মন বাড়িয়ে ছুঁই পর্ব-৩৪+৩৫

0
866

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৩৪.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

অন্ধকার গ্যারেজের দিকে পা চালাতে দেখে প্রচণ্ড ভয় পেলো মেহনূর, সাথে-সাথে মাহতিমের শক্ত হাতের বাহুবন্ধনে ছটফট শুরু করলো। মাহতিম শক্ত চাহনি দিয়ে একপলক ভয়ার্ত মুখটার দিকে তাকালো, এরপর চোখ ঘুরালো গ্যারেজের দিকে। মেহনূর যেভাবে নড়াচড়া শুরু করেছে এতে মস্তিষ্কের ভেতর টগবগ করছে ওর। রাগে ইচ্ছে করছে এখুনি কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে, এখুনি নিজের জঘন্যতম রূপটা দেখিতে দিতে, কিন্তু মেহনূর সেটা সহ্য করতে পারবে কিনা সন্দেহ। মাহতিম নিজের ভয়ানক রাগটা দাঁতে চেপে পেশিবহুল হাতদুটো আরো কঠোর করে নিলো, ওমনেই মেহনূরের ছোট্ট দেহটা মাহতিমের শক্ত হাতের বলয়ে গুটিশুটি হয়ে গেলো, বুকের সাথে কাঁদো-কাঁদো মুখটা ঠেকে গেলো তৎক্ষণাৎ। আসন্ন বিপদ নিয়ে ভাবনা হতেই অশান্তধারায় দুচোখের অশ্রু ছেড়ে দিলো মেহনূর, মাহতিমের সাদা কলারটা আর শক্ত করে ধরলো না। ডানহাতের পাঁচটি আঙ্গুল দিয়ে সাদা কলারটা ধরেছিলো, ধীরে-ধীরে সেখান থেকে হাত নামিয়ে ফেললো মেহনূর। চোখের সামনে আর কোনোকিছু দেখতে পেলো না। সূর্যের শেষ আলোটা চোখ থেকে সরে যেতেই অন্ধকার নেমে এলো সর্বত্র। কানে শুধু শুনতে পেলো গ্যারেজের দরজাটা ‘ ক্যাচ-ক্যাচ ‘ শব্দ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

.

