মন ফাগুন পর্ব-৪৩ এবং শেষ পর্ব

0
33

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_জান্নাত_কেয়া
#শেষ_পর্ব_৪৩

রায়ান কোনো কথা বলার আগে নিহান বন্ধুক তার দিকে দেখায় আর মিহিকে ধরে রাখা কিছু লোকের দিকে তাক করে আর বলে মিহিকে ছেড়ে দিতে। নিহান বলে –

“- রায়ান বিয়ের দিন যখন তুমি নিয়াকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলে তখন চাইলে তোমাকে খুঁজে বের করতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছে করে করি নাই। আমি মনে করেছিলাম হয়তো তুমি নিয়াকে মন থেকে ভালোবাসে কিন্তু আমার সামনে প্রকাশ করতে পারো নাই। তাই বাধ্য হয়ে নিয়াকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলে কিন্তু এখন সত্যিটা জেনে গেছি আমি। তাই সবকিছু শাস্তি তোমাকে পেতে হবে রায়ান “।

“- কোনো কিছুর শান্তি আমি পাবো না নিহান আর আমি যা করেছি তোমার সাথে বা নিয়ার সাথে সেটা ঠিক ছিলো। কারণ ওই শিকদার পরিবার আমার কাছ থেক সবকিছু কেড়ে নিয়েছে আমরা ছোটবেলা আমার বাবাকে শুধু মাএ নিজের প্রয়োজনে। খুনি হও তোমরা আমার বাবার “।

নিহান কথাটা শুনে হাসে কারণ আসল ঘটনা কি সেটা রায়ান যানে না ওর মা কয়েকদিন আগে সব সত্যি বলে দিয়েছে নিহানকে। নিহান বলে –

“- আরে রায়ান মানুষ যে কি লেভেলের বোকা হতে পারে সেটা তোমাকে না দেখতে জানতে পারতাম না। আসল ঘটনা তুমি যানো না তোমার বাবা কোনো মহান মানুষ ছিলেন না ওনি একজন লোভী আর নিকৃষ্ট লোক ছিলেন। সেইদিন ওই ঔষধ ওনি আর চাচা তৈরি করেছিলেন কিন্তু সেই ঔষধ শুরুতে কাজ করলে ও পরে ওই ঔষধ মানুষের শরীরে বিষের মতো কাজ করতে থাকে। আমার চাচা বিষয়টা বুঝতে পেরে সেই ঔষধের তৈরি হওয়া বন্ধ করে দেয় কিন্তু তোমার বাবা সেটা করে নাই ওনি মানুষের শরীরে এই ঔষধ প্রয়োগ করতে থাকে। যার কারণে অনেক মানুষ মারা যায় আর ওনি বিদেশে এই ঔষধ বিক্রি করে টাকা রোজগার করতে চেয়েছিলো যার জন্য চাচা ঔষধের ফরর্মুলা চুরি মায়ের কাছে রাখতে দেয়। আর যে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তোমার বাবা সেটা খুন ছিলো না “।

রায়ান নিহানের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না তার মনে হচ্ছে নিহান মিথ্যা বলছে। নিহান ওর পকেট থেকে একটা কাগজ এনে রায়ানকে দেখায় যেখানে ওই ঔষধের বিষয়ে সব লেখা ছিলো। রায়ান সেটা পড়ে অবাক হয়ে যায় তার বাবা কি এতো খারাপ ছিলো সেটা সে জানতো না। রায়ান বলে –

“- নিহান তুমি এইসব ঘটনা আমাকে আগে কোনো বলো না। তাহলে এমন সমস্যা হতো না?

“- তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম রায়ান আমি কিন্তু মা আমাকে কয়েকদিন আগে বিষয়টা জানায়। এরপর মিহির বাবার বাড়িতে যেতে হয় যার জন্য সব সত্যি জানাতে পারি নাই আমি “।

রায়ান তার ভুল বুঝতে পারে পুলিশ তখন ভিতরে ঢুকে যায় রায়ানকে এরেস্ট করে। নিয়াকে সবাই মিলে বাঁচিয়ে নেয় এবং সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তবে মিহি নিহানের সাথে একটা কথা ও বলে না বেশ রাগ করে আছে নিহান সেটা বুঝতে পারে। নিয়াকে দেখতে পেয়ে নূহা আর বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয় নিয়া তার ভুল বুঝতে পারে।

রাত নয়টা বাজে নিয়া নিজের রুমে বসে ছিলো তখন নিহান আসে ওর রুমে। নিয়া নূহার কাছে মিহি আর নিহানের বিষয়ে সব শুনেছে ও খুশি হয়েছে নিহান নিজের যোগ্য কাউকে জীবন সঙ্গী পেয়েছে। নিয়া বলে –

“- আরে নিহান ভাই বাহিরে কোনো দাঁড়িয়ে আছো ভিতরে আসো?

