মনে রবে কিনা রবে আমাক পর্ব-০৯

0
16

মনে রবে কিনা রবে আমাকে
কাজী জেবুন্নেসা

পর্ব ৯

ভালোবাসার শুরুতে সব কিছুই স্বপ্নের মতো থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভালোবাসার মত ব্যাধি আর নেই। সামনে পরীক্ষা, তবুও অরণ্য সেদিন বাসায় ফিরে গভীর রাতে হৃদয়ের আবেগের তোড়ে অসহ্য হয়ে ফোন করে লাবণ্যকে। এদিকে লাবণ্যও তো জেগেই আছে, কতবার ফোন হাতে নিয়েছে আর রেখেছে।

ফোন ধরে দুজনই চুপ। চুপচাপ একে অপরের উপস্থিতি আর নি:শ্বাস উপলব্ধি করছিলো শুধু। খানিক বাদে অরণ্য সম্বোধন করে,

“লাবণ্য!” অরণ্যের এই ডাকটা লাবণ্যের বুকে যেন ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ে।

“হু।” মৃদুস্বরে বলে লাবণ্য, খাটের ওপর শুয়ে আছে, দৃষ্টি ফ্যানের দিকে। তনু মনে একটা অন্য রকম শিহরণ, ভালো লাগা।

“ঘুমাওনি এখনো?”

“জি, ঘুমিয়ে গেছি, কথা হচ্ছে স্বপ্নে।” খিলখিল করে হেসে ফেলল লাবণ্য।

অরণ্যও হেসে ফেলল, “তুমি নিজে কিন্তু কম খোঁচা দাও না।”

“আপনার মতো না অবশ্য।” হাসে লাবণ্য।

“তুমি কবে বলবে? ‘আপনি’ শুনলে নিজেকে বয়স্ক বয়স্ক লাগে কেমন।”

“চেষ্টা করব…”

এরপর আরও হাজার রকমের কথা। এভাবেই আরও দুই দিন রাত জেগে চলে কথার আদানপ্রদান।

এক রাতে তূর্য পাশ থেকে বলে ওঠে, “এভাবে কথা বলতে থাকলে তুই তো এবার পরীক্ষায় ফেল করবি।” ওপার থেকে কথাটা লাবণ্য শুনতে পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে যায়, অরণ্য দ্রুত বারান্দায় চলে যায়।

“তূর্যটা একটু বেশি কথা বলে, কিছু মনে করো না!” কন্ঠে অনুনয়।

“না, আমার মনে হচ্ছে সে ঠিকই বলেছে। আমরা আসলেই বাড়াবাড়ি করছি। কাল থেকে তুমি আমাকে আর ফোন দেবে না, ঠিক আছে?”

“কিস্যু ঠিক নাই। তোমার সঙ্গে কথা না বললে তো আমি ঘুমাতে পারব না।”

“আরও ভালো, রাত জেগে পড়বে।” শব্দ করে হাসে লাবণ্য।

“তুমি থাকতে পারবে? তোমার কষ্ট হবে না?”

এই প্রশ্নে লাবণ্য একটু ম্রিয়মাণ হয়ে যায়, আসলেই তো, অভ্যাস হয়ে গেছে মাত্র অল্প দিনেই। কী ভীষণ একটা বিষয়! “হবে, অনেক বেশি হবে। কিন্তু এর চাইতেও তোমার স্বপ্ন পূরণ না হলে বেশি কষ্ট হবে। দেখ অরণ্য, এই শহরে তুমি এসেছ, একটা স্বপ্নের হাত ধরে। আমি চাই না আমার কারণে সে স্বপ্নটা ছুটে যাক। বরং আমি চাই, সেই স্বপ্নটা তুমি আমাকে নিয়ে মুঠিবদ্ধ করো।”

“এত সুন্দর করে বলার পরে তোমার কথা না শুনি কীভাবে? আই লাভ ইউ।”

লাবণ্য কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর অস্পষ্ট স্বরে বলে, “আই লাভ ইউ টু।”

