#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-২৮]
~আফিয়া আফরিন
জুহি ওষ্ঠকোণে কিঞ্চিত হাসি ফুটিয়ে তুলল। একটু এগিয়ে গিয়ে রাফির গা ঘেঁষে বসল। নিজের হাত রাফির কাঁধে রাখতেই রাফি চোখ তুলে তাকাল। নয়নপানে দৃষ্টি স্থাপন হলো।
রাফি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই জুহি হাত বাড়িয়ে তাকে বাহুবন্ধনে আমন্ত্রণ জানাল। রাফি কিছু বলার ভাষা পেল না, নীরব রইল। তবে অপেক্ষা করল না একমুহূর্তও! নিজের সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরল প্রিয়তমাকে। এ আমন্ত্রণ উপেক্ষা করার সাহস রাফির নেই। অনেকটা অবুঝ হয়ে গেল। জাগতিক সকল কাজকর্ম একপাশে সরিয়ে রাখল। তাদের দুজনের মাঝে রইল না আর একবিন্দু দূরত্ব। মিশে গেল একে অপরের সাথে, যেভাবে দিগন্তের শেষ সীমানা নীল আকাশের সাথে একাকার হয়ে মিশে যায়।
‘মায়ের কাছে শুনেছি আমাকে পাওয়ার জন্য নাকি বাচ্চাদের মতো বায়না করেছিল? কেন রাফি? আমি কী তোমার জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ? এতটাই ভালোবাসো তুমি আমাকে?’
রাফি আচ্ছন্ন কন্ঠে বলল, ‘রবি ঠাকুরের একটা উক্তি আছে না, সে আমার সম্পত্তি নয় সে আমার সম্পদ। ঠিক এই সম্পদ রক্ষা করার কারণেই আমি এতো আহাজারি করেছি।’
রাফির মুখে একথা শোনার পর জুহি আর কিছু বলার অবকাশ পেল না।
.
—“মাতাল হাওয়ায় প্রথম প্রহরে,
দৃষ্টি পড়ে কন্যার নেত্র চাহনিতে!
বুকের ভিতর কী বিশাল বিস্তর শূন্যতা,
তুমিময় মায়া, কী ভীষণ আকুলতা!
নাই কোথাও কেউ, হাহাকার ব্যস্ত শহর
মস্ত এক উঠোন পুষেছি বুকের ভিতর।
উঠোন জুরে নিস্তব্ধতা
বইছে বাতাস বয়ে যাক, এত কিসের ব্যাকুলতা?
যদি ফিরে আসো ফের ভুল করে
স্বাদরে লইব মন পাজরে!
ভালোবাসি ধারা জারির মিছিলে
উথাল ঢেউ বইছে তোমায় পাওয়ার স্লোগানে!
পথ হারিয়ে দেদার আমি,
শহর জুড়ে আমায় খোঁজার উৎকণ্ঠা গোপন করেছ তুমি,
ভালোবাসি!
আরেকটু বাসলে ক্ষতি কী?
মনের দক্ষতা ছাড়িয়েছে অন্তরাত্মা
পৃথিবী কী তা অনুভব করে না?
না বলা অদ্ভুত প্রেমের নিদারুণ সংহার
কারিগর, ওওওও মন কারিগর!
দিনের প্রহর পেরোয় ভীষণ মন খারাপে,
দুঃখ পোষে বুক পিঞ্জরে, ভীষণ অভিমানে
শব্দ, অক্ষর, বর্ণ ভুলে খানিক অভিযোগে,
খুঁজে পেয়েছি আশ্রয় তাহার সাম্পানে।
না বলা প্রেমের নিধারুণ সংহার,
কারিগর, ওওওও মন কারিগর!”
রাফি তার অসাধারণ কাজের দ্বারা ইতিমধ্যে-ই সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এইবারের কাজের জন্য সেরা তরুণ সঙ্গীতশিল্পী অ্যাওয়ার্ডে রাফিকে মনোনীত করা হলো। “মন কারিগর” শিরোনামের একটি অ্যালবামের আত্মপ্রকাশ হল ভীষণ নতুনত্বে।
জুহি রাফির গানটা শুনে আরেকবার গভীর প্রেমে খুব দিল। অনুভব করল গানের প্রতিটা শব্দ, অক্ষর। “মন কারিগর”শব্দটায় বারবার আটকে গেল জুহি। এটা তো তার তরফ থেকে রাফির জন্য দেওয়া উপাধি ছিল!
