মন ফাগুন পর্ব-১২

0
49

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১২ ( জীবন বাঁচাতে

হানিয়া বেগম বসে রয়েছে সারা ওনাকে একটু আগে নিচে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এসেছে খাবার খেতে হবে বলে। আর দুইদিন ধরে ঘরে বসে থাকতে ওনার ভালো লাগছে না তাই নিচে নেমে আসে। সিসিটিভি লাগাতে আসা লোক গুলো কারেন্ট দিয়ে হানিয়া শিকদারকে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করে তাই তারা কয়েকটা তার বিছিয়ে রাখে তবে সেখানে কারেন্ট নাই সেটা সবাই জানে।

তারা কারেন্টের তার বিছিয়ে রেখে দেয় কিন্তু সেখানের কারেন্ট সংযোগ দেওয়ার জন্য লাইন অন করে দেয়। হানিয়া শিকদারের খুব কাছে তার রয়েছে ওনি একটা হুল চেয়ারে বসে রয়েছে। আসলে কালকে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে পায়ের আঘাত পেয়েছে তাই হাঁটতে পারবে না ওনি। সেইজন্য হুল চেয়ার ব্যবহার করেন ওনি তবে তার ওনার খুব কাছে যদি একটু হুল চেয়ার নড়ে যায় তাহলে পুরো কারেন্ট ওনার শরীরে চলে যাবে। আর এই কারেন্ট কোনো নরমাল তার দিয়ে তৈরি করা অনেক শক্তিশালী।

যদি একবার এই কারেন্ট কারো শরীরে লাগে তাহলে সে সাথে সাথে মারা যাবে। মিহি রিকশা করে নেমে যায় বাড়িতে ড্রয়িং রুমে চলে আসে এখানে হানিয়া বেগম ছাড়া আর কেউ নাই। হানিয়া বেগম অনেক সময় ধরে এখানে হুল চেয়ারে বসে রয়েছে তাই ওনি একটু উঠে পাশের টেবিলের চেয়ারে বসার জন্য হুল চেয়ার একটু নড়ায়। কিন্তু একদম প্রায় তারের কাছাকাছি পৌঁছে যায় চেয়ার শুধু এখন একটু সময়ের অপেক্ষা।

মিহি দেখে হানিয়া বেগম সামনে বসে রয়েছে সেইদিন আগুনের ঘটনার পর ওনাকে আজকে প্রথম দেখছে। মিহি ওনার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় কারণ ওনার শরীর কেমন আছে সেটা জিজ্ঞেস করতে হবে। মিহি যখন কাছে যায় তখন হঠাৎ করে একটা তার খেয়াল করে ভালো করে চেয়ে দেখে তার থেকে একটু একটু আগুনের মতো কি যেনো বাহির হচ্ছে। হানিয়া শিকদার যখন হুল চেয়ার আর একটু সরাতে যাবে তখন মিহি চিৎকার করে বলে –

“- মা দূরে সরুন”।

মিহির কথা হানিয়া শিকদার বুঝতে পারে না মিহি দৌড়ে এসে হুল চেয়ার সরিয়ে দেয়।হানিয়া শিকদার তার থেকে দূরে সরে যায় মিহি তাড়াতাড়ি গিয়ে সকেট বন্ধ করে। হানিয়া বেগম খেয়াল করে দেখে কারেন্ট তার তার চেয়ারের কাছে ছিলো আর সেটাই কারেন্ট ছিলো। মিহি কারেন্ট লোকদের ডাকে –

“- এই যে আপনারা যারা সিসিটিভি লাগাতে এসেছেন তাদের বলছি এখানে আসুন। এখানে আসুন বলছি “।

সিসিটিভি যারা লাগাচ্ছে মানে সেই সাজানো লেকগুলো তারা বুঝতে পারে তাদের পুরো পরিকল্পনা বৃথা হয়ে যাবে। কিন্তু যায় হোক আজকে হানিয়া শিকদারকে খুন করতে হবে তার জন্য যদি মিহিকে মেরে ফেলতে হয় তাহলে মারবে।লোকগুলো কাছে আসে আর বলে –

