#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_৩৮ ( ভালোবাসি মিহি)
নিহানের মনে ভয় ঢুকে গেছে সত্যি মিহি কোনো কিছু করে ফেলে নাই তো। কিন্তু নিহানের ভয়কে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে মিহি দরজা খুলে দেয় মিহিকে সুস্থ থাকতে দেখে নিহান শান্ত হয়। নিহান গিয়ে মিহিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একদম নিজের বুকের মধ্যে মিশিয়ে নেয় আর বলে –
“- মিহি ঠিক আছেন আপনি? কখন থেকে ডাকছি আমি দরজা কোনো খুলছিলেন না ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি “।
নিহানের এইরকম কথা শুনে মিহি হাসে আর বলে –
“- আমি ওয়াশরুমে ছিলাম সেখানে পানির শব্দে হয়তো আপনার গলার আওয়াজ শুনতে পারি নাই।কিন্তু আপনি আমাকে এইরকম করে ডাক দিলেন কোনো কিছু কি হয়েছে?
“- আসলে ইয়াসিন বললো আপনি না কি অসুস্থ তাই ঘরে চলে এসেছেন সেইজন্য চেক করতে এসেছি। আর যখন দেখি আপনার ঘরের দরজা লাগানো আর আপনার কোনো আওয়াজ নাই তখন অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হলাে যেনো আপনি আমার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছেন মিহি “।
“- নিহান আমি একটু আপনার থেকে দূরে ছিলাম সেইজন্য এইরকম করছেন আপনি। কিন্তু একটু আগে আপনি আমাকে কি করে ইয়াসিনের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন। আমি আপনার ওয়াইফ হয়ে কি করে অন্য একটা পর পুরুষকে বিয়ে করব নিহান এইটা সম্ভব না নিহান “।
নিহান মিহির মুখটা তার বুকের থেকে উঠিয়ে তার দিয়ে গাল দুটো ধরে আর মুখের সামনে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। নিহান বলে –
“- মিহি এই নিহান নেহাল শিকদার বেঁচে থাকতে আপনি কখনো অন্য কারো হবেন না। আর ইয়াসিনের সাথে যদি দুইবছর পর আপনার বিয়ে হয় তাহলে সমস্যা আরো বেশি হতে পারে। পরিস্থিতি যেমন চলছে সেইরকম করে চলতে থাকুক শুধু আমার উপর বিশ্বাস রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে.
মিহি আর নিহান তারা কিছুটা সময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এরপর নিহান নিজের রুমে চলে আসে। ইয়াসিন আর তার পরিবার হয়তো চলে গেছে নিহান যখন নিজের রুমে বসে ছিলো তখন জিসু ওর রুমে আসে আর নিহানক৷ দেখে হাসতে থাকে। নিহান নিজের ফোন রেখে জিসুর দিকে দেখে আর বলে –
“- কি হলো জিসু তুমি আমাকে দেখে এইরকম করে হাসছো কোনো। কি করেছি আমি?
“- আচ্ছা তোমার সাথে ফুপির কি সম্পর্ক? তুমি কি ফুপিকে ভালোবাসো তাহলে কি ইয়াসিনের সাথে ফূপির বিয়ে হবে না?
নিহান জিসুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায় সে কি বলবে সেটা বুঝতে পারে না মানে জিসু কি জেনে গেছে নিহান আর মিহি স্বামী স্ত্রী। নিহান বলে –
“- জিসু এইসব কি বলছো তোমার ফুপির সাথে আমার কি সম্পর্ক থাকবে? আর ইয়াসিনের সাথে তোমার ফুপির বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে মিহির বিয়ে হবে “।
“- তাহলে তুমি ফুপিকে জড়িয়ে কোনো ধরলে তখন আর কোনো বললে মিহি তুমি শুধু আমার। এই কথা তখন বলে মানুষ যখন তারা একে অপরকে ভালোবাসে তাহলে কি তুমি ফুপিকে ভালোবাসো সত্যি করে বলো?
নিহান বুঝতে পারে জিসু হয়তো দেখে ফেলেছে তখন তার মিহিকে জড়িয়ে ধরার বিষয়টা। কিন্তু এই কথাটা যদি জিসু সবাইকে বলে দেয় তাহলে নিহানের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। নিহান এইবার এগিয়ে যায় জিসুর কাছে আর ওকে বলে –
“- জিসু তুমি এই কথাটা অন্য কাউকে কি বলেছো?