বাড়িতে সবার অবস্থা বিমর্ষ হয়ে আছে। বিষণ্ণতায় ডুবে আছে সবার চিন্তাচেতনা। মাহতিম এই মূহুর্তে কি করবে, কি করছে সেটা নিয়ে কারোর বিশেষ মাথাব্যথা নেই। আপাতত একটাই চিন্তা বাড়িতে খুব শীঘ্রই রজনী মামী আসছে। রজনী মামী ভোর ছয়টার ট্রেনে চেপে রওনা দিয়ে ফেলেছে। দুপুর বারোটা-কি-একটার মধ্যে এখানে সশরীরে উপস্থিত হবে। এই মহিলার ব্যাপারে কেউ আজ পযর্ন্ত গলা চড়িয়ে কথা বলতে পারেনি। কারো দুঃসাহস নেই রজনী ইবনাতের সাথে ঝগড়া বা তর্ক করার। মহিলার আসল পরিচয় তিনি একজন বিধবা, মাহতিমের মরহুম মামার স্ত্রী। স্বামী ইন্তেকালের পর তার মধ্যে কোনো বিশেষ পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তন হয়নি তার রুষ্ট স্বভাবের আচরণে। বিধবা হিসেবে সাদামাটা পোশাক-আশাক পড়াটা বাহুল্য বলা চলে, কিন্তু রজনী ইবনাতের ক্ষেত্রে সবটাই উলটাপালটা দেখা যায়। কঠোর মেজাজের মহিলা হিসেবে সমাজের সর্বত্র তার পরিচিতি ছড়িয়ে গেছে, মাঝে-মাঝে মারজাও তার কাছে চুপচাপ হয়ে যায়। বড় ভাইকে যথেষ্ট সম্মান করতো বলেই ভাবীর প্রতি সমীহ দেখায়। মারজা ছোট থেকেই হান্নান শেখের পরিবারে ভালো সখ্যতা গড়েছিলো, আলাদা প্রীতিপূর্ণ টান ছিলো সবার প্রতি। কিন্তু বড়ভাই যেমন শৌখিন চিন্তার ছিলো তেমনি ছিলো উগ্রপ্রকৃতির। জাকির মেশকাত শহরের হাওয়ায় বেড়ে উঠেছিলো, শহরের যতো বিধ্বংসী চিন্তা-চেতনা থাকতে পারে সবটাই সে ধারণ করেছিলো। দু’ভাইবোনের মধ্যে এতোটাই দূরত্ব ছিলো মারজা কখনো ভাইয়ের কাছে যেতে চাইতো না। জাকির পড়ালেখার টানে শহরেই থাকতো, সেই শহরেই ব্যবসার ঘাঁটিটা স্থাপন করে ফেলে। দিনকে-দিন ফুলে-ফেপে ওঠে তার ব্যবসার বিস্তার, নাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পরে দিগ্বিদিক। মারজা যখন প্রথম সন্তানের সুখবর নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলো, তখনই জাকির ধুমধাম করে বিয়ে করলেন রজনী ইবনাতকে। শ্বশুড়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের যৌতুক নিয়ে বিদেশেও ব্যবসার প্রসার ঘটাতে থাকলেন, কিন্তু ভাগ্যের চূড়ান্ত সত্যের কাছে হেরে গিয়ে দুনিয়া ত্যাগ করলেন তিনি। ফুসফুসের রোগকে জয়ী করে রূহ ছাড়লেন একদিন। তাসের খেলাঘরের মতোই উনার সব ব্যবসা ধূলোর মতো ভেঙ্গে গেলো, চর্তুদিকে ঋণ-কর্জ বাধিয়ে রজনীকে যখন একা ফেলে গেলেন তখন মাহতিমের বাবা নিজের উদারতার পরিচয় খোদাই করে বিধবা মহিলাকে আশ্রয় দিলেন। মারজাও স্বামীর সিদ্ধান্তে যুৎসই রাজি ছিলো, তখন থেকেই রজনীকে পরিবারের সদস্যরূপে গ্রহণ করে সবাই। সবকিছু বহুবছর যাবৎ ঠিকঠাক থাকলেও মাহতিমের বাবা যখন পরগামী হলো তখন থেকেই দেখা গেলো আসল চরিত্র। মারজার সাথে যথেষ্ট অমায়িক সম্পর্ক রজনীর, মনে-মনে মিল হলে সম্পর্ক যেমন মধুর হয় ঠিক তেমনটাই বলা উচিত। বিশ্বাসের স্থানটা কঠোরভাবে আয়ত্ত করেছে মহিলা, মাঝে-মাঝে মাহতিমের চেয়েও রজনীর প্রতি বিশ্বাস কাজ করে প্রবল। মাহতিম এ নিয়ে আগে থেকেই ক্ষুণ্ণ অনুভব করে, কিন্তু মা’কে কষ্ট দিয়ে বাক্য খরচ করেনি সে। রজনীর আসল চরিত্র নীতি-প্রীতিদের কাছে বহু আগেই ধরা পরেছে, তার সুবাদে একে-একে ধরা পরেছে সবার কাছে। মাহতিমের বিচক্ষণ বুদ্ধির কাছে রজনী কখনো নিজেকে ধরা দিতে দেয়নি। মহিলা সবসময় জানতো, মাহতিম তার বাবার চেয়েও কয়েক ধাপ বেশি চতুর, চালাকির প্রতিযোগিতা ছাড়াই মাহতিমকে তিনি বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য। তিনি খুব সর্তক থাকেন মাহতিমের জন্য, বিশেষ করে মাহতিম যখন ছুটি কাটাতে বাড়িতে আসে তখন তিনি ইচ্ছে করেই নিজের ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। এবারের ঘটনা আগের মতো সোজাসাপ্টা নয়, মাহতিম এবার পরিবার নিয়ে গ্রামে ঘুরতে গিয়েছে এটা নিয়েও চিন্তাগ্রস্থ সময় কাটিয়েছে রজনী। মাহতিম যদিও বিয়েঘটিত সম্পর্কের দিকে আকৃষ্ট নয়, মেয়েদের প্রতিও তার ইন্দ্রিয় সংযত থাকে তাই তিনি চিন্তামুক্ত ছিলেন বলা চলে। নিজের একমাত্র ভাতিজির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করার চিন্তা সেই শৈশব থেকে ছিলো উনার। মাহতিমের আচার-আচরণ ছোট থেকেই উনার বিশেষভাবে পছন্দ। বয়সের সাথে-সাথে আচারনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি সৌষ্ঠব্য দেহের মাহতিম মেয়েদের নজরে সর্বত্রভাবে আর্কষণীয়। নিজেকে বাধা-ধরা নিয়মের মধ্যে না রাখলেও মেয়েদের সংস্পর্ষে আসার সুযোগ হয়নি। সেনাবাহিনীর বয়েজ স্কুলগুলোতে কড়া নিয়মের মধ্যে বড় হয়েছে সে, বাবার নীতিতত্ত্বকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে শিক্ষার প্রতিটি স্তর পার করেছে। আজ সেই রজনীর জন্য কারো মনে শান্তি নেই। রজনী নিশ্চয়ই মেহনূরকে দেখে প্রফুল্ল বোধ করব না, মাহতিমের অনুপস্থিতিতে কি ধরনের আচরণ দেখাতে পারেন সেটা নিয়ে সংশয়ে ভুগছে সবাই। নীতি কল্পনা করার চেষ্টা করলো, রজনী মামী মেহনূরকে পুরো বাড়িতে একা পেয়ে —–, চোখ বন্ধ করে ফেললো নীতি। সম্পর্কের দিক দিয়ে মেহনূর যতই বড় হোক, বয়সের অঙ্কটা চিন্তা করলে মেহনূরের প্রতি মায়া লাগে। গ্রামের ভদ্র পরিবার থেকে নরম স্বভাবের মেয়েটা সত্যিই ভেতর থেকে কোমল। তার মধ্যে কোনো খাদ নেই, খুঁত নেই, খুসখুসে স্বভাবও নেই। একবার যদি মাহতিম নামক বীজটি মনের ফসলী জমিতে বপন করা হয়, তাকে শেষ নিশ্বাস পযর্ন্ত যত্ন করবে মেহনূর। ভালোবাসায় অনভিজ্ঞ মেহনূর একটু-একটু করে মাহতিমের সৌহার্দ্যে নিজেকে অভিজ্ঞ করতে শিখছে, ধীরে-ধীরে মন বাড়িয়ে ছুঁচ্ছে, অনুভূতির জগতে পা ফেলে নব ফুলের মতোই পরিস্ফুটিত হচ্ছে। নীতি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে চোখদুটো মেললো, পিঠের পেছন থেকে সোফার কুশন নিয়ে কোলে রাখলো। শান্তসুরে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

– আমাদের হাতে কিছুই করার নেই। এই মূহুর্তে রজনী মামীর আসাটা যেমন আশ্চর্যজনক, তেমনি চিন্তার বিষয়। আমার শুধু চিন্তা হচ্ছে মেহনূরের জন্য। মেয়েটা গ্রাম থেকে এসেছে, ও শহরের কিচ্ছু চেনেনা-জানেনা-দেখেনি। ওর শেফালী চাচীটা মাহতিম ভাইয়ের জন্য আগাতে পারেনি, কিন্তু রজনী মামীর বেলায় কি ঘটবে সেটা আর বলার ইয়ত্তা রাখেনা। মামী যেনো একাই আসুক সেই দুয়া করো, যদি উনার ভাইয়ের মেয়েকে সঙ্গে আনেন তাহলে কিন্তু বিপদ। মেহনূরকে একদম জ্বালিয়ে মারবে। মেয়েটা চিলতে খানি স্বস্তি পাবে না।

সবাই ড্রয়িংরুমের সোফায় উদভ্রান্তের মতো বসে আছে। চিন্তিত মুখে কারো কোনো হাসি নেই। সবাই নিজেদের চিন্তাভাবনা নিয়ে ব্যাপকভাবে মশগুল। মাহদি চুপচাপ সোফায় বসে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। নীতির কথা শুনে আবারও উদাস দৃষ্টিতে সদর দরজার বাইরে তাকালো। থমথমে পরিবেশে ছেদ ঘটিয়ে সামিক বলে উঠলো,
– একটা ব্যাপার বলতো, মাহতিম ভাই সিভিল ড্রেস না পরে ইউনিফর্ম পরেছে কেন? সবসময় তো সিভিল ড্রেসেই যেতে দেখতাম। ভাই কি ডিরেক্ট হেড অফিসে যাবে নাকি?

