মনের পিঞ্জরে পর্ব-২০+২১

0
977

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_20

—ও…. মা… গো… ট্রু…রু লা…ভ।
কথাটা মুখ ফসকে বের হবার পর সাথে সাথেই নিজের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো ইশরা।সে যে ভুল জায়গায় আবার ভুল বলে ফেলেছে তা সে বুঝতে পারলো।

জিদান ইশরার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এক রাম ধমক দিয়ে বলল…..

—থাপ্পর চিনোস ফাজিল মেয়ে।এগুলো কোন ধরনের কথা।

জিদানের ধমক খেয়ে ইশরার কেপে উঠল। বিরবির করে বলল……

—এখন আমাকে বকা হচ্ছে?নিজে নেশাটেশা খেয়ে উল্টাপাল্টা কথা বললে তখন কোন দোষ নেই।

ইশরার কথা জিদানের কান পযর্ন্ত ঠিকই পৌচ্ছালো।জিদান ত‍্যাড়া ভাবে বলল…..

—আমি কোন নেশাটেশা করি নি ওকে।চিঠিতে যা লিখা ছিলো তাই বলছি।বুঝি না আজকালকার মেয়েরা এসব আজগুবি কথা কিভাবে লিখে।

জিদানের মুখে চিঠির কথা শুনে ইশরা তড়িঘড়ি বলে উঠল……

—চিঠি!কিসের চিঠি?

জিদান হতাশ হতে বলল……

—আর বলিস না।আজ এক মেয়ে কথা নাই বার্তা নেই পিয়নকে দিয়ে আমার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

জিদানের কথা শুনে ইশরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল…..

—কোন মেয়ে তোকে এসব লিখে চিঠি দিয়েছে নাম বল আমাকে।কাল কলেজে গিয়ে তার তেরোটা আগে বাজাবো।এক একটা মেয়ে লুচিপরটা।

—আরে তুই এতো রাগছিস কেন?আ…..

—চুপ আর একটাও কথা বলবি না।কলেজে পড়াতে যাও না পার্টিতে যাও।এতো সেজেগুজে যেতে কে বলে শুনি।
আরেকদিন যদি তোকে মেয়েদের সাথে খি খি করতে দেখি না তাহলে তোর দাত ভাঙবো।

কথাটা বলেই ইশরা ফট করে লাইন কেটে দিল।অপর দিকে জিদান বোকার মত ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়েই রইল।ইশরাকে রাগানোর জন‍্য জিদান এতোক্ষন মজা করছিলো।ইশরা যে এমন রণমূর্তি ধারন করবে তা জিদানের জানা ছিলো না।

💦💦💦💦💦💦

সকাল বেলা ফুরফুরে মন নিয়ে সান ভার্সিটির জন‍্য একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামলো।

মিসেস শিকদার কিচেনে কাজ করছে।মিঃশিকদার ডায়নিং টেবিলে বসে নাস্তা করার সাথে সাথে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।সিনথিয়া,দাদু তার পাশেই বসে নাস্তা করছে।সান তাদের পাশের একটা চেয়ারে বসে বলল…..

—গুড মর্নিং এভরিওয়ান।

মিঃশিকদার খবরের কাগজটা ভাজ করে পাশে রেখে বলল……

—গুড মর্নিং।
মিঃখান আর কোন কথা না বলে নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দিন।

সান ও কোন কথা না বাড়িয়ে নাস্তা করতে লাগলো।

মিঃশিকদার নাস্তা শেষ করে গম্ভীর গলায় বলল……

—সান!তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

সান নাস্তা করতে করতে বলল…..

—বল পাপা কি বলবে।

মিঃশিকদারঃমিঃশেখ কে তো তুমি চেনো।(এলির বাবা)তিনি অফিসে এসেছিলো তোমার আর তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

মিঃশিকদারের কথা শুনে সান এর হাত থেকে গেলো।সান গম্ভীর গলায় বলল…..

—তুমি কি বললে?

