মন ফাগুন পর্ব-১৭

0
52

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৭

মিহির মুখ দেখে নিহানের হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সে না হেঁসে সিরিয়াস হয়ে কথাটা বলে। মিহি শুধু ভাবতে থাকে মানে নিহানের প্রেমিকা রয়েছে রয়েছে সেটা মিহি যানে না। মিহি বলে –

“- মানে আপনার প্রেমিকা রয়েছে সেটা আপনি আমাকে বলেন নাই আর এখন এই লিপস্টিকের দাগ দেখে আমার জানতে হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন যা ইচ্ছা তাই করবেন ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করবেন। সাহস কি করে হয় আপনার আমি মনে করেছিলাম আপনি একজন ভালো মানুষ কিন্তু আপনি একটা বাজে লোক “।

নিহান মিহির জেলাসিটা দেখে এই বাচ্চা মেয়ের মাথায় কোনো বুদ্ধি নাই লাল দাগ হলেই কি সেটা লিপস্টিকের হতে হবে কোনটা রক্তের দাগ আর কোনটা লিপস্টিকের সেটা বুঝতে পারে না। তবে মিহির মুখ একদম চুপসে গেছে নিহান বলে –

“- ওহ রিয়েলি আমি খারাপ লোক কি করে হয় আপনি না বলেছেন আমাদের রিলেশন শুধু নিবার্চন অবধি। এখন যদি নিবার্চনের পর আপনি চলে যান তাহলে আমাকে বিয়েতো করতেই হবে। পুরুষ মানুষ বউ ছাড়া কি থাকা যায় তাই আগে থেকে যদি কাউকে খুঁজে রাখি তাহলে পরে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করতে পারব “।

মিহি নিহানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে দেখে মানে কি বাজে লোক এক বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করার ইচ্ছা হচ্ছে ওনার। নিবার্চন এখনো আসে নাই আর ওনি পাএী রেডি করে ফেলেছেন শুধু শুধু কি বলে খাটাশ লোক। মিহি বলে –

“- আচ্ছা নিবার্চনের পর বিয়ে করার যদি এতো তাড়া থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গেলেন কোনো। আপনার জন্য কি মেয়ে অভাব পড়ছে পৃথিবীতে নিয়া পালিয়ে গেলে আরেন অনেক মেয়ে ছিলো আপনার জন্য। আর আপনার যদি প্রেমিকা থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গেলেন কোনো?

“- তখন মাথায় এতো কথা আসে নাই বিয়ে করা জরুরি ছিলো তাই করেছি আর আপনি তো নিবার্চনের পর চলে যাবেন। তখন আমি কাকে বিয়ে করব বা না করব তাতে আপনার কি যায় আসে। আর আপনার যদি কাউকে পছন্দ থাকে তাহলে তার সাথে ও প্রেম করেন সমস্যা কি “।

মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে এই লোকটার এইসব কধা মিহির সয্য হচ্ছে না। নিজে ও প্রেমিকার সাথে সময় কাটিয়ে এসেছে এখন মিহিকে বলছে। মিহি বলে –

“- আমি আপনার মতো এইরকম চরিএহীন না যে ঘরে বউ থাকতে অন্য কারো সাথে কথা বলব এইরকম লিপস্টিকের দাগ নিয়ে বাড়ি ফিরব। নিবার্চনের পর বিয়েটা ভেঙে যেতে পারে কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। আর ভবিষ্যতে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে হতে ও তো পারে “।

মিহি নিজের কথাটা শেষ না করেই চলে যেতে চায় নিহান তার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মিহি চলে যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে কিন্তু নিহান ওকে আরো কাছে নিয়ে আসে। মিহির মুখটা রাগে কেমন ফুলে গেছে ঠোঁটের হাসি বিলীন হয়ে গেছে আর চোখে যোনো একটু পানি জমে রয়েছে। নিহান বলে –

“- সবসময় শুধু ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ছটফট করেন কোনো একটু থাকলে কি হয় শুনি। আর কি বলছিলেন ভবিষ্যতের কি হতে ও পারে কথাটা পুরো শেষ করেন আমি শুনতে চাই। সত্যি করে বলুন মিহি নিবার্চনের পর কি সত্যি চলে যাবেন আমাকে ছেগে এই পরিবার ছেড়ে। পারবেন কি অন্য কারো হয়ে যেতে?

