#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩৩(তুমি!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী
– ‘সম্পর্কের জোড়া ধীরে ধীরে লাগছে তবে?’
শিমলার কথায় প্রাহী আকসাদের পানে চাইলো। আপাতত সে ওর বাবা আর কাকার সাথে কথা বলছে! প্রাহী ভাবলো, এইতো সেইদিনই এই মানুষটার সাথে দেখা হলো! আর আজ মানুষটা ওর বাগদত্তা! ভাবতেই ওর হৃদয় কম্পিত হলো! পাশ থেকে শিমলার মা প্রাহীকে খোঁচাতেই সেদিক তাকালো।
– ‘ উঠ! উঠে বাবা-মা আর হবু শ্বশুর শাশুড়ীর কাছ হতে আশীর্বাদ নিবি আয়?’
প্রাহী আর আকসাদ দু’জনে মিলে একে অপরের বাবা-মাকে সালাম জানালো৷ প্রাহীর মা মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে আকসাদকে মুচকি হাসি উপহার দিলেন! প্রাহী ওর বাবার কাছে যেতেই ওর বাবা ওকে আর আকসাদকে স্বাভাবিকভাবেই আশীর্বাদ করলেন। প্রাহী ওর বাবার দিক করুণ চাহনী দিতেই প্রাহীর বাবা অন্যদিক মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আকসাদ তা দেখে আপাতত প্রাহীর হাত ধরে ওর বাবা-মার কাছে গেলো৷ আকসাদের বাবা হাসিমুখে দুজনকে আশীর্বাদ করে দিলেন! আকসাদের বাবা প্রাহীর মাথায় হাত বুলিয়ে আকসাদের দিক তাকিয়ে হেসে বললেন,
– ‘মেয়ে তো ভারী মিষ্টি! পছন্দ আছে বলতে হবে?’
আকসাদ সাথে সাথেই মাকে ইশারা করে উত্তর দিলো,
– ‘তোমার গুণ পেয়েছি আর কি?’
উপস্থিত সবাই হেসে দিলো। আকসাদের মা আকসাদের দিক তাকিয়ে প্রাহীর থুতনীতে হাত রেখে বললো,
– ‘সুখী হও! এখন শুধু তোমায় বরণ করার পালা!’
প্রাহীর লজ্জায় মুখ নিচু করে রইলো। আকসাদের মা প্রাহীর থুতনী উঁচু করে বললো,
– ‘আরে লজ্জা পাচ্ছ নাকি? সত্যি কথায় কিসের লজ্জা! যদিও এসময়টায় লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক। তবে তোমার লজ্জা দেখে আমার নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে! আমিও এমন হুটহাট লজ্জা পেতাম!’
– ‘আবার করবে নাকি বিয়ে বাবাকে? আবার নাহয় লজ্জার এক্সপেরিয়েন্স নিলে?’
আকসাদের মা আকসাদের দিক তাকিয়ে সহজভাষায় বললো,
– ‘না আপাতত তোরাই বিয়ে কর! তোদের যখন ছেলেমেয়ে হবে ওদের বিয়ের সময় শেষ বয়সে যখন একলা থাকব তখন না হয় আবার বিয়ে করলাম!’
আকসাদের বাবা ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
– ‘আচ্ছা! তখন আমি থাকলে?’
আয়লিনা হোসেন হতাশার শ্বাস ছেড়ে বললেন,
– ‘তাহলে আর কি করা! তুমি বুড়োকেই না হয় আবার বিয়ে করলাম!’
আকসাদের মায়ের কথায় সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে গেলো। প্রাহী অস্বস্তিতে মাথা নামিয়ে ফেললো। বিয়ে এখনও হয়নি তার আগেই বাচ্চা গাচ্চা নিয়ে কথা শুনতে হচ্ছে! প্রাহী আস্তে করে আকসাদের হাত থেকে হাত সরাতেই আকসাদ হাসির মাঝেই প্রাহীকে একটু আগে পড়িয়ে দেয়া আংটি পড়ানোর হাতটা নিজের সাথে শক্ত হাতে চেপে ধরলো। প্রাহী আর কিছু না বলে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রাহী এখন নিজ বিছানায় বসে! আকসাদরা রাতের দিক খাওয়া দাওয়া শেষেই চলে গেছে। প্রাহী হাতের অনামিকা আঙুলের দিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কয়দিন আগে পরিচয় হওয়া মানুষটা আজকে ওর হাতে নিজের নামে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেছে! সবটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে ওর কাছে! ঝলমলে আংটিটার দিক তাকিয়ে নাড়াচাড়া দিতে লাগলো ও!
– ‘আংটি টা খুলিস না!’
মায়ের কথায় প্রাহী চোখ তুলে তাকালো,
– ‘খুলছিলাম না। কিন্তু সবসময় এটা পড়ে থাকা কেমন না?’
প্রাহীর মা ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
– ‘কেমন মানে? মেয়েদের এনগেজমেন্ট এর পর এনগেজমেন্ট রিং পড়ে থাকাটা ভালো।’
প্রাহী মায়ের কথায় মাথা নেড়ে আন্টির দিক তাকালো। প্রাহীর মা মেয়ের দিক তাকালেন। কাল পরশু যেই মেয়ে তার দিব্যি সাধারনভাবে দিন কাটাচ্ছিলো আজ সেই মেয়ের আন্টি পড়ানো হয়ে গেছে! কয়দিন পর বিয়েও হয়ে যাবে! আকসাদের পরিবার আর তাদের পরিবার মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পৌছিয়েছে, মেয়ের ফাইনাল শেষ হলেই উনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের তারিখ ফিক্সড করবেন! মেয়েটার বুঝি এবার চলে যাবার সময় হলো! ভাবতেই প্রাহীর মায়ের চোখ ভারী হয়ে এলো। সাথে সাথে মেয়েটার মাথা নিজের বুকে চেঁপে ধরে উনি ফুপিয়ে উঠলেন। হুট করে মায়ের এমন কান্ডে প্রাহী নরম গলায় মায়ের বুকে মাথা দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কি হয়েছে মা?’
প্রাহীর মা মেয়ের মাথা চেপে বললেন,
– ‘কবে এত বড় হয়ে গেলি! এইতো সেদিন স্কুলে ভর্তি হলি, মাথার দু’পাশে বেণী গেঁথে কলেজে যাওয়া আসা করতি! আর আজ বাদে কাল অন্যের বাড়ি চলে যাবি?’
প্রাহী এবার মাথা তুলে নিজের মায়ের দিক তাকালো। মায়ের চোখে পানি দেখে ওর চোখ নিমিষেই ভিজে উঠলো। আসলেই তো! নিজ গৃহে ওর অবস্থান আর মাত্র সীমিত সময়ের জন্য! তারপর নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে…! ভাবতেই প্রাহীর বুকটা কেঁপে উঠলো। মায়ের বুক চটজলদি মাথা রেখে ও বললো,
– ‘বিয়ে করবো না। উনাদের কাল জানিয়ে দিও!’
প্রাহীর মা অবাক হয়ে মেয়ের মুখ তুলে শুধালেন,
– ‘কেন?’
– ‘আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না মা! আর বিয়ে যদি করতেই হয় আমি না হয় তোমাদের কাছে থাকব!’
প্রাহীর মা মেয়ের অবুঝ কথার প্রেক্ষিতে কান্নার মাঝেই ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বললেন,
– ‘তোর হাসবেন্ড থাকবে কানাডায় আর তুই থাকবি খুলনায়? এটা হয়!’
– ‘কেন হয়না? উনি না হয় এসে আমাকে দেখে যাবে!’
প্রাহীর মা মুখে হাত বুলিয়ে বললো,
– ‘এমন যদি হতো তাহলে প্রত্যেক মেয়ে নিজের বিয়ের পর বাবা-মায়ের ঘরেই থেকে যেতো! এই যেমন আমাকে দেখ! বিশটা বছর তোর নানা-নানুর সাথে থেকে উনাদের ছেড়ে এসে তোর বাবার সাথে সংসার করছি! তোর বাবার পরিবারের মানুষগুলোকে নিজের আপন মানুষ ভেবে ওদের সাথে একছাদের নিচে থেকেছি। মেয়েদের জীবনটাই এমন! জন্মের পর আপন মানুষগুলোকে পর করে অন্য এক ছাদের নিচে বসবাস করা মানুষগুলোকে আপন ভেবে তাদের নিয়েই বাকি জীবনটা পার করতে হয়! তোকেও তা করতে হবে!’
প্রাহী নিরব কন্ঠে বললো,
– ‘এ কেমন নিয়ম?’
প্রাহীর মা ক্ষুদ্র হাসলেন,
– ‘নিষ্ঠুর নিয়ম! যা অনিচ্ছাকৃতভাবেই মেনে নিতে হয়?’
প্রাহীর মা প্রাহীর মুখটা নিজ হাতের আদলে নিয়ে বললো,
– ‘আকসাদ যথেষ্ট সভ্য একটা ছেলে। আজকের দিনটাসহো এই পর্যন্ত ওকে যতটুকু চিনেছি, ছেলেটা কখনও তোর উপর কোনো আঁচ আসতে দিবেনা! ছেলেটা তোকে বড্ড ভালোবাসে! এটা আমার থেকে তুই হয়তো ভালো জানিস! সবসময় ওর খারাপ বা ভালো সময় যাই হোক না কেন ওর পাশে থাকবি! কখনও ওকে একলা অনুভব করতে দিবিনা! যদি তোর দ্বারা কোনো ভুল হয়েও যায় তাহলে সেই ভুলটা ভালোবাসা, অনুরক্তি দিয়ে শুধরে নিবি। দেখবি সম্পর্কের গোড়াটা মজবুত হয়ে থাকবে! বুঝেছিস!’
প্রাহী মায়ের কথায় বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়লো। প্রাহীর মা মেয়ের চোখের পানি মুছে বললেন,
– ‘ আজ সারাদিন তোর উপর অনেক ধকল গেছে। আর কাঁদিস না। ঘুমাবি আয়। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি!’
প্রাহী চটজলদি মায়ের কাছটায় বালিশে শুয়ে পড়লো। প্রাহীর মা মেয়ের মাথায় আদর নিয়ে হাত বুলাতে লাগলেন। দরজার ওপাশ থেকে আরেকজোড়া পা তাদের অগোচরেই চলে গেলো।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
রাতে শিমলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের সামনে বারবার আকসাদের প্রাহীর হাতে আংটি পড়ানোর দৃশ্য ফুটে উঠছে। আজ অনেক কষ্টে নিজেকে ও সামলেছে! চোখের পানি উবে আসলেও হাসি দিয়ে তা আটকিয়েছে! শিমলা নিজের উপর হাসলো! যে মানুষটাকে একসময় ও চেয়ে এসেছে সেই মানুষটা আর ক’দিন পর অন্য কারোর সাথে একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবে! সেই অন্য কেউটা আর কেউ না! নিজেরই সবচেয়ে কাছের বান্ধবী! চোখের সামনে নিজের পছন্দের মানুষটার বিয়েটা ও সয়ে নিয়ে পারবে তো! সব কষ্টগুলো গিলে স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারবে! রাতের আঁধারে চোখ মেলে নিজেকে হারালো। হয়তো চেষ্টা করছে অন্ধকারে নিজের লুকোনো দুঃখগুলো ডুবিয়ে দিতে!