সেদিন রাফি বাড়ি ফিরল বেশ রাত্রি করে। জুহি খাবার বেড়ে দিল, প্রচন্ড গম্ভীর মুখে। রাফি জুহির গম্ভীর মুখ দর্শন করে ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করতে গিয়েও সাহসের অভাবে জিজ্ঞেস করতে পারল না। চুপচাপ খাওয়া শেষ করল।
রাফি কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কি দিয়ে কথা শুরু করবে সেটা বুঝতে পারছে না। জুহি অতিরিক্ত স্থির, নেত্রপল্লব জুরে শীতল চাহনি বিরাজমান।
রাফি গুমোট পরিবেশ বর্জনে গম্ভীর কণ্ঠে মুখ খুলল, ‘রাতের খাবার খাইছ?’
‘বাড়ি ফেরার সময় চোখ দিয়ে বাহিরে খুলে রেখে আসো নাকি কাউকে দিয়ে আসো?’
রাফি থতমত খেয়ে বলল, ‘মানে?’
‘এইমাত্র তো তোমার চোখের সামনে খাইলাম। দেখো নাই?’
রাফি মাথা চুলকে বলল, ‘আমার আসলে খেয়াল নাই।’
‘অন্যান্য জায়গায় খেয়াল রাখলে ঘরে কখনো খেয়াল থাকে?’
‘আচ্ছা শোনো!’
‘শুনছি।’
‘আজকের গানটা শুনেছ?’
জুহি নিষ্পলক চেয়ে রইল। নিঃসন্দেহে আজকের গানটা তার প্রিয় গানের তালিকায় স্থান পেয়েছে। কিন্তু, এতো মনমাতানো গানের প্রশংসা করার ভাষা জুহির জানা নেই। গানটা বারবার কর্ণকুহরে আঘাত হানছে। রাফির আর তার সম্পর্কের প্রতিচ্ছবিই যেন গানের প্রতিটা অক্ষরে, প্রতিটা শব্দে, প্রতিটা বাক্যের মাঝে লুকায়িত!
রাফি উত্তরের অপেক্ষায় জুহির পানে তাকিয়ে রয়েছে। জুহি এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘আই থিঙ্ক তুমি আমার ডায়েরীটা পড়ে ফেলেছ! তাই না?’
রাফি অবাক হলো না কিংবা জুহির ব্যক্তিগত ডায়েরী না বলে পড়ার জন্য অপরাধবোধও মনে করল না। বরং এটা ভেবে মনের মাঝে আনন্দ হলো যে, জুহির মন কারিগর উপাধি দেওয়া মানুষটা জুহির জন্য কিছু করতে পেরেছে।
রাফি হেসে জবাব দিল, ‘হ্যাঁ পড়েছি। না পড়লে তোমায় এই একজীবনে কখনো বুঝতাম বলে মনে হয় না জুহি। তুমি এতো নির্জনতাপ্রিয় কেন জুহি? কেন মনের কথাগুলো খোলাখুলি আমায় প্রকাশ করো না? এটা কি আমি আমার ব্যার্থতা বলে ধরে নেব? ডোন্ট ইউ বিলিভ মি?’
জুহি অবিলম্বে রাফির সামনে এসে দাঁড়াল। রাফির দু’হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে মেঘ হতে কাজল কালো চোখের চাহনি স্থাপন করল রাফির পানে। রাফি ঐ দীঘল কালো কাজল চোখে হৃদয়ে প্রবেশদ্বার দেখতে পেল। প্রতিফলিত হলো আত্মার আয়না এবং অভ্যন্তরীণ সত্তা।
নির্নিমেষ কণ্ঠে বলল, ‘ওমন কথা কখনো মুখেও এনোনা রাফি। আমি নিজেকে অবিশ্বাস করতে পারি। আমার নিজেকে নিয়ে সহস্র দ্বিধা থাকতে পারে। কিন্তু যে মানুষটা এই ছেড়ে যাওয়ার যুগে, শত কোটি মানুষের ভিড়ের মাঝে আমায় আগলে রেখেছে; তাকে অবিশ্বাস করি কী করে বলতো!’
