মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব-২৩+২৪+২৫

0
401

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৩
ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে মাত্রই ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো রিধি।ভালো লাগছে না কিছু।প্রাণপ্রিয় বান্ধুবীর সেই বিধ্বস্ত অবস্থা মনে করলে এখনও বুকে ব্যথা উঠে।না জানি কি করছে মেয়েটা?একবার কি কল করে দেখবে?ফোনকলের কথা চিন্তা করতেই।ওর মোবাইল ফোনটা তীব্র শব্দে বেজে উঠল।রিধি হাতের তোয়ালেটা চেয়ারে রেখে এগিয়ে যায়।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।সচরাচর তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে না।কিছুটা চিন্তিত হয়ে উঠল রিধি।কল কেটে যাওয়ার আগেই রিসিভ করে কানে ধরল।সাথে সাথে কানে এসে বারি খেল গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠস্বর,
‘ রিধি,আমি রুদ্রিক বলছি।আজ ভার্সিটিতে অথৈয়ের সাথে কি হয়েছে।সবটা আমায় বলো।ইচ এন্ড এভ্রি ডিটেইলস!’

আচমকা রুদ্রিকের এহেন কথায় থতমত খেয়ে গেল রিধি।রুদ্রিক যে তাকে কল করেছে ব্যাপারটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।রুদ্রিকের কণ্ঠস্বর আবারও শোনা গেল,
‘ রিধি?শুনছ?’
‘ হ..হুঁ!’
‘ ভার্সিটিতে কি হয়েছে?’

রিধি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে একে একে সব বলল রুদ্রিককে।ফোনের অপাশ হতে রুদ্রিক সব শুনে রাগে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।দাঁতেদাঁত চিপে বলে উঠল,
‘ এই মেয়েকে অনেক ছাড় দিয়েছি।কিন্তু আর দিবো না।আমার অথৈয়ের চোখের পানি ঝরেছে ওর জন্যে।ওকে আজ আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।’

রুদ্রিকের রাগমিশ্রিত কথায় ভয় পেয়ে যায় রিধি।আমতা আমতা করে বলে উঠল,
‘ ভাইয়া?অথৈয়ের কি কিছু হয়েছে? আর এখন ও কোথায়?’

রুদ্রিক বলল,’ ও বাড়ি চলে গিয়েছে।ঘটনাটায় বেশ আঘাত পেয়েছে ও।স্বামী হিসেবে আমি ব্যর্থ।আমি আমার স্ত্রীকে প্রটেক্ট করতে পারিনি।’
‘ এভাবে বলবেন না ভাইয়া।তবে আমি এটাও বলব না যে আপনার একেবারেই দোষ নেই।আপনার দোষ একটাই আপনি বিয়েটা গোপন রেখে কাজটা ভালো করেননি।’

রিধিও রাগ লাগছে রুদ্রিকের উপর।কেন সে এমন করল?এটা না করলে তো আর অথৈ এতো কষ্ট পেতো না।রুদ্রিক হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ হ্যা আমি মানছি আমার দোষ।তবে আমিও পরিস্থিতির স্বিকার।তবে বুঝতে পারিনি এমন কিছু ঘটবে।অথৈ আমার উপর তীব্র অভিমান করেছে।রাগ করলে রাগ ভাঙানো যায়।তবে অভিমানের পাহাড় এতো সহজে ভাঙা যায় না।’
‘ অথৈয়ের অভিমান ভাঙাতে আপনার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে ভাইয়া।’
‘ তা তো আমি জানিই।বুঝতে হবে না ও বউটা কার।তবে চিন্তা নট।আমার দুটো সালিসাহেবা আর দুটো সালাবাবু আছেন না?তারা তো আছেই আমাকে হেল্প করার জন্যে।’

লাস্ট কথাগুলো দুষ্টুমির স্বরে বলল রুদ্রিক।রিধি হেসে ফেলল রুদ্রিকের কথায়।বলল,’ তা তো অবশ্যই।আমরা আপনাকে সবরকম হ্যেল্প করতে প্রস্তুত।’
‘ থ্যাংক ইউ।’
‘ ইয়্যুর মোস্ট ওয়েলকাম ভাইয়া।’
‘ হুম ভালো থেকো।রাখছি।’
‘ আচ্ছা ভাইয়া।ভালো থাকবেন।’

কথপোকথন শেষ করে কান থেকে মোবাইল সরালো রুদ্রিক।তারপর নিজের রুম থেকে বের হয়ে যায় রেগে।বসার ঘরে বসে আছেন সবাই।আরহাম সাহেব আর আরিয়ান মাত্রই অফিস থেকে এসেছেন লাঞ্চ টাইমে।ছেলেকে রাগে চোখ মুখ লাল করে নিচে নামতে দেখে,হাতের থাকা চায়ের কাঁপতে টি-টেবিলে রাখলেন।আরহাম সাহেব চিন্তিত গলায় বলেন,’ রুদ্রিক?কি হয়েছে তোর?এতো রেগে আছিস কেন?’

রুদ্রিক রাগ চেপে রেখে কোনোরকমে বলে,’ বাবা সব বলব।কিন্তু আপাততো তোমার বোন আর তার মেয়েকে এক্ষুনি এই বাড়িতে আসতে বলো।আর নাহলে যদি আমি যাই। তো তোমার বোনের মেয়ের কপালে বহুত দুঃখ আছে।’

আরহাম সাহেব ভড়কে গেলেন ছেলের কথায়।তার মন একশ পার্সেন্ট সিউর জেনি কিছু করেছে।তাই তো তার ছেলে এমন রেগে আছে।আরহাম সাহেব প্রশ্ন করলেন,’ কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো জানতে পারি নাকি?’
‘ সেটা নাহয় তারা আসলেই বলব।’

আরহাম সাহেব কিছু বলবেন তার আগেই আরিয়ান চোখের ইশারায় ওর বাবাকে বলে রুদ্রিক যা বলেছে তাই যেন করে।রুদ্রিকের চিৎকারে আতিক মাহাবুব আর রোজা রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন।রোজা মেডিসিন নিয়ে গিয়েছিলো আতিক মাহাবুবের কাছে।রুদ্রিকের রাগি গলার আওয়াজ শুনে তারা ছুটে এসেছেন।রোজা অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল,’ কি হয়েছে?রুদ্রিক তুই এতো রেগে কেন?’
‘ তা একটু পরেই বুঝতে পারবে ভাবি।একটু অপেক্ষা করো।’

আতিক মাহাবুব সোফায় আয়েশ করে বসলেন।ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন,’ আরহাম!শেফাকে ফোন দিয়ে আসতে বল।আর সাথে যেন রাগিবকেও নিয়ে আসে।আর হ্যা জেনি তো অবশ্যই যেন আসে।’

আরহাম সাহেব বাবার কথামতো ফোন করলেন তার বোন,মানে শেফাকে।আরহাম সাহেব বেশ শান্তভাবেই তাদের এক্ষুনি এই বাড়িতে আসার কথা বলেন।শেফা বেগম ভাইয়ের এমন জরুরি তল্লবে।একমুহূর্তের জন্যে মনে করলেন।তিনি বোধহয় রুদ্রিক আর জেনির বিয়ের বিষয়ে কথা বলবেন।তাই ভাইয়ের কথামতো সবাইকে নিয়ে হাজির হলেন। অবশ্য জেনি আসতে চায়নি।অথৈয়ের হাতে মার খেয়ে তার গাল ফুলে ফ্যাপে উঠেছে।অবস্থা বেশ খারাপ।যা মেক-আপের আস্তরণে ঢেকে রেখেছে।কাউকে বুঝতে দেয়নি।সে যদি ওর মা বা বাবাকে বিষয়টা জানায়।তো তারা গিয়ে রুদ্রিকদের বাড়ি গিয়ে ঝামেলা করবে।আর রুদ্রিক এসব জানলে তো তার করা কীর্তির কথা যেনে যাবে।তখন রুদ্রিক রেগে মেগে যে কি করবে সেটার ভয়ে ও যেতে চাইছে না।এইযে এখন ও বাড়ি থেকে খবর এসেছে।জেনির ভয় করছে।সে যেটার ভয় পাচ্ছে।তা যদি হয়ে থাকে তবে ওর কপালে শনি আছে।কিন্তু মায়ের জোড়াজুড়িতে ওকে বাধ্য হয়ে যেতে হলো।মির্জা বাড়িতে ওরা এসে হাজির হলো।তারা এসে সোফায় বসবে।তার আগেই রুদ্রিক প্রচন্ড রেগে জেনির হাত টেনে কাছে এনে ওর গাল চেপে ধরল।চিৎকার করে বলে উঠল,’ তোর সহস কিভাবে হলো?তুই রুদ্রিকের জানে আঘাত করিস।আমার স্ত্রীকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিস। তোর এই মুখটা দিয়েই তো সব বলেছিস?তাই নাহ?এখন যদি তোর এই মুখটাই আমি ভেঙে দেই কি বলিস?’