দেখতে দেখতে প্রাহীদের ফাইনাল শেষ। আজকে শেষ পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষার পর ২/১ টা ভাইভা হবে শুধু। হল থেকে বেরোতেই প্রাহীকে তুলি,রাতুল, ওরা ঘিরে ধরলো। এনগেজমেন্ট এর পর থেকেই এরা এতোদিন ধরে ওকে জ্বালিয়ে এসছে! ক্ষণে ক্ষণে লজ্জা দিচ্ছে ওকে। সাথে যতো অপ্রাসঙ্গিক কথা তো আছেই! এই যেমন সেদিন তুলি ওর কানে কানে বলছিলো,
– ‘এই পর্যন্ত শুধু হাত ধরেই হেঁটেছিস! আর কিছুই করিস নি!চু*মু টুমু…?’
প্রাহী কান চেপে সরে এসেছিলো। ওই পর থেকে এই মেয়ের আশপাশেও ও ঘেষে না। কিন্তু লাভ কি! দেখা যায় এই মেয়ে যখন তখন ওর কাঁধ চেপে ধরে ঝুলে থাকে। এই যেমন এখন কাঁধ চেপে ধরে ওকে জিজ্ঞেস করছে,
– ‘বিয়ে কবে?’
প্রাহী ত্যাড়াচোখে ওর দিক তাকালো। তন্নি হেসে একই প্রশ্ন করলো,
– ‘হ্যাঁ প্রাহী! কবে বিয়ে করছো? পরীক্ষা তো শেষ!’
পাশ হতে শিমলা হেসে বললো,
– ‘চিন্তা করিস না যেকোনো সময় দাওয়াত পেয়ে যাবি?’
রাতুল লাফিয়ে ওদের সামনে এসে বললো,
– ‘ওয়াহ্! কতদিন পর আরেকটা বিয়ে খাব! এই শুন বিয়েতে কাচ্চি রাখিস মেন্যুতে!’
আরও কতশত কথায় ওরা রাস্তা ধরে এগোতে থাকলো। সামনে গাড়ির হর্ণ বাজতেই ওরা তাকালো। আকসাদ গাড়ি থেকে বেড়িয়েই প্রাহীর দিক তাকিয়ে চিরচেনা হাসি দিলো। পাশ হতে শোয়াইব টিটকারি করে বললো,
– ‘তোর জনাব চলে এসেছে? যা তাড়াতাড়ি?’
প্রাহী অসহায় চাহনী দিলো। এরা আর কত মজা নিবে ওর? আকসাদ ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখে হাসি রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘কি অবস্থা সবার! কেমন আছো?’
রাতুল মাথা নেড়ে বললো,
– ‘এইতো ভালো! আপনি কেমন আছেন! জি…জু?’
আকসাদ হেসে উঠলো। প্রাহীর দিক চেয়ে দেখলো মেয়েটা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে,
– ‘আমিও ভালো!’
আকসাদ ওদের সাথে আরও কিছু কথা বলে প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘এখন তাহলে আমরা আসি?’
শোয়াইব মাথা নেড়ে বললো,
– ‘শিউর!’
প্রাহীর হাত ধরে সামনে এগোতেই পিছন হতে তুলি ফট করে বলে উঠলো,
– ‘বিয়েটা কবে করছেন তাহলে আপনারা?’
আকসাদ গাড়ির দরজা খুলে পিছন ফিরে মুচকি হেসে বললো,
– ‘ভেরি সুন!’
বলেই আকসাদ প্রাহীকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। সবাই পিছন হতে ওদের চিয়ার আপ করে হেসে উঠলো।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
গাড়িতে আকসাদ প্রাহীর দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘শেষ পরীক্ষা কেমন হলো?’
প্রাহী জানালার থেকে মুখ সরিয়ে আকসাদের দিক তাকালো,
– ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।’
– ‘চা খাবেন?’
– ‘হু খাওয়া যায়!’
আকসাদ গাড়িটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড় করালো। আকসাদ টং হতে চা নিয়ে আসলো। গাড়িতে হেলান দিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছে। আকসাদ চট করে প্রাহীর দিক ঘুরে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘আপনার বয়স কত প্রাহী?’
আচমকা এমন প্রশ্নে প্রাহী ভ্রু কুঁচকে আকসাদের পানে চাইলো,
– ‘হঠাৎ এই প্রশ্ন?’
– ‘বলুন না!’
– ‘মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই জানেন না?’
আকসাদ ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
– ‘তো! আমি অন্য কোনো মেয়েদের জিজ্ঞেস করছি না নিজের ‘হবুবউকে’ জিজ্ঞেস করছি!’
‘হবুবউ’ কথাটা শুনেই প্রাহীর থমকালো। ও এখন এই মানুষটার ‘হবুবউ’! ভাবতেই ওর হৃদয় কম্পিত হলো!
– ‘কি হলো বলুন!’
প্রাহী ছোটো কন্ঠে বললো,
– ‘একুশ।’
– ‘আর আমার কতো জানো?’
প্রাহী জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালে আকসাদ বলে,
– ‘আটাশ! গুণে গুণে তোমার থেকে সাত বছরের বড় আমি!’
প্রাহী অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আকসাদের কথার মানে ও বুঝে উঠতে পারছেনা৷ আকসাদ ওর চাহনী দেখে ওর কাছে আসলো,
– ‘তাই আমি আর ‘আপনি’ করে বলতে পারবো না!’
– ‘মানে!’
আকসাদ চায়ের কাপ রেখে দুহাত ভাজ বুকের মাঝে ভাজ করে বললো,
– ‘মানে আমি এখন থেকে নিজের ভবিষ্যত স্ত্রীকে ‘তুমি’ করে বলবো!’
প্রাহী অজান্তেই বললো,
– ‘কেন!’
আকসাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘কেন মানে! হাতে আংটি পড়িয়ে সিল মেরে দিয়েছি। তাও আপনি করে বলবো কেন? এখন থেকে শুধু ‘তুমি’ করে বলা হবে।
প্রাহী মিনমিন কন্ঠে বললো,
– ‘ঠিক আছে!’
আকসাদ ওর দিক ঝুঁকে বললো,
– ‘তুমিও তুমি করে বলবে!’
আকসাদের আকস্মাৎ ‘তুমি’ করে বলায় প্রাহী হালকা দু’ পা পিছিয়ে গেলো। আকসাদ হাত ধরে প্রাহীকে সামনে এনে ওর মুখে ফুঁ দিতেই প্রাহী চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠলো। আকসাদ প্রাহীর দিক গভীর চাহনী দিয়ে কানে ওর গালে হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
– ‘এভাবে অনবরত ঠোঁট নাড়িও না! নইলে যে ভুল কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে!’
চলবে,,,
#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩৪(ছোঁয়া)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী
– ‘এভাবে অনবরত ঠোঁট নাড়িও না! নইলে ভুল কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে!’
প্রাহী দ্রুত অন্যদিকে সরে গেলো। আকসাদ ফিচেল হাসলো। প্রাহীর ডানগাল নিজের দু’আঙুল দ্বারা ধীরভাবে টানলো,
– ‘চায়ের কাপ তো খালি হয়ে গেছে! এখন বাসায় চলুন! দিয়ে আসি?’
প্রাহী মাথা নাড়লে আকসাদ দু’জনের চায়ের কাপ টং এর দোকানে দিয়ে এসে প্রাহীকে গাড়িতে বসতে বলে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে প্রাহীর বাসার দিক রওনা দিলো।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
প্রাহীদের দোতালা মাঝারি আকারের বাড়ির চেহারা আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে! এই যেমন ইট পাথরের দালানগুলোয় ঝুলে আছে রঙ বেরঙের তারগুলো। সেই তারের মাঝে জায়গা করে নিচ্ছে গাঢ় রঙের তাজা গাঁদাফুল। সকাল থেকে নক্ষত্র নিজের ফ্রেন্ডদের সাথে ওদের বাড়ি সাজানোর কাজে লেগে পড়েছে। বাড়ির আনাচে কানাচে মানুষের ভীড়, ছোটো বাচ্চাদের গাদা ফুল হাতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা দৌঁড়ানো, উঠোনের এক পাশে প্রাহীর চাচীপাটায় হলুদ বাঁটছে, দুপুরের এক চিলতে রোদ সেই উঠোনে ফুট করে নিজের আবির্ভাব ঘটিয়ে যেন জানান দিচ্ছে আজ প্রাহীর হলুদ!
প্রাহীর মা, চাচী, মামী সবাই হলুদের আয়োজনের কাজ সামলাতে ব্যস্ত! মেয়ের আজ গায়ের হলুদ! আয়োজন সহো কাজ তো কম নয়! প্রাহীর মা এজন্যই আগেভাগেই কিছু কাজের মানুষ ডেকে এনেছে। যতোই পরিবারের লোকেরা হাতে হাতে কাজ করুক, একটা বিয়ে বাড়ির কাজ সামলানো যে সে কথা নয়! তারমধ্যে নিজের একটা মাত্র মেয়ের বিয়ে! কোনো কমতি রাখা যাবেনা নিশ্চয়ই! তাই প্রাহীর মা কাজের মানুষ রেখে দিয়ে এই কাজ ওই কাজ করিয়ে যাচ্ছে। তাও যেন মনে হচ্ছে সবটা হয়ে উঠছে না!
জানালার ফাঁকে হাত গলিয়ে প্রাহী পিঠে ফেলে রাখা ভেজা চুলগুলো মেলে বাইরের ব্যস্ত পরিবেশ দেখছে। ধীরে ধীরে সাদামাটা বাডিটা কিভাবে সেজে উঠছে! উঠোনের এক পাশে স্টেজ সাজানো হচ্ছে। হলুদ আর সাদা রঙা স্টেজের মাঝখানটায় বড় করে লিখা ‘আজ প্রাহীর গায়ের হলুদ’। প্রাহী লেখাটা পড়তেই ওর শরীর বেয়ে এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো! দেখতে দেখতে কিভাবে দিনগুলো চলে গেলো! মনে হচ্ছে এইতো সেদিন এনগেজমেন্ট হলো! উঠোনের একপাশে রাখা ফুলগুলো বাচ্চারা নিয়ে ছিড়ে ছিড়ে একজন আরেকজনের গায়ে দিচ্ছে। নক্ষত্র ওদের দৌঁড়ে এসে তাড়িয়ে দিয়ে আবার স্টেজ সাজানো কাজে চলে গেলো। প্রাহী সেদিক তাকিয়ে হাসলো। কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই প্রাহী দেখলো ওর মামাতো বোন সেতু দাঁড়িয়ে,
– ‘এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন! ফ্যানের নিচে বসবি আয় চুলগুলো তাড়াতাড়ি শুকাবে তাহলে।’
প্রাহীর হাত ধরে রুমে নিয়ে যেতেই ও বিছানায় বসলো। চুলগুলো ভালোমতো মেলে বিছানায় রাখা কিছু তাজা ফুলের গহনা দেখতে থাকলো। সেতু ওর পাশে বসে গহনাগুলো জোড়ায় জোড়ায় ঠিক আছে কি না দেখতে থাকলো!
