মন পলাশ পর্ব-০৬

0
60

#মন_পলাশ ( ষষ্ঠ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১১>
সৌমী সেদিন এরপর বেশ ক্লান্ত শরীরেই অফিস থেকে বেরিয়েছিল বাড়ি যাবে বলে। এত রাতে তো অটো আর পাবে না। সেই হেঁটে হেঁটে বাস স্টপের কাছে যেতে হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই এগোচ্ছিল। কিন্তু অফিসের বাইরে বেরিয়েই অবাক হয়ে গিয়েছিল উল্টোদিকের রাস্তায় বাইক নিয়ে রোহিতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ছেলেটা তো কখন অফিস থেকে বেরিয়েছে। বাড়ি যায়নি! কথাটা ভাবতেই রোহিত বাইক নিয়ে ওর কাছে এসে বলেছিল,
———” বাবা! সময়ের খেয়াল আছে? এতক্ষণে কাজ কমপ্লিট হলো! ”
এই কথায় সৌমী বেশ ক্লান্ত স্বরেই বলেছিল,
———” বসের অর্ডার। আজকের মধ্যে মন্থলী বাজেট রেডি করে দিতে হবে! তাই এত রাত অব্দি অফিসে না থেকে উপায় ছিল না। কিন্তু তুমি বাড়ি যাওনি রোহিতদা? ”
এই প্রশ্নে রোহিত বেশ অভিভাবকের সুরে বললো,
———” ভাগ্যিস যাইনি। নইলে এত রাতে এই ফাঁকা রাস্তা দিয়ে একা একা যেতে হতো তোকে। আসলে আজ ভেবেছিলাম একসাথে ফিরবো। তাই অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম তোর জন্য। ”
এই কথায় সৌমী সত্যিই ভীষণ অবাক হয়ে বলেছিল,
———” তুমি আমার সাথে ফিরবে বলে এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো! ইশ,কেন শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে গেলে এইভাবে!”
কথাটায় রোহিত হেসে বলেছিল,
———” দাঁড়িয়ে কোথায় ছিলাম! পাশের চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। যাইহোক, চল এবার। তোকে কিছুটা এগিয়ে দিই। ”
রোহিতের কথাটা শুনে সৌমী আর কথা বাড়ালো না। উঠে বসলো বাইকে। সত্যি, রোহিতদা ছিল বলে এত রাতে এই ফাঁকা রাস্তা দিয়ে একা একা ফিরতে হলো না! কথাটা ভেবে বেশ নিশ্চিন্ত লাগছিল যেন।
তবে সৌমী জানতো না দূর থেকে ওর এই রোহিতের সাথে একই বাইকে যাওয়ার দৃশ্যটা একজন দেখছে নিশ্চুপে। অর্জুন আসলে সৌমীর কথা ভেবে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল অফিসের বাইরে ওকে লিফ্ট দেবে বলে। আজ মেয়েটাকে অকারণে অনেক কথা শুনিয়েছে। খুব রুডলি বিহেভ করেছে সকালে। মাঝে মাঝে যে সত্যি কি হয়ে যায় ওর! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মনে হয়েছিল এত রাতে অটো স্ট্যান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। সৌমীর বাড়ি ফিরতে অসুবিধা হবে। তাই নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল, বাড়ি যাওয়ার পথে সৌমীকে ড্রপ করে দেবে ভেবে। কিন্তু অফিসের বাইরে এসেই ও থমকে গেছিল। সৌমী একটু দূরে অফিসের ওই নতুন ছেলেটার সাথে বাইকে করে চলে যাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখেই কেমন এলোমেলো লাগছিল অর্জুনের। এই ছেলেটার সাথে এই কয়েকদিনে এমন কি বন্ধুত্ত্ব হয়ে গেল যে একেবারে ওর বাইকে চড়ে যেতে হচ্ছে! দৃশ্যটা যেন খুবই চোখে লাগছিল অর্জুনের। তবে এই মুহূর্তে নিজের মনেও একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল। ও বুঝতে পারছিল না যে সৌমীকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে ওর নিজের কেন এত খারাপ লাগছে! এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না। এই হিসেবের বাইরে ভাবনাগুলো হঠাৎ কেন আসছে মনে!