সামিকের উত্তরটা দেওয়ার জন্য বিরসমুখে বললো তৌফ,
– মাহতিমের ছুটি যে কালই শেষ, এই ব্যাপারে জানোস কেউ? জানোস না। ওর ডিউটি আজকে থেকে শুরু। বিকেল চারটার মধ্যে ওর হাজিরা দেওয়া লাগবো। না দিতে পারলে ওর জন্য কেমন ব্যাপার হইবো ওইটা একবার ভাবিস।

তৌফের কথা শুনে চকিতে তাকালো সবাই। কপালে অসংখ্য ভাঁজ ফেলে আশ্চর্য হয়ে গেলো। বলে কি! যদি আজকে থেকে মাহতিমের ডিউটি শুরু হয় তাহলে ও এখনো রওনা দেয়নি কেনো? ও কখনো কাজ নিয়ে দেরি করেছে কিনা কেউ চেষ্টা করেও মনে করতে পারলো না। না-জানি মেহনূরেরক পালে কি ধরনের শনি আছে! ওর জন্যই তো যাওয়া নিয়ে বাধা খেয়েছে। তৌফের কথার প্রেক্ষিতে ফারিন বলে উঠলো,
– ভাইয়া লেট করলে সমস্যা নেই। সমস্যা হলো রজনী মামীর প্রেসেন্স নিয়ে। ভাইয়ার নিজের অফিশিয়ালি কাজগুলো স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে পারবে। এখন জাস্ট প্রে করো রজনী মামীর ভাতিজি যেনো না আসে।

ফারিনের কথায় নিরবে সম্মতি জানালো সবাই। রজনীকে ট্যাকেল দেওয়াটা কঠিন হলেও তার ভাতিজিকে সহ্য করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। ওই মেয়ে যদি একবার এই বাড়িতে পা ফেলে তাহলে সহজে এখান থেকে যেতে চায় না। নিজেকে উচ্চবংশের মেয়ে ভাবতে-ভাবতে মনের ভেতর ভালোই অহংকার জন্মে গেছে। ছোট থেকেই বাড়ি-গাড়ি-মান-যশ নিয়ে আলাদা ধরনের গর্ব রয়েছে। রজনীর ইচ্ছেতে তার ভাতিজি দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাসও এ বাড়িতে পরে থাকে তবুও মারজা এতে আক্ষেপ বোধ করে না। অনেকক্ষণ পর নিজের চিন্তাজগত থেকে বের হলো সিয়াম। সকলের দিকে একবার-একবার করে চোখ ঘুরাতেই বিচক্ষণ ব্যক্তির মতো বলতে লাগলো,

– আল্লাহ যা করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন। রজনী মামী যদি মেহনূর ভাবীর ক্ষতি করে, মাহতিম দেশের যেপ্রান্তেই থাকুক ডাইরেক্ট এ্যাকশন নিতে দেরি করবো না। আমি ওরে নেংটাকাল থেকে চিনি, ওর ভিতরে কি বাস করে এইটা বাইরের কেউ আন্দাজ করতে পারবো না। ওর তেজের পরিমাণ যদি বাড়ে রে… থাক আর কইলাম না। খালি একটা কথাই বলুম, ওর জিনিসে যদি কেউ হাত দেয়, তাহলে মামা ইন্নালিল্লাহ জপা লাগবো। তরুণের পা কিন্তু জীবনেও ঠিক হইবো না। আর ওর টুনটুনিতে খালি একটা লাত্থি মারছিলো, ওমনেই শা’লার ব্যাটাগিরি জন্মের লিগা শেষ, বাকি জীবন যদি বাঁচে তাহলে ওর জীবনে সুখ-ফুখ নাই। উদাহরণ খালি একটা দিলাম, আরো যদি শুনতে চাস তাহলে কিন্তু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া লাগবো।

থমথমে পরিবেশে তপ্তকর হাওয়া বয়ে গেলো। সবার মধ্যে যে ঔদাসীণ্যতা দেখা যাচ্ছিলো, সেটা এখন বিন্দু পরিমাণ নেই। ঠোঁটে-মুখে অদ্ভুত ভঙ্গির হাসি ঝুলছে সবার, চকচক করছে চক্ষুজোড়া। মাহতিমের পুরোনো দিনের ঘটনাগুলো স্মৃতিচারণ করতেই তৃপ্তিসূচকের হাসি ঝুলছে সবার।

.
অন্ধকার গ্যারেজের ভেতর ফিসফিস ধ্বনির শব্দ শোনা যাচ্ছে। শব্দটা দেয়ালে-দেয়ালে বারি খেয়ে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে। গ্যারেজে আলো-বাতাস না থাকার জন্য শব্দ করে নিঃশ্বাস টানছে মেহনূর। গলায় শুকিয়ে শুকনো কাঠের মতো খড়খড়ে লাগছে, ডানহাতটা এখন মাহতিমের ঘাড়ের উপর রাখা। মাহতিম যে জিপের উপর বসিয়ে নিরবঘাতির জোর খাটাচ্ছে সেটা ধরতে পেরেছে মেহনূর। কোনোপ্রকার গর্হিত কাজ না করলেও একটু পরপর প্রচণ্ড জোরে শব্দ হচ্ছে। সেই শব্দটা কিসের শব্দ সেটা অন্ধকারের জন্য ধরা যায়নি। মেহনূরের একবার মনে হয়েছিলো মাহতিম হয়তো কিছু একটা ভাঙ্গছে, আবার মনে হয়েছিলো কিছু একটাতে ঘুষি মেরেছে, কিন্তু আসল ঘটনা কি সেটা পরিষ্কারভাবে ধরার সুযোগ নেই। মেহনূর কান্নার জন্য চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা, চাপা-কান্নার জন্য চোখের পাতা ভারি হয়ে ফুলে গেছে, নাক দিয়ে নিশ্বাস টানতে হিমশিম খাচ্ছে খুব। মনকে শক্ত করে মাহতিমের উদ্দেশ্যে কাঁপা-কাঁপা সুরেই বলতে লাগলো,

– আপনি আমার উপর জোর খাটালে খুশী হন? কেনো এভাবে ধরে রেখেছেন?

