মনে রবে কিনা রবে আমাকে
কাজী জেবুন্নেসা
পর্ব -২
লাবণ্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে দিতে ভর্তা হয়ে যাচ্ছে। আর ব্যাগে উঁকি দেওয়া ছাতাটা বারবার অরণ্যকে মনে করাচ্ছে। পড়তে পড়তে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। চাঁদটা অনেক সুন্দর একটা নরম আলো। চাঁদের আলো মন উদাস করে। মোবাইল হাতে নেই। তাই চাঁদের আলো উপভোগ্য লাগছে বেশ। পাশে হঠাৎ বাবার উপস্থিতি টের পেল লাবণ্য।
“বাবা আমি যদি কোথাও চান্স না পাই?” লাবণ্যর মুখটা উদগ্রীব বাবার সান্ত্বনা বানি শুনতে।
মেয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে জাভেদ সাহেবের মন আদ্র হয়ে গেল কি স্নিগ্ধ চেহারা, ছোট বেলা থেকেই একটু অসুস্থ থাকে। “ প্রাইভেটে ভর্তি হবা! তুমি তোমার সেরাটা দিবা, মা।”
“বাবা সেই সেরা দিয়ে কি লাভ যা কাঙ্খিত ফলাফল না আনে?” বুয়েট, মেডিক্যাল কোথাও চান্স না পেয়ে হতাশ।
ওর একটা হাত নিজের মুঠিতে পুরে নিল ওর বাবা, “ নিজের সেরাটা দিবা সব সময়, শুধু পড়াশোনা না সব ক্ষেত্রে। এরপর ফলাফল নিয়ে আর ভাবার প্রয়োজন নেই। নিজের সাধ্যের সর্বোচ্চ করাই হল আসল কথা।”
“ বাবা তুমি এত সুন্দর করে কিভাবে বল? আমি…আমার খুব মন খারাপ লাগছে জানো? আমি প্রাইভেটে পড়তে চাই না।” চোখ তুলে বাবার দিকে তাকালো।
“আগে সব রেজাল্ট হোক এত চিন্তা কিসের?
“কাল ঢাবির “ ঘ” ইউনিটের রেজাল্ট দিবে,দুয়া কইরো বাবা।”
“ফি আমানিল্লাহ, এখন চল রাতের খাবার নিয়ে বসে আছে আমার বস আর তোমার মা।”
লাবণ্য ফিক করে হেসে ফেললো।
দুপুরের কড়া রোদটা বুয়েট ক্যাম্পাসের লাল ইটের ভবনগুলোয় পড়ে একরকম তীক্ষ্ণ আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। ক্লাস শেষ করে তূর্য আর অরণ্য ক্যাফেটেরিয়ার সামনে হাফ ওয়ালে বসে আছে। একটু পরেই ডাইনিং এ যাবে দুপুরের খাবার খেতে।
অরণ্যর ফোনটা বেজে উঠে , খালাতো বোন তটিনি,
“ আস সালামু আলাইকুম ভাইয়া আমি ‘ঘ’ ইউনিটে টিকে গেছি কিন্তু সিরিয়াল অনেক পেছনে।”
“ অলাইকুমুস সালাম, আরে ট্রিট দে…!” আরও খানিক কথার পর ফোন রেখে অরণ্য।এরপর প্রথমেই মনে হল লাবণ্য নামের মেয়েটা কি টিকেছে?”
ও ফোন রেখে একটা গানের কলি গুন গুন করে। পাশে বসে তূর্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ” সামনের উইকেই তো থার্ড ইয়ার ফাইনাল… এদিকে তন্দ্রা দেখা করতে মরিয়া, মনে হয় না বাঁচা যাবে।”
অরণ্য হালকা হাসে “তুই কোন জায়গার কোন বিদ্যাসাগর একদিন দেখা কর।আর এই হা হুতাশ তুই সব সেমিস্টারে করিস। শেষমেশ আবার CGPA তুলেও ফেলিস!”
