#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
Jerin Afrin Nipa
৩৭💜
মীরার জ্বর ভালো হয়ে গেলেও সে বাড়িতে থেকে আরও কয়টা দিন শুয়ে বসে কাটানোর জন্য জ্বরের বাহানা নিয়ে বিছানায় পড়ে রইল। কেউ তার কপালে হাত রেখে দেখছে না। দেখলে তার মিথ্যা এক সেকেন্ডে ধরে ফেলত। ঠেলা ধাক্কা বকা দিয়ে কলেজ পাঠাত। প্রাইভেটে যেতে হতো। সেখানে আবার জায়িন ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। এটা ভেবেই মীরা কোমরের কাছ থেকে চাদর টেনে নাক মুখ ঘোরে নিল।
“না বাবা না। আমার জ্বর এখনও ভালো হয়নি।”
মীরার শান্তিতে বাড়ি বসে সময় কাটানোও স্যার ম্যামদের সহ্য হলো না। মাহিমা এসে জানালো,
” পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে। চৌদ্দ দিন পর পরীক্ষা। তুমি আরও দুধ কলা দিয়ে জ্বর পোষো।”
পরীক্ষার কথা শুনেই মীরার সকল শান্তি অশান্তিতে রুপান্তরিত হলো। মাহিমা হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে ফলের বাটিটা নিলো। ছোট মামী একটু আগে দিয়ে গেছে। মাহিমা আপেলে কামড় বসাতে বসাতে বলল,
“আপেল খাবি?”
“না। পরীক্ষার খবর শুনিয়ে খাওয়ার মজা শেষ করে দিয়েছিস। তুই-ই খা।”
“আমি তো খাচ্ছিই। তুই রোগী মানুষ তাই মানবতা দেখিয়ে সাধছি।”
“পরীক্ষা দেওয়ার সিস্টেমটা কে চালু করেছিল রে? পড়াশোনা করতে তো ভালোই লাগে। কিন্তু পরীক্ষা দিতে আমার একদম ভালো লাগে না।”
“আমার কি ভালো লাগে? তবুও দিতে হয়। তুই এত টেনশন করছিস কেন? মুবিন ভাই তো তোকে সব সাবজেক্ট গুলিয়ে খাইয়ে রেখেছে।”
“সেগুলো আমি হজম করে কবেই বাথরুমে ছেড়ে এসেছি। পেটে কিছুই নেই।”
মাহিমা দীর্ঘশ্বাস চেপে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতে লাগলো। মুবিন ভাই মানুষটা খারাপ না। সে কোনও দিন মুবিন ভাইকে ওই চোখে দেখেনি ঠিক। কিন্তু বেচারা তো তাকে দেখেছে। বাসায় ফেরার সময় আজও মুবিন ভাইকে দেখেছে। কিন্তু মুবিন ভাই আজ তার কাছাকাছি আসার আগেই মাহিমা রিকশায় উঠে পড়েছে। আহা বেচারা অপাত্রে ভালোবাসা দান করে কষ্ট পাচ্ছে।
…
সামনে পরীক্ষা এখন নাটক করে শুয়ে থাকলে ক্ষতি অন্য কারো হবে না। যা ক্ষতি হওয়ার তারই হবে। তাই মীরা নিজেই আজ প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য রেডি হলো। তনি ঘরে এসে মীরাকে রেডি দেখে অবাক হয়ে বলল,
“ও মা! তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?”
মীরা আয়নায় নিজেকে দেখে তনির কথার জবাবে বলল,
“কোথায় আবার? আমার কাজ তো একটাই। পড়াশোনা করে তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করা। ফেয়ার এন্ড লাভলী দিয়ে তো কাজ হচ্ছে না।”
তনি এগিয়ে এসে মীরার কপালে হাত রেখে বলল,
“জ্বর নেই। কিন্তু আজকের দিনটা রেস্ট নিয়ে কাল থেকে গেলে হতো না।”
“পরীক্ষার রুটিন দিয়ে ফেলেছে গো আপু। আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য স্যাররা বাঁশ রেডি করছে।”
“আচ্ছা যা তাহলে।”
মীরা ব্যাগ গুছানোর সময় দেখল ব্যাগে কোন টাকা নেই। সে ড্রয়ারে দেখল। এক টাকার একটা পয়সাও নেই। বাবাও তো মনে হয় বাড়ি নেই। মীরা তনির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপু টাকা লাগবে। চকলেট খাওয়ার জন্যও এক টাকা নেই।”
“থাকবে কীভাবে? সব একদিনে খেয়ে ফেললে। রুম থেকে এসে নিয়ে যা। আমি কিন্তু ধার দিচ্ছি। ফেরত দিয়ে দিতে হবে।”
“থাক তোমার টাকা লাগবে না। আমি ইভান ভাইয়ের থেকে চেয়ে নিব। ইভান ভাই জীবনেও ফেরত চাইবে না।”
“আমি ইভান ভাইয়ের মতো বড়লোক না।”
“টাকাপয়সা তো হাতের ময়লা আপু। মনটা বড় করতে হয়।”
“তোর মন তো অনেক বড়। আমাকে এক লাখ দিতে পারবি?”
মীরা সেন্টি খাওয়া মুখে তনির দিকে তাকালো। তার কাছে এক লাখ টাকা থাকলে সে বিশ্বের সবচেয়ে বড়লোক হয়ে যেত। তনির থেকে টাকা নিয়ে মীরা মুবিনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
…
সুমনা দরজা খুলে মীরাকে দেখে খুশি হয়ে বলল,
“ও মা, মীরা তোর জ্বর ভালো হয়েছে? আহারে, কয়টা দিনে মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। হেঁটে এসেছিস?”
“না। এতদূর হাঁটলে মাথা ঘুরে এতক্ষণে রাস্তায় পড়ে থাকতাম।”
“আয় আয়, তোকে শরবত বানিয়ে দিই। তোকে দেখতে পেয়ে আমার যে কী ভালো লাগছে!”