কথাটা যেনো গায়ে লাগলো মানুষটার। মেহনূরের হাতটা ঘাড় থেকে ঝটকা মেরে সরিয়ে দিলো। মূহুর্ত্তের মধ্যে শক্ত জুতার আওয়াজ হতেই মেহনূর বুঝতে পারলো মাহতিম কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়েছে। একটু অবাক হলো মেহনূর। মুখে কিছু বললো না। অন্ধকারের মধ্যেই অবুঝ দৃষ্টিতে ড্যাবড্যাবে করে তাকিয়ে রইলো। মাহতিমের উপস্থিতি, মেজাজের অবস্থা, মুখের দশা, কোনোটাই মেহনূর আচঁ করতে পারলো না। বাঁহাতের উল্টোপিঠে ভেজা-ভেজা চোখদুটো মুছলো, গালটাও হাতের তালুতে খানিকটা মুছৈ নিলো। নাক টেনে পিটপিট করে তাকাতেই আকস্মিকভাবে সমস্ত দেহের উপর রোমান্ঞ্চকর অনুভূতির শিহরণ বয়ে গেলো। নিশ্বাসের উত্তাপ বেড়ে উঠলো দ্রুত, চান্ঞ্চল্যকর হৃদয় চনমনিয়ে উঠলো। দুটো হাতের মুঠো যেনো আঁকড়ে ধরলো ঘাড়টা। নখদর্পণে খামচে ধরলো ঘাড়ের চামড়ার স্তর। চোখে জমা অশান্ত অশ্রুগুলো নিঃশব্দে গাল বেয়ে পরতে লাগলো মেহনূরের, চোখদুটো বন্ধ করে রাখলো কয়েক চোখে জমা অশান্ত অশ্রুগুলো নিঃশব্দে গাল বেয়ে পরতে লাগলো মেহনূরের, চোখদুটো বন্ধ করে রাখলো কয়েক মূহুর্ত। নিচের ঠোঁটটা শক্ত করে দাঁতে কামড়ে রাখলো মেহনূর, একপর্যায়ে বাঁহাতটা ঘাড় থেকে নামাতে লাগলো আস্তে-ধীরে। প্রশস্ত কাধটার উপর হাত রেখে আবার মুঠোবন্দি করে খামচে ধরলো মেহনূর, ওমনেই ঠোঁট ভেদ করে অস্ফুট সুরে কঁকিয়ে উঠলো। তবুও খামচানো হাতটা কাধটাকে ছাড়লো না, আগের মতোই দৃঢ়তার সাথে আকঁড়ে ধরলো। কাধে থাকা সিলভার রঙের স্টারগুলো মেহনূরের বাঁহাতের তালুতে বিঁধে যাচ্ছে, হাতটা ক্রমশ রক্তাক্ত হচ্ছে। মাহতিমের জেলমাখা চুলগুলো মেহনূরের চোয়ালের সাথে স্পর্শ হচ্ছে বারবার। অদম্যভাবে মেহনূরের গলায় গাঢ় চুম্বনের উষ্ণতা ছাপিয়ে যাচ্ছে তখন। মেহনূর বিবশ হয়ে পরছিলো মাহতিমের উষ্ণ-সাহচর্যে, ধাক্কা দিয়ে সরানোর মানসিকতাও কাজ করছিলো না যেনো। ভয়াবহ ক্ষোভটাও ধূলিসাৎ হয়ে উবে যাচ্ছিলো মেহনূরের। ডানহাতটা ঘাড় থেকে নামাতে-নামাতে ক্লিন শেভের হালকা ধারালো গালটায় পরম মায়ায় রাখলো। ওই মূহুর্ত্তেই সকল আদরটুকু সমাপ্ত করে ঝড়ের মতোই ছেড়ে দিলো মেহনূরকে, দ্রুতগতিতে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো গ্যারেজের বদ্ধ দরজার দিকে। মেহনূর শব্দ উৎসের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাতেই তৎক্ষণাৎ চোখে আলো লাগলো ওর। সাথে-সাথে চোখ খিঁচুনি দিয়ে মাথা নুয়াতেই কিছুক্ষণের মধ্যে আলোর ভেতর চোখ সইয়ে ফেললো। স্বাভাবিক ভাবে চোখ পিটপিট করে তাকাতে নিলে হঠাৎ সৎবিৎ ফিরে পাওয়ার মতো সামনের দিকে তাকালো মেহনূর। তখনই দেখতে পেলো, গ্যারেজের দরজা খোলা, আর সূর্যের আলোটা ঢুকে যাচ্ছে সম্পূর্ণভাবে। এবার স্পষ্ট চোখেই দেখতে পেলো সাদা গাড়িটা গেইট পেরিয়ে চলে যাচ্ছে, সেটা আর ফিরে আসার ভঙ্গিতে নেই। মেহনূর জিপে বসা অবস্থায় হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে পরক্ষণে চোখ নামিয়ে কোলের দিকে তাকালো। নিজের ব্যথাযুক্ত ডানহাতটা আসলে বেশ খানিকটা কেটে গিয়েছে। সাদা ইউনিফর্মের দুকাধে সিলভার রঙের স্টার লাগানো ছিলো, কাধটা যখন অজ্ঞতাবশত খামচে ধরেছে তখনই স্টারের পাঁচটা চোখা মাথা নরম হাতের তালুতে ঢুকে গেছে। বেশ রক্ত ঝরছে এখন। তরতাজা লাল রক্তগুলো গলগল করে বের হতেই কবজি বেয়ে কনুইয়ে চলে এসেছে। রক্তের অবস্থা দেখে একটুও ভয় পায়নি সে। যেই জিপ থেকে নামতে নেবে ওমনেই আৎকে উঠলো মেহনূর, বিস্ফোরিত দৃষ্টি নিয়ে তাড়াতাড়ি জিপের ডেবে যাওয়া জায়গাটা হাত দিয়ে ছুঁলো। গোলাকার হয়ে ডেবে গেছে খানিকটা, সজোরে ঘুষি মারার জন্য এমনটা হয়েছে। তার মানে —, আর ভাবতে পারলো না মেহনূর। অস্থির হয়ে জিপ থেকে নেমে গেলো, রক্তাক্ত হাতের দিকে বেখেয়ালী হয়ে আবার অশ্রুচোখে জায়গাটা স্পর্শ করতে লাগলো। মাহতিমের হাত কি ক্ষত হয়নি? মেহনূর অজান্তেই ‘ না ‘ সূচকে পাগলের মতো মাথা নাড়াতে লাগলো। ঠোঁট নাড়িয়ে একটাই শব্দ বলতে লাগলো, ‘ না, না, না, না, না, না —- ‘। রক্তাক্ত হাতে জায়গাটা অনবরত স্পর্শ করছিলো মেহনূর, বর্ষণের মতো অশ্রু ঝরিয়ে মাথাটা নাড়াতে-নাড়াতে ‘ না, না ‘ উচ্চারণ করেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ দৃষ্টি থমকে হাত স্থির হয়ে গেলো মেহনূরের, ঠোঁটদুটো খোলা রেখেই নিশ্বাস চালাচ্ছিলো সে। ভালো হাতটা দৃষ্টিলব্ধ বস্তুটার দিকে কাঁপা-কাঁপা ভঙ্গিতে এগিয়ে আস্তে করে মুঠোয় পুড়ে নিলো। বস্তুটা দূর থেকে কাছে এনে চোখের সামনে অন করলো। পাওয়ার বাটনটা অন করতেই সবার আগে নোটিফিকেশনের বার্তা দেখতে পেলো। নির্বাকভাবে সেটায় ক্লিক করতেই চোখের সামনে লেখাগুলো ভেসে উঠলো,