—আমরা সামনের শুক্রবার তার মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি।এবং পাকা কথা সেখানেই সেরে আসবো।

সান হালকা চেচিয়ে বলল……

—হোয়াট!তুমি আমাকে কিছু না বলেই এই ডিসিশন নিয়ে নিলে।

—এখন কি তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আমাকে কাজ করতে হবে।

—পাপা এখানে পারমিশনের কথা কেন আসছে?আমি তো তেমন কিছু মিন করিনি।

মিঃশিকদার টেবিলে হাত দিয়ে বারি দিয়ে বলল……

—তাহলে তুমি কি মিন করেছো?দেখো তুমি বিয়ের জন‍্য সময় চেয়েছো আমি তোমাকে দিয়েছি।তুমি যতটুকু সময় চেয়েছো তার চেয়ে বেশিই সময় আমি তোমাকে দিয়েছি।এখন আর আমি তোমার কোন কথা শুনবো না।আমি যে মেয়েকে বলবো তোমার সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে।

সান চেচিয়ে বলল……

—বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয় পাপা।একজনকে ধরে বেধে গলায় ঝুলিয়ে দিবে তাকে নিয়েই আমার ঘড়-সংসার করতে হবে।আর ভালো না লাগলে ডিভোর্স দিয়ে বিদেয় করে দিবো।লাইফটা আমার পাপা।আমি যাকে নিয়ে সুখি হব তাকেই আমি বিয়ে করবো।আর তাছাড়া বিয়ের জন‍্য এতো তাড়া কিসের সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

—আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না।আমি যে ডিসিশন নিয়েছি সেটাই হবে।

দাদুঃখোকা কেন তুই দাদুভাই এর সাথে এমন করছিস?বিয়ে সাদির ব‍্যপারে এমন হুট করে সিদ্ধান্ত নিলে চলে।

মিঃশিকদারঃমা এই নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাই না।আমি মিঃশেখকে বলে দিয়েছি তার মেয়েই আমার বাড়ির পুত্রবধু হবে আর এটাই ফাইনাল।

দাদুঃএসব কেমন কথা বলছিস তুই?দাদু ভাই এর তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে।

সান নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে নরম গলায় বলল…..

—সরি পাপা।আমি তোমার এই কথা রাখতে পারবো না।

মিঃশিকদার চেচিয়ে বলল…..

—রাখতে পারবে না মানে কি।রাখতে তোমাকে হবেই।আমি এ নিয়ে কোন কথাই আর শুনবো না।

এক কথা দু কথায় বাবা ছেলের সাথে তুরকালাম ঝামেলা লেগে গেল।সান রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।সান বের হতে না হতেই মিঃশিকদারও বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।আর এদিকে বাবা ছেলের কাহিনী মিসেস শিকদার, সিনথিয়া,দাদু নিরব দর্শকের মত দেখছিলো।

💦💦💦💦💦💦

ইশরা আজ কলেজে আসার পর থেকে লিপির সাথে সাথেই রয়েছে।না নিজে ক্লাশ থেকে বের হয়েছে আর না লিপিকে বের হতে দিয়েছে।

ইশরা জিদানের ক্লাশ শুরু হবার আগেই লিপিকে নিয়ে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেল।কালকে ইশরা রাগের মাথায় জিদানের সাথে অমন ব‍্যবহার করার পর আজ আর জিদানের সামনে যাবার সাহস সে পাচ্ছে না।একা থাকলে যদি জিদান আবার হুট করে সামনে এসে পরে তাই তার থেকে বাচতে আজ লিপিকে সাথেই রেখেছে।

ইশরা লিপিকে নিয়ে ক্লাশরুম থেকে কিছুটা দূরে এসে বড় করে এক নিশ্বাস নিয়ে বিরবির করে বলল…..

—বাচলাম বাবা।আর তার সামনে পরার চান্স নেই।

ইশরা লিপির হাত শক্ত করে ধরে লিপিকে নিয়ে হাটছে।লিপি ইশরার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল…..

—ঐ মাইয়া হাত ছাড় আমার।আমি তোর বয়ফ্রেন্ড না।আমার হাত ধইরা তোর হাটতে হইবো না।

ইশরা ঝাড়ি দিয়ে বলল…..

—আরে এমন মোচরা মোচরি করতাছোস ক‍্যান।হাতই তো ধরছি তোর গলা চেপে তো ধরি নাই।

—তোর মতি গতি আমার যেন কেমন লাগতাছে ইরু?তোরে কি ভূতে-টূতে ধরছে।আজকে এমন ব‍্যবহার করতাছোস ক‍্যান তুই?

ইশরা ত‍্যাড়া ভাবে বলল…..

—হ ধরছে ভূতে।এহন তোরে আমি মারতে নিয়া যাইতাছি হইছে।এবার চুপচাপ আমার সাথে চল।

লিপি কাদো কাদো হয়ে বলল…..

