মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব-৩৮+৩৯+৪০

0
361

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৮
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।সবাই বললে ভুল হবে।শুধু দুজন মানুষ এখনও পৌছায়নি।ইহান আর অথৈ ওরা এখনও আসেনি।ওদের জন্যেই অপেক্ষা করছে সবাই।পিহু বিরক্ত হয়ে বলে,’ এই মেয়েটা ওলওয়েজ লেট করে।আজ তো একটু তাড়াতাড়ি আসবে।একটু পরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে।’

রিধি বিরবির করল,’ যেমন ভাই, তেমন বোন।লেট লতিফ কোথাকার।’

ঠিক তখনই দূর থেকে অথৈকে আসতে দেখা গেলো।মেয়েটা দৌড়ে দৌড়ে আসছে।পিছনে ইহান দুহাতে দুটো ল্যাগেজ টেনে নিয়ে আসছে।আর বার বার অথৈ দৌড়াতে মানা করছে।সাদা লম্বা গোল জামা পরেছে অথৈ।দৌড়ে আসার ফলে অথৈয়ের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।ঠোঁটের কোণে ঝলমলে হাসি।স্নিগ্ধ,কোমল মুখটা দেখেই রুদ্রিকের যেন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।দৌড়ে আসা তার প্রাণপ্রিয়াকে মন ভরে দেখছে সে।নির্নিমেষ তাকিয়েই রইলো।এদিকে অথৈ দৌড়ে এসে ওদের সামনে থামলো।হাটুতে দুহাত রেখে ভড় দিয়ে হাপাতে লাগল।বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে।ও হাপানো কণ্ঠে বলে,’ সরি,সরি দেরি হয়ে গিয়েছে।আমি ইচ্ছে করে করেনি।’

ততোক্ষণে ইহানও এসে পরেছে। ইহানের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তির আভাস, ‘ হ্যা, ইচ্ছে করে করিস নি।আমি বলেছিলাম অথৈ জার্নির আগের দিন রাতে ভালোভাবে ব্যাগ গুছিয়ে নেহ।তোর তো এটা সেটা মনে থাকে না।পরে হুরোহুরি করিস।কিন্তু কে শুনে কার কথা।সকাল থেকে সে একপ্রকার পুরো বাড়িতে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলো।তার এটা পায় না। ওটা পায় না।’

ইহান অথৈয়ের ল্যাগেজটা রুদ্রিকের কাছে দিয়ে বলে,’ নেহ তোরটাকে এইবার তুই সামলা।আমি আর পারবো না।’

অথৈ মুখ ভেংচি কাটলো।রুদ্রিকের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’ হুহ্ মনে হয় আমার ল্যাগেজটা এই পর্যন্ত এনে দিয়ে উদ্ধার করেছ তুমি।’

‘ একেই বলে কারো উপকার করতে নেই। যেই ভাড় তোর ব্যাগ।দুনিয়ার সব মনে হয় ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছে।আমরা যাচ্ছি মাত্র পাঁচদিনের ট্যুরে।আর ও মনে হয় মাস অবদি থাকার সব নিয়ে নিয়ে ব্যাগ একেবারে ভরে ফেলেছে।’

অথৈ মুখ বাকিয়ে বলে,’ তোমার কারনেই তো একটা ব্যাগই নিয়েছি। আমার তো আরও কিছু নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো।’
‘ নিতি না করেছে কে?শুধু আমাকে বলতে পারতি না যে ভাইয়া আমার ব্যাগটা একটু নেও নাহ।ইনফেক্ট আমি তোর কোনো ব্যাগই টানতে পারবো না।আমাকে কিছু বলবি তো তোর ব্যাগ শুদ্ধ তোকেও মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।’

অথৈ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,’ তুমি এমন করতে পারবে ভাই?’
‘ হ্যা পারবো।’

দু ভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসলো রুদ্রিক।অথৈয়ের এলোমেলো চুলগুলো দুহাতে সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিলো।হঠাৎ সবার সামনে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে লজ্জা পেলো অথৈ। রুদ্রিক বলল,’ এইটুকু এনে দিয়েছিস সেইজন্যে ধন্যবাদ তবে আমার বউয়ের সব কিছুর দায়িত্ব আমি নিতে পারবো।সো তোকে চিন্তা করতে হবে না।’

ইহান বলে,’ হ্যা তা হলেই ভালো।এখন চলো ট্রেনে উঠা যাক।’

ইহানের কথায় সবাই সম্মতি দিলো।ওরা মোট বারোজন।জেনি আসেনি।ও ওর ইগো নিয়ে আছে।তাই মানা করে দিয়েছে।বারোজনের জন্যে দুটো ডাবল কেভিন ওরা বুক করেছে।একেকটা কেভিনে ছয়জন করে থাকবে।পাশাপাশি দুটো কেভিন।অনলাইনে টিকিট কাটার কারনে বেশি ঝামেলায় পরতে হয়নি ওদের।একটা কেভিনে অথৈ রুদ্রিক আর সাফাত একসিটে।আরেক সিটে প্রিয়ান,পিহু আর আহিদ বসেছে।আরেকটা কেভিনে মারিয়া,নীল আর অনিক অপরপাশে রিধি,ইহান আর সিয়া।সাফাত মূলত এখানে বসতে চায়নি।কিন্তু ইহান ওকে কানে কানে বলেছে ও যেন দ্রুত গিয়ে ওই সিটটায় বসে পরে। নাহলে যে রিধি গিয়ে সেখানে বসে পরবে।আর এটা হলে ও রিধির সাথে বসার সুযোগ পাবে না।ইহান ওর বন্ধুদের অনেক আগেই বলে দিয়েছে ও রিধিকে ভালোবাসে।আর সাফাত এই কারনেই না চাইতেও বন্ধুর কথা ভেবে মেনে নেয়।এদিকে জানালার কাছে বসেছে সিয়া। ওর একটু প্রবলেম হয় যানবাহনে চরলে।তাই জানালার পাশে বসেছে মাঝে বসেছে রিধি আর তার পাশে ইহান।ইহানের সাথে বসে রিধির একদিকে ভালোও লাগছে আবার কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। ও তো দূরে থাকতে চায় ইহানের থেকে।কিন্তু ভাগ্য বোধহয় তা চায় না তাই তো ঘুরে ফিরে ওকে ইহানের কাছে এনেই ফেলে।কাউকে যে বলবে জায়গা অদল বদল করতে সেটাও সম্ভব না।সবাই যদি অন্যকিছু ভেবে বসবে আর তাছাড়া ইহান তো আর তার মনের কথা জানে না। যদি ইহানের খারাপ লাগে রিধি উঠে চলে গেলে।সিয়াকেও তো বলতে পারবে না এই বিষয়ে।তার প্রবলেম হবে।তাই চুপচাপ বসে রইলো।কি আর করার।এদিকে অনিক করুন চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর খুব করে ইচ্ছে করছে সিয়ার পাশে গিয়ে বসতে।ওর ওই হাতটা শক্ত করে ধরতে।অন্যান্য কাপলরা যেভাবে একে-অপরের সাথে বসেছে ওরও বসতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটাকে নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে ভড়সা দিতে।কিন্তু সেটা করার সাহস যে ওর নেই।সিয়া আশেপাশেও যে সে যেতে পারবে না।মনের কষ্ট মনের মাঝে লুকিয়ে রাখলো অনিক।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলানোর কাজে লেগে পরলো।সিয়া আঁড়চোখে তাকালো অনিকের দিকে।অনিকের হাতটার দিকে তাকিয়ে ফের নিজের হাতের দিকে তাকালো।আগে কখনও কোথাও গেলে অনিক ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতো।ভীষণ ভালো লাগতো তখন সিয়ার।ভালোবাসার মানুষটার ওই ভড়সাযোগ্য হাতের স্পর্শে সবকিছুর কথা ভুলে যেতো।কিন্তু কে জানতো?লোকটা তো ওর যাথে ছলনা করতো।ভালোবাসতো না লোকটা ওকে।যা করতো সব ছিলো লোক দেখানো।কিন্তু বেহায়া মনটা মানলে তো?তার মনটা এখনও চাইছে সেই আগের মতো আবারও অনিকের হাতটা যেন তার এই ছোট্টো হাতটা শক্ত করে ধরে।তাকে নিজের বাহুডোরে যেন আগলে নেয়।কিন্তু না তা সম্ভব না।অনিকের কাছে সিয়া আর কখনও ফিরে যাবে না।এটা আর হবার নয়।সিয়া লম্বা শ্বাস ফেলে চোখ সরিয়ে নিলো।দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো জানালার বাহিরে।
মারিয়া ভীষণ খুশি।ও সচরাচর ঘুরাঘুরি করতে পারে না।ওর বাবা, মা কিছু না বললেও ওর বড়ো ভাইয়ের কারনে পারে না।ওর ভাই বোনকে ভীষণ ভালোবাসে।তাই তো বোনকে একা ছাড়তে ভয় পায়। আজও দিতো না।একমাত্র রুদ্রিক,আর ইহান এই দুইজন ওর ভাইকে অনেক বুঝিয়েছে। তবে গিয়ে রাজি হয়েছে। মারিয়ার ঠোঁট থেকে যেন হাসি সরছেই না।আর নীল অপলক তাকিয়ে থেকে সেই হাসি দেখছে।প্রিয়তমার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি দেখতে কারই বা না ভালো লাগবে?মারিয়া এটা সেটা বলে যাচ্ছে।নীলের কোনো জবাব নেই।নীলকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে মারিয়া এইবার তাকালো নীলের দিকে।নীলের সেই মুগ্ধ দৃষ্টির মাঝে সে আবদ্ধ বিষয়টা বুঝতে পেরেই লজ্জা লাল হয়ে যায় মারিয়া।লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,’ কি দেখছো এভাবে?’