< ১২ >
যাইহোক, এই ভাবনার পর কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। আজ আঠাশে নভেম্বর। সৌমীর জন্মদিন। কথাটা কথায় কথায় নন্দিনী বলেছিল রুক্মিণীকে। রুক্মিণী এরপর অনলাইনে একটা চুড়িদার পছন্দ করে এসেছিল মোবাইল নিয়ে ছেলের কাছে। অর্জুন সেই মুহূর্তে নিজের ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে ব্যস্ত ছিল, সেই সময় হঠাৎ মা এসে মোবাইলটা অর্জুনের সামনে ধরে বলে উঠলো,
——–” এই চুড়িদারটা অনলাইনে একটু অর্ডার করে দে তো। আমি বাবা এইসব কি করে করে এখনো শিখে উঠতে পারলাম না! ”
এই কথায় অর্জুন বেশ অবাক হয়ে বললো,
———” তুমি আবার চুড়িদার কবে থেকে পড়তে শুরু করলে! হঠাৎ কি হলো? ”
এই প্রশ্নে রুক্মিণী অধৈর্য্য হয়ে বললো,
———-” আরে। ধুর। আমি নিজের জন্য নিচ্ছি না কি! সৌমীর জন্য এটা পছন্দ করেছি। নন্দিনীর মুখে শুনলাম আজ ওর জন্মদিন, তাই মেয়েটাকে কিছু দেব ভাবলাম। ”
এই কথায় অর্জুন কয়েক সেকেন্ড থমকে গিয়ে বললো,
———-” আজ সৌমীর জন্মদিন! ”
কথাটা বলতেই সৌমীর মুখটা যেন আলতো ভাবে অর্জুনের চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এরকম আজকাল মাঝে মাঝেই হয়। আনমনে অবচেতনে ওই মিষ্টি মুখের মেয়েটা উঁকি দেয় ওর সামনে। কথাটা মনে হতেই নিজেকে আবার কিছুটা হিসেবী করলো অর্জুন, তারপর আর কথা না বাড়িয়ে সৌমীর জন্য চুড়িদারটা অর্ডার করে দিল অনলাইনে।
কিন্তু সেদিন অফিসে সৌমী যখন ওর কেবিনে এসেছিল কিছু ফাইল রাখতে, অর্জুন কিছুটা হিসেবের বাইরে গিয়েই বলে উঠেছিল সৌমীকে হঠাৎ আস্তে গলায়,
———” হ্যাপি বার্থডে.. ”
কথাটা শুনে সৌমী যেন আকাশ থেকে পড়লো! হঠাৎ এই রাগি বদমেজাজী লোকটার কি হলো! কাজের কথা ছাড়া কোনদিন একটা শব্দও বলেনি বাড়তি। তাহলে আজ হঠাৎ জন্মদিনের উইশ! কথাটা ভাবতেই সৌমী নিজের মনেই বলে উঠলো,
———” আপনি! আপনি কি করে জানলেন? ”
এই কথায় অর্জুন অল্প ইতঃস্তত হয়ে বললো,
——–” না মানে, মায়ের মুখে শুনেছি। ”
কথাটায় সৌমী কি আর বলবে ভেবে না পেয়ে বললো,
——–” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আসছি। ”
কথাটা বলেই ঘরটা থেকে বেরিয়ে এলো। যাইহোক, সেদিন এরপর ক্যান্টিনে রোহিত এসে হাজির। আজ ও সৌমীকে বেশ জোর দেখিয়েই বললো,
———” আজ তোর জন্মদিন। আজ আমার একটা কথা শুনতে হবে। অফিস শেষে আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে আজ। আমি কিছু প্ল্যান করেছি। তোর জন্য সারপ্রাইজ। ”
এই কথায় সৌমী সাথে সাথেই বলে উঠলো,
———” কিন্তু রোহিতদা মা তো বাড়িতে একা। দেরি করে ফিরলে মা চিন্তা করবে। তার থেকে তুমি আমাদের বাড়ি চলো না! আজ রাতে আমাদের সাথেই ডিনার করবে। ”
কথাটায় রোহিত বেশ জেদ দেখিয়েই বললো,
———” আমি কিছু জানি না। আজ তোকে আমাকে সময় দিতেই হবে। ”
