#মনের_পিঞ্জর
#Ariyana_Nur
#Part_37
সান ইশফার হাত ধরে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।ইশফা সান এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই সে সান এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না।
কিছুক্ষন আগেঃ
ইশফা,তুশি রিধির বাসা থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।রিধি, নিরব অনেক করে ওদের কে থাকতে বলা শর্তেও তারা থাকবে না।ইশফা,তুশি ওদের জন্য রিধিকে কোন ঝামেলা করাতে চাচ্ছে না।তাই তারা ভার্সিটির ছুতো দিয়ে কেটে পরতে চাচ্ছে।কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রিধি দরজা খুলতেই দরজার অপর পাশে সিনথিয়াকে দেখতে পেয়ে রিধির মুখে হাসি ফুটে উঠল।সিনথিয়া রিধিকে দেখেই চেচিয়ে বলল…..
—সারপ্রাইজ।
রিধি অবাক হয়ে বলল……
—সিনথু তুই!
—কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?
—সারপ্রাইজ তো ভালোই লেগেছে।(ভিতরের দিকে তাকিয়ে)তোর জন্যও একটা সারপ্রাইজ আছে।
সিনথিয়া সন্দেহর চোখে রিধির দিকে তাকাতেই রিধি মুচকি হেসে দরজা থেকে সরে দাড়াতেই সিনথিয়া ইশফাকে দেখে ভাবি বলে চেচিয়ে দৌড়ে গিয়ে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে গরগর করে বলতে লাগল…….
—ভাবিইইই!কেমন আছো তুমি?জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি?
ইশফাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তুমি কেমন আছো?
সিনথিয়া ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে বলল……
—ভালো।তোমাকে পেয়ে আরো ভালো হয়ে গেছি।
তুশিঃএই যে বিয়াইন সাহেবা আমি যে এখানে জলয্যান্ত মানুষ দাড়িয়ে রয়েছি সেদিকে কি আপনার খেয়ার আছে?
সিনথিয়া মুচকি হেসে তুশিকে জড়িয়ে ধরে বলল……
—কেমন আছো বিয়াইন সাহেবা আপু….?
তুশি গাল ফুলিয়ে বলল……
—বলবো না ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
সিনথিয়া তুশির কথা শুনে হেসে বলল…..
—আমিও বলবো না ভালো আছি।
কথাটা বলেই তুশির দিকে তাকাতেই দুজন ফিক করে হেসে দিল।
রিধিঃসিনথু তুই কার সাথে এসেছিস?
সিনথিয়া ভাব নিয়ে বলল…..
—কেন একা আসতে পারিনা?আপু আমি বড় হয়ে গেছি একা চলাফেরা করতে পারি ওকে।
রিধিঃচাপা কম মার।তোকে যে খালামনি একা ছাড়েনি সেটা আমি ভালো করেই জানি।
সিনথিয়াঃতোমার খালামনির একা কেন এমনিতেও আমাকে ছাড়তে চায়নি।আমি যত ভাইয়াকে পটিয়ে এখানে এসেছি।
রিধিঃভাইয়া কোথায়?
সিনথিয়াঃনিচে গাড়ি পার্ক করে আসছে।
সান এর আসার কথা শুনে ইশফা সান এর মুখোমুখি না পরার জন্য তাড়া দিয়ে বলল…….
—তুশ হয়েছে তোর?আমাদের তো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
সিনথিয়া ইশফার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…..
—দেড়ি হয়ে যাচ্ছে মানে?কোথায় যাচ্ছ তুমি?
