মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব-৪৭+৪৮+৪৯

0
407

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৭
জেনির সাথে ফোনে কথা বলছিলো রিয়ান।হঠাৎ পিছন থেকে চিকন রিনিঝিনি মেয়েলি কণ্ঠস্বর কানে এসে পৌছাতেই চটজলদি পিছনে ফিরে তাকায়।তাকাতেই সিয়ার হাস্যজ্জ্বল চেহারাটা ভেসে উঠে ওর অক্ষিপটে।সিয়াকে সে চিনে।কিন্তু সিয়াও ওকে চিনে।কিন্তু এই মুহূর্তে ওকে চিনছে না।না চিনবারই কথা।কারন রিয়ান মুখে মাস্ক পরে আছে।গায়ে ব্লাক কালারের হুডি জড়ানো।সেই হুডির টুপিটা মাথায় দেওয়া।যার কারনে চোখের অর্ধকখানি ঢেকে আছে।চোখে সানগ্লাসও পরা আছে।তাই ও যে রিয়ান তা কেউ বুঝবে না।সিয়ার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।এদিকে সিয়া রিয়ান তাকাতেই চুপ হয়ে গেলো।প্রচন্ড নার্ভাস লাগছে।লোকটাকে ডেকে তো ফেলল এখন কি বলবে?এদিকে রিয়ান সিয়ার কোনো নডচড় না দেখে এইবার নিজেই বলে উঠে,’ জি বলুন?কিছু বলবেন?’

রিয়ানের কথায় নড়েচড়ে উঠে সিয়া।শুকনো ঢোক গিলে নেয়।জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,’ আসলে হয়েছে কি।ওই আরকি…’

সিয়াকে থামিয়ে দিয়ে রিয়ান বলে উঠল,’ আসলে নকলে পরে বলা যাবে।আগে কিজন্যে আমায় ডেকেছেন সেটা বলুন।’

সিয়া নাক মুখ কুচকে আসতে চাইছে।তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে।এই লোক তো ভারি বজ্জাত।এইভাবে কেউ কারো সাথে কথা বলে?আরে ও তো বলতেই নিয়েছিলো।বেটা খবিশটাই তো থামিয়ে দিলো।মনের কথা মনের মাঝে চেপে রাখল সিয়া।বলল,’ আসলে সকালে আমি রুটব্রিজ যাওয়ার পথে ওই পিচ্ছিল সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পরে যাচ্ছিলাম।আপনিই তো আমাকে হ্যাল্প করলেন।আমাকে এতো বড়ো একটা বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।আপনাকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত আমি দেয়নি।আমি আপনাকে পরে অনেক খুঁজেছিলাম কিন্তু আপনাকে পায়নি।এরজন্যে আমার মনটা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু এখন আবার আপনাকে খুঁজে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তখন আমাকে এতো বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে।’

রিয়ান শান্ত হয়ে সিয়ার পুরোটা কথা শুনল।কেন যেন ওএ সিয়ার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগেনি।বিরক্ত ফিল হয়নি ওর।রিয়ান শান্ত কণ্ঠে বলে,’ ইটস ওকে।আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আপনাকে হ্যাল্প করত।’
‘ কিন্তু এখন হ্যাল্পটা তো আপনি করেছেন।তাই ধন্যবাদটা আপনিই পাওনা।’
‘ হুম!’

রিয়ান আবার অন্যদিকে ঘুরে যেতে নিতেই সিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে,’ আরে আরে?কোথায় যাচ্ছেন আপনি?’

রিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরল।বলল,’ তো?এখন কি আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো?’
‘ না সেটা বলছি না।’
‘ তো?’

সিয়া আমতা আমতা করে বলে উঠল,’ আপনি আমার এতো বড়ো একটা উপকার করেছেন।বিনিময়ে শুধু আমি ধন্যবাদ জানালে বিষয়টা অনেক খারাপ দেখায়।’

রিয়ান বলে,’ সমস্যা নেই।আমি আপনার ধন্যবাদ নিয়েছি।’
‘ এভাবে তো বললে হবে না।’
‘ তাহলে কি বলব?’

সিয়া ঠোঁট প্রসস্থ করে হেসে বলে,’ ওইযে দূরে দেখছেন।এখানের ওই টং দোকানটায় অনেক মজাদার চা পাওয়া যায়।আপনি যদি আমার সাথে এককাপ চা খান এখন।তাহলে বুঝে নিবো আপনি আমার ধন্যবাদ গ্রহন করেছেন।’

কথাগুলো বলতে বলতে সিয়া দূরে থাকা টং দোকানটার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো।রিয়ান সেদিকে একপলক তাকিয়ে আবার সিয়ার দিকে তাকালো।তাকাতেই রিয়ানের বুকের বা-পাশটায় কেমন যেন করে উঠল।চারদিকে আবছা অন্ধকার।এই রিসোর্টার প্রতিটি কোনে কোনে একটা করে বাঁশের খুটি গেড়ে রাখা হয়েছে।সেই বাঁশের খুটির সাথে একটা করে হ্যারিকেন টানানো।সেই হ্যারিকেনের হলদে আলোতে সিয়ার মুখশ্রীটা বড্ড আদুরে দেখালো।ঠোঁটের ভাজের ওই হাসিটুক বড্ড কোমল লাগলো।হৃদয়ে গেঁথে রাখার মতো।ওই হলদে আভায় সিয়ার ডাগরআঁখিজোড়া যেন জ্বলজ্বল করছে।রিয়ানের ঘোর লেগে যাচ্ছে ওই চোখজোড়ার দিকে তাকাতেই।কি হচ্ছে এসব ওর সাথে?আগে তো এমন হয়নি।এ কেমন অনুভূতি।

‘ কি হলো?যাবেন নাহ?’

আচমকা সিয়ার কণ্ঠে ঘোর কাটে রিয়ানের।নিজের বেহায়াপনায় নিজেই অবাক রিয়ান।এভাবে কোনো মেয়ের দিকে ও কোনোদিন তাকায় না।কোনো মেয়ের মুখটা এতো আদুরে লাগেনি ওর কাছে।তবে আজ হঠাৎ এমন কেন হলো?এই সিয়াকে তো ও বহু দেখেছে।যেহেতু সে জেনির ফ্রেন্ড।অহরহ ওদের দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে।তখন তো এইভাবে কোনোদিন সিয়াকে ও খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেনি।তবে আজ কেন?বার বার মনকে একই প্রশ্ন করল রিয়ান।কিন্তু এই ‘ কেন?’ এর উত্তর মিলল নাহ।রিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ এখন তো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।’
‘ আমি মেয়ে মানুষ হয়ে আমার সমস্যা হচ্ছে না।তবে আপনি এমন করছেন কেন?নাকি আমার ধন্যবাদটা এক্সেপ্ট করতে চাইছেন নাহ?’
‘ এমন কিছু না।’
‘ তাহলে চলুন।’

সিয়ার জোড়াজুড়িতে শেষমেষ বাধ্য হয়ে রিয়ান রাজি হলো।আর এমনিতেও কেন যেন ওর মন সম্মতি দিচ্ছিলো না যে ও সিয়াকে নাকচ করে ফিরিয়ে দিবে।সিয়া আর রিয়ান চুপচাপ বেশ খানিকটা দুরুত্ব রেখে পাশাপাশি হাটছে।এমন নিরবতা ভালো লাগছিলো না সিয়ার।তাই সিয়া নিরবতা বিচ্ছিন্ন করে বলে,’ আপনি কি এখানে একা এসেছেন?’

রিয়ান শান্ত চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,’ না,আমি আর আমার বোন এসেছি।’
‘ ওহ! আমরা যেই রিসোর্টে উঠেছি।সেখানেই উঠেছেন তাই নাহ?’
‘ নাহ!’

অবাক হলো সিয়া।প্রশ্ন করল,’ তাহলে এখানে আপনি কি করছিলেন?’
‘ একটা কাজে এসেছিলাম।এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে।সেও নাকি এখানে ঘুরতে এসেছে।তাই ভাবলাম দেখা করে যাই।’

রিয়ানের মিথ্যে কথাটা একটুও ধরতে পারলো না সিয়া।সরল মনের সবটা বিশ্বাস করে নিয়ে বলে,’ ভালো করেছেন।তা এখন কি করবেন?রাত হয়ে আসছে।আপনার বোন তো মেইবি একা আছে।রিসোর্টে ফিরে যাবেন?’