—তুই সত‍্যিই কি আমাকে মারতে নিয়া যাইতাছোস ইরু?

ইশরা মন চাচ্ছে লিপিকে পচা পানিতে চুবাতে।ইশরা লিপিকে কিছু কড়া কথা শুনানোর জন‍্য মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল।ইশরা মুখ খোলার আগেই গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এল……

—কি ব‍্যপার তোমরা ক্লাস না করে এখানে কি করছো?

💦💦💦💦💦💦

সান পার্কের এক বেঞ্চের মধ‍্যে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।মাথার মধ‍্যে ঘুরঘুর করছে তার নানান চিন্তা।

এতোদিন শুধু ইশফাকে নিয়ে চিন্তা ছিলো।আজ আবার নতুন করে আরেক চিন্তা যোগ হয়েছে।সান ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে সে তার পাপাকে মানাবে।তার পাপা যথেষ্ট বুদ্ধিমান।সব সময় সে তার সন্তানদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়।হঠাৎ সে যে কেন এমন ব‍্যবহার করছে তাই তার মাথায় আসছে না।

আর অপর দিকে ইশফা!ইশফা কি আদো সানকে বুঝবে?সান যদি মুখ ফুটে ইশফাকে মনের কথা বলে তাহলে কি ইশফা সানকে মেনে নিবে নাকি সানকে ফিরিয়ে দিবে।নানান চিন্তা-ভাবনায় সানের মাথা ফেটে যাচ্ছে।সান দু হাত দিয়ে নিজের চুল কিছুক্ষণ টেনে ধরে রাখার পর বসা থেকে উঠে দাড়ালো।মনে মনে কি করবে তার সিধান্ত নিতে লাগলো।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা,রিধি,তুশি মিলে লাইব্রেরী থেকে কিছু বই নিয়ে কথা বলতে বলতে নিজেদের ক্লাশরুমের দিকে যাচ্ছে।করিডোর দিয়ে যাবার সময় হুট করে একজন এসে ইশফার সামনে হাটুগেড়ে বসে এক গুচ্ছ গাধা ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল……

—তুমি হাতটা শুধু ধরো।আমি তোমাকে হতে দিবো না আর কারো।(লোকটা কে🙄)

#চলবে,

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_21

সকাল থেকে কিছু না খেয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলেই চলেছে মিসেস শিকদার।স্বামী,ছেলে দুজনের রাগকে সে অসম্ভব ভয় পায়।বাবা ছেলে দুজনই রাগি।কারো থেকে কারো রাগের অংশ কম নয়।বরং বাবার থেকে ছেলের রাগটা একটু বেশিই।শাশুড়ির কাছে শুনেছে তার ছেলে নাকি তার শশুরের মত রাগি হয়েছে।

বিয়ের আগে লোক মুখে সে শুনে এসেছে, শিকদারদের কে সবাই পাজি, রাগি,নানান কিছু বলে।বিয়ের পর থেকে বুঝে আসছে আসলে লোক মুখে শিকদারদের কে নিয়ে যা শুনেছে তা একটুও মিথ‍্যে নয়।আসলেই তারা অনেক পাজি আর রাগ যেন সবার নাকের ডগায় থাকে।

সিনথিয়া খাবারের প্লেট নিয়ে মিসেস শিকদারের পাশে বসে বলল…

—আম্মু কিছু একটু মুখে দাও।সকাল থেকে কিছুই খাও নি।অসুস্থ হয়ে পরবে তো।

মিসেস শিকদারঃসিনথিয়া তোর বাবা,ভাই এমন কেন?একটুও কি তারা আমাকে সান্তিতে থাকতে দিবে না।তাদের জন‍্য আমার ভয় হয়।কেন তারা এমন করে বল?

কথাগুলো বলতে বলতে মিসেস শিকদার ডুকরে কেদে উঠল।

সিনথিয়া মায়ের কাধে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলল….