ইশফা কিছু বলার আগেই রিধি ফট করে বলল……
—আর বলিস না এদের কত করে বলছি আজ থেকে যেতে সমস্যা হলে বিকেলে চলে যেতে কিন্তু এরা শুনছেই না।এরা এক কথাই বলে যাচ্ছে,ভার্সিটিতে যেতে হবে ক্লাশ আছে।
সিনথিয়াঃকোথাও যেতে পারবে না এখন।
অনেক দিন পর তোমাদেকে পেয়েছি এখন আমি কিছুতেই তোমাদের কে ছাড়ছিনা।
ইশফাঃআজ যেতে হবে আপু।অন্য সময় এসে জমিয়ে তোমার সাথে আড্ডা দিব।
আজ একটু দরকার আছে।বোঝার চেষ্টা কর।
—রিধু তোর গেস্টরুমটা ঠিক আছে তো?প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।আই ওয়ান্ট এ রেস্ট।
সান এর অসুস্থ কন্ঠ শুনে ইশফা চটজলদি দরজার দিকে তাকাতেই সান কে কপালে হাত রেখে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।
সিনথিয়া সানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল…..
—ভাইয়া তুই রেস্ট নিয়ে পরে আছিস?ভাবি যে চলে যেতে চাচ্ছে সেদিকে তোর খেয়াল আছে?
সানঃকি রে রিধু কি জিগ্যেস করলাম কিছু বলছিস না কেন?
নিরব মিটমিট করে হেসে বলল…..
—তোর জন্য আমাদের গেস্টরুম সব সময়ই রেডি থাকে।
সান নিরবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে কোন কথা না বলে ইশফার হাত ধরে টানতে টানতে রুমের দিকে যেতে লাগলো।সানের কাজে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো। ইশফা চেচিয়ে বলল……
—আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় হাত ছাড়ুন।
সান কোন কথা না বলে ইশফার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
ইশফা জোরাজুরি করেও সান এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে পারলো না।সান রুমে গিয়ে ইশফার হাত ছাড়তেই ইশফা রাগি গলায় বলল……
—সমস্যা কি আপনার?সবার সামনে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?কি ভাবছে সবাই?
—হাত ধরেই তো নিয়ে এসেছি কোলে করে তো আর আনিনি।তাছাড়া কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার।
ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে কিছু না বলে রুম থেকে বের হতে নিলেই সান ইশফার হাত ধরে নরম গলায় বলল……
—মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও না।
ইশফা সানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাতে দাত চেপে বলল……
—আবদারটা একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
সান কপালে হাত রেখে অধর্য্য গলায় বলল…..
—আমি যে কেন ভুলে যাই তুমি ভালো কথার মানুষ না।জোর ছাড়া কিছুই তোমাকে দিয়ে করানো যায় না।সমস্যা নেই বউকে দিয়ে যদি ত্যাড়া ভাবেই সব কাজ করাতে হয় তাহলে সেটাই করতে হবে।
ইশফা কিছু বলার আগেই সান ইশফাকে টেনে বেডে বসিয়ে ইশফার কোলে মাথা রেখে টানটান হয়ে শুয়ে পরল।সান এর কাজে ইশফা পুরো স্টেচু হয়ে বসে রইল।
—মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেও না।
সান এর আদুরে গলার কথা শুনে ইশফা নিজেকে সাভাবিক করে কোন কথা না বলে সানকে ঠেলে সরাতে চাইল।কিন্তু সানকে একটুও নড়াতে পারলো না।সান আবারো আদুরে গলায় বলল…..
—সত্যি বলছি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
কথাটা বলে নিজেই ইশফার হাত নিজের মাথায় রাখলো।
ইশফা তেজি গলায় বলল……
—আপনি উঠবেন নাকি ধাক্কা মাইরা নিচে ফালামু।
সান ভ্রু কুচকে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—কালকের থেকে দেখছি আমার সাথে কথা বলার সময় তোমার ভাষাটা একটু অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।কাহিনী কি?
—কাহিনী কিছুই না এখন উঠেন নাইলে আপনার খবর আছে।
—আগে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তারপরে সরছি তার আগে না।
ইশফা কোন ভাবেই সানকে সরাতে পারলো না।তার এক কথাই মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে সরবে না।সান তার কথায়ই অটুল হয়ে থাকলো।শেষে ইশফা উপায় না পেয়ে সান এর উপর রাগ দেখিয়ে সান এর চুল জোরে জোরে টানতে লাগলো।ইশফা এতো জোরে সান এর চুল টানছে যে সান ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছে তার পরেও একটা কথা বলছে না।
কিছুক্ষন পর সান এর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সান ঘুমিয়ে গেছে ভেবে ইশফার হাতের জোর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেলো।ইশফা সান এর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো……..