রিয়ান হালকা হেসে বলে,’ না গিয়ে উপায় নেই।একমাত্র বোন আমার।’

মাস্কের আড়ালে যেই হাসি দেখতে পেলো না সিয়া।বলে,’ আপনার বোনকে অনেক আদর করেন তাই নাহ?’
‘ একটা মাত্র বোন আমার আদর তো করবই।ওর জন্যে সব করতে প্রস্তুত।’
‘ খু/নও করতে পারবেন?’

চমকে উঠল রিয়ান।প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলো।সিয়া কি কিছু টের পেলো নাকি?নাহলে এমন একটা কথা কেন বলবে?রিয়ানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে।আবারও কোনো বানোয়াট মিথ্যে বলার আগেই সিয়ার খিলখিল হাসির শব্দে চারদিক মুখোরিত হলো।রিয়ান যেন আটকে গেলো সেই হাসির মাঝে।হুঁশ ফারিয়ে ফেলল।মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেই থাকলো সেই হাসি।এতো সুন্দর কারো হাসি হয় বুঝি?কারো হাসির শব্দের ঝংকারে বুঝি এইভাবে বুক কেঁপে উঠে?সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়?সিয়া হাসি থামালো।তবে এখনও ঠোঁটে মুচঁকি হাসি লেগে আছে।
‘ আমি তো মজা করলাম।ভয় পেয়েছেন নাকি আপনি?নাকি সত্যি সত্যি কাউকে খু/ন করবেন?’

রিয়ান নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিলো।শক্ত কণ্ঠে বলে উঠে,’ ফারদার এমন মজা কারো সাথে করবেন না।এটা ব্যাড ম্যানার্স।’
‘ আচ্ছা সরি।’

নিভিয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলে সিয়া।রিয়ান থমকে গেলো।মেয়েটা কি ওর শক্ত কথার ধাঁচে রাখ করেছে?কষ্ট পেয়েছে? নাহলে এভাবে কথা বলল কেন?কণ্ঠটায় কেমন যেন মন খারাপের আভাস পেলো।রিয়ান ধীর স্বরে বলে উঠে,’ আপনি কি আমার কথায় মন খারাপ করেছেন?’

সিয়া অবাক হলো।পর পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’ আমার মন খারাপ হলেই বা কি?আপনি কি করবেন?’

রিয়ান লম্বা শ্বাস ফেলে বলে,’ আপনার সাথে এককাপ চায়ের জায়গায় দু কাপ চা খেলে,আপনার মন ভালো হবে?’

সিয়া হেসে ফেলল রিয়ানের কথায়।মন ভালো করার উপায় শুনে বেশ মজা পেয়েছে ও।এদিকে সিয়ার হাসি দেখে যেন হৃদয় জুড়িয়ে গেলো রিয়ানের।একটা কথাই মাথায় আসল।মেয়েটা মন খারাপ করলে ওর একদম ভালো লাগে না।একটুও না।মেয়েটা হাসুক।এইভাবেই হাসুক।সবসময় এমনই প্রাণজ্জ্বল থাকুক।এইভাবেই ওদের মাঝে টুকটাক কথা হলো এককাপ চায়ের সাথে।রাত সাড়ে আটটা নাগাত সিয়াকে রিসোর্ট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে রিয়ান চলে যায়।

সিয়া রিয়ানকে বিদায় দিয়ে যখন নিজের কটেজে ফিরে যাবে।তখনই ওর কটেজের সামনে অনিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।অনিককে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো সিয়া।তবে কিছুই বলল না।অনিকের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলো।কিন্তু পারলো না।তার আগেই অনিক শক্ত করে সিয়ার হাত চেপে ধরেছে। এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যে মনে হচ্ছে সিয়ার হাতটা কবজি থেকে ভেঙ্গে যাবে।সিয়া ব্যথাতুর আওয়াজ করে উঠল।চাপা কণ্ঠে বলে,’ কি করছেন আপনি?এইভাবে হাত ধরেছেন কেন?হাত ছাড়ুন।আমার ব্যথা লাগছে। ‘

অনিক পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। সিয়ার দিকে তাকায়।সিয়া অনিকের দিকে তাকাতেই সাথে সাথে ভয় পেয়ে যায়।অনিকের চোখজোড়া অস্বাভাবিকভাবে লাল হয়ে আছে।সেই সাথে ফর্সা মুখটাও রক্তিম আকার ধারন করেছে।হ্যারিকেনের হলদেটে আলোতে তা দেখতে আরও ভয়ানক লাগছে।অনিক শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,’ ছেলেটা কে ছিলো সিয়া?’

অনিকের এহেন শীতল কণ্ঠে সিয়ার ভীতর শুদ্ধ নড়ে উঠে ভয়ে।সিয়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। সিয়ার কোনো জবাব না পেয়ে।অনিক এইবার আর নিজের রাগ সামলাতে পারলো না।ভয়াবহ রেগে চিৎকার করে উঠে,’ ছেলেটা কে ছিলো সিয়া?জাস্ট আন্সার দ্যা কুয়েশ্চেন।কে ছিলো?’

কথাটা বলার সময় অনিক সিয়ার হাতে প্রচন্ড জোড়ে চাপ দিচ্ছিলো।ব্যথায় সিয়ার চোখে পানি চলে এসেছে।সহ্য করতে না পেরে সিয়া সজোড়ে চ’ড় মেরে দেয় অনিক।সিয়ার দেওয়া চ’ড়টা যেন আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে বসল।অনিক প্রচন্ড রেগে সিয়ার গাল চেপে ধরল।অন্য হাতে সিয়ার চুল।এতোটাই চাপ দিয়ে গালগুলো ধরেছে যে মনে হচ্ছে সিয়ার জান বের হয়ে যাবে।সিয়া শব্দ করে কেঁদে উঠল।কিন্তু সেই কান্না অনিকের মন গলাতে পারলো না।আজ রাগে অনিক নিজের দিক বেদিক ভুলে বসেছে।সে চিৎকার করে বলে উঠে,’ আমাকে তোর ভালোলাগে না।আমার সাথে তুই সম্পর্ক রাখবি না।আমাকে তুই বিয়ে করতে পারবি না।তুই নানান বাহানা দিয়ে আমাকে বার বার রিজেক্ট করেছিস।কিন্তু তলেতলে ঠিকই নাগড় জুটিয়ে রেখেছিস।সেই নাগড় এখন এখানেও এসেছে।তার সাথে আবার রাতের অন্ধকারে দেখাও করছিস।আর সবার সামনে তুই ইনোসেন্ট সাজিস।বুঝাস তুই ভাজা মাছ উলটে খেতে জানিস না।আরে তুই আমাকে বলিস আমি প্লেবয়। আমি তোকে ঠকিয়েছি।তোকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করেছি।আরে হ্যা করেছি।তো?আমি যা করেছি সবার সামনে করেছি।আমি যেমন সবাই আমাকে তেমনভাবেই দেখেছে।কিন্তু তুই?তুই কি হ্যা?তুই তো একটা চরিত্রহীনা।রাতের অন্ধকারে প্রেমিকের সাথে গিয়ে নিজের ইজ্জত বিলিয়ে আসিস।আর দিনের আলোতে ভদ্রতার মুখোশ পরে সবার সামনে ঘুরে বেড়াস।আরে তুই আমাকে কি রিজেক্ট করবি?আমিই তোকে রিজেক্ট করলাম।তোর মতো চরিত্রহীনার পিছনে আমি অনিক আর কখনও সাবো না।চরিত্রহী…..’

বাকিটা আর অনিক বলতে পারলো না।তার আগেই চোয়াল বরাবর শক্ত হাতের শক্তিশালী একটা ঘুষি খেলো।ঘুষিটা এতো জোড়েই ছিলো যে অনিক ছিটকে মাটিতে পরে গিয়েছে।সিয়াও পরে যেতে নিয়েছিলো।তার আগেই অথৈ সিয়াকে ধরে ফেলে।অনিনের নাক থেকে গলগল করে রক্ত পরছে।ঠোঁট ফেটে রক্ত পরছে।
একটা ঘুষি মেরে যেন রুদ্রিক শান্তি পেলো না।আবারও তেড়ে গিয়ে অনিকের কলার ধরে ওকে সোজা করে দাঁড় করালো।তারপর কোনোকিছু না ভেবেই আবারও ঘুষি মারলো।আরেক গালে।এরপর অনিকের পেটে।ইচ্ছেমতো মারল।রুদ্রিকের মারের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই নীল আর সাফাত গিয়ে ধরল রুদ্রিককে। আর সাফাত ধরল অনিককে।অনিকের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে।কিন্তু এতেও যেন রাগ কমছে না রুদ্রিকের।রুদ্রিক রাগে চিৎকার করে উঠে,’ তোরা কেনো আটকাচ্ছিস আমায়?কেন?ওর জন্যে?’

