মন ফাগুন পর্ব-১১

0
361

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১১[ মৃত্যুর কবলে ]

মিহি পরীক্ষায় পাশ করেছে সেই জন্য ওর মন আজকে অনেক খুশি তবে এই খুশির কথা সে সবার আগে তার আম্মুকে জানাতে চাই। মিহি তার আম্মুকে ফোন করে বলে –

“- আম্মু আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি এই কথাটা আব্বুকে জানিয়ে দেও। আব্বু হয়তো রেজাল্ট চিন্তায় রাতে ঘুম হয় নাই “।

মিহির পাশ করার কথা শুনে ওর আম্মু অনেক খুশি হয় তবে যেহেতু পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাই ভাসির্টি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মিহি বাড়ি ফিরে আসবে কি না সেটা সিউর হতে মিহির আম্মু জিজ্ঞেস করে –

“- বাহ খুব খুশির সংবাদ এইটা তবে নিজের আব্বুর বিষয়ে এইরকম কথা বলে না মিহি। আচ্ছা বাদ দাও তোমার পরীক্ষা শেষ ভার্সিটি বন্ধ তাই কবে বাড়ি ফিরে আসবে। তোমার আব্বু কালকে জিজ্ঞেস করেছিলো এই কথাটা “।

মিহির বাড়ি ফিরে আসার কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সে কি করে এখন বাড়ি ফিরে যাবে। নিহান ওকে রুম থেকে বের হতে দেয় নাহ তাই বাড়ি যেতে দেওয়া অসম্ভব। তাই মাকে এখন মিথ্যা কথা বলতে মিহি বলে –

“- আম্মু ভার্সিটি বন্ধ দিবে না এইবার পরীক্ষা শেষে আর পরীক্ষা আরো সামনে রয়েছে তাই প্রাইভেট পড়তে হবে। এখন বাড়িতে আসা সম্ভব না কয়েকদিন পর আসতে হবে “।

মিহির আম্মু মিহির কথাটা বুঝতে পারে কিন্তু ওর আববু বলেছে মিহিকে আসতে যেহেতু মেয়ে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। আর বয়স হয়েছে তাই বিয়ে দিতে চাই ওনি মিহিকে সেইজন্য মিহির বাড়ি আসা জরুরি। মিহির আম্মু বলে –

“- মিহি তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু দেখো তোমার আব্বু এখন বয়স হয়েছে তাই ওনি চাই তোমার বিয়ে দিয়ে দিতে। তোমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে তাই বিয়ের কাজ শেষ করে চিন্তা মুক্ত হতে। সেইজন্য তুমি এখন বাড়ি ফিরে আসো “।

মিহির আম্মু মুখে বিয়ের কথা শুনে মিহির মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দেয় এখন সে কি করে বিয়ে করতে পারে। নিহানের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে আর নিবার্চনের আগে ওদের ডিভোর্স হওয়া সম্ভব না তাই মিহি বলে –

“- আম্মু এখন বাড়ি ফিরে আসা সম্ভব না আর বিয়ে করার জন্য এখন আমি রেডি না। পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে করব এখন ফোন রাখি বাই “।

মিহি ফোন রেখে দেয় ওর আম্মু এখন কি করে মাসুদ তালুকদারকে বলবে মিহি পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করতে চাই না। মিহি ফোন রেখে একটা শুকনো ঢুক গিলে এখন বিয়ের কথাটা এড়িয়ে যেতে পেড়েছে কিন্তু মিহি তার আব্বু খুব ভালো করে জানে। যদি মাথায় বিয়ের ভুত চরে তাহলে বিয়ে মিহিকে দিয়ে ছাড়বে। কিন্তু নিহান কি করবে ওতো মিহিকে মেরে ফেলবে মিহি বলে –

“- কোনো যে সেইদিন বিয়ে বাড়িতে চুরি করে খাবার খেতে গিয়েছিলাম এখন আমার কি হবে। একদিকে বাপ অন্যদিকে জামাই মিহি তুই টাট বাই বাই হয়ে যাবি “।