কথাটা বলেই ও চলে গেছিল ক্যান্টিন থেকে। কিন্তু সৌমী বুঝতে পারছিল না কি করবে আজ! রোহিতের মুখের ওপর তো না ও বলতে পারবে না। এত ভালো বন্ধু ছেলেটা! এইসবই ভাবছিল। তবে সৌমী খেয়াল করেনি ক্যান্টিনে সেই সময় দূরের একটা টেবিলে অর্জুন বসেছিল, আর ও আনমনে রোহিতের সব কথা শুনেছে। আজ যেন এইসব শুনে একটু বেশিই খারাপ লাগছে ওর। বুঝতে পারছে না কেন বুকের ভিতর একটা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যতবার সৌমী আর রোহিতকে একসাথে দেখছে। কেমন একটা রাগ হচ্ছে যেন অকারণে। আর এই রোহিত বলে ছেলেটা অদ্ভুত গায়ে পড়া তো! সৌমী বলছে ও বাড়ি না ফিরলে মা চিন্তা করবে। তাও বোঝার নাম নেই। ভেবেই কেমন বিরক্তি আসছে যেন। তবে সেদিন এইসব এলোমেলো চিন্তার মাঝেই অর্জুন থেমে থাকেনি। অফিস শেষে সৌমীকে রোহিতের বাইকের পিছনে বসে যেতে দেখে ওর যেন ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। ও কিছু না ভেবেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল ওদের বাইকটাকে ফলো করার জন্য। অর্জুন আসলে সৌমীকে যেন একা ছাড়তেই পারছিল না রোহিতের সাথে। কেমন একটা দুজনের মধ্যে দেয়াল তুলে দিতে ইচ্ছে করছিল ওর। যাইহোক, এইসব চিন্তার মাঝেই খেয়াল করেছিল রোহিত একটা ফাঁকা পার্কের সামনে এসে বাইকটাকে দাঁড় করালো। সৌমী এই পার্কটার সামনে এসে অবাক হয়ে বলেছিল,
——–” এই পার্কে তো ইউনিভার্সিটি লাইফে কত বন্ধুদের সাথে এসে আমরা আড্ডা মারতাম! তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলে! ”
এই কথায় রোহিত আলতো হেসে বলেছিল,
———” পুরনো সময়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। তাই নিয়ে এসেছি।”
এই কথায় সৌমী কি বলবে ভেবে পেল না। কিছু না বলেই ঢুকে এলো রোহিতের সাথে পার্কে। এই সন্ধ্যেবেলা পার্কটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা আর অন্ধকার। তাই একটু অস্বস্তি লাগছিল ওর। তবে রোহিতকে মুখে কিছু বলতে পারেনি এই ব্যাপারে। তবে সৌমী জানতো না অগোচরে এই পার্কে আরেকজন আছে যে দূর থেকে স্থিরভাবে দেখছে ওদের। আসলে এই ফাঁকা পার্কের সামনে রোহিতকে আসতে দেখে অর্জুন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি। গাড়ি থেকে নেমে নিজেও এসেছিল ভিতরে। তবে অর্জুন একটু দূরে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিল ওদের থেকে।
সেদিন এরপর রোহিত ব্যাগ থেকে এক গোছা গোলাপ ফুল, একটা চকলেটের বাক্স বার করে সৌমীর হাতে দিয়ে বলেছিল,
——–” আমি আজ তোকে একটা কথা বলবো। আমি জানি, আমি যেমন তোর জন্য ফিল করি, তুইও আমার জন্য করিস। শুধু বলতে পারিস না এই যা। তবে আজ আমি আমাদের মধ্যে এইসব না বলা কথাগুলোকে শেষ করতে চাই। আই লাভ ইউ সৌমী.. আই রিয়েলি ডু.. ”
