মন ফাগুন পর্ব-১৬

0
53

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৬ ( জেলাস মিহি)

বিকাল হয়ে যায় নিহান বাড়িতে ফিরে আসে না মিহি রুমে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যায় তবে কি করবে কোনো কাজ নাই। আর যদি বাড়ি থেকে বের হয় তাহলে নিহান বকা দিবে তবে রুমে থাকতে আর ভালো লাগছে না। নূহা কলেজ শেষ করে বাড়িতে এসে সব ঘটনা সারার কাছে শুনে এরপর মিহির রুমে আসে। মিহি রুমে বসে ছিলো নূহা রুমে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নিতে জিজ্ঞেস করে –

“- মিহি তোমার রুমে কি আসতে পারি “।

মিহি দরজার বাহিরে নূহাকে দেখে হেঁসে দেয় যাক নূহা এসেছে ওর সাথে কথা বলা যাবে। মিহির মতো দুষ্ট একটা মেয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না মিহি এক গাল হাসি দিয়ে বলে –

“- আরে নূহা তুমি রুমের ভিতরে আসো। অনুমতি নেওয়ার কি দরকার তোমার “।

নূহা রুমে ঢুকে যায় তবে সত্যি নূহা মিহির ব্যবহার দেখে অবাক হয় কি সুন্দর মিষ্টি করে কথা বলতে পারে সে। মিহি প্রতিটা মানুষকে খুব সহজে আপন করে নিতে পারে নিহানের জন্য একদম পারফেক্ট বউ হলো মিহি। তবে নূহা খেয়াল করে মিহির মাথায় আঘাত পেয়েছে তাই নূহা বলে –

“- মিহি সত্যি তুমি খুব ভালো মেয়ে। আজকে যদি তুমি না থাকতে তাহলে হয়তো চাচি মণিকে বাঁচানো যেতো না। তুমি নিজের জীবন দিয়ে চাচিকে বাঁচালে অনেক ধন্যবাদ তোমাকে “।

মিহি নূহার কথা শুনে হাসে মিহি শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করেছে একজন মানুষ হয়ে অন্য একজনকে বাঁচানো তার দায়িত্ব। মিহি আর নূহা একসাথে অনেক সময় ধরে কথা বলে পরে নূহা বলে –

“- মিহি অনেক কথা বলেছি আমরা এখন একটা কাজ করি চলো টিভি দেখা যাক। এই রুমে টিভি রয়েছে কিন্তু নিহান ভাই টিভি দেখতে পছন্দ করে না। চলো কিছু দেখা যাক “।

“- হুম চলো টিভি দেখা যাক এমনি ঘরে বসে থাকতে থাকতে সময় কাটে না। আর রুম থেকে বের হলে ওনি বকা দিবেন তাই টিভি দেখলে ভালো হবে “।

নূহা আর মিহি টিভি দেখতে শুরু করে নিহান বিকাল দিকে বাড়ি ফিরে আসে সেই গুন্ডাদের মেরে তার কিছু জরুরি কাজ ছিলো। নিহান নিজের রুমে এসে দেখে টিভির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে রুম ঢুকে দেখে নূহা আর মিহির টিভি দেখছে। মিহি পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে নিহানের আগ্রহ নিয়ে দেখে টিভিতে কার্টুন চলছে।

নিহান মিহি আর নূহার কার্টুন দেখা দেখে হেঁসে ফেলে মানে সত্যি এমন করে দেখছে মনে হচ্ছে টিভির ভিতরে ঢুকে যাবে। মিহি এইরকম বাচ্চামো কাণ্ড করতে পারে সেটা নিহান যানে তবে নূহা ও শেষে কার্টুন দেখছে ভাবা যায়। মিহির সাথে যে থাকবে মিহি তাকে ও নিজের মতো বাচ্চা করে ফেলবে। নূহার হাসি মুখ দেখে নিহানের ভালো লাগছে নিয়ার যাওয়ার পর নূহা একটু একাকিত্বে ভুগছিলো তাই মিহির সাথে থেকে হাসতে শুরু করে দিয়েছে।

