মনে রবে কিনা রবে আমাকে পর্ব-০১

0
1

মনে রবে কিনা রবে আমাকে
কাজী জেবুন্নেসা

১.

কড়া রোদ, কুমিল্লার বাসস্ট্যান্ডে অরণ্য কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে, কুমিল্লা এসেছিল এক বন্ধুর বাসায় এখন ঢাকায় যাচ্ছে। ঢাকা যেতে বেশি সময় লাগে না, তিন চার ঘন্টা। টিকেট কেটেছে, ২:০০ টার। বাস আসলে বাসে গিয়ে বসলো। জানলার পাশেই সিট, এখন ভালো লাগছে, কুমিল্লার রাস্তা সুন্দর, গাছে গাছে ফুল।

একটা মেয়ে হঠাৎ পাশে এসে দাঁড়ালো, “এক্সকিউজ মি! এটা সিট নাম্বার বি-০১, আপনি বসেছেন কেন? এটা আমার সিট।

অরণ্য ফিরে তাকালো স্নিগ্ধ চেহারার একটা মেয়ে, তবে এখন মুখে রাগ মৃদু হাঁপাচ্ছে।

অরণ্য গলা খাকাড়ি দিল, “ ম্যাডাম কোথাও ভুল হচ্ছে, এটা আমার সিট।”

লাবণ্য গলা চড়িয়ে, “কী বলছেন! বি-০১ আমার সিট। এই দেখুন টিকিট!”

অরণ্য একটু একটু বিরক্ত হয়ে তাকায়, আমিও দেখাই… এই যে দেখেন, বলে নিজের টিকেট বের করে দেখায়, “আমারও বি-০১! আপনার টিকিটটা দেখি তো ভাল করে?”

লাবণ্য ভ্রুঁ কুঁচকে, “এই যে! ঢাকা গামী বাস, বি১০…ভাল করে দেখুন, বলে নিজের টিকেট নাড়ায়, ঠিক আছে? কিসের এত সন্দেহ আপনার?আমি কি কানা না অন্ধ?”

অরণ্য মনে মনে বিরক্ত হয় ঝগড়াটে মেয়েরে বাবা! এবার উঠে দাঁড়ালো, লাবণ্যর টিকেট ভালো করে দেখলো। তারপর হেসে ফেললো টিকিটের সময় দেখে, “আহা, ইশ! আপনার টিকিটে তো ১:০০ লেখা। এইটা তো ২:০০এর বাস!”

লাবণ্য চোখ কুঁচকে, “কী বলছেন! ইন্না লিল্লাহ, মনে মনে নিজেকে লাত্থি দেয়, কি আড্ডা দিল? আর টিকেটের সময় ও খেয়াল করবে না? “ওহ! মানে আমি… মানে… আমি ভুল বাসে উঠেছি?” অপ্রস্তুত হয়ে কথাই হারিয়ে গেল।

অরণ্য হাসতে, হাসতে, “জ্বী ম্যাডাম,আপনি টাইম ট্রাভেল করে ফেলেছেন।”

লাবণ্য বিরক্ত হয়ে ধুর! একটা টিকিট ঠিকমতো মিলানো গেল না…অদ্রি ফাজিল ভুল বললো,ভুল সময়ের টিকেট নিল।এখন?

কন্ডাক্টর ততক্ষণে এসে গেল, “ কি সমস্যা? দেখি কি করা যায়!”

অরণ্য ফিচেল হাসে, তেমন কিছু না এই ম্যাডাম টাইম মেশিনে উঠে পড়ছে।

লাবণ্য চোখ রাঙিয়ে, হাসবেন না! আমি আসলে… মানে একটু তাড়াহুড়া ছিল…ভুল সময়ের বাসে উঠেছি, অসহায় হয়ে কাঁধ ঝাকায়, “ এখন কি কোন টিকেট পাব? আর আপনারা আমাকে ফোন করবেন না?! যাত্রী রেখে বাস ছেড়ে দিল!”