নীল মারিয়ার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে মুচঁকি হাসে।মাথা নুইয়ে মারিয়ার কানে ফিসফিস করে বলে,’ দেখছি তোমার গোলাপি ঠোঁটজোড়ার মিষ্টি হাসিটাকে।যা আমাকে বড্ড বেষামাল করে দিচ্ছে।আমার ঠোঁটজোড়া তোমার ওই ঠোঁটজোড়াকে স্পর্শ করতে চাইছে ব্যাকুলভাবে।’

মারিয়া লজ্জায় সরে আসলো নীল থেকে।অন্যদিকে তাকিয়ে একহাতে মুখ ঢেকে হেসে দিলো।নীল নিজেও হাসলো

পিহু বার বার নড়াচড়া করছে।তার অসস্থি লাগছে এখানে বসতে।পিহুর এমন কান্ডে আহিদ বিরক্ত হয়ে বলে,’ এমন নড়ছিস কেন?চুপ করে বসতে পারছিস নাহ?’

পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ ভাই আমার এখানে বসতে ভালো লাগছে না।কেমন যেন লাগছে।’

‘ তুই তো শুচিবায়ুগ্রস্ত স্বভাব বদলা তাহলেই হবে।সবখানে তুই এমন করিস।’

আহিদের কথায় পিহু রেগে বলে,’ তুই এমনভাবে বলছিস যেন আমি অকারনেই এমন করি?জানিস কতো শতো প্যাসেঞ্জারর আছে যারা গাড়িঘোড়া চড়তে পারে না।বমিটিং এর প্রবলেম থাকে।তো এখানে যে কেউ এমন কিছু করেনি গ্যারেন্টি কি?’

আহিদ রেগে বলে,’ হ্যা ট্রেনের মালিক তো সেগুলো রেখে দেয় তোর জন্যে?তুই আসবি আর এসে তা পরিষ্কার করে দিবি। তাহলে এখন কর পরিষ্কার।’

আহিদের এহেন কথায় পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ ছিঃ ভাই তুই এসব কি বলছিস?’

অথৈ হাসছে। অথৈকে হাসতে দেখে পিহু রেগে বলে,’ তুই হাসছিস কেন?’

‘ তোর অবস্থা দেখে।আহিদ একদম ঠিক বলেছে।যেমন কুকুর তেমন মুগুর।’

‘ এই তুই কি আমাকে কুকুর বললি?’

‘ আরে এটা তো প্রবাদ বাক্য বললাম জাস্ট।’

পিহু অথৈয়ের দিকে রাগি চোখে একপলক তাকিয়ে আহিদের দিকে ফিরলো।বলে,’ ভাই তোর কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে আছে?আমারটা আনতে ভুলে গিয়েছি।’

আহিদ বলল,’ আমি কি তোর মতো এতো শুচিবায়ু নাকি?সে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে ঘুরব?’
‘ ভাইয়া প্লিজ।’

আহিদ শ্বাস ফেলল।নিজেকে শান্ত করে বলে,’ এনেছি কিন্তু সেটা বড়ো ব্যাগে।নামাতে ঝামেলা হবে।’

পিহু হতাশ হয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।তবুও ওর হাশফাশ কমছে না।ওর কারনে আহিদ বিরক্ত হচ্ছে তা দেখে প্রিয়ান এইবার বলে উঠল,’ আহিদ তুই এইপাশে আয়।আমাকে ওখানে যেতে দে।আমি ওকে দেখছি।’

আহিদ উঠে দাঁড়লো।বলে,’ প্লিজ শান্ত কর ওকে।’

আহিদ গিয়ে বসল প্রিয়ানের জায়গায় আর প্রিয়ান আহিদের জায়গায়।আহিদ প্যান্টের পকেট থেকে ছোট্টো একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে পিহুর সামনে ধরল।তা দেখেই পিহু চওড়া হাসল।প্রিয়ান বলে,’ নেহ এইবার উঠে দাঁড়া।আমি তোর জায়গাটাতে এইটা স্প্রে করে মুছে দিচ্ছি।’

পিহু প্রিয়ানের কথা একবাক্যে মেনে নিলো।ও উঠে দাঁড়াতে প্রিয়ান পিহুর সিটটাতে স্প্রে করে দিলো।তারপর টিশ্যু বের করে পুরো সিটটা মুছে দিলো।প্রিয়ানের কাজ শেষ হতেই পিহু ধপ করে সিটে বসে পরল।
‘ আহ, আরাম।’

প্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ থ্যাংকিউ দোস্ত।’

প্রিয়ান দুহাত বুকে আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে করে বলে,’ আমি তোর জন্যে এতো কিছু করলাম।আর বিনিময়ে শুধু ধন্যবাদ?এই ধন্যবাদ দিয়ে আমি কি করব?’

পিহু চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো।
‘ তো? তাহলে এখন কি এই কাজের জন্যে তোকে আমি নোবেল পুরুষ্কার দিবো?’

প্রিয়ান বাঁকা হেসে বলে,’ এমন কিছু দে যেটা দিলে নোবেল পুরুষ্কার দেওয়ার থেকেও আমি বেশি খুশি হবো।’

পিহু বুঝল না।তাই বলে, ‘ কি সেটা?’
প্রিয়ান ঝুকে আসল একটু পিহুর দিকে এমন ভাণ করল যেন সে পিহুর সিটটা আরেকটু ভালোভাবে মুছে দিচ্ছে।এইদিকে প্রিয়ান পিহুর এতোটা কাছে আসায় পিহু একেবারে সিটের শেষপ্রান্তে লেগে গিয়েছে।শ্বাস কেমন আটকে আটকে আসছে প্রিয়ান এতোটা কাছে আসায়।কিন্তু এমনটা কেন হচ্ছে?ওরা তো হারহামেশায় একে-অপরের সাথে থাকে।পাশাপাশি একসাথে বসে।কতো মারামারি করে।কই আজকের মতো অনুভূতি তো কোনোদিন হয়নি।এদিকে প্রিয়ান ফিসফিস করে বলে,’ আমাকে ধন্যবাদ সরূপ তোর ওই ঠোঁটজোড়া দিয়ে আমার গালে একটা চুমু খেলেই পারিস।আমি এতে খুশি হবো।’

প্রিয়ানের এহেন লাগামছাড়া কথায় পিহু হতভম্ব হয়ে গেলো।দু ঠোঁট আপনা-আপনি হা হয়ে গেলো।বুকের হৃৎপিণ্ডটা ধরাস ধরাস করছে।গাল,কান লাল হয়ে গিয়েছে।পিহুকে লজ্জা পেতে দেখে প্রিয়ান দুষ্টু হাসলো।তারপর পিহুকে চোখ মেরে সরে আসল।সোজা হয়ে বসে চুলে দুহাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে আবারও তাকালো পিহুর দিকে। ওকে এখনও একইভাবে বসে থাকতে দেখে হাত বাড়িয়ে পিহুর হা করা মুখটা বন্ধ করে দিলো।এতে যেন সম্বিৎ ফিরে পেলো পিহু।দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো।কটমট করে তাকালো প্রিয়ানের দিকে।তারপর সবার অগোচরেই হাত এগিয়ে প্রিয়ানের পিঠে সজোড়ে চিপটি কাটলো।ব্যথা পেলেও কিছু বলল না প্রিয়ান।সে হাসছে পিহুর কান্ডে।ওকে হাসতে দেখে যেন পিহু আরও ক্ষ্যাপে গেলো। দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।’

প্রিয়ান মৃদ্যু গলায় বলে,’ প্লিজ,আম ওল ইউরস!’
‘ অসভ্য!’

এদিকে ভ্রু-কুচকে পিহু আর প্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর এইভাবে তাকানো দেখে রুদ্রিক বলে উঠে,’ কি হলো?ওমনভাবে তাকিয়ে কি দেখো?’

অথৈ ধীর স্বরে বলে,’ ওরা দুটো এমন ফুসুরফাসুর করছে কেন? কি বলছে?’