– তোমায় কোলে তুলেছিলাম মেহনূর। রাগটা দমন করার জন্য তোমার ঠোঁটদুটোতে চুমু খেতে চেয়েছিলাম। পারলাম না। গলার স্পর্শটা সাময়িক ব্যথা দিবে, কিন্তু আমাকে দেখার আর সুযোগ দিবে না। চলে যাচ্ছি।

– চলবে

#FABIYAH_MOMO

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৩৫.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

সূর্যের আঁচটা প্রখর, তেমনি প্রখর হয়ে তাকিয়ে আছে একজোড়া চোখ। সাদা গদিতে আয়েশীভঙ্গিতে পায়ের উপর পা তুলে রেখেছে, পিঠটা ঠেকিয়ে রেখেছে সিটের সাথে। বদ্ধ জানালা ভেদ করে দূর-দূরান্তে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, জানালার সাথে কনুই ঠেকিয়ে ঠোঁটে রেখেছে আঙ্গুল। ভাবুক স্টাইলে মৌন থাকতেই চোখদুটো অকস্মাৎ বন্ধ করলো, সুঠাম দেহের প্রশস্ত বুকটা ধীরে-ধীরে নিশ্বাসের জন্য ফুলে উঠলো, অনেকটা শব্দ করেই নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো মাহতিম আনসারী। জানালার বাঁ-দিকটা এখন তার আয়ত্তে নিমগ্ন আছে, চলন্ত গাড়িটা জ্যাম কাটিয়ে হাইওয়ে ধরেছে মাত্র। পাঁকা রাস্তায় আশির উপরে স্পিড তুলেছে ড্রাইভার, খুবই চতুরতার সাথে টেক্কা দিচ্ছে সামনের গাড়িগুলো। হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় নেই সেটা একটু আগেই ঘড়িতে দেখতে পেরেছে। হাতে আছে আর মাত্র সাতাশ মিনিট। তার মধ্যে চেকআপ করতেই লাগবে দশমিনিটের মতো, আবার বিমানবন্দরের কর্মকর্তার সাথে কিছু আলাপও করা লাগবে। যোগ্য, দক্ষ, শান্ত প্রকৃতির ড্রাইভার নিজের মস্তিষ্কের মধ্যেই বসের সম্পূর্ণ শ্যাডিউলটার ছক কষে রেখেছে, একটুও এদিক-ওদিক হওয়ার চান্স নেই সেটা সে জানে। চোখের সামনে এখন ট্রাক ছুটছে, ট্রাকটার মতিগতি বড্ড অসুবিধার ঠেকলেও প্যাডেলে চাপ দিয়ে গাড়িটার স্পিড বাড়ালো ড্রাইভার। পাকাপোক্ত ড্রাইভিং হুইলটা শক্ত করে দুহাতে ধরলো, প্যাডেলে চাপ প্রয়োগ করে বাতাসের সাথে ছুট লাগালো। নিমিষেই ট্রাকটাকে পিছু ফেলে দিলো ড্রাইভার নোমান। মনে-মনে বিশ্বজয়ীর হাসি দিয়ে গাড়ি চালাতেই লুকিং মিররে চোখ আঁটকে গেলো, সাথে-সাথে কিন্ঞ্চিৎ ভয়ের সাথে ঢোক গিললো নোমান। পেছনের সিট থেকে একজোড়া তীক্ষ্মদৃষ্টি নোমানের কার্যকলাপ নিরবে পর্যবেক্ষণ করছে, নোমান যে একটু আগে বিশ্ববিজয়ীর মতো হাসি দিলো সেটাও হয়তো তার চোখ এড়ায়নি। প্রায় চারটা বছর ধরে মাহতিম আনসারীকে চেনে নাজমুল নোমান। পেশাগত জীবনে মাহতিমই তাকে নিজের ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ব্যক্তিগত ছাড়া আরো কি কি কাজে নিয়োগ দিয়েছে সেটা ডিপার্টমেন্টের খুব উচ্চপদের লোকেরাও জানে না। পরিষ্কার করে কাউকে বলেও নি নোমৃনের বস। সামরিক বাহিনী থেকে ব্যক্তিগত মানুষ নিয়োগ দেওয়াটা সহজ কোনো ব্যাপার ছিলোনা। উক্ত পাওয়ারটা মূলত বিশেষ কিছু ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ, তন্মধ্যে মাহতিম অন্যতম। সামরিক বাহিনীর নাম শুনলেই বুকের ভেতরটা কেমন অস্থির হয়ে উঠে সেটা সকলের কাছে অজানার বিষয় নয়। নোমান দ্রুত নিজের ভয়গুলোকে মনের ভেতর লুকিয়ে নিলো, নিজের দিকটা স্বচ্ছ রাখার জন্য লুকিং মিররে চোরাদৃষ্টিতে তাকালো। আবার বিষম খেলো নোমান, এখনো সেই দৃষ্টিদুটো স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। নোমান জোরে-জোরে দুটো ঢোক গিলে ড্রাইভিং হুইলটা শক্ত ভাবে ধরলো। গলাটা একটু পরিষ্কার করে প্রসন্ন সুরে বললো,
– স্যার কিছু বলবেন?