কন্ডাক্টর গাল চুলকে বলল, এমন তো হবার কথা না আপু, ফোনটা একটু বের করে দেখেন তো।” তারপর ঘাড় কাত করে কি যেন ভাবল “আচ্ছা আপু, এক কাজ করেন, খালি সিট আছে পেছনে, আপনে চাইলেই বসতে পারেন। ভাড়া দিতে হবে এখন টিকেট দিচ্ছি।”

ফোন বের করে দেখে ফোন বন্ধ। লাবণ্য একটু মিয়্রমান হয়ে গেল, ঠোঁট কামড়ে ভাবে, পেছনে যেই ঝাঁকি, “আচ্ছা দিন, তারপর অরণ্যের দিকে বিষ দৃষ্টি দিয়ে, “আর আপনি এত কথা বলেন কেন?”

অরণ্য হেসে ফেললো, “কারণ আপনিও বলেন।”

বাস চলতে শুরু করে, পেছনে বসে লাবণ্য, জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। অরণ্য মাঝে মাঝে পেছনে তাকিয়ে মুচকি হাসছে, কি ঝগড়াটে মেয়ে ভাবছে। আর লাবণ্য ভাবছিলো হ্যান্ডসাম আছে, তবে বেয়াদব খুব।

বাস চলছে, দুপুরের রোদ জানালায় ধাক্কা খাচ্ছে। চারদিকে সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু লাবণ্য পেছনের খালি সিটে বসে আছে, মুখে গোমড়া ভাব। বাসে ওর কষ্ট হয় তার উপর পেছনের সিট। কুমিল্লায় খালার বাসায় এসেছিলো, খালাতো ভাই টিকেট করে এনেছে, ও দিনে একাই যাতায়াত করে।অভ্যাস আছে। হঠাৎ বাসের মাঝপথে, একটা ছোট ঝাঁকুনি খায়। হালকা চিৎকার বাসে ছড়িয়ে পড়ে।

অরণ্য চমকে যায়,পেছনে ঘুরে, “ম্যাডাম ঠিক আছেন? পড়ে গেলেন না তো?”

লাবণ্য রাগ চেপে, “আমি ঠিক আছি। আপনি সামনের দিকে তাকালেই ভালো করবেন।”

খানিক বাদে, এরমাঝে একজন ছেলে ওর পাশে বসলো। লাবণ্যর অস্বস্তি হচ্ছিলো, তক্ষুনি অরণ্যের কন্ঠ কানে এলো, “আমি এই সিটে বসছি আপনি আমার সিটে আন্টির পাশে বসুন।”

লাবণ্য সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো, “ ধন্যবাদ।”

অরণ্য মুচকি হেসে, “আরে! আপনি না হলে বাসযাত্রাটা একঘেয়ে লাগত।ধন্যবাদ আপনাকে।”

লাবণ্য মনে মনে ভাবে, যেন বাস নয় কোন যুদ্ধক্ষেত্র। “আচ্ছা, এবার সত্যি বলুন,আপনি নাটক করেন নাকি?”

“আমি? আরেহ না! আমি তো বাস্তবের নায়ক।”

বাস তখন মেঘনায় উঠে এসেছে, লাবণ্য জানালার বাইরে তাকায়, মুখে হালকা হাসি, “ পুরাই পাগল।” বিরবির করলো।

বাস ঢাকার কাছাকাছি আসতেই ঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। লাবণ্য আতঙ্কিত হয়ে গেল, আল্লাহ ছাতাও নাই সাথে।

বাস নির্দিষ্ট জায়গায় থেমে গেল। সবাই হুড়োহুড়ি করে নামছে। লাবণ্য বসে আছে, ভীর পাতলা হলে নামবে। সবাই নেমে গেলে নামতে গিয়ে দেখে অরণ্য ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনে এসে ছাতাটা ওর মাথার উপর ধরলো।

“এত বড় একটা ব্যাগ সাথে, ছাতা আনেন নাই?”

লাবণ্য মুখ কুঁচকে নিল, “না।”

“সাব্বাশ, এখন?”

