মন একে একে দুই পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
7

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ২৪(একতরফা!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

শিমলা প্রাণহীন কন্ঠে বললো,
– ‘আকসাদ ভাই আর উনার পুরো পরিবার একসপ্তাহ আগেই কানাডায় চলে গেছে!’

প্রাহী থমকে গেলো। জলে ভেজা কম্পিত চোখে তাকিয়ে রইলো। আকসাদ চলে গেছে! কথাটা বার বার মন আওড়াতেই ও বেসামাল হয়ে পড়লো। দু পা পিছাতেই পিছলিয়ে পড়ে যেতে নিলে দেয়ালে বাম হাত রেখে নিজেকে সামলে নিলো। ডানহাত দিয়ে মুখ চেপে অনবরত নিজের মুখ চেপে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। ওর বিশ্বাস হচ্ছেনা! লোকটা নেই! এটা হতে পারেনা! শিম…শিমলা ওকে মিথ্যা বলছে! প্রাহী নিজের ভিজে চোখ মুছে দৌড়ে আকসাদের ঘরের সামনে গেলো। দরজা টা লক করা! লক ঘুরিয়ে ধাক্কা দিতেই দেখলো ঘরটায় কেউ নেই! প্রাহী এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা। দরজার একপাশে মাথা ঠেকিয়ে হুড়মুড় করে কাঁদতে থাকলো! হাতে হেচঁকা টান অনুভব হতেই পাশ ফিরে দেখলো শিমলা ওর ডান হাতের কব্জি শক্ত করে চেঁপে ধরে আছে।

– ‘আমার সাথে চল!’

বলেই প্রাহীকে টানতে টানতে শিমলা নিজের সাথে নিয়ে চললো।

।।

প্রাহী আর শিমলা আপাতত ওদের বাড়ির পিছনের পুকুরের ঘাটলার এক বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে আছে। প্রাহী মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। শিমলা অনেকক্ষণ যাবত প্রাহীর দিক তাকিয়ে সামনে তাকালো।

– ‘আমার বাবারা দুই ভাই এক বোন!’

শিমলার কথায় প্রাহী আস্তে মাথা তুলে পাশ ফিরে ফোলা চোখ নিয়ে ওর দিক তাকালো। শিমলার নজর সামনের স্বচ্ছ পানির দিক।

– ‘তার মধ্যে আমার বাবা মেজো। ফুপ্পি ছোটো। আর আকসাদ ভাইয়ের বাবা মানে আনমল কাকা বড়। কাকা যখন পড়াশোনা শেষ করে ফেলে তখন তিনি ব্যবসার কাজে তুর্কি তে যান। সেখানেই আকসাদ ভাইয়ের মায়ের সাথে উনার পরিচয়! দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে বিয়ে করে। বিয়ের পর উনারা কানাডায় স্যাটেল হয়। উনাদের ঘরের প্রথম সন্তান হলো আকসাদ ভাই তারপর তার ছোটো বোন আযরিন। আকসাদ ভাইয়ের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা, পড়াশোনা সব কিছু কানাডাতেই। এর পর যখন আকসাদ ভাইয়ের বয়স এগারো কিংবা বারো তখন প্রথম উনারা ঢাকায় আসে ফুপ্পিদের বাসায়। সেখানে আমরাও গিয়েছিলাম। তখন আমি ছোটো। আমি আর আযরিন সমবয়সী! সেবার একমাস থেকে বড় কাকারা আবার চলে যায়। এরপর যখন আমি ইন্টার এ উঠলাম তখন উনারা আবারও ঢাকায় আসলে আমরা সেখানে যাই। কারণ বড় কাকা এখানে আসলেও আকসাদ ভাইরা ঢাকাতেই থাকতো। বড় কাকা আর কাকী এখানে এসে কিছুদিন থেকে ঢাকায় যেয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আবার কানাডায় চলে যেত। এরপর আর উনাদের আসা হয়নি কয়েক বছর। এর মাঝে বড় আপার বিয়ের সুবাধে উনারা পুরো পরিবার নিয়ে এখানে প্রথমবারের মতো আসলো।’

এতগুলো কথা বলে শিমলা হালকা শ্বাস ফেললো। পাশ ফিরে দেখলো প্রাহী ওর দিক তাকিয়ে আছে। হালকা হেসে শিমলা বললো,

– ‘আকসাদ ভাই এখানে আসার পর যে এত কিছু হয়ে যাবে তা ভাবিনি!’

প্রাহী শিমলার কথার মানে বুঝতে পারলো না। জলে ভেজা অবুঝ চোখে সেদিক তাকিয়ে রইলো। শিমলা শ্বাস ফেলে প্রাহীর হাত ধরে বললো,

– ‘আমি তোর আর আকসাদ ভাইয়ের ব্যপারে কিছুটা হলেও জানি। যদিও আমার একটু সন্দেহ ছিলো কিছু ব্যাপার নিয়ে। কিন্তু আমার মামী…।’

বলেই শিমলা কিছুক্ষণ থেমে প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,

– ‘আমার মামী যেদিন ওমন কান্ড করলো সেদিনই যা বুঝার আমি বুঝে গেছি!’

প্রাহী নিষ্পলক শিমলার দিক তাকিয়ে রইলো। শিমলা বন্ধুসুলভ হেসে বললো,

– ‘সেদিন আকসাদ ভাই বাইরে থেকে এসেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো যেদিন তুই শেষবারের মতো এখানে এসেছিলি সেদিন কিছু হয়েছিলো কি না! একটু অবাক হয়েছিলাম প্রথম প্রথম যে একথা কেন জিজ্ঞেস করছে! পরে অবশ্য সবটাই বলেছি। সবকিছু শোনার পর আকসাদ ভাই উনার মায়ের রুমে যান। কাকীসহ আকসাদ ভাই একসাথে বের হয়ে মামীর সামনে যেয়ে মামীকে কিছু উত্তমমধ্যম শোনায়! যদিও এটা মামীর প্রাপ্য ছিলো। কারণ আজ হোক বা কাল আমিই হয়তো মামীকে কিছু কথা শোনাতাম

শিমলা প্রাহীর দিক তাকালো।

– ‘আকসাদ ভাই কখনই তোকে আমার বান্ধবী হিসেবে সাধারণ চোখে দেখেনি! উনার তোর প্রতি যে অনুভূতি আমি সেদিন তার চোখে দেখেছি তা কোনো যে সে অনুভুতি না! যা বোঝার ওইদিনই বুঝেছি!’

প্রাহী এবার শিমলাকে জাপটে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো,
– ‘আম…আমি উনাকে ওইদিন ওভাবে বলতে চাইনি! কিন্তু আমার কেন জানিনা অনেক খারাপ…।’

শিমলা প্রাহীর৷ মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– ‘স্বাভাবিক! একটা মেয়েকে তার সম্মান নিয়ে কথা বললে যে কারোরই খারাপ লাগবে! বরং তুই আমাকে মাফ করিস! আমি তোর হয়ে সেদিন সাথে সাথেই কিছু বলে উঠতে পারিনি! আমার উচিত ছিলো মামীকে ওখানেই কিছু কথার জবাব দেয়া!’

প্রাহী মাথা নাড়লো। কাঁপা কন্ঠে বললো,

– ‘কিন্তু…উনি তো চলে গেলো!’

শিমলা প্রাহীর মুখটা সামনে এনে বললো,
– ‘এমনেই চলে যায়নি! চলে যেতে বাধ্য হয়েছে! ওইদিন আকসাদ ভাই বাসায় আসার পরই উনার ফোনে কল আসে। তারপর কাকা আর আকসাদ ভাই দুজনেই সিরিয়াস হয়ে উনার মা আর বোনকে বলে ব্যাগ গোছাতে। সেদিনই আর্জেন্ট ফ্লাইটে উনারা কানাডায় চলে যান।’

প্রাহী চোখ মুছে জিজ্ঞাসা করে,
– ‘কি হয়েছিলো!’

শিমলা চিন্তিত কন্ঠে বলে,
– ‘তা জানিনা। তবে এতটুকু শুনেছি কাকার বিজনেসে নাকি কি ঝামেলা হয়েছে। পরে সব বলবে। এই বলে বাবা ছেলে পরিবার নিয়ে চলে গেলো!’

প্রাহী ফোঁপানে স্বরে বলে উঠলো,
– ‘উনি যদি আর না আসে!’

শিমলা ফিক করে হেসে বললো,
– ‘যে মানুষটা ঢাকার ওয়েদার সহ্য হয়না বলে ঢাকায় দু’দিনও থাকেনা! সে মানুষ খুব একটা অজপাড়াগাঁ না হলেও সাধারণ একটা শহরে এসে দিনের পর দিন থাকছে একটা মেয়ের জন্য! এভাবে চলে যাবার জন্য না নিশ্চয়ই!’