কথাটা বলেই রোহিত চোখ বন্ধ করে এগিয়ে গিয়েছিল সৌমীর ঠোঁটের দিকে, নিজের ঠোঁটটাকে ছুঁয়ে দেয়ার জন্য। অর্জুন দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে হাত দুটো মুঠো করে নিয়েছিল নিজের। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল ওর। তবে এই মুহূর্তেই অর্জুন হঠাৎ খেয়াল করলো সৌমী ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল রোহিতকে নিজের কাছ থেকে। তারপর কিছুটা এলোমেলো হয়েই বললো,
——–” এইসব কি বলছো তুমি রোহিতদা! আর এটা তুমি কি করতে যাচ্ছিলে! আই অ্যাম সরি.. কিন্তু আমি তোমাকে কোনদিন ওইভাবে দেখিনি। আমি আসছি। ”
কথাগুলো বলেই সৌমী উঠে গিয়েছিল বেঞ্চটা থেকে চলে আসার জন্য। কিন্তু রোহিত এই মুহূর্তে পিছন থেকে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলেছিল,
———-” এত সহজ চলে যাওয়া! আর ফিল করিস না মানে! এতদিন এত গল্প, অফিসে এত হাসি মজা, আমার বাইকে চড়ে অফিস শেষে বেরিয়ে আসা, বাড়ি ফেরা, এইসব কি ছিল? নাটক করছিলিস ? ”
কথাগুলো কেমন হিংস্র স্বরে বলেছিল রোহিত। সৌমী খেয়াল করেছিল এক মুহূর্তে ছেলেটা যেন বদলে গেছে ওর সামনে। এই সময় কেমন ভয় লাগতে শুরু করেছিল ওর। তাও কোনভাবে নিজেকে সামলে বলে উঠেছিল,
———-” এইসব কি বলছো! আর হাতটা ছাড়ো আমার। আমি শুধু তোমাকে একজন বন্ধু ভাবি। এর বেশি কিছুই না। ”
কথাটা বলেই সৌমী জোর করে নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল রোহিতের থেকে। কিন্তু রোহিতের মধ্যে যেন একটা জেদ চেপে গেছিল হঠাৎ। সৌমীর না টা ও কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। তাই এক ঝটকায় সৌমী কে নিজের কাছে টেনে বলেছিল,
———-” সেই ইউনিভার্সিটির দিনগুলো থেকে লাইক করি আমি তোকে। সেই জন্য ফেসবুকে যখন দেখলাম তোর অফিসের নাম, সেই একই অফিসে গিয়ে চাকরি নিয়েছি আমি। ছেড়ে দেব বলে! কোনো মতেই না। তুই শুধু আমার। আর আজ সেটা আমি প্রমাণ করেই ছাড়বো। ”
কথাটা বলেই ও যেন সৌমীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। জোর করে ওকে নিজের মধ্যে আঁকড়ে ধরে নিজের ঠোঁটটা ওর ঠোঁটে ছুঁয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করলো। কিন্তু এই মুহূর্তে অর্জুন আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ও প্রায় দৌড়ে এসে রোহিতের কলার ধরে ওকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিল সৌমীর কাছ থেকে, তারপর একটা চর মারলো সজোরে রোহিতের গালে। এই সময় এই ফাঁকা পার্কে অর্জুনকে দেখে রোহিত যেন কেমন ঘাবড়ে গিয়েছিল এই মুহূর্তে। তবে সৌমী যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল নিজের। ও এলোমেলো ভাবে অর্জুনের কাছে এসে ওর হাতটা আঁকড়ে ধরেছিল। রোহিত সেই সময় কাঁপা স্বরে বলেছিল,
——–” স্যার আপনি! এখানে? ”
এই কথায় অর্জুন ভীষণ কঠিন হয়ে বলেছিল,