নিহান কোনো শব্দ না করে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে চলে যায় অন্য রুমে ওর রাজনৈতিক কাজের জন্য একটা আলাদা রুম রয়েছে। সেখানে নিহানের জামা কাপড় রয়েছে প্রায় ওর প্রয়োজনের সব জিনিস থাকে সেই রুমে। অনেক সময় নিহান কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে তাই এই রুমে সব থাকে ওর। নিহান সেখানে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে একটু হাতে মুখে পানি দিয়ে নেয় তবে জামা কাপড় পাল্টায় নাই। নিহানের শরীর বেশ টার্য়াড ছিলো তাই সে ঘুমিয়ে পড়ে সেখানে বেড রয়েছে।

মিহি আর নূহা অনেক সময় টিভি দেখে তারপর নূহা নিজের রুমে চলে যায় তবে আজকে অনেক মজা করেছে মিহির সাথে। তখন রাত প্রায় ছয়টা চারিদকে মাগরিবের আযান দিচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিহি দেখে বেশ ভালো সময় হয়ে গেছে কিন্তু নিহান বাড়ি ফিরে আসছে না কোনো। মূলত টিভি দেখার সময় মিহি নিহানকে খেয়াল করে নাই তাই মনে করেছে নিহান আসে নাই। মিহি বসে বসে টেনশন করছিলো তখন একজন স্টাফ আসে মিহির জন্য জুস নিয়ে আর বলে

“- মিহি ম্যাম নিহান স্যার আপনাকে জুস খেতে বলেছে “।

মিহি স্টাফ কথা শুনে বলে –

“- ওনি জুস খেতে বলেছেন মানে ওনি কি বাড়িতে ফিরে এসেছেন “।

“- হুম নিহান স্যার বিকাল দিকে বাড়িতে ফিরে এসেছে আমাকে বলেছে ছয়টার দিকে জুস দিতে। এরপর ওনাকে দেখলাম আপনার রুমে একবার ঢুকে এরপর বাহির হয়ে যায়। পরে স্টাডি রুমের দিকে যেতে “।

মিহি বুঝতে পারে নিহান অনেক আগে বাড়ি ফিরে এসেছে হয়তো নূহা আর ও টিভি দেখছিলো তাই বিরক্ত করে নাই। মিহি জুসটা খেয়ে স্টাডি রুমের দিকে যায় স্টাডি রুমের দরজা খোলা ছিলো তাই মিহি খুব সহজে ঢুকে যায়। তবে নিহানকে সে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে মিহি একটু কাছে যায় হাঁটু গেড়ে বসে দেখে নিহানকে। মিহি মনে মনে বলে –

“- কি সুন্দর ঘুমিয়ে রয়েছে লোকটা একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায় কিন্তু জেগে গেলে একদম রাগী সিংহের মতো লাগে। রাগী বদমেজাজি শুধু বকা দেয় তবে কেয়ার ও করে। হুম মিহি যাই বলিস এই খাটশ লোক কিন্তু ততটা খারাপ না মোটামোটি ভালো আছে কিন্তু বেচারার কপাল খারাপ তোর মতো এইরকম একটা দুষ্ট বউ কপালে জুটেছে “।

মিহি নিহানকে বিরক্ত করতে চাই নাই তাই ওকে ঘুমাতে দিবে বলে ঠিক করে। মিহি যখন চলে যেতে চাই তখন হঠাৎ করে ওর চোখ যায় নিহানেন পড়নে শার্টের উপর। মিহি একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখে শার্টে কিছু একটা লেগে আছে সেটা দেখে মিহির চোখ কপালে উঠে যায়। মিহি আবার নিচে ঝুঁকে ভালো করে দেখে আর বলে –

“- এই খাটাশ লোকের শার্টে এই লাল দাগ লেগে গেছে কি করে মনে হচ্ছে এইটা কোনা লিপি স্টকের দাগ। কিন্তু ওনার শার্টে এই দাগ কি করে আসবে “।

