মনে রবে কিনা রবে আমাকে
কাজী জেবুন্নেসা
পর্ব-৭
দুই দিন পর সকালে, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খবরের কাগজ সবে হাতে নিয়েছে লাবণ্য। বাবা ছেলেবেলা থেকেই সঙ্গে সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস করিয়েছেন; দুটি পত্রিকা আসে প্রতিদিন, একটা ইংরেজি, একটা বাংলা। ঠিক তখনই ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো। ওপাশ থেকে জানানো হলো ওর একটা পার্সেল এসেছে, সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে যেন সংগ্রহ করে নেয়। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল লাবণ্য। কি ঝামেলা! কে যাবে কুরিয়ার অফিসে, যদিও কাছাকাছিই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজেই তৈরি হয়ে গেল।
কুরিয়ার অফিস থেকে পার্সেলটি সংগ্রহ করে অবাক হয়ে গেল লাবণ্য। এত বড় প্যাকেট! না, কোথাও কোনো ঠিকানা দেওয়া নেই। প্যাকেটটি নিয়ে বাড়ি এলো। দরজাটা খাদেমা খালা খুললো, ভাগ্যিস! সাবধানে ওর ঘরে চলে গেল লাবণ্য। মা দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। প্যাকেটটা খুলে ও প্রথমেই দেখে প্যাকেটের সমান আকারের একটি কার্ড। কার্ডটি খুব সুন্দর। একটি ছেলে ও মেয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে, ছেলেটি মেয়েটির মাথার উপর ছাতা ধরে আছে। কার্ডের ভিতরে সুন্দর করে লেখা,
“ভালবাসার বৃষ্টি, অথবা বৃষ্টিতে ভালবাসা
লাবণ্য, তুমি আমার হবে?
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে তুমি ছাতা নিতে ভুলে যাবে, আমি ছাতা এগিয়ে দিব। আমরা দুজন অনুভব করব পৃথিবীর প্রাচীন অথচ সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি। বলতে পারো সেটা কি?
আজ চলে এসো, বিকেলে ধানমন্ডি লেকে।
– তোমার অরণ্য”
প্যাকেটের ভেতর থেকে বের হলো সেই শাড়িটি।কিন্তু চুড়ি গুলো কই? লাবণ্য অবাক হয় না। ও যেন জানতোই অরণ্য ওর। লাবণ্য বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশে নানা রঙের মেলা। ঠিকই তো, বৃষ্টিতে ভালবাসা। অকারণেই ওর কান্না পায়। এই ভালোলাগার প্রতিটি মুহূর্ত ও উপভোগ করছে চোখের জলে, মুখের হাসিতে।
হঠাৎ বাবার উত্তেজিত গলা শুনতে পেল। ভেতরের দিকে তাকালো,কি ব্যাপার? বাবা আজকে অফিসে যায়নি! আজ লাবণ্যরও কোনো ক্লাস নেই। অস্থির পায়ে ডাইনিং রুমের দিকে গেল—কি হচ্ছে ব্যাপারটা?
বাবা ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছেন। ফোনটা রেখে মাকে ডাকতে লাগলেন,
“রেহানা! এই রেহানা…”
“কি হয়েছে, বাবা?” বাবার কাঁধ স্পর্শ করল লাবণ্য। “তুমি এত উত্তেজিত হয়ে কার সঙ্গে কথা বলছিলে? বসো, বসে পানি খাও। বয়স হয়েছে—এত উত্তেজনা ভালো না।” বলে বাবাকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিল।
ততক্ষণে লাবণ্যর মাও চলে এসেছেন,
“কি হয়েছে? ডাকছো কেন?”
“আরে ঘটনা শুনো… আমার যে কলিগ কামাল আছে না, ওর মেয়ে….”