“- না এখনো বলি নাই “।
-” দেখো জিসু বাবু তুমি যদি এই কথাটা অন্য কাউকে না বলো তাহলে তোমাকে অনেক বড়ো একটা গিফট দিবো,অনেক চকলেট দিবো, খেলনা দিবো। দয়া করে জিসু এই ঘটনা কাউকে বলো না?
“- হুম ঠিক আছে বলবো না কিন্তু সত্যি তুমি আমাকে খেলনা দিবে চকলেট দিবো?
“- হুম দিবো অনেক কিছু দিবো জিসু বাবু “।
জিসু নিহানের কথায় রাগ করে তাকে নিহান বাবু কোনো ডাকছে। জিসু বলে –
“- তুমি আমাকে বাবু বলে কোনো ডাকছো? বাবুতো আমার প্রেমিকা আমাকে ডাকে তুমি কোনো ডাকছো? তুমি কি আমার প্রেমিকা?
“- জিসু তোমার প্রেমিকা আছে? কোন ক্লাসে পড়ে তোমার প্রেমিকা “।
“- আমি ওয়ানে পড়ি। ও আমার সাথে পড়ে “।
“- ওহ আচ্ছা তাহলে জিসু তুমি কবে বিয়ে করবে তোমার প্রেমিকাকে?
“- মুসলমি হলে বিয়ে করব। আমি একটু বড়ো হলে আমার মুসলমানি হবে তখন বিয়ে করব।
“- বিয়ের সাথে মুসলমানির কি সম্পর্ক?
“- বাসর করতে হলে যেমন বিয়ে করতে হয় ঠিক তেমন বিয়ে করতে হলে মুসলমানি করতে হয়। তুমি কি জানো না “।
নিহান জিসুর কথা শুনে মনে মনে ভাবে এইটা এই পরিবারের সন্তান যেমন অদ্ভুত নাম তেমন অদ্ভুত পরিবার। নিহান আর জিসু আরো কিছু সময় কথা বলে এরপর জিসৃ নিজের রুমে চলে যায় আর নিহার তার রাজনীতির বিষয় নিয়ে সানভির সাথে কথা বলতে থাকে।
সময়টা খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় মিহির বিয়ের ডেইটা কাছে চলে আসছে কিন্তু নিহানের এইসব নিয়ে কোনো চিন্তা নাই সে সুন্দর করে সবকিছু ইনজয় করছে। মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয় এই লোকটা এতো চিল করে কি করে থাকছে। আজকে মিহির পরিবার আর ইয়াসিনের পরিবার বিয়ের শাড়ি আর গয়না কিনতে যাবে নিহান ও তাদের সাথে যায়। মিহি জিসু আর নিহান এক গাড়িতে রয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা অন্য গাড়িতে।
নিহান সুন্দর করে গাড়ি ড্রাইভ করছে মিহি আড়চোখে নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে নিহানের মনে কি চলছে সেটা মিহি বুঝতে পারে না। পিছনে জিসু মোবাইলে গেইম খেলছে মিহি বলে –
“- আচ্ছা আপনার মাথায় সত্যি করে বলুন কি চলছে নিহান। আমার বিয়ের আর প্রায় তিনদিন বাকি আছে কিন্তু সেই বিষয় নিয়ে আপনার কোনো মাথা ব্যাথা নাই। কি করতে চান আপনি নিহান “।
মিহির কথা শুনে নিহান তার দিকে দেখে সত্যি বউটা তার বড্ড বোকা সে জানে ও না নিহান কি পরিকল্পনা করে রেখেছে। নিহান একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে –
“- মিহি আমার মাথায় কি চলবে আবার কালকে থেকে আপনার বিয়ে সব অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে কত কাজ আমার। স্যার বিয়ের সব দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে সেটা সুন্দর করে পালন করতে হবে আফটার অল বউয়ের বিয়ে বলে কথা “।
“- আমার কি মনে হচ্ছে নিহান আপনি সত্যি চান ইয়াসিনের সাথে আমার বিয়ে হোক। আর এরপর আপনি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকবেন। যদি এই কথাটা আপনার কথাটা মনে থেকে থাকে তাহলে বলে দেয় নিহান অন্য কাউকে বিয়ে করা দূরের কথা যদি অন্য মেয়ের দিকে কখনো চোখ তুলে ও দেখেন আপনাকে খুন করে ফেলবো আমি “।