রুদ্রিক বলল,’ তা শুনে তুমি কি করবে?’
‘ ওমা আমি শুনবো না।আমি তো ওদের বেষ্টফ্রেন্ড।’
‘ সবকিছু সবাইকে বলা যায় না।’
‘ কেন? কেন বলা যাবে নাহ?’

রুদ্রিক খানিকটা নিচু হয়ে কণ্ঠ খাঁদে নামিয়ে বলে,’ আমি যদি তোমাকে চুমু খাই।তাহলে সেই কথা কি তুমি সবাইকে বলবে?’

অথৈয়ের চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে আসল রুদ্রিকের কথায়।লজ্জা পেলো রুদ্রিকের কথায়।হঠাৎ সেদিন রুদ্রিকের ব্যালকনিতে ওদের চুম্বনের কথা মনে পরে গেলো।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো অথৈয়ের।মাথা নিচু করে নিলো অথৈ। মিনমিন করে বলে,’ কিসব বলছেন?ওদের মধ্যে কি সেই সম্পর্ক আছে?আমরা তো স্বামী স্ত্রী।’

রুদ্রিক অকপটে বলে ফেলল,’ ওরা স্বামী স্ত্রী না সেটা ঠিক আছে।তবে এটাই সত্যি যে প্রিয়ান পিহুকে ভালোবাসে।’

অথৈ চমকে গেলো রুদ্রিকের কথায়।অবাক হয়ে বলে,’ মানে?’
‘ আস্তে চেচ্চাচ্ছ কেন?ওরা শুনে ফেলবে।’

অথৈ শুকনো ঢোক গিলল। নিজেনে সামলে বলে,’ আপনি এসব কি বলছেন?’
‘ ঠিকই বলছি।’
‘ কিন্তু এটা কিভাবে?মানে আমরা কেন বুঝতে পারলাম নাহ?’ অথৈয়ের বোকা বোকা কথা শুনে হাসল রুদ্রিক।বলে,’ তুমি আসলেই বোকা।বেষ্টফ্রেন্ডরা একে-অপরের প্রেমে পরতে পারে এটা অসম্ভব কিছু না।আমাদের নীল, মারিয়া আর অনিক, সিয়াকেই দেখো।ওরাও তো বেষ্টফ্রেন্ড ছিলো।ভালোবাসা বলে কয়ে আসে না।ভালোবাসা হয়ে যায়।যেমন আমি তোমাকে ভালোবাসি।বুঝেছ?’

রুদ্রিকের মুখে ‘ ভালোবাসি!’ কথাটা শুনে অথৈয়ের মনের আনাচে-কানাচেতে অদৃশ্য রঙিন প্রজাপতিরা উড়াউড়ি করতে লাগলো।লোকটা কিভাবে বিনা সংকোচে ভালোবাসি বলে দিলো।তবে ও কেন পারে না বলতে?কেন বুক কাঁপে এতো।লজ্জারা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে অথৈকে।অথৈ কিছুনা বলে মুচঁকি হাসলো।চোখ সরিয়ে জানালার বাহিরে তাকালো।ট্রেন শব্দ তুলে নিজের গতিতে চলে যাচ্ছে।গাছ-পালা,ঘড়-বাড়ি,মাঠ-খাট,খোলা প্রান্তর সব পিছনে ফেলে সামনে এগোচ্ছে।অথৈ সেই দৃশ্য মন ভড়ে অবলোকন করছে।জানালার বাহিরে এতো সুন্দর দৃশ্য,দেহ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো হিমেল হাওয়া আর পাশে প্রিয় মানুষটা।এর থেকে বেশি আর কি চাই?হঠাৎ অথৈ অনুভব করল রুদ্রিকের হাতটা ওর কোমড় পেচিয়ে ধরেছে।রুদ্রিকের স্পর্শে কেঁপে উঠলো অথৈ।লোকটার প্রতিটা স্পর্শে যেন ভালোলাগা ছেঁয়ে যায়।লোকটার সান্নিধ্যে আরও গভীরভাবে মিশে থাকতে ইচ্ছে করে।অথৈ মুচঁকি হেসে শরীরটা এলিয়ে দিলো রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক অথৈকে আরো ভালোভাবে নিজের সাথে আকঁড়ে ধরে।অথৈ চোখ বন্ধ করে বলে,’ এই জার্ণিটা কোনোদিন শেষ না হোক।আপনি আমি এইভাবেই সারাজীবন একসাথে থাকি।’

রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে বাতাসের তোরে এলোমেলো হয়ে যাওয়া অথৈয়ের চুলগুলো গুছিয়ে দিলো।তারপর বলল,’ সাধ্য থাকলে সময়টা আমি এখানেই থামিয়ে দিতাম।কিন্তু তা যে হবার নয়।’
রুদ্রিক ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।হেসে বলে,’ আপনি অনেক ভালো রুদ্রিক।এতো ভালো কেন আপনি?’

রুদ্রিক অথৈয়ের নাকটা হালকা টেনে দিয়ে বলে,’ আমি সবার জন্যে ভালো না অথৈ। তবে তোমার কাছে আসলেই আমি নিজের গাম্ভীর্যতা ধরে রাখতে পারি না।তোমার কোমলতা আমাকেও তোমার প্রতি কোমল হতে বাধ্য করে।আমার মস্তিষ্ক আমার মনের কাছে হেরে যায়।কারন আমার পুরো মনটা জুড়েই তো শুধু তুমি আছ।আর এখন তো আমার সবটা শুধু তুমি ঘিরেই। তুমিই আমার সব অথৈ। ‘

রুদ্রিকের প্রতিটা কথা যেন অথৈয়ের হৃদয়ে ঝংকার তুলে দিলো।লোকটার ভালোবাসা দেখে অথৈ বরাবরই অবাক হয়।কেউ কাউকে এতোটা কিভাবে ভালোবাসতে পারে?ঠিক কিভাবে?অথৈ নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে। রুদ্রিককে স্বামীরূপে সে নিজের করে পেয়েছে।আল্লাহ্ তায়ালা তাকে না চাইতেও সবকিছু দিয়েছেন।সে সারাজীবন ভড় শুকরিয়া আদায় করলেও তা কম হয়ে যাবে।

এদিকে সাফাত একদৃষ্টিতে রুদ্রিক আর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনকে একসাথে দেখতে কতোটা ভালোলাগছে।অথৈয়ের ঠোঁটে বিস্তৃস্ত মিষ্টি হাসিটার একমাত্র কারন তো রুদ্রিকই তাই নাহ? রুদ্রিকের কাছে থাকলে অথৈ যেভাবে হাসিখুশি থাকে। অথৈ যদি ওর হতো তবে কি অথৈ ঠিক এইভাবেই হাসতো?না অথৈকে সে বোধহয় এতো খুশি রাখতে পারতো না।কিন্তু সে ওর সবটা দিয়ে চেষ্টা করতো।কিন্তু এখন এটা ভাবলে তো হবে না।অথৈ ওর কাছে সুখে থাকতো না বোধহয়।তাইতো উপরওয়ালা তার ভাগ্যে অথৈকে লিখেনি।অথৈ যদি ওর ভাগ্যে লিখা থাকতো তাহলে শতো কোটি বাধার পরেও হলেও অথৈ ওর হতো।সাফাত চোখ সরিয়ে নিলো।বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।হাজার হোক সে তো অথৈকে ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো সাথে দেখলে কষ্ট হবেই।এটা যে কারো হাতে থাকে না।সাফাতের চোখজোড়া ছলছল করছে।ও অতি সন্তর্পণে চোখের জলটুকু মুছে নিলো।চোখ বন্ধ করর সিটে গা এলিয়ে দিলো।সৃষ্টিকর্তার কাছে মনেপ্রাণে এটাই চাইলো যে ও জীবনেও তিনি এমন কাউকে পাঠাক যে ওকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসবে।সেই মানুষটার ভালোবাসায় যেন সাফাত সব ভুলে ওই মানুষটাকে নতুনভাবে ভালোবাসতে পারে।তাকে ঘিরেই যেন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পায়।এমন কাউকে তার জীবনে যেন খুব দ্রুত আসে।তার সব কষ্ট গ্লানিটুকু যেন নিঃশেষ করে দেয়।মনে প্রাণে এটাই চায় সাফাত।আর তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় বন্ধু সাফাত আর ওর ভালোবাসার মানুষ অথৈ যেন সারাজীবন একে-অপরের সাথে সুখে শান্তিতে থাকে।