‘তাই বুঝি মন কারিগর উপাধি দিয়েছ?’ রাফি জুহির দৃষ্টিতে দৃষ্টি স্থাপন করে বলে।
‘না। যিনি সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে কোন বস্তু সৌন্দর্যবর্ধিত ভাবে গড়ে তোলে তাকেই তো কারিগর বলে নাকি? আর আমি তোমায় মন কারিগর উপাধি কেন দিয়েছি জানো? আমার অনলে পুড়ে যাওয়া পাষণ্ড মনটাকে কোমল করেছ। তুমি কখনো শব্দ দিয়ে দর্শকের গানের কারিগর, আবার কখনো আমায় ভালোবেসে আমার মনের কারিগর। এতো ভালোবেসেছো, মন কারিগর ছাড়া আর কি উপাধি দিতে পারি তোমায়!’
‘তারপর?’
‘এইযে ভালোবেসে এই হৃদয়ে সুখের বীজ বপন করেছি। সেইটাও শুধুমাত্র বীজ বপনে সীমাবদ্ধ ছিল না, তুমি তোমার কারিগরি ভালোবাসা দিয়ে সেটা বৃক্ষে রুপান্তর করেছো।’
‘তোমাকে উৎসর্গ করেছি তীব্র ভালোবাসায়!’
জুহির ওষ্ঠকোণে তৃপ্তির হাসি। সে হাসির রেশ ধরেই বলল, ‘একটা জিনিস চাইব তোমার কাছে। দিবে?’
‘একবার তো চেয়ে দেখো, সাগরের তলদেশ থেকে হলেও এনে দিব।’
জুহি কিঞ্চিৎ হেসে বলল, ‘এত কঠিন কাজ করতে হবে না। শুধুমাত্র সমুদ্র পার অথবা পাহাড়ের চূড়ায় কোন এক জোসনা রাত উপহার দিবে আমায়? যেই রাতে আমি নিশ্চিন্তে তোমার কাঁধে মাথা রেখে শান্তি পাব। আশেপাশে কেউ থাকবে না, শুধু তুমি আর আমি! আর থাকবে বিস্তর গগন, থাকবে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, থাকবে আমাদের দুজনের কিছু অগোছালো স্বপ্ন আর থাকবে তোমার গান।’
রাফি জুহিকে নিশ্চিত করল। এমন একটা দিন তাদের জীবনে আসবে, আসতেই হবে। শুধু এমন দিন নয়, এমন সুন্দর সুন্দর কিছু মুহূর্ত তৈরি হবে তাদের জীবনে!
.
সেরা তরুণ সঙ্গীতশিল্পী অ্যাওয়ার্ডে রাফিকে যখন তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হয় তখন রাফি চোখ বন্ধ করে তার পাশে থাকা মানুষগুলোর কথা বলে।
‘ছোটবেলা থেকেই আমার গানের প্রতি আলাদা একটা ফ্যাসিনেশন ছিল, কিন্তু কখনো সেভাবে আয়োজন করে গানের চর্চা করা হয় নাই। স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে টুকটাক গান গাইতাম, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরষ্কারও অর্জন করেছি। এরপর কলেজ লাইফ থেকে বিভিন্ন কনসার্টে গান গেয়েছি। কিন্তু হ্যাঁ গিটার আমার শখের জিনিস তাই গিটার নিয়ে এমনিতে নিজেই টুকটাক গান করতাম। গায়ক হবার এক গোপন স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছি ঠিকই কিন্তু সেই স্বপ্ন নিয়ে আমার কোন জল্পনা কল্পনা ছিল না। আমার প্রথম কাজ ডিরেক্টর অজয় মল্লিকের এক নাটকে। প্রথমবার রের্কডিংয়ে এতটা এক্সাইটেড ছিলাম যে গানটা ঠিকঠাক মতো তুলতেই পারিনাই। তারপর মনে হলো, গানের বিষয়টাকে আমার শখে আবদ্ধ করে রাখলেই ভালো হবে। হম্বিতম্বি করে হাজার মানুষের সামনে গান গাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। একেবারেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম, ঠিক সেই সময় আমার পতন ঘটে যাওয়া জীবনে উত্থান হয়ে আসে আমার মা। মায়ের কথা শুনে মনে হল, এত সহজে বোধহয় হাল ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। তবুও সাহস পাচ্ছিলাম না, তবে সেই সাহসের ভিত মজবুত করতে আগমন ঘটে আরেক রমণীর। তার একটা কথা আমার সমস্ত দ্বিধা দূর করে দিয়েছে এবং পরদিন আমি কনফিডেন্টলি গান গাইলাম। এবং সেই গানের মাধ্যমেই আমার এই জগতে আত্মপ্রকাশ। তারপর থেকে একেরপর এক গান গেয়েছি। বর্তমানে পঞ্চাশের অধিক আমার গানের অ্যালবাম রয়েছে।তারপর একসময় নিজেও গান লিখে ফেললাম। সেই গানে সুর দিলাম, একজনকে ভালোবেসে। আমার মতো এতো তুচ্ছ সামান্য মানুষ যে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারবে এবং গানের কারিগর তথা গায়ক হবে সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। আর কী পরিচয় দেব? ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে না প্রবেশ করি। আমার গান শুনে যদি যদি কেউ এক পলকেই বুঝতে পারে এটা রাফির গাওয়া গান, তবে ওকে—দিস আইডেন্টিটি এনাফ ফর মি!’