এদিকে তূর্য নোটবুকটা টেনে নেয়, আরও একটা চিঠি এসেছে–

আসসালামু আলাইকুম তূর্য সাহেব,
কেমন আছেন? পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন! খুব ভালোভাবে পড়বেন, চোখে এবং মনে যেন কোনো তন্দ্রা স্পর্শ করতে না পারে। জানেন তো, আপনার উপর অনেকের অনেক আশা। এই নিঃসঙ্গ শহরে আপনি এসেছিলেন, আপনার আর নিজের পরিবারের একটা স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে। মাঝে একটু ভুল পথে পা দিয়ে ফেলেছেন, সেটা সমস্যা না। সমস্যা হল নিজের হৃদয়ের চিকিৎসা নিজে করতে না পারা। টিপস দিলাম, কাজে লাগাবেন। আমাকে খোঁজার প্রয়োজন নেই।
আমি কে? কেউ না তো!

চিঠিটা দুই-তিন বার পড়া হয়ে গেছে তূর্যর। কে হতে পারে?

তূর্যদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। পরীক্ষা তো নয় যেন একটা যুদ্ধ। সব ঠিক থাকলে বুয়েট থেকে পাশ করে বের হতে আরও দুই বছর লাগবে। তূর্য এখন রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে এরকম হাঁটে একা একা। চিঠিতে একজন লিখেছে ওর হৃদয়ের চিকিৎসা নাকি ওর হাতে। আসলেই কি তাই? এই যে শহরের রাস্তা, এই রাস্তা ধরে একদা তন্দ্রা আর ও রিকশায় করে ঘুরেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক ওর সামনে এসে দাঁড়ালো,
“বাবা, একটু টাকা দাও, সকাল থে না খাইয়া আছি, কিছু খামু!” অনুনয় করে।

হঠাৎ তূর্যের মনে হল, একটা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে হয়তো ওর মনের কষ্ট কমবে… এটাই ওর হৃদয়ের চিকিৎসা।

বৃদ্ধকে ভালো একটা হোটেলে খাইয়ে, প্রশান্ত মনে ফিরছে, এমন সময় একটা ফুল বিক্রেতা মেয়ে দৌড়ে তূর্যের সামনে আসল,
“ভাইয়া, এ ফুলগুলো আপনার জন্য… আর, চিঠিটাও।”

তূর্য চমকে গেল। ফুল আর চিঠি হাতে নিয়ে পিচ্চিটার হাতে ৫০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল,
“তোমাকে এগুলো যে দিয়েছে, সে কোথায়?”

নোটটা হাতে পেয়ে পিচ্চিটার চোখের তারায় আলো ফুটে উঠল। আঙুল দিয়ে একদিকে দেখালো,
“একটা আপু দিছে, সাদা জামা পরা।”

তূর্য দৌড় লাগাল। যে কোনো দৌড় প্রতিযোগিতায় এরকম দৌড় দিলে তূর্য প্রথম হয়ে যেত, নিশ্চিত। কিন্তু যতক্ষণে পৌঁছাল, দেখতে পেল সাদা সালোয়ার কামিজ পরা, মাথায় ওড়না দেওয়া একটা মেয়ে রিকশায় উঠে যাচ্ছে। এত দূর থেকে চেহারাটা বোঝা গেল না।

রুমে এসে দ্রুত চিঠিটা খুলল—

আসসালামু আলাইকুম তূর্য সাহেব,
আমার খুব খুশি লাগছে জানেন? আপনি কিন্তু বুঝে ফেলেছেন আপনার হৃদয়ের চিকিৎসা কী! আপনি একটা পথের নোংরা, বৃদ্ধ দরিদ্র মানুষকে মমতা নিয়ে একবেলা খাবার খাওয়ালেন—সেটার উসিলায় আল্লাহ আপনার অন্তরের প্রশান্তি দান করবেন। এরকম আরও উপলক্ষ খুঁজুন। জীবনের আনাচে-কানাচে এরকম প্রশান্তি আর সুখ লুকিয়ে আছে। কেন অযথা একটা ভুল সিদ্ধান্তের দায় বয়ে বেড়াবেন?
আমি কে? কেউ না তো!