আবার অনিকের দিকে তাকিয়ে বলে,’ আরে এই তুই এমন জা/নোয়ার হলি কবে থেকে রে?তুই সিয়াকে এসব কথা বলার সাহস কোথায় পাস?তুই যেই মুখ থেকে সিয়াকে চরিত্র/হীন বলেছিস আমি সেই ঠোঁট ছিড়ে ফেলব।ছাড় আমায়।তোকে বন্ধু ভাবতেও আমার ঘেন্না হচ্ছে।যেই ছেলের মন মানুষিকতা এতো খারাপ সে আমার বন্ধু কখনও হতে পারে না।তাকে আমি আমার বন্ধু মানি না।’

নীল আর ইহান রুদ্রিককে টেনে সরিয়ে আনল।সাফাত অনিককে ধরে নিয়ে আসতে নিলে।অনিক সাফাতের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনে।তারপর নিজেই টলতে টলতে সিয়াদের কটেজের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।

এদিকে সিয়া অনবরত কাঁদছে।আজ যেন ওর বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছে।যাকে সে মনের সবটা দিয়ে ভালোবাসল আজ তার মুখ থেকে এমন সব কথা শুনেছে। যা শোনার আগে সিয়া মরে কেন গেলো না।অনিকের বলা প্রতিটি কথা ওকে ভীতরে ভীতরে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।আজ যেন নিজের প্রতিই ঘৃনা হচ্ছে কেন সে ভালোবাসল অনিককে?কেন এইভাবে নিজের সবটা উজাড় করে পাগলের মতো ভালোবাসল?অথৈ সিয়ার চোখ মুছে দিয়ে বলে,’ আপু কেঁদো না আর। থামো আপু।অসুস্থ হয়ে যাবে আপু।’

সিয়া জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো।অনেক কষ্টে নিজের কষ্টগুলোকে ভীতরে চাপা দিয়ে দিলো।না এইভাবে কাঁদলে চলবে না।আজ যেসব কথা অনিক বলেছে তার মুখ্য জবাব দিতেই হবে।নাহলে নিজের বিবেগের কাছে সিয়া ছোটো হয়ে যাবে।সিয়া নিজের চোখ মুছে নিলো।অথৈ থেকে নিজেকে ছাড়াতে নিলেই অথৈ বলে,’ আপু তুমি…’
‘ আমি ঠিক আছি অথৈ। চিন্তা করো না।’

অথৈ আর কিছু বলল না।সিয়া নিজেকে কঠোর রূপে রূপান্তরিত করল।একপা একপা করে এগিয়ে যায় অনিকের দিকে।অনিকের অবস্থা অনেক খারাপ।সিয়াকে নিজের কাছে এসে দাঁড়াতে দেখে অনিক নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

সিয়া শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,’ আমি রাতের অন্ধকারে কার সাথে দেখা করেছি।কি করেছি! এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে মি.অনিক হাসান?আপনি কে হোন আমাকে প্রশ্ন করার?কেউ না।কেউ নন আপনি আমার।তবে কেন আমাকে চরিত্র/হীন বললেন?কোক সাহসে?বলুন কোন সাহসে?’

সিয়া সজোড়ে চড় মেরে বসল অনিকের গায়ে।
তারপর আবার চিৎকার করে বলে,’আমাকে আপনি রিজেক্ট করেছেন তাই নাহ?আরে আপনি আমার জীবনে এক্সিট করলে তো আমায় রিজেক্ট করবেন?আপনি তো আমার জীবনে কোনো ম্যাটারই করেননা।তবে কোন সাহসে আমাকে এসব বিশ্রি কথাগুলো বললেন?’

আবারও চড় মারলো সিয়া। অনবরত পাঁচ ছয়টা চড় মারলো।অনিক কিছুই বলল না।ও শুধু স্তব্ধ হয়ে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সিয়া আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।কান্নায় ভেঙে পরল।

‘ তোরা সবাই শুনে নেহ এই লোকটাকে…এই লোকটাকে ভালোবেসে আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বড়ো পাপ করেছি।যেই পাপ কোনোদিন মাফ করা যাবে না।ঠিক শুনেছেন মি.অনিক হাসান।আপনাকে ভালোবেসে আমি সবচেয়ে বড়ো পাপ করেছি।আজ নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা হচ্ছে।যে আমি কিনা এমন জঘন্য মন মানুষিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে ভালোবেসেছি।’

সিয়ার কথা একেকটা কথা যেন অনিকের পুরো সত্তাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে যে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুলটা আজ করেছে।

সিয়া দুহাতে চোখ মুছে নিলো।কিন্তু বেহায়া চোখের জল আবারও গাল বেয়ে গড়াতে লাগল।সিয়া ভেজা কণ্ঠে বলে উঠে,’ আজ আমার বন্ধু বান্ধব।আরও যারা আছে।এই আকাশ,বাতাশ সব কিছু সাক্ষি রেখে আমি বললাম।আপনার প্রতি আমার যেই ভালোবাসা মনের মধ্যে আছে তা এখানেই এই মেঘালয়ের মাটিতেই আমি কবর দিয়ে দিলাম।আজ থেকে আমার মনের মধ্যে অনিক হাসান নামক মানুষটির জন্যে কোনো ভালোবাসা নেই।আজ আমি নিজ হাতে তা মাটি চাপা দিয়ে দিলাম।তবুও যদি এই বেহায়া মন আপনাকে আবারও কোনোদিন স্মরণ করে।তাহলে আজকের ঘটনা মনে করব আমি।আর সেদিন নিজেকেই নিজে শেষ করে দিবো।এটা আজ আমি ওয়াদা করে গেলাম।’

কথাগুলো বলেই সিয়া কাঁদতে কাঁদতে নিজের কটেজে চলে গেলো। অথৈ,রিধি,পিহু,মারিয়া ওরা সবাই সিয়ার পিছু পিছু চলে গেলো।

এদিকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে অনিক।কি করে ফেলল সে আজ? এ কি করে ফেলল?এইভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এতোবড়ো কষ্ট,আঘাত কিভাবে দিয়ে ফেলল?এইজন্যেই বলে রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।মানুষকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে দেয়।তাদের দ্বারা এমন সব পাপকার্য করিয়ে ফেলে যা কোনোদিন জীবন থেকে মোছা যাবে না।

ইহান অনিকের কাছে এসে বলে,’ তুই তো আমাদের বন্ধু?তাই না রে অনিক?তাহলে তোর মন এমন কুৎসিত কেন রে?তুই নিজের ভীতরে এসব পুষে আছিস? তুই যে আমার বন্ধু ভাবতেই আমার ঘৃনা হচ্ছে।’

নীল বলে,’ মেয়েটা তোকে প্রচন্ড ভালোবেসেছিলো অনিক।আজ তুই সেই ভালোবাসা একেবারে নিজ হাতে গলা টিপে নিঃশেষ করে দিলি।কিভাবে পারলি অনিক?একবারও তোর বুক কাঁপল নাহ?ওইসব ভাষা উচ্চারণ করতে একবারও বিবেকে নাড়া দিলো নাহ?এতোটা খারাপ তুই কবে হলি?’

রুদ্রিক রাগি গলায় বলে,’ তোরা কাকে কি বলছিস?ওকে ওকে এসব বলে লাভ নেই।যেই মানুষটার হৃদয় নোংরামো চিন্তাভাবমায় ঠাসা।সেই মানুষটার এসব কথাতে কোনোকিছু যায় আসবে না।আর কিসের বন্ধু?ও কোনোদিন আমাদের বন্ধু ভেবেছিলো?যে ও আমাদের কথা চিন্তা করবে?কিসের ভালোবাসার কথা বলে ও?ও সিয়াকে কোনোদিনও ভালোবাসেনি।যদি ভালোইবাসত।তাহলে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে এমন জঘন্য/নোংরা কথা বলতে পারতো নাহ।’

এই বলে রুদ্রিক চলে গেলো নিজের কটেজে।নীল আর ইহানও চলে গেলো।অনিক একা রয়ে গেলো।একটু পর সাফাত আসলো।ও-ও চলে গিয়েছিলো।এখন আবার এসেছে।সাফাত এসে অনিকের পাশে এসে দাঁড়ালো।অনি তা দেখে ভাঙা গলায় বলে,’ তুই..তুই কেন এসে..এসেছিস?’