করতালিতে মুখরিত হল ময়দান। রাফির দৃষ্টি অনেকক্ষণ পর্যন্তই জুহিকে খুঁজছিল। অবশেষে নজর পড়েই গেল। কিছুটা দূরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সে।পৃথিবী ভর্তি জঞ্জলের মধ্যে এক টুকরো স্বর্গ নেমে আসলে যেরকম মনে হয়, রাফিরও জুহিকে দেখে তাই মনে হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষ হতে সবাই উপচে পড়ল একটা অটোগ্রাফের জন্য। কিন্তু রাফি অটোগ্রাফ দিতে নারাজ ছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, জুহি এখন প্রতিদিনই তার সামনাসামনি; কিন্তু আগের মত আর বলেও না যে আপনার প্রথম অটোগ্রাফটা আমার চাই। রাফিরও মনে করে দেওয়া হয় না। যেহেতু জুহি প্রথম অটোগ্রাফটা নিতে চেয়েছিল, যখনই হোক, যেভাবেই হোক বা আজ থেকে দশ বছর পরেই হোক; রাফি তার প্রথম অটোগ্রাফটা জুহিকেই দিবে।
.
.
.
চলবে…..
#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-২৯]
~আফিয়া আফরিন
রাফির এলোমেলো ভাবনা চিন্তার মাঝে জুহি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জুহিকে দেখা মাত্র চিন্তা ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল তার।
জুহি বলল, ‘আমি বোধহয় তোমায় আটকে দিয়েছি তাই না?’
তারপর একটা কাগজ আর কলম রাফির দিকে এগিয়ে দিয়ে আকুতি ভরা কণ্ঠে বলল, ‘প্লিজ গিভ মি ইউর অটোগ্রাফ!’
রাফি তৎক্ষণাৎ হেসে ফেলল। হাত বাড়িয়ে জুহির হাত থেকে কাগজ কলমটা নিয়ে নিজের পরিচয় সাক্ষরিত করল। রাফি অটোগ্রাফ দিবে না শুনে কমবেশি সবাই অনুরোধ করছিল।
জুহিকে পাশে নিয়ে রাফি মাইক্রোফোন হাতে নিল। একহাতে জুহির হাত মুঠো করে আঁকড়ে ধরল। ফের সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করল, ‘ইট’স মাই ওয়াইফ! আমাদের গল্পটা শুরু হওয়ার আগেই একদিন ও আমাকে বলেছিল আপনার প্রথম অটোগ্রাফটা আমার চাই। কিন্তু কখনো অটোগ্রাফ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আবার আসে নাই। যখন এলো, তখন ধীরে ধীরে এই মানুষটা জীবন থেকে সরে যাচ্ছিল। খুব বাজে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকটা দূরে সরে গিয়ে আবার ফিরিয়ে এনেছি। তারপরও অনেকদিন কেটে গেছে, অটোগ্রাফ এর কথাটা ভুলতে বসে ছিলাম ঠিক তখনই আবার আপনারা মনে করিয়ে দিলেন। কিন্তু আজ থেকে, এই মুহূর্ত থেকে আর কোনো বাঁধা নেই। আজকে এই নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যও তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!’