“আপনার এত কি সমস্যা? ভিজেই যাব।”

“আমার ছাতাটা রাখুন, আমিই ভিজে যাই।
আপনারা জন্য ভেজাটা আজ স্থগিত থাকুক।”

“আরে না…” লাবণ্য অবশ্য ভিজতে খুব অস্বস্তি বোধ করছিল। সাদা সালোয়ার পরনে তাই।

“ রাখুন!” ছাতাটা এক প্রকার জোর করে ধরিয়ে দিয়ে অরণ্য দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। সেদিক তাকিয়ে লাবণ্য ফিসফিস করলো, “ ধন্যবাদ, অচেনা মানুষ।”
____________________

অরণ্য সেদিন ভিজে ভিজেই হলে আসলো। অন্য রকম ভালো লাগছিলো। বৃষ্টি স্নাত বুয়েট ক্যাম্পাস খুব সুন্দর।শুক্রবার ক্লাস নেই। এখনো বৃষ্টি আছে। হলের সামনের গাছগুলো ভিজে জুবজুবে। হলের টানা বারান্দায় কাপড়গুলো কেউ বারান্দার রাখা একটা বেঞ্চিতে ফেলে রেখেছে। খোলা জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কেউ চিত হয়ে কেউ উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে, কেউ বা পড়াশোনা করছে। নিজের রুমের কাছাকাছি যেতেই বন্ধু আর রুমমেট তূর্যর গলা ভেসে আসলো,

“চল ছাদে যাই সবাই ফুটবল খেলছে।”

অরণ্য ব্যাগ কোনমতে রেখেই দে দৌড়।

সেদিন রাতেই দুই বন্ধুর কাঁপিয়ে জ্বর আসলো। পাশের রুমের রাফি বেশ বিরক্ত হয়ে গেল। ওদের জন্য চা বানিয়েছে।

“দুইটাই পাগল, কি প্রয়োজন ছিল বৃষ্টিতে এত ভেজার? পরিক্ষা না কয়দিন পর? পড়াটাই মাটি।”

অরণ্য হাসলো, “আমি তো ভিজেই ছিলাম।”

“আমার ছাতাটা না নিয়ে গেলি, তবুও ভিজলি কেন রে?” তূর্য বললো, এখন জ্বর একটু কম এক মগ র চা খাচ্ছে, এক কোনে স্টোভ তাতেই রাফি করে দিয়েছে।

অরণ্য ও চায়ে চুমুক দিল, দুই বন্ধুকে সব খুলে বললো। “ ছাতিটা দিয়ে দিলাম আরকি!” কাধ ঝাকালো।

“নাম কি মেয়ের?” চোখ সরু করলো রাফি, দেখতে সুন্দর ছেলেটা তবে বেশি রোগা।

“জানি না।” বোকা হাসি দিল অরণ্য।

“যা বাবা, ছাতা দিয়ে দিলি? নামটাও জানিস না! এখন পাবি কিভাবে?” তুর্য কপাল কুঁচকে নিল, “শালা, কোন ছেলে হলে তো দিতি না।”

“না দিতাম না!” সরল স্বীকারোক্তি অরণ্যর। “তোর ছাতি আমি কিনে দিবো নে।” মুচকি হাসলো।

“লাগবে না।” মুখ বাঁকালো তুর্য “খালি তোর হ্যাংলামি টা দেখলাম! সুন্দরী মেয়ে দেখলা আর ছাতিটা দিয়ে দিলা।”

“আরে দূর। তেমন কিছু না।” কিন্তু লাবণ্যর মুখটা মনে করে ভালো লাগলো অরণ্যর। আপনা আপনি গুন গুন করলো, “ আমি তার ঠিকানা রাখিনি…ছবিও আঁকিনি…

রাফি আর তুর্য হেসে উঠলো। রাফি সুর করেই বললো, “ কিন্তু ছাতার সাথে মন ফ্রি দিয়ে দিয়েছি।”

অরণ্য হেসে রাফির পিঠে থাপ্পর মারলো। তারপর তিন বন্ধু কিছুক্ষণ খুনসুটি করলো খানিক। বারান্দায় তখনও কিছু ছেলের গলা পাওয়া যাচ্ছে। হলের জীবন অন্য রকম, এটা শুধু একটা থাকার জায়গা নয়,এই জীবনটা যেন জীবনের এক অন্য পাঠশালা।