সাফাত কিছু না বলে অনিককে ধরে একটা বেঞ্চে নিয়ে বসালো।এখানে একেক জায়গায় বেঞ্চ বানানো।যেখানে মানুষ বসে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য লুফে নেয়।সাফাত ফার্স্টএইড বক্স বাহির করল।তুলোতে হেক্সোসেল লাগিয়ে অনিকের আঘাতে চেপে ধরল।তা পরিষ্কার করতে লাগল।অনিক টু শব্দ করল না।আজ এই আঘাতগুলোতে বিন্দু পরিমান ব্যথা অনুভব করছে না।ও যা করেছে এর বিনিময়ে তা কমই হয়েছে।অনিক আবার বলে,’ চ..চলে যাহ সা..সাফাত।এসবের দর..দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।’

সাফাত কিছুই বলল না।চুপচাপ অনিকের ব্যথাযুক্ত স্থানগুলো পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর অনিককে জোড় করে একটা ব্যথার ঔষুধ খাইয়ে দিলো।কাজ শেষ করে সাফাত উঠে দাঁড়ালো।অত্যন্ত শান্ত স্বরে বলে উঠল,’ রাগের কারণে মানুষ শুধু তার জীবন নষ্ট করে না, অন্য মানুষের হৃদয়েও আঘাত করে।আর আজ তা তুই করেছিস।এরপর সিয়ার আশেপাশেও যেন তোকে না দেখি।সিয়াকে পাবার আশা চিরতরে ত্যাগ করে দে।তাহলে তোর জন্যেই ভালো হবে।কথাটা আমলে নিয়ে নিস।’

একটু থেমে আবার বলল,’ রাত হচ্ছে তোর কটেজে ফিরে যা।’

সাফাত হনহন করে চলে গেলো।সাফাত যেতেই অনিক আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।আজ নিজ হাতে সব শেষ করে দিলো না।বন্ধুত্ব, ভালোবাসা সব হারিয়ে ফেলল।কেউ তাকে চায়না।সবাই তাকে এখন ঘৃনা করে।কি করবে অনিক?ঠিক কি করলে আগের মতো সব ঠিক হবে?মনের ভীতর থেকে আওয়াজ আসল।
‘ আর কিছু ঠিক হবে না অনিক।কিচ্ছু ঠিক হবে না।তুই হ্ব্রে গেছিস অনিক।গেরে গেছিস।’

অনিক দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল।বলে উঠল,
‘ আ’ম সরি সিয়া। আ’ম রেয়েলি ভেরি সরি।আমি এমনটা করতে চায়নি সিয়া।করতে চায়নি।আ’ম সরি এভ্রিওয়ান।সরিইইইইইই।’

#চলবে_____________________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৮
সেদিনের ঘটনার পরেরদিনই সবাই বাংলাদেশ ব্যাক করল।ওমন মনমানুষিকতা নিয়ে কি আর ঘুরাঘুরি করা যায়?তাই চলে যাবার সিদ্ধান্তটাই সঠিক মনে করল ওরা।বাংলাদেশে আসতেই রুদ্রিকদের যেন দম ফেলবার সময় নেই।সামনে অনার্স ফাইনাল ইয়ার এক্সাম।তাই পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোযোগি হয়ে উঠল ওরা।
অনিক আর কখনও সিয়ার কাছে যায়নি ভালোবাসার আবদার নিয়ে।সিয়া তো অনিককে এখন দেখতেই পারে না।সেদিনের সেই কথাগুলো খুব বাজেভাবে আঘাত করেছে ওকে।যা সিয়া কোনোদিন ভুলবে না।
তবে সিয়ার সাথে এখন সেদিনের মাস্ক ম্যানের সাথে প্রায়ই কথা হয়।আজ পর্যন্ত লোকটার চেহারা দেখতে পায়নি সিয়া।সেদিন চা খেতে নিয়েও লোকটা দোকান থেকে সরে অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছিলো।আর মাথার হুডিটা এতোটাই বড়ো ছিলো যে মুখের অর্ধেকটাই ঘোরা ছিলো তাই দেখেনি।
এদিকে রিয়ান দিন যতো যাচ্ছিলো ততোই আসক্ত হয়ে পরছিলো সিয়ার প্রতি।সেদিনের পর থেকে সিয়াকে সে কোনোভাবেই ভুলতে পারেনি।সিয়ার মায়াময় চেহারাটা ওকে সর্বদা জ্বালাতন করে বেড়ায়।কি হচ্ছে ওর সাথে?ও তো আগে এমন ছিলো নাহ?এখন রিয়ান অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।হ্যা সে মানছে একটা সময় সে প্রচুর খারাপ ছিলো।কিন্তু মেয়েদের সাথে কখনও অসভ্যতামো করেনি। মেয়েদের সাথে অহেতুক কথাও বলত না।হ্যা সে অথৈর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলো তা নিত্যন্তই সে রুদ্রিককে দেখতে পারে না এইজন্যে।কিন্তু রিয়ান এতোটাও খারাপ না।সে কাউকে খু*ন করতো না।সে তো নিত্যন্তই জেনির জেদের কাছে হার মেনে সে মেঘালয় গিয়েছিলো।কিন্তু ওর নিয়ত ছিলো অথৈকে কিডন্যাপ করত।এরপর রুদ্রিককে ব্লাকমেইল করতো।ভয় দেখিয়ে জেনিকে বিয়ে করার জন্যে জোড় করত।কিন্তু এখন আর এসব নিয়ত ওর নেই।সে ভালো হতে চায়।এতোদিনে বুঝেছে জোড় করে কখনও ভালোবাসা আদায় করা যায় না।আর ভালোবাসার মানুষদের আলাদা করা যায় না।যতোই চেষ্টা করুক।

যেদিন বাংলাদেশে আসল।জেনি তখন রাগে নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।সে অথৈকে মারার জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছিলো।রিয়ান ওকে বুঝিয়েছে।নিজের সবটা দিয়ে।যে জোড় করে কোনো কিছু পাওয়া যায় না।রুদ্রিক যদি ওর ভাগ্য থাকতো তাহলে রুদ্রিক ওরই হতো যেকোন মূল্যে।কিন্তু এখন আর রুদ্রিক আর ওর হবে না।জেনি সেদিন অনেক কেঁদেছিলো।তারপর রিয়ানকে বলে সে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।রিয়ান বোনের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।এখান থেকে চলে গেলে জেনির মন ভালো হবে।সব পিছুটান ছেড়ে দিবে।তাই কয়েকদিনের মধ্যেই জেনিকে লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে অনিকের অবস্থা দিন দিন অনেক খারাপ হচ্ছে।ও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেছে।তাই রুদ্রিক বাকিদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।অনিকের সাথে সব ঠিক করে নিবে।নাহলে একাকিত্ব অনিককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।এভাবে ছেলেটা নিজের জীবন নষ্ট করে দিলে হবে না।তাই সিদ্ধান্ত নিলো অনিকের সাথে খোলাখুলি কথা বলার।

তাই পাঁচ বন্ধু আজ এক জায়গায় হয়েছে।মারিয়াকে বলেছে সিয়াকে নিয়ে আসতে এখানে।আজ দুজনকে মুখোমুখিভাবে বসিয়ে এই বিষয়ে একটা হেনস্তা করতে হবে।নীল আর ইহান অনিককে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে।
পাঁচজন এক জায়গায় হতেই অনিক প্রশ্ন করে,
‘ তোরা আমাকে এখানে এনেছিস ক্যান?’

রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ কি চাচ্ছিস তুই?কি হাল করেছিস নিজের?এমন ছন্নছাড়া হয়ে আছিস কেন?’

অনিক তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
‘ যেখানে আমার গোটা জীবনটাই ছন্নছাড়া। সেখানে আমার বাহিরের দিকটা ছন্নছাড়া দেখে তোরা এমন রিয়েক্ট করছিস কেন?’

রুদ্রিক বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ ফাউল কথা বলিস না অনিক।তুই আন্টি আংকেলের একমাত্র সন্তান।এটা ভুলে যাস না।তোর কিছু হলে উনাদের কি হবে একবার ভেবেছিস?’