#চলবে___________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৯
রাত গভীর হয়েছে।সেই রাতের গভীরতাকে হার মানিয়ে ঝকঝক শব্দ তুলে ছুটে চলেছে রেলগাড়ি।ট্রেনের প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে পরেছে।শুধু ঘুম নেই রিধি আর ইহানের চোখে।দুজনে নিশ্চুপ বসে আছে একে-অপরের পাশে।কতো শতো কথা একে-অপরকে বলতে চায়।কিন্তু চাইলেও বলতে পারছে নাহ।অদৃশ্য কোনো দেয়াল তৈরি হয়ে আছে ওদের মধ্যে।আর সেটা হলো জড়তার দেয়াল।কেউ কারো জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারছে নাহ।রিধি হাশফাশ করছে।ভালোবাসার মানুষটার পাশে বসেছে।তার সান্নিধ্যে আছে সে।দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চি।কিন্তু তারপরেও রিধি মন তো জানে তাদের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব।এই দূরত্ব ঠিক কবে বিলীন হবে?কে জানে?আদৌ এই দূরত্ব কোনোদিন শেষ হবে?দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিধি।মনের এই দহন সে কাকে বোঝাবে?কাকে দেখাবে?অন্তরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।ভালোবাসায় এতো জ্বালা জানলে পাশে বসা নিষ্ঠুর লোকটাকে মনের মাঝে জায়গা দিতো না।কিন্তু আদৌ কি তা পারে যায়?মন যে কারো আয়ত্বে থাকে না।অজান্তেই এই মন কখন কাকে তার মাঝে জায়গা দিয়ে দেয় কেউ বুঝতেও পারে না।রিধি চোখজোড়া জ্বালা করছে। লাল হয়ে এসেছে চোখজোড়া। একটু কাঁদতে পারলে বোধহয় ভালো লাগতো।কিন্তু তাও যে করতে পারবে না।এদিকে রিধিকে এমন অস্থিরতার মাঝে দেখে ইহান অনেকক্ষণ যাবতই কিছু বলতে চাইছে।কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।কিন্তু এইবার মনকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।নিস্তব্ধতাকে ছিন্ন করে ইহান বলে উঠে,’ রিধি?কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার?শরীর খারাপ লাগছে?’

হঠাৎ ইহানের কণ্ঠ এমন নিস্তব্ধ রাতের মাঝে শুনতে বেশ ভয়ানক লেগেছিলো। তাইতো রিধি ভয় পেয়ে যায়।চমকে উঠে ও।রিধিকে ভয় পেতে দেখে ইহান এইবার কণ্ঠস্বর নম্র করে বলে,’ ভয় পাচ্ছ কেন?এটা আমি ইহান।’

রিধি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল।পরিমুহূর্তে শান্ত কণ্ঠে বলে,’ নাহ আসলে হঠাৎ কথা বলেছেন তো তাই ওই একটু আরকি।’

‘ তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’

রিধি ইহানের প্রশ্ন শুনে ছোট্টো কণ্ঠে উত্তর দেয়,’ নাহ।’

ইহানের ব্যাকুল কণ্ঠস্বর,’ তাহলে এমন হাশফাশ করছ কেন?সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো।’

ইহানের কথায় রিধির যেন রাগ লাগল।ইহানের এমন ব্যবহার তার মনের আঘাতটাকে খুচিয়ে আরও রক্তাক্ত করে দিয়েছে যেন।লোকটা বলছে তাকে সমস্যা হলে জানাতে।আরে তার প্রধান সমস্যা তো এই লোকটা।যাকে ভালোবেসে প্রতিমুহূর্তে ধুকে ধুকে মরছে সে।না পারছে এই লোকটাকে ভুলে যেতে আর না পারছে নিজেকে শেষ করে দিতে।রিধি তাচ্ছিল্যভরা স্বরে বলে উঠল,’ আমার সমস্যার কথা বললে তার সমাধান আদৌ আপনি কোনোদিন দিতে পারবেন?’

ইহান কাতর গলায় বলে,’ একবার বলে তো দেখো।’

রিধি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,’ যে সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন না কোনোদিন। তা বলেই বা কি হবে?’

রিধির প্রতিটা কথার মানে বুঝতে পারছে ইহান।রিধির কথাগুলো তীরের মতো বুকে গিয়ে বিধছে।মেয়েটাকে এতোটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও যে মেয়েটা এখন তাকে তাচ্ছিল্যভরে করে কথা বলছে।অভিমান করে প্রেমময়ী মনটা ঢেকে ফেলেছে অভিমানের চাঁদরে। ইহান ঠান্ডা স্বরে রিধিকে বলল,’ যদি বলি তোমার সব সমস্যার সমাধান আমার কাছে আছে।’

চমকে যায় রিধি ইহানের কথায়।চোখ বড়ো বড়ো করে ইহানের দিকে তাকালো।একেবারে স্পষ্টভাবে ইহানের চোখে চোখ রাখল রিধি।তাকাতেই বুকটা ধ্বক করে উঠল।ইহানের শান্ত চোখজোড়া আজ অন্যকিছুই বলছে।অন্যকিছু ফিল করছে রিধি।যেটার অপেক্ষা রিধি এতোগুলো দিন যাবত করে এসেছে।তবে কি ইহানও ওকে? নাহ, নাহ এটা কিভাবে হবে?ইহান তো ওর দিকে ভালোভাবে তাকায়ই না।কিন্তু মানুষের চোখের ভাষা কি কখনও মিথ্যে হয়?নাহ মিথ্যে হয় না।রিধিও তো ভালোবাসে।তাই অন্যজনের চোখের গভীরে ভালোবাসা সে বুঝতে পারে।রিধি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।বুকটা ধরাস ধরাস করছে।রিধি যা ভাবছে তা যদি সত্যি হয় তবে রিধি কি করবে?হাত পা কাঁপছে রিধির।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মাঝে।মনের অস্থিরতা কিছুতেই কমাতে পারছে না।রিধির কাঁপাকাঁপি করতে দেখে ইহান বলে উঠল,’ কি হয়েছে বলছ না কেন?আর কাঁপছ কেন?’

রিধি এক হাত দ্বারা ওর অপরহাত চেপে ধরে।অস্থিরতা নিয়েই থেমে থেমে বলে,’ আপ..আপনি আর আমার দিকে তাকাবেন নাহ।’

ইহান হাসল। সে বুঝতে পারছে রিধির অস্থিরতা।মেয়েটা তাহলে ওর চোখের ভাষা পড়তে পেরেছে।বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে ইহানও ওকে ভালোবাসে।ইহান হেসে বলে,’ কেন তাকাবো নাহ?’
‘ আমি বলেছি তাই তাকাবেন না।’
‘ আচ্ছা।’

রিধি করুন চোখে ইহানের দিকে তাকালো।ইহান এখন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।রিধির মন খারাপ হলো।সে বলল আর লোকটা মেনে নিলো?এমন কেন লোকটা?কেন রিধিকে বুঝে না?রিধির মনের অস্থিরতা, ব্যাকুলতা যে তাকে ঘিরেই একটুও কি বুঝে নাহ?

‘ আমি সবটাই বুঝি।আর সব জানি।’

আকস্মিক ইহানের কথায় রিধি অবাক হয়ে যায়।চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় ওর।কিসের কথা বলছে লোকটা?ও তো মনে মনে বলেছে সব।তবে কি লোকটা ওর মনের কথা শুনতে পারে না-কি?রিধি অবাক কণ্ঠে বলে,’ কি বুঝেন?আর কি জানার কথা বলছেন?’

ইহান রহস্যময় হেসে বলে,’ তুমি যা বুঝাতে চাও সব বুঝি।আর তুমি যা জানাতে চাও সব জানি।’

রিধি হতভম্ব বাকরুদ্ধ।বলে কি লোকটা?লজ্জায় রিধির গাল ভাড় হয়ে আসে।কিছুক্ষণ ছটফট করে বলে,’ আমার ঘুম আসছে।আমি ঘুমাবো।’

এই বলে রিধি গায়ের চাঁদরটা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে সিটে হেলান দিয়ে দেয়।এদিকে রিধির কান্ডে নিস্তব্ধে হাসে ইহান।লজ্জায় মেয়েটা চাঁদরের নিচে লুকিয়েছে।

