মন ফাগুন পর্ব-০১

0
1

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#সূচনা_পর্ব

বিয়ে বাড়িতে চুরি করে খাবার খেতে এসে নিজেই বিয়ের পাএী হয়ে বসে রয়েছি।শুধু দুইটুকরা মাংস জন্য এখন বউ হয়ে বসে রয়েছি কাজী যখন কবুল বলতে বলে তখন হুঁশ হয়। কাজি বিয়ের কাজের জন্য ঘোমটার নিচে থাকা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে –

“- মা বলো কবুল “।

আমার নাম মিহি সেটা পরে জানবেন কিন্তু এখন বিয়ে থেকে কি করে বাঁচবো সেটা বুঝতে পারছি না। কাজির কবুল কথাটা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে কি হবে কে যানে এই বিয়ে করা যাবে না। মিহি কোনো কথা বলতে যাবে তার আগে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে সবার সামনে দাঁড়ায়। মেয়েটা বলে –

“- সবর্নাশ হয়ে গেছে বড়ো মা অনেক বড়ো সর্বনাশ হয়ে গেছে “।

মিহি সেই মেয়ের কোনো কথা বলে না কিন্তু বিয়ের বাড়ির সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যায় কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারে না। পাএ নিহান সে জিজ্ঞেস করে –

“- কি হয়েছে নূহা কি এমন সর্বনাশ হয়েছে শুনি “।

নূহা জামার নিচ থেকে একটা চিরকুট বাহির করে দেয় আর মাথা নিচুঁ করে দাঁড়িয়ে বলে –

“- আসলে নিহান ভাইয়া মানে হলো বাড়ির বেলকনি দিয়ে নিয়া আপি পালিয়ে গেছে অন্য একজনের সাথে৷ আর যাওয়ার আগে একটা চিরকুট লিখে গেছে যেখানে সে বলেছে সে নাকি আপনার মতো এইরকম একটা রাগী আর বদমেজাজী মানুষের সাথে সংসার করতে পারবে না। আর সে অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই পালিয়ে গেছে তার সাথে তারা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করবে “।

নূহা কথা বলা শেষ করার আগে নিহান উঠে দাঁড়ায় চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে। নিহানের মা হানিয়া বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখে নিহানের কি রাগ সেটা ওনি খুব ভালো করে যানে। নিয়া এমন কাজ করতে পারে ওনি ভাবতে পারেন নাই কিন্তু এখন নিহানকে কি করে সামলাবে সেটা বুঝতে পারছে না। নিহান একটা রাগী কণ্ঠে বলে –

“- বডিগার্ড তাড়াতাড়ি আসো এখুনি গাড়ি নিয়ে নিয়াকে খুঁজে বের করো। যদি বিয়ে করি তাহলে নিয়াকে বিয়ে করব “।

মিহি সবার কথা শুনছে যাক বাঁচা গেছে ওর দিকে কারো খেয়াল নাই এই সুযোগে বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া যাবে। মিহি একটু একটু করে পিছিয়ে যেতে থাকে যদিও বিয়ে বাড়িতে সবার এই দিকে কোনো খেয়াল নাই। কিন্তু হঠাৎ করে একটা আওয়াজ হয় –

‘- এই মেয়ে দাড়াঁও ওখানে “।

মিহি তবুও চলা শুরু করে কিন্তু হঠাৎ করে আরেকটা ধমক পড়ে –

“- এই তোমাকে দাঁড়াতে বলেছি না দাড়াঁও “।

মিহি থেমে যায় ওর দিকে একটা লোক আসছে ঘোমটার আড়াল থেকে ভালো করে মুখ দেখতে পারছে না। লোকটা সামনে এসে ঘোমটা খুলে দেয় মিহি বুঝতে পারে সে ফেঁসে গেছে তাই পিটপিট করে চোখ খুলে বলে –

“- জি বলেন “।

সামনে যে লোকটা দাঁড়িয়ে রয়েছে সে আর কেউ না বিয়ের পাএ নিহান মল্লিক। তার মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠছে কোনো বা রাগ করবে না বউ পালিয়ে গেছে বেচারার। নিহান যখন নিজের হবু বউকে খুঁজার জন্য বের হবে ঠিক তখন ঘোমটা পড়া একটা মেয়েকে পিছন থেকে পালিয়ে যেতে দেখে। নূহার কথার মতো যদি নিয়া বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তাহলে এই ঘোমটা পড়া মেয়ে যে এতোখন বসে রয়েছে সে কে। নিহান বলে –

“- এই মেয়ে তুমি কে যদি নিয়া বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তাহলে তুমি বউ সেজে কোনো বসে রয়েছো।তুমি কে?