মুবিন জানতো না আজ মীরা পড়তে আসবে। সে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ছিল। মীরাকে দেখে তাড়াহুড়ো করে প্যান্ট পাল্টে এলো। পড়ানোর সময় আজ মুবিনকে বেশ চুপচাপ লাগছে। মীরা কলম রেখে দিয়ে বলল,
“মুবিন ভাই আজ পড়তে ভালো লাগছে না। একটা গান শোনান তো।”
“পড়ো মীরা।”
“আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন আমার সব কথা শুনবেন।”
“তুমিও তো কথা দিয়েছিলে ওই ব্যাপারটা দেখবে।”
“দেখছিই তো। আপনি জানেন আপনার জন্য আমি কত কষ্ট করছি।”
“হুম। এজন্যই তো মাহিমা আমাকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিয়েছে।”
মীরা কপালে ভাঁজ ফেলে মুবিনের দিকে দেখল। এজন্যই কি মুবিন ভাই আজ তার সাথে ভালো করে কথা বলছে না?
“ব্লক করে দিয়েছে! কেন? আচ্ছা, আমার কাছে কইতরির আইডির পাস আছে। আমি আপনাকে আন ব্লক করে দিচ্ছি।”
“কথা সেটা না মীরা। মাহিমা হঠাৎ কেন আমাকে ব্লক করলো? তুমি কি ওকে কিছু বলেছ?”
“আমি! আমি কী বলবো মুবিন ভাই?”
“জানি না। আচ্ছা এই বিষয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করি।”
“না, শেষ কেন করবো? কইতরি এমন কেন করলো? আমি আপনাকে দুলাভাই বানানোর জন্য কত কষ্ট করছি। কইতরি আমার কষ্ট মাটি করবে কোন অধিকারে?”
“মাহিমা হয়তো আমাকে পছন্দ করে না।”
“কেন করবে না? আপনি কত ভালো। আপনার মতো আর কাউকে পাবে ও? পছন্দ কেন করবে না?”
“জোর করে কি কাউকে পছন্দ করানো যায় মীরা?”
“আপনি জানেন না দেখে এমন বলছেন। কইতরি আমার বোন আমি জানি। আমি কয়দিন ওর সামনে আপনার নামে সুনাম করলেই কইতরি আপনার প্রতি গলে যাবে। আপনি মন খারাপ করে থাকবেন না তো।”
“হুম।”
“তাহলে এবার একটা গান শোনান দুলাভাই। তিন মাত্র শালির থেকে বড় শালির আবদার।”
মুবিন হেসে ফেললো। এই মেয়ে পাগল। পড়ানো শেষ হলে মীরা ড্রয়িংরুমে সোফায় এসে বসলো। জায়িনের রুমের দিকে সাবধানে উঁকি দিল। সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মানে জায়িন ভাই মনে হয় বাড়িতে নেই। সুমনা ঘর থেকে মীরাকে ডেকে বলল,
“পড়া শেষ মীরা?”
“হ্যাঁ আন্টি। আমি আজ বেশি দেরি করব না।”
“বোস একটু। নারিকেলের নাড়ু বানিয়েছিলাম। খাবি?”
“জিজ্ঞেস করছো কেন? নিয়ে আসো।”
সুমনা বক্সে করে অনেকগুলো নাড়ু নিয়ে এসে মীরার হাতে দিয়ে বলল,
“এখানে বসে যতগুলো খেতে পারিস খা। বাকি যা বাঁচবে বাড়ি নিয়ে যাস।”
মীরা বক্স খুলেই একটা নাড়ু হাতে নিয়ে মুখে পুরে দিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল,
“আন্টি তুমি কত্তো ভালো! আমার দেখা খুব কম সংখ্যক ভালো মানুষের মাঝে তুমি এক নাম্বারে আছো।”
“পাম দিচ্ছিস না তো?”
“সত্যি। বড়মা, ছোট চাচী, বাবা, চাচ্চু, বড় আব্বু, ইভান ভাই, ইভা আপু, আবির ভাই, সবাই অনেক ভালো। তুমি সবার থেকে বেশি ভালো।”
সুমনা হেসে সস্নেহে মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মেয়েটাকে কেনই যেন খুব বেশি আপন মনে হয়। মা হারা বলেই হয়তো এত বেশি মায়া লাগে। মুবিন বাইরের কাপড় পরে তৈরি হয়ে কোথাও যাচ্ছে দেখে সুমনা জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“কুরিয়ার অফিসে। পার্সেল এসেছে।”
মুবিন বেরিয়ে গেলে সুমনা রান্নাঘরে চা আনতে গেল। চা খেতে খেতে মীরার সাথে গল্প করবে। মীরা টিভি দেখতে দেখতে মনের সুখে নাড়ু খাচ্ছে এমন সময় জায়িনকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে মীরার গলায় নাড়ু আটকে গেল। সে জায়িনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। এই লোক বাড়িতেই ছিল! তবুও একটা টু শব্দ পায়নি? মীরা মনে মনে নিজেকে গালি দিল।
“তুই একটা গাধার বাচ্চা মীরা। নিজে থেকে কেন ভেবে নিলি উনি বাড়িতে নেই? মুবিন ভাই বা আন্টির কাছে জিজ্ঞেস করে নিলে কি তোর জেল হতো?”
মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে সোফায় বসে আছে। জায়িন মীরাকে দেখেও অলস ভঙ্গিতে অন্য একটা সোফায় বসে পড়লো। জায়িন ভাই কি মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে? চুলও ঠিক করেনি। চোখে মুখে এখনও ঘুমের রেশ লেগে আছে। লোকটাকে বরাবরের থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে। ভাবনাটা মনে আসতেই মীরা তাৎক্ষণাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে সেটাকে তাড়িয়ে দিলো। কী ভাবছে সে এসব? নিজের ভাবনার উপরই মীরা অবাক হলো। জায়িন ভাইকে খুঁটিয়ে দেখছিল সে! কেন? এই কেন’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে মীরার হেঁচকি উঠে গেল। মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে সমানে হেঁচকি তুলে যাচ্ছে। সুমনা রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করছে,
“মীরা, কী হয়েছে?”
মীরা জবাব দিতে পারলে তো! জায়িন ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে ডাইনিং থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এলো। মীরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“নাও।”
মীরা হেঁচকি তুলতে তুলতেই মাথা তুলে ফ্যালফ্যাল চোখে জায়িনকে দেখতে থাকলে জায়িন বলল,
“পরে দেখো। আগে পানি খাও।”
চলবে..
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৩৮
মীরা জায়িনের হাত থেকে একপ্রকার পানির গ্লাস ছিনিয়ে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগল। জায়িন এই মেয়ের সব উদ্ভট আচরণের সাথে পরিচিত বিধায় ওর কোন কাজে নতুন করে অবাক হতে হচ্ছে না। সুমনা পানি নিয়ে এসে দেখল মীরা পাচ্ছি খাচ্ছে। জায়িনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই পানি দিয়েছিস? ভালো করেছিস। কি যে করিস তুই মীরা!”