প্রাহী অশ্রুসিক্ত চোখে শিমলার দিক চেয়ে আছে। শিমলা প্রাহীর বা’গালে হাত রেখে বললো,
– ‘তাছাড়া মানুষ তার একান্ত প্রিয় জিনিসের কাছ থেকে খুব একটা দূরে থাকতে পারেনা! একদিন না একদিন সেই প্রিয় বস্তুর টানে বা মায়ায় ফিরবেই!’

প্রাহীর চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে শিমলা বললো,
– ‘অনেক কেঁদেছিস! দুপুর হয়ে আসছে! আমার সাথে আয় এখানেই আজকে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে একবারে যাবি।’

প্রাহী মাথা নাড়িয়ে ওড়নার কোণা দিয়ে চোখ নাক মুছে বললো,
– ‘না বাবা অসুস্থ। বাড়িতে মা একা। এখন আমার থাকাটা দরকার। আপাতত আমি বরং যাই। পরে আসব!’

– ‘কি হয়েছে কাকাবাবুর!’

– ‘তেমন কিছুনা সর্দিজ্বর। কিছু টেস্ট দিয়েছে। এখন দেখা যাক।’

শিমলা ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
– ‘আমাকে জানাস তাহলে! চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি!’

প্রাহী মাথা নেড়ে বসা ছেড়ে দাঁড়ালো। শিমলার ঘর পেরিয়ে আকসাদের ঘরের কাছে আসতেই প্রাহী থমকে দাঁড়ালো। কদিন আগেই লোকটা এখানে থাকতো। আর আজ নেই! ভাবতেই দু’ফোটা জল চোখ গড়িয়ে পড়লো ওর। শিমলা তা দেখে ওর হাতে হাত রেখে স্বান্তনা দিয়ে ওকে নিয়ে চললো। প্রাহীকে রিকশায় উঠিয়ে দিতেই ও চলে গেলো। শিমলা নির্বিকারভাবে ওর চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে রইলো। শুষ্ক গাল ওর ভিজে উঠছে!

।।

রাতের আঁধারে শিমলা বিছানায় হেলান দিয়ে শুন্যে তাকিয়ে আছে। এর আগে অনেকবার আকসাদের দেখা হলেও তখন ওরা ছোটো ছিল। আর পাঁচটা চাচাতো ভাইবোনদের মতোই একজন আরেকজনকে দেখতো। কিন্তু ও যখন অষ্টাদশী রমণী তখন ঢাকায় যেয়ে ফুপির বাসায় অনেক বছর সামনাসামনি যুবক স্বরূপ আকসাদকে দেখে ওর সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোর সৃষ্টি হয়! যখনই আকসাদ ওর সামনে পড়তো তখনই মনে হতো ও যেন নিজ দুনিয়ায় থাকতো না! তারপর থেকেই এই পুরুষকে নিয়ে ওর মনে যতো কল্পনা স্বল্পনার শুরু! কানাডা হতে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে যখন বড় কাকা ভিডিও কলে ওদের ফোন দিতো। সেদিন শিমলা দ্রুত পড়া শেষ করে ফোনের কাছে বসে থাকতো একটাবার ফোনের এপার হতে আকসাদ ভাইয়ের মুখখানি দেখবে বলে! দিন গেল, মাস গেল সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো গাঢ় হলো! যখন শুনলো বড় আপার বিয়েতে বড় কাকার পুরো পরিবার আসবে তখন ওর খুশি আটকে রাখে কে! দিনরাত আকসাদ ভাইকে সামনে দেখবে বলে ওর কি আনন্দ!

কিন্তু আকসাদ ভাই আসার পর থেকেই প্রাহীর প্রতি তার ব্যবহারগুলো প্রথম প্রথম ওর নজরে আসেনি! আসলেও ভেবেছে ওর বান্ধবী এজন্য হয়তো একটু আন্তরিকতা দেখাচ্ছে! ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে যখন আকসাদ দাঁড়িয়ে থাকতো তখন শিমলা কি যে খুশি হতো! ওর আকসাদ ভাই ওকে নিতে এসেছে! এই বা কম কি! একদিন শিমলা একা একা বাড়ি ফিরছিলো হুট করে দেখলো আকসাদ আর প্রাহী একসাথে দাঁড়িয়ে! আকসাদ প্রাহীকে জোড় করে গাড়িতে বসিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে! ব্যাপারটা একটু কেমন মনে হলেও তাও ও আমলে নেয়নি! ধীরে ধীরে কিছু আচরণ ওর চোখে ধরা দিলো! এই যেমন আইসক্রিম খাওয়ার দিন প্রাহীর প্রতি এক্সট্রা কেয়ার, প্রাহী ওদের বাড়ি এলেই আড়চোখে ওর দিকে আকসাদের গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা! পুরোপুরি শিউর শিমলা সেদিন হয়েছে যেদিন ও দেখলো দুপুরে একদিন আকসাদ কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। কিভাবে ভিজেছে জিজ্ঞেস করলে আকসাদ শুধু উত্তর দিয়েছে,

– ‘খুব কাছের কেউ একজন তলিয়ে যাচ্ছিলো। তাকে রক্ষা করে নিজেকে বাঁচিয়েছি!’

তার পরের দিন যখন শুনলো প্রাহী পুকুরে পড়ে গিয়েছিলো। ওকে একজন নাকি তুলেছে। তখনই বুঝেছে আকসাদের সেই কাছের একজন হয়তো প্রাহী! শিমলার হৃদয় যেন খালি ওকে চেপে ধরলো! তাও একটা ক্ষীণ আশা নিয়ে ও থাকতো হয়তো সবটাই ওর ভুল ধারণা। অন্যকিছুও তো হতে পারে! দিনের পর দিন প্রাহীর প্রতি আকসাদের এমন খেয়াল, ভাবগুলো ওর বেশ চোখে পড়তো! একদিন দুজনকে একসাথে হাঁটতে দেখে ও শুধু সেদিকে তাকিয়েছিলো। কাছে আর যায়নি! একটা সময় ওর বোঝ হলো ক্ষণে ক্ষণে ভার্সিটির সামনে যাওয়া, গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করা এসবের কারণ শিমলা ছিলোনা! ভাবতেই শিমলার মন মস্তিষ্ক ভেঙ্গে পড়তো! পুরোপুরি শিউর সেইদিনই হয়ে গেছে যেদিন ওর মামী প্রাহীকে নিয়ে কটুক্তি করেছিলো সেদিন আকসাদ সবটা শুনে ওর মামীর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলো,

– ‘যাকে এই কথাগুলো আপনি বলেছেন! সেই মেয়েটা আমার একান্তই নিজের ব্যাক্তিগত ব্যপার! সুতরাং আমার ব্যাপারে ফার্দার কোনো কথা বলতে আসবেন না! বড় বলে সবকিছুতে আমি সবাইকে ছাড দেইনা! আর নিজের ব্যপারে তো না ই!’

সেদিন শিমলা বুঝেছিলো মনের পুরুষটা ওর কোনোকালেই ছিলোনা! অথচ এই মানুষটাকে নিয়ে ও কতকিছু ভেবে ফেলেছে! চেয়েছিলো এবারের ফাইনাল দিয়ে নিজের পছন্দের কথা বাবা-মাকে জানিয়ে দিবে যাতে আকসাদের সাথে ওর বিয়ের পাকা কথাটা অন্তত হয়! বিয়ের কথা আর কি তুলবে! যেখানে মানুষটার মনে অন্য কেউ! নিজেরই আপন বান্ধবী! প্রাহীর প্রতি একটা ক্ষোভ জন্মে গিয়েছিল শিমলার! যার দরূন সেদিন যখন প্রাহীকে এতগুলো কথা ওর মামী বলেছিল সেদিন ও কিছুই বলেনি! চাপা রাগ থেকেই কিছু বলেনি! পরে অবশ্য ওর অনুতাপ হয়েছিল! কারণ মনের উপর তো আর কারোর জোড় নেই! তাইনা।

।।

সবটা ভাবতে ভাবতে শিমলা গুমড়ে কেঁদে উঠলো। ওর অনুভুতিগুলো তো মিথ্যে ছিলোনা! চাইলেও পারছেনা কিছু ভুলতে। এতই কি সহজ! শিমলা কাঁদতে কাঁদতে বিছানার বালিশে লুটিয়ে পড়লো। অশ্রু ভেজা কন্ঠে আওড়ালো,

– ‘তুই অনেক লাকি প্রাহী! বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও তাকে পেলাম না! অথচ সে তোকে পাওয়ার জন্য দিনদুনিয়া পার হয়ে এখানে এসে হাজির!’

আঁধারে ঢাকা দেয়ালের দিক তাকিয়ে ভাবলো, ওর একপাক্ষিক অনুভূতিগুলো না হয় ওরই থাকুক! নাই বা হলো বলা! সবকিছুর সমাপ্তি ভালো হতে হবে এমন তো কথা নেই! কিন্তু ও নিজেকে সামলাতে পারবে তো! ভাবতেই শিমলা চাপা স্বরে কেঁদে উঠলো! ওর ইচ্ছা করছে গলা ফাঁটিয়ে কাঁদতে! একতরফা ভালোবাসায় বুঝি এত কষ্ট! এই কষ্টের বেড়াজাল থেকে ও কিভাবে ছুটে আসবে!