—এ কোন পাগলের পাল্লায় পরেছি আমি?এতো জোরে চুল টানলাম কোন টু শব্দও করলো না?এমনকি এই অবস্থাই ঘুমিয়ে পরল?
ইশফা সান এর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সানকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো সাথে এটা সেটা ভাবতে লাগলো।ইশফার ভাবনার মাঝেই সান চোখ খুলে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল……
—এভাবে ঘুমন্ত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে নেই বউ।নজর লেগে যাবে তো।(চোখ মেরে)
ইশফা থতমত খেয়ে বলল……
—আপনি ঘুমান নাই?
—মাথার মধ্যে যদি কেউ হাল চাষ করে তাহলে কি ঘুমানো যায়?
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল……
—দেখুন বহুত সহ্য করেছি আপনার পাগলামি এবার সরেন নয়তো মাথায় কিন্তু একটা চুলও রাখবো না।সব টেনে ছিড়ে ফেলবো।
—চুল ছিড়তে হবে না আগে বল যাবে না তাহলেই সরে যাচ্ছি।
—আমার ক্লাশ আছে।
সান ফট করে চোখ বন্ধ করে বলল…..
—তাহলে আমিও উঠছি না।
—আমার পা ব্যাথা করছে।
—আমার মাথা ব্যাথা করছে।
—আপনার মাথা ব্যাথা করছে চুপ চাপ শুয়ে থাকুন না।না করলো কে?
—তোমার পা ব্যাথা করছে চুপ চাপ বসে থাকো তাহলেই তো হয়।আমি তো মানা করিনি।
—কি ছেলে মানুষি শুরু করেছেন?রিধি অসুস্থ এই অবস্থায় এখানে থেকে শুধু শুধু ঝামেলা বাড়ানোর কোন মানে আছে?
—এতো বেশি কেন বোঝ তুমি।কোন ঝামেলা হবে না।আমি সবটা দেখে নিব।
ইশফা সান এর ত্যাড়ামির কাছে হাড় মেনে বলল……
—ঠিক আছে যাব না।এবার উঠুন।
সান ইশফার দিকে ভ্রু কুচকে বলল…..
—সত্যি তো?
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল…..
—তিন সত্যি।এবার উঠুন।
সান মুচকি হেসে ইশফার কোল থেকে মাথা উঠাতেই ইশফা সানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পাশের থেকে বালিশ নিয়ে সানের দিকে ছুড়ে মেরে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।সান ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
💦💦💦💦💦💦
কি ভাবছেন সান আর রিধির সাথে কিসের সম্পর্ক,নিরব আর রিধির বিয়ে কবে হয়েছে তাই তো?তাহলে চলুন জেনে নেই।
রিধি সান এর খালাতো বোন।সান এর কাছে সিনথিয়া আর রিধি দুজনই সমান।
দুজনকেই সে সমান চোখে দেখে।
রিধি পরিবারের একমাত্র মেয়ে হবার কারনে বাবা মায়েরও খুব আদরের ছিলো।রিধি যখন ক্লাস টেইনে পরে তখন তার মা মারা যায়।কথায় আছে না মা মরলে বাপ হয়ে যায় তালই।রিধি বেলায় ঠিক তেমনটাই হয়েছে।তা মা মারা যাবার কিছুদিন পরে তার বাবা আরেকটা বিয়ে করে।বিয়ের পর আস্তে আস্তে তা বাবা পরিবর্তন হতে লাগলো।
দ্বিতীয় বিয়ের পর সে রিধি কোন খোজ খবরই নিতো না।রিধি সারাদিন খেয়েছে কি না খেয়েছে, সুস্থ আছে নাকি অসুস্থ সেদিকে তার কোন খবর নেই।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো তার যে একটা মেয়ে আছে।সৎ মা রিধির সাথে কোনরুপ খারাপ ব্যবহার না করলেও সে রিধিকে দেখতে পারতো না।