“- হুম অবশ্যই পারবো আপনার মতো এইরকম একটা খাটাশ লোকের সাথে আমি থাকতে চাই না। বাজে লোক ঘরে বউ থাকতে বাহিরে অন্য কারো সাথে প্রেম করে “।

নিহান মিহির অভিমান দেখে মেয়েটা সত্যিই অদ্ভুত কখন রাগ করে আবার কখনো অভিমান করে। নিহান এইবার সত্যি কথা বলে দেয় –

“- শুনুন মিহি এই নিহান এতো খারাপ না যে বউ থাকতে অন্য কারো সাথে প্রেম করবে এইটা লিপস্টিক না বরং রক্তের দাগ। একটা জরুরি কাজ ছিলো তাই ভুল করে রক্ত লেগে যায় ভালো করে খেয়াল করেন। লিপস্টিকের দাগ হলে একটু ছোঁয়া দিলে উঠে যেতো কিন্তু যেহেতু রক্তের দাগ তাই রয়ে গেছ “।

মিহি ভালো করে খেয়াল করে দেখে সত্যি এইটা রক্তের দাগ তাই এখনো উঠে নাই। মিহি এইবার নিহানের দিকে দেখে নিহান কি সুন্দর মিটমিট করে হাসছে মিহি একটা ধাক্কা দেয় নিহানকে আর বলে –

“- যদি এইটা রক্তের দাগ হয় তাহলে এতোখন নাটক করছিলেন কোনো প্রেমিকা বললেন কোনো। শুধু শুরু আমাকে রাগিয়ে দিলেন কোনো বাজে লোক একটা। আপনি একটা খাটাশ লোক সয়তান মানুষ “।

নিহান মিহির এইসব কথা শুনে হাসে তবে এখন নিজের রুমে ফিরে যাওয়া দরকার। নিহান রুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছে যায় আর বলে –

“-মিহি দোষটা আপনার আমি প্রেমিকার নাম বলেছি আর আপনি সেটা বিশ্বাস করে ফেললেন। তবে যায় বলেন যদি সত্যি একটা প্রেমিকা থাকতো তাহলে খারাপ হতো না। আর চারটা বিয়ে করা কিন্তু জায়েজ আছে যদি আপনি সতিনেন সংসার করতে পারেন “।

“- আপনি চারটা বিয়ে করেন বা দশটা মিহির তাতে কিছু যায় আসে না বাজে লোক একটা। আর আপনার মতো মানুষ আবার প্রেম করবে। আমি চলে গেলে একটা বউ ও থাকবে না আপনার জন্য “।

মিহি নিহানের সাথে পরে আর ভালো করে কথা বলে নাই নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকে। নিহান ও কোনো কথা বলে নাই পরে রাতে খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। নিহান ছোফায় ঘুমিয়ে থাকে আর মিহি বেডে।

রাত তখন একটা বেজে গেছে চারদিকে অন্ধকার রয়েছে শহরের এতো তাড়াতাড়ি মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে না তবে রাত একটা কম সময় না। শিকদার বাড়ির সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো তখন হঠাৎ করে কারো ঘুম ভেঙে যায়। সে চুপিচুপি উঠে খুব আলতো করে দরজা খুলে দেয় রুমের পরে বাহির হয়ে আসে। আর সেই মানুষটা আর কেউ না মিহি। মিহি রুম থেকে বাহির হয়ে খুব ধীর গতিতে সেই আগুনে পুড়ে যাওয়া রুমে এসে পৌঁছে যায়।

রুমটা অনেক অন্ধকার তবে মিহি নিজের সাথে টার্চ লাইট নিয়ে আসে কিন্তু সমস্যা হলো ঘরে তালা দেওয়া। মিহি নিজের মাথার পিন দিয়ে তালাটা খুলে ফেলে তারপর সেই রুমের ভিতরে ঢুকে যায়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর রুমটায় শুধু কালো কালো ছাই আর কিছু আসবাবপত্র ছাড়া কিছু নাই। মিহি গিয়ে সেই আয়নার সামনে দাঁড়ায় তার পরনে একটা শাড়ি ছিলো সে আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে।

মিহি সেখানে একটা কয়েল জ্বালিয়ে নিজের শাড়ির মধ্যে আগুন লাগাতে যাবে ঠিক তখন কেউ ওর হাত ধরে ফেলে। মিহি পিছনে ফিরে অন্ধকারে কারো মুখ দেখতে পাই না মানুষটা তাকে আয়নার সাথে মিশিয়ে মুখ চেপে ধরে আর কয়েলটা দূরে ফেলে দেয়। মিহি শুধু –

“- উমমম উমমম করতে থাকে “।

কিন্তু লোকটা মিহির মুখ ছাড়ে না মিহি তার সাথে কামড় দেয় পড়ে হাত মুখ ছাড়িয়ে নেয়। লাইটের আলো যখন লোকটার মুখের উপর দেয তখন অবাক হয়ে যায়।

#চলবে