মিহি কথাটা বলে বাহিরে দিকে তাকিয়ে থাকে নিহান হাসে সত্যি তার বউটা এখনো বড়ো হলো না। নিহান মিহিকে অনেক ভালোবাসে মিহির জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবে না সে। নিহান বলে –
“- খুন করে কোনো ফেলবেন? আপনি কেরাসিনকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যাবেন আর অন্যদিকে কি আমি দেবদাস হয়ে বসে থাকবো।আপনি যদি একটা বিয়ে করেন তাহলে আমি আরো দুইটা বিয়ে করতে পারি আর আমার মতো এইরকম সুদর্শন মন্ত্রীর বউয়ের অভাব হবে না নিশ্চয়ই “।
মিহি কোনো কথা বলে না সে শুধু নিহানের দিকে দাঁত কড়মড় করে দেখতে থাকে। নিহান মিহির রিয়েকশন দেখে হাসতে থাকে।অল্প সময়ের মধ্যে তারা শপিং মলে পৌঁছে যায় সেখানে ইয়াসিনের পরিবার তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। মিহি গাড়ি থেকে নামে ইয়াসিনের মা বাবাকে দেখে সালাম দেয় ওনারা বলে –
“- থাক মিহি আর সালাম করতে হবে না৷ চলো শপিংমলে যায় সেখানে তোমার যা পছন্দ হয়েছে সব কিনবে চলো “।
মিহি আর ওর পরিবার সবাই মিলে শপিংমলের ভিতরে যায় সেখানে তারা জিনিস কেনাকাটা করছিলো মিহি বাধ্য হয়ে সেখানে বসে ছিলো। নিহান শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিহিকে দেখছে আর হাসছে মিহির বিয়ের জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে ইয়াসিন। ইয়াসিন বলে –
“- মিহি এই শাড়িটা বিয়ের মধ্যে আপনি পড়বেন। শাড়িটা খুব সুন্দর দারুণ মানাবে আপনাকে “।
মিহি একটু হেঁসে শাড়িটা হাতে নেয় তবে তার বেশ একটা পছন্দ হয় না শাড়িটা। শাড়িটা সাদা রঙের ছিলো কিন্তু মিহি চাই সে বিয়েতে লাল রঙের শাড়ি পড়বে। মিহি পাশে থাকা একটা লাল বেনারসি দেখে বলে –
“- এই সাদা শাড়ি আমার পছন্দ হয় নাই কেমন যানি। কিন্তু এই শাড়িটা অনেক সুন্দর লাল রঙের বেনারসি বিয়েতে পড়তে চাই আমি “।
“- মিহি কাম অন ইয়ার আজকাল বেনারসি কি কেউ বিয়েতে পড়ে শুধু শুধু এই শাড়ি পছন্দ করে লাভ নাই। আপনি সাদা শাড়িটা পড়েন ভালো লাগবে আপনাকে যান পড়ে আসুন “।
মিহি আর কোনো কথা বলে না ইয়াসিন তার হাতে সাদা শাড়ি দেয় মিহি সেটা পড়তে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিহান এতোখন সব বিষয় খেয়াল করছিলো কিন্তু সে কিছু বলে না। মিহি যখন সাদা শাড়িটা পড়তে যাবে তখন ওয়াশরুমের দরজায় কেউ নক করে। মিহি দরজা খুলে আর বলে –
“- নিহান আপনি এখানে? আমি শাড়ি পড়বো এখানে কি করেন আপনি “।
নিহান মিহির কথার উত্তর না দিয়ে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় আর মিহির হাতে থাকা সাদা শাড়িটা পাশে রাখে। নিহান বলে –
“- এই নেন লাল বেনারসি আপনি না তখন পছন্দ করলেন সেটা রেখে চলে আসলেন কোনো।তাড়াতাড়ি এই শাড়িটা পড়ে আসুন আমার লাল টুকটুকে বউকে দেখতে চাই আমি “।
“- নিহান এই শাড়িটা আমি পড়তে পারব না। ইয়াসিন আমাকে না করছে পড়তে?
