মন আকাশে তুই পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
20

#মন_আকাশে_তুই
#অন্তিম_পর্ব
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

একদম হুট করেই অহির বিয়ের ডেইট রাখা হলো। তার মা বাবা অবশ্য তাকে জিজ্ঞেস করেছে এই নিয়ে। অহির কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে সব যেন। হুট করেই তার সাদ ভাইয়ার আগমন, হুট করেই হৈমির বিয়েতে দেখা, তারপর হুট করেই বিয়ের প্রস্তাব এবং অবশেষে বিয়ে! অহির এই সুখ সুখ অনুভূতির মাঝেই সে টের পেল তার বিয়ে হতে আর মাত্র দুটো দিন বাকি। বাবা মা খুব ব্যস্ত তার বিয়ের আয়োজন নিয়ে৷ অথচ তার সুখ সুখ লাগছে। কোন ব্যস্ততা, অস্থিরতা কিচ্ছু কাজ করছে না। অহি বাইরে তাকায়৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়েছে। হৈমি, আবিদ, সাদিদ, অহন, অহিরা সবাই বের হবে আরো কিছু কেনাকাঁটা করতে। অহি তাই তৈরি হয়েছে লাল রংয়ের একটা শাড়ি পরেই। চুলগুলো খোলা রেখেছে ইচ্ছে করেই।চোখে গাঢ় কালো কাজল। প্রিয় পুরুষের সাথে যাবে বলেই বোধহয় অহি সময় নিয়ে আজ সাঁজগোজ করেছে। মায়ের থেকে আবদার করে শাড়ি পরেছে। অহি দীর্ঘ প্রতীক্ষা নিয়ে বারকয়েক জানালায় তাকিয়ে পরখ করে সে সময় দেখে। আসছে না কেন? সাদিদের সাথে তিনদিন হলো যোগাযোগ হয়নি তার আর। সেদিন যে বাইক থেকে নামিয়ে গেল ঐটুকুই! এছাড়াও বলতে গেলে সাদিদের সাথে তার ফোনে যোগাযোগই হয়নি এতগুলো দিনে। অথচ এই প্রথমবারের মতো তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল করা মানুষটা হলো সাদিদ।অহি ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে পুরুষটা বলল

“ জানালা দিয়ে কি দেখছিস ওভাবে? আশ্চর্য! নিচে আয়। ”

অহি কন্ঠটা আর কথার ধরণ শুনেই বুঝল মানুষটা কে। অহি আকস্মিক নিচে তাকাল। হৈমিকে দেখা যাচ্ছে পেছনের সিটে। সামনে অবশ্য গাড়ির ভেতরে দেখা গেল সাদিদ আবিদকেও। অহি তাকায়।ফোনে বলল,

” আসছি। ”

উত্তরটা দেওয়ামাত্রই অহন এল। হেসে হেসে বলল,

“তোর জামাইকে আমার পছন্দ হলো না রে আপু। এর থেকে ভালো হতো তাসিন ভাই-ই দুলাভাই হলে। কি একটা তারছেড়া বর খুঁজলি।বাইরে অপেক্ষা করছে৷ চল এখন। ”

অহি তাড়াহুড়োয় কল রাখে নি। ওপাশ থেকে সাদিদও স্পষ্ট শুনল কথাগুলো। অথচ অহির খেয়ালই নেই তা৷ অহি ভাই এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকাল। অহন সহ যেতে যেতে বলল,

“ কেন? কি করেছে উনি? ”

উত্তর করল,

“ সারাক্ষন রাগ নিয়ে থাকে এই ব্যাটা। তুই কিভাবে থাকবি? তাসিন ভাই তো কত সফট বল? তোর উচিত তাসিন ভাইকে বিয়ে করা।”

অহি ছোটশ্বাস ফেলল এবারে। যেতে যেতে অহনের মাথায় আলতো করে থাপ্পড় বসিয়ে বলল,

” তাসিন আমার ফ্রেন্ড জানিস না অহন? কিসব আবোল তাবোল বকে চলেছিস?”