,
,
,
,
,
,
,
,
দুপুর তিনটে বাজে। শিমলারা তত্ত্ব সহ প্রাহীদের বাড়িতে হাজির। সাথে আছে আকসাদের বোন আয়সুন! যে কিনা প্রাহীদের বাড়িটা এখন মনোযোগ দিয়ে দেখায় ব্যস্ত। প্রাহীর মা শিমলাদের দেখতেই ওদিক দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো। আকসাদের বোন প্রাহীর মাকে দেখেই স্পষ্ট ভাষায় বলে উঠলো,
– ‘আসসালামু আলাইকুম!’
প্রাহীর মা আকসাদের বোনের থুতনীতে হাত রেখে হেসে বললেন
– ‘ওয়া আলাইকুমাস সালাম! তুমি নিশ্চয়ই আকসাদের বোন! তোমাকে সেইদিন রিমুর বিয়েতে দেখেছি! এসো এসো ভিতরে আসো! কেমন আছো? আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো!’
আয়সুন মুচকি হেসে বললো,
– ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! আপনি কেমন আছেন!’
প্রাহীর মা আকসাদের বোনের আধো কথায় হেসে বললেন,
– ‘আলহামদুলিল্লাহ! আমিও ভালো আছি।’
– ‘কাকীমা তত্ত্বগুলো কোথায় রাখবো?’
শিমলার কথায় প্রাহীর মা ফাঁকা একটা টেবিল ইশারা করে বললেন,
– ‘এখানে আপাতত রাখ! নক্ষত্র পরে এগুলো উপরে নিয়ে যাবে।’
শিমলা তত্ত্বগুলো টেবিলের উপর রেখে বললো,
– ‘সন্ধ্যায় বাকি তত্ত্ব আসবে বুঝেছো?’
বলেই একটা মাঝারি আকারের তত্ত্ব হাতে নিলো,
– ‘এটা হচ্ছে প্রাহীর হলুদের শাড়ি! আমি এটা নিয়ে আপাতত ওর ঘরে যাচ্ছি!’
বলেই আকসাদের বোনকে নিয়ে উপরে উঠতে থাকলো। প্রাহীর মা ওদের যাওয়ার দিক তাকিয়ে বললেন,
– ‘আরে খেয়ে তো যা অন্তত!’
শিমলা যাওয়া অবস্থাতেই পিছন ঘুরে বললো,
– ‘আমরা খেয়েই বের হয়েছি! তুমি অস্থির হয়োনা তো! ক্ষুধা লাগলে আমরা তোমার কাছে বলবো? কেমন!’
প্রাহীর মা তারপরও কিছু ফলমুল আর জুস কাউকে দিয়ে প্রাহীর ঘরে পাঠিয়ে দিলো!
,
,
,
,
,
,
,
প্রাহী দরজার সামনে শিমলা সহ সাথে আরেকটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। প্রাহী মেয়েটির দিক লক্ষ্য করে শিমলার দিক ভ্রু উঁচিয়ে তাকাতেই শিমলা মাথা নাড়লো। মুচকি হেসে ওদের দিক এগিয়ে যেতেই মেয়েটা ওর দিক এক চোখ ছোটো করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘তুমিই প্রাহী ভাবী?’
হুট করে এভাবে ‘ভাবী’ ডাকায় প্রাহী কিছুটা চমকালো। মেয়েটা এক দেখাতেই ‘ভাবী’ ডাকছে যে!
– ‘হ্যাঁ! আমিই প্রাহী…।’
– ‘তুই ওকে এখনই ভাবী ডাকছিস যে! বিয়ে তো এখনও হয়নি!’
শিমলার কথায় মেয়েটা এক ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ‘তাতে কি হয়েছে! বিয়ের পর তো ভাবী ডাকবোই তাইনা! আমি নাহয় দু’দিন আগে থেকেই ভাবী ডেকে উদ্বোধন করে ফেললাম!’
মেয়েটার কথায় প্রাহী হাসলো! মেয়েটা আকসাদের মতোই দুধে আলতা গায়ের রঙ, হালকা বাদামী চুলগুলো কাঁধ ছাড়িয়ে দু’পাশে পড়ে আছে, টানা ভ্রু, পাতলা গোলাপী ঠোঁট! দুভাইবোন দেখাশোনা, কথাবার্তা,ব্যবহারে একই রকম! শুধু একটা দিক দিয়েই তফাৎ। মেয়েটার চোখগুলো একটু ছোটো ছোটো। আর আকসাদের চোখগুলো বড় বড়। নাহয় এদের দুজনকে অনায়াসেই টুইনস্ বলে ফেলতো! প্রাহী মেয়েটার কাঁধে হাত রেখে বললো,
– ‘তোমার নাম কি?’
– ‘আয়সুন! আমি আয়সুন। আর ডাকনাম আসুন!’
প্রাহী ফিক করে হেসে দিলো,
– ‘আসুন! আসুন বলে ডাকে সবাই তোমাকে!’
আয়সুন মাথা দু’দিক নেড়ে বললো,
– ‘না সবাই ডাকে না! শুধু ফ্রেন্ডসরাই ডাকে!’
– ‘তাই! বেশ মিষ্টি নাম তো তাহলে তোমার!’
– ‘ইয়েস! একদম তোমার মতো!’
প্রাহী হালকা লজ্জা পেলেও কিছু বলতেই পাশ থেকে শিমলা হেসে বললো,
– ‘আসার জন্য অনেক জেদ করছিলো! প্রাহী ভাবীর সাথে আজ সে দেখা করবে, শাডি পরে সাজবে, আগেভাগে প্রাহী ভাবীকে গায়ে হলুদ লাগাবে। আকসাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করে এসেছে!’
প্রাহী আয়সুনের দিক তাকাতেই ও চুলগুলো একপাশ থেকে অন্যপাশে সরালো,
– ‘হ্যাঁ! আর আমিই আগে প্রাহী ভাবীকে গায়ে হলুদ লাগাবো। কারণ আমি আগে এসেছি! কি বলো প্রাহী ভাবী!’
প্রাহী হাসলো,
– ‘অবশ্যই! অবশ্যই! আসো ভিতরে এসে বসো!’
আয়সুন ঘরের এক পাশে বসে ঘুরেঘুরে ওর রুমটা দেখছে। শিমালা তত্ত্বটা প্রাহীর বিছানায় ওর সামনে রেখে বললো,
– ‘এই নে তোর হবু জামাই তোর জন্য হলুদের শাড়ি পাঠিয়েছে।’
শিমলা পেপারে মোড়ানো শাড়িটা খুললো। কাঁচা হলুদ রঙা জামদানী শাড়ির পাড়টা লাল, কমলা আর সবুজ দিয়ে মোটা করে স্ট্রাইপ করা। আর আঁচলের দিক পুরোটা গোল্ডেন,সবুজ,লাল রঙ দিয়ে স্ট্রাইপ করে পুরোটা আঁচল ডিজাইন করা। এছাড়া শাড়িটাতে গোল্ডেন কালারের একটা গ্লেস দিচ্ছে। কারণ পুরো শাড়িটাতে গোল্ডেন কালারের মৃদুভাবে স্ট্রাইপ করে দেওয়া!
– ‘পছন্দ হয়েছে!’
প্রাহী মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– ‘হুম!’
– ‘আচ্ছা! আয় তাহলে তোকে শাড়িটা পড়িয়ে দেই!’
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যার প্রথম ভাগ। সোনালী রঙা আলোয় প্রাহীদের উঠোনটা ঝিলমিল করছে। মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। বাড়ছে আনন্দ উত্তেজনার ধ্বনি। বাড়ির পরিবেশটাই আজ আলাদা! বাড়ির একমাত্র ছোটো মেয়ের বিয়ে বলে কথা! যদিও এখনও পুরো সাজ কম্পলিট হয়নি। হলুদের থিমের জন্য নক্ষত্র আপাতত সোনালী রঙ, বাহারী পর্দা, আর হলুদ গাঁদাফুল দিয়ে উঠোনটা সাজিয়েছে। বাডির দেয়ালে সাঁঝের বাতি ঝোলানো হলেও সেটা আরেকটু ডেকোরেটেড করা বাকি! স্টেজের মাঝখানে বড় একটা সোফা পাতানো রাখা হয়েছে। যার সামনে ক্রিম কালার কাপড়ে মোড়ানো টি টেবিল। সেখানে কিছুক্ষণ পর পর পায়েস, হরেক রকমের মিষ্টি, ফল দিয়ে ডিজাইন করে নিঁখুতভাবে তৈরি নৌকা এবং দোলনা, সাথে নানা রকমের পিঠা তো আছেই! শেষমেষ নক্ষত্রের মামী গায়ের হলুদের কেক টা টেবিলে রাখলো। নক্ষত্র এর দিক ফিরে বললো,
– ‘সবকিছু রেডি! একটু পর ছেলের বাড়ির লোক এসে যাবে। তোর বোনকে নিয়ে আয়!’
নক্ষত্র ক্যামেরা হাতে নিয়ে বাডির ভিতর যেতেই সিড়ির গোড়ায় চোখ পড়তেই ও থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো। প্রাহী আজ বাঙালী স্টাইলে শাড়ি পড়েছে, সাথে থ্রি কোয়ার্টার ম্যাচিং হলুদ আর সোনালী রঙের মিশেলে ব্লাউজ, কোমড় সমান পর্যন্ত চুলগুলো একপাশে বিনুনী গেঁথে তার উপর গাঁদা ফুল জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাথায় লাল গোলাপের টায়রা, গাঁদা ফুলের মালা গলায় চোকারের মতো পড়েছে যার মাঝে রয়েছে টকটকে একটা গোলাপ, কানে গোলাপ ফুলের দুল, হাতে গাঁদাফুলের মালা আর কোমড়ে বেলীফুলের বিছা জড়ানো! সাজ বলতে মুখে হালকা মেকাআপ, চোখে গাঢ় কাজল, আর ঠোঁটে টকটকে রাঙা লিপস্টিক দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রাহীকে। প্রাহীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই রমণী যারা ওর কাঁধ ধরে ওকে নামাচ্ছে। শিমলা আর ফুলি। দুজনের পরনেই লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি। শিমলা আর তুলিও নিজেদের গুটি কয়েক ফুলের গহনা দিয়েই সাজিয়েছে! এই যেমন কানে গাঁদা ফুলের দুল,হাতে ফুলের মালা, মাথায় ফুলের টিকলি! কেন জানিনা নক্ষত্রর মনে হলো এই মুহুর্তটা বন্দী করে রাখা উচিত! চট করে ক্যামেরা চোখের সামনে ধরে তা ফ্রেমে বন্দী করে নিলো ও। প্রাহীরা সিড়ির গোডায় আসতেই নক্ষত্র নিজের বোনের দিক তাকালো। প্রাহী স্বচ্ছ চোখে ভাইয়ের দিক তাকিয়ে! নক্ষত্র প্রাহীকে এক গাল হাসি দিলো,
– ‘খুব সুন্দর লাগছে তোকে বান্দরনী!’
প্রাহী ফিক করে হেসে দিলো। শিমলা ভ্রু কুঁচকালো,
– ‘কম্পলিমেন্ট টা ভালো ছিলো না!’
