#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_39
রাস্তার মধ্যে রক্তাত্ব অবস্থায় পরে আছে ইশরা।আশেপাশের লোকেরা দূর থেকে ইশরার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।লিপি দৌড়ে সেখানে গিয়ে ইশরার মাথা নিজের কোলে নিয়ে কান্না করছে আর ইশরাকে ডাকছে।লিপি ইশরার গালে হালকা চাপড় মেরে কান্না করতে করতে বলল…….
—ইরু চোখ খোল। কথা বলছিস না কেন?ইরু আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?ইরু চোখ খোল। কথা বল। কথা বলছিস না কেন তুই?কথা বল?
লিপি ইশরা গালে হালকা চাপড় মেরে ইশরাকে ডাকছে আর কান্না করছে।
দুই একজন করে সামনে এসে দাড়াতে দাড়াতেই মুহূর্তের মধ্যে ইশরাকে ঘিরে ভিড় হয়ে গেলো।
জিদান এখনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে।সে ফ্যালফ্যাল নয়নে সামনের দিকে ইশরার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়েই রয়েছে।মানুষ জনের ভিড় বেধে যাওয়ায় যখন ইশরাকে জিদান আর দেখতে পেল না তখন জিদান এক পা দু’পা করে সেদিকে চলে গেল। ভিড় ঠেলে ইশরার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসল।লিপি জিদানকে দেখে কান্না মাখা কন্ঠে বলল…….
—স্যার ইরুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।তাড়াতাড়ি গাড়ির ব্যবস্থা করুন।
জিদান লিপির কথা কানে না তুলে ইশরার গালে হাত রেখে নরম গলায় বলল…….
—ফাজিল মেয়ে দিন দিন বড় হচ্ছিস আর বেয়াদব হচ্ছিস না।এতো বড় মেয়ে হয়ে রাস্তায় শুয়ে রয়েছিস কেন?থাপ্পড় খেতে না চাইলে তাড়াতাড়ি উঠ।না হলে কিন্তু আমি রাস্তার মধ্যেই তোকে মাইর লাগাবো।
জিদানের কথা শুনে লিপি কান্নারত অবস্থায় অবাক চোখে জিদান এর দিকে তাকিয়ে বলল……
—স্যার ইরু এক্সিডেন্ট করেছে।ওকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।প্লিজ কেউ একটা গাড়ির ব্যবস্থা করুন প্লিজ।(শেষের কথাটা আশেপাশে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল)
জিদান লিপির কথা এবারো কানে না তুলে বলল……
—দেখ ইশু সহ্যের একটা সিমা আছে। তাড়াতাড়ি উঠ নয়তো তোকে এখানেই ফেলে চলে যাব।লিপি উঠতো ওকে এখানেই রেখে চলো আমরা চলে যাই।
লিপি বুঝতে পারলো জিদান এখন তার মধ্যে নেই।লিপি এক হাত দিয়ে জিদানের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলল…….