তূর্যের যে কী ভালো লাগল চিঠিটা পড়ে! ঠিক তখনই মোবাইলটা বেজে উঠল। নাম্বারটা খুব পরিচিত, তবে ডিলিট করে দিয়েছিল, তাই নামটা উঠল না।

“আসসালামু আলাইকুম।” না চাইতেও ফোনটা ধরে ফেলল তূর্য, বুকের ভেতর কেমন কাঁপাকাঁপি। তাহলে কি হৃদয় চিকিৎসা বৃথা যাচ্ছে?

“ওয়ালাইকুমুস সালাম, তূর্য, আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই! প্লিজ, মানা করো না, একবার শুধু… প্লিজ!”

“কোথায় আসতে হবে?”

ফোনটা রেখে তূর্য ভাবছিল, কাজটা কি ঠিক হলো?

_______________________

অরণ্যের পরীক্ষা শেষ, আর লাবণ্যর গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারের পরীক্ষার এখনও এক দেড় মাস বাকি। সারাদিন পড়তে পড়তে লাবণ্য হাঁপিয়ে যাচ্ছে। ছেলেবেলা থেকে লাবণ্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে একটু দুর্বল। তবে আজ অরণ্যর সাথে অনেকদিন পর দেখা হবে। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিল। হঠাৎ পেছনে মায়ের প্রতিবিম্ব দেখে লজ্জা পেয়ে গেল।

“দিনে দিনে চেহারার এই হাল হচ্ছে কেন? খাওয়া দাওয়া না করলে এরকমই হবে।”

মাকে জড়িয়ে নেয় লাবণ্য, “মা তোমার সারা জীবনের এক আক্ষেপ আমি খাই না, আমি কিন্তু সব খাই।”

“হ্যাঁ, তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে? তাড়াতাড়ি আয়, নাস্তা খাবি।”

নাস্তার টেবিলে বাবা আর মেয়ের খুনসুটি চলে, সেদিক তাকিয়ে লাবণ্যর মা একটা দীর্ঘশ্বাস চাপেন। উনার অবস্থা দুই নৌকা তে পা দেওয়া মানুষের মত। আসন্ন ঝড় ঝাপ্টার কথা ভেবে প্রতিদিন শঙ্কিত হন।

আজ অরণ্য ক্যাম্পাসে আসবে। লাবণ্য একটা সুন্দর ড্রেস পড়ে নিল। কতদিন পর দেখা হবে। আজ আবহাওয়া একদম মেঘলা। বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূরো বারোটা বেজে গেছে, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, গরম, ঠান্ডা কিছুই ঠিক নেই।

সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ক্লাস অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে, টিএসসির সামনে দাঁড়িয়ে অরণ্যের অপেক্ষা করছে লাবণ্য। বিরবির করে বকছে। ব্যাগে ছাতা আছে। ইশ, আসছে না কেন? যে কোনো সময় ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে যাবে।হঠাৎ দেখে অরণ্য আসছে। কাছাকাছি আসতেই ঝাঝিয়ে উঠল,

“এটা আসার কোনো সময় হল? কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। সময়জ্ঞান আর কান্ডজ্ঞান কিছুই তো নেই দেখছি।” রেগে উঠে লাবণ্য।

“এই কী সমস্যা? এই মেয়েটা তো সবসময় অগ্নিকন্যা হয়ে বসে থাকে। আরে বৃষ্টি দেখে ভাবলাম আরও জোরে নামুক, দুজনে ইচ্ছামতো ভিজি।”

আসলে বন্ধুদের আড্ডায় ফেঁসে গিয়েছিল, এটা বললে কন্যার রাগ বাড়বে বৈ কমবে না।

“ইচ্ছামতো ভিজি। ঢং যত্তসব।” ভেংচি কাটল লাবণ্য।

সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল বৃষ্টি।

“খুব ভালো হয়েছে,” খুশির আমেজ ধরা পড়ল অরণ্যের কণ্ঠে। “হ্যালো প্রিন্সেস অব অরণ্যের হার্ট, আসুন আমরা আজ বৃষ্টি স্নান করি, অনেক ভিজি বৃষ্টির শুদ্ধ জলে।”