বলতে বলতেই থেমে গেলেন, যেন কথা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারপর আবার বললেন,
“একটা ছেলেকে পছন্দ করে। যাই হোক, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছেলেটা নেশা করে। মেয়েকে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। আমাকে ফোন করেছিল। আমি ইচ্ছেমতো বকেছি। বলেছি, মেয়ে মানুষ করা শিখিনি! আশ্চর্য! মেয়েকে নাকি বুঝাতেই পারছে না।”
“আহা, মানুষের মেয়েকে তোমার এত বকাবকি করার কী দরকার ছিল? আজকালকার ছেলেমেয়েরা কি আর এত সহজে কথা শোনে? তুমিও না, বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ো।”
লাবণ্যর বাবা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আমার লাবণ্যও তো আজকালকার মেয়ে। ও কি কখনো আমার অবাধ্য হবে? আমি কেন উত্তেজিত হই, তুমি জানো… বহু আগের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায়। আচ্ছা বলো তো, আজকালকার ছেলে-মেয়েরা এত বোকা কেন?”
বাবা-মায়ের কথোপকথন শুনছিল লাবণ্যর মনে হচ্ছিল, সে যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে। বুকের ভিতর একটা কষ্টের ঢেউ উঠে এল। আজকে বিকেলে কিছুতেই যাওয়া যাবে না, আসলে কখনোই যাওয়া যাবে না। নিজেকে ধিক্কার দিল—তাহলে সেদিন অরণ্যকে না করতে পারল না কেন?
“কিরে মা, তুই কি ভাবছিস? ক্লাস নাই?”
হঠাৎ মাথার ওপর বাবার হাতের স্পর্শ অনুভব করল লাবণ্য।
“না, বাবা… ক্লাস নেই আজ।”
কোনোমতে কথাগুলো বলে নিজের রুমে চলে গেল।
বিকেলে লাবণ্য চুপচাপ শাড়িটা পড়ল, সুন্দর করে সাজগোজ করলো। তারপরে মোবাইলটা বন্ধ করে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশটা দেখতে লাগলো। আজ ও না গেলেই অরণ্য তার জবাব পেয়ে যাবে, শাড়িটা একদিন পরে দেখলো এটাও ফেরত দিয়ে দিবে। আশেপাশের কোন বাসা থেকে একটা গান ভেসে আসে..
“ছেলেবেলার দিন ফেলে এসে
সবাই আমার মত বড় হয়ে যায়
জানিনা কজনে আমার মতন
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়
আয় খুকু আয় খুকু আয়
আয়রে আমার পাশে আয় মামনি
এ হাতটা ভাল করে ধর এখনি
হারানো সেদিনে চল চলে যাই
ছোট্টবেলা তোর ফিরিয়ে আনি
আয় খুকু আয় খুকু আয় ।”
অনেক স্মৃতি উথাল পাথাল ঢেউ ওঠে ওর মনে, ওর নিজের বাবা ওকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পরে ওর বড় চাচা ওকে তার চেয়েও বেশি ভালোবেসেছে। এই গানটা ওকে নিয়ে শুনত, এই গানটা শেষ হবার পর ওকে প্রতিবার বলতো, “তুই কখন আমাকে ছেড়ে যাবি না।”
আর ওর মা রেগে যেত, “ মেয়েকে বুঝে ধরে রাখা যায়।”
লাবণ্য একটা অসম্ভব অদ্ভুত জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে একপাশে ওর বাবা.. আরেক পাশে অরণ্য। একজনের দিকে হাত বাড়ালে, আরেকজন ওর থেকে হাত ফিরিয়ে নেয়। দুজনকে কেন দুই হাত দিয়ে ধরে রাখা যায় না!আকাশ কালো হয়ে আছে, সাহসাই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। লাবণ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে, চোখের পানিতে ভাসতে ভাসতে ভাবল, যাক ভালো হয়েছে, এ প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টিতে অরণ্য নিশ্চই ওর জন্য অপেক্ষা করবে না।
সেদিন ঝড় বৃষ্টি অনেকক্ষণ চলে ছিল বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা। লাবণ্য ভুল ছিল, অরণ্য ও প্রতীক্ষায় ছিল রাত্রি নয়টা পর্যন্ত। তারপরে প্রচন্ড ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে হলে ফিরে যায়।
__________________
সেদিনের পর চারদিন কেটে গেছে, লাবণ্য নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে, ভার্সিটিতেও যায়নি। ফোনটা এক মুহূর্তের জন্য অন করে নাই। নিজেকে পাগল পাগল লাগে। বাবার সেই কলিগের মেয়ে পালিয়ে গেছে সেই ছেলের সাথেই। এটা নিয়ে বাবা খুব আপসেট। হঠাৎ দরজা ধাক্কাধাক্কি,
“লাবণ্য দরজা খুল দেখ কারা এসেছে?” মায়ের গলা শুনতে পায় লাবণ্য।
দরজা খুলে দেখে তটিনী আর রিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
“কি যে হয়েছে লাবণ্যর।” ওর মা হতাশ হয়ে মাথা দুইপাশে নাড়ে, “ তোমরা দেখতো মা, আমি নাস্তা আনছি দরজাটা লাগিও না।”
লাবণ্য চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে থাকে বিছানায়, এরা কেন এসেছে?