রুদ্রিকের এহেন কান্ডে সবাই চমকে উঠেন।শেফা দৌড়ে মেয়ের কাছে যান।রুদ্রিকের কাছ থেকে ওকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করতে লাগলেন কিন্তু পারলেন না।কারন রুদ্রিক ঠিক এতোটাই জোড় প্রয়োগ করেছে।রোজা এইবার এগিয়ে যায়।রুদ্রিকের কাছ থেকে জেনিকে ছাড়াতে এসে বলে,’ ছেড়ে দে রুদ্রিক।কি করছিস এসব?ছাড়,নাহলে ও ম’রে যাবে তো।’
রুদ্রিকের কঠোর কণ্ঠস্বর,’ যাক ম’রে।’

রুদ্রিক এইবার ধমকে উঠেন আরহাম সাহেব।বাবার ধমকে জেনিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।আরহাম সাহেব রাগি গলায় বলে উঠেন,’ এটা ধরনের ব্যবহার রুদ্রিক?ও সম্পর্কে তোমার বোন ভুলে যেও না।আর আমরা সবাই এখানে আছি।আমাদের সামনে এরকম জালিমদের মতো আচরণ করার কারন কি?’

রুদ্রিক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল, ‘ কারন জানতে চাইছ?আর এ আমার বোন?রিডিকিউলাস! এ আমার বোন কেন?এই মেয়ে আমার কিছুই নাহ।’

শেফা মেয়েকে আঁকড়ে ধরে আছেন।সারাদিনে এতো এতো মার খেয়ে জেনি পুরো নিস্তেজ।শেফা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে বলেন, ‘ এইভাবে অপমান করার জন্যে এই বাড়িতে ডেকেছিস আমাদের ভাই।আর বাবা তুমি কিছু বলছ না কেন?’

আতিক মাহাবুব বেশ শান্ত গলায় বলেন,’ তুই আর তোর মেয়ে কেমন ধাচের মানুষ।তা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।রুদ্রিকের এমন ব্যবহারের পিছনে যে বিশাল বড়ো কারন আছে।তা ওর কথাতেই বুঝতে পেরেছি। আর বিষয়টা যদি আমার বাড়ির, মানে মির্জা বাড়ির ছেলের বউয়ের বিষয়ে হয়।তো ফল তোদের জন্যে খারাপ হবে।কারন আমার বাড়ির ছেলের বউরা হলো আমার বাড়ির সম্মান।আর এই বাড়ির সম্মানে যে আঘাত করবে।তাকে শাস্তি তো পেতেই হবে। যেটা যেই হোক না কেন! ‘

আতিক মাহাবুবের কথায় শেফা কান্না থামিয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকান।অবাক হয়ে বলেন,’ ছেলের বউরা মানে?আর রুদ্রিক ও তখন বললো ওর স্ত্রী।কিন্তু রুদ্রিক তো এখনও বিয়ে করেনি।’

রুদ্রিক বলে উঠল,’ ঠিকই শুনেছ তুমি ফুপি।আমি বিয়ে করেছি।আমার স্ত্রী আছে।’
‘ মানে?’
‘ মানে আমার বিয়ে হয়েছে।এই বিষয়ে আপনাদের জানানো হয়নি।দাদু আমাকে মেয়ে দেখাতে নিয়ে গিয়ে।হুট করে সেই মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে এই বাড়িতে উঠিয়ে আনলে আপনাদের জানাবো ভেবে রেখেছিলাম।’

রুদ্রিক বেশ শান্তভাবে কথাগুলো বললেও।শেফা শান্তভাবে তা হজম করতে পারল না।চিল্লিয়ে উঠেন তিনি,’ এটা হতে পারে না।আমি ভাইকে বলেছিলাম না।জেনির সাথে তোর বিয়ে দিব।এটা আমার স্বপ্ন।তাহলে?ভাই তুই এসব কিভাবে করতে পারলি?’

শেষের বাক্যটা আরহাম সাহেব উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি।আরহাম সাহেব ভাবলেসহীনভাবে বলে,’ তোর বা আমার কথাতে তো হবে না?আমার ছেলে যা চাইবে তাই হবে।তাছাড়া বিয়েটা বাবার ইচ্ছেতে হয়েছে।আর বাবার কথাই এই বাড়িতে শেষ কথা।তিনি যা বলবেন তাই হবে।’

রোজা এই সুযোগে রুদ্রিককে প্রশ্ন করল,’ রুদ্রিক কি এমন হয়েছে যে তুমি জেনিকে এইভাবে মারলে?অথৈকে জেনি কি করেছে?’

রুদ্রিক রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় জেনির দিকে।জেনি ভয়ে একদম গুটিয়ে গেল মায়ের কাছে।রুদ্রিক রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে বলতে লাগল,’ অথৈ আমি যেই ভার্সিটিতে পড়ি সেখানেই পড়ে।তো এখন যেহেতু আমরা স্বামি স্ত্রী।আমি চাইছি আমাদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা কাপলদের মতো স্বাভাবিক করতে।সেইজন্যেই অথৈ আর আমার ক্লাস শেষে। আমি আর অথৈ দুজন মিলে ভার্সিটির পিছনে নদীর পাড়ে একান্তভাবে কিছু সময় কাটাই।সেটা বোধহয় এই রাস্কেলটা দেখেছে।ও তো ছ্যাছড়ার মতো আমার পিছনে পরে থাকে। আমার থেকে পাত্তা না পেয়ে আজ সকালে অথৈকে ভার্সিটিতে মানুষের সামনে যা নয় তাই বলেছে।ওর চরিত্রের দিকে আঙুল তুলেছে।আরও অনেক বাজে কথা বলেছে।অথৈ রেগে গিয়ে ওকে মেরেছে।ও নিজেও মারতে গিয়েছিল। কিন্তু পারেনি।মেয়েটা অসুস্থ এই অবস্থাতেই ওর সাথে পারলি না।সুস্থ্য থাকলে তুই এখনও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পেতি না।’

শেষের কথায় জেনিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করল রুদ্রিক।ফের বলতে লাগল,’ আমি একটা কারন বশত ওর কাছ থেকে মানে আমার ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে বিয়ের বিষয়টা গোপন রেখেছি।ভেবেছিলাম সঠিক সময় এলে।সুযোগ মতো সবাইকে জানাবো।জানে শুধু ইহান।ও নিজেও জানত না যদি না ও অথৈয়ের ভাই না হতো।অথৈ বুঝতে পেরেছে আমি ওদের জানায়নি আমাদের বিয়ের বিষয়।তাই আমি দেখা করতে গেলে।আমার সাথে রাগ দেখালো।আমাকে ভুল বুঝল।আমার সাথে নরম স্বরে কথা বলা অথৈ। আজ কঠোরভাবে আমার সাথে কথা বলেছে।অভিমান করে চলে গিয়েছে।মানলাম ও জানে অথৈ আমার স্ত্রী।কিন্তু! ও কেনই বা একটা মেয়েকে না জেনে শুনে এইসব বিশ্রি কথা বলবে?কেন বলবে?আর ও বলেছে আমি নাকি ওকে ভালোবাসি।এই তোকে আমি কবে বলেছি ভালোবাসি?তোর দিকে তো আমার তাকাতেই ঘৃনা লাগে।মন তো চাচ্ছে তোকে গলা টি’পে মেরে ফেলি।আজ তোর কারনে আমার অথৈ এতোটা কষ্ট পেলো।’

নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আবারও তেড়ে মারতে চলে গেল রুদ্রিক।আরিয়ান দ্রুত উঠে ওকে আটকালো।আতিক মাহাবুব বললেন,’ রুদ্রিক বিশৃঙ্খলা আর সৃষ্টি করিস না। যা বলার আমি বলব।’

দাদার কথায় থেমে যায় রুদ্রিক।তবে রাগে এখনও হিসফিস করছে।আতিক মাহাবুব গম্ভীর গলায় বলেন,’ তুমি এই বাড়ির মেয়ে তাই তোমাকে এইখানে আসার জন্যে আমি বাধা দিতে পারব না।তবে আমি প্রচন্ড খুশি হবো যদি তুমি তোমার মেয়েকে রেখে তবেই আসো।কারন এতো এতোটা অভদ্র,অসভ্য নাতনির আমার কোনো দরকার নেই।যেদিন নিজেকে সুধরাতে পারবে সেদিনই আমার বাড়িতে পা রাখবে।আর তুমি শেফা মেয়েকে সঠিক শিক্ষা তো দিতে পারোনি।এইজন্যেই আজ এই অবস্থা।মেয়ে আর মা দুজন ভালো হতে পারলেই এই বাড়িতে আসবি।আর যদি এতো নোংরা মনকে আজীবন ধরে রাখতে চাস। তবে মির্জা বাড়ির দরজা তোমাদের জন্যে চিরকালের জন্যে বন্ধ।’

শেফা আতিক মাহাবুবের কথায় তেজ দেখিয়ে বলে,’ এতো বড়ো অপমান। ঠিক আছে আসবো না আর এই বাড়িতে।চল জেনি।আজ থেকে আমার বাবা আর ভাই আমার জন্যে মরে গিয়েছে।’

আরহাম সাহেব আর আতিক মাহাবুব বেশ কষ্ট পেলেন তার কথায়।একজনের একমাত্র বোন আরেকজনের একমাত্র মেয়ে। কষ্ট তো পাওয়ারই কথা।তবে অন্যায় যেহেতু করেছে শাস্তি তাদের পেতে হবেই।রাগিব এতোক্ষন চুপই ছিলেন।এটা তাদের বিষয় তাই আর তিনি কিছু বলেননি।তিনি এসে নিজের স্ত্রী আর মেয়ের ব্যবহারের জন্যে ক্ষমা চাইলেন।আতিক মাহাবুব উনাকে ছোটো হতে মানা করলেন।কারন এতে উনার কোনো দোষ নেই।তার নিজের মেয়ে খারাপ।পরের ছেলেকে আর দোষ দিয়ে লাভ কি?

#চলবে__________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৪
বিষন্ন মন নিয়ে ভার্সিটিতে এসে পৌছালো অথৈ। ভার্সিটির মাঠে ওর পা ফেলতে দেরি।হুট করে রুদ্রিক এসে ওর হাত চেপে ধরে।নিজের সাথে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।আকস্মিক এমন কান্ডে অথৈ হতভম্ব হয়ে যায়।ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠে ও,
‘ কি করছেন?আমার হাত ছাড়ুন! আর এভাবে আমাকে গোরুর মতো টানছেন কেন?’

রুদ্রিক কোনো প্রকার জবাব দিলো না।সে তার কাজে ব্যস্ত।অথৈ রাগে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগল।এমন করার কারনে ভার্সিটির স্টুডেন্টের প্রায় সবার নজর তাদের দিকেই।অথৈ হাত মোচড়াচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।রুদ্রিক অথৈকে টেনে একেবারে ওর বন্ধুদের সামনে এনে দাঁড়ালো।আকস্মিক অথৈকে নিয়ে রুদ্রিকের এমন আগমনে ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।শুধু অবাকতার রেশ নেই ইহান আর সাফাতের চোখে।আর বাকি হলো নীল,অনিক,সিয়া,মারিয়া।জেনি আজ আসেনি।গতকাল যেই হারে মার খেয়েছে।আজ ওর এতো শক্তি নেই যে ও নিজের পায়ে আজ হাটতে পারবে।
এদিকে অথৈ এইবার রাগে ঝটকা মেরে রুদ্রিকের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।তবে রুদ্রিকের কাছ থেকে হাত ছাড়াতেই রুদ্রিক এইবার অথৈয়ের কোমড়ে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসল।অথৈয়ের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। নীল হা করে তাকিয়ে আছে।অনিক আহাম্মকের মতো বলে,’ তুই অথৈরে এমন চিপ্পা ধরছস কেন?কিরে?তোর কি হলো?’

রুদ্রিক অনিকের কথার কোনো প্রতিত্তুর করল না।সে আপাততো দেখতে ব্যস্ত ছটফট করতে থাকা অথৈকে।নিজেকে রুদ্রিকের কাছ থেকে ছাড়াতে না পেরে এইবার অথৈ রাগি চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকাল।দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ আমাকে ছাড়ুন বলছি।কিসের অধিকারে আপনি আমাকে এইভাবে ধরে রেখেছেন?’

রুদ্রিক ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে,’ তুমি জানো না কিসের অধিকারে?তুমি আমার কে হও তুমি জানো নাহ?’

অথৈ চিৎকার করে বলে,’ না জানি না।আর জানতেও চাই না।আর রইলো যে অধিকারের কথা আপনি বলছেন।তবে কান খুলে শুনে রাখুন।যে লোক নিজের স্ত্রীর পরিচয় সবার থেকে গোপন রাখে। তাদের বিয়ের বিষয়ে সে জানাতে পারে না।তার কোনো অধিকার নেই সেই স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার দেখানো।তাই আপনারাও আমার উপর কোনো অধিকার নেই।আমি আপনার কেউ নাহ।’

অথৈয়ের কথায় রুদ্রিকের রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেল।সে জানে সে ভুল করেছে।তাও একটা কারন বশতই করেছে।এইজন্যে এই মেয়ে এমন করবে? রুদ্রিক অথৈয়ের বাহু আঁকড়ে ধরে টেনে নিজের মুখোমুখি আনলো।রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,’ বড্ড বেশি কথা বলছ তুমি অথৈ। আমাকে রাগিও না।ফলাফল ভালো হবে না।আর অধিকারের কথা বলছ তাই না?শুধু তোমার হাত কেন?তোমার সসম্পূর্ণ দেহে আমি স্পর্শ করতে পারব।এমনকি এই সবার সামনে তোমার ঠোঁটে চুমুও খেতে পারব।ওয়ানা সি?’