“ ঐ ছেলে তোকে সুখে রাখবে না আমি একশো পার্সেন্ট শিওর! ”

“ তুই বেশি বুঝিস পাগল। ”

অতঃপর এটুকু বলে সে মায়ের কাছে গেল। বের হওয়ার বিষয়ে জানিয়ে ফের পা চালাল। ওখানে গিয়ে হাজির হতেই দেখল সাদিদ নেমে গিয়েছে। অহি ভ্রু কুঁচকে বলল,

“ নেমে পড়লেন কেন? ”

সাদিদ আলগোছে ভাব দেখিয়েই উত্তর করল,

“ যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তুই যাবি? ”

এটা কেমন কথা? অহির মা সকালেই বলেছে সাদিদ নাকি তাকে নিয়ে আরেকটু কেনাকাঁটা করবে। এইজন্য বের হবে। অথচ এখন বলছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না? অহি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

“ যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না মানে? আম্মু তো বলল আপনি সহই যাবেন বলেছিলেন। ”

সাদিদের মুখচোখে এবার কিছুটা রাগ ফুটে উঠে যেন। অথচ কথাতে সে রাগ না ফুটিয়েই সে বলল,

“ তোর উচিত ছিল তোর ফ্রেন্ডদের ডাকা। কি যেন নাম ওর? তাসিন?রাইট অহন? ”

অহন কপাল কুঁচকায়। কেন জানি তার এই রাগ রাগ হয়ে কথা বলা ছেলেটাকে পছন্দ হয়নি বোনের জন্য। ভ্রু নাচিয়ে সে বলল,

“হ্যাঁ? তো?”

সাদিদ এবার সরাসরিই প্রশ্ন ছুড়ল,

“ তোমার আমাকে পছন্দ নয় কেন? আমায় তো এখনো দুলাভাই বলে ডাকোনি? তোমার আপুই নিষেধ করেছে নাকি? ”

এবারে অহিই উত্তর করল। বুঝে উঠল সাদিদ হঠাৎ এসব আবোল তাবোল কথা বলছে কেন? একটু আগে অহন যা বলল তা জেনেছে? কিন্তু কিভাবে? এটা সম্ভব নাকি? অহি দ্রুতই বলল,

“আমি কেন নিষেধ করব? আপনি সম্পর্কে ওর দুলাভাই-ই হবেন, ও তো দুলাভাই-ই ডাকবে আপনাকে। নিষেধ করব কেন? ”

সাদিদ উত্তর করে না। কিছুটা সময় চুপ থেকে মোবাইলের স্ক্রিনে চাইল। অতঃপর ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,

“আবিদের একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিব। সবাই মিলে কেনাকাঁটা করে নিস। আমার একটু কাজ আছে।”

অহির এবার হুট করেই কান্না আসে। সে ভীষণ শখ করেই সেজেছিল আজ। খুব ইচ্ছা করেই প্রিয় পুরুষের নজর কাড়ার জন্য শাড়ি পরেছে, চোখে কাজল দিয়েছে। অথচ হলো কি? সে মানুষটা একবারও কি পরখ করে দেখল তাকে? অহির কান্না পায়। চোখ টলমল করে। কিছুটা সময় চুপ থেকে সাদিদের পিছু পিছু গিয়ে বলল,

“ আমি তো কিছু করিনি। শুধুশুধু রাগ দেখাচ্ছেন। আমি সত্যিই কিচ্ছু করিনি।একটু আগেও তো ভালোভাবে কথা বললেন।এখন কি হলো? চলে যাচ্ছেন কেন? ”

সাদিদ তাকাল মেয়েটার দিকে। কন্ঠ, কথা এবং চাহনি স্পষ্টভাবে প্রমাণ দিচ্ছে যে মেয়েটার কান্না পাচ্ছে। সাদিদ তাকায়। ঠোঁট চেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বলল,

“রাগ দেখাচ্ছি না। আমায় সত্যিই যেতে হচ্ছে না। ”

আবিদ তখন গাড়ি থেকে মাথা বের করে দেখে। অহনকে ডেকে নিয়ে বলে,

“ অহন? পিচ্চি উঠে পড় তো।ওরা আসুক ওদের মতো। ”

অহন তাকিয়ে বোনকে দেখছিল। ছোট হলেও সে বোনকে বেশ ভালো ভাবেই বুঝে। বোনের যে চোখ টলমল করছে তাও স্পষ্টই বুঝতে পারল সে। সেজন্যই বোনের কাছে গিয়ে শান্ত গলায় বলে এল,