তটিনী ধপ করে ওর পাশে বসে পড়ে, “ আমি না কখনো ভাবি নি, মানুষ চিনতে এত ভুল করব।”
লাবণ অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকায়, কি বলতে চাইছে তটিনী।
ওর সেই চোখে চোখ রেখে ক্রুদ্ধ কণ্ঠে তটিনী বলে, “ আমার ভাইটা আজ তিনদিন বিছানায়, জ্বর যাচ্ছেই না সামনে তার পরিক্ষা। আমার ভাইয়ের বন্ধু আছে না তূর্য, তুই জানিস একটা মেয়ে উনাকে ধোঁকা দিয়েছে। নারী জাতির প্রতি ওরা এভাবেই বিরাগভাজন, তারপর তুই? কি বেইমানি টা করলি! আমার ভাইয়ের অপরাধ অযোগ্যতা না জেনে আজ আমি যাচ্ছি না।”
রিয়া একপাশে দাঁড়িয়ে উসখুস করছিল। এবার বলে ওঠে, “তোর থেকে এই থার্ড ক্লাস আচরণ আশা করিনি, লাবণ্য! তুই তো অন্যরকম ছিলি,বিশ্বাসযোগ্য, সৎ। তুই এরকম করলি! অন্তত যদি ভালো না লাগত, মুখ ফুটে বলে দিতে পারতি! একসাথে গিয়ে শাড়ি কিনলি, চুড়ি কিনলি, ঘোরাঘুরি করলি, … তারপর প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ছেলেটাকে একা ভিজতে ছেড়ে এলি? তুই… তুইও ওদের মতোই হয়ে গেলি, যাদের নিয়ে ছেলেরা ভয় পায় প্রেম করতে! খারাপ কথা বলে….”
লাবণ্য তখনো চুপ, কিন্তু চোখেমুখে অপরাধবোধের ছাপ।
তটিনী এবার আরও রূঢ় হয়, “তুই জানিস, সেদিন রাতে আমার ভাইকে ওর বন্ধুরাই হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। ডাক্তার বলেছে, টানা বৃষ্টিতে ভেজা আর মানসিক কোন ট্রমার কারণে শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সেখানেই রাফি ভাই আর তূর্য ভাই আমাদের সমস্তটা বলেছেন। ভাইয়াকে আমরা পরদিন ই আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি। আমার হাসিখুশি ভাইটা…..এদিকে তুই একবারও খোঁজ নিসনি! ফোনটা বন্ধ করে পালিয়ে থাকলি। এইটাই তুই? এইটাই তোর মানবতা?”
রিয়া এবার কিছুটা কাঁপা গলায় বলে, “লাবণ্য, অরণ্য ভাইয়া তোকে ভালোবাসত, আর তুই… তুই উনার সাথে এমন করলি কেন?”