“- মিহি একটা কথা মনে রাখবেন কারো সাথে জীবন কাটাতে করতে হলে একে অপরের পছন্দ অপছন্দের গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া উচিত।কিন্তু তার মানে এইটা না যে নিজের পছন্দ ভুলে গিয়ে অন্যর পছন্দকে সবসময় প্রাধন্য দিতে হবে। আর আপনি আমার বউ মিহি তাই আমি চাই বিয়েতে আমার বউ লাল শাড়ি পড়ুক।
নিহান কথাটা বলে বাহিরে চলে যায় মিহি দুইটা শাড়ি দেখতে থাকে এরপর সে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছিলো মিহির জন্য মিহি যখন দরজা খুলে বাহির হয় তখন সবাই ওকে দেখে অবাক হয়ে যায়। লাল শাড়িতে মিহিকে অনেক সুন্দর লাগছে। নিহান মিহিকে দেখে নতুন করে মিহির প্রেমে পড়ে যায় আর মনে মনে বলে –
“- ওহ আমার বউটা এতো সুন্দর কোনো। মনে হয় পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য আমার বউয়ের কাছে তুচ্ছ। আই লাভ ইউ বউ ইয়। নিহানের কাছে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারী “।
#চলবে
#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_৩৯
মিহিকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে নিহানের দৃষ্টি শুধু সেই দিকে রয়েছে মনে হচ্ছে সে তার বউকে না যেনো কোনো পরীকে দেখছে। সবাই মিহির অনেক প্রশংসা করছে কারণ মিহিকে দারুণ লাগছে তবে ইয়াসিন বিষয়টা ভালো ভাবে নেয় নাই। ইয়াসিন বলে –
“- মিহি আপনাকে না আমি সেই সাদা শাড়ি পছন্দ করে দিয়েছি তাহলে এইটা কোনো পড়লেন। এই
এখনো মিহিকে দেখে যাচ্ছে সেটা দেখে মিহি একটু লজ্জা মিশ্রিত হাসি দেয়। আর মিহি যাকে দেখানোর জন্য এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়েছে সে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাহলে অন্য কারো কথায় তার কোনো যায় আসে না। মিহি বলে –
-” দেখুন ইয়াসিন বিয়েটা শুধু আপনার না আমার ও হচ্ছে তাই আমি কোন শাড়িটা পড়বো সেটা আমাকে ডিসাইড করতে দেন। আর যদি আপনার খুব বেশি সমস্যা হয় তাহলে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করেন যে সাদা শাড়ি পড়বে। আশা করি আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন “।
মিহির কথা শুনে ইয়াসিন ওর দিকে অবাক হয়ে দেখে মিহি আগে এতো কথা বলতো না কিন্তু আজকে হঠাৎ করে কি হলো। ইয়াসিন মিহিকে কিছু বলতে যাবে এর আগে ইয়াসিনের মা এসে বলে –
“- আচ্ছা এইসব বাদ দাও ইয়াসিন মিহির যখন এই শাড়ি পছন্দ হয়েছে তখন ও এই শাড়ি পড়বে। আর মিহিকে লাল শাড়িতে যথেষ্ট সুন্দর লাগছে তাই ও বিয়েতে এই শাড়ি পড়বে “।
ইয়াসিন আর কোনো কথা বলে না মিহি আর বাড়ির সবাই বিয়ের গয়না পছন্দ করতে থাকে। নিহান ও তাদের কাছে আসে সে মিহির পছন্দ অনুসারে গয়না পছন্দ করে দেয়। মিহির একটা গয়না পছন্দ হয় সেটা দেখে নিহান ওকে সেটা পড়িয়ে দেয়।মিহি আর নিহান একসাথে অনেক কিছু পছন্দ করতে থাকে আর ইয়াসিন পিছনে বসে সব খেয়াল করতে থাকে। মনে হচ্ছে বিয়েটা মিহি আর ইয়াসিনের না নিহান আর মিহির।
সবাই শপিং শেষ করে একটা রেস্টুরেন্টে চলে যায় সেখানে তারা খাবার অর্ডার করতে থাকে। ইয়াসিন জিসু মিহি আর নিহান এক টেবিলে বসে রয়েছে সবাই খাবার অর্ডার করে। খাবারে অনেক আইটেম রয়েছে সেখানে বেশিরভাগ মাছ রয়েছে যেটা দেখে মিহির মুখটা ফেকাসে হয়ে যায়। কারণ মিহি মাছের কাটাঁ বাছঁতে পারে না।
মিহির কোনো কথা বলার আগে নিহান একটা মাছ বেছেঁ মিহির খাবারের কাছে রাখে দেয়।নিহান বলে –
“- মিহি এই নেন আমি মাছের কাটাঁ বেছে দিয়েছি এখন খেয়ে নেন “।
ইয়াসিন বলে –
“- নিহান তুমি কি করে জানলে মিহি কাটাঁ বেছে খেতে পারে না?