তূর্য হাসে “সে তো ঠিক, কিন্তু এবার সাবজেক্টগুলো দেখ! মেশিন ডিজাইন, ফ্লুইড মেশিনস, হিট ট্রান্সফার লার্নিং একসাথে! মাথা গরম হয়ে যায় রে ভাই।”
অরণ্য সামনের দিকে তাকায়, “আমার অবস্থা আরও করুণ। এখনও মেশিন টুলস ডিজাইনের অ্যাসাইনমেন্টটাই শেষ হয়নি।”
তূর্য হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে “এখন বুঝি কেন সিনিয়ররা বলে থার্ড ইয়ার মানেই ‘জীবন শেষ’। জীবন টাই শালা ত্যানা ত্যানা।”.
অরণ্য হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায়, চোখ যায় আকাশের দিকে কি রোদ।
“এই অরণ্য কি ভাবিস? চল, খেতে যাই কতক্ষণ ধরে বসে আছি, পেটে হাতি ঘোড়া ছুটছে। দুপুরে ডাইনিং এর আলুভর্তা আর পাতলা ডাল যদিও খেতে ইচ্ছে করে না, কিন্তু খালি পেটে তো আর পড়া হবে না।”
“তুই না আবার তন্দ্রার সাথে দেখা করতে যাবি?” ভ্রুঁ নাচায় অরণ্য।
“হুম আগে খেয়ে নেই৷ তোর ব্লু টি-শার্ট টা ধার দিস আজ। তুই ভালো আছিস, বিয়ে ঠিক এসব প্যারা নাই।” বলে হাটা দিল সামনে।
অরণ্য হাসে, বিয়ে ঠিক! পা দিয়ে কয়েকটা নুড়ি পাথড় লাত্থি মারলো।নিজের বোনের ননদ রূপার মুখটা মনে করার চেষ্টা করে…. ঠিক তক্ষুণি একটা কন্ঠঃস্বর,
“এক্সকিউজ মি, অরণ্য!”
ফিরে তাকাতেই দেখে লাবণ্য প্রচন্ড রোদে কপাল কুঁচকে রেখেছে।
“আরেহ! আপনি? আপনার কথাই আজ মনে করছিলাম।” কপালের উপর হাত রেখে রোদ আড়াল করলো। লাবণ্য একটা মেরুন থ্রি-পিস পরে এসেছে ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা।
লাবণ্য ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করল, “ এই নিন! নিশ্চয়ই ভাবছিলেন মেয়েটা ছাতা তো দিল না।”
“বুঝে ফেলেছেন! বাহ! আপনার সিক্সথ সেন্স তো খুব কড়া। কিন্তু বুদ্ধি একটু কম, ছাতাটা মাথায় দিয়ে আসলেই তো রোদে কষ্ট পেতেন না।”
ঝট করে অরণ্যের চোখে চোখ রাখলো লাবণ্য, “কি সমস্যা আপনার? সব সময় খালি ঝগড়াঝাটি করার মুডে থাকেন।”
“আচ্ছা সরি, টিকেছেন?”
“কই?”প্রশ্ন করেই বুঝল কিসের কথা জিজ্ঞেস করেছে, “ হু! কিন্তু খুব পেছনে সিরিয়াল।”
“আল্লাহ ভরসা, ক্যাম্পাস ঘুরে দেখবেন? আচ্ছা এত বড় ক্যাম্পাস খুজে পেলেন কিভাবে? কালো জাদু জানেন?”
“উহু! তটিনির সাথেই ছিলাম, আপনার খালাতো বোন। রেজাল্ট দেখতে গিয়েই দেখা। আমি কিন্তু ছাতাটা ওকেই দিতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু নিলই না। সেই বলল এখানে পাব।”
অরণ্য মাথা ঝাকালো, ” খুব ভালো করেছে ছাতাটা না নিয়ে! আপনার মুড়ি ভর্তা খাবার দাওয়াত ছিল৷ খাবেন?”