______________
এদিকে রিধি আর ইহানের মতোই আরেকজনের চোখে ঘুম নেই।সে আর কেউ না রুদ্রিক।তার ঘুম যে এক ঘুমকুমারি নিয়ে গিয়েছে।যে বুকের মাঝে নিশ্চিন্তে,শান্তিতে ঘুমিয়ে।তার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।রুদ্রিক বুকের মাঝে আগুন জ্বলছে।মস্তিষ্কের মধ্যে নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা কিলবিল করছে।বুকের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।রুদ্রিক ফের তাকালো অথৈয়ের দিকে। মেয়েটা কিভাবে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।যেন সে কিচ্ছু করেনি।ট্রেনের জানালা খোলা সেখান থেকেই হু হু করে ছুটন্ত বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে অথৈয়ের চোখ, নাক, মুখ।বাতাসের দাপটে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অথৈয়ের চুল।সেই সাথে এলোমেলো হয়ে গেল অথৈয়ের গায়ে জড়ানো ওড়না।সেখানে চোখ যেতেই শুকনো ঢোক গিলল রুদ্রিক।এই মেয়েটা নির্ঘাত তাকে পাগল করে ছাড়বে।দিশেহারা রুদ্রিক।দ্রুততার সাথে অথৈয়ের ওড়নাটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টায় লেগে পরলো।এদিকে বাতাসের দাপটে অথৈয়ের ছোট্টো নরম দেহখানা যেন ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে।রুদ্রিকের হাত অথৈয়ের বাহুতে স্পর্শ করতেই রুদ্রিক দেখে অথৈয়ের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।রুদ্রিক অথৈকে বুকে নিয়েই অতি সাবধানে সিটের নিচ থেকে ব্যাগ বের করল।সেখান থেকে একটা চাঁদর বের করল।অবশ্য ওর বেশ কষ্ট হয়েছে।চাঁদরটা নিজের গায়ে আর অথৈয়ের গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে দিলো।দুহাতে ভালোভাবে অথৈকে আঁকড়ে ধরে।আরও গভীরভাবে বুকের মাঝে মিশিয়ে নিলো। এদিকে উষ্ণতা পেয়ে অথৈ যেন নিজ থেকেই রুদ্রিকের বক্ষস্থলের মাঝে আরও লেপ্টে যেতে চাইছে।আদুরে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক কিছুক্ষণ গভীর নয়নে অথৈকে দেখল।পর পর ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।এদিকে গায়ে কাথা জড়ানোর ফলে অথৈয়ের প্রথমে বেশ ভালোই লাগছিলো।কিন্তু এখন কেন যেন গরম লাগছে।ভ্যাপসা গরম।অথৈয়ের আবার অনেক গরম বেশি।সে গরম একদমই সহ্য করতে পারে না।তার উপর গায়ে মোটা কাপড়ের চাঁদর।ছটফটিয়ে উঠল অথৈ। কিন্তু বিন্দুমাত্র নড়তে পারলো না রুদ্রিকের শক্তপোক্ত বাধনের মধ্যে।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় অথৈ। তাকাতেই রুদ্রিকের ঘুমন্ত মুখটা নজরে আসে ওর।কি সুন্দর নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে লোকটা। আর ওকেও নিজের বুকের মাঝে আগলে রেখেছে কি সুন্দরভাবে।ঘুমের মাঝেও কেউ কাউকে এতোটা শক্ত করে ধরে রাখতে পারে?যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।অথৈয়ের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।ঘুমন্ত্র রুদ্রিককে দেখে মনের মাঝে দুষ্টু চিন্তারা এসে হানা দিচ্ছে।অথৈয়ের চোখজোড়া গভীরভাবে রুদ্রিকের সর্ব মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত।হঠাৎ নজর আটকে যায় রুদ্রিকের থুতনীর খাঁজে কালো কুচকুচে তিলটার উপর।এই তিলটা অনেক আগেই অথৈ খেয়াল করেছিলো।অনেক ইচ্ছে ছিলো রুদ্রিকের এই তিলটা একটুখানি ছুঁয়ে দেওয়ার।কিন্তু জাগ্রত রুদ্রিকের সামনে এই কাজ অথৈ কোনোদিনও করতে পারবে না।লজ্জায় ও মরেই যাবে।কিন্তু আজ আর সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইছে না অথৈ৷ তাই মনের বাসনা পূর্ণ করে নিলো।হাত বাড়িয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো ঘুমন্ত রুদ্রিকের তিলটা।ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠল।আরও একটা ভয়ানক কাজ করে বসল অথৈ।মাথাটা উঁচিয়ে রুদ্রিকের সেই তিলে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসল।চুমু দিয়ে নিজেই হতভম্ব অথৈ। ও এটা কিভাবে করল? এই সাহস কিভাবে করতে পারল ও? ভাজ্ঞিস লোকটা ঘুমোচ্ছে।যদি জাগ্রত থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এই একটা চুমুর বদলে রুদ্রিক যে ঠিক কি করত ওর সাথে।তা ভাবতেই লজ্জায় শক্ত হয়ে যায় অথৈ। শুভ্র গালজোড়ায় ছেঁয়ে যায় লালাভ আভা।নিজের কাজকর্মে নিজেই লজ্জায় শেষ।দ্রুত মুখ লুকিয়ে ফেলল রুদ্রিকের বক্ষস্থলে।গরমের কথা ভুলে গেলো।লজ্জা ঢাকতে নিজেই চাঁদর দিয়ে ওর গোটা দেহটা চাঁদরে মুড়িয়ে নিলো।এদিকে অথৈ নিজেকে লুকোতেই। ঘুমু ঘুমু চোখজোড়া মেলে হালকা করে তাকায় রুদ্রিক।ওর ঠোঁটের কোণে খেলে যাচ্ছে তৃপ্তির হাসি।ওর অথৈ আজ নিজ থেকে ওকে ছুঁয়েছে।চুমু খেয়েছে ওকে।ভাবতেই মনের মাজে আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে এই একটা চুমুর বিনিময়ে চুমুর বর্ষনে ভিজিয়ে দিতে।মূলত রুদ্রিক পুরোপুরি ঘুমোয়নি।মাত্র চোখটা লেগে আসছিলো।অথৈয়ের নড়াচড়ায় ঘুমটা ভেঙে যায় ওর।কিন্তু তাও চোখ খোলেনি।কিন্তু কেন খোলেনি তা সে জানে না।তবে ভালোই করেছে খোলেনি।নাহলে অথৈয়ের ঠোঁটের ছোঁয়া কি এতো সহজে পেতো।অথৈয়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে ওর শরীরের যেন কারেন্ট বয়ে যাচ্ছিলো।আর মেয়েটা যখন চুমু খেলো।সেই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নাহ।রুদ্রিক অথৈকে বুঝতে দিলো না ও যে সব টের পেয়েছে।হৃদয়ের গভীর থেকে অথৈকে অনুভব করেছে।নাহলে যে মেয়েটা লজ্জায় মরেই যাবে।তখন আর ভুলেও ওর কাছে আসবে না।রুদ্রিক তো চায় অথৈ তাকে আদর করুক।খুব করে তার ভালোবাসামাখা ছোঁয়াগুলো দিক।ঠিক আজকের মতো।তাইতো আজ কিছু বলল না অথৈকে।তবে একেবারেই যে ছেড়ে দিবে তা নয়। একবার শুধু গন্তব্যে পৌছাক।এরপর মেয়েটাকে উষ্ণ ভালোবাসাময় স্পর্শে কাতর করে তবেই ছাড়বে।

#চলবে___________
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪০
ভোড় সকালে এসে ট্রেন থামলো শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে।অথৈ তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন রুদ্রিকের বুকের উষ্ণতার মাঝে।রুদ্রিকের জাগাতে ইচ্ছে করছে না অথৈকে।মেয়েটা কি সুন্দর লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে ওর সাথে।কিন্তু কিছু করার নেই।রুদ্রিক শ্বাস ফেলল।অথৈয়ের নরম গালে আলতো করে থাপ্পড় মেরে ওকে ডাকতে লাগল,’ অথৈ?অথৈ?উঠো।আমরা এসে পরেছি।উঠো জান।’

বেশ কয়েকবার ডাকার পর অথৈয়ের ঘুম ভাঙ্গে। পিটপিট করে তাকালো।চোখ মেলে রুদ্রিকের মুখশ্রীটা নজরে আসলো ওর।ঝলমলিয়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো অথৈয়ের।এই মানুষটার মুখটা দেখলেই শান্তি শান্তি লাগে।অথৈ মুচঁকি হাসল।বিনিময়ে রুদ্রিকও ওকে হাসি উপহার দিলো।অথৈ সোজা হয়ে উঠে বসল।আড়মোরা ভাঙ্গলো।ঘুম ঘুম মুখশ্রী,ফোলা ফোলা চোখ মুখ,এলোমেলো চুলে থাকা অথৈকে ভীষণ আবেদনময়ী লাগলো রুদ্রিকের কাছে।হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলো যেন।এই মেয়ে নির্ঘাত তাকে পাগল করে দিবে।পাগল করে দিবে কি?পাগল তো হয়েই গিয়েছে এই মেয়েটার প্রেমে পরে।সেই কবেই।এখন কবে জানি এই মেয়ের রূপের ঝলকানিতে রুদ্রিক ঝলসে ছাড়খাড় না হয়ে যায়।আড়মোড়া ভেঙ্গে অথৈ রুদ্রিকের দিকে তাকালেই। দেখতে পায় রুদ্রিকের মুগ্ধ দৃষ্টিজোড়া।মুহূর্তেই যেন শরীরটা শিরশির করে উঠল।এই লোকের চাহনী মারাত্মক।অথৈয়ের মনের ভীতরে তুফান উঠিয়ে ছাড়ে।যেন সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়।অথৈ মাথা নিচু করে নিলো।কানের পিঠে এলোমেলো চুলগুলো গুজে দিয়ে।ঘুমভাঙা কণ্ঠে বলে উঠে,’ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?বিশ্রি লাগছে বুঝি আমায় দেখতে?মুখটাও তো তেলতেলে হয়ে আছে।’