ইহান খুক খুক করে কেশে উঠল।হাজার হোক সে অথৈয়ের ভাই।এমন একটা পরিস্থিতি তার জন্যে লজ্জাজনক বটে।তবে কিছু করার নেই। তাকে এখানে থাকতেই হবে। জানতে হবে কি এমন হয়েছে।যেই কারনে অথৈ এরকম কথাবার্তা বলছে।

এদিকে রুদ্রিকের মুখের বলা প্রতিটা বাক্যে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল অথৈয়ের।লজ্জায় কান,গাল গরম হয়ে গেল।সবার সামনে লোকটা এমন বেফাঁস কথা কিভাবে বলতে পারে?অথৈ নাক মুখ কুচকে বলল,’ ছিঃ! বেশরম লোক।দূরে সরুন আপনি আমার কাছ থেকে।’

রুদ্রিক কিছু বলল না। অথৈকে ছেড়ে দিল।অথৈ চলে যাবার জন্যে পা বাড়াতে নিলেই।রুদ্রিক গম্ভীর স্বরে বলে,’ এখান থেকে যদি এক পা বাড়ানো হয়।তবে সত্যি বলছি।একটু আগের বলা কথাগুলো আমি করেই দেখাবো তোমায়।আর রুদ্রিক তার কথা রাখে।মনে রেখো।’

পায়ের তলা শিরশির করে উঠল অথৈয়ের।রুদ্রিকের কথায় আর আগানোর সাহস পেলো না।চুপচাপ সোজা হয়ে দাঁড়ালো।তবে রুদ্রিকের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে।রুদ্রিক চোখ উল্টিয়ে এইবার নিজের বন্ধুদের দিকে তাকালো।বন্ধুদের অবাক করা চাহনিযুক্ত মুখশ্রী।সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সে বলে উঠল,’ কয়েকদিন আগে হুট করে দাদা আমাকে মেয়ে দেখতে নিয়ে যায়। তারপর আকস্মিকভাবে দু পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়েটাও সেদিন হয়ে যায়।তাই তোদের জানাতে পারেনি।তোরা কষ্ট পাবি আমার হুট করে বিয়ে করে নেওয়ার কথা শুনে।তাই আমি চাচ্ছিলাম সঠিক সময় এলে তোদের জানাবো।কিন্তু আমি সেখানেই মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছি।তোদের আগে জানিয়ে দিলেই ভালো ছিল যে অথৈ আমার বিয়ে করা বউ।তাহলে সেদিন জেনি অথৈয়ের সাথে এমন রুড বিহেইব করার সাহস পেতো না।’

তারপর একে একে জেনির করা কান্ড ওদের বলে।কথা বলা শেষে দেখে অনিক,নীল,মারিয়া,সিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইল।এইগুলোর কি হলো?এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে।ভালোলাগার রঙিন প্রজাপতিরা এদিক সেদিই উড়াউড়ি করতে লাগল।অজান্তেই ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হয়ে আসল অথৈয়ের।অতঃপর হুট করেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে চেহারাখানা গম্ভীর করে নিলো।
রুদ্রিক বন্ধুদের রিয়েকশন দেখে ওদের কাছে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই সাফাত,নীল,অনিক ঝাপিয়ে পরল রুদ্রিকের দিকে।ওদের দেখা দেখি এইবার ইহানও একই কাজ করল।নীল রুদ্রিকের গলা শক্ত করে ধরে বলে,’ সালা আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললি।তোকে তো আজ আমরা ছাড়ছি না।তোর পকেট আজ পুরো ফাঁকা করে তবেই দম নেবো।’.

ইহান বলল,’ আমিও সাথে আছি।’

অনিক বলে,’ এতো বড়ো একটা গুড নিউজ।ওর তো উচিত পুরো ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টদের ট্রিট দেওয়া।’

সাফাত হাসি মুখে বলল,’ সালা বিয়ে করবে না। বিয়ে করবে না করে।এখন চুপা রুস্তম হয়ে বসে আছে।তোকে আজ ফকির বানিয়ে রাস্তায় নামাবো।তবেই ক্ষান্ত হবো আমরা।’

রুদ্রিকের উপর এমন চারটা হৃষ্টপুষ্ট ছেলের ভর পরায়।ও ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে না।তাই বন্ধুদের কাছে হার মেনে বলল,’ ঠিক আছে। ঠিক আছে।তোদের সব আবদার মেনে নিলাম।এইবার আমাকে ছাড়।তোরা যেভাবে চেপে ধরেছিস। দেখা যাবে বাসর আর আমার করা হবে না।তার আগেই আমি অক্কা পেয়েছি।’

রুদ্রিকের এমন লাগামহীন কথা বলায় অথৈ লজ্জা পেলো।এখনে এতোগুলো মানুষ।তার উপর ওর বড়ো ভাই আছে।আর এই লোক কিনা কি সহজেই এসব কথা বলে চলেছে।অথৈ বিরবির করল,’ অসভ্য।চরম অসভ্য।’

এদিকে রুদ্রিককে সবাই ছেড়ে দিলো।ইহান সরে এসেই ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,’ তোর লজ্জা করে না আমার সামনে এসব বলতে?আফটার অল আমি তোর বউয়ের বড়ো ভাই।সম্মান দিয়ে কথা বলবি।’

রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ সম্মান? তাও আবার তোকে?স্বপ্নেও আমি তোকে সম্মান দিবো নাহ।’
‘ আমাকে সম্মান না দিলে।আমার বোনকেও তোর বাড়ি পাঠাবো না।’
‘ তুই আর কিছুই করতে পারবি না। কারন অথৈকে আমার রাজ্যের রানি বানিয়ে নিয়েছি।আমি চাইলে এখনই তাকে আমার রাজপ্রাসাদে নিয়ে যেতে পারি।সেখানে তুই কেন তোর চৌদ্ধগুষ্টিও আমায় আটকাতে পারবে না।’

রুদ্রিকের এহেন কথায় হেসে ফেলল ইহান। সাফাত এইবার মুচঁকি হেসে এগিয়ে যায় রুদ্রিকের দিকে।সাফাতকে দেখেই রুদ্রিকের হাসিটুকু মিলিয়ে গেল। সাফাতের ব্যবহারগুলো তার বোধগম্য হচ্ছে না।সে তো সাফাতের ভয়েই বলতে পারেনি সত্যিটা।তার বন্ধু যদি কষ্টে পেয়ে রাগে দুঃখে ওর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়?বন্ধু হারানোর ভয় ঝেকে ধরেছিলো ওকে।একদিকে নিজের ভালোবাসা আরেকদিকে প্রাণপ্রিয় বন্ধু।দুটোর একটাকেও ছাড়তে পারবে না রুদ্রিক।তাই তো দোটানায় পরে গিয়েছিলো।কিন্তু এখন তো দেখছে কাহিনি সম্পূর্ণ উলটো।সাফাত রুদ্রিকের হাতে হাত মিলিয়ে হেসে বলে,’ কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত।তুই আর অথৈ যেন সারাজীবন সুখে থাকিস এই দোয়া করি।’

রুদ্রিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাফাতের দিকে।এমনক বাকিদেরও একই অবস্থা।কারন ওরা সবাই বুঝতে পেরেছিলো যে সাফাত অথৈকে পছন্দ করে।আর সাফাত যে এতো সহজে এইভাবে সবটা মেনে নিবে। এটা হজম করতে কষ্ট হবে।’

সাফাত অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ অথৈ..! উপ্সস সরি,ভাবি।আপনি যদি একটু এখান থেকে যেতেন। মানে ওদের সাথে একটু কথা আছে।আসলে মানে বন্ধুদের বিষয় তো। আর আপনি আমাদের ভাবি।একটু ওকওয়ার্ড ফিল হবে।’

অথৈ আঁড়চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।রুদ্রিক অথৈয়ের দিকেই তাকিয়েছিলো।অথৈ তাকাতে সে চোখের ইশারায় সম্মতি দেয়।অথৈ এইবার সাফাতের দিকে তাকিয়্ব বলে,’ এভাবে বলবেন না ভাইয়া।আমি আপনাদের থেকে বয়সে অনেক ছোটো।আর তাছাড়া আমায় ভাবি ডাকার দরকার নেই।আর না আপনি বলে সম্বোধন করবেন।আগে যা বলতেন, যেভাবে বলতেন।ঠিক এখনও তাই করবেন।আশা করি বুঝতে পেরেছেন।তাহলে এখন আমি আসি।ঠিক আছে ভাইয়া।’

সাফাত মলিন হাসি দিলো।অথৈ চলে গেল সেখান থেকে।রুদ্রিক এইবার সাফাতের কাছে এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখল।করুণ গলায় বলে,’ আমাকে ক্ষমা করে দে বন্ধু।তোকে কষ্ট দিতে আমি চায়নি।কিন্তু আমার হাতে যে কিছু ছিলো না।’