নক্ষত্র ভ্রু উঁচালো,
– ‘আচ্ছা! তোকে কম্পলিমেন্ট দিবো! ভালো লাগতে পারে তোর!’
– ‘দরকার নেই।’
– ‘থাক! আমি আবার ফকিরনি দের কম্পলিমেন্ট দিতে পারিনা!’
শিমলা দাঁতে চেপে নক্ষত্রের দিক তাকিয়ে! কিছু কথা ছোড়ার আগেই তুলি বললো,
– ‘আচ্ছা হয়েছে! এখন ঝগডার সময় নাকি! আর এই নক্ষত্র ভাই! একটু মেয়েরা সেজেছি ভালোভাবে একটু প্রশংসা করলে কি হয়!’
নক্ষত্র হাফ ছেড়ে বললো,
– ‘আচ্ছা! তোদের সবাইকে সুন্দর লাগছে! এখন হয়েছে! প্রাহীকে নিয়ে চল মেহমান রা চলে এসেছে।’
শিমলা আর তুলি মিলে প্রাহীকে স্টেজের দিক নিয়ে গেলো। প্রাহীকে স্টেজের সোফায় মাঝ বরাবর বসিয়ে শিমলা তুলিকে ওর পাশে বসিয়ে দিয়ে ঘরের ভিতর চললো। আয়সুন নিজেই সেজেছে এখন শুধু শাড়িটা পড়ানো বাকি। ওকে শাড়িটা পড়িয়েই সাথে করে নিয়ে আসবে। প্রাহীর বন্ধুরা শোয়াইব, রাতুল ওরা চলে এসেছে। ওদের পড়নে নেভি ব্লু কালারের পাঞ্জাবী। তাড়াহুড়োর বিয়েতে সবকিছু সেট করা না হলেও ওরা নিজেরাই প্লেন করেছিলো ছেলেরা নেভি ব্লু রঙা পাঞ্জাবি পড়ে আসবে আর মেয়েরা পড়বে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি! প্রাহীর মা,চাচীরা,মামীরাও হলুদ রঙা শাড়ি পড়েছে। প্রাহীর মা এসে মেয়েকে একবার দেখে গেলেন। আজকাল মেয়েটার সামনে গেলেই চোখ জ্বালা করে! তারপরও মেয়েটাকে না দেখেও পারা যায়না! মেয়েকে দেখে উনার নজরে আসলো আকসাদের বাবা-মা, শিমলার মা-বাবা! উনারা এসে গেছেন! প্রাহীর মা সেদিক এগিয়ে গেলেন!
প্রাহীর বাবা একটু বাইরে গেছে। আসতে হালকা দেরী হবে! নইলে প্রাহীর বাব-মায়েরই প্রথম হলুদ ছোঁয়ানোর কথা ছিলো! প্রাহীর বাবার যেহেতু আসতে দেরী হবে সেক্ষেত্রে এখন কি আকসাদের বাবা-মা কে আগে ডাকবে ! তাও তুলি একবার নক্ষত্রের দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘আগে কে হলুদ দিবে!’
– ‘আমি।’
কারো ঠান্ডা আওয়াজে নক্ষত্র,তুলিসহ সবাই পিছনে তাকালো সবুজ পাঞ্জাবী আর সাদা পা’জামা পরিহিত আকসাদ দাঁড়িয়ে! সবাই বেশ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। রাতুল,তুলি আর শোয়াইব ওরাও বেশ হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিক তাকিয়ে! গায়ের হলুদের দিন হবুবর এসে হলুদ ছোঁয়াবে এটা ওরা কখনও দেখেনি! সবাইকে অবাকের মধ্যে রেখেই আকসাদ স্বাভাবিকভাবে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত গুটিয়ে ধীরে ধীরে স্টেজের সামনে এসে দাঁড়ালো। প্রাহী হতবাক নয়নে আকসাদের পানে চেয়ে! এই লোকের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এত এত মানুষের সামনে এভাবে আসাটা কি খুব দরকার ছিলো! উনার বাড়ির লোকরা উনাকে কিছু বলেনি! এখন আশেপাশের মানুষ সব এনারা কি ভাববে! ভাবতেই প্রাহী লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো।
এদিকে আকসাদের দৃষ্টি তার ফুলে সাজানো প্রাহীর দিক! মাথায়,হাতে,কানে,কোমডে,গলায় ফুলে ফুলে নিজেকে ফুলের পরীরূপে সাজিয়েছে মেয়েটা! মেয়েটা কি জানে! এই সাজে ওকে ঠিক কতটা মায়াবী লাগছে! সুদূর ওই গভীর কাজল লেপ্টানো চোখের চাহনী যে ওকে কতটা পাগল করে দিচ্ছে সেটা কি প্রাহী জানে! এইযে লাল রঙে রাঙানো ঠোঁট টা যে ওকে ঠিক থাকতে দিচ্ছে না তাও কি প্রাহীর জানা আছে!
নিশ্চুপ প্রাহী কি মনে করে চোখ তুলতেই সামনে দাঁড়ানো পুরুষটার গভীর দৃষ্টিপাতে থমকালো। চোখ পিটপিট করে নিচে তাকাতেই গালে ঠান্ডা কিছু আভাস টের পেতেই দেখলো আকসাদ ওর দিক ঝুঁকে ওর ডান গালে হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে! প্রাহী সেই অবস্থায় আকসাদের দিক তাকাতেই পাশ থেকে তুলি ফিসফিস কন্ঠে বললো,
– ‘ভাইয়া তোকে হলুদ দিয়েছে তুই ও দে!’
তুলির কথায় প্রাহী চুপ হয়ে আছে। ও হলুদ লাগিয়ে দিবে! সবাই কি মনে করবে! শোয়াইব নক্ষত্রের কানে কিছু ফিসফিস করে বলতেই নক্ষত্র এগিয়ে এসে বললো,
– ‘প্রাহী! তাড়াতাড়ি উনাকেও হলুদ ছুঁইয়ে দে! বড়রা এখনও কিন্তু কেউ তোকে হলুদ লাগায়নি! তাড়াতাড়ি কর।’
ভাইয়ের কথায় প্রাহী নড়বড়ে হাতে বাটি থেকে একটু হলুদ নিয়ে আকসাদের একহাতে ধরে হাতের পিঠে লাগালো! ক্যামেরার ‘ক্লিক’ শব্দে পাশে ফিরতেই দেখলো নক্ষত্র ক্যামেরা হাতে ওদের দিক তাকিয়ে। আকসাদ এর নজর তখনও প্রাহীর দিক বন্দী!
– ‘তোমার হলুদ লাগানো শেষ!’
আকসাদের মায়ের কথায় আকসাদ সেদিক তাকালো। হালকা মাথা নাড়তেই উনি বললেন,
– ‘তাহলে এখন আপাতত যাও! আমাদের হলুদ লাগাতে দাও। অনেক সময় নিয়ে ফেলেছো তুমি!’
আকসাদ মুচকি হেসে সরে যেতেই কারোর দিক চোখ পড়তেই সেদিক তাকিয়ে বললো,
– ‘সি! আ’ম উইন?’
বলেই মাথার চুলগুলো পিছনে নিয়ে হেঁটে চলে গেলো। শিমলার।পাশে হলুদ শাড়ি পরিহিতি আয়সুন ভাইয়ের যাওয়ার দিক তাকিয়ে দ্রুত স্টেজের কাছে গেলো। দেখলো আয়লিনা হোসেন সেখানে দাঁড়ানো। মা’য়ের পাশে যেয়ে আয়সুন বললো,
– ‘মা! ভাইয়া কি আগেভাগে ভাবীকে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে!’
আকসাদের মা মেয়ের দিক তাকালেন। হলুদ শাড়ি, হালকা সাজে মেয়েটাকে পুতুলের মতো লাগছে! আয়লিনা হোসেন মাথা নাড়তেই আয়সুন প্রাহীর দিক অভিযোগের সুরে বললো,
– ‘প্রাহী তুমি কেন ভাইয়াকে আগেভাগে হলুদ লাগাতে দিয়েছো! ইটস্ নট ফেয়ার!’
প্রাহী অসহায় দৃষ্টিতে আয়সুনের দিক চেয়ে! ওর কি দোষ!
আকসাদের বাবা-মা হলুদ লাগানোর পর একে একে সবাই এসে প্রাহীকে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। নক্ষত্র ছবি তুলে দিচ্ছে। তন্নি আসতেই প্রাহীর বন্ধুরা সবাই এবার একত্রিত হয়ে ওকে হলুদ লাগিয়ে সবাক একসাথে ছবি তুলেছে। এখন শুধু প্রাহীর বাবা-মা আর নক্ষত্র বাকি! স্টেজে প্রাহীর মা-বাবা উঠে প্রাহীর পাশে বসতেই প্রাহীর মা মেয়ের গালে হলুদ দিয়ে মুখে মিষ্টি খাইয়ে দিলেন। প্রাহীর বাবা এখনও মেয়ের দিক সেভাবে তাকাচ্ছে না। হাতে হলুদ নিয়ে প্রাহীর হাতে লাগাতেই প্রাহী সেই হাতটা নিজের সাথে চেপে ধরলো।
– ‘বাবা!’
এই একটা শব্দই যথেষ্ট ছিলো প্রাহীর বাবাকে ওর দিক তাকানোর জন্য! মেয়ের ছলছল চাহনী দেখে উনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলেন না! মেয়ের মাথাটা চেপে নিজের চোখের জল ছেড়ে দিলেন! এ কটা দিন অনেক চেষ্টা করেছেন উনি মেয়ের থেকে একটু দূরে থেকেছেন! মেয়ের বিয়ে হয়ে পরের বাড়ি চলে যাবে এটাই উনি মানতে পারছেন না! মেয়ে উনাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই উনার বুক খালি কেঁপে উঠতো! মেয়ের থেকে দূরে থাকলেও ঠিকই দিন শেষে উনি মেয়ের কাছে যেয়ে আড়ালে মেয়েকে দেখে আসতো! মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে উনি মেয়ের হাতে হলুদ লাগিয়ে দিলেন। প্রাহীর মাও জলচোখে বাপ-মেয়ের দিক চেয়ে ছিলো। অবশেষে লোকটা মেয়ের দিক ফিরেছে! এটাই অনেক। নয়তো এতদিন মেয়েটা খালি ওনার কাছে এসে অভিমান করতো, ‘বাবা কেন ওর সাথে কথা বলছে না?’। আর আজ লোকটা যখন মেয়েকে বুকে আগলে নিয়েছেন মেয়েটার খুশি চোখে মুখে দেখেছেন উনি! নিজেদের সামলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে স্টেজ থেকে নামতেই নক্ষত্র এসে বোনের পাশে বসলো! দু’হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে প্রাহীর পুরোমুখ জুড়ে হলুদ লাগিয়ে দিলো!