ইয়াসিনের কথা শুনে নিহান আর মিহি একে অপরের মুখের দিকে তাকায় এখন কি বলবে। নিহান বলে –
“- আসলে মিহিদের বাড়িতে আমি কয়েকদিন ধরে মেহমান হয়ে এসেছি আর সবার সাথে একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। তখন আসলে একদিন খেয়াল করি মিহি কাটাঁ যুক্ত মাছ খেতে পারে না তাই আসলে মাছের কাটাঁ বেছে দিয়েছি “।
ইয়াসিন বলে –
“- বাহ মিহির প্রতি আপনার এতো খেয়াল থাকে ভালো খুব ভালো “।
ইয়াসিন কথাটা কেমন করে বলেছে সেটা মিহি বুঝতে পারে তবে মিহি কিছু বলতে যাবে তার আগে নিহান তাকে থামিয়ে যাবে। শপিং করে সবাই বাড়ি ফিরে আসে ইয়াসিন তাদের বাসায় চলে যায়। ইয়াসিন চেয়েছিলো মিহির সাথে আরেকটু সময় কাটাতে কিন্তু মিহি বলে তার মাথা ব্যাথা করছে সেইজন্য বাড়ি ফিরে যেতে যায়।
মিহি আর ইয়াসিনের বিয়ের দিন কাছে চলে আসছে কিন্তু নিহানের যোনো কোনো যায় আসে না এমন ব্যবহার। মিহি নিহানকে দেখে রীতিমতো অবাক হয় এই লোকটা এমন ব্যবহার করছে যোনো এইটা তার বউ না বোনের বিয়ে। মিহি আর ইয়াসিনের একসাথে একটা রিসেন্টে বিয়ে হবে পরশু তাদের বিয়ে। বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে নিহান তাদের সাথে কথা বলছে। মিহি শুধু নিহানদের দিকে দেখতে থাকে কি চলছে নিহানের মাথায় সেটা ও বুঝতে পারে না।
বাড়িতে মিহির কাজিনরা এসেছে ওর বেশিরভাগ কাজিন হলো মেয়ে। আর সব মেয়েরা নিহানকে দেখে যে লেভেলের ন্যাক্যামি করছে সেটা দেখে মিহির গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। আর নিহান কি সুন্দর সব মেয়েদের সাথে কথা বলছে মিহির ইচ্ছে করছে নিহানকে খুন করে ফেলতে। নিহান যখন মিহির রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ করে ওর কর্লার ধরে কেউ নিজের কাছে নিয়ে আসে আর বলে –
“- সমস্যা কি আপনার নিহান আপনাকে এতো মেসেজ দিয়েছি একটার ও রিপ্লাই করেন নাই কোনো? আর আমাকে এইরকম করে এড়িয়ে যাচ্ছেন কোনো সমস্যা কি আপনার নিহান “।
নিহান এইরকম করে হঠাৎ করে তাকে কেউ ধরে ফেলার কারণে একটু অবাক হয় তবে যখন বুঝতে পারে মিহি সেটা তখন শান্ত হয়। নিহান দেখে মিহির শরীর রাগে জ্বলছে মনে হচ্ছে এখুনি নিহানকে খুন করে মাটি চাপা দিয়ে ফেলবে। নিহান বলে –
“- মিহি কি হয়েছে আপনার এমন কোনো করছেন দেখুন এতো রাগ করা ভালো না। আর আমি আপনাকে কোথায় এড়িয়ে যাচ্ছি আসলে বিয়ে বাড়ির এতো কাজ সব করতে হচ্ছে আমার একা। তাই আসলে সময় করে উঠতে পারি নাই সরি বউ সরি “।
নিহানের এইসব কথায় মিহির রাগ একটু ও কমে নাই মিহি বলে –
“- তুই রাগ তোর সরি। আমার জন্য তোমার হাতে সময় হয় না তাই না। কিন্তু বাড়ির মেয়দের সাথে যখন কথা বলছিলি তখন এতো হেঁসে কথা বলতে হবে কোনো হুম? এখনো ইয়াসিনের সাথে আমার বিয়ে হয় নাই আর না তোকে আমি ডিভোর্স দিয়েছি।তোর সাহস কি করে হয় অন্য মেয়েদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলার “।