—স্যার নিজেকে সামলাম।একটু বোঝার চেষ্টা করুন ইরু এক্সিডেন্ট করেছে।ওকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
লিপির ঝাকানোতে জিদান তার হুসে ফিরলো।এতোক্ষন মনে হচ্ছিল কেউ তাকে সম্মহিত করে রেখেছে।এর মধ্যে একজন গাড়ি নিয়ে আসতেই জিদান ছো মেরে ইশরাকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে ছুটল।
💦💦💦💦💦
ওটির সামনে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে জিদান।ইশরাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মিনিট খানেক হবে ইশরাকে ওটিতে ঢুকানো হয়েছে।জিদানকে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না তার মনের ভিতরে কি চলছে।কেননা কান্না করলে, আহাজারী করলে সবাই সেটা দেখে।কিন্তু মনের খবর কেউ জানতে যায় না।ভিতরে ভিতরে যদি দুমরে মুচরেও যাও তারপরেও সে দিকে কেউ নজর দেয় না।জিদানের চোখে না আছে পানি আর নাই বা মুখে কিছু বলছে সে।তার মনের মধ্যে যে কোন ঝড় বইছে তা একমাত্র সেই জানে।
লিপির কল পেয়ে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ছুটে হাসপাতালে চলে এসেছে ইশফা।ইশফা হাপাতে হাপাতে হাসপাতালে পৌচ্ছে জিদানকে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জিদানের কাছে দৌড়ে গিয়ে বলল……
—ভাইয়া ইরু কোথায়?কি হয়েছে ওর?লিপি বলল এক্সিডেন্ট করেছে? ও ঠিক আছে তো?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?তোমার শার্টে রক্ত কেন?কোথাও ব্যাথা পেয়েছো?কথা বলছো না কেন?চুপ করে না থেকে কথা বল।কি হয়েছে ইরুর?ভাইয়া চুপ করে না থেকে কিছু তো বল।
ইশফা একের পর এক গরগর করে জিদানকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।জিদান কিছু না বলে ইশফার দিকে সান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।কিছু বলার পরিস্থিতিতে সে নেই।জিদান মুখে কিছু না বললেও ইশফা তার চোখের ভাষা কিছুটা বুঝতে পেরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……
—আ-আমার ক-কলিজার কিছু হবে না তো ভাইয়া?
জিদান কিছু না বলে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাথে সাথে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরল নোনা জল।
লিপি একটু দূরে বসে মুখে হাত চেপে কান্না করছিলো।ইশফাকে দেখে কাপাকাপা পায়ে ইশফার সামনে এসে গলা জড়ানো কন্ঠে বলল…….
—ইফু আপু…….।
ইশফা লিপির দিকে কান্নারত অবস্থায় তাকাতেই লিপি ফুপিয়ে বলে উঠল……
—আপু ইরু……।
লিপি আর কিছু বলতে পারলো না মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।ইশফা লিপির দিকে এগিয়ে এসে কাপাকাপা হাত লিপির হাতের উপর রেখে কান্নামাখা কন্ঠে বলল……
—তুমি কান্না কেন করছো?ইরু ঠিক আছে তো। দেখবে একটু পর ওটির থেকে বের হয়ে আমাদের সাথে মজা করা শুরু করে দিবে।কান্না করো না।
ইশফার কথা শুনে লিপি পারছে না চিৎকার করে কান্না করতে।লিপি ইশরাকে কি সান্তনা দিবে সে তো নিজেই নিজেকে ঠিক করতে পারছে না চোখের সামনে বার বার ইশরার রক্তমাথা মুখটা ভেসে উঠছে।
সান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে জিদান এর সামনে গিয়ে জিদান এর কাধে হাত রাখতেই জিদান চোখ মেলে সান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।সান নরম গলায় বলল……
—ভাইয়া…..।
জিদান চোখ বন্ধ রেখেই বলল……
—বুচিকে সামলাও ভাই।বুচিকে সামলাও।
💦💦💦💦💦💦
খবর পেয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই হাসপাতালে চলে এসেছে।মিসেস খান এক পাশে বসে কান্না করছে আর আল্লাহ্কে স্বরন করছে।ইশিতা বেগম পাশে বসে যতটুকু পারছে তাকে সান্তনা দিচ্ছে।ইশফা কান্না করতে করতে জ্ঞান হারানোর ফলে তাকে পাশের এক কেবিনে রাখা হয়েছে।
মিঃখান ওটির দরজার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে।এই অবস্থায় জিদানকে এখানে দেখেও কেউ কোন প্রশ্ন করে নি।
ঘন্টাখানেক পর একজন নার্স ওটির থেকে বের হয়ে আসতেই জিদান দ্রুত তার কাছে গিয়ে বলল…….
—পেশেন্ট কেমন আছে?