প্রাহী রাগে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই নক্ষত্র দ্রুত স্টেজ হতে নেমে চলে গেলো! প্রাহীর মুখ পুরো হলুদে কাঁদা! ওকে দেখে সবাই হেসে উঠলো। এভাবে হাসিঠাট্টার মাঝে হলুদ পর্বটা শেষ হলো।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত নক্ষত্র হাতা গুটিয়ে নিজের ঘরের দিক চললো। প্রাহীর বন্ধুরা রাতুল, শোয়াইব এখানেই থাকবে। ওদের সহ বাড়ির সবাইকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছে এখন ও। সিড়ির কাছাকাছি আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে সিড়ির হাত ধরে ও নিজেকে সামলালো। সাথে সামনের মানুষটাকেও পড়ে যাওয়া থেকে আটকালো! ব্যাপারটায় বিরক্ত হয়ে তাকাতেই নক্ষত্র থমকে গেলো! হলুদ শাড়ি পরিহিত, চুলগুলো খোলা, কানে গাঁদা ফুল, চোখে শুধু হালকা কাজল দেয়া মেয়েটা চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে! মেয়েটা আবারও পড়ে যেতেই নক্ষত্র শক্তহাতে ওকে ধরলো!
অনেকক্ষণ যাবত এভাবে ঝুলে থাকতে থাকতে শিমলা এক চোখ খুলে নিচে তাকিয়ে দেখলো ও পড়েনি! তাহলে কে ওকে ধরলো! পুরোপুরি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই তব্ধা খেয়ে গেলো। নক্ষত্র ওর মুখোমুখি! মানে এই লোকের সাথে ও ধাক্কাটা খেয়েছে! কোমড়ে গাঢ় স্পর্শ অনুভব হতেই ও দেখলো ওর শাড়ি ছাডিয়ে খোলা কোমড়ের দু’পাশে নক্ষত্রের এক জোড়া হাত ওকে পড়ে যাওয়া থেকে আটকে রেখেছে। নক্ষত্রের চোখে চোখ রাখতেই দেখলো ছেলেটা কেমন প্রগাঢ় চাহনীতে ওর দিক চেয়ে! কোমড়ে লোকটার এমন স্পর্শ আর চাহনী দেখে শিমলার কেমন যেনো লাগলো। নিজেকে কোনোরকম নক্ষত্রের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
– ‘আসলে আমি…।’
শিমলার কথায় নক্ষত্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওকে ধমকে উঠলো,
– ‘ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারিস না! বাঁদর কোথাকার।’
বলেই বুকে হাতচেপে নক্ষত্র গটগট পায়ে সিড়ি বেয়ে বললো। শিমলা নক্ষত্রের চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা কিভাবে ওর কোমড়…। আপাতত এসব বাদ দিয়ে ও প্রাহীর ঘরের দিক চললো!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
প্রাহী শাড়ির আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে ছাদের সিড়ি দিয়ে উঠছে৷ মুখটা ধোঁয়াতে এখন একটু ফ্রেশ লাগছে! নক্ষত্র তখন মুখভর্তি হলুদ দেয়াতে ওর বেশ অস্বস্তি লাগছিলো এতক্ষণ। ছাদের দরজার কাছাকাছি আসতেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই প্রাহী একটু অবাক হলো! কেউ ছাদে তো কেউই নেই! তাহলে শিমলা যে বললো, ছাদে ওর জন্য কে জানি দাঁড়িয়ে আছে! আরেকটু এগোতেই প্রাহী ফিরে যেতে নিলে শক্ত কিছুর সাথে প্রাহীর মাথা বাড়ি খেলো! প্রাহী কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই একটু চমকালো। আকসাদ দু’হাত পিছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে!
– ‘আকসাদ! আপনি এই সময় এখানে!’
আকসাদ নিশ্চুপ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রাহীর দিক এক পা এক পা করে আগালো।
– ‘একটা কাজ ছিলো।’
মানুষটার এভাবে এগিয়ে আসাতে প্রাহী অজান্তেই কিছুটা পিছিয়ে গেলো,
– ‘কি…কি কাজ?’
আকসাদ প্রাহীর একটু কাছাকাছি দাঁড়াতেই পিছন হতে হাতজোড়া সামনে আনলো! আকসাদের দু’হাত ভর্তি হলুদ! প্রাহী যা বোঝার বুঝে গেছে। ও দ্রত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যেতে বললো,
– ‘কোনো কাজ ফাজ নেই। আপনি বাসায় যান।’
আকসাদ একটানে প্রাহীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এভাবে টেনে ধরায় প্রাহীর হাতদুটো আকসাদের বুকে যেয়ে ঠেকলো।
– ‘কোথায় যাচ্ছ?’
মানুষটার এমন ‘তুমি’ ডাক আর ঈষৎ স্পর্শে প্রাহী কেঁপে উঠলো।
– ‘আক…আকসাদ আপনি তো আমায় হলুদ দিয়েছেন! আমি একটু আগেই ফ্রেশ হয়েছি। এখন আর…।’
– ‘আমার হলুদ দেয়া কম্পলিট হয়নি প্রাহী!’
প্রাহী স্তম্ভিত নয়নে তাকাতেই একজোড়া গভীর নজরের সাথে ওর নজর আবদ্ধ হলো! আকসাদ একদৃষ্টিতে প্রাহীর দিক তাকিয়ে। একটু আগে মুখ ধোঁয়াতে মেয়েটাকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে! কানে শুধু এখন ফুলের দুল আর একপাশে বেনী রাখা। কাজল লেপ্টানো চোখে চোখ আকসাদ প্রাহীর শাড়ির ফাঁকে হাত গলিয়ে খোলা কোমড়, আর পেটে হলুদের আবরণ লেপ্টে দিতেই প্রাহী চোখ খিচে আকসাদের বুকের পাঞ্জাবী জোড়ে চেঁপে ধরলো। অতঃপর নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে প্রাহীর কোমল গালের সাথে নিজের গাল মিশালো। প্রাহীর হাতের মুঠো আরও জোড়ালোভাবে আকসাদকে চেপে ধরলো। আকসাদ প্রাহীর বন্ধ চোখের পাতায় চু’মু খেয়ে বললো,
– ‘তোমার হলুদের পর্ব আমার ছোঁয়া দিয়ে শুরু আর আমায় ছোঁয়া দিয়েই সমাপ্তি হলো প্রাহী!’
বলেই প্রাহীর খোলা ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে বললো,
– ‘উমমম্…তোমার গা হতে কাঁচা হলুদের গন্ধ বের হচ্ছে প্রাহী! আই লাইকড ইট!’
– ‘প্রাহীইইই!’
আচমকা কারোর আওয়াজে প্রাহী ছিটকে অন্যদিকে সরে গেলো। আকসাদের দিক অসহায় চাহনী দিতেই আকসাদ ওর কাছে কপালে চুমু দিয়ে ছাদের দেয়াল টপকে চলে গেলো। প্রাহী অবাক নয়নে সেদিক তাকিয়ে! মানুষটা কিভাবে টপকে টপকে নিচে নেমে যাচ্ছে! যেনো সে এই কাজে বেশ পটু!
– ‘তুই এই রাতে ছাদে কেন!’
প্রাহী চমকে দেখলো ওর মা দাঁড়িয়ে। ওর মা ওর দিক হালকা রাগী নজরে তাকিয়ে!
– ‘কি হলো! এই সময় তুই এখানে কেন? তুই নাকি ফ্রেশ হয়েছিস! তাহলে মুখে এমন হলুদ কেন!’
প্রাহী ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
– ‘আমি…আমিই হলুদ লাগিয়েছিলাম একটু।’
প্রাহীর মা সন্দেহের নজরে চেয়ে বললো,
– ‘এই হলুদ তুই লাগিয়েছিস! আসলেই?’
– ‘হ্যাঁ…নয়তো কি ভুত লাগাবে নাকি!’
– ‘লাগাতেও পারে! এই রাতে তুই ছাদে এসেছিস কেন? তাও আবার গায়ে হলুদের গন্ধ নিয়ে! কতবার দুপুরে বলে দিয়েছি হলুদের গন্ধ নিয়ে এভাবে ছাদে আসিস না!’
প্রাহী বিরস নজরে মায়ের দিক তাকিয়ে চোখ নিচে নামালো। হুহ্। বলতে তো আর পারছে না ভুত এভাবে হলুদ লাগায়নি! আকসাদ নামক ভুত এসে ওকে এভাবে হলুদে মুড়িয়ে গেছে!
প্রাহীর মা ওর হাত ধরে নিয়ে গেলো। সুরা পড়তে পড়তে মেয়ের গায়ে ফু দিচ্ছে। প্রাহী নিরুপায়ভাবে মায়ের সাথে চললো। রুমে যেতেই,,,
চলবে,,,
#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩৫(অবশেষে!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী
– ‘মা প্রথমত কোনো ভূত প্রেত আমায় হলুদ মাখেনি! আর দ্বিতীয়ত এইসব ঝার ফোক বন্ধ করো! আমি এখন ফ্রেশ হবো!’
প্রাহীর মা মেয়ের দিক অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে! রাতের বেলা মেয়ে ছাদে গিয়েছে। তাও আবার গায়ে হলুদের গন্ধ নিয়ে! খারাপ কিছুর বাতাস যদি গায়ে লেগে থেকে তখন! সেজন্য রুমে এসে মেয়ের গায়ে বিভিন্ন সুরা আর পানি পোড়া ঝাড়তে লাগলেন। প্রাহীর মা এবার বিছানা ছেড়ে উঠলেন,
– ‘আচ্ছা আমি এখন যাচ্ছি! তুই ফ্রেশ হো। আর বের হয়ে এই পানিপোড়া টা একটু পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিস! রাতে আমি খাবার সিয়ে যাব রুমে!’
প্রাহী শান্তচোখে মায়ের যাওয়ার দিক তাকিয়ে! পানি পোড়া খেয়ে জীন ভুতের আছর থেকে ছাড়া পেলেও আকসাদ নামক নির্লজ্জ ভূতের থেকে ছাড়া পাওয়া যাবে! তখনকার কথা মনে হতেই প্রাহী লজ্জায় মুখ চেপে ধরলো! কিভাবে লোকটা তখন ওভাবে কাছে এসে ওকে হলুদ ছুইঁয়ে দিয়ে গেলো! কোমড়ে, গালে, গলায় এখনও হলুদের মিশ্রণ লেগে আছে! প্রাহী দ্রুত গামছা হাতে নিয়ে ফ্রেশ হতে চললো।
,
,
,
জমকালো রঙের আলোয় পুরো বাড়ি সজ্জিত। আশেপাশে পরিচিত অপরিচিত অনেক ফুলের মিষ্টি সুভাস ভেসে আসছে! আকসাদ বেলকনিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আলোর দিক তাকিয়ে আছে! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপরেই প্রাহী নামক মেয়েটা তার স্বত্তার সাথে জুড়ে যাবে! ভাবতেই আকসাদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। তখন ছাদে ওভাবে প্রাহীকে হলুদ লাগিয়ে দেওয়ার সময় মেয়েটার লজ্জায় নুইয়ে ফেলা মুখ, ঘন ঘন নিশ্বাস সব ওকে যাস্ট পাগল করে দিচ্ছিলো! কিভাবে যে নিজেকে তখন ও সামলেছে সেটা ও ই ভালো জানে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকসাদ ফোন দেখলো। রাত ১ টা বাজে প্রায়! সকাল হতেই আবার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে। এখন একটু ঘুম দরকার। তার আগে কিছু কাজ করতে হবে, ভেবেই আকসাদ খাটে যেয়ে ল্যাপটপ টা কোলে রেখে বসলো।
,
,
,
নক্ষত্র কিছুক্ষণ আগেই আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে! যার দরূন প্রাহীদের বাড়িটা এখন আলোকিত হয়ে চারপাশটায় হলুদ,লাল,সাদা আলোয় খা খা করছে। বাহারী আলোর এই সাজের দিক তাকিয়ে নিজের হাতের দিক তাকালো প্রাহী। মেহেদীর রঙ প্রায় শুকিয়ে গেছে! কিছু কিছু জায়গা হতে মেহেদী ঝুড়ে ঝুড়ে পড়ছে। মেহেদীর দিক তাকিয়ে প্রাহী ভাবলো, এই মেহেদীর রঙ যেমন কম সময়ে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেছে! ওর কাছে মনে হচ্ছে খুব কম সময়েই ওর জীবনটা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেলো! এই যেমন আগে পড়াশোনা, যাবতীয় কাজ,পরিবার-বন্ধুবান্ধব নিয়েই আগে ওর দিনগুলো পার হতো। এভাবেই ওর জীবন চলছিলো। আর আজ ও বিয়ের মেহেদী পড়ে বসে আছে!