সাফাত সাথে সাথে চেহারার মলিনতার ছাপ আড়াল করার চেষ্টা চালালো।রুদ্রিকের বাহুতে হালকা চাপড় মেরে বলে,’ আরে কিসের ক্ষমা চাচ্ছিস তুই?এখানে তোর কোনো দোষ নেই।আর উপরওয়ালা তোদের দুজনের জুটি আগে থেকেই বানিয়েই রেখেছেন।সেখানে আমাদের কারোর কিছুই করার নেই।আমি অথৈকে পছন্দ করি ঠিক আছে।কিন্তু সেটা ভালোবাসা কি না জানি না।আর মাত্র কয়েকদিনের পছন্দের কাছে কি,আমাদের এতোবছরের বন্ধুত্বকে আমি তুচ্ছ করে দিব?এতোটা বোকা আমি নই রুদ্রিক।আর আমার কষ্ট হলেও।আমি জানি তোরা আমায় সামলে নিবি। ‘

সাফাতের কথায় রুদ্রিকের মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।উপরওয়ালার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করল তাকে এতো ভালো বন্ধু নামের ভাইদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে দিলো ওর সব বন্ধুদের উদ্দেশ্যে।ইহান,সাফাত,নীল,অনিক সবাই ঝাপিয়ে পরল।ওদের গ্রুপ হাগ করতে দেখে মারিয়া ঠোঁট উলটে বলে,’ এটা কিন্তু একদম ঠিক করছিস না তোরা।আমাদেরও নেহ।আমরা মেয়ে বলে কি?তোদের হাগ করতে পারব নাহ?’

সিয়া চোখ ছোট ছোট করে বল,’ আমাদেরও নেহ।নাহলে এক একটা ঠ্যাং ভেঙে দিবো।’

রুদ্রিক সহ বাকিরাও হেসে দিলো।ওরা মারিয়া আর সিয়াকে জায়গা করে দিলো গ্রুপে আসার জন্যে।মারিয়া আর সিয়া চওড়া হাসি দিয়ে।হুরমুর করে ছুটে গেল।বন্ধু’রা সব মিলে মুহূর্তেই পরিবেশটাকে আনন্দঘন করে তুলল।
_______________
অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদ ক্যান্টিনে বসে আছে।এদিকে আহিদ ক্যান্টিনের চারদিকে টুকুরটুকুর করে চোখ বুলাচ্ছে।মনে হয় কাউকে খুঁজছে।হ্যা,খুঁজছেই তো সে।সেদিনের সেই মাইশা নামের মেয়েটাকে খুঁজছে।সেদিনের পর আর একবারও মেয়েটার দেখা পায়নি আহিদ।কেমন যেন বুকটা খালি খালি লাগছে।চারদিক বিষাক্ত লাগছে।সে ঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারছে না।আহিদকে এমন ছটফট করতে দেখে প্রিয়ান ভ্রু-কুচকে বলে,’ তোর কি ডায়রিয়া হয়েছে?’

আহিদ থতমত খেয়ে গেল প্রিয়ানের কথায়।পিহু,রিধি ফিক করে হেসে দিলো।ওদের হাসতে দেখে আহিদ রাগি গলায় বলে,’ কিসব বলতাছস?কিসের ডায়রিয়া হ্যা?’

প্রিয়ান বলে উঠল,’ তাহলে এমন ডায়রিয়া রোগির মতো ছটফট করতাছস কেন?আচ্ছা,ডায়রিয়া হয়নি।তবে কি কষা হয়েছে তোর?মানে বুঝতেই পারছিস।বাথরুমে এক ঘন্টা ধরে বসে থাইকা কষ্ট করেও একটা হা*গু হয় না।’

প্রিয়ানের এমন কথায় আহিদ চিল্লিয়ে উঠে,’ হোয়াট দ্যা হেল।কি বলছিস এসব?মাথা ঠিক আছে তোর?দেখ প্রিয়ান রাগ উঠাবি না একদম।এমনিতেই মেজাজ খারাপ।তুই কিন্তু আরোও খারাপ করে দিতাছস!’

এদিকে পিহু নাক মুখ কুচকে ফেলেছে প্রিয়ানের কথায়।বলে উঠল,’ ছিহ! এমন খাচ্চোর মার্কা কথা বলতে আমি জীবনেও কাউকে শুনিনি।’

প্রিয়ান সবার অগোচরে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখালো পিহুকে।তারপর দ্রুত জ্যান্টেলম্যান রূপে ফিরে আসল।এদিকে প্রিয়ানের এহেন কান্ডে পিহুর চোখ কপালে উঠে গেল।প্রিয়ান যে এমন কিছু করতে পিহু ভাবতেও পারেনি।খুক খুক করে কেশে দ্রুত একগ্লাস পানি খেয়ে নিলো।প্রিয়ান পিহুর কান্ডে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,’ তুই আমার মতো আরেকজনকে দেখার আশা করছিস?তোর সেই আশায় এক গাদা বালি।কারন প্রিয়ান ওয়ান এন্ড ওনলি একপিসই আছে এই দুনিয়ায়।’

পিহু চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,’ তা আর বলতে? তোর মতো খাচ্চোর আর পিশা’*চ যে দুনিয়ায় একপিসই আছে তা আমি ভালোভাবেই জানি।আর আজ তো তুই নিজে মুখেই স্বিকার করলি।’

প্রিয়ান পিহুর চুল টেনে ধরল।আকস্মিক এমন করায় পিহু ব্যথা পায় অনেকটা।আর্তনাদ করে বলে,’ কুত্তা তুই যদি এখন আমার চুল না ছাড়োস।সত্যি বলতেছি তোরে আমি খু’ন করে দরকার হলে জেলে যাবো।’

ওদের দুটোর ঝগড়ার মাঝে এতোক্ষণ বসেছিলো রিধি।বেচারি সহ্য করতে না পেরে এইবার গর্জে উঠল,’ আমাকে কি তোরা আটা ময়দার গোলা পেয়েছিস?যে এইভাবে তোদের দুটোর মাঝে ফেলে আমাকে চটকাচ্ছিস?থাপড়িয়ে দুটোর গাল লাল করে দিবো বেয়াদবের দল।সর দুটো।’

রিধি ধাক্কা দিলো দুটোকে।ফলে প্রিয়ান পিহুর চুল ছেড়ে দিলো।তারপর চুপচাপ বসে রইলো।তারা জানে রিধি এখন বেজায় রেগে।আর কিছু বললে ওদের ডিরেক্ট ম্যানহোলে ছুড়ে মারবে।তাই চুপচাপ মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো।ওদের শান্ত হতে দেখে রিধি সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।অতঃপর দৃষ্টি তাক করল আনমনা হয়ে বসে থাকা অথৈয়ের দিকে।রিধি হাত বাড়িয়ে একটা ট্যিশু পেপার নিয়ে মুড়িয়ে অথৈয়ের দিকে ছুড়ে মারল। এতে ধ্যান ভাঙে অথৈয়ের। চোখ তুলে রিধির দিকে তাকালেই রিধি ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ কি হয়েছে তোর?এমন বোম হয়ে বসে আছিস কেন?এমন ধুন্দলের মতো বসে না থেকে।রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে সরাসরি কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নিলেই তো পারিস।’

প্রিয়ান নিজের নিরবতা ভেঙে বলে,’ হ্যা রিধি ঠিক বলছে।আর তাছাড়া এখানে তো রুদ্রিক ভাইয়ার কোনো দোষ নেই।’

‘রুদ্রিকের কোনো দোষ নেই!’ কথা কানে এসে পৌছাতেই অথৈ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান ভয় পেয়ে সাথে সাথে বুকে হাত দেয়।মিনমিনে গলায় বলে,’ এমনে তাকাস ক্যান ছেরি?মাইরা ফেলবি নাকি?যেমনে তাকাইছস মনে হইলো লবন মরিচ ছাড়াই আমারে আস্তো গিল্লা ফালাইবি।’

