মন ফাগুন পর্ব-১০

0
47

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১০

নূহা এতোখন জানলার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে এইদিকে চোখ পড়ায় দেখে সানভি ওর দিকে দেখছে। সানভি নূহার দেখার সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ড্রাইভ করায় মনোযোগ দেয়। নূহা বিষয়টা এতো সিরিয়াস ভাবে নেয় নাই। মিহি পিছনে বসে রয়েছে যদি ও ওর টেনশন হচ্ছে ওর বাবা রেজাল্ট জানার পর কি করবে কালকে জিজ্ঞেস করেছে রেজাল্ট কথা।

সময়ের গতি খুব দ্রুত হয় তাই গাড়ি পৌঁছে যায় মিহির ভার্সিটি সামনে। মিহি যখন গাড়ি থেকে নামতো যাবে তখন নিহান বলে –

“- শুনুন মিহি একদম কোনো লাফালাফি করবেন না আপনার হাতের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। আর একটু পরে রেজাল্ট নিয়ে চলে আসবেন গাড়ি পাঠিয়ে দিবো আমি। কথাটা যাতে মনে থাকে কোনো দুষ্টামি না “।

নিহান কথাটা সিরিয়াস ভাবে বলছে কিন্তু মিহি কি ভালো কথা শুনার মতো মেয়ে। মিহি কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে আসে এই লোকটা সবসময় সব কাজের আগে বকা দেয়। ভালো করে বুঝালে মিহি কি বুঝতে পারে না। মিহি গাড়ি থেকে নেমে বলে –

“- ঠিক আছে খেয়াল রাখবো বাই “।

নিহান মিহির মুখের দিকে দেখে একটু বকা দিয়েছে বলে মুখটা কেমন ফুলিয়ে দিয়েছে বাচ্চাদের মতো। এই মেয়েটার কেয়ার করতে গেলে ও সমস্যা কিন্তু এখন পরিষদে যাওয়া দরকার। যতখন গাড়ি না ছাড়ে ততখন মিহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে নিহান এরপর সিটে চোখ বন্ধ করে বসে যায়। মিহি ভার্সিটির ঢুকে যায় মনে হচ্ছে একবছর পরে এসেছে এখানে মিহি বলে –

“- হুম এখন যায় রেজাল্ট নিয়ে আসতে হবে যানি ফেল করেছি তবুও বাকিটা দেখা যাক। কিন্তু ফেল করলে আমার বাপ আমাকে মেরে নদীর জলে ভাসিয়ে দিবে কি যে হবে আমার “।

সারিকা জারা আরো সবাই ভার্সিটির সামনে একটা গাছের কাছে বসে রয়েছে সবাই রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছে। এখনো রেজাল্ট বোর্ডে দেয় নাই তবে জারা হঠাৎ করে গেট দিয়ে মিহিকে ঢুকতে দেখে অবাক হয় আর বলে –

“- এই সারিকা দেখে ওইটা মিহি না ওর মতো দেখতে লাগছে

সারিকা আর বাকি সবাই খেয়াল করে দেখে ওইটা সত্যি মিহি কিন্তু সেইদিন বিয়েতে চুরি করে খাবার খেতে এসে। সবাই মিহিকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু পরে আর পাই নাই তাই চলে এসেছে বিয়ে বাড়িতে না কি ঝামেলা হয়েছে। এরপর আজকে মিহিকে দেখছে ওরা সবাই দৌড়ে মিহির কাছে যায় আর বলে –

“- আরে মিহি তুই কোথায় ছিলি এই দুইদিন ? সেইদিন বিয়ে বাড়ি থেকে কোথায় চলে গিয়েছিলি? তুই কি এই দুইদিন বিয়ে বাড়িতে ছিলি তোকে কি অনেক খাবার দিছে ওরা?

সব বন্ধুকে দেখে মিহির বিয়ের দিনের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় কি সুন্দর ওকে ফেলে রেখে চলে এসেছে। এখন জিজ্ঞেস করে দুইদিন কি আমাকে বেশি খাবার দিয়েছে না কি। মিহি নিজের পায়ে থাকা জুতাটা খুলে আর বলে –

“- তাই না ওরা দুইদিন রেখে আমাকে অনেক খাবার দিয়েছে তোদের জন্য নিয়ে এসেছি। সয়তান দেখাচ্ছি মজা।

মিহি কথাটা বলে যখন জুতা খুলে মারতে যাবে তখন সবাই দৌড়ে দেয়। মিহি রাগ নিয়ে সবাইকে ধরতে যায় কিন্তু ওর পায়ে ব্যাথা লাগার কারণে হাঁটতে পারে নাই। মিহি গাছের কাছে বসে যায় সবাই একটু পরে ওর কাছে আসে। আসলে মিহির যখন রাগ হয় তখন ও সবাইকে এইভাবে মারে। সারিকা বলে –

“- আরে মিহি সরি না ইয়ার বুঝতে পারি নাই তুই রেগে যাবি। বিয়েতে তোকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নাই পরে শুনি বিয়েতে ঝামেলা লেগেছে তাই চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু দুইদিন কোথায় ছিলি মিহি?