– ‘কি ভাবছিস!’
প্রাহী পাশ ফিরে দেখলো ওর মা প্লেটে ভাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! প্রাহী হালকা নড়ে বললো,
– ‘কিছু না! ভাত নিয়ে এলে কেন? আমার খিদে নেই এখন।’
প্রাহীর মা ওর পাশের চেয়ারে বসলো,
– ‘আজকের দিনটাই তো! এরপর তো আর যখন তখন এভাবে খাওয়াতে পারব না!’
প্রাহীর মায়ের কথায় প্রাহী করুণ চোখে সেদিক তাকালো! প্রাহীর মা ভাত মেখে নলা পাকিয়ে মেয়ের মুখের সামনে ধরে ওকে ইশারা করতেই প্রাহী মুখ বাড়িয়ে ভাতটা মুখে নিলো।
– ‘কি নিয়ে ভাবছিলি বল! টেনশন হচ্ছিলো কিছু নিয়ে! বিয়ে নিয়ে কিছু!’
প্রাহী মুখের খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,
– ‘আমার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে সবকিছু বেশ জলদি হয়ে যাচ্ছে। আমি সবকিছুর সাথে নিজেকে সুন্দরমতো মানিয়ে নিতে পারব কি না বুঝতে পারছিনা।’
প্রাহীর মা মেয়ের মুখে ভাত দিয়ে বললেন,
– ‘গাছে যেমন ফুল ফোটে! একটা মেয়ের জীবনেও কিন্তু ফুল ফোটে! সেই ফুলটা আবার যখন তখন ফুটে যায়। কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই তার! সেই ফুলটা কি জানিস! ‘বিয়ের ফুল’। একটা মেয়ের বিয়ের ফুল কখন ফোঁটে সেটা কেউই বলতে পারেনা! অনাকাঙ্ক্ষিত সময় এই ফুল মেয়েদের জীবনে তার আগমন ঘটায়!’
প্রাহীর মা ভাত মেখে মেয়ের দিক তাকালেন,
– ‘আর মানিয়ে নেয়ার কথা যদি বলিস। তাহলে আমি বলব তোর পাশে এখন থেকে যেই মানুষটা থাকবে! তুই শুধু ওই মানুষটার হাত ধরে চলতে থাকিস! দেখবি সবকিছুর সাথে তুই কেমন অকপটেই সহজ হয়ে গিয়েছিস! শুধু আকসাদ না ওই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের সাথেও তুই আস্তে ধীরে মানিয়ে নিবি! তাই এসব নিয়ে ভাবিস না! এগুলো এমন কঠিন বিষয় না! বুঝলি!’
প্রাহী মাথা নাড়ালো,
– ‘শুধু আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে!’
প্রাহী তাকাতেই ওর মা চাপা কন্ঠে বললো,
– ‘তোকে ছেড়ে থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে আমাদের জন্য!’
প্রাহী চোখ জলে ভরে গেলো। মায়ের কাঁধে মাথা রাখতেই ওর মা মাথাটা চেপে ধরে ফুঁপে উঠলো,
– ‘ঘরে যে একটা মেয়ে আছে। এটা আর বলতে পারব না! বলতে হবে মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থাকে। অর্থাৎ মেয়ে এখন আর নিজের ঘরে নেই! সে এখন অন্যের ঘরে চলে গেছে! চাইলেও তাকে সামনাসামনি যখন তখন দেখা যাবেনা! বুকে আগলে নেওয়া যাবেনা! এই কঠিন সত্যটা মানাই আমাদের জন্য বেশ কঠিন!’
প্রাহী মায়ের হাতের ভাজে মুখ চেপে চোখের পানি ফেলছে! কেন যেন এই মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই ওর মনটা গুমড়ে কাঁদছে। প্রাহীর মা মেয়ের মাথায় হাত দিতেই দেখলেন তার ছেলে দাঁড়িয়ে! নক্ষত্র হাতে পানি নিয়ে ওদের দিক তাকিয়ে প্রাহীর পাশের চেয়ারে বসলো। প্রাহীর মাথাটা মায়ের কাঁধ থেকে তুলে চোখের পানি মুছে বললো,
– ‘কাঁদলে তোকে একদম তা’মিল মুভির পেত্নী গুলোর মতো লাগে! সিরিয়াসলি!’
প্রাহী আড়চোখে মায়ের দিক তাকাতেই ওর মা ছেলের ছেলেকে চোখ রাঙানি দিতেই নক্ষত্র ওদের মাঝে চেয়ার নিয়ে যেয়ে বসলো,
– ‘মা মেয়ে মিলে এত কাঁদছো কেন! মেয়ে ওত দূর চলে যাবে বলে! তাহলে শোনো আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে! আমি মাস্টার্স শেষ করে প্রাহীর শ্বশুরবাড়ি যে দেশে! সেখানাকার আশেপাশেই চাকরির জন্য এপ্লাই করবো! তারপর তোমাদের নিয়ে চলে যাব! কেমন প্ল্যানটা!’
প্রাহী কান্নাকন্ঠে বললো,
– ‘আসলেই তুই যাবি! নাকি মজা করছিস!’
নক্ষত্র বোনের মাথা নিজের সাথে জড়িয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ বাবা সত্যি! এখন কান্না বন্ধ!’
বলেই বোনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। নক্ষত্র এর চোখগুলো জ্বালা করছে ভীষণ! একট মাত্র বোন ওর! বাড়ি ফিরলেই এটার সাথে খুনশুটি হতো! পিঠাপিঠি কিনা! একসাথেই বড় হয়েছে! দেরী করে বাড়ি ফিরলে সবসময় ওকে প্রোটেক্ট দিয়ে বলতো,
‘ভাইয়া আগেই বাড়ি ফিরেছে! দেরী করেনি!’ এখন আর বাবার চিল্লানো, মিছে মারের থেকে বাঁচানোর জন্য মেয়েটা থাকবে না! ঝগড়া করার জন্য মেয়েটাকে খোঁচাতে পারবে না! একটু চুলে, হাতে চিমটি মেরে মেয়েটাকে জ্বালাতে পারবে না! কারণ ওর ছোট্ট বোনটা চলে যাবে শ্বশুর বাড়ি! ভাবতেই নক্ষত্রের চোখগুলো কেমন যেন জ্বলে উঠছে! চোখের কোণে তরল কিছুর আভাস পেতেই জোড়ে শ্বাস নিয়ে নক্ষত্র চোখ ডলে বোনের মাথা তুলে মায়ের ফিক ফিরে বললো,
– ‘আমাকে একটু খাইয়ে দাও। সারাদিন তেমন খেতে পারিনি। ক্ষুধা পাচ্ছে এখন!’
প্রাহীর মা ছেলের মুখে খাবার তুলে দিয়ে মেয়েকেও খাবার খাইয়ে দিলেন। ওদের খাওয়ানো শেষে প্রাহীর মা হাতটা একটু পানি দিয়ে ধুতেই চেয়ার টানার আওয়াজে প্রাহী, নক্ষত্র পাশ ফিরে দেখলো শিমলা প্রাহীর পাশে বসেছে। প্রাহীর মা ওর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘কিরে শিমলা! তুই না ঘুমাচ্ছিলি! উঠে এলি যে!’
– ‘ওরও মনে হয় খাবারের গন্ধে খিদে পেয়েছে!’
শিমলা নক্ষত্রের দিক আড়চোখ্র চেয়ে বললো,
– ‘আজ্ঞে না! এমনেই ঘুম ভেঙে গেলো! তাই আসলাম!’
নক্ষত্রকে এদিক তাকিয়ে থাকতে দেখে শিমলা প্রাহীর হাত ধরে বললো,
– ‘মেহেদী শুকিয়ে গেছে!’
প্রাহী মাথা নাড়তেই দেখলো আরেকটা চেয়ার টেনে ওদের বাবা ওদের পাশে বসেছে! প্রাহীর মা অবাক গলায় বললেন,
– ‘সবাই এভাবে উঠে আসছো যে! তোমারও কি ঘুম ভেঙেছে নাকি!’
প্রাহীর বাবা প্রাহীর দিক তাকিয়ে হেসে বললেন,
– ‘ঘুম আসছে না! ভাবলাম এদিকে যেহেতু দু’একজন জড়ো আছে আমিও না হয় আসি! একটু গল্প করলে মন্দ হয়না! কি বলিস শিমলা!’
– ‘একদম!’
বলেই শিমলা মাথা নাড়ালো। প্রাহীর মা এদের দিক অবিশ্বাস্য নজরে তাকিয়ে আছে! কাল মেয়ের বিয়ে আর আজ এরা নাকি সারারাত গল্প করবে!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
সকাল সকাল গোসল সেরে প্রাহীকে নিয়ে শিমলা,সেতু আর প্রাহীর চাচাতো বোন মুন বেরিয়ে গিয়েছে পার্লারের উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠান সন্ধ্যের দিক শুরু হবে। সেখানে সাজাতে কতক্ষণ সময় লাগে তার নেই ঠিক! তাই প্রাহীকে নিয়ে আগেভাগে সেতু ওরা বেড়িয়ে গিয়েছিলো। আকসাদ প্রাহীকে সাজানোর জন্য টাকা আগেভাগেই দিয়ে দিয়েছিলো। সেই টাকা শিমলাকে আকসাদের মা পার্লারে যাওয়ার আগেই দিয়েছে সাথে ওদের সাজার জন্যও টাকা এক্সট্রা করে দিয়ে দিয়েছে আকসাদ! প্রাহীর সাজ আপাতত কমপ্লিট। এখন শুধু লাস্ট একটা ফিনিশিং দিয়ে মাথায় দোপাট্টা দিয়ে দিবে। শিমলা, সেতু, মুন ওদের সাজ শেষ! সবাই শাড়ি পড়েছে আজ। শিমলা পড়েছে নীল রঙের একটা জরজেটের শাড়ি, হাতে কাঁচের চুড়ি, চুলগুলো খোপা সাথে বেলীফুলের মালা গাথা, হালকা ভারী মেকআপ। সেতু পড়েছে পিংক জামদানী শাড়ি, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, আর মেকআপ তো করেছেই! মুনও একটা বেগুনী শাড়ি পড়েছে, চুলগুলো স্টাইল করে ছেড়ে দেওয়া, সাথে মেকআপ সব মিলিয়ে ওদের সুন্দর লাগছে! শিমলা শাড়ির আঁচল ধরে প্রাহীর দিক একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ‘এটা খেয়ে নে! তুই তো সকাল থেকে না খাওয়া। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই!’