“- জি ম্যডাম বলেন “।

“- কি জি ম্যাডাম এই কারেন্ট তার যে আপনারা এখানে রাখলেন এই তারে যে কারেন্ট ছিলো সেটা কি আপনারা খেয়াল করেন নাই। আর একটুর জন্য কারেন্ট হুল চেয়ারে লাগে নাই না হলে কি হতো সেটা আপনারা যানেন। আর সিসিটিভি লাগাতে এতো ভোলট তার কোনো ব্যবহার করা হয় “।

“- ওহ আসলে ম্যাডাম তার এখানে কি করে পড়ে গিয়েছে সেটা বুঝতে পারি নাই। আর এইরকম তার দিয়ে সিসিটিভি লাগানো হয় “।

“- না কখনো না এই তার দেখে মনে হচ্ছে বেশ পাওয়ার ফুল এইটাতো সিসিটিভি লাগাতে ব্যবহার হতে পারে না। সত্যি কি করে বলুন আপনারা কারা এই তার কোনো ব্যবহার করেছেন। আপনাদের উদ্দেশ্য কি কোথা থেকে এসেছেন আপনারা “।

লোকেরা বুঝতে পারে মিথ্যা আর চলবে না মিহি বাড়ির অন্য লোকদের ডাকতে থাকে। মিহি যখন পিছনে ঘুরে তখন সিসিটিভি লাগাতে আসা লেকগুলো তাদের ব্যাগ থেকে একটা ছুরি বাহির করে। পিছন থেকে মিহির গলায় ধরে আর বলে-

“- তোর জন্য আমাদের কালকের পরিকল্পনা খারাপ হয়ে গেছে তাই তোকে মেরে ফেলবো। কালকে তোর জন্য হানিয়া শিকদারকে মারতে পারি নাই আজকে তুই বেঁচে থাকবি না

হঠাৎ করে গুন্ডারা মিহির গলায় ছুরি ধরে যার কারণে সে আর আওয়াজ করতে পারে না। তবে হানিয়া বেগম এইসব দেখে চিৎকার করে সারা আর বাড়িতে থাকা সবাইকে ডাকতে থাকে। কিন্তু এখন দুপুরের সময় বাড়ির কাজের লোক সহ সবাই নিজের রুমে রয়েছে তাই এতো তাড়াতাড়ি ওনার ডাক সবার কান অবদি পৌঁছাতে পারে নাই। কিন্তু ওনি ডাকতে থাকেন –

“- কে আছো বাচা ও মিহিকে বাচা ও “।

গুন্ডারা দেখে হানিয়া শিকদার চিৎকার করছে তাই বলে –

“- এই হানিয়া শিকদারের মুখে বন্ধ করে এর আওয়াজ শুনে যদি বাড়ির কেউ চলে আসে তাহলে সমস্যা হবে। তাড়াতাড়ি ওর মুখ বন্ধ করে আর কারেন্ট লাইন চালু করে ওকে মেরে ফেল। এইবার কাজ ঠিক করে না করতে পারলে বস আমাদের টাকা দিবে না “।

গুন্ডাদের মধ্যে কিছু লোক হানিয়া শিকদারকে ধরে ফেলে তারপর কারেন্ট তার একদম হুল চেয়ারের কাছে নিয়ে আসে। এবং তারা লাইন লাগাতে যায় এইটা দেখে মিহির মনে ভয় ঢুকে যায় যদি একবার এই তারে কারেন্ট এসে পড়ে তাহলে হানিয়া বেগমকে বাঁচানো যাবে না। এই কারেন্ট তার অনেক পাওয়ারের মিহির কিছু একটা করতে হবে নিজের শাশুড়ীকে এইভাবে মরতে দেখতে পারবে না সে।