মীরা পানি খেয়ে শান্ত হয়ে চোরা চোখে জায়িনকে দেখছে। সেদিক রাতে জায়িন ভাই তাদের বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু মীরা উনার সাথে কথা বলবে তো দূর উনার সামনেই বেশিক্ষণ থাকেনি। কীভাবে থাকবে? জায়িন ভাই যে স্বপ্নে এসে তাকে বড্ড জ্বালাচ্ছে।
সুমনা রান্নাঘরে ফিরে গেলে মুবিন আবার বাসায় এলো। মীরা মুবিনকে দেখে একটু স্বস্তি পেলো। একা এই লোকের সাথে থাকতে হবে না। মুবিন ভাই ফিরে এসেছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কুরিয়ার অফিস থেকে কীভাবে ফিরে এলো? মীরা গলায় জোর এনে জিজ্ঞেস করলো,
“কুরিয়ার অফিস থেকে চলে এসেছেন মুবিন ভাই?”
“যেতেই তো পারিনি। এতটুকু পথ ভাবলাম হেঁটে চলে যাই। রাস্তায় নামতেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। ছাতা ছাড়া কুরিয়ার অফিস পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভিজে যাব। তাই ফিরে এসেছি।”
মীরা চট করে বলে বসল,
“তাহলে আজ আর আপনার যাওয়া হবে না। বৃষ্টি না থামলে যেতে পারবেন না।”
“এটা কি বর্ষাকাল চলছে? এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিই হচ্ছে। আজ একটু সময় পেলাম। বৃষ্টি বাঁধা দিয়ে বসলো। মা কোথায় মীরা?”
“রান্নাঘরে।”
মুবিন গলা উঁচিয়ে ডাকল,
“মা। মা একটা ছাতা দাও তো।”
মীরা সবজান্তার মতো মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ছাতা তো নেই মুবিন ভাই।”
“নেই? কে বলেছে?”
সুমনা চায়ের কাপ হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মীরার সামনের টেবিলের উপর রেখে কোথাও চলে গেল। একটু পরেই ছাতা হাতে ফিরে এলো। মীরা আন্টির হাতে ছাতা দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তার হতভম্ব ভাব কেটে উঠতেই মীরা ঝট করে জায়িনের দিকে তাকালো। জায়িন পরিস্থিতি সুবিধার না বুঝে আস্তেধীরে এখান থেকে কেটে পড়তে চাইল। মীরা ঝনঝনে গলায় জিজ্ঞেস করল,
“আন্টি তোমাদের ছাতা আছে?”
সুমনা হেসে বলল,
“ছাতা থাকবে না কেন?”
“কয়টা ছাতা আছে?”
“আছে তিন চারটা। কেন বল তো?”
“বাড়িতে ছাতা আছে এই কথা জায়িন ভাই জানতো না?”
জায়িন রুমে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিল। মীরা মা’র সাথে কথা বললেও রাগান্বিত চোখ দু’টো তার দিকেই রেখেছে। জায়িন মীরার রাগকে ভয় পাচ্ছে না। সে ভয় পাচ্ছে মেয়েটার ঠোঁটকাটা স্বভাবকে। মা’র সামনে উলটাপালটা কিছু একটা বলে না ফেললেই হয়। সুমনা মীরার কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে-ও ছেলের দিকে তাকিয়েছে। মায়ের চোখে চোখ পড়তে জায়িন কষ্ট করে হাসলো। মীরা আগের মতোই তীক্ষ্ণ স্বরে একেকটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
“ছাতা কোথায় রেখেছিলে আন্টি?”
“ঘরেই।”
“অনেক খুঁজলেও পাওয়া যাবে না এমন জায়গায় নিশ্চয় রাখোনি?”
“না। কিন্তু তুই এসব কথা কেন জিজ্ঞেস করছিস বল তো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে রাগে কিড়মিড় করছে। কতটা বাজে হলে এমন মিথ্যা বলে তাকে ছাতা দিলো না। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে মীরার জ্বর এলো। তার থেকেও যেটা বড় কথা, সেদিনের ওই ঘটনার পর জায়িন ভাই বারবার তার স্বপ্নে আসে। স্বপ্ন গুলো স্বাভাবিক না। স্বপ্নে জায়িন ভাই তার প্রেমিক পুরুষের ভূমিকায় থাকে। জায়িন ভাইকে নিয়ে ওরকম রোমান্টিক স্বপ্ন দেখে উনার সামনে আসতে মীরার অস্বস্তি হয়। এই স্বপ্নের ভয়ে সে কয়েকদিন ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। স্বপ্ন গুলো তাকে পুরোটা দিনই ভাবায়। মীরা নিজেও বুঝতে পারছে জায়িন ভাইকে নিয়ে তার মাঝে অন্যরকম একটা চিন্তাভাবনা কাজ করছে। না চাইতেও এমন হচ্ছে। এতে দোষটা কার? এই কাঠখোট্টা লোককে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখে মীরা কেন নিজের পায়ে কুড়াল মারবে?
সুমনা নানান প্রশ্ন করলেও মীরা একটা প্রশ্নের উত্তরও না দিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নাড়ুর বক্স হাতে নিয়ে বাড়ির উদেশ্যে রওনা দিল। সুমনা বোকার মতো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“পাগলিটার কী হয়েছে রে? ওরকমভাবে চলে গেল কেন? মীরা, এই মীরা দাঁড়া বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতা নিয়ে যা।”
বলতে বলতে সুমনা মীরাকে আটকাতে চলে গেলো। জায়িন বড় করে একটা দম ফেলে সোফায় বসে পড়লো। এই মেয়ে গাধা না হলে জায়িনের উদ্দেশ্য, অনুভূতি দুটোই জেনে যাবে। মীরাকে দীর্ঘ সময় চোখের সামনে দেখার জন্যই বাসায় ছাতা আছে জেনেও জায়িন সেদিন ইচ্ছে করে ছাতা দেয়নি। অসৎ কোন উদ্দেশ্য তার মনে ছিল না। শুধুমাত্র মীরার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছিল। সেদিন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, বাজ পড়া, অন্ধকারে মীরার ভয় পাওয়া কোনটাই জায়িনের হাতে ছিল না। সে নিজেও পরে অনুতপ্ত হয়েছে। মিথ্যা বলে মীরাকে আটকানো তার উচিত হয়নি।
“মাঝে মাঝে জেনে-বুঝেও আমরা ভুল করি। যেমন তোমার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলাটাও আমার একটা ভুলই। আমি একজনের কাছে ওয়াদা বদ্ধ থাকা স্বত্বেও তোমাকে ভালোবাসা থেকে নিজেকে আটকাতে পারিনি। যেদিন তুমিও আমার জন্য একইরকম অনুভূতি অনুভব করবে সেদিন কি আমি খুশি হতে পারবো? সমস্ত পিছুটান থেকে নিজেকে মুক্ত করে তোমাকে আপন করে নিতে পারব?”
