#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৮
অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ করে কাউকে দেখে মিহি অনেক ভয় পেয়ে যায় কি করবে বুঝতে পারে না। পরে মনে পড়ে তার হাতে একটা টর্চ লাইট রয়েছে সেটা যখন জ্বালিয়ে সামনে থাকা মানুষকে দেখে অবাক হয়ে যায় আর বলে –
“- আপনি এখানে কি করেন? কি করে যানতে পারলেন এই রুমে আমি এসেছি?
মিহির সামনে থাকা মানুষটা আর কেউ ছিলো না নিহান ছিলো। হঠাৎ রাতে মিহিকে রুম থেকে এইরকম চোরের মতো বাহির হতে দেখে নিহানের সন্দেহ হয়। তাই মিহির পিছনে পিছনে আসতে থাকে কিন্তু যখন দেখে মিহি সেই পুড়ে যাওয়া রুমে এসেছে তখন এই রুমে ঢুকে। নিহান বলে –
“- আপনি কি করছিলেন এই রুমে মিহি এই পুড়ে যাওয়া রুমে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর এইরকম শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কোনো আর কয়েলের আগুন নিজের শরীরে কোনো লাগাচ্ছেন “।
মিহি বুঝতে পারে নিহানকে সব বলতে হবে কিন্তু নিহান এতেন জোরে জোরে জিজ্ঞেস করছিলো তাই মিহি ওর মুখ চেপে ধরে। বাড়ির কেউ শুনে ফেললে সবর্নাশ হয়ে যাবে তাই মিহি বলে –
“- আপনি এতো জোরে কথা বলছেন কোনো আর আমার এইসব করার পিছনে একটা কারণ রয়েছে। এই ঘরে এতো রাতে আমি এইজন্য এসেছি কারণ আমি জানতে চাই মায়ের সাথে আসলে কি ঘটনা হয়েছে। সেইদিন শাড়িতে আগুন কি করে লেগেছে এই রহস্যর সমাধান করতে চাই “।
নিহান নিজের মুখের উপর থেকে মিহির হাত ছড়িয়ে দেয় তারপর বলে –
“- মিহি এই ঘটনা সমাধান করার জন্য কালকে পুলিশ আসবে আমি কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। আপনার শরীর অনেক অসুস্থ তাই এইসব ঘটনার মধ্যে না জড়ানো ভালো হবে আপনার জন্য । আর সব রহস্য পুলিশ সমাধান করবে তাই এখন চলুন রুমে যায় “।
মিহি রুমে যেতে রাজি হয় না সে এখানে থেকে আসল রহস্য জানবে। মিহি বলে –
“- হুম আমি মেনে নিলাম পুলিশ এসে সব সমাধান করবে কিন্তু সব কিছু পুলিশের উপর ছেড়ে দিতে পারি না। আর সেইদিন গুন্ডারা বলেছে এই বাড়ির কেউ এইসব ঘটনার পিছনে জড়িত রয়েছে তাই সত্যিটা জানা জরুরি। কারণ শএু যদি বাড়ির মধ্যে থাকে তাহলে আক্রমণ অনেক বেশি হতে পারে “।
“- আপনি সেই গুন্ডাদের কথায় কি করে বিশ্বাস করতে পারেন? আর এই বাড়িতে কে মমকে মারতে চাইবে? কার শএুতা রয়েছে মমের সাথে?