লাবণ্য এবার ধীরে চোখ তুলে বলে, গলা কাঁপছে তার, “আমিও তো… উনাকে ভালোবাসি। আমি ভুল করেছি আমি সেটা স্বীকার করি, কিন্তু আমি উনাকে ধোঁকা দিইনি বা দিতে চাইনি। পরিস্থিতিটা…”
তটিনী ঠান্ডা গলায় বলে, “ তাহলে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা কর। আমি এরকম মানুষ ঘৃনা করি যারা মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলে।তুই এখন যা বলিস বল, কিন্তু একটা জিনিস বুঝে নিস,মানুষের অনুভূতি কোন ঠুনকো কিছু না। ”
লাবণ্য জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়, প্রতিটি মানুষ নিজের প্রতিটি কাজের জন্য একটা জবাবদিহিতা তৈরি করেই রাখে।প্রত্যেকেই চায় মানুষটা তাকে ভুল না বুঝুক, লাবণ্য ব্যতিক্রম নয়।
“আমি কখনো তোদের বলিনি, আমার বাবা মা মারা যান আমি যখন অনেক ছোট। আমার বড় চাচা এবং চাচি আমাকে বড় করেছেন, তারাই আমার বাবা-মা। আমার চাচা আমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু একটা ব্যাপার বরদাস্ত করতে পারেন না, তা হল ভালোবাসা, যেটা বিয়ের আগে হয়। এর পেছনে একটা মর্মান্তিক ঘটনা আছে, তাই আমি অরণ্যকে ভালোবেসেও সে ভালোবাসা স্বীকার করতে পারিনি। কারণ উনারা নিঃস্বার্থভাবে আমাকে আপন করে নিয়েছেন, বাবা মা না হয়েও, তার চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছেন। আমি চাইনা দিন শেষে তাদের মনে হোক, আমাকে এত ভালবেসে তারা ভুল করেছে।”
ঘরের মধ্যে চুপচাপ নিরবতা নেমে এলো, রিয়া মুখ খুলল, “ তোর দিকটা বুঝতে পারছি দোস্ত, কিন্তু তো অরণ্য ভাইয়ের দিকটাও দেখতে হবে। বিনা দোষে তুই কাউকে শাস্তি দিতে পারিস না। যেখানে সে দুই পা আগালে তুই নিজেই আরও দুই পা এগিয়ে গিয়েছিলি। উচিত ছিল নিজের আবেগের রাশ অনেক আগেই টেনে ধরা।”
তটিনী ধরা গলায় বলল, “ তোর শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, কোন ঋণ শোধ করতে গিয়ে, নিজেকে শেষ করে ফেলিস না। আমরা আসি।”
লাবণ্য দুই বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেদে ওঠে, “ প্লিজ এ কথাগুলো অরণ্যকে বলিস না। বলতে হলে আমি বলব!”
“কি হচ্ছে হ্যা! মেয়েরা কিসের কান্নাকাটি?” দরজার কাছে রেহানা বেগমের হাসি খুশি গলা ভেসে আসলো। তবে চোখের তারায় বিষণ্নতা। “নাস্তা কি এখানে খাবে না ডাইনিং এ আসবে…..
_________________
তূর্যদের পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি নেই, এই তো সপ্তাহ খানেক। তূর্য জোরেশোরে পড়াশোনা শুরু করেছে, অরণ্য এখন পুরোপুরি সুস্থ। সেও পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। আজ বুয়েটের সাব পোস্ট অফিসে গিয়েছিল তূর্য। কি আশ্চর্য ওর জন্য চিঠি এসেছে, বুয়েটে পড়ে এতদিন, বাড়ি থেকে ওর জন্য কেউ চিঠি লিখেনি। হ্যাঁ চিঠি আসে ছাত্রদের পার্সেল আসে।ওর কখনো আসেনি, প্রথম, প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। কিন্তু ওর নাম, রুম নাম্বার অন্যান্য সবকিছু মিলে গিয়েছিল। এমনকি মোবাইল নাম্বারটাও দেওয়া ছিল। প্রেরকের কোন ঠিকানা দেওয়া নেই। চিঠিটি ড্রয়ারে ফেলে রেখেছে, রহস্য রহস্য লাগছে। অনেক রাতে পড়া শেষ করে খামটি হাতে নিল।পাশে দৃষ্টি দিল, অরণ্য বেঘরে ঘুমাচ্ছে, তূর্য কিছুতেই অরণ্য আর লাবণ্য বিষয়টা ধরতে পারছে না। মেয়েটা এরকম কেন করল? তারপরে কাঁধ ঝাকালো , নারী জাতি আবার ভালো কবে। সবাই শেষ পর্যন্ত যেন তন্দ্রার আরেক রূপ।
খাম খুলতেই, ছোট্ট একটা কাগজ বের হয়ে আসলো। তাতে গোটা গোটা অক্ষরে কিছু লেখা।
“আস আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন? আপনার হৃদয়ের ক্ষত কি এখনো তাজা? আচ্ছা কোনটা সহজ বলুন তো, ভালোবেসে ভুলে যাওয়া? নাকি ঘৃণা করে মনে রাখা! একটু ভাবুন, যে আপনার ভালোবাসা পায়ে মাড়িয়ে গেল, আপনি তাকে হৃদয়ে এখনো জড়িয়ে আছেন। এটা কি ঘৃনা নাকি ভালোবাসা। আমি বলব হৃদয়ের বৈকল্য, মেরুদণ্ডের জোর না থাকা। পরিক্ষার জন্য শুভকামনা। ”
আমি কে? কেউ না তো!
