মন ফাগুন পর্ব-০২

0
39

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০২ ( জোর করে বিয়ে)

নিহানের কথাটা শুনে ওর সানভি বাহিরে মিডিয়াকে শান্ত করতে যায় সামনে নিবার্চন এখন যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে সমস্যা হবে। মিহি বিয়ের কথা শুনে অনেক খুশি হয় মানে এই খাটাশ লোক অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করবে আর ও বেঁচে যাবে। মিহি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক সময় হয়ে গেছে ওর বন্ধুরা মনে হয় চলে গেছে। মিহি পিছনে ফিরে চলে যেতে থাকে কিন্তু তখন নিহান হাত ধরে ফেলে। মিহি বলে –

^_ কি হয়েছে এইরকম করে হাত ধরলেন কোনো আমার। আমাকে যেতে হবে “।

নিহান বাড়ির সবাইকে একটা রুমে যেতে বলে আর মিহির হাত ধরে ওকে একটা আলাদা রুমে নিয়ে যায়। মিহি যেতে চাই না কিন্তু নিহান জোর করে ওকে নিয়ে আসে। রুমে ঢুকে নিহান দরজা লাগিয়ে মিহির হাত ছেড়ে দেয়। নিহানের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের হাত ভালো করে দেখে একদম লাল হয়ে গেছে এতো জোরে ধরেছে হাতটা। মিহি বলে –

“- এই আপনি কেমন লোক হুম কি খান বলুনতো। এইরকম জোরে কেউ হাত ধরে হাত লাল হয়ে গেছে প্রতিদন কি পালোয়ানদের মতো এক গামলা ভাত খান “।

নিহান দরজা বন্ধ করে মিহির দিকে তাকায় এই চোর মেয়েটা ওকে পালোয়ান বলছে। নিহান বলে –

“- এই মেয়ে তুমি তখন পিছনে ফিরে কোথায় যাচ্ছিলে। একতো চুরি করে বিয়েতে খেতে এসেছো আবার কি চুরি করতে গিয়েছিলে শুনি “।

“- এই দেখুন একদম আমাকে চোর বলবেন না আমি খুব ভালো মেয়ে। আর তখন চুরি করতে যাবো কোনো বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম আপনি না বলবেন বিয়ে করবেন “।

“- হুম বিয়ে করব কিন্তু সেটা অন্য কাউকে না বরং আপাকে সো ভালো করে রেডি হন বিয়ে হচ্ছে আমাদের “।

মিহি কি বলবে সেটা ভুলে গেছে এই লোকটার মাথায় সমস্যা আছে মনে হয় কি বলছে তাকে বিয়ে করবে মানে
। মিহি বলে –

“- কি বললেন আমাকে বিয়ে করবেন মানে আমি আপনাকে বিয়ে করব না। বাসায় যাবো আমি যেতে দেন আমাকে। আপনি নিজের বউকে বিয়ে করেন আমাকে না “।

“- হুম সেটা আমি নিয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছি কিন্তু আমি সব খারাপ করে দিলেন। সো এখন এই বিয়ে আপনি করবেন “।

“- আমি কি আপনার নিয়াকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছি না কি সেইতো অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। আর আমি বিয়ে করতে পারব না আপনার মতো এইরকম খাটাশ লোকের সাথে সারাজীবন সংসার করতে পারব না আমি “।

“- আমার কোনো শখ নাই তোমার মতো চুন্নি মেয়ের সাথে সারাজীবন সংসার করার। সামনে নিবার্চন তাই এখন কোনো ঝামেলা হোক সেটা আমি চাই না তাই যতদিন না নিবার্চন শেষ হবে ততদিন আমার বউ হয়ে থাকতে হবে। আর এর জন্য যত টাকা দরকার তত টাকা দিবো “।

“- এইসব টাকার গরম কাকে দেখাচ্ছেন আপনি নিজের টাকা নিজের কাছে রাখুন। আপনার মতো এইরকম টাকা আমার ও আছে আমাকে দেখে কি আপনার ফকিন্নি মনে হয় যে টাকা দিচ্ছেন “।

“- ফকিন্নি না হলে কেউ কি বিয়ে বাড়িতে চুরি করে খাবার খেতে আসে আর দুই টুকরা মাংসের জন্য কবুল বলতে রাজি হয়ে যায় “।