নিহানের অফিসে মিটিং চলছে সামনে নিবার্চন প্রতিটা বিষয়ে তাকে আলোচনা করতে হচ্ছে। জনগণের মন জয় করতে হবে আবার মিটিং মিছিল করতে হবে অনেক কাজ। তবে সেইদিন বউভাতে আগুন লাগার বিষয়টি নিহানের মাথায় আসে সে বলে –

“- আচ্ছা পার্টির সবাই আপনারা জানেন যে আমাদের বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠানের দিন মায়ের রুমে আগুন লেগেছিলো। কিন্তু বাহিরে থেকে দরজা লাগানো ছিলো মানে এইটা কারো ইচ্ছাকৃত কাজ তাই আমার মনে হয় এই কাজটা করার পিছনে অপজিশন পার্টির হাত রয়েছে “।

পার্টির একজন সিনিয়র লোক বলে –

“- দেখুন মন্ত্রী সাহেব অপজিশন পার্টির লোকেরা এই কাজ করতেই পারে কারণ এইভাবে নিবার্চনে আপনার বিপক্ষে রানা শিকদার দাঁড়িয়েছে। রানা শিকদার কোনো সাধারণ মানুষ না সে যথেষ্ট প্রভাবশালী তাই এই কাজটা করা অসম্ভব না “।

নিহান ওনার কথাটা বুঝতে পেরেছেন রানা শিকদার কতটা খারাপ সেটা নিহান যানে তবে ওর এতোটা সাহস হবে আশা করে নাই। আর নিবার্চন এইবার একটু কঠিন হবে নিহানের জন্য কারণ সে মনে করেছিলো নিয়ার সাথে বিয়ে হলে ওর চাচার জন্য সবাই ওর পাশে থাকবে।

নিহানের চাচা নাহিদ মল্লিক যথেষ্ট জনপ্রিয় আর ভালো মানুষ ছিলেন। পুরো শহর জুড়ে ওনা সুনাম ছিলো কিন্তু হঠাৎ দুর্ঘটনায় ওনি মারা যায় তবুও শহরের মানুষ ওনাকে এখনো সম্মান করে তাই নিহান যদি ওনার মেয়ের জামাই হতো তাহলে সবাই ওকে পছন্দ করতো। নিবার্চনে ভালো ভোট পেয়ে জিতে যাওয়া সহজ হয়ে যেতো কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নিবার্চন একটু কঠিন হয়ে যাবে।

নিহান মিটিং এই বিষয়ে কথা বলে প্রায় দুই ঘণ্টা পর মিটিং শেষ হয় নিহান বাহিরে এসে মিহিকে ফোন করে। মিহি এতোখন গাছের নিচে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলো দোকান থেকে কিছু কিনে খাচ্ছিল। নিহানের ফোন দেখে মিহি একটু দূরে আসে সবার থেকে মিহি বলে –

“- হ্যালো বলুন কিছু বলবেন আপনি “।

“- মিহি আপনি কোথায় এখন? বাড়ি ফিরে এসেছেন নাকি ভার্সিটিতে?

মিহির মনে পড়ে নিহান ওকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যেতে বলেছিলো কিন্তু সব ভুলে গেছে। এখন যদি শুনে ভার্সিটিতে তাহলে নিশ্চয়ই বকা দিবে কিন্তু মিথ্যা বলা যাবে না। মিহি বলে –

“- না মানে আসলে আমি এখনো ভার্সিটিতে আসলে পরীক্ষায় পাশ করেছি তাই সবাই বলছিলেন কিছু খাওয়াতে তাই দেরি হয়ে গেছে। এখুনি চলে আসছি আমি “।