এদিকে প্রাহীও আকাশের দিক তাকিয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে! ভাগ্যের উপর আর নিজের উপর বেশ আক্ষেপ হচ্ছে ওর! মানুষটার দেখা কি ও আর পাবেনা! হাতছানি দিয়ে এভাবে হারিয়ে গেলো! চোখের জল যেন বাঁধ মানছেনা! দূর হতে সূর ভেসে আসছে,

“প্রেম তুমি আসবে এভাবে আবার
হারিয়ে যাবে ভাবিনি!”

দু’টো রমণী একজনের জন্য নিকোষ কালো আঁধারে নিজেদের দুঃখ বিলাসে ব্যস্ত! কেউ সেইজনকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার শোকে মত্ত, তো কেউ পাওয়ার আগেই পুরোপুরি হারিয়ে ফেলার কষ্টে জর্জরিত!

চলবে,,,,

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ২৫(এইযে আমি!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– ‘এত রাত করে মেয়েটা বাইরে! তুমি সাথে গেলেও তো হতো!’

প্রাহীর বাবার কথায় ওর মা বসার ঘরের দেয়াল ঘড়ির দিক তাকালেন। সন্ধ্যা সাতটা বাজে। মফস্বল শহরে এই সন্ধ্যা সাতটা মানেই রাত!

– ‘আমি সাথে গেলে ভালো হয়তো। কিন্তু তুমি তো তাহলে একলা থাকতে ঘরে! এভাবেই তুমি অসুস্থ! এভাবে একা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে! চিন্তা করো না। প্রাহীর সাথে আমার কথা হয়েছে। আর ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে। চিন্তা করোনা! আল্লাহ্ ভরসা।’

প্রাহীর বাবা সোফায় গা এলিয়ে চিন্তিত নজরে বাড়ির দরজার দিক তাকিয়ে রইলেন!

/

শুনশান রাস্তায় প্রাহী হেঁটে যাচ্ছে। হাতঘড়ির তাকিয়ে দেখলো সাড়ে সাতটা বাজে! আজ একটু তুলিদের বাড়িতে গিয়েছিলো প্রাহী। ওখান থেকেই সরাসরি বাড়ি চলে আসতো। কিন্তু পরে ওর মা ফোন করে বললো ওর বাবার ব্যথার দু’টো ওষুধই শেষ হয়ে গেছে। ওর বাবার আবার রাতে ব্যথার ওষুধ না খেলে ঘুম আসেনা। সেজন্য প্রাহী ফার্মেসী তে গিয়ে ওষুধগুলো নিয়ে নিলো। ফার্মেসীর দোকান তুলিদের বাসা ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে। যার দরূন ওর আজ একটু সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আজ নক্ষত্রটা থাকলে ওর এভাবে সন্ধ্যায় ফার্মেসী যেতে হতো না। ও এই কাজগুলো করতো! কি করার! একজনের বদলে আরেকজনকে তো কিছু দায়িত্ব করতে হবেই! তাইনা! হাঁটতে হাঁটতে প্রাহী খেয়াল করলো রাস্তাটা ভালোই নীরব! বাড়ির রাস্তার ওদিক পৌঁছোতে কিছুটা সময় লাগবে! প্রাহী খেয়াল করলো ওর পায়ে ধারালো কিছু একটা খালি বিঁধছে! বেশ কয়েকবার পায়ে খোঁচা খাওয়ার পর প্রাহী হাঁটা থামালো। আশেপাশে তাকিয়ে একটা পুরোনো দোতালা বাসার সামনে যেয়ে সেখানে ঢালাই করা জায়গার উপর একটু নিচু হয়ে নিজের পায়ের জুতোজোড়া খুলে ভালোভাবে দেখতে থাকলো। তিনটা ছোটো পাথর ঢুকেছে যার জন্য এমন খোঁচাচ্ছিল পায়ে! প্রাহী জুতোগুলো ভালোমতো ঝারলো।

– ‘আপনি কি এইবাড়িতে ঢুকবেন!’

অপরিচিত কন্ঠে প্রাহী মাথা তুলে দেখলো মধ্যম বয়স্ক একজন লোক ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। প্রাহী সোজা হয়ে জুতোটা পায়ে পরতে পরতে বললো,

– ‘না। আসলে আমার জুতাটা ঠিক করার জন্য এখানে একটু দাঁড়িয়েছিলাম।’

মধ্যম বয়স্ক লোকটা একটু এগিয়ে এসে বললো,
– ‘অসুবিধা নেই। আপনি ভিতরে চলুন!’

প্রাহী লোকটার কথায় দু’কদম পিছনে যেয়ে বললো,
– ‘মানে!…।’

খপ করে পিছন থেকে কেউ একজন ওর মুখটা ওর পড়নের ওড়না দিয়েই বেঁধে দিলো। প্রাহী ছোটাছুটি করতেই সামনের দাঁড়ানো সেই লোক ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

– ‘মানে মামনী তুমি তো তোমার জুতো ঠিক করেই ফেলেছো! এখন আমাদেরও একটু ঠিক করো! বদলে তুমিও মজা পেলে আমাদেরও খায়ে*শ মিটালে!’

বলেই বিশ্রী হাসি দিলো লোকটা। প্রাহীর অন্তর কেঁপে উঠলো। খুব বাজেভাবে ও ফেঁসে গেছে! কিভাবে ও এখন বাঁচবে! আশপাশে তো কেউই নেই! প্রাহী চোখের জল ছেড়ে ‘উমম্ উমম্’ করে জোড়ে জোড়ে শব্দ করতে লাগলো। পিছনের লোক আর সামনের লোকটা মিলে ওকে টেনে হিঁচড়ে পুরনো বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলো। প্রাহী মাথা নেড়ে হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে! লোকগুলো ওকে নিচ তলার গ্যারেজের মতো একটা জায়গায় এনে কাঠের চেয়ারের সাথে দঁড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে দিলো। প্রাহী অসহায় দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে রয়েছে। সামনের লোকগুলো ওকে দেখে বিশ্রীভাবে হেসে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলো।

– ‘একদ*ম গরম জিনিস! জলদি আসেন!’

আরও কিছু কথা বলে ফোন রেখে লোকটা প্রাহীর দিক এগিয়ে এসে ওর হাতের বাহুতে গভীরভাবে ছুঁয়ে বললো,

– ‘আরেকটু অপেক্ষা করো মামনী! একসাথে সবাই মিলে তোমাকে আনন্দ দিব কেমন!’

প্রাহী শরীর ঝাঁকিয়ে কেঁদে উঠছে! শেষমেষ এই দিনটা বুঝি ওর কপালে ছিলো! লোকগুলো ওকে ফেলে রুম থেকে চলে যেতেই ও মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। চেয়ারটাসহ ও ছোড়াছুড়ি করছে। কিছুতেই ছুটতে পারছেনা। ব্যর্থ চেষ্টার একপ্রান্তে ও চেয়ারসহ নিচে পড়ে গেলো। বাম কাত হয়ে পড়াতে মাথার বাম পাশে ও বেশ আঘাত পেয়েছে। নিজের সম্মান হারানোর ভয়ে আপাতত সেই ব্যথা গায়ে লাগলো না। মাটির সাথে মাথাটা লাগিয়ে ও অঝরে চোখের পানি ফেলে মনে মনে শুধু ‘আল্লাহ্’ কে ডেকে যাচ্ছে। এতটা নিষ্ঠুর ভাগ্য প্রাহী চায়না! চায়না ও ভাবতেই ফোঁপাতে লাগলো।

।।

কিছুক্ষণ পর গ্যারেজের মতো ঘড়টায় একটা মোটা তাজা লোক সাথে করে আগের ওই লোকগুলো ঢুকলো। নিচে প্রাহীর পড়ে থেকে শরীরটার দিক তাকাতেই মোটা লোকটা জিভ বের করে বললো,

– ‘আরে এ তো একদম খা*সা মা*ল!’

পাশ হতে দু’টো লোক দাঁত বেড় করে হেসে বললো,

– ‘বলেছিলাম না মিনান ভাই! একদম নতুন!’

কুচকুচে কালো মোটা লোকটা প্রাহীর সামনে যেয়ে বসলো। প্রাহীর শরীরের ভাজগুলোর দিক লোলুপ চাহনী দিয়ে বললো,

– ‘এটারে সারারাত আমার লাগবে। চেয়ার দড়ি খোল তাড়াতাড়ি!’