অথৈ দাঁতেদাঁত চিপে বলল,’ ঠিক তাই।তোর সাথে আমার এটাই করতে ইচ্ছে করছে।’

প্রিয়ানের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।বিরবির করল,’ রুদ্রিক ভাই যে একটা চুরেল,রাক্ষসী,ডায়নি বিয়ে করছে তা কি সে জানে?যে উঠতে বসতে সবার রক্ত চুষে নেয়।’

‘ এই তুই কি বললি?সাহস থাকলে জোড়ে বল?’ অথৈ খেকিয়ে উঠে।

প্রিয়ান ধরফরিয়ে উঠে বলে,’ আরে না আমি কি বলব?কিছুই বলি নাই।বলছি রাগলে তোরে সুন্দর লাগে।’

প্রিয়ানের কথায় অথৈ কিছুই বলল না।রাগি দৃষ্টিতে প্রিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর হনহন করে বেড়িয়ে পরল।ওকে বেড়োতে দেখে রিধি সাথে সাথে একটা নাম্বারে টেক্সট করল,’ আমাদের কাজ শেষ রুদ্রিক ভাইয়া।বাকিটা আপনার করতে হবে।আর হ্যা ট্রিট দিতে ভুলবেন না কিন্তু।’

মিনেট দুয়েক পর রিপ্লাই আসল,
ইফ আই ক্যান কোনভিন্স হার।আই উইল হ্যাপিলি ফিড ইউ ওল, দ্যা ফুড ইন দ্যা রেস্টুরেন্ট।’

রিধি ম্যাসেজটা দেখেই হাসল।মনে মনে চিন্তা করল রুদ্রিক ভাইয়ার না জানি কতোটা খাটাখাটুনি করতে হয় অথৈকে মানাতে।

#চলবে_________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃঃ২৫
অথৈ রাগ দেখিয়ে চলে তো এসেছে।কিন্তু একা একা করবে টা কি?সব অসহ্য লাগছে ওর কাছে।বন্ধুদের ছাড়া একা থাকা যায় নাকি?অথৈ হতাশার শ্বাস ফেলল।সামনে তাকাতেই হঠাৎ লাইব্রেরির দিকে চোখ চলে যায়।অথৈ ভেবে বসল।এইভাবে একা একা চরকির মতো না ঘুরে।লাইব্রেরিতে গিয়ে একটু পড়াশোনা করলেই হয়।সবকিছু ভুলে বইয়ের মাঝে ডুবে যাবে।তাহলেই আর কোনো কিছুর খেয়াল থাকবে না।যেই ভাবা সেই কাজ।অথৈ লাইব্রেরিতে চলে গেল।লাইব্রেরিতে একজন মানুষও নেই।অথৈ সেদিক থেকে নজর তোর সরিয়ে নিলো।তারপর কাধের ব্যাগটা টেবিলে রেখে সে চলল বই খুঁজতে।কিন্তু কোন বইটা পড়বে সেটাই বুঝতে পারছে না।প্রায় দশ মিনিট যাবত এটা সেটা বই নেড়েচেড়ে দেখছে।আর রেখে দিচ্ছে।হঠাৎ বামপাশের বুকশেল্ফের পাশ থেকে কেমন যেন একটা শব্দ পেলো অথৈ।ভ্রু-কুচকে তাকালো।মনোযোগ দিলো সেদিকে।নাহ,এখন পাচ্ছে না শব্দটা।নিজের কাজে আবারও ধ্যানমগ্ন হলো অথৈ।কিন্তু মিনিট পাঁচের বাদে আবারও সেই শব্দ।অথৈ এইবার নড়েচড়ে উঠল।হাতের বইটা বুকশেল্ফে রেখে সেদিকে এগিয়ে গেল।আস্তে ধীরে বামপাশের বুকশেল্ফের কাছটায় গিয়ে মাথা বাঁকা করে উঁকি দিতেই।কেউ একজন ওর হাত চেপে ধরে সজোড়ে টান মারে।ভয় পেয়ে চিৎকার করবে তার আগেই একটা শক্তপোক্ত হাত ওর মুখ চেপে ধরল।এদিকে অথৈ আকস্মিক টানে নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সেই ব্যক্তির উপর হুরমুরিয়ে পরেছে।আতংকিত অথৈ ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে তাকাতেই রুদ্রিককে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখল। রুদ্রিকের এহেন কান্ডে মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল অথৈয়ের।উন্মুক্ত হাত দ্বারা সজোড়ে মুষ্টাঘাত করে বসল রুদ্রিকের বুকে।অথৈ হঠাৎ আক্রমনে রুদ্রিক অপ্রস্তুত হয়ে পরে। ফলে অথৈকে ছেড়ে দেয়।ব্যথিত স্থানে হাত বুলাতে লাগল।অথৈ কিছু না বলেই রেগে চলে যাবার জন্যে পা বাড়ালো।হুহ্,পেয়েছেটা কি লোকটা?এমন কেউ করে?আর একটু হলেই তো তার প্রাণ বেড়িয়ে যেতো।হঠাৎ করে এমন গুন্ডাদের মতো ব্যবহার করলে ভয় পাবে না সে?অথৈ যেতে নিয়েই থেমে গেল।ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।রুদ্রিকের ব্যথাতুর মুখশ্রী দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল।লোকটা কি বেশি ব্যথা পেয়েছে?সে তো অতোটাও জোড়ে দেয়নি?মাথা দুলালো অথৈ।ভুলবশত জোড়ে লেগেও যেতে পারে।সে কি একবার গিয়ে দেখবে?জিজ্ঞেস করবে লোকটাকে বেশি ব্যথা পেয়েছে নাকি?অথৈ আবারও গিয়ে দা্ঁড়ালো রুদ্রিকের সামনে।কণ্ঠে তার ব্যাকুলতা স্পষ্ট, ‘ কেন এসেছিলেন?এখন পেলেন তো ব্যথা?বেশি ব্যথা লেগেছে?’

অথৈয়ের বাক্যটা সম্পূর্ণ হতে দেরি রুদ্রিক দ্রুত গতিতে হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসল।ঘটনা এতো দ্রুত ঘটেছে যে অথৈ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো রুদ্রিকের দিকে।হুশ আসতেই ছটফট শুরু করে দিলো।রুদ্রিক ছটফট করতে থাকা অথৈকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসল।মেয়েটা কেমন বাচ্চাদের মতো করছে।

‘ আহ,অথৈ ব্যথা করছে অনেক।’

অথৈয়ের ভ্রু-কুচকে আসে রুদ্রিকের কথায়।বলে,
‘ তো আমাকে এইভাবে চেপে ধরে আছেন কেন?ছাড়ুন আমাকে।আর গিয়ে ব্যথার মেডিসিন খেয়ে নিন।সেরে যাবে।’

‘ ব্যথার মেডিসিন তো এখানেই আছে।’ রুদ্রিকের সোজাসাপ্টা জবাব।
অথৈ বুঝতে পারল না রুদ্রিকের কথা।ভাবুক কণ্ঠে বলে,
‘ মানে বুঝলাম না।লাইব্রেরিতে মেডিসিন আসবে কোথা থেকে?’