লাবণ্য খিলখিল করে হেসে উঠল। “আচ্ছা চলুন, লাবণ্যর রাজকুমার, আজ আমরা ভিজি।”

ঘণ্টা হিসেবে রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে লাবণ্য গুনগুন করে গান ধরল। “আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো, আমি তোমার সাথে।”
বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে করতে ওর মনে হল, এই তো জীবন। এই জীবনে আর বেশি চাওয়া নেই লাবণ্যর।

তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল নিজে ভিজলেও লাবণ্যর মাথায় ছাতা ধরে রাখলো, যেন পুরো কাকভেজা না হয়ে যায়।বৃষ্টির যে তোড় তাতে ভিজে যাচ্ছিলো এরপরেও। লাবণ্যর আবদারে আইসক্রিম ও কেনা হল। পাশে বসা আধ ভেজা প্রেয়সীর ভেজা চুল আর ত্বক অরণ্যকে ব্যাকুল করলো, ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,

“এই মুহূর্তটাকে আমি সারাজীবন পকেটে ভরে রাখতে চাই, যেন হারিয়ে না যায়।”

লাবণ্য তাকাল অরণ্যের চোখে, “ভবিষ্যতটা কেমন আমি জানি না। আমার বিভিন্ন ভয় কাজ করে মনে, আমি মানসিক ভাবেও সুস্থ না অরণ্য। তুমি পাশে থেক প্লিজ।”
অরণ্য তার ভেজা কাঁধে লাবণ্যের মাথা রাখল আচমকা। চারিদিকে বৃষ্টি, আর ভালোবাসার মৌনতা।

অরণ্য লাবণ্যর নির্ভরতাটুকু অনুভব করে,ধীরে বলল, “ তোমার ভয়গুলো আর মানসিক অস্থিরতা গুলো আমাকে দাও। দুইজন মিলেই তাদের সামলাই, তাদের সাথে যুদ্ধ করি।”

লাবণ্য একটু কেঁপে উঠে। মাথা তুলে বলে,
“তুমি এত ভালো কেন?”

অরণ্য হেসে ফেললো, “যাক ঝগড়াটে বদনাম ঘুঁচলো!আমি ভালো না লাবণ্য, তুমি পাশে আছ বলেই আমি ভালো। তোমার অস্তিত্ব ছাড়া আমার ভালো সত্তার কোন অস্তিত্ব নাই।”

“বাপ্রে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আজ পুরাই সাহিত্যিক।” হেসে উঠে লাবণ্য।

__________________

নির্দিষ্ট সময়ে তূর্য কফিশপে উপস্থিত হয়ে গেল। আজ অনেক বৃষ্টি হয়েছে, রেস্টুরেন্টের জানলায় জলের ফোটা।এই রেস্টুরেন্টে ও আর তন্দ্রা প্রায় আসতো…. অনেকদিন আগে…।

চেয়ার টেনে আগের পরিচিত কর্নারে বসে, যেখানে সব সময় বসতো। হঠাৎ চোখের সামনে এসে দাঁড়ালো তন্দ্রা। ঠিক আগের মতোই হাসিমুখে, আগের মতই সুন্দর কিন্তু তূর্যকে আজ এই মুখ আর মুগ্ধ করছে না। এ অন্যের স্ত্রী। দৃষ্টি ফেরায় তূর্য।

“এতদিন পরে হঠাৎ কেন?” স্বাভাবিক কন্ঠে বলার চেষ্টা করল তূর্য।

তন্দ্রা মুখ নামিয়ে বলল, “আমার বর চলে গেছে আজ এক মাস। তুমি জানো না এই এক মাস কতটা একা ফিল করছি…তোমাকেও মিস করছি খুব… বাধ্য হয়ে তোমাকে ডেকে আনলাম।

তূর্য চুপ করে শুনছিল, কিন্তু মনের ভেতর ছোটাছুটি করছিল একটা ক্রোধ, এসবের মানে কি?

“তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না?”

তন্দ্রা একটু হাসল, “ভালোবাসো এখনও? আমরা কিন্তু যোগাযোগটা, বন্ধুত্বটা রাখতে পারি..”