লোকটার কথায় বাকিদুটো লোক তাড়াতাড়ি করে প্রাহীর হাত পায়ের দড়িগুলো খুলে দিয়ে শক্ত করে চেঁপে ধরলো। প্রাহী অনবরত ছটফট করে যাচ্ছে! আগে টিভিতে, খবরে মেয়েদের ধ*র্ষণ হওয়ার কত কথা শুনেছে, দেখেছে। আর আজ নিজের সাথেই যখন তা হতে যাচ্ছে তা ভেবেই প্রাহী চোখের জল ফেলে লাফাতে লাগলো। আচ্ছা আজ পর্যন্ত যে মেয়েগুলো সম্মান হারিয়েছে ওরাও মনে হয় নিজেদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর জন্য এভাবেই লড়ে গেছে! কেউ কেউ হয়তো লড়াই এর সুযোগটাও পায়নি! শেষ হয়ে গেছে নিমিষেই! ওরও কি একই অবস্থা হবে!

লোকদুটো ওর হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে আছে। মোটা লোকটা কিছু একটা ইশারা করতেই সাথে সাথেই ওরা প্রাহীকে নিচে শুইয়ে দিয়ে একজন লোক ওর হাতজোড়া চেঁপে ধরলো। আরেকজন লোক ওর পাজোড়া চেঁপে ধরলো। সবশেষে মোটা লোকটা নিজের জামা খুলতে খুলতে ওর দিক আগাচ্ছে। প্রাহীর এবার সমস্ত শরীর ঝাঁকিয়ে উঠলো। এভাবে বুঝি ওর কলুষিত হওয়ার কথা ছিলো! হায়! আল্লাহ্ এ কি দিন দেখাচ্ছে ওকে! ভাবতেই চোখ বন্ধ করে প্রাহী অবিশ্রান্তভাবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। নিয়তি এতোটা নির্মম কি করে হতে পারে!

বিকট আওয়াজে প্রাহী চোখ টেনে তাকালো। কুৎসিত ওই লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না! ভালোভাবে তাকাতেই দেখলো ওর হাত পা ধরে রাখা লোকগুলো কারোর সাথে কোস্তাকুস্তি করে যাচ্ছে। প্রাহী কোনোমতে উঠে বসলো মুখের ওড়নাটা কোনোরকম টেনে খুললো। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো মোটা তাজা সেই লোকটা ফ্লোরের এক কোণে লাশের মতো পড়ে আছে! মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। প্রাহী সাথে সাথেই মুখে এক হাত দিয়ে চেঁপে ধরলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো ওই দু’টো লোক ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছে কারোর সাথে। প্রাহী তার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। হুট করে লড়াইয়ের এক প্রান্তে লোকগুলো নিচে পড়তেই প্রাহী একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। আবছা আলোয় তেমন চেহারা দেখতে পাচ্ছে না ও। কি মনে করে ও ফ্লোরে বসে থাকা অবস্থাতেই পিছিয়ে দেয়ালের সাথে নিজেকে ঠেকালো। ডান হাত দেয়ালে রেখে ওটার উপর ভর দিয়ে আস্তে করে দাঁড়ালো। দেয়াল ধরে ধরেই ও সামনে এগোতে নিয়ে পড়ে যেতে নিলেই একজোড়া শক্তপোক্ত হাত ওকে তৎক্ষণাৎ চেপে ধরলো। প্রাহী চোখ মেলে উপরে তাকালো। কাঁপা কাঁপা হাতে লোকটার বুকে হাত দিয়ে কোনোরকম আওড়ালো,

– ‘আ…আক….আকসাদ!’

সামনের মানুষটা আকুল চোখে প্রাহীর দিক তাকিয়ে আছে। কিছু একটা মাথায় আসতেই প্রাহীর মুখের পিছনের ওড়নার গিট খোলে সেটা ওর শরীরে জড়িয়ে দিলো। মেঝেতে পড়ে রাখা চেয়ারটা সোজা করে ওকে বসিয়ে দিয়ে বললো,

– ‘এখানে একটু বসুন!’

প্রাহীকে বসিয়ে দিয়ে দ্রুত বেগে মানুষটা মেঝেতে পড়ে থাকা রড দিয়ে তিনজনকে বেরধক পিটিয়ে যাচ্ছে। যেদু’টো মানুষ প্রাহীকে প্রথমে টেনে নিয়ে এসেছিলো তাদের হাত আর মুখে ক্রমাগত রডের বাড়ি পড়ছে। হাতগুলো মনে হয় এতক্ষণে থেতলে গেছে! পায়ের জুতো দিয়ে মানুষটা লোকদুটোর হাতে পা চেপে বললো,

– ‘এই হাত দিয়ে ওকে স্পর্শ করার সাহস করেছিস! এই হাতটাই আমি অকেজো করে দিব! এন্ড আই মিন ইট!’

বলেই রড দিয়ে মানুষটা লোকগুলোর হাতে গুণে গুণে চার থেকে পাঁচটা বাড়ি মারলো। লোকগুলো হাত আর নেই। চামড়া ফেঁটে রক্ত বের হয়ে গেছে সেখানে থেকে। হাতের আঙূলগুলোও থেতলে গিয়েছে! এরপর সেই মোটা তাজা লোকটার কাছে গিয়ে রড দিয়ে তার অণ্ডকো*ষ বরাবর জোড়েসড়ে এক বারি মারলো।

– ‘মেয়েদের রাতের বেলা এভাবে টেনে হিচড়ে আনার আগে এখন থেকে এটার কথায় মাথায় রাখবি অবশ্যই!’

কারো চাঁপা আওয়াজে তাকাতেই দেখলো প্রাহী মুখ হাত চেপে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে। হাতের রডটা সাথে সাথেই ফেলে লোক তিনটাকে একসাথে নিচে পড়ে থেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিলো৷ অতঃপর লোকতিনটাকে একসাথে গোল করে রেখে প্রাহীর নিকট এগিয়ে ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো। প্রাহী সাথে সাথে সেই চওড়া বুকে মুখ গুজে ফোপাঁতে ফোঁপাতে বললো,

– ‘আক…আকসাদ আমার রক্ত আর এসব দেখতে ভালো লাগছেনা! এখান থেকে নিয়ে চলুন প্লি…।’

প্রাহীর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মানুষটা ওকে কোলে করে নিয়ে যেতে লাগলো। যাওয়ার আগে বেঁধে রাখা লোকগুলোর একজনের মাথায় প্রাহীকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই জোরে এক লা*থি মেরে বললো,

– ‘আ’ম নট ফিনিশড উইথ ইউ পিপল!’

প্রাহীকে নিয়ে গাড়ির সাথে একটু দাঁড় করাতেই ও মানুষটার হাতের বাহুতে হাত রেখে বললো,

– ‘আকসাদ! আপনি সত্যিই আকসাদ তো তাইনা!’

প্রাহী কাঁদতে কাঁদতে মানুষটার গালে হাত রাখলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

– ‘আপনি এসেছেন তাইনা! বলুন! আপনি এসেছেন!’

সামনের ব্যাক্তি নিজের গালে থাকা প্রাহীর হাতের উপর হাত রেখে ওর দিক চেয়ে রইলো! এই মেয়েটাই কেন বারবার বিপদের মুখে পড়ে! আজ মেয়েটার সাথে কি হতে যাচ্ছিলো ভেবেই ওর চোখমুখ শক্ত হতে থাকলো। আকসাদ স্বজোরে চোখ বন্ধ করে আকুল চোখে চেয়ে থাকা প্রাহীর ক্রন্দনরত মুখখানা নিজের হাতের ভাজে নিয়ে বললো,

– ‘হু প্রাহী! এসেছি তো! এইযে আমি!’

চলবে,,,

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ২৬(পরিচিত প্রাহী!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– ‘হু প্রাহী! এসেছি তো! এইযে আমি!’

দুপুরের দিক। গ্রাহী বিছানায় হেলান দিয়ে জানালার দিক বাইরে তাকিয়ে আছে৷ আকসাদ কালকে রাতে ওকে বাড়িয়ে পৌঁছে দিয়েছে। আকসাদ যখন ওকে গাড়ির সামনে এনে দাঁড় করিয়েছিলো তার কিছুক্ষণের মাথায় প্রাহী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাড়াতাড়ি আকসাদ ওকে সাবধানে গাড়িতে তুলে কোলে করেই ওদের বাসায় নিয়ে আসে। প্রাহীর বাবা-মা মেয়েকে অচেতন অবস্থায় একটা ছেলের সাথে ওভাবে দেখে যথেষ্ট পরিমাণে হতবাক হয়ে পড়েছিলো। তার মধ্যে মেয়ের হাতে পায়ে দাগ দেখে উনারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো। আকসাদ সাথে সাথে নিজের পরিচয় দিয়ে কোনোমতে প্রাহীর বাবা-মাকে বুঝ দিয়েছে,

“গাড়ির সাথে হালকা ধাক্কা খেয়ে প্রাহী ব্যথা পেয়েছিলো। পথিমধ্যে আকসাদ ওকে দেখে ওকে গাড়িতে তুলতেই নাকি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে! সেজন্য ওকে নিয়ে ওভাবেই বাসায় নিয়ে আসলো!’