“ তোর সাথে কিছু করলে আমায় বলবি বুঝলি? সঙ্গে সঙ্গেই কল দিবি। বোন দিচ্ছি ভালো কথা, এখন থেকে ই এমন রাগ দেখালে কিন্তু দিব না হুহ! ”

শেষ বাক্যটা অহন সাদিদের দিকে তাকিয়েই বলল। বলে চলেও গেল মুহুর্তেই। গাড়িতে গিয়ে বসল। অতঃপর আবিদ, হৈমি আর অহন চলে গেল। পড়ে রইল অহি আর সাদিদই। অহি তখনও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। বলল,

“ এমন রাগ পুষছেন কেন? বলুন না কি করেছি? ”

সাদিদ নিজের রাগ শান্ত করার খুব করে চেষ্টা চালায়। সে জানে অহি কিচ্ছু করেনি। অহি নির্দোষ। তবুও রাগ হচ্ছে। অযথায় রাগ হচ্ছে। সাদিদ বারকয়েক শ্বাস ফেলে নরম গলায় বুঝানোর ন্যায় বলল,

“ কিচ্ছু করিসনি। আমার অযথায় রাগ হচ্ছে। তোর উচিত এখন আমার থেকে দূরে থাকা। রেগে গেলে আমি খুব একটা ভালো আচরণ করি না। ”

অহি বাচ্চাদের মতোই অভিমান করল যেন। বলল,

“ তুমি তো এমনিতেও খুব একটা ভালো আচরণ আমার সাথে করছো না সাদ ভাইয়া। তোমার সাথে দেখার শুরু থেকেই আমি তোমার রাগই দেখে আসছি! ”

“ আমি তোকে সুখী রাখতে পারব না? আমি বেশি রুড? বেশি রাগী? আমি তোর জন্য পার্ফেক্ট নই অহি? ”

অহি এবারে বুঝল যেন। কিন্তু কিভাবে অহনের কথা গুলো শুনে ফেলল তা বুঝল না সে। উত্তর করল

” আমার চোখে আপনিই পার্ফেক্ট।আমার অনেককালের প্রিয় আপনি। আপনি জানেন আমি আপনাকে হারানোর ভয়ে কতোটা কষ্ট পেয়েছিলাম? কান্না করেছি কতসময়, কতদিন!আপনি আমার জন্য পার্ফেক্ট না হলে নিশ্চয় কষ্ট পেতাম না আমি?”

“ তুই যদি বলতি আমি পার্ফেক্ট না, তবুও আমি তোকেই বিয়ে করতাম অহি। পার্ফেক্ট না হলেও বিয়ে করতাম। তোর ভাইকে বুঝিয়ে দিবি আমিই তোর জন্য পার্ফেক্ট। আর কেউ না। বুঝলি? ”

অহি মাথা নাড়ে। বলে,

“ বলব। ”

সাদিদ এবার নিঃশব্দে হাসে। অহি সে বাধ্যগত ছোট অহিই আছে যেন। বলল,

“মেজাজ খারাপ! তোর কেনাকাঁটা আর হচ্ছে না রে আজ। খুবই স্যরি এর জন্য। ”

.

অহির হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো। প্রায় রাত আড়াইটাতেই ও ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে, ফ্রি হয়ে রুমে এল। আর একটা রাত! কয়েকটা ঘন্টা! এরপর সুন্দর একটা প্রভাত। সুন্দর একটা সূচনা। আর একটা দিন পরই অহির বিয়ে। অথচ যে তার বর হবে তার খবর নেই। একটা পুরো হলুদ অনুষ্ঠান গেল, সাদিদের সাথে তার একটা ছোট্ট ম্যাসেজও আদান প্রদান হলো না। অহি ছোটশ্বাস টেনে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে। বুকের ভেতর চাপা অস্থিরতা, আনন্দ, সুখ! আর একটা দিন পর সে সাদিদ এহসানের বউ হবে। তার প্রিয় পুরুষের সাথে সংসার বোনার স্বপ্ন পূরণ হবে! অহির চোখে ঘুম নেই। বার কয়েক এপাশ ওপাশ করে সে চাপা অস্থিরতা নিয়ে উঠে বসে। বাইরে তখন অল্প বর্ষন। অহি চোখ মিনমিন করে বিছানা ছেড়ে উঠতেই মোবাইল ভাইব্রেট হলো। মেসেজ টোন। দ্রুত মোবাইলটা নিয়ে ম্যাসেজ দেখতে গিয়েই চোখে পড়ল,