মিহির কলিজার ভিতরে যাও একটু সাহস ছিলো তাও শেষ হয়ে গেছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার কণ্ঠ শুনে। মিহি কি বলবে এখন সে বিয়ে বাড়িতে চুরি করে খাবার খেতে এসে দুই টুকটা মাংসের জন্য বউ সেজে বিয়ের আসরে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেছে। যদি সব জেনে পুলিশের কাছে বলে দেয় তাহলে কি হবে কিন্তু ও পুলিশ থেকে বাচঁতে বিয়ে বাড়িতে ঢুকেছে। মিহি কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

নিহান সামনে থাকা মেয়েটার এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা মেনে নিতে পারে নাই তার রাগ আরো দুইগুণ বেড়ে যায়। নিহান এবার ধমক দেয় আর বলে –

“- এই মেয়ে তুমি কি বোভা কথা কানে যায় না কি হলো আমার কথার উত্তর দেও। কে তুমি? বউয়ের সাজে নিয়ার জায়গায় তুমি কি করো?

আমার নাম মিহি তালুকদার। অর্নাসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী পড়াশোনা এতো ভালো না প্রায় সব বিষয়ে ফেল করার মতো ছাত্রী আমি। তবে আমাদের একটা বন্ধুদের গ্রুপ রয়েছে সেখানে আমরা পাঁচজন বন্ধু থাকি।সারা বলে –

“- আরে মিহি দেখ কতো বড়ো বিয়ে বাড়ি আর কতো মানুষ দেখ কতো কতো বর্ডিগার্ড যদি ধরা পড়ে যায় “।

মিহি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় পাশে থাকা সারার দিকে তাকায় এইটা একটা ভিতুর ডিম। বিয়ে বাড়িতে চুরি করে খাবার অনেক আগে খেয়েছে এইটা নতুন না তাহলে এতো ভয় কোনো পাবে। মিহি বলে –

“- আরে ধুর এতো ভয় পেলে হয় নাকি আর এতো বড়ো বাড়ি মানে ভালো খাবার দিবে। চল ভিতরে যায় আর পুরো বিশ্বাসের সাথে ঢুকে খাবার খেতে হবে যাতে সন্দেহ না হয় বুঝতে পারলি “।

মিহি আর বন্ধুরা সবাই বিয়ে বাড়িতে ঢুকে যায় যদি ও কেউ সন্দেহ করে নাই কোনো করবে সন্দেহ এতো ভালো অভিনয় করেছে তারা। মিহি খাবার খেতে থাকে আর বলে –

“- দেখ কতো ভালো খাবার কি টেস্ট মনে হয় বেশ বড়োলোক এরা।শুধু শুধু এতোখন সবাই আসতে চাইছিলি নাহ দেখলি কি ভালো খাবার “।

“- আচ্ছা মিহি তোর কোনো চুরি করে খাবার খেতে হবে তোর বাবার কতো সম্পদ রয়েছে। তোর বাড়িতে এইসব রোজ রান্না করা হয় “।

“- আরে ধুর আমার বাবা মানে হলো মাসুদ তালুকদার সে বাবা না একটা খাটাশ লোক আর আমার বাবার বাড়ি সেটা হলো একটা আয়নাঘর। ওই বাড়িতে থাকা আমার সম্ভব না তাই এখানে থাকি “।

মিহি খাবার খেতে থাকে বিয়ে বাড়িতে সবাই অনেক আনন্দ করছে এই বাড়ির বড় ছেলে নিহান এবং এই এলাকার মন্ত্রী নিহান মল্লিক তার বিয়ে। নিহানের বিয়ে হচ্ছে তার চাচাতো বোন নিয়ার সাথে তারা এক বাড়িতে থাকে ছোটবেলা থেকে বিয়ের কথা ঠিক হয়ে গেছে তাই এখন বড়ো হয়ে বিয়ে হচ্ছে। শহরের একটা বড়ো হোটেলে মন্ত্রী বিয়ে বলে কথা বরের গাড়ি পৌঁছে গেছে সবাই আনন্দ করছে। কিন্তু নিয়া নিজের রুমে বসে রয়েছে তার চোখে শুধু চিন্তা রয়েছে কারণ এই বিয়ে সে করতে চাই না।

নিয়া কাউকে অনেক বার ফোন করছে অবশেষে একজন ওর দরজার কাছে আসে এখন সবাই বউ দেখতে বিজি তাই আশেপাশে কেউ নাই। নিয়া দরজা খুলে দিয়ে বলে –

“- এতো দেরি কোনো করলে আসতে তুমি যানো কতো টেনশনে ছিলাম আমি “।

“- আরে নিয়া তুমি টেনশন করো না সব ঠিক হয়ে যাবে আসলে বরের গাড়ি আসতে দেরি হয়েছে তাই। আর আমাকে নিহানের সাথে আসতে হয়েছে ওর বন্ধু বলে কথা তাই “।

নিয়া যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ না বরং নিহানের বন্ধু রায়ান। নিয়া কান্না করতে করতে রায়ানকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –

“- রায়ান আমি এই বিয়ে করতে পারব না আমি তোমাকে ভালোবাসি নিহানকে না। তুমি দয়া করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও রায়ান “।