যখন শুনেছে আকসাদ শিমলার কাজিন আবার মেয়ের ওমন অবস্থা দেখে প্রাহীর বাবা-মা আর তেমন ঘাটেনি। এছাড়াও আকসাদকে রিমির বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার প্রাহীর মা দেখেছিলেন। আকসাদ কোনোরকম প্রাহীকে ওর রুমে এসে শুইয়ে দিয়েই প্রাহীর বাবা-মার সাথে দু’একটা কথা বলে চলে গেছে! সকালে ঘুম ভাঙ্গলে প্রাহী নিজেকে নিজের রুমে পেয়ে বেশ অবাক হলেও কিছুক্ষণ বাদে ওর মা এসে ওকে সজাগ হতে দেখেই ওকে আগলে ধরে সবকিছু খুলে বলেন। আকসাদ নাকি ওকে দিয়ে গেছে, ওর নাকি জ্ঞান ছিলোনা, তারপর ওর মা ওর ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছে। এর মাঝে প্রাহীর বাবা এসে একফাঁক মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছেন, কিভাবে এক্সিডেন্ট হলো, বেশি ব্যথা পেয়েছে কি না!, ডাক্তার ডাকবে কি না বাড়িতে! প্রাহী মানা করেছে। ও ঠিক আছে বলে বুঝ দিচ্ছে বাবাকে। কিন্তু ওর বাবা কিছুক্ষণ পর পর এসে বলছে ডাক্তার ডাকার কথা, শরীর ভালো লাগছে কি না! সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই করে করেই প্রাহীর কাঁটলো। গোসল সেরে নামাযটা পড়ে প্রাহী কিছুক্ষণ হলো খাটে বসলো।

,

,

,

মাথার বা’পাশটা হালকা ব্যথা করছে। কালকে চেয়ার থেকে ওভাবে পড়ায় মাথায় বেশ ভালো আঘাতই ও পেয়েছে। কালকের কথা মনে পড়তেই প্রাহীর মেরুদণ্ডের মাঝ বরাবর শীতল স্রোত বয়ে গেলো। কাল আরেকটুর জন্য ওর চরিত্রটায় দাগ লাগেনি! আজীবনের জন্য ওর জীবনটা নিশ্চল হয়ে যায়নি! না হলে সবাই ওকে হয়তো এক নামে ‘ধর্ষি*তা’ বলেই ডাকতো! আচ্ছা! ওর এইসব কথা ভাবতেই কেমন যেন দম বন্ধ লাগছে! তাহলে আজ পর্যন্ত যে সকল মেয়েরা সমাজে এক কথায় ‘ধর্ষি*তা’ নামে পরিচিত ওদের কেমন লাগে! সবাই যখন ওদের দিক একটু অন্য নজরে তাকায় তখন ওদের অনুভূতি ঠিক কেমন হয়! অনুভূতি! একটা মেয়ের সব চলে যাওয়ার পর অনুভূতি বলতে কি আর কিছু থাকে! কাল আকসাদ না আসলে হয়তো ওর নামটাও সমাজের ওই সকল ভিক্টিম মেয়েদের তালিকায় থাকতো! ওর জীবনটাও হয়তো অনুভূতিহীন হয়ে যেতো! আকসাদ এর উপস্থিতি শুধু ওর জীবন না! ওর বাবা-মা ওর পুরো পরিবারটাকে বাঁচিয়েছে! নইলে ওর বাবা-মা ওর ভাই শেষ হয়ে যেত! ভাবতেই প্রাহী কেঁদে উঠলো!
রুমের দরজার বাহিরে মাকে দেখতেই চোখমুখ মুছে ফেললো ও! প্রাহীর মা ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসেছেন। প্রাহীর সামনে খাবারটা রাখলেন উনি।

– ‘চোখমুখ ওমন ভিজে যে! খারাপ লাগছে বেশি!’

মায়ের চিন্তিত কন্ঠের কথায় প্রাহী হালকা হেসে বললো,
– ‘ ও কিছুনা! ঠিক আছি মা! তুমি খাবার নিয়ে আসতে গেলে কেন! নিচে যেয়ে খেতে পারতাম তো!

প্রাহীর মা বেশ কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ‘শরীরটা দূর্বল তোর! এখন একটু রেস্টে থাকাই ভালো! নে খাওয়া শুরু কর!’

প্রাহী মায়ের কথায় খাবারের দিক তাকাতেই দেখলো ওর মা ভাত সাথে লাল শাক, কাতল মাছের ঝোল আর টমেটো দিয়ে ডাল মাখামাখা করে রেঁধেছে। প্রাহী ভাতের সাথে সবকিছুই অল্প অল্প করে নিয়ে খেলো। খাওয়া শেষে ওর মা সবকিছু গুছিতে বিছানার সাইড টেবিলে রাখলো। ততক্ষণে প্রাহী হাত ধুঁয়ে এসে বিছানায় বসেছে। প্রাহীর মা এবার ওর দিক ফিরে হাতের ভাজে প্রাহীর হাত এনে বললো,

– ‘প্রাহী তুই আমাকে ঠিক কতটুকু আপন ভাবিস!’

প্রাহী ওর মার কথায় একটু চমকালো। তবুও স্বাভাবিকভাবে বললো,

– ‘তুমি আমার মা! মায়ের ক্ষেত্রে কখনও আপন পর বলতে কোনো শব্দ হয়না! মা সবসময় সন্তানের সবটা জুড়ে থাকে! একদম আত্মার মতো মিশে থাকা যাকে বলে

– ‘যদি সত্যিই আত্মার মতো মিশে থাকি! তোকে নিজের মধ্যে ধারণ করে থাকি! তাহলে সত্যি করে একটা কথা বল তো! কাল কি হয়েছিল তোর সাথে!’

প্রাহী ভীতু নয়নে মার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা! কোনোরকম নিজেকে ঠিক রেখে বললো,

– ‘বললাম তো এক্সি…।’

প্রাহীর মা ওর হাত আর পায়ের দিক ইশারার করে বললো,
– ‘এক্সিডেন্ট হলে কোনোভাবেই হাতে পায়ে এমন কালশিটে দাগ পড়েনা! আমি বোধশক্তি এখনও পুরোপুরি লোপ পায়নি! বল প্রাহী কি হয়েছিলো কাল রাতে!’

প্রাহী কিছু বলছে না। মায়ের দিক তাকিয়ে আছে! প্রাহীর মা অনুরোধ কন্ঠে বলে উঠলো,

– ‘মা রে বল কি হয়েছিলো! আমার ভালো লাগছে না! দয়া করে বল!’

মায়ের ছলছল চাহনী দেখে প্রাহী চোখ বন্ধ করে নিরুপায় হয়ে সবটা খুলে বললো ও। কিভাবে ওই লোকগুলো ওকে আটক করেছিলো,আকসাদ ওকে কিভাবে বাঁচিয়েছে সবটা ওর মাকে বললো ও। মেয়ের মুখ থেকে বিস্তারিত পুরো ঘটনা শুনে উনি কিছুক্ষণ প্রাহীর দিক নির্বাকভাবে তাকিয়ে মেয়েকে জাপ্টে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। শব্দহীনভাবে মেয়েটাকে বুকে নিয়ে উনি কেঁদে যাচ্ছেন। একমাত্র মেয়ে উনার! এই একটা মেয়েকে উনি আর উনার স্বামী ঠিক কতটা স্নেহে বড় করেছেন এটা উনারাই জানেন! আর সেই মেয়ের সাথে কাল ঠিক কি হতে যাচ্ছিলো ভাবতেই উনার রুহু কেঁপে উঠছেন! শরীরটা কেঁপে উঠছে উনার! প্রাহীও মায়ের বুকে মাথা রেখে চোখের জল ছাড়ছে! এই জায়গাটা এতোটা উষ্ণ লাগে ওর কাছে!

মেয়ের মুখটা তুলে প্রাহীর মা কান্নারত কন্ঠে বললেন,
– ‘এতটা ভয়ানক একটা ঘটনা কালকে হয়েছিলো! কিসের মধ্যে দিয়ে তুই গিয়েছিস! আর একটাবার আমাকে বললি না! এভাবে লুকিয়ে গেলি! আমরা কি তোর কেউ না!’

প্রাহীর মা মেয়ের মুখের দিক তাকিয়ে কাঁদতে লাগলেন। প্রাহী ওর মায়ের দিক তাকিয়ে অসহায়কন্ঠে বললো,
– ‘তোমাদের টেনশন দিতে চাইনি! এমনেই বাবার হার্টের সমস্যা। সব মিলিয়ে চেয়েও আর বলিনি।’

– ‘তোর বাবার না হয় হার্টের সমস্যা! আমার তো কোনো সমস্যা নেই! তাহলে আমাকে তো বলতে পারতি! এতটা চাপা স্বভাবের কবে থেকে হয়ে গেলি!’