নিহান বুঝতে পারে এখন মিহিকে শান্ত করার দরকার না হলে আজকে সে সত্যি বউয়ের হাতে খুন হয়ে যাবে। পরে ব্রেকিং নিউজ হবে শহরের সুনামধন্য মন্ত্রী নিহান নেহাল শিকদারকে তার বউ অন্য মেয়েদের কথা বলার অভিযোগ খুন করেছে। মান সম্মান আর থাকবে না আমার। নিহান বলে –
“- মিহি মিহি বউ আমার শান্ত হয়ে যান মিহি। আসলে আপনার কাজিনরা খুব ভালো আর ওরা আপনার বোন মানে আমার বোন তাই না। দুলাভাইয়ের সাথে শালিরা একটু সয়তানি করবে এইটা স্বাভাবিক মিহি। রাগ করার কি আছে মিহি “।
নিহান মিহিকে জড়িয়ে ধরে মিহিকে শান্ত করতে এখন ওকে জড়িয়ে ধরা খুব দরকার। মিহি খুব শক্ত করে নিহানকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –
“- নিহান আমি এই বিয়ে করতে চাই না। ইয়াসিনকে আমার পছন্দ হয় নাই ওকে বিয়ে করতে চাই না আমি এখান থেকে নিযে যান নিহান আমাকে। শহরে যেতে চাই আমি নিহান আবার আগের মতো একসাথে থাকতে চাই নিহান।
নিহান বুঝতে পারে মিহির ইমোশন কিন্তু সে এখন মিহিকে তার পরিকল্পনার বিষয়ে বলতে চাই না। মিহি আর নিহান যখন কথা বলছিলো যখন রুমের দরজায় কারো আওয়াজ শুনা যায়। মিহির ভাবী রামশা ওকে ডাকছে –
“- মিহি দরজা খুলো মিহি। ইয়াসিনের পরিবার এসে পড়েছে আজকে তোমাদের এনগেজমেন্ট হবে তাড়াতাড়ি আসো মিহি “।
নিহান মিহিকে ছেড়ে দেয় আজকে যে মিহির এনগেজমেন্ট সেটা হয়তো তাদের মনে ছিলো না। নিহান খেয়াল করে দেখে মিহিকে অনুষ্ঠানের জন্য মিহিকে অনো সুন্দর করে সাজানো অবধি হয়েছে একদম পরীর মতো। নিহান মিহির কাজলের থেকে একটু কালি নিয়ে ওর গলায় ছুয়েঁ দিয়ে বলে –
“- আমার মিহিকে একদম পরীর মতো সুন্দর লাগছে আমার মিহি পরী। তাই একটু আমার বউকে নজর ফোঁটা দিয়ে দিলাম যদি নজর লেগে যায় তখন কি হবে “।
রামশা মিহিকে ডাকতে থাকে নিহান ওকে ইশারা দেয় বাহিরে যাওয়ার জন্য মিহির দরজা খুলে দেয়। মিহি বলে –
“- হুম ভাবী চলো যাওয়া যাক “।
মিহিকে নিয়ে রামেশা চলে যায় অনুষ্ঠানে অনেক মানুষ রয়েছে সেখানে ইয়াসিনের পরিবারের সদস্য মিহির আত্মীয় স্বজন অনেক মানুষ। জামশেদ তালুকদার মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে তার ছোট মেয়েটা কতো বড়ো হয়েছে গেছে।দুইদিন পর তার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে সবসময়ের জন্য চলে যাবে অন্যর বাড়ি। ইয়াসিন বসে ছিলো সোফায় মিহিকে দেখে সে হাত বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু মিহি রামেশার হাত ধরে উঠে যায় ইয়াসিন নিজের হাত নামিয়ে নেয়। মিহি গিয়ে সোফায় বসে আশেপাশে গান বাজছে সবাই অনেক আনন্দ করছে কিন্তু মিহি মুখটা মলিন করে বসে রয়েছে। মিহির চোখ শুধু নিহানকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু নিহান এখানে নাই। ইয়াসিন অনেক সময় ধরে মিহিকে কাউকে খুঁজতে দেখ বলে –
‘- কি হলো মিহিক কাউকে কি খুঁজছেন?