রুদ্রিক অথৈয়ের কথা শুনে ওর শক্তপোক্ত হাতটা অথৈয়ের নরম গাল ছুঁয়ে দিলো।রুদ্রিকের ছোঁয়া অনুভব করে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,’ মেয়ে, তুমি যদি জানতে আমার চোখে তুমি ঠিক কতোটা সুন্দর আর আবেদনময়ী।তাহলে এই কথাগুলো কখনই বলতে না।যদি অনুভব করতে পারতে আমি তোমাকে দেখলে ঠিক কতোটা পাগল হয়ে যাই।তাহলে লজ্জায় তুমি মরেই যেতে মেয়ে।’

ইশ,এতো সুন্দর লাগে কেন লোকটার কথাগুলো?হৃদয় নাড়িয়ে দেয় অথৈয়ের।রুদ্রিকের বুকে ঝাপিয়ে পরতে ইচ্ছে করল অথৈয়ের।কিন্তু লাজুক অথৈ তো তো এটা করতেই পারবে না।তাকে যে লজ্জারা আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ধরে।অথৈয়ের গাল ভাড়ি হয়ে আসল লজ্জায়।রুদ্রিক আরেকটু এগিয়ে যায় অথৈয়ের দিকে।বুকটা ধ্বুকপুক করছে অথৈয়ের।লোকটা এভাবে আগাচ্ছে কেন?অথৈ আঁড়চোখে তাকালো রুদ্রিকের দিকে লোকটার মাদকতা ভড়পুর দৃষ্টিজোড়া যে তার ওষ্ঠজোড়ার দিকে তা বুঝতে পেরেই ঢোক গিলল অথৈ। লোকটা কি এখন ওকে চুমু খাবে?কিন্তু এখন এই সময় কিভাবে?অবশ্য এখন কেউ নেই এখানে।সবাই ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছে।ফ্রেস হচ্ছে।শুধু রুদ্রিক আর অথৈও রয়ে গিয়েছে।এদিকে রুদ্রিককে আগাতে দেখে অথৈ থেমে থেমে বলে,’ কি করছেন?এভাবে আগাচ্ছেন কেন?’

রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো অথৈয়ের পাতলা নরম ওষ্ঠজোড়া।কেঁপে উঠল অথৈ। রুদ্রিকের শীতল কণ্ঠস্বর,’ কিস করতে ইচ্ছে করছে এখানে অথৈ। অ্যা ডিপলি কিস।’

চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো অথৈ। মানুষটা এমন সব কথা বলে যে অথৈয়ের মন চায় লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে।অথৈকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রিক আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো।মাথা ঝুকিয়ে যেই না অথৈয়ের অধরজোড়া ছুঁতে যাবে তখনই বাহির থেকে গলা খাকারি দেওয়ার শব্দ হলো।চমকে গেলো অথৈ। দ্রুত রুদ্রিকের বুকে হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো।রুদ্রিকও নিজেকে দমিয়ে নিলো।চট জলদি সর আসল।শোনা গেলো অনিকের কণ্ঠস্বর,’ রুদ্রিক?অথৈ উঠেছে?জলদি আয়।নাস্তা খেয়েই আমরা রওনা হবো।নাহলে দেরি হয়ে যাবে।’

রুদ্রিক কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করে বলে,’ হ্যা অথৈ উঠেছে।আমরা আসছি।’
‘ আচ্ছা তোরা আয়।আমি যাচ্ছি।’
‘ হুম!’

অনিক চলে গেলো।এদিকে অথৈ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,’ অনিক ভাইয়া কি কিছু দেখেছে?এখন আমি বাহিরে যাবো কিভাবে?আমার লজ্জা লাগছে।’

রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে ফেলল অথৈয়ের কথায়।বলে,’ কেভিনের দরজাটা চাপানো আছে।ভালোভাবে দেখে নেও।আর অনিক ভীতরে আসেনি।তো কিছু দেখবে কিভাবে?’
‘ তবুও…!’
‘ হয়েছে এতো ভাবতে হবে না আপনাকে।এখন জলদি আসুন।আপনাকে ফ্রেস করিয়ে আমিও ফ্রেস হবো।নাস্তা করা বাকি আছে।দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি আসুন।’

রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে অথৈয়ের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিলো।অথৈ মুখ ফুলিয়ে রুদ্রিকের হাত ধরল।রুদ্রিকের অন্যহাতে অথৈয়ের পার্স ব্যাগ।অন্যান্য ব্যাগ অনিক, নীল ওরা নামিয়ে নিয়েছে।অথৈকে নিয়ে হাটতে হাটতে রুদ্রিক হঠাৎ বলে উঠল,’ কিস তো করতে পারলাম না ম্যাডাম।আর আরও কিছু এখনও আপনাকে দেওয়া বাকি আছে। আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তার দশগুন তো আপনাকে ফিরিয়ে দিতেই হবে।নাহলে যে নাইনসাফি হয়ে যাবে আপনার সাথে।আফটার ওল আমি আপনার স্বামী।একবার গন্তব্যে পৌছে নেই।সুযোগ মতো সুধে আসলে আপনাকে সব ফিরিয়ে দিবো।’

রুদ্রিক কথাটা বলেই ট্রেন থেকে নেমে দাঁড়ালো।তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো অথৈয়ের দিকে।চোখের ইশারা করল ওর হাত ধরে সাবধানে ট্রেন থেকে নামতে।এদিকে অথৈ রুদ্রিকের বলা বাক্যগুলোতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।লোকটা কিসের কথা বলছে?কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে ওকে?হঠাৎ কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো অথৈয়ের।ও যে লোকটাকে চুমু খেয়েছে তা কি সে জেনে গিয়েছে?কিন্তু কিভাবে?মানুষটাতো তখন ঘুমিয়ে ছিলো।জানলো কিভাবে?তবে কি অভিনয় করছিলো ঘুমের?অথৈ চোখ বড়ো বড়ো করে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।তা দেখেই রুদ্রিক অথৈকে চোখ মেরে দিলো।অথৈ যা বোঝার বুঝে ফেলল।তাজ্জব বনে গিয়েছে ও।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ওর।অথৈ কাঁপা গলায় বলে,’ আপ..আপনি।তার মানে আপনি তখন ঘুমান নি?অভিনয় করছিলেন?বাটপার লোক।’

রুদ্রিক ভাবলেশহীনভাবে বলে,’ আমি তো ঘুমিয়েই ছিলাম।কিন্তু ওইযে তুমি আমার বুকে ঘুমিয়ে তোমার ওই নরম শরীরটা নিয়ে যখন নড়চড় করছিলে।তখন আমার কেমন কেমন যেন লেগছিলো।আর আমার ঘুমটা ছুটে যায়।অবশ্য যা হয়েছে ভালোর জন্যেই হয়েছে। নাহলে কি আমি জানতে পারতাম কেউ একজন যে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমায় চুপিচুপি চুমু খায়?’

অথৈ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে। ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ও।অথৈকে একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এইবার তাড়া দিলো রুদ্রিক,’ অথৈ! জলদি নেমে আসো।দেরি হয়ে যাবে।’

অথৈ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্রিকের হাত ধরে নেমে দাঁড়ালো। প্লাটফর্মে বেশি একটা ভিড়াভিড়ি নেই।রুদ্রিক অথৈকে নিয়েই এগিয়ে গেল প্যাসেঞ্জার ওয়েটিং সিট কর্নারে।সেখানে গিয়েই সবাইকে দেখতে পেলো।ওরা যেতেই পিহু অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ বাহ বাহ! আজ যেই ঘুম দিয়েছিলি।মনে তো করেছিলাম আজ আর তুই উঠতে পারবি না।রুদ্রিক ভাইয়ার তোকে কোলে নিয়েই বাকি রাস্তা পার হতে হবে।’

সবাই হেসে দিলো পিহুর কথায়।রুদ্রিক অথৈয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,’ এটা একটা ভালো বুদ্ধি। এতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না।আমি তো এক পায়ে রাজি।কিন্তু ম্যাডাম তো লজ্জায় একেবারে মরে যাবে।আর আমার একটা মাত্র বউ।তাকে জেনেশুনে মরতে দিতে পারি কিভাবে বলো?’

অথৈ লজ্জায় হতবাক।ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই এই লোক তাকে লজ্জা দিয়েই যাচ্ছে।এখানে যে ওর বড়ো ভাই আছে সেই খেয়াল পর্যন্ত নেই।অথৈ সবার অগোচরে রুদ্রিকের কোমড়ে চিপটি কাটলো।রুদ্রিকের এতে কোনো হেলদোল হলো না। সে এখনও হাসছে।এদিকে ইহান খুক খুক করে কেশে উঠে।নীল বলে উঠে,’ কিরে তোর আবার কি হলো?যক্ষা রোগির মতো কাশছিস কেন?’