করতালিতে মুখরিত হলো অডিয়েন্স। তবে বেশিরভাগ -ই জানত না রাফি বিবাহিত। চাপা একটা উৎকণ্ঠা পড়ে গেল সবার মাঝে।
জুহির হাত ধরে নানান রঙের শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি করল রাফি। দর্শকসারি থেকে বেশ কয়েকজন মঞ্চের সামনে চলে এসেছে, অনেকে আবার মঞ্চে উঠে গানেও যোগ দিয়েছে। অডিয়েন্স থেকেও সবাই গলা মিলাচ্ছে, ধীরে ধীরে গলার সংখ্যা বাড়তে লাগল চতুর্দিকে।
সবকিছু শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। রাতের খাবারটা তারা কাছেপিঠে একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসেছে।
বাড়ি ফিরে এসে কাপড়-চোপড় বদলে রাফি বিছানায় গা এলিয়ে দিল। সারাদিন এত দৌড়ঝাঁপের মধ্যে এখন প্রচন্ড মাথা ধরেছে। জুহি জানালা গলিয়ে আকাশ দেখছিল। রাফির দিকে একপলক তাকাতেই তাকে বেশ অসুস্থ দেখল। শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। জুহি সহসা এগিয়ে এলো। রাফির কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?’
রাফি কপালে হাত রেখে বলল, ‘প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।’
‘আগে বলবা না? কখন থেকে মাথা ব্যথা করছে? একটু বসো, আম ঔষধ দিচ্ছি।’
জুহি যেতে উদ্যত হতেই রাফি তার হাত টেনে ধরে বলল, ‘এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু হয়নাই। সামান্য মাথাব্যথা, ও একটুতেই সেরে যাবে। তুমি একটু পাশে থাকো কেমন!’
জুহি ধরা গলায় বলল, ‘পাশেই তো আছি।’
‘আরেকটু থাকো। তুমি পাশে থাকলে এসব সামান্য অসুখ-বিসুখ পরোয়া করি না।’
‘মাথা ম্যাসাজ করে দেই? আরাম পাবে।’
‘দাও।’
জুহি রাফির চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল খুব ধীরে ধীরে চুল টেনে দিচ্ছিল। একসময় রাফি জুহির হাত থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘আর প্রয়োজন নেই। মাথা ব্যথা ভোজবাজির মত উধাও হয়ে গেছে।’
‘ঘুমাও, তাহলে আরেকটু ভালো লাগবে।’
রাফি জুহির এই কথার উত্তর দিল না তবে প্রসঙ্গ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘জুহি শোনো।’
‘শুনছি, বলো।’
‘আজকের আকাশটা দেখেছ?’
‘এতক্ষণ দেখছিলাম তো।’
‘পূর্ণিমা রাত আজ, তাইনা?’
‘হু।’
বলেই জুহি শক্ত করে রাফির হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে এলো। রাফি চুপ রইল। জুহি বেশ কিছুক্ষণ পর বলল, ‘তুমি কি কোনভাবে আমাকে লজ্জা পাও? মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চাইছ কিন্তু বলতে পারছ না। কি হয়েছে বলো তো? তোমার স্বভাবের সাথে এত স্বল্পতা তো ঠিক মানাচ্ছে না। তোমাকে আমার নিকট খুব অচেনা লাগছে। ঝেড়ে কাঁশো তো!’
রাফি বেশ কয়েকবার খুকখুক করে গলা পরিষ্কার করে নিল। তারপর বলল, ‘পূর্ণিমার রাত তো। ছাদে যাবে জুহি? খুব কাছ থেকে আকাশটাকে দেখতাম, আর সাথে তোমাকেও। চাঁদের আলোয়, তারাদের রহস্যময় আকাশ ভ্রমনে আমাদের মধ্যে আর কোন দূরত্ব রইল না। দূরত্ব মেটাতে যাবে?’
‘এখন বুঝি আমাদের মাঝখানে খুব বেশি দূরত্ব?’
‘উহু, যেদিন অগাধ বিশ্বাসে তোমাকে নিজের নামে দলিল করে নিয়েছিলাম; সেইদিন সমস্ত দূরত্ব ঘুচে গিয়েছিল। তবে, তোমাকে দেখলে আমি না সহজভাবে কোন কথা বলতে পারি না, কেমন নার্ভাস ফিল করি। সব কথা কণ্ঠনালীতে এসে জড়িয়ে যায়। এই দূরত্বটা আমি রাখতে চাই না জুহি। এই দূরত্বটা মেটানোর কি কোন উপায় নেই?’
‘আছে তো!’
‘কী সেটা?’ রাফির প্রশ্ন।
‘ছাদে চলো। দেখি আজকের এই পূর্ণিমার রাত, আকাশ, চাঁদ, তারা সাক্ষী রেখে তোমাকে এই দূরত্ব মেটানোর কোন উপায় শিখিয়ে দিতে পারি কিনা!’