“ আপনারা ভাই বোন সব আজব কিসিমের। আজ কিছুই খাব না, যেই রোদ। এখন আমি আসি।”
“আচ্ছা।”
লাবণ্যর যাওয়া চুপচাপ দেখল অরণ্য তারপর ছাতা হাতে ডাইনিং এ রওনা দিল।
__________________
অনেক রাত,নীরবতা ঘিরে রেখেছে যেন পুরো হল চত্বর। দূরে কোথাও ছন্নছাড়া কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। হলের টানা বারান্দা ছাপিয়ে প্রতিটি ঘরের আলো দূর থেকেই দৃষ্টি গোচরে আসে। অরণ্যদের ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো আসছে..ঘরের লাইটের আলোর জন্য ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দুই বন্ধু পাশাপাশি বসে আছে একটি টেবিলে, পড়ছে। সিলিং ফ্যানটা ধীরে ধীরে ঘুরছে, বাতাস আছে তবুও কেমন একটা গা জ্বালা করা গরম যেন।
টেবিলজুড়ে ছড়ানো আছে খাতাপত্র, ক্যালকুলেটর, আরও অনেক কিছু। অরণ্য অগোছালো খামখেয়ালী, তূর্য খুব গুছিয়ে গুছিয়ে পড়ে। তবে আজ তূর্যের মন কিঞ্চিৎ খারাপ। সেই মন খারাপ ছাপিয়ে চোখের মোটা ফ্রেমের চশমা ভেদ করে সে গভীর মনোযোগে একটা মেশিন ডিজাইন করছে। অরণ্য টেবিলের অন্য পাশে একটি বই হাতে নিয়ে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। পরীক্ষা কাছাকাছি, তাই পড়াশোনার গতি বেড়ে গেছে দুজনের।
হঠাৎ পড়া থামিয়ে অরণ্য তূর্যের দিকে তাকায়, “ কি হয়েছে আমাকে বলবি?”
তূর্য মুখ না তুলেই প্রতিউত্তর দেয়, “ কি হবে?”
“আজ তন্দ্রার সাথে দেখা করে আসার পর থেকেই তোর কোন কিছুই আমার স্বাভাবিক লাগছে না।” কথা শেষ করে অরণ্য উঠে দাঁড়ালো, আড়মোড়া ভাঙলো তারপরে তূর্যের সামনে গিয়ে, ওর কাঁধে হাত রাখল।
“ অনেক রাত হয়েছে, চল বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই, আজ সম্ভবত পুর্নিমা।”
দুই বন্ধু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, একদম শেষ মাথার দিকে। অরণ্য তূর্যের দিকে তাকালো, চশমা পরা, লম্বা, স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো, তূর্যকে অন্তত এড়িয়ে যাওয়া এত সহজ না। “ কি হয়েছে ঝগড়া?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ঠোঁট কামড়ে বললো, “আচ্ছা অরণ্য বলতে পারিস আমার ভবিষ্যৎ কি? আমি রংপুর শহরের একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, আমার বাবা টুকটাক ব্যবসা করতো। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তারাও যে খুব আহামরি দিন কাটাচ্ছে তা নয়। বড় দুই ভাই, একজন একটা সরকারি চাকরি করে। আরেকজন ব্যবসা। আমি ছোট ছিলাম, কিভাবে জানি পড়াশোনাটায় ভালো করে ফেলেছিলাম। তাই পরিবার আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকলো। এসএসসি পরীক্ষার পর, বড় দুই ভাই আমাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিল। চান্স পেয়ে গেলাম ঢাকা কলেজে এরপর বুয়েটে।” থামলো তূর্য, “ সেই আমি প্রেম ভালোবাসার মত ফালতু জিনিসেই জড়িয়ে গেলাম।”
অরণ্য চাঁদের আলোতে বন্ধুর দিকে তাকালো। মুখে স্পষ্ট কষ্টের ছাপ। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের গল্প অরণ্যর চেয়ে ভালো আর কে জানে? “কানেকশন বুঝলাম না দোস্ত, কি দিয়ে কি বলছিস?”
“আজ আমি তন্দ্রার চোখে লোভ দেখেছি, উন্নত জীবনের হাতছানি।”
“মানে?” বিভ্রান্ত অরণ্য।
“অরণ্য তুই তো জানিস, আমি তন্দ্রাকে কতবার এড়িয়ে গেছি। আমার সাথে ওর সম্পর্কটা ওর কারণেই হয়েছে। মিথ্যা বলবো না ওকে আমার ভালো লাগে, ওর বোন তমাকে পড়াতে যেতাম, কিন্তু অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করতাম ওর জন্য।”
“বাল! এত কথা না বলে আসল কথা বল।” খিস্তি করলো অরণ্য।
“তন্দ্রার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। বিরাট অবস্থা।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তূর্য চশমাটা খুললো।
“তো? মেয়ে বড় হলে বিয়ের সম্বন্ধ আসে।!”