প্রাহী স্যান্ডউইচ এর বক্সটা হাতে নিলো। ওর আসলেই খিদে পেয়েছিলো! সেই কোন সকাল একটা বিস্কিট খেয়ে তাড়তাড়ি বেরিয়েছে এরপর আর কিছুই খাওয়া হয়নি! প্রাহী স্যান্ডউইচ টা হাতে নিয়ে বললো,
– ‘তোরা খাবি না!’
শিমলা মোবাইল হাতে নিয়ে বললো,
– ‘খাব। নক্ষত্র ভাইকে বলি গাড়ি পাঠিয়ে দিতে৷ কারণ আমাদের সাজতো কমপ্লিট! আর বিকেল সাড়ে চারটা বাজে। সন্ধ্যার আগে আমাদের কমিউনিটি সেন্টারে থাকতে হবে। তুই খেতে থাক আমি আসছি।’
শিমলা চলে যেতেই প্রাহী এলঝলক আয়নায় নিজেকে দেখলো। পড়নে ডিপ মেরুণ রঙের বেনারসী শাড়ি, থ্রী কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ, চুলগুলো ব্রাইডালভাবে খোপা করে তাতে গোলাপ আর বেলী ফুল গুজে দেওয়া, চোখজোড়ায় আইশ্যাডো দিয়ে সাজানো সাথে মোটা কাজল তো আছেই, ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপ্সটিক, এছাড়া মুখে ভারী মেকআপের আবরণ তো রয়েছেই! প্রাহী আজ ওর নিজেকে নিজে কেন জানি চিনতে পারছে না! আকসাদ ওকে চিনবে তো! আকসাদের নামটা মনে আসতেই ও ভাবলো,
আর মাত্র কিছুক্ষণ! তারপর এই লোকটার সাথে ওর নাম জুড়ে যাবে!’
– ‘আজকে আকসাদ ভাই তোর হতে নজর সরাতে পারবেনা দেখছি!’
মুনার দিক তাকিয়ে প্রাহী হালকা হেসে মাথা নিচু করে স্যান্ডউইচে কামড় বসালো! আচ্ছা! আকসাদকে কেমন লাগবে বরের বেশে!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
ফুলে সজ্জিত গাড়িটি মিডিয়াম আকারের কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থামতেই গাড়ি থেকে আকসাদের ফুপাতো কাজিন দু’টো তাইয়ান আর রাজ বেরিয়ে এলো। পিছনের দরজা খুলতেই তা থেকে বেরিয়ে এলো বররূপে আকসাদ! পাশ হতে আকসাদের মা আর কাকীরা গাড়ি থেকে নেমে আগেভাগে কমিউনিটি সেন্টারের ভিতরে চলে গেছে। আকসাদের বাবা, কাকারা নাকি চলে এসেছে সেন্টারে। বাকি আছে আকসাদ আর ওর দুই কাজিন আর ওর বোন। আকসাদের পরনে ক্রিম কালারের মধ্যে গোল্ডেন শেডের শেরওয়ানী, সাথে ম্যাচিং পাজামা আর ডার্ক মেরুন কালারের ওড়না যা এতক্ষণ ওর হাতে থাকলেও রাজ একটু আগে ওড়নাটা ওর কাঁধের একপাশে ছেড়ে দিয়ে কোমড়ের একসাইড হতে পেঁচিয়ে বাকি ওড়নার বাকি অংশ হাতের ভাজে ছেড়ে দিলো। অর্থাৎ বিয়ের সময় বরেরা যেভাবে ওড়না নেয় আর কি! আকসাদ পাগড়ি হাতে দাঁড়িয়ে। আয়সুন এসে ওর পাশে দাঁড়ালো,
– ‘ভাইয়া! ভিতরে চলো?’
রাজ আকসাদের পাগড়িটা পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
– ‘চল এখন! বিয়ের জন্য প্রস্তুত!’
– ‘পাক্কা!’
আকসাদের কথায় রাজ আর তাইয়ান হেসে ওকে নিয়ে গেলো। আয়সুন আরেকপাশে ভাইয়ের হাত ধরে হাঁটছে! গেইটের কাছাকাছি আসতেই একঝাঁক তরুণ-তরুণীরা এসে ফিতা টেনে ধরলো৷ আকসাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো! এরা এভাবে পথ আটকেছে কেন! কিছুক্ষণ পর সেতু আর তুলি মিলে ট্রে তে করে তিনটা পানির গ্লাস সাথে কিছু মিষ্টি এনে তরুণ-তরুণীদের মাঝ বরাবর যেয়ে দাঁড়ালো।
– ‘আসসালামু আলাইকুম জিজু! ভালো আছেন!’
আকসাদ ওদের দিক চেয়ে সহজভাবেই বললো,
– ‘ওয়া আলাইকুমাস সালাম। এতক্ষণ ভালো ছিলাম। কিন্তু এখন নেই!’
তুলি অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
– ‘ওমা কেন কেন জিজু!’
– ‘এভাবে পথ আটকে দাঁড়িয়েছেন! বেচারা ছুটে বউয়ের কাছে যেতে পারছেনা! কারই বা ভালো লাগবে বলুন!’
সেতু মুখ গোল করে বললো,
– ‘ওহোওওও! কোনো অসুবিধে নেই! বেশিক্ষণ আপনাদের আটকে রাখব না! শুধু কিছু আমাদের কিছু শর্ত আছে সেগুলো মানলেই অনায়াসে আমরাই বরকে বউয়ের কাছে নিয়ে যাব!’
তাইয়ান বাকা হাসলো,
– ‘আচ্ছা কি শর্ত?’
তুলি এবার হাতের ট্রেটা ইশারা করে বললো,
– ‘,এখানে তিনটা শরবত আছে। জিজুকে যেকোনো একটা খেতে হবে এবং বলতে হবে এটা কিসের শরবত ছিলো প্লাস শরবত খাওয়া শেষে মিষ্টির বাটি থেকে যেকোনো একটা মিষ্টি খেতে হবে! এগুলো করার পর লাস্ট কন্ডিশন আমরা পরে বলবো!’
– ‘এইসব কন্ডিশন মানি না। কোনো শরবত টরবত এখন খাওয়া হবেনা!’
রাজ বলতেই আকসাদ বলে উঠলো,
– ‘অলরাইট!’
বলেই ট্রে থেকে একটা পানির গ্লাস খেয়ে পুরোটা শেষ করে ফেললো ও। এক নিশ্বাসে সবটা শেষ করে বললো,
– ‘এটা পানি ছিলো!’
সবাই কিছুটা হতাশ হলো। কারণ তারা ভেবে রেখেছিলো আকসাদ লবণের পানি বা তেতো পানিটাই নিবে! তারপর অল্প একটু মিষ্টি খাওয়ার পরই তুলি বললো,
– ‘নাও লাস্ট কন্ডিশন!’
তাইয়ান কাঁধ নাড়ালো,
– ‘সেটা কি?’
ওমনি তখন শিমলা খপ মেরে তুলির পাশে এসে বললো,
– ‘বেশি না ত্রিশ হাজার টাকা আমার দিয়ে তারপর ভিতরে ঢুকবে!’
রাজ শিমলাকে দেখে কপাল কুঁচকালো,
– ‘কিসের ত্রিশ হাজার! আর তুই তো বরপক্ষের! মেয়েপক্ষের সাথে কি করছিস!’
শিমলা ভ্রু উঁচালো,
– ‘আমি বরপক্ষের হলেও প্রাহী আমার বাল্যকালের বান্ধবী! তাই এ পক্ষ ছাড়ি কিভাবে বলো!’
– ‘সেটাই টাকা যেখানে সবাই সেখানে!’
রাজের কথায় শিমলা দাঁত কেলিয়ে বললো,
– ‘এইতো বুঝে গেছো! এখন ফটাফট টাকা ছাড়ো!’
– ‘একটা টাকাও দেওয়া হবে না। কি করবি!’
শিমলা এবার আকসাদের দিক ফিরলো,
– ‘বিয়ে জীবনে একবারই করবে! এটা আমাদের হক বুঝলে! আর আমাদের হকে কোনো ত্রুটি থাকলে মেয়ে আমরা দিব না!’
এভাবে রাজ,তাইয়ান,শিমলা ওদের হাজারটা তর্কের এক পর্যায়ে আকসাদ এবার ফুট করে বলে উঠলো,
– ‘যা চাইছে দিয়ে দে! আমার আর ওয়েট করতে ভাল্লাগছেনা।’
তাইয়ান এবার টিটকারি মেরে বললো,
– ‘কি ভাই! বউ দেখার জন্য এত উতলা! তর সইছে না বুঝি?’
আকসাদ গম্ভীরভাবে বললো,
– ‘না সইছে না!’
আকসাদের কথায় সবাই হেসে উঠলো! এরপর রাজ আকসাদের কথামতো পকেট থেকে টাকা বের করে ওদের প্রথমে পঁচিশ হাজার টাকা দিলে ওরা মানতে রাজি হয়না। শেষে এবার আয়সুন বিরক্ত হয়ে বলে,
– ‘আমার পা ব্যথা করছে! টাকাটা দিয়ে দাও। নইলে নিজের বিয়েতেও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি?’
আয়সুনের কথাতে সবাই হেসে দিলো। রাজ পরে পুরো টাকাটাই দিয়ে দিলো। এরপর আকসাদ ফিতে কেটে ভিতরে প্রবেশ করলো। শিমলা ওরা আকসাদকে নিয়ে আপাতত ছোটো একটা স্টেজে বসাতেই আকসাদ বলে উঠলো,
– ‘এখানে একটা চেয়ার কেনো! আরেকটা চেয়ার কোথায়! প্রাহী কোথায় বসবে?’
তুলি এবার হেসে বললো,
– ‘জিজু! একটু ওয়েট করতে হবে যে! আপনার জিনিস আপনার কাছেই ফেরত আসবে ঘুরেফিরে চিন্তা করবেন না!’
আকসাদ এবার একটা শ্বাস ছেড়ে ভাবলো, ‘আর কত ওয়েট করবো!’
,
,
,
,
,
,
,
,
,
এদিকে প্রাহীও আলাদা একটা স্টেজে বসে! সবার ‘বর এসেছে বর এসেছে’ আওয়াজ শুনে ওর এখনই মনের ভিতরটা কেমন আকুপাকু করছে! আয়সুন প্রাহীর কাছে এসে ওর পাশে দাঁড়াতেই প্রাহী ওর দিক তাকালো। মেয়েটা একটা রেড কালারের গাউন পড়েছে, চুলগুলো কার্ল করে ছেড়ে দেওয়া,মুখে হালকা সাজ বেশ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে!