রিধি মনে মনে প্রচুর ভেঙে পরলেও সান এর পরিবারের সাপোর্ট পেয়ে নিজেকে সব পরিস্থিতি সাথে খাপ খাইয়ে মানিয়ে নেয়।সবার কথামত ফাইনাল পরিক্ষাটা দেয়।টেনেটুনে পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হতে চাইলেই তার সৎ মা কলেজে ভর্তি হতে বাধা দিয়ে সে রিধির বিয়ের জন্য উঠে পরে লাগে।তার কথা শুনে রিধির বাবাও মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য রাজি হয়ে যায়।
রিধির বাবাকে সান এর বাবা,মা রিধিকে ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে নিষেধ করে।নানান ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে যাতে সে রিধিকে এই ছোট বয়সে বিয়ে না দেয়।এমনকি তাদের সুবিধার জন্য তারা রিধিকে তাদের কাছে রাখতে চায়।কিন্তু কোন ভাবেই রিধির বাবা তা মানেনি।সে না তাদের সাথে রিধিকে দিবে আর না নিজের বাড়িতে সে রিধিকে রাখবে।তা নিয়েই দুই পরিবারের মাঝে দন্ড বেঝে যায়।
রিধি বয়স আর কত?সবে মাত্র কলেজে পা দিবে।নিজেকে নিয়ে এমন টানা হেচরা দেখে সে ডিপ্রেশনে চলে যায়।নিজেকেই নিজের কাছে অপরাধী মনে হয়।সবাইকে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতেই সে সুইসাইড করার চেষ্টা করে।আল্লাহ্ সহায় থাকায় সেদিন রিধি বেচে যায়।বাড়ির এক সার্ভেন্ট রিধির রুমে পানি রাখতে গিয়ে রিধিকে রক্তাক্ত হাতে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করে।
হাসপাতাল থেকে রিধিকে সান জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।রিধি একটু সুস্থ হতেই রিধির সৎ মা আবার বিয়ের জন্য উঠে পরে লাগে।নিরব রিধিকে আগে থেকেই পছন্দ করতো।নিরব তার ফ্যামিলিকে রিধির কথা বললে তারা আর আপত্তি করেনা।এদিকে রিধির সৎ মায়ের চিন্তা হল রিধিকে বাড়ি থেকে বের করা।নিরব বেকার ছেলে পড়াশুনা করছে যানা সর্তেও বড় ঘড়ের ছেলে দেখে রিধির বাবাকে পট্টি দিয়ে বিয়েতে রাজি করায়।দু ফ্যামিলির সম্মতিতেই ওদের বিয়েটা হয়।
রিধি প্রথম প্রথম নিরবকে সহ্য করতে না পারলেও আস্তে আস্তে নিরব এর কেয়ার, ভালোবাসা দেখে সে ও নিরব এর উপর দূর্বল হয়ে পরে।
রিধি ইশফা থেকে নিজের পরিচয় লুকানোর কারন হল সান।রিধিই সে ব্যক্তি যে ইশফার সকল খবরা-খবর সানকে দিত।রিধি সান এর বোন+নিরব এর ওয়াইফ জানার পর ইশফা,তুশি যদি রিধির সাথে বন্ধুত্ব না করে তাই তার পরিচয় গোপন করা।
আর এসব কিছু সান নিজেই কাল রাতে ইশফাকে সব বলেছে।সানই ইশফাকে সব বুঝিয়ে বলে রিধির এখানে আশার জন্য রিকুয়েস্ট করেছে।
(আমার মতে রিধির ব্যাপারে সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে।যদি কিছু বাকি থেকে থাকে জানাবেন প্লিজ)
💦💦💦💦💦💦
ড্রয়িং রুমে বসে সবাই গল্প করছে।হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছে সবাই।হাসিঠাট্টার মাঝেই রিধি ইশফা,তুশির দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলল…..
—আমার বিয়ের কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিস তোরা?
ইশফা,তুশি কোন কথা না বলে চুপ করে রইল।ওদের চুপ থাকতে দেখে রিধি হতাস হয়ে বলল……
—তোরা এখনো আমার উপর রাগ করে আছিস?