“- না তেমন কিছু না “।
“- ওহ আচ্ছা মিহি আপনাকে আমি কত কল দিয়েছি সেইসব রিসিভ কোনো করেন নাই। আর তখন আপনাকে স্টেজে উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি সেটা ধরলেন না কোনো “।
“- দেখুন ইয়াসিন আমি কারো সাথে ফোনে কথা বলতে পছন্দ করি না সেইজন্য ফোন ধরি নাই। আর যদি হাত ধরার কথা আসে তাহলে আপনাকে বলতে চাই যে আমাকে কেউ টার্চ করুক সেটা আমার পছন্দ হয় না “।
“- আমি টার্চ করা পছন্দ না কিন্তু নিহান যখন টার্চ করে তখন ঠিক ভালো লাগে আপনার তাই না। সত্যি করে বলুন না মিহি নিহানের সাথে আপনার কি সম্পর্ক ও আপনাকে এমন কি দেয় যেটা আমি দিতে পারব না। ও বুঝি আপনাকে
ইয়াসিনের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মিহি উঠে যায় আর ওর গালে একটা থাপ্পড় দেয়। হঠাৎ করে ঘটনা এমন হওয়ার কারণে সবাই অবাক হয়ে সেইদিকে তাকিয়ে থাকে। মিহি রেগে বলে –
‘- চুপ করুন ইয়াসিন আপনার সাহস কি করে হলো এইরকম কথা বলার। আপনার অধিকার নাই আমার চরিএের বিষয়ে বাজে কথা বলার আমার কার টার্চ ভালো লাগে সেটা কি আপনার থেকে জানতে হবে আমার। আর নিহানের বিষয়ে এইসব আজেবাজে কথা বলবেন না আপনি “।
ইয়াসিন তার গালে হাত দেয় সেখানে থাপ্পড়ের দাগ বসে গেছে। ইয়াসিন বলে –
“- আমার শুধু একটুকু কথায় আপনি আমাকে থাপ্পড় দিলেন মিহি সাহস কি করে হয় আপনার। আর ওই নিহান কে হয় আপনার ওর বিরুদ্ধে একটা কথা শুনতে চান না আপনি। আর নিহানের টার্চ আপনার ভালো লাগে সেটা সত্যি সত্যি বলে দেন “।
“- আপনার কাছে এইটা ছোট কথা মনে হয় আমি শুধু আপনাকে বলেছি বিয়ের আগে আমাকে টার্চ করবেন সেইজন্য আপনি আমাকে চরিএহীন বানিয়ে দিবেন।আর নিহানের অধিকার রয়েছে আমাকে টার্চ করার আপনার নাই “।
“- ওহ রিয়েলি নিহানের অধিকার রয়েছে আপনাকে টার্চ করার নিহান কে হয় আপনার মিহি? বলেন ও কে হয় আপনার?
“- কারণ নিহান আমার স্বামী হয়। ভালোবাসি ওকে আমি ও আমার স্বামী তাই অধিকার রয়েছে আমাকে টার্চ করার “।
মিহির কথাটা শুনে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটা মানুষ অবাক হয়ে যায় জামশেদ তালুকদার নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। জামশেদ তালুকদারের রাগে নিজের কপাল শক্ত করে ফেলে কিন্তু মিহির তাতে কিছু যায় আসে না। নিহান তখন সিঁড়ি দিয়ে নাম ছিলো মিহির মুখের এইরকম কথা শুনে সে ওখানে দাঁড়িয়ে যায়। নিহান বলে –
“- মিহি এইটা আপনি কি করলেন? এখন এই পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে মিহি।
#চলবে