মন ফাগুন পর্ব-০৮

0
47

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৮ ( রহস্য শুরু হয়েছে).

নিহানের কথা শুনে মিহি একটা মুখ ভেংচি কাটে সবসময় শুধু তাকে অপমান করে একটু চুরি করে খাবার খেয়েছে। তার জন্য কি তাকে চুন্নি বলে ডাকবে. মিহির মুখ দেখে নিহানের খুব হাসি পায় মেয়েটা সত্যি অনেক বাচ্চা। নিহান বলে –

“- মিহি তাহলে আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে তাই ঘুম পেয়ে যাবে। তবে আজকে যেহেতু আপনি অসুস্থ তাই বেডে ঘুমিয়ে পড়ুন আমি ছোফায় গিয়ে ঘুমাবো।

“- আরে বেডে ঘুমানোর দরকার নাই আমি ছোফাতে ঘুমিয়ে পড়তে পারবো। আর এই ছোফা অনেক বড়ো আমি তো এর চেয়ে ছোট জায়গায় ঘুমিয়েছি। আপনি বেডে ঘুমান “।

নিহান মিহিকে বেডে ঘুমাতে বলে কিন্তু মিহি রাজি হয় নাই সে ছোফায় শুয়ে পড়ে। ঘুমের ঔষধ খাওয়ার ফলে মিহি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু নিহানের ঘুমে ধরে নাই। হঠাৎ করে নিহানের ফোন বেজে উঠে চেক করে দেখে সানভি ফোন করেছে। সানভি বলে –

“- হ্যালো বস থানার ওসিকে ফোন করা হয়েছে ওনি কালকে আসবে সব তদন্ত করবে। আর বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা কালকের মধ্যে পৌঁছে যাবে আজকে দোকান বন্ধ ছিলো “।

“- হুম ওকে কাজটা যেনো ভালো করে হয়ে যায় আর অপজিশন পার্টির কি অবস্থা “।

নিহান আর সানভি বেশ অনেক সময় রাজনীতির বিষয় নিয়ে কথা বললো আর বাড়ির সিকিউরিটির বিষয়ে। নিহান ফোন রেখে ঘরে ফিরে আসে এতোখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। ঘরে ফিরে এসে দেখে মিহির দিকে চোখ যায় ওর দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়ে। নিহান ছোফার কাছে যায় মিহি ঘুমের মধ্যে ওর হাতটা ছোফা থেকে ফেলে দিতে যাবে তখন নিহান ধরে ফেলে। নিহান বলে –

“- এই জন্য এই মেয়েটাকে বলেছিলাম বেডে ঘুমাতে এইরকম হাত পা না ছড়িয়ে ওনিতো ঘুমাতে পারেন না। হাতের যা অবস্থা যদি ব্যাথা লাগে। কিন্তু একটা কথা শুনে না আমার “।

নিহানের কথা মিহির কান অবদি যায় নাই কারণ ও এখন ঘুমিয়ে রয়েছে। নিহান মুগ্ধ হয়ে ঘুমন্ত মিহিকে দেখে মেয়েটা জেগে থাকলে কতো দুষ্টামি করে কিন্তু ঘুমিয়ে থাকলে কি শান্ত। মিহির চোখের সামনে আসা চুলগুলো নিহান সরিয়ে কানের কাছে গুঁজে দেয় আর বলে –

“- এই মেয়েটা সত্যি অদ্ভুত কখনো মনে হয় এইরকম বাচ্চামি কেউ করতে পারে। হয়তো এই বাচ্চামি গুলোর জন্য মিহিকে এতো ভালো লাগে “।

নিহান হেসে মিহির হাত পা সব সুন্দর করে ছোফায় রাখে আর আলমারি থেকে কয়েকটা বালিশ নিয়ে চারপাশে দিয়ে দেয় এরপর নিহান বেডে শুয়ে পড়ে।