“- কি বলবেন আমি ফকিন্নি আমার ফ্যামিলির বিষয়ে যানেন আপনি। আপনার মতো কথায় কথায় টাকার গরম আমি ও দেখাতে পারি কিন্তু আমার বাপ একটা খাটাশ লোক একটা টাকা আমাকে দেয় না। আর আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না দ্যার্টস ইট “।

নিহান বুঝতে পারে এই মেয়ে বেশ জেদি টাকা দিয়ে মানবে না তাই কি করতে হবে সেটা নিহান ভালো করে যানে। নিহান বলে –

“- ওকে সমস্যা নাই আপনি যখন বিয়ে করতে রাজি নন তখন আর কি করার চলে যাও “।

“- বাহ এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলেন খুব ভালো। তাহলে আমি যায় রাত দশটা বেজে গেছে মেসের ওই গার্ডটা খুব রাগী দেরি হয়ে গেলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে “।

“- হুম যাবেন তো অবশ্যই আপনি তবে মেসে না বরং জেলে “.

“- জেলে মানে আমি কোনো জেলে যাবো “।

“- বিয়ে বাড়িতে বিনা অনুমতিতে ঢুকে খাবার খাওয়ার অপরাধে বিয়ের কনে কে পালাতে সাহায্য করার অপরাধে। আর কনের গয়না নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে আপনাকে জেলে যেতে হবে “।

“- কিন্তু আমি এইসব করি নাই “।

“- সেটা আপনি যানেন আর আমি জানি পুলিশ যানে না সো জেলে যাওয়ার জন্য রেডি থাকেন। আর কি বললেন আপনার বড়োলোক বাবা তাকে বলবেন জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে “।

মিহি তার বাবার কথা মনে পড়ে তার বাবা জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবে তাকে অসম্ভব। মিহিকে মেরে ফেলবে এখন সে কি করবে বুঝতে পারছে না কিন্তু জেল হয়ে গেলে ও এই খাটাশ লোককে সে বিয়ে করবে না। মিহি বলে –

“- আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করব না দ্যার্টস ইট হুম “।

নিহান বুঝতে পারে এই মেয়ে শুধু জেদি না ঘাড় ত্যাড়া তাই সে দরজা খুলে তার বর্ডিগার্ডদের খবর দেয়। ঝড়ের বেগে বর্ডিগার্ড চলে আসে নিহানের ইশারায় মিহির মুখ বেঁধে ফেলে আর ওকে বিয়ের আসরে যেতে বলে। নিহান এবার বাড়ির সবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে যায়। বাড়ির সবাই অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু হানিয়া বেগম কিছু বুঝতে পারছে না নিহান তি করতে চলছে তাই ওনি নিজের স্বামীকে ফোন করছেন। নিহান রুমে এসে দরজায় টোকা দেয় আর বলে –

“- সবাই এখানে আছো তোমাদের সাথে আমার একটা কথা আছে “।

হানিয়া বেগম নিহানকে দেখে ওর কাছে যায় কিন্তু ছেলের মাথায় কি চলছে সেটা ওনি বুঝতে পারেন না। হানিয়া বেগম বলে –

“- নিহান কোথায় ছিলে তুমি আর ওই চোর মেয়েটার সাথে কি কথা বললে “।

“- টেনশন করো না মা আমি ঠিক আছি আর ওই মেয়ে ঠিক আছে “।

নিহানের ফুপি জাকিয়া বেগম আর তার সন্তান জায়ানকে নিয়ে এই পরিবারে থাকেন। আসলে ওনার স্বামী কোনো কাজের না তাই শশুড় বাড়িতে থাকেন আর এখানে একটা হাসপাতালে সামান্য কাজ করে থাকেন । জাকিয়া বেগম বলে –

“- এখন সমস্যা যা হয়েছে তার কি সমাধান করবে নিহান। আগে থেকে জানতাম নিয়া এমন কাজ করবে কত করে বলেছি মেয়ে মানুষ এতো বাহিরে ঘুরতে দিয়ো না কিন্তু কেউ শুনলো না আমার কথা। এখন পালিয়ে গিয়ে পরিবারের নাক কাটিয়ে দিলো ছি: ছি: “।