নার্স মুখটা মলিন করে বলল……
—আল্লাহ্ কে ডাকুন।পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না।পেশেন্টের গার্জিয়ান কে আছে?কিছু ফরমালিটি পূরন করে একটা বর্ন সাইন করতে হবে।আপনাদের থেকে একজন আসুন আমার সাথে।
জিদান কাপাকাপা গলায় বলল……
—পেশেন্ট ঠিক হয়ে যাবে তো?
নার্স ছোট করে বলল……
—আল্লাহ্ কে ডাকুন।
কথাটা বলেই নার্স চলে গেলো।
সান সবার দিকে একবার তাকিয়ে ইশান কে ইশারা করে নার্স এর পিছু পিছু গেল।
নার্সটার কথা শুনে সবার মাথায় যেন বাজ পরল।জিদান পরে যেতে নিলেই ইশান সাথে সাথে জিদানকে ধরে ফেলল।জিদান নিজেকে কিছুটা শক্ত করে হেলতে দুলতে মিঃখান এর সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে মোলায়েম গলায় বলল…….
—চা-চাচ্চু……।
মিঃখান জিদানের দিকে তাকাতেই জিদান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হাত জোড় করে কাপাকাপা গলায় বলল…….
—চাচ্চু আমাকে মাফ করে দাও। আমি পারিনি তোমার পরিকে দেখে রাখতে।আমাকে মাফ করে দাও চাচ্চু আমাকে মাফ করে দাও।
মিঃখান মুখে কিছু না বলে নিজের হাত জিদানের হাতের উপর রেখে তাকে আসস্থ করল।
একটু পর একজন নার্স হাতে একটা পেপার নিয়ে এসে বলল…..
—পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছে।এই পেপারে একটা সাইন করে দিন।
নার্স এর কথা শুনে মিঃখান নার্স এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই জিদান চোখের পানি মুছে নার্স এর সামনে গিয়ে বলল…….
—কোথায় সাইন করতে হবে?
নার্সঃ আপনি পেশেন্টের কি হন?
জিদান মিঃখান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল…….
—আমি পেশেন্টের হাজব্যান্ড।
কথাটা শোনা মাত্রই সবাই অবাক চোখে জিদানের দিকে তাকালো।
ইশিতা বেগম এর হাজব্যান্ড জিদানের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাধে হাত রেখে বলল…….
—দেখ বাবা তুমি এখনো ওর হাজব্যান্ড হওনি।তাই এই পেপারে সাইন করার……
তাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে জিদান বলল…….
—ইশু আমার বিয়ে করা লিগেল বউ।তাই এখন চাচ্চুর থেকে ওর ভালো মন্দ সব কিছু দেখার অধিকার আমার আঙ্কেল। তাই প্লিজ আমার কাজে বাধা দিবেন না।
কথাটা বলে নার্স এর হাত থেকে পেপারটা নিয়ে সাইন করে দিল।নার্স চলে যেতেই আবার দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইল।
জিদানের কথা সুনে সবাই যেন ৪৪০ভোল্ড এর ঝাটকা খেল।সবাই অবাক চোখে জিদানকে দেখছে।সবার কানে শুধু জিদান এর কথাই ঘুরপাক করছে।
#চলবে,
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_40
অপেক্ষার প্রহর যেন সহজে কাটে না।অপেক্ষার প্রহরের এক একটা মিনিট যেন এক দিনের চাইতেও বেশি লম্বা হয়।
সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে দীর্ঘ সময় পর ওটির থেকে ডাঃ বের হয়ে আসলো।জিদান তড়িঘড়ি ডাঃ এর সামনে গিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……
—স্যার পেশেন্ট এর অবস্থা কেমন?ও ঠিক আছে তো?তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তো?
ডাঃ কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।
সান সামনে এসে জিদানের কাধে হাত রেখে জিদানকে আসস্থ করে ডাঃ এর উদ্দেশ্যে বলল…….
—স্যার পেশেন্ট……?