—আম্মু তুমি তো জানো পাপা,ভাইয়ার একটু রাগটা বেশি।রাগটা পরলেই দেখবে আবার ঠিক হয়ে যাবে।তুমি টেনশন করো না বেশি।

—ভয় হয় রে আমার ভয় হয়।রাগ মানুষকে ধংস করে দেয়।ছেলেটা আমার রাগের বসে কিছু না করলেই হয়।ছেলেটার জন‍্য আমার মনটা কেমন যেন করছে রে।কেমন যেন কু-ডাকছে।তোর পাপার যে হঠাৎ হঠাৎ কি হয় তাই বুঝিনা।

দাদু,মিসেস শিকদার এর পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…

—বৌ মা চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি এখনো বেচে আছি।আমি থাকতে আমার দাদুভাইয়ের অমনে আমি কিছুই হতে দিবো না।

দাদু নানান ভাবে মিসেস শিকদার কে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।

মিসেস শিকদার শাশুড়ি কথায় ও মন টাকে মানাতে পারলো না।তার মনের মধ‍্যে কেমন যে কু-ডাকছে।কেন এমন লাগছে সে নিজেও জানে না।

💦💦💦💦💦💦

ঘূর্ণিঝড় আশার আগে পরিবেশ যেমন সান্ত নিবর থাকে তেমনি সান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে।

ভার্সিটির পিছনের দিকে খোলামেলা জায়গায় এক বেঞ্চের উপর বসে রয়েছে সান।তার সামনে চুপচাপ দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা।ইশফা,সান দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে হঠাৎ কেন সান ইশফাকে ডেকেছে।তাদের থেকে কিছুটা দূরে রিধি,তুশি,নিরব দাড়িয়ে রয়েছে।কারো মাথাই ঢুকছে না সান তাদের কেন এখানে ডেকে এনেছে।

নিরবতা ভেঙে সান গম্ভীর গলায় বলল…..

—ছেলেটা কে ছিলো?

সান এর চেহারায় রাগ স্পষ্ট।ইশফা বুঝতে পারছে না সান এর এই রাগের কারন।ইশফা কপালে ভাজ ফেলে সানকে পাল্টা প্রশ্ন করল…..

—কোন ছেলেটা?

ইশফার এই কথাটাই ছিলো আগুনে ঘৃ ঢালার মত।সান দাড়িয়ে বেঞ্চের মধ‍্যে লাঠি দিয়ে চেচিয়ে বলল…..

—তুমি জানো না আমি কোন ছেলেটার কথা বলছি?কোন সাহসে তুমি অন‍্য একটা ছেলের হাত থেকে ফুল নিয়েছো?

এবার ইশফার আর বুঝতে বাকি রইলো না সান কার কথা বলছে।একে ঐ স্টুপিট ছেলেটার জন‍্য ইশফা মেজাজ চরম গরম হয়ে রয়েছে।কোথার থেকে গাধাটা গাদাঁ ফুল নিয়ে এসে উল্টাপাল্টা কথা বলে ইশফার মাথা গরম করে দিয়েছে।ভালোভাবে কথা বলে যখন কাজ হয়নি তখন ইশফা ওয়ার্নিং দিয়ে ছেলেটাকে সেখান থেকে পাঠিয়েছে।কিন্তু ছেলেটা যাবার আগে ইশফার হাতে ফুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে জান নিয়ে পালিয়েছে।
ছেলেটা যেতে না যেতেই এলি ঊড়ে এসে জুড়ে বসে সানকে নিয়ে ইশফাকে নানান কথা শুনিয়েছে।অবশ‍্য ইশফাও ছেড়ে কথা বলে নি।এখন আবার সান এর এমন ব‍্যবহারে ইশফা আরো রেগে গেলো।ইশফা ত‍্যাড়া ভাবে বলল……

—আমি যার কাছ থেকেই ফুল নেই না কেন আপনার কি?আপনি এতো রাগছেন কেন?

—দেখো এমনিতেই আমার মাথা গরম আছে।উল্টাপাল্টা কিছু বলে আর রাগিও না।যা জিগ‍্যেস করছি তার উওর দাও।ছেলেটা কে ছিলো?(রেগে)

(সান নিজের রাগটাকে কিছুটা দমিয়ে পার্ক থেকে সোজা ভার্সিটিতে চলে আসে ইশফার সাথে কথা বলার জন‍্য।কিন্তু ভার্সিটিতে এসেই দূর থেকে ইশফাকে অন‍্য একটা ছেলেকে প্রপোজ করতে দেখে, ইশফার হাতে ফুল ধরিয়ে দিতে দেখে তার রাগটা এবার মাথায় চড়ে বসল।এতটুকু দেখেই সে সেখান থেকে চলে যায়।ইশফার ছেলেটার সাথে কি কথা হয়েছে তা জানার জন‍্যই সান ইশফাকে এখানে ডেকে এনেছে।সাথে নিজের মনের কথাটাও বলার জন‍্য।)

ইশফাও এবার রাগ দেখিয়ে বলল……

—আমি আপনার প্রশ্নের উওর দিতে বাধ‍্য নই।কি হন আপনি আমার?কোন অধিকারে আমাকে এসব জিগ্যেস করছেন?