….
মীরা অনেকদিন পর ছোট ফুপির বাসায় রাতে থাকতে এসেছে। আবির ভাই জোর করে মীরাকে নিয়ে এসেছে। মীরার মনটাও কিছুটা বিক্ষিপ্ত ছিল। মাহিমার সাথে কথা বলাও জরুরি ছিল। মীরা আর লুকোচুরি করতে পারল না। সরাসরি মাহিমাকে আজ বলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
“তুই মুবিন ভাইকে ব্লক করেছিস?”
“হ্যাঁ। তুই জেনেছিস কীভাবে?”
“কেন করেছিস?”
“এমনি। কিন্তু তুই জানলি কীভাবে?”
“সেটা বড় কথা না। তুই এমন কেন করছিস?”
“কেমন করছি মীরা? তুই আমাকে দোষ দিবি!”
“অবশ্যই।”
মীরা ঝগড়া করার মুডে থাকলেও মাহিমা কেঁদে ফেলবে অবস্থা। সে তো মুবিন ভাইকে বলেনি আপনি আমাকে পছন্দ করুন। মীরা কি তাকেই ভুল বুঝবে?
“তুই একটা মানুষের অনুভূতির মূল্য দিচ্ছিস না পাষাণী। এত ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইলাম তুই কিছু না বোঝার পণ করে রেখেছিস। এত কিসের ভাব তোর? না, বল আমাকে নিজেকে কী ভাবিস তুই? মিস ইউনিভার্স?”
মাহিমা এবার কেঁদেই ফেলল। মীরা মাহিমাকে কাঁদতে দেখে হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে রইলো। এই মেয়ে কাঁদছে কেন? সে কী এমন বলেছে?
“কাঁদছিস কেন তুই? আশ্চর্য! আমি তোকে মেরেছি? নাকি বকেছি?”
“তুই আমাকে ভুল বুঝছিস মীরা।”
“ভুল বুঝবো না তো কী করব? মুবিন ভাইয়ের মাঝে দোষটা কি? কিসের কমতি উনার? কেন উনাকে পছন্দ না তোর? উনার বজ্জাত ভাইটার উপর মন এসে গেছে? তাহলে জেনে রাখ, তোদের মধ্যে পৃথিবীর সবথেকে বড় বাধা আমি হয়ে দাঁড়াব। ওরকম একটা হিংসুটে শয়তান লোকের সাথে তোর কিছুই হতে দিব না। তুই মুবিন ভাইকেই বিয়ে করবি। তারপর ওবাড়িতে গিয়ে শাঁকচুন্নি হয়ে ভাসুর নামের বজ্জাতটার রক্ত চুষে খাবি।”
মীরা এতগুলো কথা বলে ফেলেছে। কিন্তু মাহিমা মীরার একটা কথাতেই আটকে আছে। সে ফ্যালফ্যাল চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“তুই মুবিন ভাইকে পছন্দ করিস না?”
প্রশ্নটা শুনে মীরা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। সে কথা বলতেই ভুলে গেল। মুবিন ভাইকে সে পছন্দ করবে কেন? মাহিমা একইভাবে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। মীরা এবার বুঝতে পারলো। গাধীটা ভাবছিল, সে মুবিন ভাইকে পছন্দ করে! মীরা ধড়াম করে মাহিমার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিল,
“গাধার বাচ্চা। আমার ফুপুকে বলছি না। আমার ফুপু মানুষই। কিন্তু তুই ফুপুর পেট থেকে গাধা হয়েছিস। আমি কেন মুবিন ভাইকে পছন্দ করবো? মুবিন ভাই তোকে পছন্দ করে।”
“তুই জানতি?”
“ইভা আপুর হলুদের দিন থেকেই তো। আমি তোদের এক করার জন্য কত কাঠখড় পোড়াচ্ছি। আর তুই আমাদের মাঝে কিছু আছে ভেবে বসেছিলি?”
মাহিমা নিজের ভাবনায় নিজেই বেআক্কেল হয়ে বসে রইল। মীরা প্রথমে রাগ করলেও এখন হাসতে লাগল,
“ওরে কইতরি অন্যের লাভ কেসে পিএইচডি করে নিজের লাভ লাইফে লবডঙ্কা। নিজের বেলা বুদ্ধি গুলো কি মাঠে ঘাস খেতে গিয়েছিল? মুবিন ভাই তোকে পছন্দ করে রে গাধা। আমি তো মুবিন ভাইকে দুলাভাই হিসেবে পছন্দ করি।”
মাহিমা বোকার মতো বসে রইল। আস্তে আস্তে তার খারাপ লাগা কমে গিয়ে ভালো লাগতে শুরু করেছে। মীরা মাহিমাকে সময় দিলো। কিছুটা সময় পর বলল,
“মুবিন ভাইকে কি তোর ভালো লাগে?”
মাহিমা লাজুক লাজুক মুখে সদ্য হাতপা ভেঙে প্রেমে পড়া নিব্বির মতো মিনমিনে গলায় বলল,
“খারাপ লাগে না। আবার ওই টাইপ ভালো লাগে কি-না সেটাও বুঝতে পারছি না।”
“বুঝতে না পারলে বাদ দে। আমি মুবিন ভাইকে না করে দিই। বলে দিই, তোর দিক থেকে ওরকম কিছু নেই। বেচারা যেন শুধু শুধু আশায় বুক না বাঁধে। দেখি আমার ফোনটা কই?”