নিয়ার অনুমতি পেয়ে নিহান ভিতরে ঢুকে যায় নিহান বসে আর বলে –

“- নিয়া এতোদিন তোমার সাথে যা হয়েছে সেটা অন্যায়। রায়ান যতো অত্যাচার করেছে সব শুধু একটা ভুল বোঝার কারণে করছে কিন্তু রায়ান তোমার স্বামী হয়। এখন তুমি কি চাও নিয়া রায়ানের সাথে আবার সংসার শুরু করতে রায়ান ছেলে হিসাবে খারাপ না আশা করি তোমার বেশ খেয়াল রাখবে এখন “।

নিয়া নিহানের কথাটা বুঝতে পারে নিয়া বলে –

“- দেখো নিহান ভাই তোমার কথাটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু রায়ানের সেই আগের রূপ দেখে এখন ওকে আবার গ্রহণ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তাই কিছুদিন সময় চাই আমার তারপর দেখা যাক কি হয় “।

“- ওকে তুমি যেটা চাও সেটাই হবে নিয়া। রায়ানকে আমি জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে আসতে চাই তোমার কি মতামত “।

‘”- তোমার যা ইচ্ছা নিহান ভাই “।

“- ওকে “।

নিহান কথাটা বলে চলে আসে তার কাজ শেষ কিন্তু এখনো তার মিহি রাণীর রাগ ভাঙ্গানো বাকি রয়েছে। নিহান কাউকে ফোন করে তারপর কি যেনো করতে বলে এরপর নিজের রুমে যায়। মিহি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিলে্ তখন নিহানকে দেখে চলে যেতে যায় তখন নিহান ওকে জড়িয়ে ধরে। নিহান বলে –

“- কি হয়েছে আমার মিহি রাণীর এতো রাগ করে কোনো আছে?

“- আমি রাগ করে থাকি বা যাই করি তাহলে আপনার কি নিহান যান এখান থেকে। আপনি কোমায় যান নাই ওইটা একটা নাটক ছিলো সেটা আমাকে জানান নাই কোনো। যানেন কতো কষ্ট পেয়েছি আমি আর এখন আসছে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে “।

“- তখন ওই নাটক করা জরুরি ছিলো আই এম সরি মিহি “।

“- আপনি থাকুন আপনার সরি নিয়ে।

নিহান বুঝতে পারে মিহির রাগ এখন কমবে না তাই সে যেটা ঠিক করেছে সেটাই করতে হবে। নিহান হঠাৎ করে মিহিকে কোলে তুলে নেয় তারপর রুম থেকে বেরিয়ে ওকে গাড়ির উঠায়। মিহি বলে –

“- কি করছেন নিহান ছাড়ুন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে নিহান “।

নিহান কোনো কথা শুনে না সে মিহিকে নিয়ে বেরিয়ে যায় অনেক সময় যাওয়ার পর তারা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। মিহি অবাক হয়ে একটু নিহানের দিকে তাকায় কিন্তু নিহান হেঁসে মিহিকে নিয়ে ভিতরে যায়। মিহি বাড়ির ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে যায় কি সুন্দর লাইট দিয়ে ভরা আর সুন্দর করে সাজানো। সামনে সুন্দর করে লেখা ভালোবাসি মিহি। মিহি কিছু বলতে যাবে এর নিহান বলে –

“- ভালোবাসি মিহি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আমি। এই পৃথিবীতে আমি প্রথম আর শেষ নারী যাকে এই নিহান শিকদার নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। কথা দিচ্ছি মিহি সারাটা জীবন আপনাকে যত্ন করে আগলে রাখবো আপনার দুই চোখে কখনো এক ফোটা পানি আসতে দিবো না মিহি। খুব ভালোবাসি বউ আপনাকে “।

নিহানের এতো সুন্দর কথা শুনে মিহির রাগ ভেঙে যায় সে নিহানকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –

“- আমি ও আপনাকে অনেক ভালোবাসি নিহান বিশ্বাস করুন নিহান জীবনে যতো সুখ রয়েছে সবকিছু আপনাকে ঘিরে আমার। আপনার মতো এতো ভালো হয়তো এই মিহিকে কেউ বাসতে পারবে না। আই লাভ ইউ নিহান আই লাভ ইউ সো মার্চ “.

নিহান কথাটা শুনে মিহিকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –

“- আপনি আমার জীবনে সুখ

আমার ভালোবাসার মন ফাগুন “।

#সমাপ্ত