প্রাহী নীরবে ওর মাক দিক তাকিয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। প্রাহীর মা আঁচল দিয়ে চোখমুছে বললো,

– ‘আমারও দোষ আছে! তোকে ওভাবে রাতের বেলা ওষুধ কিনতে বলাটা উচিত হয়নি। আমার জন্যই…।’

প্রাহী একহাত দিয়ে ওর মায়ের ভেজাগাল মুছতে মুছতে বললো,
– ‘মা এভাবে বলোনা! যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে কিছুই হয়নি আমি ঘরে ফিরেছি! এটাই অনেক না বলো!’

প্রাহীর মা মাথা নেড়ে বললো,
– ‘তা তো অবশ্যই! উপরওয়ালার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। সাথে আরেকজনের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ!’

প্রাহী জিজ্ঞাসুদৃষ্টি দিয়ে বললো,
– ‘কার কাছে!’

প্রাহীর মা মুচকি হেসে বললেন,
– ‘আকসাদ ছেলেটার কাছে! এই নিয়ে পরপর দু’বার ছেলেটা তোকে বাঁচালো! ছেলেটাকে সেবার ডেকেও ডাকা হয়নি। ওকে একদিন বাড়িতে দাওয়াত দিব ভাবছি!’

– ‘কাকে দাওয়াত দিবে!’

প্রাহীর বাবার কথায় ওর মা আর ও পিছন ফিরে তাকালো। প্রাহীর মা দাঁড়িয়ে বললো,
– ‘আকসাদ ছেলেটাকে একদিন দুপুরে দাওয়াত দিতে চাচ্ছিলাম। ছেলেটা যেভাবে মেয়েটাকে কাল সাহায্য করলো!’

প্রাহীর বাবা মাথা নাড়িয়ে মেয়ের পাশে বসতে বসতে বললেন,

– ‘হ্যাঁ তা দেয়া যায়! শিমলার সাথে কথা বলে নিও!’

প্রাহীর মা একপাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। আপাতত প্রাহীর বাবাকে কিছুই বলবেন না উনি। লোকটা এমনেই হার্টের পেশেন্ট। এত ধকল উনি নিতে পারবেন না! মেয়েটা এত বড় বিপদ হতে রক্ষা পেয়েছে! কাল একবার মসজিদে কিছু দান করবেন বলে প্রাহীর মা ভাবছেন! মেয়ে আর মেয়ের বাবার দিক তাকিয়ে উনি প্লেটগুলো নিয়ে ঘর থেকে বেড়োলেন।

– ‘শরীর এখন কেমন লাগছে আম্মা!’

প্রাহী মুচকি হেসে বললো,
– ‘ভালো বাবা!’

– ‘সত্যি তো! ডাক্তার…।’

প্রাহী ওর বাবার হাতের বাহুতে মাথা রেখে বললো,

– ‘বাবা! ঠিক আছি আমি। এত ডাক্তার ফাক্তার লাগবে না! এবার থামো তো!’

প্রাহীর বাবা হেসে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে আম্মা! থামলাম!’

প্রাহী হেসে বাবার বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।

,

,

,

———

,

,

,

বিকালের দিক শিমলা আর তুলি এসেছে প্রাহীর বাসায়। তিনবান্ধবী মিলে বেশকিছুক্ষণ গল্প করে নিচে নেমে এসেছে। শিমলা নিচে এসেই প্রাহীর মার কাছে যেয়ে বললো,

– ‘কাকীমা! প্রাহীকে নিয়ে একটু বাইরে যেতে চাচ্ছিলাম!’

প্রাহীর মা শিমলার কথায় একটু ইতস্তত বোধ করলেন। মেয়েটা এমনেই কালকে ওমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে। এখন মেয়েটাকে এভাবে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা! শিমলা প্রাহীর মা’য়ের দিক তাকিয়ে উনার হাত ধরে বললো,

– ‘কাকীমা টেনশন করোনা! যা হয়েছে তা হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে ঘরে বসে থেকে কি হবে বলো! আর আমরা আছিতো! আমাদের মধ্যে তুলি আবার কারাটে জানে! কি রে তুলি?’

তুলি মাথা নাড়িয়ে হাত পা দুলিয়ে ইশারা করে বললো,
– ‘হ্যাঁ কাকীমা। এই কয়দিন হলো কারাটে শিখলাম! ভালোই পারি! খারাপ না!’

শিমলা সেদিক তাকিয়ে গেসে বললো,
– ‘দেখেছো আর চিন্তা কিসের! তাছাড়া কালকে থেকে ফাইনাল! একটু মাইন্ড ফ্রেশ করাটাও তো দরকার!’

– ‘মেয়েটার শরীর ভালো না যেহেতু পরীক্ষাটা না হয় বাদ থাকুক! পরে এপ্লিকেশন করে না হয় পরীক্ষা দিলো!’

প্রাহীর বাবার কথায় সবাই পিছনে তাকালো। শিমলা প্রাহীর বাবার সামনে যেয়ে বললো,

– ‘কেন কাকাবাবু! পরীক্ষা বাদ থাকবে কেন! প্রিপারেশন যেহেতু নিয়েছে পরীক্ষাটা না হয় দিক! তাছাড়া ও তো মোটামুটি ভালোই
আছে। শুধু শুধু আর ইয়ার লস বা গ্যাপ দেয়াটা কি দরকার! এমনেই অনেক সময় চলে গেছে মাঝখান দিয়ে। আর এই এপ্লিকেশন করে পরীক্ষা দেয়াটা ঝামেলার তার চেয়ে বরং কাল থেকেই পরীক্ষাটা দিক!’

প্রাহীর বাবা শিমলার কথায় হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– আচ্ছা! পরীক্ষা নিয়ে এত সিরিয়াস! তাহলে তো এবার দেখতে হয় কে কেমন প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দিলি! রেজাল্ট কিন্তু দেখব এবার!’

– ‘আচ্ছে দেখো!’

বলেই শিমলা হাসলো। প্রাহীকে নিয়ে যেতে যেতে প্রাহীর মার দিক ইশারা করে বললো,
– ‘যাচ্ছি কাকীমা! টেনশন করোনা। আগে আগেই চলে আসব। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও আমি দিয়ে যাব!’

প্রাহীর মা চিন্তার রেশ মুখে রেখে বললেন,
– ‘সন্ধ্যার আগে আসারই চেষ্টা করিস আর সাবধানে যাস!’

,

,

,

রাস্তা দিয়ে তিনবান্ধবী হেঁটে যাচ্ছে। প্রাহীর মুখ থেকে সবশুনে শিমলা আর তুলি বেশ ভয় পেলো। প্রাহীর হাতে হাত রেখে ওকে অভয় দিয়ে তুলি বললো,

– ‘এমন একটা পরিস্থিতি থেকে ঠিকভাবে বের হতে পেরেছিস এটাই অনেক!’

তুলির কথায় শিমলা মাথা নেড়ে বললো,

– ‘সেটাই! এগুলো নিয়ে ভয় পাসনা এখন আর! আর ভয় পেলেও নিজেকে শক্ত রাখবি! এইসব মাথায় আর আনিস না।’

তুলি প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘তা ওই জা*নোয়ারের বা*চ্চা গুলোর কি হলো পড়ে!’

প্রাহী ভীত কন্ঠে বললো,
– ‘আকসাদ উনাদের দুর্দশা অবস্থা করে দিয়েছিলো। হাত দিয়ে মনে হয় ইহজনমে আর কিছু করে খেতে পারবেনা। পরে কি করেছে আমি জানিনা!’

প্রাহীর কথায় শিমলা বললো,
– ‘মেরে উড়িয়ে দিয়েছে!’

প্রাহী আর তুলি বড় বড় চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো! শিমলা তা লক্ষ্য করে বললো,

– ‘আরেহ্! বললাম আর কি! আকসাদ ভাই মনে হয় ওই সয়*তান গুলোর একটা না একটা ব্যবস্থা করেছেই! কিন্তু মেরে উড়িয়ে দিলেই ভালোনা!’

শিমলার কথায় তুলি বললো,
– ‘তা তো অবশ্যই। বেঁচে থাকাটাই উচিত না এগুলোর।’

প্রাহী সব শুনতে লাগলো। এদিকে তুলি খপ করে প্রাহীর কাঁধ চেপে বললো,
– ‘এই যে আমি কিন্তু সব জানি!’

তুলির কথায় প্রাহী শিমলার দিক তাকাতেই শিমলা মুচকি হাসলো। তার মানে শিমলা! প্রাহী তুলির দিক তাকিয়ে দেখলো ও ওর দিক তাকিয়ে স*য়তানী হাসি দিচ্ছে। প্রাহী মাথা ঘুড়িয়ে ফেললো।

– ‘ওভাবে মাথা ঘুড়িয়ে লাজ পেয়ে কাজ নেই! আমায় সব বলতে হবে!’

প্রাহী ঘাড় ঘুড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো ওরা হাঁটতে হাঁটতে খোলামেলা একটা জায়গায় এসেছে। সচরাচর এখানে খুব একটা মানুষ আসেনা!

– ‘আচ্ছা সব কথা পরে হবে! প্রাহী তুই সামনে এগো আমি আর তুলি একটু আসছি!’