সকাল হয়ে গেছে জানলা ভেদ করে একমুঠো মিষ্টি রোদ এসে পড়েছে নিহানের চোখে। নিহান চোখ খুলে ফেলে ছোফার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে মিহি ঘুমিয়ে রয়েছে। ঘুমের ঔষধ খেয়েছে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যাবে না নিহান উঠে ওয়াশরুমে যায় পরে ফ্রেশ হয়ে ওর মায়ের রুমে যায়। নূহা সেখানে বসে রয়েছে আর হানিয়া বেগম জেগে আছে। নিহান রুমে ঢুকে বলে –

“- মম তোমার শরীর কেমন আছে কোথাও কি ব্যাথা করছে তুমি কি ঠিক আছো “।

হানিয়া বেগম ছেলের এতো চিন্তা দেখে হাসে যদি ও তার শরীরে অনেক জায়গায় পুড়ে গেছে ব্যাথা রয়েছে। হানিয়া বেগম বলে –

“- নিহান আমি একদম ঠিক আছি। কোথাও ব্যাথা করছে না

“- কালকে যা আগুন লেগে ছিলো সত্যি মম অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আচ্ছা খাবার খেয়েছো তুমি মম ?

নিহানের কথার মধ্যে সারা খাবার নিয়ে আসে। নিহান বলে –

“- আচ্ছা সারা ভাবী তুমি মমকে খায়িয়ে দাও আর ডক্টরকে খবর দেওয়া উচিত কারণ মায়ের পুড়া জায়গায় ড্রেসিং করা দরকার “।

নূহা বলে –

“- নিহান ভাই ডক্টরকে আর ডাক দিতে হবে না চাচির ড্রেসিং আমি করতে পারব। আমার মেডিক্যাল পড়াশোনা প্রায় শেষ তাই এই টুকটাক ড্রেসিং আমি করতে পারি”।

“- ওহ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি ড্রেসিং করো নূহা তবে পড়াশোনা করতে হবে ভালো করে। সারা ভাবী মায়ের কাছে থাকবে তুমি কলেজে যাবে “।

“- ঠিক আছে নিহান ভাই “।

মিহি ঘুম থেকে উঠে দেখে ওর চারপাশে বালিশ দেওয়া বিষটা অদ্ভুত। মিহি যখন ঘুমিয়ে ছিলো ওর স্পষ্ট মনে আছে ও কোনো বালিশ নিয়ে ঘুমায় নাই। মনে হয় ওই খাটাশ লোক দিয়েছে মিহি তাকিয়ে দেখে নিহান বিছানায় নাই। ঘুম থেকে উঠে পড়েছে এইটা ভেবে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হয়ে এসে আলমারি থেকে একটা থ্রিপিস বের করে। মিহি বলে –

“- আজকে থ্রিপিস পড়তে হবে শাড়ি আর পড়তে পারব না “।

সারা হানিয়া বেগমকে খায়িয়ে দেয় নিহান এতোখন সময় ওর মায়ের কাছে বসে রয়েছে। এরপর হানিয়া বেগমকে ঔষধ খায়িয়ে ওনাকে রেস্ট নিতে বলা হয় নিহান আর সারা রুম থেকে বেরিয়ে আসে। নিহান বলে –

“- সারা ভাবী মম তখন সামনে ছিলো তাই কথাটা বলতে পারি নাই আজকে বাসায় পুলিশ আসবে। কালকে মমের রুমে যে আগুন লেগেছিলো সেটা কি করে লাগলো আর কে বাহির থেকে রুমের দরজা লক করেছে সেটা জানতে হবে”।

“- হুম তুমি ঠিক বলেছেন নিহান সত্যি কালকের ঘটনার কথা ভাবলে আমার কলিজা কেঁপে উঠে। যদি মিহি না থাকতো তাহলে কি যে হতো। এই বিষয়ে জানা সত্যি ঙজরুরি। আচ্ছা মিহি কোথায় ওহ ঠিক আছে কালকে আগুনে ওহ মনে হয় ব্যাথা পেয়েছে “।