যখন লাইন অন করতে যাবে তখন মিহির গলার ধরে রাখা ছুরিঁর লোকটা সেইদিকে তাকিয়ে দেখে। মিহি গুডার এই অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে তার হাত ধরে ফেলে আর ছুরিটা নিয়ে নেয়। সেই লোক যখন মিহিকে ধরতে যাবে মিহি তখন ওর হাতে ব্যাথা দেয়। তবে দেখে কারেন্ট লাইন অন করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অন্য লোকটা।

মিহি তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে সেই লোকটাকে থামিয়ে দেয় আর ওর মাথায় পাশে থাকা ফুলের টব দিয়ে আঘাত করে –

“- তোর সাহস কি করে হয় আমার আম্মুকে খুন করার চেষ্টা করার শোন নিহান শিকদারের মা মানে আমার মা। আর এই মিহি শিকদার বেঁচে থাকতে তার আম্মুকে কেউ টার্চ করতে পারবে না “।

যার মাথায় আঘাত পেয়েছে সে মাটিতে বসে পড়েছে কিন্তু অন্য লোকগুলো মিহিকে আঘাত করতে আসে। মিহি সবাইকে মারতে পারে আর একটা লোককে ধরে বলে –

“- তোকে কে পাঠিয়েছে হানিয়া শিকদারকে মারতে কি শএুতা তোর ওনার সাথে “।

“- আমরা কিছু জানি না একজন লোক আমাদের টাকা দিয়েছে সেইজন্য করেছি। কি শএুতা এই পরিবারের সাথে সেইটা জানি না আমি তবে বলেছে হানিয়া শিকদারকে মেরে ফেলতে।

“- কিন্তু আজকে এই বাড়িতে সিসিটিভি লাগাবে সেটা কে বলছে তোদের। এই কথাটা এই পরিবারের মানুষ ছাড়া কেউ জানে না তাহলে তোরা কি করে জানতে পারলি?

“- বস আমাদের খবর দিয়েছে তবে মনে হয় এই বাড়ির কেউ এইসব কাজের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু সে কে সেটা আমরা জানি না “।

মিহি এই কথাটা ভালো করে ভাবে সত্যি এই পরিবারের কেউ হানিয়া শিকদারকে মারতে চাই। তা না হলে হানিয়া শিকদার সেইদিন যখন রুমে ছিলো তখন বাহির থেকে কে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে যার জন্য রুমে আগুন লাগার সময় ওনি বাহির হতে পারেন নাই। আর আজকে সিসিটিভির কথাটা বাড়ির সবাই জানে না শুধু পরিবারের মানুষ ছাড়া। আর দুপুরের ড্রয়িং রুমে মানুষ থাকে না এই কথাটা ও সবার জানার কথা না তাহলে কে এই পরিবারের মানুষ হয়ে ও হানিয়া শিকদারকে খুন করতে চাই।

মিহি যখন কথাটা ভাবতে থাকে তখন হঠাৎ করে বাহির থেকে গাড়ির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। তখন গুন্ডারা বুঝতে পারে হয়তো নিহান নেহাল শিকদার চলে এসেছে তাই তারা বলে –

“- নিহান শিকদার চলে এসেছে মনে হয় পালাতে হবে না হলে বস মেরে ফোলবে আমাদের “।

ওরা যখন পালাতে যায় মিহি ওদের আটকাতে যায় কিন্তু গুন্ডারা তাদের শরীরের ব্যাথা নিয়ে পালিয়ে যেতে চাই। মিহি ওদের ধরতে যায় তখন মিহিকে ওরা ধাক্কা দেয় যার ফলে মিহি দূরে গিয়ে টেবিলের উপর বারি খায়। নিহান গাড়ি থেকে নেমে আসে হঠাৎ কিছু লোক বাড়ির ভিতর থেকে বাহির হতে থাকে। নিহান মনে করে সিসিটিভি লাগাতে এসেছে সেইসব লোক কিন্তু ওদের শরীরের অবস্থা দেখে সন্দেহ হয় ওর।

#চলবে