“- ফুপি যা হয়েছে তা হয়েছে এখন কিছু একটা করতে হবে। সামনে নিবার্চন এই বিয়েটা আমার রাজনীতির কেরিয়ারের জন্য কতো জরুরি সেটা সবাই যানো তবে এখন যখন নিয়া পালিয়ে গেছে তাহলে কি আর করার। কিন্তু বাহিরে সাংবাদিক রয়েছে আর মানুষ রয়েছে তাই বিয়ে করতে হবে “।

হানিয়া বেগম ভাবে নিহান কাকে বিয়ে করবে ওর বাবা যদি এইসব জানতে পারে তাহলে কি করতে পারে। হানিয়া বেগম বলে –

“- কিন্তু তুমি কাকে বিয়ে করবে নিহান। নিয়াতো পালিয়ে গেছে “।

“- হুম সেটা আমি জানি মম তাই ঠিক করেছি একটু আগে যে চুরি করতে এসে পাএি সেজে বসে ছিলো তাকে বিয়ে করব। আর মেয়েটা দেখতে অনেকটা বোকা আর গরিব মনে হলো তাই নিবার্চন অবধি এই মেয়ে বউ হয়ে থাকবে “।

হানিয়া বেগম নিহানের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে তার ছেলে কি বললো এইটা একটা চোর হবো এই শিকদার বাড়ির বউ। মেয়েটার বংশ পরিচয় তার বাবার নাম কিছু জানা নাই। হানিয়া বেগম বলে –

“- তুমি কি বলছেন নিহান একটা চোরকে বিয়ে করবে তুমি মানে কি বলছো এইসব। তোমার বাবা যদি যানতে পারে তাহলে কি করতে পারে সেটা তুমি যানো তাহলে এই কথা কি করে মাথায় আনতে পারলে তুমি “।

“- বাবার শুধু বিজনেস ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কোনো খেয়াল থাকে না মম। আর আমার রাজনীতির জন্য এই বিয়ে দরকার সো তাই সবাই নিচে আসো বিয়ে শুরু হবে।

হানিয়া বেগম আর জাকিয়া অনেক চেষ্টা করলেন নিহানকে বোঝাতে কিন্তু সে শুনে নাই। নিহান বিয়ের আসরে গিয়ে বসে যায় আর বর্ডিগার্ড মিহির হাত পা বেঁধে নিয়ে আসে।

মিহি নড়াচড়া করতে থাকে কিন্তু কাজি বিয়ে পড়াতে থাকে কাজি যখন মিহিকে কবুল বলতে বলে তখন ওর মুখের বাঁধন খুলা হয়। মিহি বলে –

“- আমি এই বিয়ে করতে চাই না করব না বিয়ে “।

নিহান একটা বন্ধুক বের করে মিহির মাথায় ঠেকিয়ে বলে

“- তাড়াতাড়ি কবুল বলুন না হলে এই নিহান নেহাল শিকদার কি করতে পারে সেটা আপনি যানেন না “।

“- কবুল কবুল কবুল “।

বিয়ে শেষ হয় নিহান আর মিহিকে গাড়ি করে তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু মিহির টেনশনে মাথা শেষ। মিহির বাবা যে খাটাশ আর রাগী যদি জানতে পারে সে বিয়ে করেছে তাকে না জানিয়ে মেরে ফেলবে তাকে। মিহির এবার কান্না করতে ইচ্ছে করছে এখন কি করে পরিবারের সবাইকে বলবে কোনো যে চুরি করে বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছিলো কে যানে। নিহান বলে –

“- কি হলো আপনি কান্না করছেন কোনো আপনারতো বিদায় হচ্ছে না যে অন্য মেয়েদের মতো কান্না করতে থাকবেন। সো এইসব নাটক বাদ দেন “।

মিহি রাগী চোখে তাকায় নিহানের দিকে লোকটা তার এতো বড়ো সর্বনাশ করলো এখন বলছে সে নাটক করছে। মিহি বলে –

“- আপনি কি বুঝতে পারবেন কোনো আমি কান্না করছি আমার বাপ যে খাটাশ লোক ওনাকে না বলে বিয়ে করেছি যানি না কি করবে আমাকে। আর আমার দুই ভাই রাবণের চেয়ে কম না ওরা যানতে পারলে আমাকে আয়নাঘরে বন্ধি করবে। আমার বাপকে তো আপনি চিনেন না