তূর্য উঠে দাঁড়াল, গলা ঠান্ডা কিন্তু চোখে আগুন,
“না পারি না, কারন আমরা কখনো বন্ধু ছিলাম না।এখন এই মুহুর্তে তোমার দরকার একটা আশ্রয়, আর সেটা আমি হব না। আমাকে তো ছুড়ে ফেলেছ অন্তত নিজের বরকে এভাবে চিট কর না।”

তন্দ্রা হতভম্ব, এমন তূর্যকে সে আগে কখনও দেখেনি। ভেবেছিলো রাজি হয়ে যাবে। মুখ অপমানে লাল হয়ে গেল, “ আমি কিছু সময় আর স্মৃতি চেয়েছিলাম শুধু, নিজেকে তুমি কি মনে কর? বুয়েটে পড়ছ, বের হবা চাকরি করবা তারপর না…. হাহ! আর আমার বর! তার এখনি কত বিত্ত। কিছুই তো নও তুমি।আমার একটু ডিপ্রেশন হচ্ছিলো তাই….!

“আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ জানো, আমি এতদিন হয়ত তোমাকে ঘৃনা হোক বা ভালোবাসার জন্য নিজ হৃদয়ে রেখেছিলাম। আজ তুমি নিজেই বের হয়ে গেলে।তোমার স্বামীর জন্য সমবেদনা,বেচারা অনেক সম্পদের মালিক হয়েও একদম দরিদ্র।

তূর্য বেরিয়ে এলো কফিশপ থেকে। বুকটা ধুকধুক করছিল, কিন্তু মনটা অদ্ভুত এক শান্তিতে ভরে গেল। ফোন বেজে উঠলো রাফি…..

সন্ধ্যাবেলা। মেসে ফিরে তূর্য গা এলিয়ে দিল বিছানায়। অরণ্য আর রাফি চা খাচ্ছে। হাসাহাসি করছে।

তূর্যের ফোন বেজে উঠলো কুরিয়ার কোম্পানি পাঠাও থেকে। দ্রুত নীচে গেল তূর্য, ফিরে এলো একটা খাম নিয়ে। মুখে বিভ্রান্তি।

“এই যে মি:তূর্য।” হাক লাগালো রাফি, “ আমরা একটা প্রেম করতে পারি না, তোর ব্রেক-আপ হতে না হতেই আরেকজন উপস্থিত।”

তূর্য বোকা চাহুনি দিল।

“সেই রহস্যময়ী নিশ্চিত।” হাসে অরণ্য।

তূর্য চিন্তিত মুখে খাম খোলে, কে হতে পারে? তন্দ্রা না তো!

আসসালামু আলাইকুম তূর্য সাহেব,
আজ আপনি এক বিশাল জয়ের মুখোমুখি হলেন। নিজের দুর্বলতার সামনে দাঁড়িয়ে তা প্রত্যাখ্যান করা ছোট কথা নয়।এখন বুঝতে পেরেছেন আপনার হৃদয়ে থাকার যোগ্য সে কি না?
তন্দ্রা যেটা আপনাকে দিতে পারেনি, সেটাই আপনি নিজেকে নিজে দিয়েছেন, সম্মান।
আপনার হৃদয়ের চিকিৎসা আপনি নিজেই শুরু করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
আমি পাশে থাকব, আড়াল থেকে। তবে আপনি চাইলে আড়াল ভেঙে যাবে।

আমি কে? কেউ না তো!

রাফির মোবাইলে তক্ষুনি একটা ম্যাসেজ আসে, “ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার পরিচিত ছেলেটিও ভালো অভিনয় করেছে পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসের।” রাফি আনমনে হাসে, তূর্যের জন্য সব করতে প্রস্তুত ও।মেয়েটা ভালো অসম্ভব ভালো, ওরা সুখি হোক।

তূর্য সেদিন রাতে ঘুমায় শান্তিতে, মাথা আর হৃদয়ে অনেক প্রশান্তি। সে জানে না কে সেই মেয়ে।
শুধু জানে, সে তূর্যকে চেনে, গভীরভাবে।

চলবে….