ডাঃ একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…….
—পেশেন্ট শরীরের তেমন আঘাত না পেলেও মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।আমরা আমাদের বেষ্টটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।জ্ঞান ফেরার আগে কিছু বলতে পারছি।২৪ঘন্টার আগে জ্ঞান না ফিরলে….।বাকিটা আল্লাহ্ হাতে।আপনারা আল্লাহ্কে ডাকুন।
সবার চোখ-মুখে আশার যে একটু আলোর রশ্নি ফুটে উঠেছিলো ডাঃ এর কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে তা নিভে অন্ধকারে ঢেকে গেলো।তাদের এই অন্ধকার মুখে আলোর রশ্নি ফিরে আসবে কিনা কারো জানা নেই।
💦💦💦💦💦💦
আওলাদ খান এর সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়েছে হাফসা বেগম।আওলাদ খান চেয়ারের মধ্যে পায়ের উপর পা তুলে আয়েস করে চা হাতে বসে আছেন।হাতের চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল……..
—ছেলে সাথে যোগাযোগ হয়?
হাফসা বেগম নিচু গলায় বলল……
—দুদিন আগে কথা হয়েছে।
আওলাদ খান রাগি গলায় বলল…..
—তোমাকে না কালকে বলেছি আজকে ছেলেরে বাসায় আসতে। বলো নাই কেন?
হাফসা বেগম কাপাকাপা গলায় বলল…….
—রাতে ফোন করেছিলাম।বিজি ছিলো তাই কথা বলতে পারেনি।একটু আগেও কল করেছি অনেক বার। ফোন বন্ধ।
আওলাদ খান চেচিয়ে বলল…..
—কি এমন রাজ কাজ করে ও যে বাপ,মায়ের সাথে কথা বলার সময় পায় না।আসুক একবার বাড়িতে দরকার পরলে পা ভেঙে ওকে এবার বাড়িতে বসিয়ে রাখবো।
হাফসা বেগম কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।
আওলাদ খান একটু চুপ করে থেকে কিছু একটা ভেবে বলল……
—একটু পর রেডি হয়ে নিও। ছেলে নাই তো কি হয়েছে ছেলের হয়ে আমরাই মেয়েকে আংটি পরিয়ে আসবো।
হাফসা বেগম অবাক হয়ে বলল……
—আংটি পরাবেন মানে?কাকে আংটি পরাবেন?
আওলাদ খান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল…..
—ওহ্ তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি।পাশের গ্রামের মেম্বরের মেয়ের জন্য জিদানের কথা মেম্বর নিজে এসেই বলছে আমাকে।বিয়েতে তারা সোনা-গয়না হতে শুরু করে ঘড় পুরা সাজিয়ে দিবে।সাথে কিছু জমিনও লিখে দিবে।এমন সুযোগ হাত ছাড়া কে করে। তাই আমিও রাজি হয়ে গেছি।আজকে গিয়ে মেয়েকে আংটি পরিয়ে আসবো আর পাকাকথা দিয়া আসবো।তাই তো ছেলেকে আসতে বলেছিলাম।
আওলাদ খান এর কথা সুনে হাফসা বেগম কিছুটা সাহস করে বলল……
—আপনি জিদান এর সাথে কথা না বলেই বিয়ে ঠিক করে ফেললেন?একবারো ওর মতামত জানার চেষ্টা করলেন না?আর তাছাড়া আব্বা জান তো অনেক আগেই ইশরার সাথে জিদানের বিয়……
কথাটা শেষ করার আগেই আওলাদ খান হাতের চায়ের কাপ ছুড়ে ফেলে দিয়ে হুংকার দিয়ে বলল…….