এখনো লুকিং মিররের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে মাহতিম। নোমানের ছোট্ট প্রশ্নটা শুনে এবার সামনের দিকে তাকালো, হাইওয়ের রাস্তাটা একপলক দেখে নিয়ে আবার লুকিং মিররে দৃষ্টি রাখলো। গলায় কপট ঝাঁঝ মিশিয়ে সর্তকতার সুরে বললো,
– আশির উপরে স্পিড তুলে নিজেকে শেয়ানা ভাবতে যেও না। প্রথমেই তুমি ট্রাফিক রুলস ব্রেক করে বসে আছো। এটা বাংলাদেশ দেখে বেঁচে গেলে, অন্য কান্ট্রি হলে —-

কথাটা শেষ করার সময় ও সুযোগ দুটোই পেলো না মাহতিম। চট করে সাদা প্যান্টের পকেটে ফোনের ভাইব্রেট অবস্থা টের পেতেই কথা থামিয়ে ফেললো। বসকে ফোনের জন্য ব্যস্ত হতে দেখে চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো নোমান। মাহতিমের কড়া কথাগুলো মাঝে-মাঝে হজম করা যায় না। যেই চোখ দিয়ে একবার তাকায় ওইখানেই যেনো গেঁড়ে ফেলে। নোমান ভেবেই পায়না কি করে তার বসের বউ কি করে তার বসকে ট্যাকেল করে। বসের বউ সম্ভবত খুব রাগী, যখন সে সালাম দিলো তখন ম্যাডাম একটুও কথা বলেনি। নোমান নিজের ভাবনা চিন্তায় মশগুল থাকলে ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখলো মাহতিম। কলার নামটা দেখে প্রথমে ইচ্ছা করছিলো কেটে দিতে, পরক্ষণে সেটা রিসিভ করে কানে ঠেকালো। জানালা থেকে সরে গিয়ে পিঠ সোজা করলো, বাঁহাতের ঘড়িতে সময় দেখত্রই ছোট্ট শব্দটা বলে উঠলো,

– হ্যালো,

কাঙ্ক্ষিত সাড়াটা পেয়ে গেলে কিছুক্ষণ চুপ রইলো সৌভিক। মাহতিম এই চুপটির অর্থটা ভালো করে জানে, ফোনের ওপাশে কথা গুছাতে ব্যস্ত সৌভিক, তাই সে চুপ করে আছে। মাহতিম তাকে সহজ করার জন্য নিজ থেকেই বলে উঠলো,
– কলটা তো এমনে এমনেই করিসনি। কি কারণে করেছিস সেটাই বল।

একটু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলো সৌভিক। গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
– ভাবীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করিস না মাহতিম। আমি জানি তুই কি ধরনের চালাকি করার চিন্তায় আছিস। ওর সাথে আপাতত এসব কিছুই করিস না। মেয়েটা প্রচুর কষ্ট পাবে। তুই একটু কল করে যদি ভাবীকে —

সঙ্গে-সঙ্গে মুখের কথা কেড়ে কপট ভঙ্গিতে জবাব দিলো মাহতিম। অনেকটা ক্ষোভের সাথে, কিছুটা জোরালো ভঙ্গিতে বললো,

– ওর টপিক বাদ দিয়ে যদি কথা থাকে তাহলে সেটা বল। আমি এয়ারপোর্টের কাছাকাছি চলে এসেছি, যেকোনো সময় ফোন বন্ধ করতে হবে। যা বলার দ্রুত বল সৌভিক।

মুখ ফুলিয়ে সশব্দে নিশ্বাস ছাড়লো সৌভিক। চরম পরিমাণে হতাশা কাজ করছে এখন। ডানহাতের আঙ্গুল দিয়ে কপালটা টিপে চোখ বন্ধ করে বললো,

– ভাবীর হাতটা কেন কেটে দিলি দোস্ত?

সরুচোখে তাকালো মাহতিম, ভ্রুঁদুটো কুঁচকে নাকের কাছে অসংখ্য ভাঁজ ফেলে আশ্চর্য হয়ে গেলো। চরম আশ্চর্যের সাথে প্রশ্নাত্মক কন্ঠে বললো,
– কার হাত কেটেছে বললি?

সৌভিক তৎক্ষণাৎ চাপা ক্ষোভের সুরে গজগজ করে উঠলো,
– ভাবীর হাত তুই কাটিসনি? কতখানি মাংস তুলেছিস চিন্তা আছে? প্রীতি যেয়ে কতো কাহিনী করার পর স্যাভলন লাগাতে পেরেছে, ভাবী কাউকে হাত ধরতে দেয় না। আন্টি যদি জানতে পারে কি পরিমাণে ক্ষেপবে ভেবেছিস? তুই এমন কাজ করবি আমি ভাবতেও পারছিনা মাহতিম। তুই নিজেকে ডেম্পারেট প্রকাশ করতে যেয়ে ভাবীকে শেষমেষ ক্ষতি করবি এটা কল্পনার বাইরে ছিলো। এটা একদম ঠিক করিসনি!

মাহতিম কোনো কিছুই বুঝতে পারলো না। সৌভিকের কথা শুনে যতদূর বুঝতে পারলো, তাতে বুঝলো হয়তো মেহনূরের হাত ভুলবশত কেটেছে। সেটার অজুহাতে সৌভিক চটে আছে, এখন বেজায় রাগ দেখানোর জন্য কল করেছিলো ঠিকই, কিন্তু রাগটা পুরোপুরি ফলাতে পারেনি সে। মাহতিম জানালার বাইরে দৃষ্টি দিলো, এরপর চোখ ফেরালো সামনের দিকে। কিছুটা উদভ্রান্তের মতো বোধ হচ্ছিলো তখন, কিন্তু নোমানের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য তেজালো সুরে বললো,

– আমি এখন বাড়িতে নেই সৌভিক। এই মূহুর্তে কোথায় যাচ্ছি সেটা তুই ভালো করে জানিস। ওর অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয় দ্যান ডাক্তার ডেকে আন, মা’কে বিষয়টা জানিয়ে দে। ওর যদি ইচ্ছে হয় স্বামীর সাথে কথা বলার, সেটা ও নিজেই পারবে। ওকে ওর মতো ছেড়ে দে, নীতিদের ভালোভাবে পৌঁছে দিস। রাখি এখন। রাত দশটার আগে কল করবি না। করলেও বন্ধ পাবি।

মাহতিমের কথার বিপরীতে কথা বলার জন্য বাক্য সাজাচ্ছিলো সৌভিক। মাহতিম একটানে কথাগুলো শুনিয়ে দিতেই সৌভিক যেই মুখ খুলবে ওমনেই কানে কল কাটার টুট টুট আওয়াজটা শুনতে পেলো। দাঁতে-দাঁত পিষে কান থেকে ফোন সরিয়ে স্ক্রিনে তাকালো, ততক্ষণে মাহতিমের ফোন বন্ধ হয়ে গেছে, আর কল করেও মাহতিমকে পেলো না সৌভিক।

.