—তুমি জানো না কোন অধিকারে?

—না জানি না। আপনার সাথে না আমার কোন সম্পর্ক আছে আর না হবে।তাই আপনি আপনার লিমিটে থাকুন।

অতিরিক্ত রাগ আর মানসিক চাপে সান এর হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে।সান ইশফার দিয়ে রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ইশফার হাত চেপে ধরে তার হাতে জোর করে একটি রিং পরিয়ে দিয়ে চেচিয়ে বলল….

—এবার অবশ‍্য আর বলতে পারবে না আমি তোমার কে।আজ থেকে তুমি শুধুই আমার।তুমি হাফ মিসেস সানজান শিকদার হয়ে গেছো।অতি তাড়াতাড়ি ফুল মিসেস শিকদার বানানোর ব‍্যবস্থা করবো।

রাগের বসে সান কি করছে কি বলছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।সান পুরো পাগলের মত আচারন করছে।নিরব সামনে এসে সানকে মানানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই মানাতে পারছে না।

ইশফা চোখ-মুখ লাল করে কিছুক্ষণ রিং এর দিকে তাকিয়ে থেকে রিং খোলার চেষ্টা করতে নিলেই সান ইশফার হাত ধরে রাগি গলায় বলল….

—এই ভুল ভুলেও করবে না।

ইশফা ঝাড়া দিয়ে সান এর হাত সরিয়ে দিয়ে সান এর গালে ঠাটিয়ে এক চর বসিয়ে দিল।রাগে ইশফার পুরো শরীর কাপছে।ইশফা সান এর কলার চেপে ধরে রাগি গলায় চেচিয়ে বলল….

—হাউ ডেয়ার ইউ।আপনার সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার।কোন সাহসে আপনি আমার হাতে রিং পরিয়েছেন?আপনি ভাবলেন কি ভাবে আপনার এই পাগলামি আমি মুখ বুজে সহ‍্য করবো।আমি কোন অবলা নারী নই যে আপনার এই সব পাগলামো আমি মেনে নিব।
কতদিন ধরে চিনেন আপনি আমাকে?দুদিনের মোহ পরে কেন এমন করছেন।নিজেকে কেন পাগল প্রেমিক বানানোর চেষ্টা করছেন?যতই পাগল হবার চেষ্টা করুন না কেন আপনার মত পাগলদের কিভাবে পিটিয়ে সোজা করতে হয় তা আমার জানা আছে।

সান ইশফার হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে ইশফার গলা চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল…..

—আমার এই পাগলামো ভালোবাসাকে কোন সাহসে তুই মোহ বললি।আজ বলেছিস দ্বিতীয় বার বলার সাহস ভুলেও করবি না।

সান ইশফার গলা ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে বলল……

—কি যে বলছিলি আমি পাগল?হ‍্যা আমি পাগল হয়ে গেছি।তোর জন‍্য শুধু মাত্র তোর জন‍্য পাগল হয়েছি।আমার এই পাগলামী তুই বুঝেও না বোঝার বাহানা করেছিস।তোকে আমি আমার এই মনের_পিঞ্জরে বন্দি করেছি।এতো সহজে অন‍্য কারো কিভাবে হতে দেই।না আমি নিজে অন‍্য কারো হব আর না তোকে হতে দিব।তুই আমার শুধুই আমার।তোকে আমি আগেই ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম আমি ভালো কিন্তু আমার রাগ অনেক খারাপ।তুই শুনিসনি আমার কথা।তাই তোকে সম্পূর্ণ আমার সাথে বেধে নিলাম।আজ থেকে তুই আমার।তুই শুধু এই সানজান শিকদারের।

কথাগুলো বলতে বলতে সান নিচে লুটিয়ে পরলো।মুহূর্তের মধ‍্যে সান এর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরতে লাগলো।সান এর এমন অবস্থা দেখে সবাই হতবুদ্ধি হয়ে গেলো।নিরব সানকে কিছুক্ষন ডাকাডাকি করার পর যখন সান কোন সারা-শব্দ না পেল তখন নিরব সানকে ধরে পাগলের মত আচারন করতে লাগলো।আর
ইশফা হতবুদ্ধি হয়ে নিরব দর্শক এর মত ঠাই দাড়িয়েই রইল।

#চলবে,