“- তুমি টেনশনে করো না নিয়া আমি তোমাকে নিয়ে যাবো তবে নিহান কি করবে সেটা বুঝতে পারছো তুমি “।

“- নিহান ভাই কি করবে সেটা আমি জানি না কিন্তু তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমি মরে যাবো। আর নিহান ভাইয়ার মতো রাগী আর বদমেজাজি মানুষের সাথে আমি থাকতে পারব না “।

“- তোমাকে থাকতে হবে না নিহানের সাথে আমি তোমাকে ঠিক নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন চলো তুমি বেলকনি দিয়ে বাড়ির বাগানের পিছনে যাবে আর আমি বাহির দিয়ে কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না। তুমি যাও আমি আসছি “।

রায়ান দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে যায় আর নিয়া বেলকনি দিয়ে দড়িঁ ঝুলিয়ে বের হয়। মিহি খাবার শেষ করে হাত ধৌত করার জন্য বাড়ির পিছনের দিকে আসে যখন হাত ধুয়ে চলে যাবে হঠাৎ করে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। মেয়েটার পড়নে দামী গয়না শাড়ি রয়েছে মনে হচ্ছে বউ। মিহি বলে –

“- তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি বউ তাহলে এখানে কি করছো। এই তুমি কি বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছো “।

নিয়া ভয় পেয়ে যায় যদি এই মেয়ে সত্যি জেনে যায় তাহলে সবাইকে বলে দিবে তখন ওই রাগী নিহানেন সাথে ওর বিয়ে হবে। নিয়া বলে –

“- আরে ধুর আমি পালিয়ে যাবো কোনো। শুধু ডিরেক্টর বলেছে বাড়িতে যেতে আসলে আমাকে বিয়ের সাজে বউ বউ লাগছে না তাই এই নাটক আমি করতে পারব না। সেইজন্য চলে যাচ্ছি “।

“- কি নাটক মানে “।

“- তুমি যানো না এইটা বিয়ে বাড়ি না নাটক হচ্ছে এখানে খাওয়া দাওয়া সব নাটকের শুটিং হচ্ছে “।

“- কিন্তু সারা বললো যে বিয়ে বাড়ি “।

নিয়া বুঝতে পারে মিহির কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই যখন রায়ান সামনে আসে তখন তাকে বলে বলতে। রায়ান নিয়ার কথা বুঝতে পারে সেও মিহিকে বলে এখানে নাটক চলছে যদিও মিহি কোনো কথা বুঝতে পারে না। রায়ানের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে রায়ান বলে –

“- দেখো এখন যখন এই মেয়েকে ডিরেক্টর রিজেক্ট করে দিয়েছে তাহলে বউ হিসাবে কাউকে অভিনয় করতে হবে। তুমি যদি অভিনয় করো তাহলে টাকা দিবে তোমাকে আবার ফ্রিতে খেতে দিবে “।

“- সত্যি আবার খেতে দিবে “।

“- হুম দিবে তুমি যতো চাও ততো খেতে পারবে আর টাকা ও দিবে। তাহলে তুমি রাজি “।

মিহি রাজি হয়ে যায় যদি খেতে দেয় তাহলে ভালো এমনি এই বিয়ে বাড়ির রান্না অনেক ভালো হয়েছে আর টাকা দিবে। মিহির বাবা যে খাটাশ যা টাকা দিয়েছে তাতে ওর পুরো মাস চলবে না তাই এই টাকা দিয়ে চালাতে পারবে তাই রাজি হয়ে যায়। রায়ান নিয়াকে গাড়িতে বসায় আর মিহিকে রুম দেখিয়ে দেয় যাতে সে সেখানে গিয়ে রেডি হতে পারে। আর বলে যাতে ঘোমটা দিয়ে থাকতে যাতে কেউ না দেখে মুখ।

নিহান মিহির কথা শুনে রাগ আরে বেড়ে যায় সাহস কি করে হয় মেয়েটার এইরকম নাটক করার। নিহান বলে –

“- এই মেয়ে তোমার কি এইসব নাটক মনে হয় এই বিয়ে এতো লোক সব আসলে। আর বিয়ে বাড়িতে চুরি করে খাবার খেতে আসো মানে চোর কোথাকার “।

নিহানের রাগ দেখে ওর পিএস ছুটে আসে আর বলে –

“- স্যার বাহিরে সাংবাদিক রয়েছে সবাই কথা বলা শুরু করে দিয়েছে এখন কি করব স্যার “।

“- হুম তবে রায়ান এইটা কি করে করতে পারল ও যানে এই বিয়ে কতো জরুরি সামনে নিবার্চন রয়েছে। রায়ানকে আমি ছাড়ব না “।

“- কিন্তু স্যার এখন কি করব “।

“- একটা কাজ করো তুমি সবাইকে বলে দাও বিয়ে হবে আর সাংবাদিককে মেনেজ কর। আর বউ হবে

#চলবে