“- ওহ তাই না কিন্তু আপনার বাবা কি শুধু একলা খারাপ৷ আমার বাবা পাবেল শিকদার তার রাগের বিষয়ে আপনি যানেন যদি জানতে পারে যে আমি একটা চোরকে বিয়ে করেছি তাহলে কি হতে পারে। শুধু বাড়িতে যান তারপর বুঝতে পারবেন আসলে আমার পরিবারের মানুষ কেমন “।

“- তাহলে বিয়ে করতে গেলেন কোনো আমাকে বিয়ে বাড়িতে কি অন্য কোনো মেয়ে ছিলো না। চোখ কি অন্ধ আপনার যে শুধু আমাকে দেখতে পেয়েছেন “।

“- না আমার চোখ অন্ধ না কিন্তু আপনার জন্য নিয়া পালিয়ে গেছে। যদি আপনি বউ সেজে না বসে থাকতেন তাহলে অনেক আগে নিয়াকে খুঁজে বের করে ফেলতাম সো ভুল যখন আপনি করেছেন সো শাস্তি আপনি নিবেন। আর চুরি করে কতো টাকা রোজগার করবেন তার চেয়ে আমার বউ হয়ে থাকলে আরো বেশি টাকা দিবো “।

“- এই কি বললেন চুরি করে টাকা রোজগার করি মানে একদম চোর বলবেন না আমাকে। আর বেশি টাকার গরম দেখাবেন না আমার বাবার অনেক টাকা রয়েছে কিন্তু সমস্যা হলো আমার বাপ একটা খাটাশ না হলে এক ব্যাগ ভর্তি টাকা আপনার মুখে ছুঁড়ে দিতাম “।

“- এক ব্যাগ টাকা মুখে ছুঁড়ে ফেলতো চোরের মায়ের বড়ো গলা “।

“- কি বলবেন আপনি চোর বলবেন আবার আমাকে “।

“- চুপচাপ মুখ বন্ধ করে বসে থাকেন আপনার সাথে তর্ক করার মতো মন মানসিকতা আমার নাই। আর যদি একটা কথা বলেন আবার কিন্তু হাত পা বেঁধে রেখে দিবো বলে দিলাম।সো একদম চুপ “।

মিহি বাধ্য হয়ে চুপ হয়ে বসে থাকে কিন্তু এইরকম একটা বদরাগী আর ঝগড়াটে লোকের সাথে সারাজীবন কি করে থাকবে সে।

নিয়া আর রায়ান পালিয়ে গিয়ে শহরের বাহিরে একটা হোটেলে আশ্রায় নেই নিয়া ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায়। রায়ান বাহিরে আসে আর ফোন কল দেয় –

“- হ্যালো কাজ হয়ে গেছে নিয়াকে নিয়ে আমি দূরে চলে এসেছি তুমি যেমন বলেছিলে ”

“- হুম কিন্তু এখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে নিহান সেই চোর মেয়েকে বিয়ে করেছে “।

“- মানে যেই মেয়েকে মিথ্যা কথা বলে বিয়ের আসরে বসানো হয়েছে তাকে বিয়ে করেছে। কিন্তু এখন আমাদের কাজের কি হবে “।

“- তোমাকে আগে বলেছি আমার কথা ছাড়া কোনো কাজ করবে না তাহলে কোনো সেই মেয়েকে বিয়ের আসরে বসাতে গেলে। ইডিয়েট একটা “।

“- আসলে আমি মনে করেছি “।

“- থাক তোমার আর কিছু করতে হবে না তোমাকে দিয়ে যে কিছু হবে না সেটা খুব ভালো করে জানি আমি। আর এই মিহি নামের মেয়েকে কি করে আমার রাস্তা থেকে সরাতে হয় সেটক আমি জানি। কিন্তু সামনে নিবার্চন তাই নিহানকে আটকাতে হবে আগে তাই এমন কিছু করতে হবে যাতে নিহানের কলিজা কেঁপে উঠে “।

“- কিন্তু আমাদের আগের বুদ্ধিটা “।

“- সেটা দিয়েতো ধামাকা হবে তুমি শুধু নিয়াকে নিয়ে দূরে থাকো বাকি সব আমি মেনেজ করব। নিহানকে শেষ করে ফেলবো একদম ও নিজের শএুকে যতটা শক্তিশালী মনে করবে তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর আর খারাপ হবে। নিহান নেহাল শিকদারের গেম অভার “।

#চলবে