ইশফা একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…..
—সত্যি কথা বলতে প্রথমে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।পরে ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম তোর মত বকবক মহিলা যখন আমাদের থেকে বিয়ের কথা লুকিয়ে এতোদিন থাকতে পেরেছে তাহলে নিশ্চই এর পিছনে কোন কারন আছে।বিয়ের কথা শুনে রাগ করেছি গুড নিউজ শুনে খুশি হয়েছি।খুশিতে রাগে কাটাকাটি এখন আবার আগের মত হয়ে গেছি।
ইশফার কথা শুনে খুশিতে রিধির চোখ চকচক করে উঠল।মুহূর্তের মধ্যে আবারো চেহারার মধ্যে খুশির ঝিলিক, চঞ্চলতা ফুটে উঠল।
💦💦💦💦💦💦
ইশফার বাসার থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি থামাতেই ইশফা গাড়ি থেকে নেমে পরলো।সান তুশিকে তার বাসায় পৌচ্ছে দিয়ে ইশফাকে বাসায় পৌচ্ছে দিতে এসেছে।সান চেয়েছি ইশফার বাসায় সামনে গিয়ে তাকে নামিয়ে দিতে কিন্তু ইশফার জন্য তা আর হয়নি।সান গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল……
—কি দরকার ছিলো এখানে নামার?তুমি কি অন্য কারো সাথে ঘুরাঘুরি করছো?নিজের বর এর সাথে আছো সো লোকের কথাকে ভয় পাবার কিছু নেই।
—আপনাকে কে বলল আমি লোকের কথার ভয়ে এখানে নেমেছি?লোকের কথাকে আমি কখনোই ভয় পাই না।
—তাহলে এখানে নামলে কেন?গাড়িতে উঠ আমি তোমাকে তোমার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসছি।
—এখানে নেমছি ঐ বিচ্চুর জন্য।আপনার সাথে আমারে দেখলে আমারে জ্বালাইয়া ভাজা ভাজা করবো।
ইশফার কথা শুনে সান মুচকি হেসে বলল…..
—তুমি ইরুর ভয়ে এখানে নেমেছো।
—তেমনটাই মনে করেন।আচ্ছা আশি।সাবধানে যাবেন আল্লাহ্ হাফেজ।
কথাটা বলে ইশফা সামনের দিকে দু কদম আগানোর পর সান মোলায়েম কন্ঠে বলল…..
—শোন…..
ইশফা ঘুড়ে সান এর দিকে তাকাতেই সান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—বন্ধু হবে আমার?আমি চাই বন্ধুত্বের দিয়ে নতুন করে আমাদের সম্পর্কটা শুরু করতে।
#চলবে,
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_38
কারো সাথে খুব সহজে মিশতে হলে তাকে ভালোভাবে জানতে হলে প্রথমে তার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দাও।কেননা বন্ধুত্বের মাধ্যমেই তুমি খুব সহজে তার সাথে মিশতে পারবে তাকে জানতে পারবে।
মুয়াজ্জিন এর কন্ঠে ফজরের সুমধুর আযান কানে ভেসে আসতেই ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল……
— ইন্নালিল্লাহ!আযান পরে গেছে!আমার তো আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।কালকে আপনার জন্য যেতে পারিনি।ঘুমে চোখ জ্বালাপোড়া করছে। ঘুমবোই কখন আর উঠে ভার্সিটিতে যাব কখন?সব আপনার দোষ আপনার।আপনার আবদার রাখতেই আপনার সাথে মাঝরাত থেকে ঘুম হারাম করে কথা বলাই আমার ঠিক হয়নি।
—আরে আমাকে দোষারোপ করছো কেন আমি কি করেছি?নতুন নতুন বন্ধুত্ব করলে আর বন্ধুর কথা রাখতে না হয় রাত জেগে একটু কথাই বলেছ।কি এমন হয়েছে?
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল…..