শিমলার কথায় প্রাহী চমকে উঠে বললো,

– ‘আমি সামনে এগোবো মানে! তোরা কোথাও যাচ্ছিস!’

শিমলা সরল হেসে বললো,

– ‘আরে বাবা আমরা আছি! খাওয়ার জন্য কিছু কিনবো! তুই এগো!’

– ‘আমি একলা যেতাম!’

শিমলা প্রাহীর হাত ধরে হেসে বললো,
– ‘তুই একা নোস! নির্দ্বিধায় শুধু সামনে যা!’

বলেই তুলিকে নিয়ে শিমলা হেঁটে চলে গেলো। তুলি যাওয়ার আগে প্রাহীকে ইশারায় ‘বাই বাই’ বলে গেলো।

এভাবে ওদের চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে প্রাহী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আস্তেধীরে সামনে পা ফেলে এগোতে থাকলো। একা একা বেশ ভয় লাগছে! খানিকটা হেঁটে ভাবছে পিছনে ফিরে যাবে। সামনে কিছুটা যেতেই ও একটু দাঁড়ালো। কিছুদূর এগোতেই প্রাহী থামলো। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে। যার পিহন সাইডটা শুধু দৃশ্যমান! পরিচিত মানুষ দেখে ও না চাইতেও হালকা হাসলো।

– ‘আকসাদ!’

মানুষটা পিছন ফিরেই প্রাহীর দিক তাকালো। দ্রুত পা ফেলে ওর কাছে এগিয়ে আসলো। প্রাহীর কাছে এসে দাঁড়িয়ে আকসাদ ওর হাতের আঙুলগুলো নিজের হাতের ভাজে নিয়ে ওর দিক তাকিয়ে ব্যাস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
– ‘প্রাহী! কেমন আছেন!’

প্রাহী আকসাদের দিক তাকিয়ে খুশিকন্ঠে বললো,
– ‘এইতো ভালো আছি! আপনি কেমন আছেন!’

– ‘আমি ভালো আছি। এখন আরও বেশি ভালো আছি!’

প্রাহী আকসাদের কথায় হালকা হাসলো। আকসাদ সেই হাসির দিক অপলক তাকিয়ে ওর মুখের দিক চেয়ে মাথার বা’পাশে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,

– ‘মাথার কি অবস্থা! বেশি ব্যাথা করছে!’

প্রাহী মাথা নেড়ে বললো,
– ‘না আপাতত ঠিক আছি!’

আকসাদ প্রাহীর দিক চেয়ে বললো,
– ‘কালকে রাত থেকে কোনো খবর আপনার পাচ্ছিলাম না। এজন্য শিমলাকে দিয়ে পাঠালাম আপনার একটু খোঁজ নিতে!’

– ‘আর আমাকে বের করে নিয়ে আসতে তাইতো!’

আকসাদ হেসে বললো,
– ‘হুউ!’

প্রাহী আকসাদের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। এরপর আকসাদ ডান হাতেটায় নিজের হাত দ্বারা কাছে এনে আলতো করে ধরলো।

– ‘আকসাদ!’

আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়েই!
– ‘বলুন প্রাহী!’

প্রাহী আকসাদের চোখে চোখ রাখলো,

– ‘আকসাদ! আপ…আপনার জন্য গতকাল শুধু আমার সম্মানটাই রক্ষা পায়নি। আমার বাবা-মা পুরো পরিবারের সম্মানটা রক্ষা পেয়েছে। আমার জীবনটাকে অন্ধকারে তলিয়ে যাবার আগে এবারও আপনি বাঁচিয়ে নিয়েছেন! আম..আমি।’

প্রাহী কান্নার ঢোক গিলে আবার বললো,

– ‘আপনাকে যত ধন্যবাদই দেই না কেন! ধন্যবাদ দিলে আপনাকে ছোটো করা হবে। আপনার কাছে আম…আমি সারাটা জীবনের জন্য ঋণী হয়ে রইলাম! নইলে আমার জীবনটা কলুষিত হয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার ছিলোনা। ওই রাতের অন্ধকারে হয়তো আমাকে ওরা ধর্ষ…।’

আকসাদ প্রাহীর ঠোঁটে আঙুল চেপে বললো,
– ‘ অনেক বলে ফেলেছেন! আর কোনো কথা না!’

প্রাহী এবার চোখের জল ফেলে বললো,
– ‘আক…আকসাদ! আমি…।’

আকসাদ প্রাহীর মুখটা এবার নিজের হাতের ভাজে রেখে বললো,

– ‘প্রাহী আপনজনদের মানুষ কখনও ধন্যবাদ জানায় না! আর আপনি যতবার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে নিবেন ততবারই আমি আপনায় টেনে আনবো। উপরওয়ালা যাতে সেই সুযোগ আমাকে বারবার করে দেয়! কারণ তা না হলে যে আমার জীবনটাও আঁধারে ছেয়ে যাবে! বাকি রইলো আপনার ঋণী হওয়ার কথা! প্রিয়জনদের কাছে কেউ কখনো ঋণী থাকেনা প্রাহী!’

এরপর প্রাহীর মাথার চুলগুলো কানে গুজে বললো,
– ‘আর যদি ঋণ পরিশোধ করতেই চান তাহলে এক উপায়ে করতে পারেন!’

প্রাহী জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললো,
– ‘কোন উপায়ে!’

আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
– ‘আপনার একটা প্রশ্নের আজকে উত্তর দিব প্রাহী!’

আকসাদের কথায় প্রাহী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কিছু একটা ভাবতেই প্রাহী আকসাদের বাহুতে হাত রেখে বললো,
– ‘এখন ওসব কথা থাক আকসাদ! আমার আর কোনো প্রশ্নের উত্তর চাইনা!’

আকসাদ প্রাহীকে থামিয়ে বললো,
– ‘কিন্তু আমি আজ বলতে চাই!’

– ‘কিন্তু!’

– ‘হুউশশশ্!’

বলে প্রাহীর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরে বললো,

– ‘চুপটি করে থাকুন!’

প্রাহী আকসাদের কথামতো চুপ করে রইলো। আকসাদ একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। বুকে রাখা প্রাহীর মাথায় হাত বুলিয়ে বুলাতে বুলাতে সামনে খোলা প্রান্তরের দিক তাকালো।