অনিক কোনো শব্দ করল নাহ।রুদ্রিক ফের বলে,
‘ তুই মনে করছিস এমন দেবদাস হয়ে ঘুরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে?তুই সিয়াকে সেদিন যা নয় তাই বলেছিস।একবার তো মেয়েটার কথা শুনে দেখতি।ও কি বলে?হ্যা ও তো তোর উপর অভিমান করে আছে।তোকে হয়তো প্রথমে বলতে চাইতো না।কিন্তু ভুলে যাস না।এই মেয়েটাই তোকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে।তাই তোর কাছে আবার কিছু লুকোচুরিও করত না।’

অনিক ছলছল চোখে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।ধরা গলায় বলে,
‘ আমি সেদিন অনেক বড়ো পাপ করে ফেলেছি দোস্ত।আমাকে এর বিনিময়ে যেই শাস্তি দিবি সব মেনে নিবো।তবু দোস্ত আমার সিয়াকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না দোস্ত। আমি এই কয়টাদিন যাবত যেই মরন যন্ত্রণা ভোগ করছি।তা বলে বোঝানো যাবে না।আমার নিঃশ্বাস আটকে যায়। আমাকে বাঁচা রুদ্রিক।আমার সিয়াকে আমার কাছে এনে দে।আমি দরকার পরলে ওর পা ধরে ক্ষমা চাইবো।ও যা বলবে তাই করবো।তারপরেও আমার কাছে ফিরে আসতে বল।’

রুদ্রিক দ্রুত পায়ে এসে অনিককে জড়িয়ে ধরল।অনিকের এই হাহাকার দেখে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।ও একটু হলেও বুঝতে পারছে অনিকের কষ্টটা।রুদ্রিক বলে উঠে,
‘ যাকে এতোটা ভালোবাসিস তাকে কেন সেদিন ওমন কথাগুলো বললি অনিক।একটা মেয়ের কাছে চরিত্রহীনা উপাধিটা শোনা যে কতোটা যন্ত্রণাদায়ক তা বলে বোঝানো যাবে না।সিয়া আমাকে সব বলেছে।সেদিন রুটব্রিজ যাওয়ার পথে ও পরে যেতে নিয়েছিলো নাহ?তখন একটা লোক ওকে সাহায্য করেছিলো।লোকটাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যে লোকটার সাথে এক কাপ চা খেয়েছিলো।ব্যস এইটুকুই।আর শোন অনিক। একটা সম্পর্ক কখনও বিশ্বাস ছাড়া টিকিয়ে রাখা যায় না।বিশ্বাস হলো একটা সম্পর্কের মেইন খুটি।আর তুই সেই বিশ্বাসটা করতে পারিসনি।’

অনিক কান্না করে দিলো।
‘ আমি জানি রে আমি ওকে অবিশ্বাস করে সবচেয়ে বড়ো পাপ করেছি।আমি সেই পাপের প্রায়েশ্চিত্ত যেকোনো মূল্যে করতে রাজি আছি।ওকে একবার বলনা আমার কাছে ফিরে আসতে।আমি সত্যি বলছি আমি অনেক ভালো হয়ে যাবো।এতোটা ভালো হবো যে ও আর কোনো অভিযোগ করতে পারবে না।ও যেভাবে চাইবে।যেমনভাবে চাইবে।আমি সেইভাবেই সব করব।তবুও ওকে আমার হতে বল।আমি ওকে হারাতে পারবো না।ও তো আমার প্রাণ বল।নিজের প্রাণকে হারিয়ে কি কেউ কখনও বেঁচে থাকতে পারে?’

ইহান অনিকের কাধে হাত রেখে বলে,’ কাঁদিস না দোস্ত।সিয়া তোর ভাগ্যে লিখা থাকলে ও তোরই হবে।আমরা ওকে এখানে ডেকেছি।মারিয়া ওকে নিয়ে এই আসল বলে।তুই তোর সবটা দিয়ে চেষ্টা করিস।ওকে বোঝাস যে তুই সেদিন যা করেছিস আর বলেছিস।রাগের মাথায় বলে ফেলেছিস।’

অনিক চোখ মুছে বলে,’ ও এখানে আসবে?’

ইহান মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।ওরা সবাই অপেক্ষা করতে লাগল।এর মধ্যে সবাই অনিককে নানান কথা বলে ওর মনোবল শক্ত করল।একটু পরেই দেখা গেলো সিয়া আর মারিয়া আসছে।সিয়া মাথা নিচু করে আছে।অনিক একধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটাকে সেদিন কতো কষ্টটাই না ও দিয়েছে।কতো খারাপ কথা বলেছে।ওই মেয়েটা ওকে সবটা উজাড় করেই ভালোবাসল।কিন্তু এর বিনিময়ে ওর কাছ থেকে শুধু অপমান আর লাঞ্চনাই পেয়েছে।আজ কিভাবে সিয়ার দিকে তাকাবে অনিক?কিভাবে সিয়ার চোখে চোখ মিলাবে?
মারিয়া সিয়াকে নিয়ে সবার সামনে দাঁড়ালো।সিয়া একপলক অনিককে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।অনিক তা দেখে কষ্ট পেলো।সিয়া শক্ত কণ্ঠে বলে,’ আমাকে এখানে কেন এনেছিস মারিয়া?’

রুদ্রিক সিয়ার মাথায় হাত রাখল।নরম গলায় বলে,
‘ সিয়া দেখ আমার কথা মন দিয়ে শোন।সব পরিস্থিতি সবসময় এক থাকে না।ভবিষ্যতে কি হবে? না হবে?কেউ-ই আমরা বলতে পারিনা।সেদিন অনিক যা করেছে রাগের মাথায় করেছে।আমি বলছিনা তুই খারাপ।কিন্তু একবার অনিকের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাব।এমনভাবে রাতের অন্ধকারে যদি অনিককে তুই অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখতি তোর কি খারাপ লাগতো নাহ?রাগ হতো না?’

সিয়া কোনো ভণিতা করল না।সোজাসাপটা বলে ফেলল,
‘ হ্যা আমার খারাপ লাগতো।রাগ হতো প্রচুর।কিন্তু তাও আমি নিজেকে সামলে নিতাম।আগে ওর কাছ থেকে পুরো বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাইতাম।কিন্তু ও কি তা করেছে?’

সাফাত বলল,’ হ্যা এটা অনিকের অনেক বড়ো একটা ভুল।যে অনিক তোকে আগে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।কিন্তু সিয়া দুনিয়াতে সবাই এক হয় না।হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন এক হয় না।তেমন সব মানুষের রাগ,জেদ,আবেগ,ভালোবাসা এক হয় না।তুই নিজেও এটা বুঝতে পারছিস যে অনিক তোকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কি মানিস কিনা মানিস না সেটা বল?’

সিয়া চুপ করে রইলো।কি বলবে সে আর?হ্যা সে জানে অনিক বদলে গেছে।আগের সেই অনিকের সাথে এই অনিকের মধ্যে কোনো মিল নেই। আগের অনিক ওকে ভালোবাসতো না।আর এই অনিক ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে।কিন্তু অনিকের করা ব্যবহারগুলোও এ ভুলতে পারছে না।সিয়া কি করবে? কোন দিক দিশা পাচ্ছে না।

নীল বলে,’ সিয়া ভালোবাসা জীবনে একবার আসে বার বার না।তবুও তোকে জোড় করবো না।তোর মন যা চায়।তুই সেটাই কর।’

সিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগল।হঠাৎ অনিক এসে সিয়ার হাতদুটো ওর হাতের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে।ধরা গলায় বলে উঠে,
‘ সিয়া প্লিজ সিয়া আমাকে ক্ষমা করে দে।আমি এইবার সত্যি সত্যি বলছি আর কোনোদিন তোকে কষ্ট দিবো না।কোনোদিন না।আমাকে একবার মাফ করে দে সিয়া।আমি তোকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখব।অনেক অনেক ভালোবাসব।যে আমার ভালোবাসায় তুই কোনো খাদ খুঁজে পাবি না সিয়া।আমাকে ফিরিয়ে দিস না সিয়া।আমি তাহলে পাগল হয়ে যাবো সিয়া।তোকে ছাড়া আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে সিয়া।’

অনিকের একেকটা বাক্যে যেন সিয়াকে হারিয়ে ফেলার তীব্র হাহাকার উপলব্ধি করতে পারছে সিয়া।অনিকের এই অবস্থা ও সহ্য করতে পারছে না। হাজার হোক সত্যি তো এটাই যে ও অনিককে ভালোবাসে।সেই ভালোবাসার মানুষটার এমন বিধ্বস্ত রূপ কিভাবে সহ্য করবে?কিন্তু চাইলেও অনিককে জড়িয়ে ধরে বলতে পারছে না।যে ‘ অনিক তুমি চিন্তা করো না।আমি আছি তো।আমি সবময় তোমার পাশে থাকব।’ অনিকের কাছে এগিয়ে যেতে নিলেই অনিকের বলা সেদিনের ‘ চরিত্রহীন!’ উপাধিটা বার বার কানে বাজে।বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই একটা কারন।

চরিত্রহীন এই একটা শব্দ বার বার কানে বাজতে থাকে সিয়ার।সিয়ার সারা শরীর কেঁপে উঠে।ফট করে অনিকের হাতের থেকে হাতদুটো ছাড়িয়ে নেয়। তারপর পিছু ফিরে যায়।মুখে হাত চেপে কান্না করে দেয়।এদিকে সিয়ার এইভাবে ঘুরে যাওয়ায় যেন অনিকের কলিজায় কেউ ছুরি দ্বারা আঘাত করে দিলো।

অনিক পাগলের মতো বলতে লাগে।
‘ সিয়া আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিস না এভাবে।আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি।আমাকে এইভাবে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিস না।আমি মরে যাবো সিয়া।আমি মরে…..!’