—কি হয়নি সেটা বলুন।ঘুমোতে হবে।ভার্সিটিতে যেতে হবে কত কাজ।আর এটা একটু কথা!সেই একটার থেকে বকবক করে যাচ্ছি আপনার সাথে।জানেন আমি জীবনেও ফোনে কারো সাথে এতো কথা বলি নি।আল্লাহ্ এখন আমার মুখ ব্যাথা করছে।সব দোষ আপনার।
সান মুচকি হেসে বলল……
—হয়েছে ম্যাডাম এখন আর আমাকে দোষারোপ করতে হবে না।দোষী দুজনই।কথা বলার সময় কারোরই টাইমের খবর ছিলো না।এখন আমাকে দোষারোপ করা বাদ দিয়ে ঘুমাও।ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একটু লেট করে বের হও তাহলেই হবে। আমি তোমাকে নিতে আসবো।
—আপনার আসতে হবে না আমি চলে যেতে পারবো।
—তোমার কাছে জানতে চাইনি আমি।যা বলেছি তাই করবে।আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে একেবারে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো।
—পারেনই তো শুধু থ্রেড দিতে।
—আরো বহুত কিছু পারি।আপাতত থ্রেড দিচ্ছি।আচ্ছা রাখি ঘুমোও আমিও ঘুম দেই।
ইশফা মিনমিন করে বলল…..
—এখন ঘুমিয়ে পরবেন?
—কেন আরো কথা বলবে?
—জ্বি না কথা বলবো না।
—তাহলে?
—বলছি কি আপনি নামাজ পরবেন না?না মানে আযান পরেছে নামাজ পরে ঘুমালে হতো না।
—আসলে নামাজ টা ঠিকমত আদায় করা করা হয় না।আজ পরি কাল পরি করতে করতে বেশির ভাগ ছুটেই যায়।মাঝে মাঝে পরা হয় তাও নিয়মিত না।
—আজ কাল না করে নিয়ত করুন এই ওয়াক্ত থেকে নিয়মত নামাজ আদায় করবেন।যত ব্যস্ততাই থাক না কেন নামাজ ছাড়বেন না।তাহলেই তো হয়।
সান মুচকি হেসে বলল……
—ইনশাআল্লাহ।ভুলে গেলে একটু স্বরন করিয়ে দিও।
— ভুলবেন কেন।একবার নামাজের প্রতি মহব্বত হয়ে গেলে দেখবেন এক ওয়াক্ত নামাজ না পরলে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে।
—যো হুকুম বেগম সাহেবা। ইনশাআল্লাহ আজকের থেকে পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবো।যত ব্যস্থতাই আসুক না কেন নামাজ ছাড়বো না।আর যদি শয়তানের ধোকায় পরে একটু ভুলে যাই তুমি মনে করিয়ে দিও।
ইশফা মুচকি হেসে বলল….
—হয়েছে এবার নামাজ পরে ঘুম দিন।আল্লাহ্ হাফেজ।
সান মুচকি হেসে বলল…..
—আল্লাহ্ হাফেজ।
ইশফা নামাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে গা বিছিয়ে দিতে না দিতেই ইশরা খোচা মেরে বলল……..
—আমার সাথে রাতের বেলা দু’মিনিট কথা বলতে গেলে তোমার ঘুম নষ্ট হয়ে যায়।এখন সারা রাত ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মশার কামড় খেয়ে কথা বলার সময় তোমার ঘুমের কিছু হয়নি?নাকি ঘুম,মশা তারা সবাই শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলো?
ইশফা ইশরার হাতে চাপর মেরে বলল……
—ফালতু কথা না বলে ঘুমা আর আমাকে ঘুমাতে দে।
—আমার কথা এখন ফালতুই লাগবো।আল্লহ্ মাটি ফাক করো ঢুকে যাই এই জালেম দুনিয়ায় কেউ আমাকে ভালুবাসে না।
ইশফা আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে শুয়ে রইল।কেননা এখন ইশরার সাথে কথা বাড়ানোই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা আর ঘুম নষ্ট।
💦💦💦💦💦💦
জিদান এর সামনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রয়েছে ইশরা।অনেকক্ষন ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।জিদান ইশরাকে কাচুমাচু করতে দেখে নিজের চেয়ার থেকে উঠে ইশরার সামনে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বলল…..