– আজ থেকে প্রায় দশ থেকে এগারো মাস আগে বাবার বিজনেস ডিলের জন্য আমি প্রথম ঢাকায় আসি। এর আগে সব ডিল বাবা সামলালেও প্রথম আমাকে ঢাকায় পাঠায় ডিলটা কনফার্মের জন্য। কারণ বাবার বিজনেসে তখন একটু সমস্যা চলছিলো। সেনসিটিভ ইস্যু থাকায় বাবা আর রিস্ক নিতে চায়নি। ঢাকা থেকে যেই ডিল এর জন্য বাবার কোম্পানিকে অফার করা হয় সেই কোম্পানিটা বাবার ফ্রেন্ডেরই ছিলো। তাও সবকিছু একবার নিজ চোখে দেখে যাচাই করার জন্য বাবা আমাকে ঢাকায় যেতে বলে। ঢাকায় গেলাম। ১০ই অক্টোবর আমাদের ডিলটা ফিক্সড হয়। সেদিন আমি গাড়ি ড্রাইভ করে ডিলটা এক্সেপ্ট এর পর হোটেলের দিক যাচ্ছিলাম। ঢাকায় এসে প্রত্যেকবার ফুপির বাসায় উঠলেও সেবার উঠিনি। কারণ আমি চাচ্ছিলাম কাজটা করেই চলে যেতে। তাই আর কাউকে জানাইনি। পথিমধ্যে জ্যাম! ঢাকা শহর! এখানে একটা নিত্যদিনের ঘটনা। তারপরও গরমে খুব অসহ্য লাগছিলো। একঘন্টা জ্যামে বসে বিরক্তি নিয়ে পাশে তাকাতেই চোখ কিছু একটার দিক আটকে গেলো। কালো শাড়ি পরিহিত একটা মেয়ে, মাথার এক পাশে বেনী ঝুলানো, চোখে কাজল ছাড়া মুখে আর কিছুই নেই! শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার কপালের,নাকের, ঠোঁটের উপরের ঘাম মুছে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে! জ্যাম ছাড়তেই অজান্তেই আমি ড্রাইভার কে বললাম গাড়ি নিয়ে একটু দাঁড়াতে! এর মধ্যে যাত্রীভর্তি একটা বাস আসতেই মেয়েটা বাসে উঠতে যেয়েও উঠতে পারছেনা। কারণ প্রচুর যাত্রী কিভাবে উঠবে! ঢাকা শহরের বাস যেমন হয় আর কি! এদিকে হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে! পরপর দু’টো বাস মিস হতেই মেয়েটা এবার চিন্তিত নজরে হাতঘড়ির দিক তাকিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। শেষবারের মতো আরেকটা বাস এলো মেয়েটা এবার শাড়ির কুঁচি ধরে বাসে উঠতেই ভীড় দেখে ভীতু নয়নে জলদি পিছনে সরে এলো। ফিক করে হেসে দিলাম! এ অবস্থা দেখে আমার কেন জানিনা না চাইতেও হাসি চলে এলো। এরপর মেয়েটাকে দেখলাম একটা সি এন জি নিলো। মেয়েটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে না চাইতেও সিএনজি ভাড়া করছে কারণ একা একটা মেয়ে সিএনজি তে উঠতে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক! রাত বাজে প্রায় দশটা! সিএনজি তে উঠার পর কি মনে করে আমি ড্রাইভার কে বললাম, সিএনজি টার পিছু নিতে! কিছুক্ষণ পর একটা তিনতালা বাড়ির সামনে সিএনজি টা থামলো। মেয়েটা বের হয়ে ভাড়া পরিশোধ করেই মাথায় ব্যাগ দিয়ে দৌড়! কারণ বৃষ্টি পড়ছিলো ততক্ষণে। মেয়েটার পরনের শাড়ি,চুল সব ভিজে গিয়েছিলো। মেয়েটার চলে যাওয়ার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম! হোটেলে ব্যাক করার পর ফ্রেশ হতে বারবার সেই মেয়েটার কথাই মনে পড়ছিলো! তার ওভাবে শাড়ির কুঁচি ধরে বাসে উঠার চেষ্টা, আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে চিন্তিত নজরে তাকানো। সবকিছু বারবার ভেসে উঠছিলো মনে! পরের দিন কিছু কাজ সেরে বাসার পথে ফিরছিলাম। নিজেই যেহেতু ড্রাইভ করছিলাম যে বাড়ির সামনে মেয়েটা নেমেছিলো সেখানে যেয়ে গাড়িটা দাঁড় করাতেই দেখলাম কালো শাড়ি পরিহিতা সেই মেয়েটা লাল চুড়িদার পড়নে চুলগুলো ছাড়া অবস্থায় আরও দুইটা মেয়ের সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ির গেইট থেকে বের হচ্ছে! লাল চুড়িদ্বারে মেয়েটাকে সদ্য ফোটা লাল গোলাপের মতোই লাগছিলো! মেয়েটার খিলখিল হাসির শব্দ কানে যেতেই তাকিয়ে রইলাম । ফোনটা পকেট থেকে বের করে মেয়েটার অনুমতি ব্যাতীত একটা ছবি তুলে নিলাম! মেয়েটা চলে যাবার পরেও কতক্ষণ ওখানে ওভাবে বসে ছিলাম জানিনা! এরপর থেকে প্রায়ই সময়ই তিনতালার ওই হালকা আকাশীরঙা বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি! মেয়েটা যাওয়া আসা করতো, বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটাচলা করতো। আমি তা দূর হতে দেখতাম শুধু! কিসের জন্য ওভাবে দেখতাম বা একপলক দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম জানিনা! বেশ কয়েকদিন এভাবে কেটে গেলো! একদিন দেখি মেয়েটা আর রোজগারের মতো বাড়ির বাইরে হতে যাওয়া আসা করছেনা! প্রথম প্রথম মেয়েটার দেখা না পেলেও এভাবে এক সপ্তাহ চলতে থাকলো। মেয়েটাকে না দেখে আর না পেরে বাড়ির দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটার ছবি দেখিয়ে যে মেয়েটা কোথায়! দারোয়ানটা বলতে চাচ্ছিলো না। কিছু চকচকে নোট দিয়ে দারোয়ান এর মুখ খুলিয়েছি। মেয়েটা নাকি ওর মামার বাসায় বেড়াতে এসেছিলো কোনো কয়দিন আগেই নাকি চলে গেছে। মেয়েটা নাকি ঢাকাতে থাকেনা! দারোয়ানের উত্তর শুনে কেন জানিনা মন মেজাজ নিমিষেই খারাপ হলো। আমারও কানাডা যাওয়ার ফ্লাইট ঘনিয়ে আসছিলো। মেয়েটাকে দেখতে না পেরে কেমন যেন অস্থির লাগছিলো! ইমারজেন্সি কানাডায় ব্যাক করলাম। ভাবলাম কানাডায় গেলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু না! ওখানে যেয়ে মেয়েটার চেহারা বারবার আমার চোখের সামনে ভাসছিলো। তাও ভেবেছি মেয়েটাকে হয়তো এমনেক ভালো লেগেছে তাই এমনটা হচ্ছে! নিজেকে বুঝ দিলেও শান্তি পাচ্ছিলাম না! মনে হচ্ছিলো বারবার কিছু একটা ফেলে এসেছি! নিজের প্রতি নিজের বিরক্তি চলে আসছিলো। না পেরে মাকে কথাটা বললাম! মা শুধু মুচকে হেসে বলেছিলো,

‘যদি মনে হয় কিছু একটা মিসিং তার মানে মেয়েটাকে শুধু তোমার ভালো লাগেনি! মেয়েটা শুধু তোমার ক্ষণিকের ভালো লাগার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়!’

মায়ের কথাটা হয়তো ফলে গেছে! তিন মাস, চার মাস, ছয় মাস আমি কিছুতেই মেয়েটাকে ভুলতে পারছিলাম না! শুধু চাচ্ছিলাম মেয়েটাকে একবার নিজের সামনে এনে দেখতে! আর না পেরে নিজের ব্যাক্তিগত লোকদের কে দিয়ে মেয়েটার খোঁজ লাগালাম! জানলাম মেয়েটা খুলনায় থাকে! আর ততদিনে শিমলার বড় বোনের বিয়ে উপলক্ষে আমাদেরও খুলনায় যেতে হতো! মাকে কথাটা জানিয়ে আমি আগেভাগে খুলনায় চলে গেলাম। মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম! ভাবছিলাম শিমলাকে বলবো মেয়েটার ছবি দেখিয়ে যে চিনে কি না! কিন্তু একদিন শিমলাকে ভার্সিটি থেকে আনতে যেয়ে দেখলাম ও কিছু মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে! শিমলাকে ইশারায় ডাকতে যেতেই হঠাৎ ওর পাশে চোখ যেতেই আমার ভিতরের রক্তমাংসে গড়া অঙ্গটা যেন থমকে গেলো! যেই মেয়েকে আমি খুঁজে চলেছি দিনের পর দিন,মাসের পর মাস, যার জন্য আমার চলা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিলো সেই মেয়ে দাঁড়িয়ে আরামে ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে! আমি আমার জীবনে প্রত্যেকটা বিষয়ে সফলতা পেয়ে এতটাও খুশি হইনি সেদিন ওমন মেয়েটাকে খুঁজে পেয়ে যেমন খুশি হয়েছি! জানলাম মেয়েটা শিমলার ছোট্টবেলার বান্ধবী! মনে মনে হাসলাম যাকে খুঁজে চলেছিলাম সে আমার ঘরের মানুষেরই নিকটতম একজন! ভাবলাম সাথে সাথেই মেয়েটার সামনে যেয়ে দাঁড়াই! যেয়ে বলি,

‘মেয়ে তোমায় আমি খুঁজে চলেছি হন্ন হয়ে!
তুমি কি তা জানো!’

পরে ভাবলাম আড়াল থেকে আরও কিছুদিন দেখতে ক্ষতি কি! আপনঅতঃপর আপার বিয়ের হলুদের অনুষ্ঠানে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় মেয়েটাকে দেখে আর নিজেকে আর সামলাইনি! সামনাসামনি অবশেষে ধরা দিলাম!

আকসাদ থামলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হালকা হেসে বললো,
– ‘সেই মেয়েটি হচ্ছে ‘আপনি’ প্রাহী!’

প্রাহী নিষ্পলক আকসাদের দিক তাকিয়ে রয়েছে! এতগুলো দিন ধরে ও কারোর নজরে বন্দী ছিলো! আর ও টেরই পাইনি! এতটা গভীরভাবে ও কারোর মনে গেঁথে ছিলো! সবটা কেমন যেন কল্পনা মনে হচ্ছে! প্রাহী আকুল চোখের কোন কেন জানিনা ভিজে উঠলো! আকসাদ প্রাহীর মুখটা তুলে ধরে নিজের একদম কাছে আনলো। প্রাহীর গালে হাত বুলিয়ে ছোট ছোট কন্ঠে বললো,

– ‘আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন আমার পরিচিত প্রাহী!’

প্রাহী আকসাদের চোখের দিক চেয়ে রইলো! আকসাদ প্রাহীর চোখের দিক তাকিয়েই আলতো কন্ঠে বললো,
– ‘শুরু থেকেই আপনাকে চেয়ে এসেছি প্রাহী! আপনি আমার হলেই চলবে! সকল ঋণ সেদিন শোধ হয়ে যাবে!’

বলেই আকসাদ প্রাহীর মুখটা সামনে এনে নাকের ডগায় গভী*র ভাবে চু*মু খেলো। প্রাহী কেঁপে উঠে আকসাদের,,,

চলবে,,,