মীরা মিছেমিছি ফোন খুঁজতে লাগলে মাহিমা তাড়াহুড়ো করে বলে উঠল,
“না না। ভালো লাগে।”
মীরা হেসে বলল,
“এইতো লাইনে এসেছিস।”
চলবে…
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৩৯
মীরা নিজেই মাহিমার ফোন নিয়ে মুবিনকে আন ব্লক করে দিলো। মীরা মেসেজ পাঠাতে চাইলেও মাহিমা তা করতে না দিয়ে জোর করে ফোন কেড়ে নিলো।
“ফোন কেড়ে নিলি কেন? এখন তো তুইও মেনে গেছিস। তাহলে মেসেজে আইলাভু লিখে দে।”
“তোর লজ্জা না থাকতে পারে। কিন্তু আমার লজ্জা আছে। মেয়ে হয়ে হ্যাংলার মতো আমি আগে আই লাভ ইউ বলে দিই!”
“ওমা, তুমি কি চাও মুবিন ভাই হাঁটু গেঁড়ে বসে হাজারটা লাল গোলাপ দিয়ে তোমাকে প্রেম নিবেদন করুক? তবেই তুমি রাজি হবে?”
“করলে মন্দ হয় না।”
“এহহ মাইয়ার শখ কত!”
ফুপু খাওয়ার জন্য ডাকছে। মীরা মাহিমা এতক্ষণ আসি আসি করলেও এখনও খাবার টেবিলে যায়নি দেখে ফুপুই চলে এসেছে।
“ঘরে বসে ডিমে তা দিচ্ছিস? আর একবার ডাকতে হলে কপালে খাবারের বদলি লাঠি আছে।”
ফুপির সাথে কোন বিশ্বাস নেই। ছোট ফুপি ভালোর ভালো খারাপের খারাপ। রাগ উঠলে সত্যি সত্যিই লাঠি নিয়ে মারতে শুরু করবে। ওরা খেয়ে এসে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে। শুয়ে শুয়েও দু’জন কুটকুট করে আলাপ করছে। আলাপের একফাঁকে মাহিমা মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল,
“আমার তো জায়িন ভাইকেও ভালো লাগতো। কত হ্যান্ডসাম। উনার ভাইয়ের সাথে প্রেম করলে বয়ফ্রেন্ডের বড়ো ভাইয়ের দিকে কি আর এসব নজরে তাকানো যাবে? পাপ লাগবে না? কিন্তু এত্ত হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে ভাসুর বানাতেও মন সাই দিচ্ছে না। মুবিন ভাইয়ের আগে জায়িন ভাই প্রপোজ করলে আমি খুশি খুশি রাজি হয়ে যেতাম রে মীরা। জায়িন ভাই চান্স মিস করলো। মুবিন ভাই ছোট হয়েও এই ব্যাপারে বড়ো ভাইকে পেছনে ফেলে নিজে এগিয়ে গেছে।”
লুচ্চি কইতরির মুখে এসব কথা শুনে মীরা অন্ধকারেই মাহিমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
“লুচির বাচ্চা দাঁড়া তুই। তোর চরিত্র আমি ওয়াশিং মেশিনে ফেলে পরিষ্কার করে দিব।”
মাহিমা এই হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে চেঁচিয়ে বলল,
“মীরা কী করছিস? পাগল হয়ে গেছিস? এই পাগলের বাচ্চা, মারছিস কেন? দাঁড়া, আমিও তোকে ছেড়ে দিব না। তুই দশটা মারলে আমি দুইটা তো মারতে পারব।”
অন্ধকারে দু’জন বালিশ নিয়ে মারামারি লেগে গেল। দু’জন দু’জনকে বালিশ দিয়ে উথালপাতাল বাড়ি দিচ্ছে।
“মুবিন ভাইয়ের মতো একটা ভালো মানুষের তুলনা কোন সাহসে ওর বজ্জাত ভাইটার সাথে করিস তুই? এই অধিকার তোকে কে দিয়েছে? কিয়ের সাথে কী মিলিয়ে পান্তা ভাতে কেন ঘি ঢালবি?”
….
কইতরি , মুবিন ভাইয়ের প্রেমটা হয়েই গেল। মীরা নিজে করিয়ে দিয়েছে। এখন বেচারি পস্তাচ্ছে। বেস্ট ফ্রেন্ড ততক্ষণই বেস্ট ফ্রেন্ড থাকে যতক্ষণ সে সিঙ্গেল থাকে। মাহিমা এখন দিনের বেশিরভাগ সময়ই মুবিন ভাইয়ের সাথে কুটুর কুটুর আলাপ করে কাটায়। মীরা অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখে যায়। তার তো এমন কেউ নেই। সে কার সাথে কথা বলবে? মীরা বিরক্তি নিয়ে মাহিমার দিকে তাকাল,
” এবার ফোনটা রাখবি প্লিজ? আর কত কথা বলিস?”
“একটু দাঁড়া প্লিজ। না, না আপনাকে বলছি না। মীরাকে বলেছি। হ্যাঁ। পরীক্ষা তো ভালোই হচ্ছে।”
মীরা হতাশ হয়ে মাহিমাকে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তার বয়ফ্রেন্ড নেই। আজ থেকে বোন বান্ধবী কিচ্ছু নেই। এই দুনিয়ায় একা এসেছে একা যাবে।
মীরাদের পরীক্ষা চলছে। তিনটা পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে। রোজই মুবিন ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। কিন্তু জায়িন ভাই বাড়ি নেই। সেবারের পর জায়িন ভাই এখনও বাড়ি আসেনি। মীরা কি আজকাল জায়িন ভাইকে নিয়ে খুব বেশি ভাবছে? ছাতা থেকেও জায়িন ভাই মিথ্যা কেন বললো? শুধু শুধু তাকে আটকে রেখে লাভ কি? জায়িন ভাই তো বরং তার উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়। এই হিসেবটাই মীরা মিলাতে পারছে না। জায়িন ভাইয়ের অনেকগুলো আচরণ তার কাছে অদ্ভুত ঠেকছে।
মাহিমার কেমিস্ট্রি পরীক্ষা ভালো হয়নি। হল থেকে বেরিয়েই তার মন খারাপ। মীরা সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে বেচারিকে কথা শোনাচ্ছে।
“আরও পরীক্ষার আগের রাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গুটুরগুটুর আলাপ করো। তাহলেই পরীক্ষা ভালো হবে। তোদের দুইটার লাইন করিয়ে দেওয়াই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল।”
মাহিমা মীরাকে কিছু না বলে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরলো। মুবিন ভাই কত ভালো ছাত্র। তার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে শুনলে নিশ্চয় বলবে, গাধা একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছি। এটা ভেবে মাহিমা মুবিনের কল না তুলে বিকেলে ঘুম দিলো।
ওদিকে মুবিন মাহিমাকে কলে না পেয়ে মীরার ফোনে কল দিতে দিতে ফোন হ্যাং করিয়ে দিচ্ছে। মীরা রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বলল,
“মুবিন ভাই আপনার সমস্যা কি? আমার নতুন ফোন হ্যাং করিয়ে দিচ্ছেন। চাইছেনটা কি?”