ইহান রাগি চোখে তাকালো।সে যক্ষা রোগি?ও তো শুধু কেশে রুদ্রিককে ইঙিত দিচ্ছিলো যে সে অথৈয়ের বড়ো ভাই।আর একটু যেন সামলে কথা বলে।ইহান মারিয়াকে বলে,’ এই মারির দাঁত শোন।’

মারিয়ার নিজের নামকে এইভাবে ব্যঙ্গ করতে শুনে কটমট করে তাকালো।দাঁত খিচিয়ে বলে,,’ এই কি বললি তুই?আমি মারির দাঁত?এখন আমি তোর মারির দাঁত ঘুষিয়ে ভেঙে দিবো।’

ইহান থতমত খেয়ে যায়।সে বুঝেছে ভুলভাল বলে বলেছে।নামটা ব্যঙ্গ করা ঠিক হয়নি।অন্তত এখন নয়।নাহলে নীলকে শায়েস্তা করবে কিভাবে?ইহান বোকাসোকা হেসে বলে,’ নাহ মারিয়া তুই না আমার বেস্টফ্রেন্ড।তোরে আমি স্পেশালভাবে ট্রিট দিমু।এই নীলরে কষাইয়া একখান নিচে লাগা.!’

বাকিটা বলার আগেই নীল হুংকার ছুড়লো,’ ওই তুই আমার বউরে কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছিস?থাপ্পড় তো আমি তোরে দিমু।’

ইহান নীলকে পাত্তা দিলো না।সে ফের মারিয়াকে বলে,’ এই মারিয়া?দিবি নাহ?’

মারিয়া অন্যপাশে হেটে চলে যায়।যেতে যেতে বলে,’ আমি পারবো না।তোর কারনে আমি আমার সংসারে আগুন লাগাবো কেন? তোর স্পেশাল ট্রিট নিয়া তুই থাক।’

নীল মারিয়ার কথায় খুশি হয়ে ওকে দূর থেকে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিয়ে বলে,’ এই নাহলে আমার বউ।আই লাভ ইউ মাই জান।’

সবার সামনে নীল এভাবে বলায় মারিয়া লজ্জা পেলো।সিয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।এদিকে নীল হাসছে।

অথৈ বার বার হাম দিচ্ছে।ঘুমের রেশটা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।চোখ লেগে আসছে আবারও।রুদ্রিক বিষয়টা বুঝতে পেরে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করল।অথৈয়ের হাত ধরে বলে,’ ওদিকটায় চলো।হাত মুখ ধুয়ে নিবে।তাহলে ঘুমের রেশটা কেটে যাবে।ভালো লাগবে।’

অথৈ মাথা দুলিয়ে চলল রুদ্রিকের সাথে।রুদ্রিক একটা নিরিবিলি জায়গায় এনে অথৈকে ইশারা করল হাত পাততে।অথৈ মাথা নিচু করে হাত পেতে দিলো।আর রুদ্রিক বোতল থেকে পানি ঢালছে।অথৈকে ফ্রেস হতে সাহায্য করল রুদ্রিক।দূর থেকে তা দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো ইহান।সত্যি রুদ্রিকের ভালোবাসা একেবারে নিখুঁত। মানুষটা যে তার বোনটাকে অনেক সুখে রাখবে তা আর বলতে নেই।
সবাই ফ্রেস হয়ে নিতেই এইবার ওরা সকালের নাস্তা সেরে নিলো।কারন আর সময় পাবে নাহ।তাই সবার না চাওয়া সত্ত্বেও নাস্তা করতে হলো।অথৈ তো খাবেই না।রুদ্রিক ওকে জোড় করে কোনোরকম অর্ধেক পরোটা আর একটা ওমলেট খাইয়েছে।খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই ওরা আবার রওনা হলো।তিনটে সি এন জি নিয়ে ওরা রওনা হলো তামাবিল সীমান্তের উদ্দেশ্যে।তামাবিল পৌছেই ওরা সবাই প্রথমেই ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে লাইন ধরে দাঁড়ালো। তারপর পুলিশের কাছ থেকে একটা বহিরাগমন কার্ড (Departure Card) সংগ্রহ করে পূরণ করে নিলো এরপর তা পাসপোর্টসহ জমা দিলো।

ইমিগ্রেশন শেষ করে কাস্টমস অফিসে চলে গেলো এন্ট্রি করতে। এরপর ভ্রমণ করের রশিদ জমা দিলো।সেই কর ওরা আগেই জমা দিয়ে দিয়েছিলো।আর সেটার রশিদই জমা দিয়েছে। কাস্টমসের কাজ শেষ হয়ে যেতেই বিজিবি নাম এন্ট্রি করে নিলো তাদের নির্ধারিত খাতায়।

ওরা বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ করেই। ভারতের অংশে ঢুকে পরে।তবে তার আগে বিএসএফ পাসপোর্ট চেক করে তবেই ভিতরে প্রবেশ করতে দিয়েছে।পরে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অফিসে পাসপোর্ট জমা দিলো।সেখানে Arrival Card পূরণ করে ইমিগ্রেশন শেষ করে নিলো।এসব করতে করতে অনেকটা সময় কেটে গেলো।সবাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।বেশির ভাগ মেয়েরা।রিধি ক্লান্ত গলায় বলে,’ ভাই রে ভাই এইখানে ঘুরতে আসার আগে যে এতো কিছু করতে হয় জানলে আমি আসতাম না।পা ব্যথা হয়ে গেলো আমার।উফ!’

ইহান রিধির পাশেই দাঁড়িয়েছিল। রিধির কথা শুনে নরম গলায় বলে,’ বেশি ব্যথা করছে?’

রিধি হকচকালো।তবে তা ইহানকে বুঝতে দিলো না।মাথা দুলিয়ে বলে,’ ওই আসলে একটু একটু।’
‘ এইতো আর একটু! এখনই গাড়ি নিচ্ছি আমরা। এই রুদ্রিক?চল গাড়ি ভাড়া করে আসি।’

ইহান আর রুদ্রিক চলে গেলো গাড়ি ভাড়া করতে।তারা ট্রেভেলার নামে পরিচিত একটা গাড়ি ভাড়া করল।যেহেতু তারা বারোজন। আর এই গাড়িতে মোট পনেরো থেকে ষেলো জন মানুষ বসতে পারবে।তাই এটাই ভাড়া করল।সবাই একে একে গাড়িতে উঠে বসল।গাড়ি চলল রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। যা রুদ্রিক আগেই বুক করে রেখেছিলো।এইটার দায়িত্ব রুদ্রিক নিয়েছিলো।গাড়ি চলছে নিজ গতিতে।গাড়ি যতোই এগোচ্ছে।সবাই যেন মেঘালয়ের রাজ্যের প্রেমে পরে যাচ্ছে।মনে হবে কোনো এক মেঘের দেশে এসেছে ওরা। হাত বাড়ালেই মেঘ। প্রতি মুহূর্তে মেঘ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঠান্ডা হওয়া এসে যেন ভিজিয়ে দেবে একনিমিষেই। যেন পুরো এলাকাকে মেঘে ঘিরে রেখেছে। প্রত্যেক পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজেও মেঘ।উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম অনিন্দ্য সুন্দর মেঘালয়।কেউ কেউ মেঘালয়কে রূপের রাজা বলে।কথাটা আসলেই ঠিক।

পাহাড়, ঝরনা আর পাহাড়ি লেক মিলে শিলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।মেঘালয়ের শিলংয়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৫ হাজার ৬ ফুট। পাহাড়, ঝরনা আর পাহাড়ি লেক মিলে শিলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শুধু সৌন্দর্য নয়, মেঘালয় নামের মধ্যে রয়েছে মাহাত্ম্য। মেঘের আলয়, মানে মেঘের বসত যেখানটায়। পাহাড়ের কোলে মেঘের নিত্য খেলা আর জলপ্রপাতের গর্জনের সঙ্গে অপরূপ মেঘালয় ঘুরতে হবে সৌন্দর্য পিপাসু মন নিয়ে। এ ছাড়া খাসিয়া, গারো ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাপন এবং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য শিলংকে দিয়ে বাড়তি রূপ।

ওরা যাত্রা পথে মেঘালয়ের সৌন্দর্য লুফে নিলো।ওরা বুক করেছে ক্যাফে চেরাপুঞ্জি। সেখানে ওরা পাঁচটা কটেজ বুক করেছে।একটাতে অথৈ, পিহু,রিধি একসাথে।প্রিয়ান,আহিদ একসাথে।রুদ্রিক, ইহান, সাফাত একসাথে।নীল, অনিক একসাথে।সিয়া আর মারিয়া একসাথে।রুদ্রিক সবাইকে সবার কটেজ দেখিয়ে দিলো।কিন্তু বেঁকে বসল পিহু।ও ফরফর করে বলে,’ এটা হবে না ভাইয়া।আপনি আর অথৈ একটা কটেজে থাকবেন।আলাদা থাকবেন কেন?ঘুরতে এসেছেন।একত্রে নিজেদের মতো টাইম স্পেন্ড করতে না পারলে এতোদূর এসে লাভ কি?’