“- হুম মিহির হাতের আর পায়ের কিছু অংশ পুড়ে গেছে তবে ওকে মেডিসিন দিয়েছি এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে “।

“- ওহ আচ্ছা এতো ঝামেলার মধ্যে মিহির কাছে যেতেই পারি নাই যখন ও ঘুমিয়ে রয়েছে বিরক্ত করব না। পরে গিয়ে দেখে আসবো ওকে। আচ্ছা নিহান আমি যায় জায়ান অফিসে চলে যাবো ওর টিফিন রেডি করতে হবে.

নিহান সারা সাথে কথা বলা শেষ করে রুমের দিকে চলে আসে রুমে ঢুকে মিহিকে দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিহান বলে –

“- মিহি আপনি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন “।

“- হুম উঠে পড়েছি একটু আগে “।

নিহান বেডে গিয়ে বসে যায় অন্যদিকে মিহি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় ধরে একটা গলার চেইন পড়ার চেষ্টা করছে। এই গোল্ড চেইন ওর মায়ের দেওয়া উপহার সবসময় পড়ে থাকে কিন্তু কালকে বউভাতের জন্য খোলে রাখা হয়েছিলো। নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে আর বলে –

“- কি হলো এতোখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কোনো “।

“- না মানে আসলে এই চেইনটা গলায় পড়ার ট্রাই করছি কিন্তু হাতের ব্যাথার জন্য পড়তে পারছি না “।

নিহান বেড থেকে উঠে গিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় মিহির হাত থেকে চেইন নিয়ে নেয়। নিহান বলে –

“- মিহি দেন আমি পড়িয়ে দেয় “।

“- যদি আপনি ছিড়ে ফেলেন”

নিহান জোর করে চেইনটা পড়িয়ে দেয় আর বলে –

“- সব জিনিস আমি খারাপ করে ফেলি না কি সুন্দর করে পড়িয়ে দিলাম। নিহান সব জিনিসে বেস্ট আর ফাস্ট হয়.

নিহানের ফাস্ট কথাটা শুনে মিহির পরীক্ষার রেজাল্ট কথা মনে পড়ে যায় আজকে ওর রেজাল্ট দেওয়ার কথা। মিহি যা পরীক্ষা দিয়েছে তাতে নিশ্চয়ই সে ফেল করবে কিন্তু সেটা সমস্যা না। মিহির ভার্সিটি অনেক কড়া তাই যদি ফেল করে সাথে সাথে ওর আব্বুকে ফোন করে বলে দিবে। সেই কথা শুনে ওর আব্বু যদি এখানে চলে আসে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মিহি বলে –

“- আজকে আমি শেষ কি করে ভুলে গেলাম এইদিন টা “।

“- কি হয়েছে মিহি কোনো সমস্যা “।

“- সমস্যা মানে সমস্যা আজকে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে কিন্তু আমি ফেল করব। যদি একবার আব্বুকে ফোন করে বলে দেয় আমি ফেল করেছি তখন কি হবে “।

“- মিহি এতো টেনশন করবেন না পাশ করতে পারেন আপনি “।

” আরে আমি নিশ্চয়ই ফেল করবো পরীক্ষা মধ্যে পুরো খাতা খালি রেখে এসেছি ফেল অবশ্যই করবো নিজের উপর বিশ্বাস আছে আমার “.

“- রিয়েলি লাইফে অনেক মানুষ দেখেছি যারা পাশ করা বা গোল্ডের পাওয়ার কথা বলে। কিন্তু আপনার মতো এইরকম কনফিডেন্সের সাথে ফেল করার কথা কেউ বলে নাই। আপনার এই ফেল করার কনফিডেন্স দেখে আমি সত্যি অবাক “।

“- হিহিহিহি আসলে আকাশে লাখ তারা কিন্তু চাঁদ একটাই “।

#চলবে