হঠাৎ অনিকের কথা থেমে যায়।সাথে সকলের চিৎকার ভেসে এসে কানে লাগল সিয়ার।

‘ অনিককককককককককক!’

#চলবে________________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৯
হাসপাতালের করিডোরে কেউ বসে আছে।কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।কেউ যেন বুঝতেই পারল না।তখন কথা বলার মাঝে অনিক হঠাৎ করেই বুকে হাত চেপে মাটিতে বসে পরে।সবাই রুদ্রিক আর ইহান ওকে ধরতেই রুদ্রিকের কোলে অনিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তৎক্ষনাত অনিককে নিয়ে ওরা হাসপাতালে চলে আসে।ইহান অনিকের বাবা মা’কে ছেলের এই অবস্থা সম্পর্কে জানালে অনিকের বাবা দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন।অনিকের মা তো অনিকের মা তো ছেলের অবস্থা শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।তাই তিনি আসতে পারেননি।এদিকে সিয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।দৃষ্টি তার মেঝেতে নিবদ্ধ।কি হলো এটা?কেন হলো?ও তো এমনটা চায়নি।তবে ওর কারনেই আজ অনিকের এই অবস্থা?হ্যা ওর জন্যেই তো।ওই তো আজ অনিকের এই অবস্থার জন্যে অপরাধি।এতোটা কঠোর ও না হলেও পারতো।অনিক ওর কাছে বার বার করে ক্ষমা চেয়েছে।তাও নিষ্ঠুর ও মনকে পাথরে পরিনত করে রেখেছিলো।নাহলে অনিকের বলা প্রতিটা কথা এতোটাই করুন ছিলো যে যে কোনো মানুষের হৃদয় গলে যাবে।ও এতো পাষাণ হলো কি করে?যেই মানুষটাকে নিজের সবটা দিয়ে ও ভালোবাসে।তাকে এতোটা কষ্ট দিলো কি করে?অনিকের ওই অবস্থার কথা চিন্তা করতেই যেন সিয়ার নিশ্বাস আটকে আসছে।কিন্তু ওই বা কি করত?একটা মেয়ের কাছে তার আত্মসম্মানবোধ যে কি তা বলে বোঝানো সম্ভব না।সিয়া যে ওদের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টা করেনি।এই দোষ তো কেউ দিতে পারবে না। কোনোদিন পারবে না।সিয়া কতোবার অনিকের কাছে গিয়েছিলো।পাগলের মতো বলেছিলো অনিককে ওর কাছে ফিরে আসতে।আজ অনিক যেভাবে বলেছিলো ঠিক সেইভাবেই বলেছিলো।কিন্তু অনিক কি করেছিলো?তার প্রেমিকাকে নিয়ে ওকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিলো।তারপরেও সিয়া সব ভুলে ওর কাছে গিয়েছিলো।অনিক যা বলবে তাই করতে চেয়েছিলো।অনিককে যখন জড়িয়ে ধরে ওর ভালোবাসার কথা বলছিলো।ওর কাছে ফিরে আসার কথা বলছিলো।তখন অনিক ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো।সিয়া অনেক ব্যথা পেয়েছিলো। ওর হাত ছুলে গিয়ে রক্ত ঝরছিলো।তাও অনিক ফিরিয়েও তাকায়নি সেদিন।এইতো অপমান আর লাঞ্চনা সহ্য করার পর এই দুনিয়াতে কি কোনো মেয়ে আছে?যে আবার ফিরে যেতো অনিকের কাছে?নিজের আত্মসম্মানবোধ খুইয়ে আবার সম্পর্কে জড়াতে?অন্যসব মেয়ে হলে সেদিনের অপমানের পর আত্মহত্যা করত।ও নিজেও করেছিলো।কিন্তু ওর ভাগ্যে হয়তো অন্যকিছুই লিখা ছিলো।তাই তো বেঁচে ফিরে এসেছিলো।ওর আত্মহত্যার কথা শুনেও অনিক একবারও আসেনি ওকে দেখতে।এই এতোসব কিছু কি একনিমিষেই ভুলে যাওয়া যায়?তাও তো ভুলতে চেয়েছিলো।কিন্তু সেদিন মেঘালয়ে অনিক আবারও ওকে অপমান করে।
সিয়া আর কি করবে?সিয়া এখন মন চাচ্ছে মরে যেতে।ও মরে গেলেই বোধহয় এইসব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে।ওএ ভাগ্যটাই খারাপ।নাহলে দুনিয়াতে ওর সাথেই কেন এসব হবে?আর সহ্য করতে পারল না সিয়া।দুহাতে মুখ ঢেকে বুক ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙে পরল।সিয়া এহেন কান্নায় যেন সবাই চমকে উঠল।সে কি আর্তনাদ সিয়ার।রুদ্রিক দ্রুত সিয়ার কাছে যায়।সিয়াকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।রুদ্রিক সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’ হুশ,কাঁদছিস কেন?একদম কাঁদবি না।অনিক ঠিক হয়ে যাবে।কিচ্ছু হবে না ওর।’

সিয়া হাউমাউ করে কেঁদে বলছে,’ কেন রুদ্রিক?কেন আমার সাথেই এমন হয়?আমি তো কারও ক্ষতি করিনি কোনোদিন।তবে আমার সাথেই কেন?অনিক আমাকে চায়নি।আমি এতোবার ভালোবাসার দোহাই দিয়ে ওর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও তো আমার ভালোবাসার কোনো দাম দেয়নি।তবে আজ কেন ও আবার আমার কাছে ভালোবাসার কথা বলতে আসল।কি জন্যে আসল?আজ কেন নিজেকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছে।আমি তো সরে এসেছিলাম রুদ্রিক।ও যাতে সুখে থাকে তাই সরে গিয়েছিলাম ওর জীবন থেকে।তুই তো জানিস বল?তুই তো জানিস ওর জন্যে আমি কি না কি করেছি।নিজেকে কতোটা ছ্যাছড়া বানিয়ে দিয়েছিলাম।শুধুমাত্র ওকে ভালোবেসে।তবে আজ কেন ও নিজের এই অবস্থা বানালো।’

রুদ্রিক বলল,’ তোর কোনো দোষ নেই।তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস।তাই নিজেকে একটুও দোষারোপ করিস না।।তবে আমি শুধু একটা কথাই বলব।সেদিন যেই অনিক তোর ভালোবাসাকে অপমান করে তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।সেই অনিক আর নেই।অনিক বদলে গেছে।তুই যেমনটা চাইতি।ঠিক তেমনটাই আজকের অনিক।যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।যেমনটা তুই ভালোবাসিস অনিককে।আজ দেখ তোর প্রত্যাখান ও সহ্য করতে না পেরে হার্ট স্ট্রোক করেছে।তাহলে বুঝ ঠিক কতোটা ভালোবাসে তোকে ও।কিন্তু তবুও আমরা কেউ তোকে কোনো কিছুতে জোড় করব না।তোর মন যা চায় তুই তাই করবি।তোর সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নিবো।কারন জোড় করে কিছু হয় না।দেখা যাবে আমাদের কথায় আর জোড়াজুড়িতে তুই অনিককে মেনে নিলি।কিন্তু মন থেকে তো আর মানতে পারলি না।তা দিয়ে কি হবে?দিনশেষে তোরা দুজনের একজনও শান্তিতে থাকতে পারবি না।তাই বলব তোর মন যা চায় তুই তাই কর।আমরা আগেও ছিলাম তোদের পাশে,এখনও আছি আর ভবিষত্যেও থাকব।’

সিয়া কিছুই বলছে না শুধু কাঁদছে।এমন সময় রুদ্রিকের মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল।রুদ্রিক মারিয়াকে চোখের ইশারায় সিয়াকে সামলাতে বলল।রুদ্রিক উঠে যেতেই মারিয়া এসে আগলে নিলো সিয়াকে।
রুদ্রিক একপলক সিয়ার দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করল।অথৈ ফোন করেছে।অপাশ থেকে অথৈ সালাম দিলো।রুদ্রিকও সালামের জবাব নিলো।রুদ্রিকের গলার কণ্ঠটা কেমন যেন শোনালো অথৈয়ের কাছে।অথৈ প্রশ্ন করল,’ হ্যালো?শুনছেন?আজ তো অনিক ভাইয়া আর সিয়া আপুকে প্যাচ-আপ করানোর উদ্দেশ্যে আপনারা গিয়েছিলেন।তো কাজটা কি হয়েছে?’