“ অহি, একবার নিচে আয় । বৃষ্টিতে ভিজে গেলাম।”

সাদিদ কয়েক মিনিট আগেও ম্যাসেজ দিয়েছে যা চোখে পড়ল মাত্রই অহির। অহি ছোটশ্বাস টানে। নিশ্চয় এখন যাবে না বললে লোকটা নাকের ডগায় রাগ ঝুলিয়ে রাখবে? তাছাড়া অহির ইচ্ছে এই পুরুষটাকে বিয়ের আগে আরো একবার দেখার। কথা বলার। তাই জানালা দিয়ে একবার লোকটাকে দেখে নিয়েই গুঁটি গুঁটি পায়ে পা এগোল। বাগানের কাছটায় গিয়ে সাদিদকে দেখে সামনে যেতেই সাদিদ তাকাল। পরনে হলুদ রং এর সুতির সাদামাটা একটা শাড়ি। চুলগুলো এলোমেলো ঠেকছে। মুখে সাঁজ নেই। অথচ এই সাঁজবিহীন অহিকেই একটা পিনপতন হলুদ শাড়িতে কি চমৎকার লাগছে। যেমন সেদিন লাল শাড়িতে লেগেছিল। সাদিদ নিঃশব্দেই হাসে। তাকিয়ে থেকে হুট করে হেসে বলল,

“ তোকে সুন্দর লাগছে অহি।”

অহি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। এটুকু পথ আসতে আসতেই প্রায় ভিজে গিয়েছে। সাদিদও ভেজা। পোশাক আশাক চুপসে আছে শরীরের সাথে। সে অস্পষ্ট আওয়াজে বলল,

“ হু? ”

সাদিদ এসেছিল অহির সাথে সেদিনকার সে চলে যাওয়ার অভিমান মিটিয়ে নিতে। কিছু কেনাকাঁটা করেছির নিজেই তা দিতে, এবং অহিকে দেখতে। অতঃপর মনে হলো কিছুটা প্রশংসা করা অন্যায় নয়। নিঃশব্দে হেসে ফেরই বলল,

“ তোকে সেদিন বলা হয়নি অহি, তোকে শাড়িতে সুন্দর দেখাচ্ছিল! আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আবির আঙ্কেলের পুতুলের মতো মেয়েটার দিকে তাকিয়েই থাকতে সারাটাক্ষন, যেমনটা এখন তাকিয়ে আছি।”

অহি তাকাল না এবারে। নজর সরাল। শিরশিরে এক অনুভূতি ছুঁয়ে গেল যেন। কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে বলল,

“বাসায় যাই এবারে। ”

“ না। ”

অহিও মাথা নাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো বলল,

“ ঠিকাছে। ”

সাদিদ হাসে কেবল। ফের ভেবে বলল,

” উমম,চলে যা। থাকলে আমার বুকের ভেতর ঝড়টা বেশি সময়ই চলবে। ”

অহি তাকাল বলল,

“ আমি থাকলে তোমার বুকের ভেতর ঝড় চলবে সাদ ভাইয়া? ”

অহির বোকার মতো প্রশ্ন শুনে সাদিদ হাসলই কেবল। সাদিদের চুলগুলো প্রায় ভেজা তখন। ভেজা চুলগুলো পেছনে ঠেলে সে ঝুঁকে অহির কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

“ হু, আবির আঙ্কেলের পুতুলের মতো মেয়েটা থাকলে আজকাল আমার বুকের ভেতর ঝড়ই চলে। কেন তা জানি না। ”

অহি এবারে নিজের বোকামো ছেড়ে আচমকায় বুঝে গেল যেন সব। এতোটা কাছে সাদিদ এবং তার কথা শুনে কেমন শিহরন বইল সর্বাঙ্গে। ঠোঁট চেপে রেখে দ্রুত অন্যদিকে ফিরে সে হাঁটা ধরল। সাদিদ হাসে। পেছন থেকে বলল,

“ তোর জন্য অনেককিছু আনা হয়েছিল, দেওয়া হলো না। যদিও বিয়ের পর ওসব পেয়ে যাবি আমার রুমে এমনিতেই। ”

.