রুদ্রিক দুষ্টু হেসে বলে,’ ‘ এইযে তুমিই তো আমার সব রোগের একান্ত ব্যক্তিগত মেডিসিন।আর এখন যেহেতু ব্যথাটা তুমি নিজে দিয়েছ।সো আমার ব্যথা সারাবেও তুমি।তাই এখন বিনাবাক্যে ঝটপট এখানটায় তোমার ওই তুলতুলে, গোলাপিবর্ণের ঠোঁটজোড়ার স্পর্শ করে ব্যথাটা সারিয়ে দেও।’

রুদ্রিকের এহেন বেফাঁস কথায় অথৈয়ের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল দৃশ্যবান ভাবে।লজ্জায় সর্ব মুখশ্রী রক্তিম আভায় ছেয়ে গেল।লোকটা দিন দিন এতো নির্লজ্জ হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না।হুটহাট সময় অসময়ে কিসব কথাবার্তা যে বলে।অথৈয়ের মন চায় সে মাটি খুরে সেখানে লুকিয়ে পরতে।অথৈ কাঁপা গলায় বলে,’ আপনি দিন দিন চরম অসভ্য হচ্ছেন।’

রুদ্রিকের সরল স্বিকারোক্তি,’ তোমাকে দেখার পর আমি অসভ্য হয়ে গিয়েছি।আর ভবিষ্যতে আরও হবো।’
‘ এমন করছেন কেন?ছাড়ুন না এটা লাইব্রেরি। কেউ দেখে ফেলবে।’ অথৈ ছোট্টো কণ্ঠে বলে উঠে।কিন্ত মনে মনে ভাবে ব্যাটা একবার শুধু ছাড়া পাই।আর সামনেও আসব না আমি।কিন্তু তা আর মুখে আনলো না।এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে বলল,’ দেখলে দেখুক।আমার কোনো সমস্যা নেই।’
‘ আমার আছে।আপনার লজ্জা নাই থাকতে পারে।কিন্তু আমি আপনার মতো নির্লজ্জ নই।’
‘ তাহলে চুমু খাও,ছেড়ে দিবো।’

অথৈ বাকরুদ্ধ।এই রুদ্রিক যে তাকে এইভাবে লজ্জায় সাগরে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মারবে তা একশ পার্সেন্ট নিশ্চিত সে।অথৈ করুণ গলায় বলল,’ এখানে কিভাবে?’

রুদ্রিক ওর মুখটা অথৈয়ের কানের কাছে নিয়ে আসল।এতে অথৈ নিজের মাথাটা খানিকটা পিছিয়ে নিলো।রুদ্রিক ফিসফিস করে বলে,’ তাহলে চলো আমার সাথে একান্ত ব্যক্তিগত আমাদের রুমটায়।আমি মাইন্ড করব নাহ।তবে সেখানে গেলে আমার শুধু চুমুতে হবে না।আরও অনেক কিছু চাই।’

অথৈয়ের আর সহ্য হচ্ছে না রুদ্রিকের এমন কথাবার্তা। তাই সে ওর দিকে ধ্যানমগ্ন রুদ্রিককে আকস্মিক ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইলো।কিন্তু তা বোধহয় ওর কপালে লিখা নেই।ও একপা বাড়ানোর আগেই রুদ্রিক কৌশলে ওর হাত টেনে বুকশেল্ফের সাথে লাগিয়ে নেয়।অথৈয়ের মুখশ্রী মুহুর্তেই কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।বিরবির করল,’ হে আল্লাহ্! তুমি এ কোন বিপদে এনে আমাকে ফেললে।এই অসভ্য লোকের অসভ্য মুখটা একটু বন্ধ করে দেও। সাময়িক সময়ের জন্যে প্লিজ।’

কিন্তু উপরওয়ালা বোধহয় ওর দোয়া কবুল করল না।অথৈ পিটপিট করে তাকালো রুদ্রিকের দিকে। রুদ্রিক ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলে,’ কি পালাতে চাইছ?কিন্তু আজ তো তোমাকে এতো সহজে ছাড়ছি না।উপ্সস! সরি।ভুল বললাম।তোমাকে আজ কেন?আমি সারাজীবনেও কোনোদিন ছাড়ছি না।তুমি চাইলেও না।তোমাকে আমার হয়েই থাকতে হবে।’

রুদ্রিক ওর শক্তপোক্ত পেশিবহুল হাতটা অথৈয়ের নরম গালে স্পর্শ করল।চমকে উঠল অথৈ। রুদ্রিক যেখানটায় ছুঁয়েছে সেখানটায় শিরশির করছে।শীতলতা অনুভব করছে।রুদ্রিকের শীতল হাতের স্পর্শ তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে।হুট করে রুদ্রিক ওর মুখটা অথৈয়ের সামনে নিয়ে আসে।অথৈ ভড়কে গিয়ে ওর মুখশ্রী ডানদিকে ফিরিয়ে নিলো।রুদ্রিক মুচঁকি হাসল অথৈয়ের কান্ডে।আলগোছে হাতটা রাখল অথৈয়ের বাঁকানো কোমড়ে।মৃদ্যু ভঙিতে ছুঁয়ে দিচ্ছে সে তার সহধর্মিণীকে।তার উদ্দেশ্য আজ অথৈয়ের ছোট্টো মনে অনুভূতির তুফান উঠিয়ে ছাড়বে।আর সে তার উদ্দেশ্যে অনেকটা সফলও।রুদ্রিক কণ্ঠে মাদকতা ঢেলে বলে,’ আমার উপর আর কতো অভিমান করে থাকবে ডার্লিং?শুধু একবার আমার দেহের উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে মিশিয়ে নেও।দেখবে তোমার সব অভিমান চলে যাবে।আমার বুকে আসো অথৈ। জাস্ট ওয়ান্স ম্যাই বাটারফ্লাই।’

রুদ্রিকের বলা এমন আবেগমিশ্রিত প্রতিটা বাক্য যেন অথৈয়ের হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।কি বলবে? কি করবে?কোনো কূল কিনারা পাচ্ছে না।আচ্ছা সে কি এখন ঝাপিয়ে পরবে রুদ্রিকের প্রসস্থ বুকে?লেপ্টে নিবে নিজেকে লোকটার উষ্ণতার মাঝে?মন বলছে, হ্যা যা।এক্ষুনি যা।সে তোর স্বামী।এই গোটা মানুষটা তোর।এতো দ্বিধা কিসের তোর? অথৈও মনের কথা শুনতে চায়।কিন্তু এই লজ্জা?এই লজ্জা কোথায় লুকাবে সে?অথৈ ভেবেচিন্তে মনের কথাই শুনলো।হাত বাড়িয়েই রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরল।রুদ্রিক বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।পরপর অথৈকে নিজের প্রসস্থ শক্তপোক্ত বুকের মাঝে চেপে ধরল।দুজনেই মুহূর্তটাকে অনুভব করতে লাগল।অথৈয়ের চোখের কোণ ঘেষে এক ফোঁটা তপ্ত জলের ফোটা গড়িয়ে পরল।এতো শান্তি কেন লাগছে এখানটায় মাথা রেখে।মনে হচ্ছে সে এখন পৃথ্বীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে আছে।যেখানে দুঃখ’রা কোনোদিন ছুতে পারবে না তাকে।এদিকে অথৈয়ের চোখের জল রুদ্রিকের বুকে এসে পরতেই। চট করে রুদ্রিক চোখ মেলে তাকায়।অথৈকে বুকের মাঝ থেকে সরিয়ে চিন্তিত নজরে চোখ বুলায় অথৈয়ের মুখে।মেয়েটার লালচে চোখজোড়া দেখে রুদ্রিক অস্থির কণ্ঠে বলে,’ কি হলো?কাঁদছ কেন?আমার স্পর্শ কি খারাপ লাগছে তোমার?কাঁদে না তো।দেখি কি হয়েছে বলো আমাকে?’