‘তবে তাই চলো।’
জ্যোৎস্না ভরা রাত । চাঁদ যেন তার সব টুকু আলো দিয়ে রাতটাকে মাতাল করেছে। চাঁদের জ্যোতির মাদকতায় রাত যেন আরো মায়াময় হয়েছে , সেজেছে নতুন রুপে। দু`হাত বাড়িয়ে জ্যোৎস্না নিজের মুঠোভর্তি করল জুহি। আহ্ এই রাতের কী অদ্ভুত নেশাধরানো আনন্দ। এতো আনন্দে মেরুদণ্ড বয়ে খুব শীতল এক শিহরণ বয়ে গেল।
ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে রাফি আর জুহি। জুহি আলতো হাতে রাফির হাতে হাত রাখল। মৃদু বাতাসে চুলগুলো উড়ছে খুব।
তা দেখে রাফি সহজ ভঙ্গিতে বলল, ‘মানুষ না হয়ে আমার উত্তুরে হাওয়া হওয়া উচিত ছিল।’
জুহি পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘কেনো?’
‘তাহলে তোমায় এভাবে ডাকাতের মতো ঝাপটে ধরতাম। আর এক কেন্দ্রবিন্দু পরিমাণ দূরত্বও থাকল না আমাদের মাঝে। আচ্ছা, উত্তুরের হাওয়া আর তোমার মাঝে কি দূরত্ব আছে? নেই তো। আমার খুব হিংসে হচ্ছে। আমি কোনো হাওয়া হলাম না!’
‘তোমাকে হাওয়া হতে হবে কেন? তুমি আমার ব্যক্তিগত মন কারিগর হয়েই থেক। তুমি হাওয়া হলে আমি আমার মনের কারিগর কোথায় পেতাম? কে আমায় তোমার মত করে ভালবাসতো বলতো?’
রাফি উত্তর না দিয়ে একহাতে জুহিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এল। জুহি কিঞ্চিত সংকোচ দৃষ্টিতে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। নাহ, কোথাও কেউ নেই। থাকবেই বা কে? এই রাতের অন্ধকারে কেই-বা চেয়ে রবে তাদের পানে? জুহি সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে দিল। রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। এই রহস্যময় রাতের অন্ধকারে নিজের প্রিয়তমের নিকট লজ্জা বিসর্জন কি-ই বা হবে!
জুহি আপনমনে ফিসফিস করে করল, ‘যা তোমাকে আমার কাছে সহজ হতে দেয় না, যার মাধ্যমে তোমাকে আমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে বেশ ভারী লাগে; তেমন দ্বিধা আমি আর রাখব না। এই দ্বিধা শুধু দূরত্বই বাড়াবে। আমি এমন দূরত্ব চাই না। আমি শুধু ভালোবাসা চাই, শুধু ভালোবাসা!’
রাফি গুনগুন করে তার গানের দু’লাইন খালি গলায় গেয়ে শোনাল জুহিকে।
‘দিনের প্রহর পেরোয় ভীষণ মন খারাপে,
দুঃখ পোষে বুক পিঞ্জরে, ভীষণ অভিমানে
শব্দ, অক্ষর, বর্ণ ভুলে খানিক অভিযোগে,
খুঁজে পেয়েছি আশ্রয় তাহার সাম্পানে।
না বলা প্রেমের নিধারুণ সংহার,
কারিগর, ওওওও মন কারিগর!’
.
জীবন জীবনের মত খুব সুখে শান্তিতে চলছিল। এখানে দু’পক্ষের অসীম পাগলপারা ভালোবাসা ছিল, ছিল না কোন দূরত্ব, ছিল না কোন দ্বিধা।
তবে এতোটা মিলন বোধহয় প্রকৃতির সহ্য হচ্ছিল না। তাই প্রকৃতিও তাদের সুন্দর সাজানো গোছানো জীবনের সাথে এক ভয়াবহ খেলা খেলল।
সেদিন সকাল বেলা রাফি স্টুডিওতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। জুহিও অফিসের উদ্দেশ্যে বের হবে। বেশকিছু দিন যাবত অফিসের কাজে আবার আগের মত নিয়মিত হতে শুরু করেছে সে।
জুহি রাফির সামনে বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত ঘুরঘুর করছিল। রাফি তা দেখে বলল, ‘যুদ্ধের আগে আমি এরকম মায়াময় মুখচ্ছবি দেখলে যুদ্ধের ময়দানে যেতে পারব না বধূ। এইভাবে মায়ায় বেঁধো না।’
জুহি চোখ পাকিয়ে তাকাল। বলল, ‘যুদ্ধের ময়দানে যাচ্ছ নাকি তুমি? তো কিসের জন্য যুদ্ধে যাচ্ছ?’