মিহি আরো ভালো করে দাগটা দেখতে থাকে যার কারণে ওর হাত নিহানের বুকের উপর রাখে। মিহির কোনো জিনিস শান্তিতে দেখতে বা করতে পারে না তাই ওর নড়াচড়ার জন্য নিহানের ঘুম ভেঙে য়ায়। তবে মিহিকে এতোটা কাছে দেখে নিহান বেশ অবাক হয়ে যায় ও মিহির হাত নিজের বুকে থেকে সরিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

হঠাৎ করে নিহানের এইরকম হাত ধরে টান দেওয়ার ফলে মিহি নিহানের কাছে চলে যায়। মিহির চুলগুলো নিহানের মুখের সামনে চলে আসে নিহান সুন্দর করে চুলকে তার কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে –

“- কি হলো কি করছিলেন মিহি ঘুমন্ত একটা মানুষের ফায়দা নিয়ে তার সাথে কি উল্টো পাল্টা করছিলেন শুনি “।

নিহানের কথা মিহির কান অবদি ভালো করে পৌঁছাতে পারছে না কারণ মিহির হৃদকম্প বেড়ে যাচ্ছে। নিহানের হঠাৎ করে এইরকম করে কাছে ডেকে নেওয়ার ফলে মিহি একদম জমে গেছে। নিহান এখন মিহর কপালে হাত দেয় ওর দিকে তাকিয়ে থাকা সব মিলিয়ে মিহির মনে ঝড় বয়তে শুধু করে। নিহান শুধু মিহির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তবে মিহির থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করে –

“- কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর করেন কি হয়েছে এখানে কোনো আপনি “।

এইবার নিহান কথাটা বেশ জোরে বলেছে যার কারণে মিহি শুনতে পায়। মিহি নিজেন অবস্থান টের পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায় একটু হলে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তার। মিহি বলে –

“- আমি মানে আসলে আপনাকে দেখতে এসেছিলাম কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন “।

“- তাহলে আমার বুকে হাত দিয়ে কি করছিলেন আপনি “।

মিহির বুকের কথাটা মনে হয়ে সেই লাল দাগের কথা মনে পড়ে মিহি সাথে সাথে লজ্জা পাওয়া বাদ রেখে রেগে যায়। মিহি বলে –

“- কি করছিলাম আপনার বুকে সেটা জিজ্ঞেস করলেন তাহলে দেখুন। এই লাল দাগটা কিসের আপনার শার্টে দেখে মনে হচ্ছে কোনো লিপস্টিকের দাগ। আপনার শার্টে লিপস্টিকের দাগ কোথা থেকে আসবে? কোথায় গিয়েছিলেন আপনি বলুন?

নিহান হঠাৎ করে মিহির রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারে না কিন্তু পরে নিজের শার্টের দিকে খেয়াল করে দেখে সত্যি একটা লাল দাগ। পরে মনে পড়ে এই লাল দাগটা মনে হয় রক্তের সেইসময় গুন্ডাদের মারার সময় লেগেছে। তবে নিহান সত্যি কথাটা মিহিকে বলে না কারণ মিহির রাগ দেখতে তার বেশ ভালো লাগছে। নিহান বলে –

“- ওহ রিয়েলি লিপস্টিকের দাগ রয়ে গেছে এখনো। ও আমাকে বলেছিলো দাগটা মুছতে কিন্তু ভুলে গেছি “।

“- এই ওটা কে শুনি কে বলেছে দাগটা মুছতে “।

“- ওহ এই ওটা হলো আমার প্রেমিকা পড়শি আসলে বিকালে পড়শির সাথে দেখা করতে যায়। আর তখন মানে বুঝতে পারছেন একটু রোমান্টিক হয়ে যায় যার কারণে “।

নিহান পুরো কথাটা শেষ করতে পারে না মিহি জোরে বলে –

“- কি আপনার প্রেমিকা কোথা থেকে এসেছে?কে আপনার প্রেমকি কোথায় থাকে সে? কি নাম? বাড়ি কোথায়?

#চলবে