সকালের নাস্তাটা খাপছাড়া ভাবে শেষ হলো। কেউ নাস্তা খেলো, কেউবা খেলো না। কেউ-কেউ আধা খেয়ে উঠে চলে গেলো, কেউ রুটি ছিড়তেই সময় পার করলো। মারজা না চাইতেও নাস্তা খেতে বাধ্য হলো, একান্ত ঔষুধের জন্যই যতটুকু খাওয়া-দাওয়া। মেহনূর আজ নাস্তার টেবিলে আসেনি, সকালে একপলকের জন্য বিমর্ষ মুখটা দেখেছিলো এরপর আর দেখেনি। মাথায় খয়েরী রঙের ওড়নাটা পরিপাটিভাবে টেনে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলো, পা টিপে-টিপে ছাদের ডানদিকের রুমটায় চলে এলো। দরজার হালকা নীলের পর্দা ঝুলছে, পর্দার শেষভাগটা সাদা রঙের। মারজা ডানহাতে পর্দা সরিয়ে রুমের ভেতরে পা রাখলো, শান্তমুখে ভেতরে ঢুকতেই চোখদুটো বিছানার দিকে স্থির হয়ে গেলো। হাঁটুদুটো বুকের কাছে তুলে মাথাটা হাঁটুতে ঠেকিয়ে রেখেছে মেহনূর, গোলাপী চাদরের পরিষ্কার বিছানায় গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। মেহনূরকে ওভাবে মাথা ঠেকিয়ে বসতে দেখে মারজা তার পাশে গিয়ে বসলো। মেহনূরের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলে পরমাহ্লাদের সুরে বললো,

– নাস্তা না করলে চলবে? মাহদিকে পাঠালাম, নীতিকে পাঠালাম, সবাইকে তুমি এক-এক করে ফিরিয়ে দিলে। না খেলে যে শরীর আরো রোগা করবে বুঝো না? মাহতিম এলে তো খুব বকবে মেহনূর। কাল কি বকার নমুনা দেখোনি?

নড়েচড়ে উঠলো মেহনূর, নাক টানার শব্দ করতেই হাঁটু থেকে মাথা তুলতে লাগলো। বন্ধ চোখদুটো অনেকক্ষণ পর খুলতে যেয়ে ঝাপসা দেখছে এখন। ফোলা-ফোলা আঁখিদুটো লাল হয়ে গেছে, নাকের মাথাটা যেনো রক্তজবার মতো লালচে হয়েছে, চোখের দুই কোল থেকে এখনো ঝরছে অশ্রুফোটা। হাঁটুটা নামিয়ে স্বাভাবিক করতেই শাড়ির আচঁল টেনে চোখ মুছলো মেহনূর, দুচোখের কোলদুটো অশ্রুমোচন করার চেষ্টা করলো। মারজা ব্যথার দৃষ্টিতে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলে মেহনূরের হাতটা থামিয়ে দিলো, মেহনূর অবাক হয়ে চোখ মুছা বন্ধ করলে মারজা একটু এগিয়ে বসলো। বাহাত দিয়ে মেহনূরের সিক্ত গালটা ধরলো, অন্যহাতটা দিয়ে ওড়না নিয়ে গাল মুছে দিতে থাকলো মারজা। কান্নার জন্য ফুপানো ভঙ্গিতে ঠোঁট কাঁপছে, নাক বন্ধ হওয়ার কারণে ঠোঁট দিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে, শ্বাশুড়ির মুখপানে কান্নাবিজরিত চাহনিতে তাকিয়ে থাকলে হাসার চেষ্টা করলো মারজা,

– মা’রে, তোকে কি কাঁদার জন্য এ বাড়িতে নিয়ে এসেছি? আমার মতো বুড়িকে একটু দেখবি, সময় দিবি। তোর সংসারটা একটু-একটু করে বুঝে নিবি, আমার মাহতিমটাকে সামলাবি, এ সবই তো তোর মা।

মেহনূরকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো মারজা। চোখের অবাধ্য জল যেনো মারজার ‘ তুই ‘ সম্বোধনে থেমে গেলো, এক টুকরো সুখ পাওয়ার মতো খুশী অনুভব করলো মেহনূর। শ্বাশুড়ির চাওয়া মতো চোখদুটো ভালো করে শেষবারের মতোন মুছলো। নিরবে সব কার্যকলাপ দেখে প্রাণভোলা হাসি দিলো মারজা, স্নেহের কোমল মায়ায় হাতদুটো বাড়িয়ে মেহনূরকে বুকে টেনে নিলো। মেহনূরের মাথাটা নিজের শূণ্য বুকটার কাছে চেপে মাথায় আদরের পরশ বসিয়ে দিলো। দুহাতে মাতৃভান্ডারের ভালোবাসা বিলিয়ে অনেকক্ষণ আগলে রাখলো। মায়ের মতোই নিখাদ স্নেহের অস্তিত্ব পেয়ে মারজাকেও হাত এগিয়ে জড়িয়ে ধরলো মেহনূর। ছোটবেলায় শেফালীর হাতে মার খেয়ে কাঁদতে-কাঁদতে মায়ের বুকটায় লুকাতো মেহনূর। মায়ের মাতৃগন্ধে গা মিলিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পরতো। সেই মধুর দিনগুলো আর খুজেঁ পায় না মেহনূর। হাতড়ে-হাতড়ে অনেক খোঁজাখুজির পর বুঝতে পেরেছে, বয়স বাড়ার সাথে-সাথে মায়ের দেহে গা মিলানোর দিনগুলো হারিয়ে গেছে। মেহনূর যেনো ভুলেই গেলো সে এখন মারজার ছায়ায় ঢেকে আছে। মারজাকে মায়ের মতোই কাছে পেয়ে আনমনে বলতে লাগলো মেহনূর। কিছুটা ব্যথাতুর গলায় আর্দ্রমিশ্রিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

– মা, আপনার সাথে যদি কম কথা বলি আপনি কি আমার উপর রাগ করবেন?