রুদ্রিক চুপ করে থাকল।কি জবাব দিবে ও?রুদ্রিকের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে।অথৈ ফের বলে,’ কি হলো বলছেন না কেন?’

রুদ্রিক এইবার আর চুপ রইলো না।অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,’ অনিক হার্ট স্ট্রোক করে করেছে।ওকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে এসেছি।ডাক্তার এখনও বের হয়নি।তাই আপাততো কিছু বলতে পারছি না।’

রুদ্রিক যে এহেন একটা কথা বলবে অথৈ ভাবতেও পারেনি।ও যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারলো না।অথৈ কাঁপা গলায় বলে উঠে,’ কি বলছেন এসব?অনিক ভাইয়া….’

অথৈয়ের যেন গলা ধরে আসল।খবরটা শুনে ওর নিজেরই তো কতো কষ্ট হচ্ছে।না জানি রুদ্রিক ঠিক কতোটা কষ্টে আছে।অথৈ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,’ কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন?ঠিকানা দিন।আমি আসছি।’

রুদ্রিক অথৈয়ের কথা শুনে রেগে গেলো।পাগল নাকি এই মেয়ে?এখন বাজে রাত নয়টা।অথৈদের বাসা থেকে হাসপাতাল বেশ দূরে।আসতে আসতে কমপক্ষে চল্লিশ মিনিট তো লাগবেই।রুদ্রিক ধমকে উঠল,’ মাথা ঠিক আছে তোমার?এতো রাতে তোমার আসা লাগবে না।রাত নয়টা বাজে।কতো বড়ো সাহস এতোদূরে একা আসবে।’

অথৈ বলে,’ একা আসব না তো।সত্যি বলছি।আহিদকে নিয়ে আসব।প্রমিস। প্লিজ না করবেন না। আমি আসতে চাই।’

রুদ্রিক হার মানলো শেষমেষ অথৈয়ের জোড়াজুড়িতে।রুদ্রিকের অনুমতি পেয়ে অথৈ দ্রুত আহিদকে ফোন করে।বিষয়টা বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলে।আহিদের মাধ্যমে পিহুও জেনে যায়। পিহুও আসতে চায়।আহিদ ওকে বারণ করে।এমনিতেই হাসপাতালে অনেক মানুষ।আর ভীড় করা ঠিক হবে না।পিহুও বুঝে তাই ও আর গেলো না।তারপর আহিদ দ্রুতই অথৈকে নিতে চলে আসে।অথৈ পিক করে নিয়ে ঝটপট অথৈকে নিয়ে চলে আসে।অথৈ রুদ্রিকের থেকে সব আগেই জেনে নিয়েছিলো।অনিককে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।কয়তালায়।তাই আর সমস্যা হয়নি।অথৈ আর আহিদ গিয়ে দেখে সেখানে রুদ্রিকের বন্ধুমহলের সবাই আছে।অথৈ আর আহিদ এগিয়ে যায়।সিয়াকে কাঁদতে দেখে অথৈয়ের কান্না পায়।ও সিয়ার কাছে গিয়ে।সিয়ার পায়ের কাছে বসে পরে। ভেজা কণ্ঠে বলে,’ আপু?কেঁদো না প্লিজ।অনিক ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তুমি এভাবে কাঁদলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে অনিক ভাইয়া অনেক কষ্ট পাবে।প্লিজ আর কেঁদো না।’

সিয়া অথৈ কণ্ঠ শুনে। সোজা হয়ে বসে।অথৈ গালে হাত রেখে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,’ তুমি এতো রাতে আসতে গেলে কেন?’

অথৈ সিয়ার হাত ধরে বলে,’ আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি আপু।আমার কথা বাদ দেও।তুমি আর কেঁদো না প্লিজ।আমারও কিন্তু কান্না পাচ্ছে আপু।প্লিজ আপু।’

অথৈ সিয়ার ভেজা দু চোখ দুহাতে মুছে দিলো।সিয়ার যেন হৃদয় জুড়িয়ে গেলো।অথৈকে যেন নিজের ছোটো বোন মনে হচ্ছে।যে বড়ো বোনের কান্না দেখে বলছে,’ আপু তুমি কাঁদলে, আমিও কাঁদব।’

সিয়া মাথা দোলালো।
‘ আচ্ছা কাঁদব না।’

ওদের আলাপের মাঝেই ডাক্তার বেরিয়ে আসে। সিয়া দৌড়ে যায় ডাক্তারের কাছে।অনিকের বাবা অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন,’ ডাক্তার সাহেব।আমার ছেলে?আমার ছেলে কেমন আছে?বলুন না ডাক্তার সাহেব?’

ডাক্তার সাহেব শান্ত কণ্ঠে বলে,’ একটুর জন্যে তিনি অনেক বড়ো ক্ষতির থেকে বেঁচে ফিরেছেন।তিনি কিন্তু অনেক গুরুতরভাবে হার্ট স্ট্রোক করেছেন।যা অতিরিক্ত মানুষিক চাপের কারনে হয়ে থাকে।তিনি দীর্ঘদিন যাবত মানুষিক অশান্তিতে ভুগছেন।কোনো কিছু নিয়ে প্রচন্ড ডিপ্রেসড ছিলেন।আর সেই কারনেই আজ উনার এই অবস্থা।আপনারা তাকে সঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে এনেছেন।তাই উনি এখন ঠিক আছে।তবে উনাকে এই মানুষিক চাপ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।এমন চলতে থাকলে উনি আবারও হার্ট স্ট্রোক করতে পারেন।যতোটা সম্ভব উনাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।আশা করি তাহলে আর সমস্যা হবে না।আপাততো তিনি ঘুমোচ্ছেন।তিনি জাগলে তখন দেখা করতে পারবেন। তবে সবাই না।মাত্র দুজন।তাও আলাদা আলাদাভাবে যাবেন।উনার প্রচুর বিশ্রামের প্রয়োজন।’

বিস্তারিতভাবে সব বলে ডাক্তার চলে গেলেন।সবটা শুনে যেন সিয়ার মনে হলো কেউ ওর ক’লিজা বরাবর ধা’রালো ছু’রি দ্বারা আঘাত করেছে।এতোটা তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করল।ডাক্তার যা যা বলল তাতে স্পষ্টভাবেই সিয়া বুঝতে পেরেছে।অনিক এতোদিন খুব তীব্র মানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে।সিয়া জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল।হঠাৎ ওর হাতজোড়ায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই সিয়া চোখ তুলে তাকায়।তাকাতেই দেখতে পায় অনিকের বাবাকে।যে ভেজা ভেজা চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সিয়া অবাক হলো অনিকের বাবার কাছে।কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই অনিকের বাবা কান্নাভেজা গলায় বললেন,’ আমি সব জানি মা।সব জানি।আমার ছেলেটা তোমার সাথে বড়ো অন্যায় করেছে মা।এর বিনিময়ে ক্ষমাও চাওয়া যাবে না।কিন্তু মা আমি তো বাবা বলো।সন্তান হাজার অন্যায় করুক।বাবা, মা কখনও নিজের সন্তানকে দূরে ঠেলে দিতে পারে না।আমার ছেলেটা ভালো নেই।একদম ভালো নেই।আমি আর ওর মা প্রতিনিয়ত ওকে গুমড়ে গুমড়ে মর‍তে দেখেছি।প্রতিনিয়ত নিজেকে তিলে তিলে শেষ হতে দেখেছি।মা আমার ছেলেটা বাঁচবে না।ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে মা।তুমি আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিও না।তাহলে ওকে আর আমরা বাঁচাতে পারব না।আমার একটাই সন্তান।ওর কিছু হলে আমি আর ওর মা’ও ম’রে যাবো।তুমি আমার অনিককে মেনে নেও। এই বাবা তোমার কাছে আমার ছেলের জীবন ভিক্ষে চাইছি মা।আমার ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দেও।’