মিহির সবার কথা শুনে রাগ উঠছে কিন্তু কি করার ওরা সবাই যে ঝামেলার কথা বলছে সেটাতো আসলে মিহি নিজেই। মিহি বলে –

“- তোরা আমাকে রেখে চলে আসলি এরপর বিয়ে বাড়ি থেকে বউ পালিয়ে যায় এরপর আমার বিয়ে “।

মিহি বিয়ে কথাটা বলে থেমে যায় কারণ যদি সবাইকে সত্যি কথাটা বলে দেয় নিহানের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেছে তখন কি হবে। বিয়ের কথাটা ওর বাপ অবদি পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না তখন সব শেষ হয়ে যাবে। সবাই জানার জন্য বলে –

“- পরে কি হয়েছে মিহি বল “।

“- পরে কি হবে আসলে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর আসলে জানতে পেরেছি ওই বিয়েটা আমার ছোটবেলার বন্ধু নূহার বোনের সাথে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে নূহার বোন পালিয়ে যায় যার কারণে আমাকে ওখানে থাকতে হয় ওকে সামলাতে হয়। তাই দুইদিন দেরি হয়ে গেছে “।

মিহির কথাটা মোটামোটি সবাই বিশ্বাস হয়েছে মিহি মিথ্য কথা বলার মধ্যে এক্সপার্ট। মিহির কথাটা সবাই শুনে পরে

মিহির কলেজের বোর্ডে রেজাল্ট দিয়েছে সেটা দেখতে সবাই যায়। অন্যদিকে নিহানের গাড়ি পরিষদে পৌঁছে গেছে তাই নিহান আর নূহা গাড়ি থেকে নেমে যায়। নিহান বলে –

“- নূহা তুমি গাড়ি থেকে নেমে গেলে কোনো সানভি তোমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিতো “।

“- আরে দরকার নাই ভার্সিটি এই একটু দূরে আমি পায়ে হেঁটে চলে যেতে পারব তুমি টেনশন করো না নিহান ভাই। আমি আসি তাহলে “।

নিহান ভিতরে চলে যায় নূহা একটু এগিয়ে চলে যাবে তখন থেমে যায় সানভি এখনো গাড়ির ভিতরে রয়েছে। নূহার মনে পড়ে নিয়ার বিষয়ে খোঁজ করতে নিহান সানভিকে বলেছে। তাই নূহা আবার গাড়ির কাছে ফিরে আসে আর বলে –

“- সানভি আপনি কি আমার একটা উপকার করতে পারবেন

সানভি গাড়িটা পার্ক করার জন্য আবার চালু করতে যাবে ঠিক তখন নূহা এই কথা বলে। সানভি ভাবে নূহার কি উপকারের দরকার ও কি কোনো বিপদে পড়েছে। সানভি বলে –

“- কি হয়েছে নূহা কোনো সমস্যা কেউ কি আপনাকে বিরক্ত করছে বা কিছু বলেছে “।

“- আরে না না এইরকম কোনো বিষয় না আসলে মানে নিয়ার আপির খোঁজ করার জন্য নিহান ভাই বলেছে আপনাকে। তাই আমি চাই আপনি যদি নিয়া আপিকে তাড়াতাড়ি খোঁজে বের করতেন তাহলে ভালো হতো “।

“- ওহ নিয়া আর রায়ানকে খোঁজ করার চেষ্টা করছি লোক লাগিয়ে দিয়েছি কিন্তু ওরা কোথায় আছে সেটা বুঝতে পারছি না। ওদের লোকশন বা কোনো কিছু টেরস করা যাচ্ছে না তবে আশা করি তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে পারব “।

“- ওহ আচ্ছা যদি কোনো খবর পাওয়া যায় তাহলে আমাকে জানাবেন। আপনার নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে আমাকে সানভি?

নূহার মুখে নাম্বারের কথা শুনে সানভির মন খুশি হয়ে যায় আসলে ভালোলাগা এইরকম একটা জিনিস যেটা চাইলে ও আপনি লুকিয়ে রাখতে পারবেন না। সানভি ওর নাম্বার দেয় নূহা সেটা ফোনে সেভ করে নিয়ে চলে যায়।

মিহির কলেজের রেজাল্ট ও পাশ করেছে মিহির মনে হচ্ছে এই খুশিতে ও আকাশে উড়ছে।

#চলবে