“তোমার বোন আমার কল তুলছে না কী করব বলো?”
“আপনাকে কিন্তু আগে আমি মোটেও এরকম ভাবতাম না। আপনার নতুন নতুন রুপ দেখে আমিও অবাক। আপনি এরকম নিব্বা আগে জানতাম না।”
“তুমিও কাউকে ভালোবাসো, তখনই আমার পরিস্থিতি বুঝবে। তার আগে বুঝবে না।”
“থাক ভাই। আমাকে সুখে থাকতে ভূতে কিলায় না।”
“ভালোবাসা কিন্তু বাছবিচার করে হয়না গার্লফ্রেন্ডের বোন। যেদিন হয়ে যাবে সেদিন বুঝবে। আমি কিন্তু তোমার মতো না। আমার সাহায্য সবসময় তোমার জন্য তোলা থাকবে।”
“ওহ-হো, আপনি আমার মতো না! আমার জন্যই এতদূর এগোতে পেরেছেন। নয়তো এখনও ভালোবাসার সমুদ্রের কিনারে পড়ে খাবি খেতেন।”
মুবিন হাসল। বলল,
“আচ্ছা এখন বলো মাহিমার কী হয়েছে?”
“তেমন কিছুই হয়নি। আজকের পরীক্ষাটা একটু খারাপ হয়েছে। আপনি জানলে বলবেন, গার্লফ্রেন্ডের মাথায় গোবর তাই হয়তো কল তুলছে না।”
মাহিমা এরকম একটা সামান্য কারণে তার কল তুলছে না! একটা পরীক্ষা নাহয় একটু খারাপ হয়েছে। তাই বলে মাহিমা মন খারাপ করে তার কল তুলবে না! গার্লফ্রেন্ডের মন খারাপ। মুবিনকে তো কিছু করতেই হবে। সে এক মুহূর্তও দেরি করলো না। তাৎক্ষণাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো।
মাহিমার ঘুম ভাঙলে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মুবিনের বাষট্টিটা মিসড কল এসেছে।
“এইরে, ব্যাটা পুরো পাগল হয়ে গেছে মনে হয়।”
মাহিমা হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। আর তক্ষুনি ফোনটা আবার বেজে উঠল। মাহিমা দেরি না করে ঝটপট কর রিসিভ করলে মুবিন বলল,
“একটু বাইরে আসতে পারবে?”
কথাটা শুনে মাহিমা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি কোথায়?”
“তোমাদের বাসার পেছনের রাস্তায়। আসবে একটু?”
“আপনি কেন এসেছেন? কেউ দেখে ফেললে! আপনি কি পাগল? ”
“হুম। এবার একটু আসো।”
মাহিমা দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে মুখে পানি দিয়ে ফিরে এলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোনরকমে চুলটা ঠিক করে ওড়না নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো। বিকেলের আলো মরে এসে সন্ধ্যা নেমে গেছে। চারিদিকে মাগরিবের আজান হচ্ছে। মুবিনকে দেখেই তার হার্টবিট দ্রুত হতে লাগল। মানুষের চোখে পড়ে যাওয়ার ভয়ের সাথে সাথে সামনাসামনি মানুষটার সাথে কথা বলতেও নার্ভাস লাগছে। মুবিন মাহিমাকে দেখে হাসলো। মাহিমা সরাসরি মুবিনের চোখে তাকাতে পারল না। সে চোখ নামিয়ে মৃদু গলায় বলল,
“কেন এসেছেন?”
“তোমাকে দেখতে। ”
সহজ স্বীকারোক্তি। মাহিমা গালে রঙ ছুঁইয়ে দিলো যেন কেউ। সে লজ্জায় দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে রইল। মুবিন পেছন থেকে হাত বের করে মাহিমার সামনে অনেকগুলো গোলাপ ও একটা চকলেটের বক্স ধরলো।
“এগুলো তোমার জন্য।”
মানুষটার থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। মাহিমা মনে মনে খুশিতে বাক-বাকুম করতে লাগলো। হায়! মানুষটা তার মন ভালো করার জন্য এসব করছে! ইশশ, কী রোমান্টিক!
“তোমার যতবার মন খারাপ হবে, আমি এভাবেই তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করব।”
মাহিমা মুখ ফসকে বলে ফেলল,
“তাহলে বছরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই আমার মন খারাপ থাকবে।”
মাহিমার কথা শুনে মুবিন হাসতে হাসতে বলল,
“তাহলে আমিও তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
“বিরক্ত হয়ে যাবেন না তো?”
“কোনদিনও না।”
“ভেবে বলছেন তো?”
“এখন আর ভাবাভাবির কিছু নেই। ওই সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।”
…
মুবিন চলে যাওয়ার পর মাহিমা রুমে এসেই মীরাকে গোলাপ আর চকলেটের পিক সেন্ড করলো। মীরা অসহায় বাচ্চা এসব দেখে আফসোস করা ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারবে। হায়, কইতরিটার কপাল! আর তার ফোটা কপাল। গোলাপ তো দূর গোলাপের পাতা দেওয়ার মতোও কেউ নেই। চকলেট তো দূর কারো থেকে আজ পর্যন্ত চকলেটের কাগজও পায়নি।
মীরা মনের দুঃখে চকলেট আর গোলাপের পিক নিয়ে ফেসবুক স্টোরি দিল,
“আজ নিজের একটা ব্যক্তিগত বেডা নেই বলে, বান্ধবীর বেডার ঢঙ দেখি। এই অসহায়ের কপালে গোলাপের কাটাও লেখা নাই। সাথে অনেকগুলো সেন্টি ইমোজি।”
স্টোরি দিয়ে মীরা ফোন রেখে পড়তে বসে গেছে। এর মাঝে তনি আপু মাহাকে কোলে নিয়ে এসে কতক্ষণ বিরক্ত করেছে। ইভা এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে জোর করে খাইয়ে দিয়ে গেছে। দশটার দিকে মীরা খেতে নিচে এসেছে।
“ও বড়মা, তাড়াতাড়ি খেতে দাও।”
“তাড়াহুড়ো না করে চুপচাপ বোস।”
তক্ষুনি কলিংবেল বাজলে মীরা ভাবল, হয়তো আবির ভাই নয় ইভান ভাই এসেছে। সে উঠতে নিলে তনি বলল,
“তুই বোস। আমি যাচ্ছি।”
তনি দরজা খুলতে চলে গেল। কিন্তু দরজা খুলে সম্পূর্ণ অচেনা একটা ছেলেকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
“কাকে চাই?”