সিয়া অনিকের বাবার এহেন কান্ডে স্তব্ধ হয়ে যায়।দ্রুত হাত সরিয়ে এনে বলে,’ ছি ছি আংকেল আপনি আমার বাবার বয়সি।আপনি এসব কি বলছেন?এসব বলে আমাকে ছোটো করবেন না আংকেল।’

‘ আমি আর কি করব বলো তাহলে?এছাড়া আমার করার কিছু নেই।’

সিয়া কেঁদে ফেলে।এই এতো এতো যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।সিয়া বলে,’ আমিও ওকে ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।ওর এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না।আমি আর ওকে কষ্ট দিবো না।সত্যি বলছি।আমি সব ভুলে যাবো সব।সমাজ আমাকে আত্মসম্মানহীন বলুক।অনেক তো হলো।ওর জীবনের বিনিময়ে আমার আত্মসম্মান বড়ো হয়ে যায়নি।যাকে ভালোবাসি তার জন্যে সব ত্যাগ করতে পারব। ওকে সুস্থ হয়ে গেলে।আমরা সব ঠিক করে নিবো।আমার পক্ষে আর সম্ভব না এসব নেওয়া।আমি একটা স্বাভাবিক জীবন চাই।যেই জীবনে আজকের অনিকটার মতোই অনিক চাই আমি।যেই অনিক আমাকে অনেক ভালোবাসে।আর সেই অনিককেই আমি ভালোবাসি।’

সিয়া নিজের মনের কথাটাই মেনে নিলো।কি হবে আর?এই এতো এতো যুদ্ধ করে৷ নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি হবে?শেষ মেষ আজ অনিকের এই অবস্থা।যাকে ভালোবাসে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে কিভাবে আর?এটা কিছুতেই মানতে পারবে না।সবাই এতে যদি সিয়াকে খারাপ ভাবে।তো ভাবুক।

মারিয়া সিয়াকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর সিয়াকে পানি খাইয়ে দিলো।সাফাত এসে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,’ তুই তোর মনের কথা শুনেছিস।এতে আমি এবং আমরা সবাই খুশি হয়েছি।শোন সিয়া,ভাগ্যে কার জন্যে কি লিখা থাকে তা আমরা কেউ জানি না।তবে মাঝে মাঝে নিজেদের কারনেই আমরা নিজেরা নিজেদের ভাগ্যকে নষ্ট করে ফেলি।তাই তো সবসময় বলা হয় ভেবে কাজ করো।আশা করি তুই ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। তোরা দুজনেই আমাদের বেষ্টফ্রেন্ড।তোদের কাউকেই আমরা হারাতেই চাই নাহ।মানুষের জীবনটাই কতোটুক বল?আজ আছি তো কাল নেই।যেটুকু সময় বেঁচে থাকি।সেটুকু সময় প্রাণ খুলে বাঁচতে পারাটাই সর্বসুখ।আমি বলছি তোর আজকের এই সিদ্ধান্তে তুই আর পস্তাবি না।সুখি হবি সিয়া। ‘

রুদ্রিক হালকা হেসে বলে,’ আর আমরা আছি তো।ওই অনিক সালা আবার তোকে কষ্ট দিলে ওর হাড়-গোড় ভেঙে দিবো।’

সিয়া কান্নাভেজা চোখেই হেসে ফেলল।সবাই সিয়াকে নানান কথা বলে ভড়সা দিলো।
প্রায় ঘন্টাখানিক পর খবর আসে অনিকের জ্ঞান ফিরেছে।সবাই যেন সস্তি পেলো এই কথাটা শুনে।অনিকের বাবা গেলেন আগে।তিনি ছেলের সাথে অল্পখানিক কথা বলেই বের হয়ে আসলেন।অনিকের বাবাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।বেচারা বয়স্ক মানুষ। এতোরাত পর্যন্ত এখানে থাকা ঠিক হবে না।তাই সবাই জোড় করে উনাকে রাজি করালেন বাড়িতে চলে যাবার জন্যে।তিনি সহজে রাজি হচ্ছিলেন না।সবার জোড়াজুড়িতে রাজি হলেন।এখন কে দিয়ে আসতে যাবে।আহিদ নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে,’ আমাকে বাড়ি যেতে হবে রুদ্রিক ভাই। বাবা কাজের সূত্রে সিলেট গিয়েছেন।বাড়িতে মা আর পিহু একা।তাই আমি চাচ্ছিলাম বাড়ি চলে যেতে।আমিই নাহয় আংকেলকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসব।’

রুদ্রিক বলে,’ তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো?’

আহিদ হেসে বলে,’ আরে না না ভাই।আংকেল যেই ঠিকানা দিয়েছেন।সেই অনুযায়ী।আমার বাসার কয়েকটা বাসার পরেই উনার বাসা।আমি উনাকে নামিয়ে দিয়ে আবার ব্যাক চলে যাবো।এটুকুতে কিচ্ছু হবে না।’

ইহান সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ তাহলে তো হলোই।তবে যাও আহিদ।সাবধানে যাও।’
‘ আচ্ছা আসি।’

আহিদ অনিকের বাবাকে নিয়ে চলে গেলো।সিয়া অনিকের সাথে দেখা করার ছটফট করছে।জ্ঞান ফিরে আসায় ডাক্তার অনিককে চেক-আপ করছে।একটু পর ডাক্তার চেক-আপ করে বেড়িয়ে আসল।জানালো অনিক এখন কোনো কথা বলতে পারে না।সাময়িক সময়ের জন্যে সে কথা বলতে পারবে না।তবে খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।এইতো দু,তিন সময় লাগবে।সিয়া কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নিলো।ডাক্তার তো বলেছে যে অনিক ঠিক হয়ে যাবে।তাই আর কাঁদল না।সবাই সিয়াকে অনিকের কাছে যাওয়ার জন্যে বলল।সিয়া চলে গেলো অনিকের সাথে দেখা করতে।
এদিকে অথৈ সেদিকে তাকিয়ে চোখের কোনের জলটুকু মুছে নিলো।ভালোবাসা কি না পারে।এক নিমিষেই কেমন করে এতো বছরের রাগ,খোপ,অভিমান ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।সত্যি ভালোবাসা সুন্দর, অদ্ভুত সুন্দর।
রুদ্রিক এসে পাশে দাঁড়ায় অথৈয়ের।অথৈ তাকায় রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক অথৈয়ের হাতটা শক্ত করে আকঁড়ে ধরল।অথৈ মুচঁকি হাসল।রুদ্রিক বলল,’ আমাদের সম্পর্কে আমি কোনোদিন এমন দিন আসতে দিবো না প্রমিজ।তোমাকে কোনোদিন অসম্মান করব না।এমন কোনো কাজ করব না যাতে তুমি কষ্ট পাও।আর আমার থেকে দূরে চলে যাও।আমি এটা মানতে পারব না।’

অথৈ হালকা হেসে বলে,’ আমি জানি আপনি আমার সাথে সারাজীবন থাকবেন।এই যেমন এখন আছেন আমার কাছে,আমার পাশে।ঠিক এইভাবেই।আর আমিও প্রমিস করলাম।আপনি কষ্ট পাবেন এমন কোনো কাজ আমিও কোনোদিম করব না।আপনাকে সম্মান করব।মানে আমরা দুজন দুজনের কাছে কিচ্ছু লুকোবো না।সবটা সেয়ার করব। প্রমিস?’
‘ হুম প্রমিস।’

অথৈ হাসল।বিনিময়ে রুদ্রিকও হাসল।রুদ্রিক ফিসফিস করে বলল,’ এইভাবে আর থাকা যাবে না।আমি এতো বছর অপেক্ষা করতে পারব না অথৈ। তোমাকে সবসময়ের জন্যে আমার কাছে চাই। খুব করে, অনেক কাছে চাই।তাই খুব শীঘ্রই তোমাকে পার্মান্যান্টলি আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো।আমার এক্সামটা শেষ হোক শুধু।অপেক্ষা আর কয়েকটা দিনের মাত্র।’

অথৈ প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলো রুদ্রিকের কথা শুনে।পরপর রুদ্রিকের প্রতিটা কথা মন থেকে অনুভব করেছে।যার ফলে ওর পুরো চেহারা রক্তিম আভায় ছেঁয়ে গেছে।আর রুদ্রিল মুগ্ধ হয়ে তা অবলোকন করেছে।

#চলবে_______________