রাফি জুহির কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘আরে বুঝনা! এটা হচ্ছে আমার টিকে থাকার যুদ্ধ।’
‘হ্যাঁ তো যাও না। এখনো বসে আছ কেন?’
রাফি গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, ‘তোমাকে পৌঁছে দেই। তারপর আমি যাই?’
‘রাফি আমি না মোটেও ছোট বাচ্চা নই। আমার বের হতে আর একটু দেরি হবে। তুমি যাও তো। গিয়ে ফোন দিয়ে আমায় জানাবে যে পৌঁছেছো।’
‘আমিও না ছোট বাচ্চা নই যে, ফোন করে সব ডিটেইলসে জানাতে হবে। যাও যাও, পৌঁছে দিয়ে আসতে চাইলাম আমার কথা গুরুত্ব দিলে না তো! ঠিক আছে, সব শুধে আসলে তুলব আমি।’
‘আচ্ছা যখন তোলার সময় হবে তখন তুলো। এখন যাও।’
রাফি ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ল। আহত কন্ঠে বলল, ‘আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না জুহি।’
জুহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কেনো কী সমস্যা?’
রাফি ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘আমার না ঘুমোতেও ইচ্ছা করে না। তিন বেলা খাবার খেতেও আলসেমি লাগে। এই যে কথা বলছি তাও মনের বিরুদ্ধে গিয়ে। গান তো বহু দূরের কথা, আমার তো কথা বলতেও প্রচুর আলসেমি লাগছে। খালি মন চায় প্রেম করি। প্রেম ছাড়া আর কিছু চোখে দেখি না। প্রেম আমার বর্তমান ধ্যান-জ্ঞান হয়ে গেছে।’
জুহি ধমকের সুরে বলল, ‘রাফি! এখন-ই উঠে যাও নয়তো মাকে ডেকে বলে দিব, মা আপনার ছেলেকে প্রেম রোগে ধরেছে। বলো তো, ব্যাপারটা কি ঠিক হবে।’
‘যেতে ইচ্ছে করছে না। বাইরে প্রচুর রোদ, ঝলসে যাব আমি। তুমি কি বউ, হ্যাঁ? দেখি কাছে এসে বসে একটু সেবা যত্ন করো তো আমার।’
‘সব তোমার ধান্ধা। আমি বুঝিনা ভেবেছ?’
‘কচু বোঝো তুমি। থাকো, যুদ্ধে যাই। আর তুমি ফিরবে কখন? আমি ফিরে এসে যেনো আমার বউয়ের চাঁদ মুখখানা দেখতে পাই। ঠিক আছে বউ!’
‘যথাজ্ঞা।’ জুহি হেসে জবাব দিল।
রাফি বেড়িয়ে গেল। ঘর ছেড়ে বেরোতেই একঝলক রোদ চোখেমুখে ধাক্কা লাগল। রাফি চোখমুখ কুঁচকে সূর্যের দিকে চেয়ে থেকে বলল, ‘ইশশশ সূর্যি মামা! রাতে বোধহয় মামীর সাথে খুব ঝগড়া করে এসে এখন আমাদের উপর তেজ দেখাচ্ছ। সো স্যাড! এই জানো, আমার বউ কতো লক্ষ্মী। আমার সাথে একদম ঝগড়া করে না, উল্টো কতো ভালোবাসে। এই বিশ্বব্রাক্ষণ্ডে আমি কত সুখি সেটা দেখে নাও!’
জুহি আড়াল থেকে রাফির ছেলেমানুষী কান্ডকারখানা দেখে মুখ টিপে হাসল।
‘কি হলো? এভাবে একা একা হাসছ কি দেখে?’
হঠাৎ পেছন থেকে কারো কণ্ঠে চমকে উঠল জুহি। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল সায়রা হক দাঁড়িয়ে আছে। জুহি আমতা আমতা করে বলল, ‘না মা এমনিতেই।’
‘তুমি অফিসে যাবা কখন? সাড়ে দশটা বেজে পার হয়ে গেছে তো।’
‘এইতো যাচ্ছি মা।’
‘ফিরবে কখন?’