___________________

এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে।
লাবণ্য অবশ্য ছাতাটা ব্যাগেই রাখে, কখনো দেখা হলে ফেরত দেবে, এই ভাবনায়।
মাঝে মাঝে পাগলাটে বাঁচাল ছেলেটার মুখ মনে পড়লে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে।
সেই হাসির ভাগিদার হয় মামাতো বোন আশা। ওর মামারা চিটাগাং থাকে। কথা হয় প্রায়ই, ভিডিও কলে।

একদিনের কথা—
মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে চেহারাখানা ভুতের মত করে রেখেছে আশা, কথার মাঝেই হঠাৎ প্রশ্ন,

“আচ্ছা ছাতাওয়ালার নামটাও জানিস না?”

লাবণ্য একটু হাসল, গালে হাত দিয়ে ভ্রুঁ নাচায় বলে

“না!”

“এখন তাহলে কি করবি?”

“মানে?”

“আগাবি কিভাবে?”

লাবণ্য চোখ ঘুরিয়ে বলল,
“কই আগাবো?”

“ভদ্রলোকের জীবনে, সুর করে গায়… যদি বউ সাজো গো…”

দুজনেই ফোনের এপাশ-ওপাশে হেসে কুটিকুটি।

লাবণ্য কাত হয়ে হেসে বলল,
“তোর কল্পনার গরু গাছে উঠে গাছ ভেঙে নিচে পড়ার উপক্রম!”

“তাও ভালো,” আশা চোখ টিপে বলল, “কেউ তো প্রেমে পড়ে একটু উস্টা খাইছে…”

লাবণ্য তখন দুই লাইন গায়,

“প্রেমে পড়া বারন… কারনে অকারন… !”

আশা একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে ,

“আহা! কী গান ! বুঝলাম তুই সিরিয়াস! ছাতার ছেলেটা…”

“চুপ কর!” ফোনটা এক পাশে রেখে দেয়, স্ক্রিনে ছাদ দেখা যায় তখন।

মোবাইলের ভেতর থেকে আশার
টিটকারি—
“আহ! কি ঢং…. তুমি তো প্রেমে পড় নি প্রেম তোমার উপর পরেছে..!

লাবণ্য আজ সেই সকালে উঠেছে কারন আজ ওর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরিক্ষা আছে। নাকে মুখে নাস্তা করছে।

“আস্তে খাও মা৷” ওর বাবা জামাল সাহেব বলে উঠলেন।

“বাবা, ঢাকার রাস্তাকে একদম বিশ্বাস করি না। আগে আগে রওনা দিতে চাই।”

“সেটা পুরোপুরি ঠিক কিন্তু যদি খাবার গলায় উঠে গেলে সেটাও একটা বিপদ। আমি কি যাবো তোমার সাথে?”

“আরেহ না…আমি বড় হয়েছি না।” হাসে লাবণ্য বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে বড্ড আদরের।

“এই এই.. লাবণ্য এই ডিম শেষ না করে উঠবি না একদম।” ওর মা পাশ থেকে ধমক লাগিয়ে দিল।

“উফ মা পরিক্ষার দিনে কেউ ডিম খায়? তারপর আণ্ডা পাব শেষে।” দ্রুত পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ায়, মায়ের আঁচলে চটপট মুখ মুছে নেয়।

“এইসব কুসংস্কার তুই কবে মানিস?”

ব্যাগ কাধে তুলে দরজার দিকে যেতে যেতে, “ নিজ স্বার্থে মানুষ কত কি মানে। আচ্ছা যাই, আল্লাহ হাফেজ, দুয়া করবা, চিন্তা না।”

“ফি আমানিল্লাহ।”

সময় মত পৌঁছে গেল লাবণ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
লাবণ্য একা এসেছে, হাতে ছোট ব্যাগ, মুখে খানিক টেনশনের ছাপ হাতের কাগজে লেখা কেন্দ্র ‘আরসি মজুমদার আর্টস হল’, কিন্তু সে গিয়ে ঢুকে পড়ে ‘পলিটিক্যাল সায়েন্স’ ভবনে।

লাবণ্য ঠোঁট কামড়ে ভাবে এত্ত বড় ক্যাম্পাস! কার কাছে জিজ্ঞেস করব বুঝি না…চারিদিকে বেশ ভির। পুরো এলাকা ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভিড়ে সরগরম।

হঠাৎ ভিড়ের মাঝে পরিচিত একটা গলা শুনতে পেল যেন,
“আরেহ!আবার আপনি?”