“তুই বুঝতেছিস না, তন্দ্রা বিয়েটা করতে চাচ্ছে, সে আমাকে সরাসরি কিছু বলেনি। ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছে। এতদিন অপেক্ষা কিভাবে করবে? এবং কথাগুলো বলার সময় ওর কন্ঠে কোন আফসোস ছিল না। ওর চোখে আমি আমেরিকা যাবার লোভ স্পষ্ট দেখেছি।”
অরণ্য তাকানো তূর্যর দিকে, ছেলেটার চোখে জলের উপস্থিতি। মনের ভিতরটা তিতা হয়ে গেল অরণ্যর।তূর্যকে একা থাকতে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। জানলার সাথে লাগোয়া, নিজের বিছানায় শুয়ে মাথা নিচে হাত দিয়ে আকাশের চাঁদ দেখতে লাগলো।
অরণ্য জীবনের গল্প তূর্যের মতো, যশোর জেলার একটা গ্রামে জন্ম অরন্যর। বাপ দাদারা কৃষক। ওর বড় ভাই ও কৃষি কাজ করে। ইদানিং ওর বড় ভাই মাছ চাষ শুরু করেছেন। অরণ্যরা দুই ভাই এক বোন, ও সবার ছোট। ছোট না বেশ ছোট, বলা যায় বাবা-মায়ের শেষ বয়সের সন্তান। ওর বোনের ছেলে আর ও প্রায় সমবয়সী। ওর বোন দেখতে অনেক সুন্দর ছিল, তাই প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। গ্রামের মেয়ে স্বামীর হাত ধরে প্রবাসে চলে যায়। ওদের মধ্যবিত্ত পরিবারে ওর বোনই হয়ে ওঠে যেন রাজরানী।
এদিকে অরণ্য পড়াশোনা ভালো ছিল, তাই এস এস সি পরিক্ষার পর অরণ্য নিজেও পাড়ি জমায় ঢাকায়। অরন্যর পড়াশোনার প্রতিটি ক্ষেত্রে ওর বোনের অনেক অবদান রয়েছে। ইটালি প্রবাসী বোন ওর পড়াশুনা খরচ অনেকদিন জুগিয়েছে। মায়ের মুখটা মনে হল অরণ্যর, মা নেই আজ বছর দুই, বাবা মারা গিয়েছে তারও তিন বছর আগে। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের । ওর গার্জিয়ান বলতে এখন ওর বোন। ওর বড় ভাই মানুষ ভালো, কিন্তু নিজের কৃষিকাজ, মাছ চাষ আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত। তূর্যর মত অরণ্যর পিছুটান নেই, কিন্তু আছে বোনের কিছু ঋনের বোঝা। দরজার শব্দ হলো অরণ্যর ভাবনার সুতো কেটে গেল।
তূর্য ধীর পায়ে প্রবেশ করলো। ওর সাথে সিগারেটের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অরণ্য বিরক্ত হলো, সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিল তূর্য। মুখটা শক্ত হলো, তন্দ্রাকে ছাড়বে না, খালি তূর্য পরীক্ষাটা ঠিকঠাক মতো শেষ করুন।
_____________________
রাতটা অনেক সুন্দর, মোবাইলটা পাশে নামিয়ে রাখলো লাবণ্য। অযথা বসে বসে কিছু রিলস দেখছিল। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, লাবণ্য দেখতে মোটামুটি, এটা ওর মতামত। কিন্তু বাবা মায়ের চোখে অনেক সুন্দরী। ঠোঁট টিপে হাসলো, সেটা সব বাবা মায়ের চোখেই নিজের সন্তান সুন্দর। তবে লাবণ্য ইদানিং খুব রূপচর্চা শুরু করে দিয়েছে। ওর গায়ের রং হচ্ছে, বাদামি ফর্সা। মাথার চুল গুলো নিজেরই অনেক প্রিয়, এর জন্য মা বলে সব সময় চুল ঢেকে রাখতে। যন্ত্রণা! কাল নবীন বরণ অনুষ্ঠান, ওদের ব্যাচের সব মেয়েরা শাড়ি পরবে। বাবা এনে দিয়েছে নীল কাতান। এত সুন্দর। শাড়িটা নিজের উপর ধরল লাবণ্য। হঠাৎ মনে হল অরণ্য যেন বলছে, “ সবুজে কিন্তু আপনাকে বেশি ভালো লাগতো।” খানিক থমকে গেল লাবণ্য, মাথাটা ঝারা দিল। দূর! মাত্র তো ভর্তি হচ্ছি, কত হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম ছেলে দেখব। কি এক ঝগড়াটে ছেলের কথাই শুধু মনে হচ্ছে। সব দোষ আশার। এসব বলে, নিজেকে একটু বুঝ দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে আবার বসলো। ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে অরণ্য নাম দিয়ে সার্চ করতে লাগলো।
জাভেদ হাসান আর তার স্ত্রী রেহানা বেগম ও খুব খুশি। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা, কোথাও একটা চান্স পেয়েছে। যদিও সাবজেক্টটা তার মনঃপুত হয়নি। কিন্তু কিছু করার নেই এমন একগুয়ে মেয়ে প্রাইভেটেও পড়বে না।
“আমাদের মেয়েটা কিন্তু খুব বুঝদার তাই না?” পান গালে দিতে দিতে বললেন রেহানা বেগম।
“হ্যা, মায়ের মত না।” তীর্যক হাসলেন জাবেদ সাহেব।
“আমি কি করলাম?”
“এই যে পান খাচ্ছো, এটা কোন ভাল জিনিস।” তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, মেয়েটাকে আমরা সুন্দর মত বড় করতে পেরেছি। এখন একটা ভাল পাত্র দেখে দিয়ে দিতে পারলেই আমি দায়মুক্ত।”
“দায়মুক্ত কেমন কথা?” রাগ হয়ে গেলেন রেহানা বেগম। “ আমাদের মেয়ে এটা আমাদের দায়িত্ব।”
“আমাদের মেয়ে!” প্রতিধ্বনি করলে জাবেদ সাহেব।
“আমাদের মেয়ে নয়?” কন্ঠটা রুক্ষ হয়ে গেল, রেহানা বেগমের।
জাবেদ সাহেব মুখ খোলার আগেই, লাবণ্যর ঘর থেকে চিৎকার ভেসে আসতে লাগলো। দুজন দৌড়ে গেলেন, দেখলেন লাবণ্য থরথর করে কাঁপছে, আর বারান্দার দিকে দেখাচ্ছে, “আগুন!আগুন!
জাবেদ সাহেব ছুটে গেল দেখতে পেল, পাশের বাড়ির তিন তলা ছাদের উপরে কতগুলো ছেলে খুব সম্ভবত বারবিকিউ করছিল। সেখান থেকে ছাদের উপর আগুন লেগে গেছে। এখন আর আগের মতো তেজ নেই, টাংকির থেকে পানি নিয়ে আগুনে দেওয়া হচ্ছে। উনি দৌড়ে ঘরে আসলেন,
“ মা আমার আগুন নিভে গেছে!”
কিন্তু লাবণ্য ততক্ষণে চোখ উল্টে দিল, নিজের মায়ের হাতের উপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
“মেয়েটা কি কোনদিনই ছেলেবেলা সেই ঘটনা ভুলবে না?” আর্তনাদের মত কথাগুলো বের হয়ে আসলো রেহানা বেগমের মুখ থেকে।
“নিজের বাবা মাকে জীবন্ত পুড়তে দেখার স্মৃতি অনেক ভয়াবহ হয় রেহানা। ওর চোখেমুখে পানি দাও। ওকে আবার একজন সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাতে হবে। একজনের নাম পেয়েছি, খুব ভালো, ডা: রিয়াদ রহমান।”
#মনে_রবে_কিনা_রবে_আমাকে
#কাজী_জেবুন্নেসা