“- আমি গুন্ডাদের কথায় বিশ্বাস করি কারণ এই বাড়িতে যে সিসিটিভি লাগানো হবে সেটা এই বাড়ির লোক ছাড়া অন্য কেউ জানে না। আর তাই এই বাড়ির কেউ এইসবের পিছনে রয়েছে বলে আমার মনে হয়।হয়তো মম আর শএুর মধ্যে এমন কোনো ঘটনা রয়েছে যেটা আমরা জানি না সেটা জানতে হবে। তাই এই ঘটনার আসলে বিষয় জানতে হবে শএুকে খুজেঁ বের করতে হবে “।
“- কিন্তু মিহি এইসব করতে করতে যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে মিহি? আমার পরিবারের জন্য যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে নিজেকে কখনো মাফ করতে পারব না আমি “।
“- টেনশন করবেন না যদি আমার ভাগ্য মৃত্যু লেখা থাকে তাহলে ঠিক মারা যাবো। কিন্তু এই রহস্য সমাধান করে যাবো “।
নিহান পরে আর মিহিকে কোনো কথা বলে না সে শুধু মিহির পাশে থাকতে চাই। মিহি বলে –
“- দেখুন মায়ের আচঁলে কয়েল থেকে আগুন লেগেছে তাই এখন আমি সেটা করতে চাই। এখানে কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছি সেটার মধ্যে আঁচল দিতে হবে “।
মিহি নিজের কথা অনুসারে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সেখানে গিয়ে শাড়ির আঁচল কয়েলের মধ্যে রাখে। কিন্তু মিহির আচঁলে কয়েলের আগুন অনেক আস্তে আস্তে লাগে একটু পুড়ে আবার নিভে যায়। নিহান বিষয়টি খেয়াল করে আর বলে –
“- কি হলো বিষয়টা মিহি আপনার শাড়িতে কয়েলের আগুন একটু লেগে তারপর নিভে গেছে। কিন্তু সেইদিন মায়ের শাড়িতে একটু কয়েল লেগে দাউদাউ করে আগুন কি করে লেগে যেতে পারে। মমের কথা অনুসারে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুড়ো আগুন ঘরে ছড়িয়ে যায় “।
মিহি বিষয়টি বুঝতে পারে সে এই পরীক্ষা করার জন্য নিজের শাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মিহি বলে –
“- একদম ঠিক বলেছেন নরমাল কয়েলের আগুন শাড়িতে লাগলে সেটা দাউদাউ করে জ্বলতে পারে না। কিন্তু সেইদিন মমের শরীরে একটু কয়েলে আগুন লেগেছিলো যার জন্য পুড়ো ঘর পুড়ে গেছে মানে সেইদিন নিশ্চয়ই শাড়িতে বা পুরো ঘরে এমন কিছু ব্যবহার করা হয়েছিলো যার জন্য আগুন পুড়ো ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হয়তো এইসব পূর্ব পরিকল্পনা করা ছিলো “।
“- হুম সেই কথা বুঝতে পারলাম কিন্তু আমাদের বাড়িতে এসে মমের ঘরে কেউ ঢুকবে। আর বাড়ির কেউ সেটা দেখতে পারবে এইটা কেমন করে সম্ভব। তাহলে কি বাড়ির মানুষের মধ্যে কেউ মমকে মারতে চাই?
“- হুম আমার সন্দেহ ঠিক এই বিষয়ে৷ কিন্তু আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য রুমে কি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা জানতে হবে? চলুন খুঁজে বের করা যাক?
তখন প্রায় রাত দুইটা হানিয়া বেগম নিজের চোখ খুলে ফেলে যদিও ওনার চোখে ঘুম কখনো ছিলো না। হানিয়া বেগম বুঝতে পারে সেই জিনিসটা ঠিক আছে কি না সেটা তার জানতে হবে। হানিয়া উঠে নিজের শরীরে একটা চাঁদর পেঁচিয়ে রুম থেকে চুপিচুপি বাহির হয়ে যায়। সেই নিজের গুপ্ত রুমে যায় যেখানে আসল জিনিস রয়েছে। রুমে গিয়ে পুরানো তালা চাবি দিয়ে খুলে ফেলে ভিতর থেকে একটা কাপড়ের জিনিস বের করে আর বলে –
“- না এই জিনিস ঠিক আছে যায় হয়ে যাক না কোনো। এই জিনিসের কিছু হতে দিবো না আমি এইটা আমার কাছে কারো আমানত হিসাবে আছে। তাই যদি জীবন দিতে হয় তাহলে দিবো তবে এই জিনিস কাউকে দিবো না “।
মিহি আর নিহান পুরো রুম খুঁজতে থাকে তবে পুড়ে যাওয়ার কারণে তেমন কিছু খুঁজে পাই নাই। হটাৎ করে মিহির হাত থেকে টর্চ লাইট পড়ে যায় মিহি সেটা তুলতে নিচে ঝুঁকে সেখানে একটা গন্ধ পাই। মিহি বলে –
“- এই মেঝেতে কেমন একটা গন্ধ রয়েছে দেখেন “।
“- হুম মনে হচ্ছে কেরোসিনের গন্ধ তাহলে কি আগুন লাগানোর জন্য কেরাসিন ব্যবহার করা হয়েছে। সেইজন্য আগুন তাড়াতাড়ি লেগে গেছে “।
#চলবে