নিহান পরীক্ষায় পাশ করার কথা শুনে কিছু বলে না না হলে বকা দিতো। তবে নিহানের মিটিং শেষ তাই বাড়িতে ফিরবে ঠিক করেছে যেহেতু মিহির ভার্সিটি যাওয়ার পথে। তাই মিহিকে রিসিভ করে নিবে নিহান। নিহান বলে –

“- তাহলে আপনি থাকুন মিহি আমি গাড়ি নিয়ে আসছি একসাথে বাড়ি ফিরে যাবো “।

একসাথে বাড়ি ফিরে যাবে মানে মিহির বন্ধুরা যদি নিহানকে দেখে ফেলে তাহলে জিজ্ঞেস করবে ওকে। তখন মিহি কি বলবে মিহি বলে –

“- না না আপনার আসতে হবে না আমি এখুনি চলে আসছি আর এখানে আমার বন্ধুরা আছে। তাই যদি আপনি আসেন সমস্যা হবে আমি চলে আসছি এখুনি “।

নিহান মিহির কথাটা বুঝতে পারে আর ও এই শহরের মন্ত্রী তাই সবাই তাকে চিনে ফেলবে পরে মিহির জন্য সমস্যা হয়ে যাবে। তাই নিহান বলে –

“- ঠিক আছে চলে আসুন একা একা কিন্তু সাবধানে যাতে হাতে পায়ে কোথাও ব্যাথা না লাগে। খুব কেয়ারফুল হয়ে আসবেন কথাটা যাতে মাথায় থাকে “।

মিহি ফোন রেখে দিয়ে বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে রিকশা নিয়ে বাসার জন্য রওনা দেয়। আর অন্যদিকে নিহান ফোন রেখে সানভির সাথে কথা বলে –

“- সানভি শুনো আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি আজকে বাড়িতে আগুন লাগার বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশ আসবে। আর রানা শিকদারের সাহস একটু বেশি হয়ে গেছে কথায় আছে না পিপীলিকা পাখা গজায় মরিবার তবে ঠিক তেমন “।

“- তাহলে কি বস রানাকে সরিয়ে দিবেন একবারে রাস্তা থেকে “।

“- না নিবার্চনের আগে এইসব ঝামেলা চাই নাহ আমি একবার নিবার্চন শেষ হোক তারপর রানা নাম শহরের বুক থেকে মুছে দিবো। নিহান নেহাল কি সেটা ও বুঝতে পারবে তবে ওর উড়ার জন্য যাতে ডানা না থাকে সেটা দেখো। কি করতে হবে সেটা তুমি যানো সানভি “।

“- ওকে বস কাজ হয়ে যাবে আজকে কাহিনী শেষ “।

নিহান একটা ডেভিল হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে ড্রাইভারকে সানভি ডেকে নিয়ে এসেছে কারণ সানভি এখন বাড়ি যাবে। অন্যদিকে সিসিটিভি লাগাতে লোক বাড়ির ভিতরে চলে এসেছে একজন মানুষ ফোন দিয়ে বলে –

“- স্যার সিসিটিভি লাগানোর লোক চলে এসেছে আর হানিয়ন শিকদার একদম আমার সামনে বসে রয়েছে কি করব এখন “।

“- যখন পাখি খাঁজায় ভিতরে চলে এসেছে তাহলে দেরি কোনো করছো মেরে ফেলো ওকে। হানিয়া শিকদারকে এমন মৃত্যু দেও যাতে রাস্তার কুকুর ওর শরীর দেখে দূরে সরে যায়। নিহান শিকদারকে বোঝাতে হবে কষ্ট কি সো কাজ কর “।

“- ওকে স্যার হানিয়া শিকদার শেষ “।

বসে থাকা হানিয়া শিকদারের দিকে এগিয়ে গিয়ে কথাটা বলল লোকটা। হানিয়া শিকদার এখন বাড়ির ড্রয়িং রুম বসে রয়েছে খাবার খাবে কিন্তু ওনি যানেন না খাবারের আগে ওনার মৃত্যু এগিয়ে আসছে কাহিনী শেষ

#চলবে