বিয়ের পরমুহুর্তেই যখন অহিকে নিয়ে যাওয়ার সময় হলে তখন থেকেই অহি কি যেন কান্না জুড়ল! গাড়িতে উঠানোর পরও একাধারে কাঁদছেই মেয়েটা৷ সাদিদ দেখছিল কেবল। অপেক্ষা করছিল মেয়েটাকে একা পাওয়ার। অতঃপর গাড়িতে একা পেয়ে সে সর্বপ্রথম শুধাল,

“তুই না আমার জন্য কান্না করেছিলি? তবে এখন কেন কান্না করছিস? রেখে চলে যাব তোকে? ”

অহি তবুও কাঁদে। কান্না থামল না। সাদিদ এবারে গম্ভীর স্বরে বলল,

“ কান্না থামা।”

অহি তবুও কাঁদছে দেখে সাদিদ ধমক দিয়েই বলল,

“কি হলো, কান্না থামা! তোকে একেবারের জন্য নিয়ে চলে যাচ্ছি না আমি। নিয়ে আসব তুই যখন চাইবি তখনই। ”

অহির কান্না এবারেও থামল না। বরং আকস্মিক ধমক কান্না আরো দ্বিগুণ হলো। সাদিদের দিাে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,

“আ আপ আপনি খুব খারাপ সাদ ভাইয়া। ”

সাদিদ একটু নরম হলো না।বরং গম্ভীর একরোখা স্বরে জানাল,

“ এতদিন ভাইয়া ফাইয়া যা বলেছিস মেনে নিয়েছি অহি। এখন আমার ওয়াইফ তুই,এসব ফাওফাও সম্বোধনে ডাকবি না আর। মনে থাকবে? ”

অহির এবারে যেন কান্না কমে এল আচমকাই। তাকাল। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বাধ্য মেয়ের মতো বলল,

“ থাকবে। ”

সাদিদ হাসে। অহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“এইতো পুতুলের মতো মেয়েটা ছোটবেলার মতো মাথা নাড়ায়। এবার কান্না থামা, চককেট দিব । ”

.

তখন প্রায় রাত বারোটা! অহি অনেকটা সময়ই বিছানায় পুতুলের মতে বসে থাকল। অথচ সাদিদের আসার নামগন্ধ নেই। এদিকে অহি নার্ভাস৷ মুখচোখে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে নে নার্ভাস৷ প্রথমবার, প্রথমবারের মতো একটা পুরুষমানুষের সাথে রুমশেয়ার, বিছানা শেয়ার আরো কত কি বৈবাহিক সম্পর্ক!তাও আবার তারই প্রিয় পুরুষ। অহির গলা শুকিয়ে আসে কেমন এসব ভেবে ভেবে। অতঃপর একটা সময় পর সাদিদ এল। খুবই স্বাভাবিক গলায় জানতে চাইল,

“ এতোটা সময় হলো ঘুমাসনি কেন? ”

অহি উত্তর করল না। সাদিত আবার ও বলল,

“ তুই কি অপেক্ষা করছিলি আমার জন্য? ”

অহি এবারে বলল,

“ হু? না। ”

সাদিদ ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“ করছিলি না?অথচ আজ আমার জন্যই অপেক্ষা করার কথা তোর। ”

অহির কি উত্তর করা উচিত বুঝে না যেন। এবারে বলল,

“ না মানে, করছিলাম। ”

“ করছিলি? কিন্তু কেন? ”

অহির এবার রাগ লাগে।ইচ্ছে করেই তাকে এভাবে ঘুরপাক খাইয়ে জিজ্ঞেস করছে। অহি চোখ ছোটছোট করে চেয়েই বলল,

“ তুমি কিন্তু আমায় গোলাচ্ছো। আমি এমনিতেই নার্ভাস ফিল করছি। ”

সাদিদ মনে মনেই হাসে। বিছানায় বসেই অহির দিকে ঝুঁকল সে। মেয়েটার কপালে আসা চুল কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতেই ফের ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“ নার্ভাস ফিল করছিস? কিন্তু কেন? ”

উত্তর এল,

“ এ এম নিই! ”

সাদিদ আবারও অহির নজর আড়াল করে হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে। বলল,