চিঠিটা অন্তত কয়েকবার পড়ে ফেলল তূর্য। কে হতে পারে? এটা নিশ্চিত ওর বন্ধুদের কাজ। ওকে দূরে রাখতে চায়, সকল মন খারাপ থেকে। তাই এরকম পরামর্শ দিয়ে চিঠি দিয়েছে। একটা নোটবুক খুললো, তার ভেতরের একটা পেজে পিন করে চিঠিটা লাগিয়ে রাখল। যাক কেউ তো আছে, ওকে নিয়ে ভাবে! কথাটা সুন্দর! তন্দ্রাকে ও মনে কেন রেখেছে! ভালোবাসা এটা নাকি ঘৃনা?
অরণ্য এখন পুরোপুরি সুস্থ, ক্লাস পড়াশোনা সব করে দিনে শুরু করে দিয়েছে। সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা। তবে মনের ভিতর ক্ষতটা সেরকমই আছে। লাবণ্য প্রতিদিন ক্লাসে আসছে খবর পেয়েছে। ওর প্রতিদিন মন চায় যে মেয়েটার মুখোমুখি দাঁড়ায়, কিন্তু কোথাও কিছু একটা বাধা আসে। অপমান, অভিমান সবকিছু একটা মিশ্রণ। ও অনুভব করে একটা জবাব ওর প্রাপ্য। আজ ক্লাস শেষ করে, লাইব্রেরীর সামনে বসে আছে। হঠাৎ লাবণ্যর নাম্বারটা, স্ক্রিনে ভেসে উঠলো, নাম সেভ করা -”ঝগড়াটে মেয়ে।” স্থির দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল অরণ্য। ফোনটা উঠাচ্ছে না।
পাশ থেকে তূর্য উঁকি দিল, “ফোনটা ধরছিস না কেন?এমন কিছু সুন্দর রিংটোন না যে সবাইকে শোনাবি! ওরে বাব্বা তোর ম্যাডাম ফোন দিয়েছে ধর ধর।”
অরণ্য বিরক্ত হলো, উঠে সোজা গেটের দিকে রওনা দিল।
“আস সালামু আলাইকুম, আজ এতদিন পর?” অরন্যের কন্ঠটা রুক্ষ।
অরণ্যর কথা শুনে লাবণ্য থমকে গেল, অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলল, “ অলাইকুম আসসালাম, আপনার আজ একটু সময় হবে? আজ বিকেলে?”
“আমার জীবনের সমস্ত সময় যাকে দিবো ভাবলাম, সে সেটা প্রত্যাখ্যান করে আজ একটু সময়ের খোঁজে কেন?” ব্যাঙ্গাত্মক কন্ঠে প্রতিউত্তর দিল অরণ্য।
“সব কেন’র উত্তর তো ফোনে দিব না, প্লিজ আজ আমাকে অল্প একটু সময় ধার দেন।”
“মাফ চাইবেন বা সাফাই? শুনেন লাবণ্য আমি আপনাকে ভালোবেসেছিলাম বা হয়ত এখনো বাসি। আমি অন্য কিছু শুনতে ইচ্ছুক নই। ভালো থাকবেন।”
“না থাকবো না।”
“কেন?”.
“ উত্তরটা সাক্ষাৎ এ দিব। প্লিজ আজ দেখা করুন!”
অরণ্য আর এড়িয়ে গেল না, আজ হয়ত ওর জবাব পাওয়ার দিন।
চলবে….