অথৈ চোখ মুছল।হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো রুদ্রিকের বুকের বা পাশটায়।রুদ্রিকের শরীরটা হালকা কাঁপলো।অথৈয়ের এই ছোঁয়াটায় কি যেনো আছে।যে সে ছুঁয়ে দিতেই রুদ্রিকের মনে হলো ওর শরীরে কারেন্টের ঝটকা লেগেছে।রুদ্রিক নিজেও এইবার অথৈয়ের ছোট্টো, নরম হাতটার উপর নিজের শুষ্ক,অনমনীয় হাতটা রাখল।অথৈ ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হয়ে যায়।নিজের মনের কথাটাই অকপটে ব্যক্ত করে বসে সে,’ আপনার এখানটায় মাথা রাখার সাথে সাথে আমার মনে হলো।যে এখানটার মতো শান্তির আর ভরসাযোগ্য জায়গা পৃথ্বীর কোথায় গেলেও আমি পাবো না।সেই সুখে চোখে জল চলে এসেছে।’

অথৈয়ের মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে রুদ্রিক।হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের গাল ছুঁয়ে বলে,’ এই গোটা আমিটাই তো তোমার।যখন যেভাবে আমাকে তুমি চাইবে।তুমি আমাকে সেভাবেই পাবে অথৈ।’

রক্তিম আভা ছড়িয়ে পরল অথৈয়ের ফর্সা গালে।তা দেখে রুদ্রিক ঘোরলাগা গলায় বলে,’ লজ্জা পেলে একদম লাল আপেলের মতো লাগে।কামড় দিতে ইচ্ছে করছে।দিবো?’

অথৈ মাথা নিচু করে নিলো। ওর ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল লজ্জামিশ্রিত হাসি।রুদ্রিক সেই হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে বলে’ ‘ তোমার ঐ হাসিমুখ খানা দেখলে আমি আমার সারাদিনের কষ্ট ভুলে যাই। তুমি সেই যাকে আমার হৃদয়ের মাঝে সারা জীবন খুশিতে রাখতে চাই।’

রুদ্রিকের আবেগি কথায় অথৈ মায়াময় চাহনী নিয়ে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।এই মুহূর্তে অথৈকে যে কতোটা আবেদনময়ী লাগছে তা রুদ্রিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না।ওর বুক কাঁপছে।এই মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?এই মেয়ের সৌন্দর্যে তার চোখ ধাধিয়ে যায়।রুদ্রিক ঢোক গিলল।মনের মাঝে নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা উঁকিঝুকি দিচ্ছে।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সে।আচ্ছা একটুখানি মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিলে কি মেয়েটা রাগ করবে? না রাগ করবে না অথৈ। তা সে ভালোভাবেই জানে।রুদ্রিক একটা হাত অথৈয়ের পিঠের পিছন দিকে নিয়ে গেল।আরেকহাতে অথৈকে আরেকটু নিজের কাছে আনলো।পিঠের পিছনের হাতটা আরামসে অথৈয়ের চুলগুলো তার মুঠোয় নিয়ে ডানদিক থেকে বামদিকে এনে ঘাড়ের কাছটায় রাখল।রুদ্রিকের চোখ আটকে গেল অথৈয়ের ডানপাশের ঘাড়ের একটু নিচে থাকা একটা কালচে দাগের উপর।দাগটা কিসের তা রুদ্রিক জানে না।তবে তার ভীষণ ইচ্ছে করছে ওই কালচে দাগটা একটু ছুঁয়ে দিতে।নিজের ওষ্ঠজোড়া সেখানে চেপে ধরতে।রুদ্রিক মুখ নামিয়ে অথৈয়ের কানের কাছে আনলো।রুদ্রিকের গরম নিশ্বাস সেখানটায় এসে লাগতেই অথৈ থরথর করে কেঁপে উঠল।আজ রুদ্রিক যেভাবে ওর এতো কাছে আসছে।সে বোধহয় দম আটকে মারা যাবে।যাবেই যাবে।রুদ্রিক অথৈয়ের কানে কানে ফিসফিসানো ডেকে উঠে,’ অথৈ!’

কথা বলার কারনে রুদ্রিকের ঠোঁটজোড়ার আলতো ছোঁয়া অথৈয়ের কানে এসে লেগেছে।অথৈ চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।খামছে ধরল রুদ্রিকের বুকের কাছের শার্ট।থেমে থেমে বলে,’ হ…হুঁ!’

রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে এইবার ছুঁয়ে দিলো সেই কালচে দাগটা।ইশ,অথৈ বুঝি এইবার মরেই গেল।এ কেমন অনুভূতি।লোকটার স্পর্শগুলোতে কি মাদকতা মেশানো?নাহলে অথৈয়ের নিজেকে এমন পাগল পাগল লাগছে কেন? রুদ্রিক নেশালো কণ্ঠে বলে, ‘ অথৈ?ক্যান এই কিস ইউ ইন হ্যেয়ার?’

অথৈ শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো। এ কি আবদার করে বসল লোকটা? কি করবে সে?তার যে কণ্ঠনালি ভেদ করে শব্দগুচ্ছগুলো বের হতে চাচ্ছে না।রুদ্রিক অস্থির কণ্ঠে বলে,’ প্লিজ অথৈ! মানা করো না।আমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারছি না।হ্যাল্প মি অথৈ!’

সেভাবেই কিছুক্ষণ থেকে রুদ্রিকঅথৈয়ের কোনো জবাব না পেয়ে ওর কাছ থেকে সরে আসতে চাইলো।কিন্তু অথৈ তা হতে দিলো না।খামছে ধরে রেখেছে রুদ্রিককে।রুদ্রিক অথৈয়ের দিকে তাকালো।মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে।নিজেকে চেপে ধরে অথৈয়ের সেই হাত দুটোই তাকে বলে দিচ্ছে।অথৈয়ের সম্মতি আছে।মেয়েটা শুধু লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না।রুদ্রিক অথৈয়ের সম্মতি পেয়ে আর একমিনিটও সময় নষ্ট করলো না।অথৈয়ের সেই কালচে দাগটার উপর নিজের অধরজোড়া চেপে ধরল।সাথে সাথে ভূমিকম্পের ন্যায় অথৈ কেঁপে উঠল।নিজেকে সামলাতে না পেরে সজোড়ে খামছে ধরে রক্তাক্ত করে দিলো রুদ্রিকের বুকটা।অথৈ শ্বাস নিতে পারছে না।অস্বাভাবিকভাবে হার্টবিড হচ্ছে।এদিকে রুদ্রিক থেমে নেই।সে ছোটো ছোটো চুমুতে অথৈয়ের গলদেশ ভড়িয়ে দিচ্ছে।অথৈ হাত বাড়িয়ে খামছে ধরল রুদ্রিকের চুল।লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে থাকা অথৈ থেমে থেমে বলল,’ প্লি..প্লজি রু..রুদ্রিক আর না থামুন।আমি ম..মরে যাবো,প্লিজ।’

অথৈয়ের আকুলতা ভড়া কণ্ঠ কানে আসতেই রুদ্রিক থেমে গেল।সে নিজের হুশ হারিয়ে ফেলেছিলো।মেয়েটা তাকে চুম্বুকের মতো টানে।রুদ্রিক নিজেও জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।নিজেকে বহু কষ্টে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।এদিকে রুদ্রিকের ভালোবাসাময় এই এইটুকু স্পর্শে অথৈ একদম নেতিয়ে গিয়েছে।হাত পা অবশ হয়ে গিয়েছে।বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছে না সে শরীরে।শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে অথৈ নিজের দেহের ভাড় ছেড়ে দিলো রুদ্রিকের উপর।সেখানটায় পরে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।রুদ্রিক আলগোছে অথৈকে দুহাতে আবদ্ধ করে নিলো।ওর শক্ত-পোক্ত বলিষ্ঠ দেহের মাঝে অথৈয়ের ছোট্টো নরম,তুলতুলে দেহটা ভালোভাবে আঁকড়ে নিলো।রুদ্রিকের উষ্ণ আলিঙ্গন পেয়ে অথৈ একেবারের বিড়াল ছানার ন্যায় আরও গুটিয়ে গেল রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক অথৈয়ের চুলের ভাজে চুমু খেয়ে বিরবির করল,
‘ তুমিই আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর,আদুরে একটা মেয়ে। যাকে আমি সারাজীবন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চাই অথৈ।’

#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।