—কিছু বলবি?
ইশরা এক পলক জিদানকে দেখে পুনরায় মাথা নিচু করে মিনমিনে গলায় বলল…..
—বলার জন্যই তো এখানে এসেছি।
—তাহলে কিছু না বলে দাড়িয়ে রয়েছিস কেন?
ইশরা আদুরে গলায় বলল…..
—যদি তুমি বকা দেও।
ইশরার কথায় জিদান মুচকি হেসে কথার মধ্যে একটু গম্ভীয্য এনে বলল…….
—মিস ইশরা।এটা কলেজ আর আমি আপনার টিচার।টিচারদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা আপনি জানেন না?
জিদানের কথা শুনে ইশরা ফট করে জিদানের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে রাখি গলায় বলল…….
—আমাকে না রাগালে কি তোমার হয় না?
জিদান হেসে বলল…..
—জানিস তাহলে রাগছিস কেন?
ইশরা কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইল।জিদান ইশরার মাথায় গাট্টা মেরে বলল……
—এখন গাল না ফুলিয়ে তাড়াতাড়ি বল কি বলবি আমার ক্লাশ আছে।
—ছুটির পর আজ আমাদের কে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাবে?
জিদান সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..
—আমাদের মানে?
—আমাদের মানে আমাকে আর লিপিকে।তোমার থেকে ট্রিট নেওয়ার জন্য লিপি আমাকে পাগল করে ফেলছে।আমি নিজে ওকে ফুচকা ট্রিট দিতে চেয়েছি কিন্তু সে যেতে নারাজ।তার কথা তুমি তাকে ট্রিট দিবে।সে নাকি ভদ্র মেয়ে জিজু থাকতে বেস্টুর টাকা খরচ করবে না।আর এই সব হয়েছে তোমার জন্য।তুমি যদি সেদিন লিপির সামনে বড় মা এর ফোন আমায় ধরিয়ে না দিতে তাহলে আর এসব কিছুই হতো না।পরে এক সময় আমি ওকে মানিয়ে বললে ঠিকই বুঝতো।জানো ও কত রাগ করেছিলো আমার উপর।বহুত কষ্টে ওর রাগ ভাঙিয়েছি।
ইশরা কথা শেষ করে জিদানের দিকে তাকাতেই দেখলো জিদান তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে।ইশরা ভ্রু কুচকে বলল……
—এই যে,এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেন?
জিদান মুচকি হেসে বলল……
— আমার বকবক রানি যে এখনো আগের মত আছে তাই দেখছিলাম।
—খবরদার আমার কথা বলা নিয়ে কিছু বলবে না।এই কয়দিন বাসায় চুপ করে বসে থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে গেছিলো।
—তুই ছিলি চুপ করে বললি আর আমি বিশ্বাস করবো।
ইশরা ভেঙচি কেটে বলল……
—তোমার বিশ্বাস করানোর জন্য আমার ঠেকা পরে নি।এখন বল কখন নিয়ে যাবে।
—ক্লাশ শেষে পাশের রেস্টুরেন্টে তোরা গিয়ে আমাকে একটা কল করে জানিয়ে দিস আমি চলে যাব।
জিদানের কথা শুনে ইশরা খুশি হয়ে নাচতে নাচতে লিপিকে খবরটা দিতে চলে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
ক্লাশ শেষে ইশফা,তুশি কথা বলতে বলতে গেডের দিকে যাওয়ার সময় কোথা থেকে এলি তার দলবল নিয়ে ইশফাদের সামনে এসে দাড়ালো।এলি একবার তীক্ষ্ণ চোখে ইশফাকে ভালো মত দেখে তাসিল্য হেসে বলল…….
—এই সব ভালো মানুষদের পোষাক না পরে নিজে যেই লেভেলের তেমন পোষাক পরলেই তো পারো।তোমার মত মেয়েদের কিন্তু এই পোষাকে মানায় না।তুমি এই বোরকা,হিজাব পরাতে বোরকা,হিজাব ও লজ্জা বোধ করছে।
ইশফা হাত ভাজ করে সাভাবিক গলায় বলল…….