—এই বাড়িতে আমি যেই সিদ্ধান্ত নিব তাই হইবো।কারো মতামত জানার আমার দরকার নাই।আর একটা কথা শুনে রাখ ঐ মাইয়া জীবনেও আমার বাড়ির বউ হইতে পারবো না।আমি যাকে পছন্দ করবো তাকেই তোর পোলার বিয়া করতে হইবো।
কথাটা বলে আওলাদ খান সামনের একটা চেয়ারে লাঠি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
হাফসা বেগম মুখে আচল চেপে কান্না করতে করতে অস্পষ্ট ভাবে বলল…….
—আর কত নিচে নামবেন আপনি?এখন টাকার লোভে পরে ইশরার মত মেয়েকে রেখে অমন একটা মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন?আমরা সহ্য করলেও আল্লাহ্ আপনার এই লোভ সহ্য করবো না।কিছুতেই সহ্য করবো না।
💦💦💦💦💦💦
—ইরু….ইরু আমাকে ছেড়ে যাস না ইশু।তুই না আমার ভালো বোন। প্লিজ ফিরে আয়।দেখ আমি প্রমিজ করছি তুই যত দুষ্টুমিই করিস না কেন আমি তোকে বকবো না।সত্যি বলছি তুই যা বলবি তাই শুনবো একটুও বকবো না।প্লিজ ফিরে আয়।তুই তো আমার ভালো বোন।আমার সব কথা শুনিস। যাস না প্লিজ। আমাকে একা রেখে যাস না ইশু।ফিরে আয় ইরু ফিরে আয়।
ইশফা ঘুমের মধ্যে কথাগুলো বলছে আর ছটফট করছে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে তার নোনা জল।সান ইশফার পাশে এক টুলে বসা ছিল।ঘুমের ঘরে ইশফাকে ছটফট করতে দেখে টুল থেকে উঠে ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে ইশফাকে আস্তে আস্তে ডাক দিতে লাগলো।একটু পর ইশফা পিটপিট করে চোখ খুলল।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝে নিল।সান ইশফাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে নরম গলায় বলল……
—এখন কেমন ফিল করছো?
ইশফা সান এর কথার কোন উওর না দিয়ে ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে উওেজিত হয়ে বলল……
—ইরু কোথায়?ও ঠিক আছে তো?
সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে চুপ করে রইল।ইশফা সানকে চুপ থাকতে দেখে চেচিয়ে বলল…..
—কথা বলছেন না কেন?ইরু ঠিক আছে তো?আমি ইরুর কাছে যাবো?আমাকে ইরুর কাছে নিয়ে যান।
কথাগুলো বলতে বলতে ইশফা বেড থেকে নামতে চাইলে সান ইশফাকে বাধা দিল।ইশফা সান এর বাধা উপেক্ষা করে বেড থেকে নামার চেষ্টা করে বলল……
—আমাকে ইরুর কাছে যেতে দিন।ও আমাকে রেখে চলে যেতে চাচ্ছে।ওকে আটকাটে হবে।ও আমার সাথে রাগ করেছে।ছাড়ুন আমায় আমি ইরুর কাছে যাব।
মুহূর্তের মধ্যে ইশফা পাগলামি শুরু করে দিল।তার এক কথাই সে ইশরার কাছে যাবে। সান তাকে নানান ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কোন ভাবেই সে ইশফাকে থামাতে পারলো না।সে তার পাগলামি করেই যাচ্ছে।সান তাকে জোর করে আটকে রাখায় নিজের এক হাতের নখ দিয়ে অপর হাতে খামছি কাটছে।সান ইশফাকে এমন পাগলামো করতে দেখে ইশফাকে শান্ত করতে না পেরে দিল এক রাম ধমক।ইশফা সান এর ধমক খেয়ে সান এর দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।কান্না মাখা কন্ঠে বলল…….