‘দুপুরের পর হবে মনে হয়। রান্না-বান্না করেই রেখেছি। বাবা কি দুপুর ফিরবে?’
‘মনে হয় না। আচ্ছা সাবধানে যেও, আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।’
‘আচ্ছা মা, আসছি।’
জুহি বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলো। মূলফটক পেড়োতেই উদয় হল রাফি। আচমকা রাফিকে দেখে ভড়কে গেল জুহি। আপাদমস্তক পরখ করে নিল মুহূর্তেই। দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে একগুচ্ছ ভৃঙ্গরাজ ফুলের তোড়া। সেটা জুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘জাস্ট ফর ইউ!’
জুহি কণ্ঠে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলল, ‘তুমি যাও নাই এখনো?’
‘গিয়েছিলাম তো। মাঝপথে দেখি তোমার পছন্দের ফুল। তাই নিয়ে এলাম। আচ্ছা, লাল গোলাপ থাকতে তোমার এই ফুল কেন ভীষন প্রিয়?’
‘তোমাকে কে বলেছে এই ফুল আমার ভীষণ প্রিয়?’
‘তোমার ডায়েরীতে লেখা দেখেছিলাম।’
‘মনে রং লেগেছিল তাই লিখেছি। এখন রং মুছে গেছে, তাই এটাও খুব একটা প্রিয় নয়। কষ্ট করে এনেছে যখন দাও, রেখে দেই। আমি তো এতোটাও নিষ্ঠুর নই যে, কেউ একজন শখ করে একটা জিনিস এনেছে সেটি আমি অবজ্ঞা করে ফেলে দেব।’
রাফি ফুলের গোছা বাড়িয়ে দিল জুহির দিকে। জুহি ভেতরে যেতেই রাফিও পিছু পিছু এল।
জুহি জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি আসছ কেন?’
‘আসব না?’
‘কাজ আছে তোমার?’
‘না নাই।’
‘তাহলে আসছ কেন? যাও নিজের কাজে যাও।’ ধমক দিয়ে বলল জুহি।
‘যাচ্ছি।’ বলেও রাফি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। চোখের চাহনি দেখেই জুহি বেশ বুঝে গেছে তার গায়ক সাহেবের প্রচন্ড মন খারাপ। মন খারাপের কারণটাও জুহির জানা। রাফি আরোও কিছুক্ষণ জুহির কাছাকাছি থাকতে চায়।
জুহি একবার আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে নিল। যেভাবে গোয়েন্দারা অপরাধী ধরার সময় সতর্কতা জারি করে ঠিক সেইভাবে।
রাফি নিম্নপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। জুহি এগিয়ে গিয়ে রাফির গা ঘেঁষে দাঁড়াল। খুব আলতো করে রাফির গালে চুমু খেল। রাফি চকিত দৃষ্টিতে তাকাতেই জুহি মিষ্টি হেসে ভেতরে চলে গেল।
রাফি নিজের গালে হাত দিয়ে ভাবছে, এটা স্বপ্ন ছিল নাকি সত্যি! তৎক্ষণাৎ নিজেই নিজের হাতে চিমটি কেটে নিশ্চিত হলো ঘটনাটা আসলেই সত্যি। সহসা লাজুক হাসি ফুটল তার চোখেমুখে। আহা! নিজস্ব একটা মানুষ থাকলে জীবন কতো সুন্দর।
জুহি ফুলগুলো খুব যত্নে তুলে রাখল। তারপর আলতো হাতে ফুলের গোছাটা গালে ছুঁয়ে বলল, ‘ফুলের প্রতি আলাদা ফ্যাসিনেশন কখনোই ছিল না, একদম-ই ছিল না। যেদিন তুমি এই ফুলের মাধ্যমে আমার অনামিকাতে পূর্ণতা দিলে, ঠিক সেইদিন থেকে এই ফুলটা আমার সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেল। আমি এই ফুলের মতোই তোমাকে ভালোবাসি রাফি!’
তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে জুহি নিজ গন্তব্যে রওনা হল। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব যাওয়া যায়, ততই ভালো।
দুপুরের পর হাতে সময় থাকায় রাফি জুহিকে ফোন করল। আশ্চর্য ব্যাপার, জুহির ফোন বন্ধ। যেটা কখনোই হয় না।
.
.
.
চলবে….
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮০৮