লাবণ্য চমকে তাকাল, “আপনি! ও মাই গড… আপনিই সেই বাসের… বি-০১! দুনিয়াটা আসলেই ছোট।” এরপর আফসোস করে বললো, “ দূর আজ তো ব্যাগ আনি নাই, ছাতাটাও নেই তাই।”

“যাক আপনার ব্যাগে তাহলে আজকাল ছাতা থাকে!” ফিচেল হাসে।

লাবণ্য হেসে ফেলে, কিন্তু টেনশন ফিরে আসে
“দয়া করে হাসবেন না! আমি বোধহয় ভুল ভবনে চলে এসেছি…”

অরণ্য অবাক হয়ে যায়, “ আবার ভুল! এভাবে তো আপনি গিনেজ রেকর্ডে নিজের নাম লেখাবেন।”

লাবণ্য বিরবির করলো, “ হাতি গর্তে পড়লে বিড়াল ও লাথি মারে!”

“আমি বিড়ালের মত আদুরে এটা আমি জানি কিন্তু আপনি তাই বলে নিজেকে হাতি বলবেন?”

“উফ!” লাবণ্য এবার অস্থির।

অরণ্যর সঙ্গে থাকা খালাতো বোন, তটিনি বললো, “ভাইয়া, ওনাকে একটু সাহায্য কর না, নিয়ে যাও না ঠিক হলে। আমার কেন্দ্র তো সামনেই।”

অরণ্য লাবণ্যকে নিয়ে হাঁটছে, পথে পথে মানুষ, দৌড়ঝাঁপ।

অরণ্য বললো, “আপনি কি কুমিল্লায় থাকেন? বিজ্ঞান না মানবিক?”

“না ঢাকায় থাকি, কুমিল্লায় গিয়েছিলাম খালার বাসায়। বিজ্ঞানের ছাত্রী… আর আপনি?”

“আমি বুয়েটের ছাত্র, থার্ড ইয়ার, হলেই থাকি। কখনো খুব মজার মুড়ি ভর্তা খেতে মন চাইলে বুয়েট ক্যাম্পাসে এসে ফোন করবেন।”

“বু..য়ে..ট..”টেনে টেনে বলে লাবণ্য, “এজন্যই বুঝি এত অহংকার?”

“অহংকার!” চুলে হাত বুলায় অরন্য চোখের তারায় কৌতুক, “ তা হলে কি এত কথা বলতাম?”

অবশেষে ওরা পৌঁছে যায় ঠিক কেন্দ্রে,
লাবণ্য হালকা হাসে, ধন্যবাদ, “আপনি না থাকলে… পরীক্ষা মিস করতাম!”

অরণ্য হাসে, “আর আপনি না থাকলে… আমার ঢাবি সফরও সাদাকালো থেকে যেত। যাইহোক আমার নাম অরণ্য।”

গেটের সামনে দুজন মুখোমুখি,
“আমার নাম লাবণ্য।”

“স্বভাবের বণ্যতা বুঝি নামের জন্যই?” একদম নিরীহ প্রশ্ন অরণ্যর।

“আর আপনার মনের অরণ্যে কোন কোন জন্তুর বাস?”ততোধিক নিরীহ প্রশ্ন লাবণ্যর।

অরণ্য হাসে, “আরেকদিন বলব এখন পরিক্ষা দিতে যান, বেস্ট অফ লাক, ফি আমানিল্লাহ।”

লাবণ্য হালকা হেসে হাত নেড়ে বিদায় নেয়—ভিতরে ঢুকে যায় লাবণ্য।

চলবে…..