নেই,আমি বিয়োর দাওয়াতের সুযোগের কথা বললাম,আপনি তো বেশি ভেবে ফেললেন’

লিখি আসিফকে সব বুঝিয়েই এনেছে।নাবিলের মুখ থেকে কথা বের করাতে সে লিখিকে সাহায্য করতে এখানে আসলো আজ।ইতিমধ্যে নাবিল জ্বলাও শুরু করেছে।
আসিফের সামনে লিখি বিসকুট আর চানাচুর রেখে ওর পাশে বসে বললো,’বলো আমায় কেমন লাগছে?’

‘অসাধারণ।এই রঙে তোমায় এত মানায় আমি তো জানতামই না, জানলে তোমায় হাজারটা শাড়ী গিফট করতাম এ রঙের।’

নাবিল গাল ফুলিয়ে চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।লিখি দাঁত কেলিয়ে বললো,’মিষ্টি কালারে তো আমায় মিষ্টি লাগে,কথাটা তো তুমিই বলেছিলে’

নাবিল সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো চ্যানেলের।লিখি আর আসিফ মিটমিট করে হাসছে শুধু।
মা সেসময়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বললেন,’লিখি একটু মাংসটা দেখ তো।আমার হাতে একটা কাজ পড়েছে।বানু লবণ বেশি দিয়ে ফেলবে তাই তোকে দেখতে বলছি’

মায়ের কথা মতন লিখি উঠে চলে যাওয়ার সময় কি ভেবে আসিফের দিকে ফিরে বললো,’মাংসের লবণ আমিও বুঝিনা,একটু দেখে দিবা?আসো আমার সাথে’

আসিফ উঠা ধরতেই নাবিল উঠে বললো,’শালাবাবু তুমি টিভি দেখো, আমি যাচ্ছি।আমি আবার লবণ ঠিকঠাক বুঝি’

লিখি তখন চলে গিয়েছিল।সে জানেনা আসিফকে নাবিল আসতে দেয়নি।সে মাংস নাড়তে নাড়তে বললো,’আসিফ কেমন হলো আমার……’

কথাটা শেষ করার আগেই নাবিলকে দেখে কথা আটকে ফেললো সে।

‘কেমন হলো তোমার শাড়ী? আসিফ আর কয়বার বললে তোমার শান্তি লাগবে?’

‘আপনি আসলেন যে?আমি তো আসিফকে ডেকেছিলাম’

নাবিল তাকের সাথে হেলান দিয়ে বললো,’কেন?আমি আসায় ক্ষতি হলো?’

‘লাভ ও তো হলোনা’

‘আমি ভাল লবণ টেস্ট করতে জানি তাই আমি এলাম।দাও তো’

লিখি চামচ এগিয়ে দিয়ে নাবিলের মুখের অবস্থা দেখে জোরেশোরে হেসে ফেললো। এত সহজে স্বীকার করা যাবেনা সব,এখন হাসির কারণ তো বলতে হবে।
কিন্তু সে কিছু বলার আগেই নাবিল বললো,’হাসতে হবেনা, আমি মোটেও জেলাস হচ্ছিনা।কাজিনরা এমনই করে’

‘কেমন করে?’

‘যেমন দেখতেছি’

‘যদি আরও বেশি কিছু দেখেন?’

‘আর কি দেখবো?’

‘আসিফ লুডু খেলবি?’

কথাটা বলে লিখি নাবিলের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে।কিন্তু নাবিল ওকে রান্নাঘরের বাইরেই যেতে দেয়নি।হাত ধরে ফেললো।খুব শক্ত করেই ধরেছিল।লিখির হাত লাল হয়ে আসছিল একেবারে।ওর চোখের পলক পড়তে না দেখে নাবিল ধীর স্বরে বললো,’লবণ দিতে হবে, কম হয়েছে’

লিখি হাত ছাড়িয়ে বললো,’আর একদিন হাত ধরলে ধরে নিবো আপনি আমায় ভালবাসেন’

চলবে♥