– ‘প্রাহী ভাবী!’
প্রাহী মিষ্টি হাসলো,
– ‘আয়সুন! কেমন আছো!
– ‘এইতো ভালো! ইউ আর লুকিং লাইক এ ডল! সো গর্জিয়াস!’
প্রাহী লাজুক হাসলো,
– ‘তোমাকেও সুন্দর লাগছে!
– ‘থ্যাংকস! আসো ছবি তুলি! এদিকে তাকাও।’
তারপর গটাগট ছবি তুলে আয়সুন প্রাহীর দিক ফিরে বললো,
– ‘যাই এ ছবিগুলো আকসাদ ভাইয়া দেখিয়ে আসি! ভাইয়া বলেছে তোমার ছবি দেখালে কানাডায় যেয়ে আমার ফেভারিট ব্রেন্ডের পছন্দের ড্রেসটা কিনে দিবে! টাটা!’
বলেই আয়সুন পিছে হতবাক হয়ে চেয়ে থাকা প্রাহীকে ফেলে এক দৌড়!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত সময়! আকসাদ আর প্রাহীকে সামনাসামনি বসানো হলেও ওদের মাঝে লাল রঙের নেটের পর্দা টানানো! সেই পর্দা ভেদ করে আকসাদ তার লম্বা ঘোমটা টানা রমনীর দিক তাকিয়ে আছে! প্রাহী মাথা নিচু করে রাখা! পাশে থাকা কাজী সাহবে এবার হালকা কেশে বলে উঠলো,
– ‘জনাব আলতাফ হোসেন এবং আয়লিনা হোসেনের বড় পুত্র ইয়াসির আকসাদ হোসেন জনাব পাভেল বিনতে হোক এবং নেহা বিনতে হোকের ছোটো মেয়ে প্রাহী বিনতে হোককে প্রায় সত্তর লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া বিবাহ করিতে রাজি থাকলে বলুন কবুল!
আকসাদ কাজী সাহেবের কথা মতো তিনবারই বলে উঠলো,
– ‘কবুল, কবুল, কবুল!’
এবার কাজী সাহেব পাশ ফিরে প্রাহীর দিক তাকিয়ে একই কথা বলে বললেন,
– ‘বিয়েতে রাজি হয়ে থাকলে বলুন কবুল!’
প্রাহী নিশ্চুপ! ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা! এই একটা শব্দ! এই একটা শব্দ পাঠ করেই ও সারাটা জীবনের জন্য নিজ পরিবারের মানুষগুলোকে ছেড়ে একদম অন্যের হয়ে যাবে! প্রাহী এটাই মানতে পারছেনা! অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরেও প্রাহী যখন কিছু বলছেনা তখন পাশ থেকে তন্নি,তুলি আর শিমলা ওকে ধরে বললো,
– ‘প্রাহী আর কতক্ষণ চুপ থাকবি! বলে ফেল?’
প্রাহী শরীর নাড়িয়ে ফুঁপে যাচ্ছে! এবার প্রাহীর বাবা এসে মেয়েকে পাশ থেকে জড়িয়ে বললেন,
– ‘আম্মা কবুল বলো!’
প্রাহী বাবার বুকে মাথা হেলে না ইশারা করতেই প্রাহীর বাবা মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
– ‘মা তুমি শুধু আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলো আর কিছু বলা লাগবে না!’
প্রাহী অনেক কষ্টে এবার মুখ ফুটে বললো,
– ‘আল…আলহামদুলিল্লাহ, ক…কবুল।’
সবাই এবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো। শিমলারা পর্দা সড়িয়ে দিতেই আকসাদ আর প্রাহী মিলে আকসাদের বাবা-মা আর প্রাহীর বাবা-মাকে সালাম করে দোয়া চাইলো! উভয়ের বাবা-মা মন ভরে ওদের দোয়া করলো! আকসাদের মা এবার প্রাহীকে গলায় দুই ভরির একটা সিতাহার আর এক ভরির একটা নেকলেস পড়িয়ে দিয়ে প্রাহীর থুতনিতে হাতে রাখলো,
– ‘আমার আকসাদের টুকটুকে বউ! মাশাল্লাহ!’
প্রাহী আকসাদের মাকে বিনিময়ে লাজুক হাসি উপহার দিলো! অতঃপর আকসাদের মা হেসে ছেলের দিক তাকিয়ে চলে গেলেন। আকসাদ আর প্রাহীকে এবার পাশাপাশি বসাতেই আকসাদ প্রাহীর পাশে ওর গা ঘেষে বসলো। প্রাহী হালকা নড়ে উঠে স্বাভাবিক হয়ে বসার চেষ্টা করলো! এবার তন্নি প্রাহী ঘোমটার ভিতর একটা বড় আয়না রেখে আকসাদকে বললো,
– ‘দেখুন তো জিজু! আয়নার ভিতরে কাকে দেখছেন!’
আকসাদ আয়নার ভিতর তাকালো! আয়নায় দেখা যাচ্ছে লাল শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা টানা, ফোলাফোলা চোখের হালকা কাজল লেপ্টানো, মায়াবী একটা মেয়েকে! যেই মেয়েটাকে ও কিছুক্ষণ আগেই তিন কবুল পড়ে বিয়ে করেছে! এই লাল টুকটুকে মেয়েটা এখন ওর বউ! আকসাদ মুগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে একমনে বলে উঠলো,
– ‘আমার প্রাহী! আমার বউকে!’
‘বউ’ কথাটা শুনেই প্রাহীর সারা শরীর বেয়ে শিহরণ বয়ে গেলো। পাশ থেকে শিমলা চিল্লিয়ে বললো,
– ‘এই প্রাহী ভাইয়া তো বলে দিলো! এবার তুই বল?’
সবার জোড়াজুড়িতে প্রাহী আয়নায় এক পলক আকসাদের দিক তাকালো! আকসাদকে দেখা যাচ্ছে! যে কিনা বর বেশে মাথায় পাগড়ি পড়ে ওর দিক চেয়ে আছে! এই লোকটা টা আজ থেকে ওর বর ভাবতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে! আকসাদের দিক নজর দিয়েই প্রাহী বললো,
– ‘আমার জীবনসঙ্গীকে!’
আশপাশ হতে সবাই হেসে উঠলো! প্রাহী লাজে চোখ নামিয়ে নিলো। আকসাদ আয়নার ভিতর হতে তার লাজুক রাঙা চেহারার দিক তাকিয়ে প্রাহীর হাতের ভাজে হাত গুজলো। প্রাহী সেই হাতের দিক চেয়ে হাসলো! অবশেষে দু’জোড়া হাতে এক হলো!
প্রাহী আর আকসাদের ফটোশুট হচ্ছে। ছবি তোলার পর্বে আকসাদের বারংবার গভীর স্পর্শে প্রাহী নেতিয়ে যাচ্ছে। ক্যামেরামান এবার ক্লোজ হতে বললে আকসাদ প্রাহীর কোমড়ে হাত রেখে কাছে আনলে প্রাহী কেঁপে আকসাদের চোখে চোখ রাখলো। ক্যামেরাম্যান তখনই সেই দৃশ্য টা বন্দী করে ফেললো!
,
,
,
,
,
,
,
,
খাওয়া দাওয়ার পর এখন এলো বিদায়ের মুহুর্ত! একটা মেয়ে ছোটো থেকে বড় হওয়া অবধি আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় যে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে! সেটা প্রাহী এখন বুঝছে! প্রাহীর চোখ এখন বাঁধ মানছে না! প্রাহী এবার কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলছে৷ হুট করে ও বমি করে দিলো! আকসার আর নক্ষত্র মিলে সাথে সাথে প্রাহীকে ধরলো। আকসাদ প্রাহির মাথা চেপে ধরে আছে। নরম কন্ঠে প্রাহীকে শুধালো,
– ‘আর করবেন বমি!’
প্রাহী দূর্বলভাবে মাথা নাড়াতেই আকসাদ প্রাহীকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো! প্রাহীর মা এবার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। নক্ষত্র দ্রুত প্রাহীকে পানি খাওয়ালো। প্রাহীর বাবা আকসাদের দিক তাকিয়ে ভেজাচোখে বললেন,
– ‘আমি আমার মেয়েটাকে অনেক আদরে বড় করেছি! বলতে পারো হাতের তালুতে রেখে বড় করেছি! নিরিবিলি ভাবে আমার মেয়েটা বড় হয়েছে। তোমার কাছে দিচ্ছি মেয়েটাকে আগলে রেখো! ও যদি কোনো ভুল করে ফেলে তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে দিও! দেখবে ও চেষ্টা করবে সবকিছু ঠিকঠাক রাখার! ওর মনটা অনেক নরম। কোনো আঘাত বা কষ্ট ও সহ্য করা ওর জন্য বেশ কঠিন! তুমি একটু…।’
আকসাদ প্রাহীর বাবার হাত ধরে বললো,
– ‘কোনো কষ্ট বা আঘাত আমার তরফ থেকে প্রাহী কখনোই পাবে না! অজান্তে যদি কোনো ভুল করেও ফেলি তাহলে আমি তা ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিব! আপনি চিন্তা করবেন না! আর একটা কথা ছিলো!’
প্রাহীর বাবা জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকাতেই আকসাদ বললো,
– ‘প্রাহী না হয় আপনাদের কাছেই থাকুক?’
প্রাহীর বাবা বিস্মিত হয়ে গেলো! আকসাদ তা দেখে প্রাহীর দিক ইশারা করলো,
– ‘আসলে আমাকে তো ঢাকায় যেতে হবে প্রাহীর পাসপোর্ট,ভিসা এসব কিছু রেডি করতে। কানাডায় যাওয়ার ইমারজেন্সি ভিসার জন্য এসব করালেও মিনিমাম ১৫/২০ দিন সময় তো লাগবেই। ততদিন না হয় ও আপনাদের কাছেই থাকলো! বউভাতের অনুষ্ঠানের পর ও এখানে চলে আসবে! যেহেতু এতদূর আমাদের সাথে ও যাবে ওর মানসিকভাবে একটা প্রিপারেশন নেয়া প্রয়োজন! তাই আমি চাচ্ছিলাম ও আপনাদের কাছে থাকলে ওর সাথে সাথে আপনাদেরও না হয় একটু ভালো লাগলো!’
আকসাদের কথায় প্রাহীর বাবা আর দ্বিমত করলেন না। পাশ থেকে নক্ষত্র বলে উঠলো,
– ‘আমার মনে হয় এটাই ভালো হবে। প্রাহীটাও একটু স্থির হবে!’
শিমলার মা এবার বলে উঠলো,
– ‘রাত হয়ে যাচ্ছে আমাদের এবার যাওয়া উচিত! বাসায় যেয়ে আবার বউবরণ করতে হবে! ভাবী আগেভাগে যেয়ে বসে আছে এজন্য!’
নক্ষত্র মাথা নেড়ে প্রাহীকে আলতোভাবে ধরে আনতেই আকসাদ প্রাহীকে গাড়িতে তুলে প্রাহীর বাবা-মায়ের দিক অভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো! গাড়িতে উঠতেই আকসাদ প্রাহীকে ধরতেই প্রাহী সাথে সাথে,,,
চলবে,,