—আ-আমার ইরু আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।ওকে বলুন না আমাকে ছেড়ে যেন না যায়।ও চলে গেলে আমি একা হয়ে যাব।ওকে আটকান।
কথাগুলো বলে দু’হাতে মুখ চেপে কান্না করতে লাগল।
সান ইশফাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অপর হাতে ইশফার মাথার হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল।
যেখানে ইশরা, ইশফার কলিজা।ইশরার সামান্য কিছু হলেই ইশফা তান্ডব শুরু করে দেয়।ইশরা সামান্য একটু ব্যাথা পেলেও ইশফা অস্থির হয়ে যায়।মনে হয় চোট ইশরার না ইশফার শরীরে লেগেছে।সেখানে সেই আদুরে ছোট বোনের এটো বড় একটা এক্সিডেন্ট এ কিভাবেই বা ইশফা নিজেকে ঠিক রাখবে।
💦💦💦💦💦💦
হাসপাতালের পাশের এক মসজিদে নামাজ পরে মোনাজাত নিয়ে আল্লাহ্ এর দরবারে চোখের পানি ফেলছে জিদান আর মিঃখান।মিঃখান জিদানকে তার সাথে এখানে নিয়ে এসেছে।জিদান এর কান্নার কারনে হিচকি উঠে গেছে বার বার তার শরীর কেপে কেপে উঠছে।আল্লাহ্ এর দরবারে বেশ কিছুক্ষন কান্নাকাটি করে মোনাজাত শেষ করে সেখানেই থ মেরে বসে রইল জিদান।মিঃখান মোনাজাত শেষ করে জিদানকে থ’মেরে বসে থাকতে দেখে জিদানের কাধে হাত রাখলো।জিদান কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে গলা জড়ানো কন্ঠে বলল…….
—চাচ্চু……আমার ইশু ঠিক হয়ে যাবে তো?আমি যে পারছিনা ওকে ঐ ভাবে পরে থাকতে দেখতে।ও কখন উঠবে?কখন আবার আগের মত বায়না করবে?কখন আমার সাথে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে?ওকে ঐ সাদা কাপড়ে মোড়ানো বেডে শুয়ে থাকতে দেখে আমার যে ভিষন কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু।তুমি তোমার পাগলিটাকে একটু বলো না ও যেন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যায়?আমি পারছিনা চাচ্চু ওকে ঐ ভাবে বেডে পরে থাকতে দেখতে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু খুব কষ্ট হচ্ছে।
মিঃখান জিদান এর কথা শুনে থ’হয়ে গেলো।কি বলে সে জিদানকে সান্ত্বনা দিবে সেই ভাষাই হাড়িয়ে ফেলল।
💦💦💦💦💦💦
ICU এর রুমের দরজার সামনে বসে রয়েছে সবাই।সবাই মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।২৪ঘন্টা পার হতে অল্প কিছু সময় এখনো বাকি আছে। কিন্তু এখনো ইশরার জ্ঞান ফেরেনি।ডাঃদের কিছু জিগ্যেস করলে তারাও ভালো মন্দ কিছু বলছে না।তাদের যাই জিগ্যেস করছে না কেন তারা এক কথাই বলছে,আল্লাহ্ কে ডাকুন।মিসেস খান হাসপাতালে নামাজে জন্য যেই জায়গা রাখা হয়েছে সেখানে বসে নামাজ পরে মোনাজাত নিয়ে আল্লাহ্ এর দরবারে দোয়া করছে।মিঃখান পুরো তব্দ হয়ে বসে রয়েছে।ইশফার পাগলামি বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঘুমের ইনজেকশনের দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে।জিদান ICUএর দরজার সামনে দাড়িয়ে পায়চারি করছে।সবাইকে টেনশনে রেখে এদিকে ICU রুমের ভিতরে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে ইশরা।মুখে অক্সিজেন মাক্স,হাতে ক্যানুলা এই সবে কোন সমস্যাই যেন হচ্ছে না তার।সে তো এই সব নিয়েই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ইশরা এই ঘুম থেকে কখনো উঠবে কি না তা একমাএ আল্লাহ্ই ভালো জানে।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)