“মিস মীরা আছেন?”
তনির কপালে ভাঁজ পড়ে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। ছেলেটার হাতে অনেক গুলো লাল গোলাপ।
“কেন?”
“উনার জন্য গিফট এসেছে।”
চলবে
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৪০
“কে পাঠিয়েছে।”
“তা তো বলতে পারব না আপু। উনি নিজের পরিচয় দিতে বারণ করেছেন।”
“তাহলে গিফট ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে উনাকেই রাখতে বলুন।”
“আপনি কি মীরা?”
“ওর যমজ বোন হলে আপনার কোন সমস্যা?”
“আপু প্লিজ আপনি উনাকে ডাকুন।”
“কে গিফট পাঠিয়েছে আপনি আগে তার নাম বলুন। অচেনা অজানা ব্যক্তির থেকে আমার বোন গিফট নেয় না। আপনি আসতে পারেন।”
“প্লিজ আপু।”
“প্লিজ ভাই। আপনি এবার যান তো।”
তনি আপুর এত দেরি হচ্ছে কেন? মীরা ঘাড় বাঁকিয়ে উঁকি দিল। তনিকে দেখা যাচ্ছে কারো সাথে কথা বলছে। কে এসেছে? মীরা নিজেই দেখতে এলো।
“কে তনি আপু? কার সাথে কথা বলো?”
“দেখ না পাগল একটা ছেলে মাথা খারাপ করে ফেলছে।”
তনি ছেলেটার সামনেই ওকে পাগল বলেছে। ছেলেটা চোখ বড়ো বড়ো করে তনির দিকে তাকালো। মীরা এসে ছেলেটার হাতে এতগুলো গোলাপ দেখেই কৌতূহলী হয়ে পড়ল,
“এত্ত গুলো গোলাপ! তোমার জন্য? কে পাঠিয়েছে? ওয়াও।”
তনি গাধীটার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তোর জন্য এসেছে।”
মীরার গলার স্বর একধাপ উঁচু হয়ে গেল,
“আমার জন্য! ওয়াও। ভাই, কে দিয়েছেন এগুলো? কতগুলো গোলাপ! জীবনের প্রথম কেউ আমাকে গোলাপ দিলো। তাও এতগুলো!”
তনি মীরার হাত চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে শাসন করল। কিন্তু মীরা এতগুলো গোলাপ দেখেই পাগল হয়ে গেছে। তনি মনে মনে ভাবল, এই মেয়ে কি গাধা?
“দিন, দিন। কতগুলো গোলাপ! যে পাঠিয়েছে তাকে আমার হয়ে ধন্যবাদ দিয়ে দিয়েন কেমন।”
“আপু একটা বক্সও আছে।”
“বক্স! কিসের বক্স? ওটাও আমার জন্য? কে পাঠিয়েছে এতকিছু! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
তনি মীরার দিকে কটকট করে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
“গাধার বাচ্চা, তুই কি পাগল?”
তনির ধমক, চোখ রাঙানো কোনটাই মীরার গায়ে লাগছে না। কইতরি পেয়েছে পাঁচ দশটা গোলাপ। সে পেয়েছে একশোটার মতো। এখানে একশোটা গোলাপ নিশ্চয় হবে। দু’চারটা কম হলেও সমস্যা নেই। মীরা এবার কইতরিকে জ্বালাবে। এক্ষুনি গিয়ে স্টোরি দিবে। বান্ধবীদের ট্যাগ করে পোস্ট দিবে।
“পাগলের ঘরের পাগল! এগুলো কে পাঠিয়েছে তুই জানিস? চেনা নাই, জানা নাই কেউ গোলাপ পাঠাল আর তুই নিয়ে নিলি?”
“তাতে কি? যার ইচ্ছে হয়েছে পাঠিয়েছে। আমি কি কারো থেকে হাত পেতে নিয়েছি?”
“তুই একটা পাগল।”
“তোমার হিংসে হচ্ছে তাই না? ঠিক আছে। এখান থেকে দশটা গোলাপ তোমাকে দিয়ে দেব।”
“তোর গোলাপ দিয়ে তুই শাক রান্না করে খা। আমার দরকার নেই। পাগলের ছাও। যেকেউ কিছু দিলেই তুই নিয়ে নিবি? আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই?”
“গিফট নেওয়ায় আত্মসম্মান থাকবে না কেন আপু? তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”
তনি ব্যাঙ্গ করে বলল,
“ওহ-হো, অপমান বুঝো তুমি?”
মীরা মুখ মোচড়াল। আচ্ছা যে-ই দিয়েছে তাকে কি মীরা কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে জোর করেছে? নিজের ইচ্ছেতে দিয়েছে। এতে তার দোষ কি?
কে দিয়েছে তা না জেনে গিফট নেওয়ায় বাড়ির সবাই মীরার ক্লাস লাগাচ্ছে। বড়মা, ছোট চাচী সবাই বকাঝকা করছে। তনি এর মাঝে আবিরকেও জানিয়ে দিয়েছে।
“কতগুলো গোলাপ? একশোর মতো! বাপরে, বলিস কি? যে-ই পাঠিয়েছে ব্যাটা মালদার পার্টি। বক্সটা মীরাকে খুলতে দিস না। ভেতরে বোম টোম থাকতে পারে। আমি এসে তারপরে খুলবো।”
আবিরও বিষয়টা হেলায় ফেলায় নিচ্ছে দেখে তনির রাগ হলো।
“তুমি মজা করছো? কে পাঠিয়েছে, কেন পাঠিয়েছে…
” তনি আমি আসছি। বাইক চালাচ্ছি। ফোনটা রাখ প্লিজ। আমি অ্যাক্সিডেন্ট করে মরে গেলে তুই বিয়ের আগেই বিধবা হবি।”
ইভান এসে পুরোটা ব্যাপার শুনে গম্ভীর হয়ে গেল। আবির এখনও এসব মজা হিসেবেই নিচ্ছে। সবাই মীরাকে ঘিরে এমনভাবে মুখ ভার করে বসেছে মীরার এখন নিজেকে মার্ডার কেসের আসামি মনে হচ্ছে। জিনিস গুলো নিয়েও ভুল করে ফেলেছে মনে হচ্ছে। ইভান গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,
“কে পাঠিয়েছে এসব?”
মীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদাস গলায় বলল,
“আমি কী জানি?”
তনি ক্ষেপে উঠে বলল,
“জানিস না তাহলে নিয়েছিস কেন? ফেরত যেত। তাতে তোর তো কোন ক্ষতি হতো না।”
“তনি আপু, তোমরা এমন করছো যেন আমি এক হাজার টাকার মোটা এক বান্ডিল রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছি।”
ইভান ওদের থামিয়ে দিল। বিষয়টা তাকে ভাবাচ্ছে। মীরা এখন ছোট নেই। একটা মেয়েকে গোলাপ আর চকলেট উপহার দেওয়ার মানে ছোট বাচ্চাও বুঝবে। মীরাকে কেউ পছন্দ করে? কে করে? কখনও কি মীরাকে রাস্তাঘাটে, কলেজে বিরক্ত করেছে? আবির কাত হয়ে শুয়ে চকলেট খেতে খেতে বিচার সালিশ দেখছে। বেচারি মীরাবাঈ! শত্রুর আক্রমণে কপোকাত।
“চকলেটটা কিন্তু ভালো। খেতে মজা লাগছে।”
সিরিয়াস কথার মাঝে আবিরের এমন কথা শুনে তনি আগুন চোখে তাকাল। ইভান আবিরকে মজা করতে বারণ করলো।
মীরা এতক্ষণ মুখ কালো করে সবার প্রশ্নের উত্তর দিলেও এখন সে কেঁদে ফেলবে অবস্থা। সবাই তাকে কেন বকছে?
“আমি সব চকলেট আর গোলাপ ফেলে দিব। কিছু রাখব না। ভুল করে এগুলো রেখে পাপ করে ফেলেছি। সবাই আমাকে কথা শোনাচ্ছো। আমি কি কারো থেকে হাত পেতে এসব নিয়েছি?”
মীরার গলায় কান্না আটকে এলে ইভান উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
“পাগল তুই মন খারাপ করছিস কেন? তোকে তো আমরা কিছু বলছি না। তুই যে ভালো বাচ্চা এটা আমরা সবাই জানি।”
ইভা এতক্ষণ ভাই বোনদের মাঝে কোন কথা না বললেও এবার সকলকেই ধমক দিল।
“তোমরা সামান্য একটা বিষয়কে টানাহেঁচড়া করে কত বড় বানিয়ে ফেললে। এটা এমনও কোন গুরুতর ব্যাপার না। মীরা বিষয়টাকে সহজ ভাবে দেখলে তোমরা কেন পারছো না? আশ্চর্য! তোমাদের বোনকে চকলেট, গোলাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ নাকি? মেয়ে হয়ে চকলেট গোলাপ পাবে না এটাই তো কেমন বিষয়। বেশি বড় হয়ে গেছো তোমরা। তাই সব জিনিসকে এমন জটিল বানিয়ে ফেলো। সহজ ভাবে দেখলেই কারো উদ্দেশ্যে পাপ খুঁজে পাবে না। গোল মিটিং বাদ দিয়ে যার যার ঘরে যাও। মেয়েটাকে শুধু শুধু এত প্রশ্ন করছো।”
আবিরও ইভার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
“যে এগুলো পাঠিয়েছে তার টাকা বেশি হয়েছে। টাকা খরচ করার উপায় পাচ্ছিল না তাই এসব করেছে। এতে আমাদের কুটুস মীরার দোষ কী?”
মীরা নাক টানতে টানতে এবার একটু সহজ হলো। ইভা আপু, আবির ভাই তার পক্ষ নিয়েছে। ইভানও মীরার সামনে এই ব্যাপারটা নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাইল না। তবে গিফটদাতা কে হতে পারে তা খুঁজে বের করবেই।
আবির আসার পর থেকে আটটার উপরে চকলেট খেয়ে ফেলেছে। সে গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“একশোটার উপরে আছে। এক পিস দশ টাকা করে হলেও এক হাজার টাকা।”
ইভান আবিরের গাধামি দেখে বলল,
“দশ টাকা পিস গোলাপ তোর শ্বশুর দিচ্ছে। যা নিয়ে আয়।”
ইভানের টিটকারি শুনে আবির তনির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“আমার শ্বশুরের গোলাপের দোকান নেই। তবে এই ব্যবসায় লাভ হলে ফিউচারে জামাই শ্বশুর মিলে শুরু করে দিব।”
তনি মুখ মুচড়ে চলে গেল। মীরা চলে যেতে নিলে আবির ডাকল,
“মীরাবাঈ এগুলো কি আমাকে দিয়ে যাচ্ছ? আচ্ছা আমি বাড়ি নিয়ে যাই। চকলেট গুলো অনেকদিন খেতে পারব। আর গোলাপ গুলো যাবার সময় ফুলের দোকানে দশ টাকা পিস করে দিয়ে যাব।”
আবির সত্যি সত্যিই ওসব নিয়ে যাওয়া ধরলে ইভা আবিরের হাতে চড় দিল।
“একদম না। এসব আমার মিষ্টি ননদিনীর জন্য এসেছে। তুমি এতক্ষণ বসে বসে যে চকলেট গুলো খেয়েছ সেগুলোও ফেরত দিয়ে যাও।”
আবির ব্যথিত কন্ঠে বলল,
“ভাবী দুঃখ পেলাম।”
“মীরা তুমি এগুলো তোমার ঘরে নিয়ে যাও।”
মীরা রাগ করে এসব নিতে চাচ্ছিল না। ইভান বললে তারপর নিলো। রুমে এলেও তার মনটা আগের মতো ভালো নেই। জিনিস গুলো পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিল, এগুলো নেওয়ায় সবার থেকে বকা শুনে এখন মনটা তার থেকেও বেশি খারাপ হয়ে গেছে। মীরা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবল, কে তাকে এতগুলো ফুল পাঠাতে পারে? আর তাকেই কেন পাঠালো?
চকলেটের বক্স পুরোটা বেডের উপর উপুড় করে ঢেলে দিলে তার ভেতর থেকেও ছোট্ট একটা বক্স বেরোলো।
“বক্সের ভেতর বক্স! ও মাই গড! ওটার ভেতর আবার কী আছে?”
চলবে