পিহুর এমন কথায় রুদ্রিক নিজেও লজ্জায় পরে যায়।হ্যা সে আর অথৈ স্বামী স্ত্রী।কিন্তু এখনও অথৈকে নিজের কাছে নিয়ে যায়নি রুদ্রিক।রুদ্রিক গম্ভীর স্বরে বলে,’ কিন্তু পিহু! এটা কিভাবে? ‘
‘ কিভাবে মানে?আপনি আর অথৈ স্বামী স্ত্রী।এখানে এতো আমতা আমতা করার কি আছে?’

অথৈ ফিসফিস করল,’ আরে কি বলছিস এসব?ভাইয়া এখানে আছে।আমার লজ্জা লাগছে।’

পিহু ভ্রু-কুচকে বলে,’ এখানে এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি।আন্টি নিজেই তো তোকে বলেছে।রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে থাকতে।’

রুদ্রিক আর অথৈ দুজনেই অসস্থিতে পরে গিয়েছে।রুদ্রিক অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল।সে রাজি কিনা?অথৈ বিনিময়ে চোখের পলক ফেলে ইশারায় কি যেন বুঝালো।তা দেখে রুদ্রিক লম্বা শ্বাস ফেলল।এদিকে এমন একটা পরিস্থিতি থামানোর জন্যে ইহান আসল রুদ্রিকের কাছে।তার লজ্জা করছে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে।কিন্তু পিহু যা বলছে ঠিক বলছে।ইহান শান্ত কণ্ঠে বলে,’ তুই আর অথৈ এক কটেজে যা।আমি সাফাত আর নীল এক কটেজে থাকবো সমস্যা নেই।’

ইহানের অনুমতি পেয়ে রুদ্রিক আর কি বলবে।তাই রাজি হয়ে গেলো।আর তাছাড়া ও তো সবসময়েই চায় ও যেন অথৈয়ের কাছে থাকে। খুব কাছে।ওরা কটেজের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আরেকটা কটেজ বুক করে নিলো।এইবার রুদ্রিক,অথৈ একসাথে।রিধি আর পিহু।সাফাত আর ইহান।অনিক আর নীল। আহিদ আর প্রিয়ান। সিয়া আর মারিয়া একসাথে।এদিকে অথৈয়ের বুক ধুকপুক করছে।রুদ্রিক আর ও এক কটেজে থাকবে।এটা ভাবলেই কেমন যেন শরীরটা শিরশির করছে।এদিকে যে যার যার কটেজে চলে গিয়েছে।অথৈ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্রিক ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলে,’ চলো।ক্লান্ত লাগছে।ফ্রেস হয়ে একটা ঘুম দেওয়া যাবে।তারপর নাহয় আশপাশ ঘুরে দেখব।’

অথৈ মাথা দুলালো।এরপর কটেজের ভীতরে প্রবেশ করল ওরা।কটেজটা বাহির থেকে দেখতে যেমন সুন্দর।ভীতরটা দেখতে আরও সুন্দর।পুরো কটেজের ডেকোরেশন ক্রিম কালার এবং সাদা কালারের কম্বিনেশনে।রুদ্রিক বলে,’ যাও তুমি আগে ফ্রেস হয়ে আসো।’

অথৈ সম্মতি জানালো।তারপর ব্যাগ থেকে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেলো ফ্রেস হতে।অথৈ ফ্রেস হয়ে বের হলে রুদ্রিক গেলো।এদিকে অথৈয়ের ক্লান্তিতে হাত পা ভেঙ্গে আসছে।তাই গিয়েই বিছানায় শুয়ে পরল।চোখ বন্ধ করে নানান কিছু ভাবতে লাগল।কিভাবে কি করবে?কিভাবে ঘুরবে।এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ লেগে আসল অথৈয়ের।কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো টেরই পেলো না।তার কিছুক্ষণ পর মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে আসল রুদ্রিক।এসে সবার আগে নজর চলে গেলো শুভ্র রাঙা বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা এক ঘুমন্ত পরির দিকে।হাসল রুদ্রিক।ক্লান্ত হয়ে পরেছে মেয়েটা।বেলা একটা বেজে ছিচল্লিশ বাজে।লাঞ্চ করে তবেই না ঘুমোতো।যাক রুদ্রিকও আর ভাবলো না।কারন এখন বাকিরাও বোধহয় ঘুম দিয়েছে।রুদ্রিক সাত পাঁচ না ভেবে নিজেও বিছানায় শুয়ে পরল।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।পাশে ঘুমিয়ে থাকা তার সহধর্মিণীকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।না রুদ্রিক আর নিজেকে বাধা দিলো না।কেন দিবে?মেয়েটা তার স্ত্রী।অধিকার আছে তার।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে টেনে নিলো অথৈকে নিজের বুকের মাঝে।রুদ্রিকের গায়ের উম পেয়ে।অথৈ যেন আরও বিড়াল ছানার ন্যায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পরেছে রুদ্রিকের বুকের মাঝে।অথৈয়ের কান্ডে রুদ্রিক হাসল।তৃপ্তির হাসি। অথৈয়ের কপালে ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে তারপর চোখ বন্ধ করে নিলো।কিছুক্ষণের মাঝেই রদ্রিকও ঘুমিয়ে গিয়েছে।কাল ট্রেনেও ঠিকঠাক ঘুম হয়নি ওর।

এদিকে কটেজে এসেই পিহু অনবরত পায়চারি করছে।ও হতবাক।ওর যে কি হয়েছিলো নিজেও জানে না।আগ বাড়িয়ে ওসব বলার কি ছিলো। কিন্তু ও তো ভুল কিছু বলেনি।রুদ্রিক আর অথৈ হাজবেন্ড ওয়াইফ।ঘুরতে এসে দুজন যদি একসাথে নিজেদের মধ্যে সময় কাটাতে না পারে।তাহলে কিভাবে হয়?যা করেছে বেশ করেছে।রিধি ডেকে উঠল,’ এই পিহু।এমন ধুপধাপ শব্দ করে হাটা বন্ধ কর প্লিজ।তুই যদি না ঘুমাস এটলিস্ট আমাকে ঘুমোতে দে।এমনিতেই কাল ওই লোকটার পাশে বসার কারনে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারিনি।’

লাস্ট কথাটা বিরবির করে বলল রিধি।যা শুনতে পায়নি পিহু।তাই বলে,’ এই কি বললি তুই?’
রিধি থতমত খেয়ে বলে,’ না কিছু না।বলছিলাম যে আয় ঘুমিয়ে নেহ একটু।বিকেলের দিকে তো সবাই ঘুরতে বেড়োবে।’

পিহুও সম্মতি দিলো।আসলেই এতোক্ষণ জার্ণি করায় গা’টা ম্যাজম্যাজ করছে।পিহু চলে গেলো ঘুমোতে।
______________
সাফাতের হাশফাশ লাগছে।অথৈ আর রুদ্রিক একসাথে থাকবে।এটা ওর মানতে কষ্ট হচ্ছে। ও জানে এসব ভাবা পাপ।কিন্তু কি করবে মনকে মানাতে পারছে না।আজ হোক কাল হোক অথৈকে রুদ্রিকের কাছে যেতেই হবে।তবে তা আজ হলেই বা কি?কিন্তু বেহায়া মন মানতেই চাইছে না।সাফাত তাকালো দেখে ইহান ঘুমোচ্ছে।সবাই বোধহয় ঘুমোচ্ছে।শুধু ওর চোখেই ঘুম নেই।বুকের মাঝে তীব্র দহন।সাফাত বের হয়ে আসল কটেজ থেকে।একটু খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে। বুক করে শ্বাস নিতে চাইলো।সাফাত বের হয়ে আশেপাশে হাটতে লাগল।তারপর একটা গাছের নিচে শিকড়ের উপর বসে পরল।দৃষ্টি তার নীবদ্ধ দূরে ওই পাহাড়গুলোর মাঝে।মন চাইছে ওই পাহাড়ে ঘণ জঙ্গলের মাঝে হারিয়ে যেতে।সব কিছু ছেড়েছুড়ে একা একা গহীন বনে ঘুর ঘুর করতে।সাফাত চোখ বন্ধ করে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দিলো।এই যন্ত্রণা, এই বুকের তীব্র দহন সে কাকে দেখাবে? হঠাৎ কর্ণকুহরে একটা মেয়েলি স্বরের রিনিঝিনি কন্ঠ শুনতে পেলো,
‘ এক্সকিউজ মি?শুনছেন?আমাকে একটু হ্যাল্প করবেন?’

#চলবে______________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।