“ তোর কথা আটকাচ্ছে অহি। কেন? শরীর ঠিক না তোর? ”

“ হু, ঠিক।”

“ তাহলে? ”

সাদিত এমন ভাবে কথা বলছে যেন সে কিছুই জানে না। কিছুই না। এতটাই গম্ভীর, শান্ত স্বর তার যেন সব সে সত্যি সত্যিই বলছে।অহি রাগ নিয়ে বলল,

“ কিচ্ছু না, তুমি মুখ গম্ভীর রেখে মজা নিচ্ছো। আমি জানি। ”

ফের বলল,

“ আপনি ভেতরে যা বাইরে তা দেখান না। শুধু রাগটাই ভেতর বাহিরে সমানভাবে প্রকাশ পায়। ”

সাদিদ এবারে প্রকাশ্যেই হেসে ফেলল
বলল,

” অনেক কিছুই বুঝেছিস। তো এখন কি ভেতরে যা রূপ বাইরেও সে রূপই দেখাব বল? ”

নিজের কথায় ফের নিজেকেই ফাঁসিয়ে দিল যেন। অহি অস্ফুট আওয়াজে বলল,

“ হু? ”

সাদিদ এবারে ভ্রু উচু করে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,

“ আঁই থিংক তুই এতোটা সময় যেসব ভেবে নিয়ে নার্ভাস ফিল করছিলি সেসব ঘটলে তুই খুব একটা মাইন্ড করবি না। এগুলা স্বাভাবিক রাইট? ”

অহি উত্তর করে না। তবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কেমন।সাদিত ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,

“ ওভাবে বাচ্চাবাচ্চা পুতুলের মতো তাকাচ্ছিস কেন? ”

অহি বলল,
“ আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনিই আমার বর! আপনিই ওভাবে তাকিয়ে হেসে কথা বলছেন! ”

“ কেন? ”

“ আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আপনি অন্য কারোর হয়ে গিয়েছিলেন ভেবে নিয়েছিলামই!আচ্ছা, আপনি যদি হৈমির বর হতেন তাহলে এসবগুলো হৈমির সাথে বলতেন? আপনি হৈমিকে… ”

সাদিদ অহির এসব আজব ভাবনা থামাতে মুখে আঙ্গুল রাখল। শুধাল,

” মুখটা থামা অহি। তোরই বর। তোকেই ভালোবাসব। হৈমি আমার ভাই এর ওয়াইফ। ওকে এসব জীবনেও বলব না নিশ্চয়? এখন প্লিজ তোর এসব চিন্তা বাদ দে। ”

অহি মুখটা চুপসে নিল। বলল,

“ হু। ”

সাদিদ এবারর মুখ এগোয়। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের নিজের ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরল অহির কপালে। অহি তখন প্রথমবারের মতো শিউরে উঠল। সাদিদ ছাড়ল না। কপালে ওভাবেই ঠোঁট ছুঁয়ে রেখে দীর্ঘ আকাঙ্খার স্পর্শ পূর্ণ করে বলল,

“ আমার হওয়ার জন্য ধন্যবাদ অহি। ”

অহি তখনও ফ্যলফ্যাল করে তাকিয়ে। সাদিদ হেসে অহির আদুরের বাচ্চামতো মুখটায় চুমু দিল। ডানগালে কয়েক সেকেন্ড ঠোঁট ছুঁইয়ে জানাল,

“ আমায় ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ। ”

এরপরের ওষ্ঠ স্পর্শ গুলো খুব একটা স্থির রইল না। অহির পুতুলের মতে আদুরে মুখটায় বিচরণ ঘটল।একপর্যায়ে বলল,

“ আমাকে তোর করে চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”

সাদিদ এবারে ঠোঁট এগোল অহির পাতলা ঠোঁটজোড়ায়। এক নিমিষেই উম্মাদের মতো দখলে নিল মেয়েটার অধর। অতঃপর অনেকটা সময় পর সে ঠোঁটজোড়ার উপর নিজের রাজত্ব বিলীন করে সে অহিকে হাঁপাতে দেখল। সে হাঁপাতে থাকা মেয়েটার থুতনিতে চুমু দিয়েই সে বলল,

“ সেই ছোট্টবেলার মেয়েটা, সেই ছোট্ট অহি আজ আমার বউ হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ”

#সমাপ্ত…