—মতলব কি আপনার?পথ আটকিয়েছেন কেন?আর আমি কি পরবো না পরবো তার দিকে নজর না দিয়ে নিজের চরকায় তেল দিন না।তাহলেই তো হয়।
পিছন থেকে একটি ছেলে সামনে এসে বলল……
—আমি তো ভেবেছিলাম আমার সুইটহার্ট এর শুধু হাত চলে এখন তো দেখছি জবান ও খুব চলে।
(ছেলেটি আর কেউ না যে ভার্সিটির প্রথম দিন ইশফার হাতে থাপ্পড় খেয়েছিলো সে)
ইশফা ছেলেটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল……
—কথা ঠিক ভাবে বলুন।
—কেনো আমরা সুইটহার্ট বললেই দোষ আর সান যখন বলে তখন?
ইশফা মুচকি হেসে বলল…….
—কোথায় সান আর কোথায় আপনি?আর সান সুইটহার্ট কেন কলিজা,গিলা, ফেফসা যাই বলুক না কেন তার বলার অধিকার আছে দেখেই বলে।
এলি রাগি গলায় বলল……
—তুমি তো খুব লোভি মেয়ে সানকে সান এর টাকার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই হাত করে ফেলেছে।ভালো ভালোয় বলছি আমার সান এর জীবন থেকে চলে যাও।
ইশফাঃও তাই নাকি।সান কে যে আমি হাত করে নিয়েছি এটা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।একটা ছোট্ট প্রশ্ন ছিলো,আমি না হয় সানকে টাকার জন্য হাত করেছি আপনি কেন সান এর পিছনে পরে আছেন বলুন তো?আপনিও কি টাকার জন্য……?
এলি চেচিয়ে বলল…..
—ইউ স্টুপিট মেয়ে লজ্জা করে না পর পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করতে?কান খুলে শুনে রাখ সান এর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আর খুব তাড়াতাড়িই আমরা বিয়ে করছি।
ইশফাঃও তাই নাকি।এই যে মিষ্টার বর মাশাই আপনার বিয়ের খবর আপনার এই বান্দনী আই মিন বান্ধবীকে দিন নি?কাজটা কিন্তু ঠিক করেননি অন্তত্য একটা ট্রিটও দিলে দিতে পারতেন।
ইশফা সামনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল।ইশফার তাকানো অনুসরণ করে এলিরা সবাই ঘুড়ে দাড়াতেই সানকে বুকে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
ইশরা,লিপি রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়া দাওয়া করে বের হতেই রাস্তার অপর পাশে হাওয়াই মিঠাই দেখে ইশরা খুশি হয়ে বলল……
—লিপি রে অনেক দিন পর হাওয়াই মিঠাই দেখলাম।তুই দাড়া আমি গিয়ে কিনে নিয়ে আসছি।
লিপি বাধা দিয়ে বলল…….
—না তোর যেতে হবে না স্যারকে মিল মিটিয়ে আসতে দে।স্যার এনে দিবে।
—ধুর এইটুকুর জন্য ভাইয়াকে বলতে হবে না।তুই দাড়া আমি গিয়ে ছু মন্তর করে নিয়ে আসতাছি।
ইশরা লিপির কথা না শুনে রোডের অপর পাশে চলে গেলো।হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসার সময় ইশরা, লিপির সাথে জিদানকে ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে ভয়ে অসাবধানতাবশত রোড পার হতে নিলে একটা গাড়ি এসে ইশরাকে ধাক্কা দিল।ইশরা গাড়ির ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পরলো।ইশরাকে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পরতে দেখে লিপি ইরু বলে সাথে সাথে চেচিয়ে উঠল।জিদান কিছু না বলে মূর্তির মত ফ্যালফ্যাল নয়নে রোডের মধ্যে পরে থাকা ইশরার দিকে তাকিয়ে রইল।
#চলবে,