———” জাস্ট শাট আপ.. তোমার সাহস কি করে হলো একটা মেয়ের সাথে এইসব করার! তোমার মতন লোককে জেলে দেয়া উচিত। কাল থেকে আর আমার অফিসে মুখ দেখাবে না। নইলে ফল খুব খারাপ হবে। আর সৌমীর থেকে দূরে থাকবে। কথাটা যেন মাথায় থাকে। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই অর্জুন সৌমীর হাতটা ধরে এগিয়ে গিয়েছিল বাইরে, নিজের গাড়ির দিকে। সৌমী এই সময়ে কিরকম কাঁপছিল ভয়ে। এখনো মনে পড়ে যাচ্ছে রোহিতের সেই হিংস্র মুখটা। সব দোষ ওর। কেন এতটা বিশ্বাস করলো ছেলেটাকে! কিছু না ভেবে ওর সাথে বেরিয়ে পড়লো এইভাবে। একবারও বুঝলো না রোহিত কি চায়! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই কেঁদে ফেলেছিল সৌমী। অর্জুন সেই সময় গাড়ি থেকে জল বার করে ওর কাছে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল,
———” রিল্যাক্স.. জল খাও। কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে। আর জন্মদিনের দিন এইভাবে কাঁদতে নেই। ”
কথাগুলো শুনে সৌমী ঠিক কি বলবে বুঝতে পারেনি। যেই মানুষটাকে এতদিন ধরে এত খারাপ ভাবতো সে ই আজ এইভাবে পাশে এসে দাঁড়ালো! কথাটা ভাবতেই সৌমী বললো ভীষণ মন থেকে,
———” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার.. আপনার জন্য আজ আমি ঠিক আছি। আসলে দোষটা আমারই। আমি রোহিতদাকে এতটা বিশ্বাস করতাম! কখনো ভাবিনি রোহিতদা আমার সাথে এইসব করতে পারে! ”
কথাগুলো এখনো কিরকম অবিশ্বাস্য গলায় বলেছিল সৌমী। কিন্তু অর্জুন এর উত্তরে শান্ত স্বরে বলেছিল,
———-” বিশ্বাস এত সহজে কখনো করবে না কাউকে। খুব কম লোক পারে বিশ্বাসের দাম রাখতে। বাবা যখন মারা গেছিল আর আমি ব্যবসায় নতুন এসেছিলাম, তখন বহু লোক নানা রকম ভাবে আমার বিশ্বাস ভেঙেছে। এই ব্যবসাটাকে শেষ করে দেয়ার জন্য নানা রকম ভাবে ঠকিয়েছে। আসলে আমার বয়স তখন একুশ। অতো বুঝতাম না। কিন্তু সেইসব ঘটনাগুলোর পর আজ আর আমি কাউকে বিশ্বাস করি না সহজে। নিজের চারিদিকে একটা দেয়াল তুলে দিয়েছি। আর বেশিরভাগ লোকই সেই দেয়াল ভাঙতে পারে না। ”
কেমন নিজের মনে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল অর্জুন। আর এই প্রথম সৌমী নিস্পলক দৃষ্টিতে শুনছিল মানুষটাকে। সত্যি, অর্জুনের মধ্যে যে এই ভাঙ্গাচোরার গল্প আছে , সেটা এতদিন সৌমী জানতোই না! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করলো অর্জুন নিজেকে সামলে নিয়েছে আবার। ও এরপর আস্তে গলায়ই বলেছিল সৌমীকে,
———” তোমাকে বাড়িতে ছেড়ে দিচ্ছি। গাড়িতে বসো। ”
কথাটা বলেই গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিল সৌমীর সামনে। সৌমী এবার নিশ্চুপে গাড়িতে উঠে বসেছিল। তবে সেদিন কিছুক্ষণ পর সৌমী আনমনেই জিজ্ঞেস করে উঠেছিল,
———-” স্যার আপনি পার্কে এই সময় কিভাবে এলেন? ”
অর্জুন এই প্রশ্নে কি বলবে ঠিক বুঝতে পারেনি। তারপর কিছুটা বানিয়ে আলতো স্বরে বলেছিল,
———” আসলে এই পার্কটাতে আমি মাঝে মাঝে আসি। কাজের খুব স্ট্রেস থাকলে এখানে এসে বসে থাকি কিছুক্ষণ। মাথাটা হালকা হয়ে যায়। আজও সেরকমই। ”
কথাটায় সৌমীর বেশ আশ্চর্য লাগলেও আর কোন কথা বাড়ায়নি।
চলবে।