মাথায় থুতনি বসিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো মারজা। ওই অবস্থায়ই শান্ত কন্ঠে উত্তর বলে দিলো,
– এখানে রাগের কি দেখলি? রাগ করবো কেন? বাবামশাই তো বলেই দিয়েছে তুই কম কথা বলিস।

শ্বাশুরির কথায় মনের সমস্ত জড়তা দূরীভূত হলো মেহনূরের। মনের মধ্যে জটপাকানো প্রশ্নটা এবার প্রস্তুত করে নিলো। মারজাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে উঠলো,

– উনি কিসে চাকরি করেন মা? আমাকে উনি আজ পযর্ন্ত উনার সম্পর্কে কিছু জানাননি। উনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন না। মাঝে মাঝে মনেহয় উনি আপনাকে খুশী করতে আমায় বিয়ে করেছেন। আমাকে মাফ করুন, আমি জানি এরকম কথা বলা ঠিক হচ্ছেনা, কিন্তু আমার উত্তরগুরো কেউ দেয় না মা। সবাই আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। আমি কি গ্রামের মেয়ে বলে —

চট করে জিভ কামড়ে ছিঃ ছিঃ করে উঠলো মারজা। তড়িৎগতিতে মেহনূরের মুখটা হাত চাপ দিয়ে ‘ না ‘ সূচকে মাথা নাড়ালো। উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে চিন্তিত সুরে মেহনূরের উদ্দেশ্যে বললো,

– এখানে গ্রাম-ট্রাম বলে কিছু নেই। খবরদার ওসব আজেবাজে কথা মুখে আনবি না। মা’রে মাহতিম নিজেই তোকে পছন্দ করেছে। সেদিন তরুণ লম্পটের জন্য শেফালী ভাবী যখন তামাশা করলো, তখনই মাহতিম আমার কাছে এসে বিয়ের প্রস্তাব রাখতে বলেছে। ও চেয়েছিলো তুই ওর কাছেই থাক। তোর জন্য এই প্রথম ওকে ছুটির জন্য পাগলামি করতে দেখেছি। আমার কোলে মাথা রেখে কতবার যে কাকে-কাকে কল দিলো সেই হদিশ আমিও মিলাতে পারি না।

মেহনূর কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকালো এবার। ছটফট করে উঠলো মারজার মুখে পরবর্তী কথাটা শোনার জন্য। পরের কথা যে মাহতিমের পেশা সম্পর্কীয় সেটা কিন্ঞ্চিৎ হলেও ধরতে পেরেছে মেহনূর। শ্বাশুড়িকে তাড়া দিতে যেয়ে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হলো সে। কে যেনো দরজার কাছ থেকে অনমনীয় কন্ঠে ডেকে উঠে। চকিত হড়বড় করে দরজার দিকে তাকায় দুজন, মেহনূর মানুষটাকে চিনতে না পেরে তাকিয়ে থাকলে মারজা তখন সাদরে গ্রহণ করার জন্য বিছানা থেকে নেমে যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে খুবই শৌখিন পোশাকের মহিলা। চামড়ায় এমনভাবে কৃত্রিম রঙ মেখেছে গালদুটো গোলাপী-গোলাপী হয়ে আছে। ঠোঁটে লাল রঙের ম্যাট লিপস্টিক কড়া করে দিয়েছে, পড়নে আভিজাত্য ভঙ্গির শাড়ি পরা। রঙটা সোনালীর রঙের মধ্যে ঝিলমিল করে চোখ ধাঁধাচ্ছে। ব্লাউজটা খুবই দৃষ্টিকটু লাগছে, এটা মেহনূরের কাছে কেমন লজ্জাজনক বোধ হলো। বাদামী রঙের মখমল কাপড়ের ব্লাউজটা হাতাবিহীন, তার উপর গলাটাও বেশ হা করা। শাড়ির আচঁল যদি বেখাপ্পা ভাবে সেইফটিপিন মুক্ত হয়ে যায়, তাহলে লালসাজনিত যেকোনো পুরুষেরই চলে যাবে। বেজায় ঘেন্না কাজ করছিলো মহিলাটার প্রতি। অশালীন পোশাক-আশাক পরে এই মহিলা কিভাবে চলাফেরা করে? অস্বস্তিবোধ হয়না? পুরুষালী দৃষ্টি তো গিলে-গিলে খাওয়ার কথা। মেহনূর নিজেই আর মহিলার দিকে তাকাতে পারলো না। প্রচণ্ড লজ্জা কাজ করছে মহিলার অবস্থা দেখে, মাহতিম কি এই মহিলাকে দেখতে পারে? মাহতিম যদি এই মহিলাকে প্রশ্রয় দেয় তাহলে একটুও মাহতিমের সাথে যোগাযোগ করবে না মেহনূর। ওই অসভ্য লোককে একদম সহ্য করবে না সে। মনে-মনে উদ্ভট জেদে ভষ্মীভূত হতে থাকলে চিন্তার দুনিয়ায় ছেদ কলো মারজা। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো ওই বেলা’ল্লাপনা মহিলা ওর দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়েছে। বাড়িয়ে দেওয়া হাতটায় দামী একটা ব্রেসলেট দেখতে পেলো মেহনূর। হাতের পাঁচটি আঙ্গুলে সমান তালে হীরে বসানো আংটি পরা তার। মেহনূর ড্যাবড্যাব করে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে মহিলা এবার বাঁ ভ্রুঁ উঁচু করলো। মেহনূরের দিকে আপাদমস্তক ঘৃণ্যভাবে তাকিয়ে দেখলো। মারজা এখনো পাশে দেখে দৃষ্টি পালটালো মহিলা, ঠোঁটে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে সেই হাত বাড়িয়ে মেহনূরের থুতনি ধরলো। মেহনূর তখনও উজবুকের মতো তাকিয়ে থাকলে মহিলা নিজেই তখন বলে উঠলো,

– তুমিই তাহলে মেহনূর আফরিন? দেখে ভালো লাগলো প্রিটি লেডি। আমি হচ্ছি তোমার মামী শ্বাশুড়ি। মাহতিমের একমাত্র রজনী মামী। ছেলেটা আমার সাথে দেখা করে গেলো না। আমার লাকটা কি খারাপ!

মেহনূরের থুতনি ছেড়ে এবার মারজার দিকে তাকালো রজনী ইবনাত। মেহনূর মনে-মনে তীব্রমাত্রায় রাগ অনুভব করছে, কেনো করছে তা সে নিজেও জানেনা। এদিকে সবার দৃষ্টি বাঁচিয়ে একজোড়া চোখ তখন সিসিক্যামেরার মতো কাজ করছে, অবশ্য সেটা কারো নজরে পরেনি। জানালা দিয়ে গোয়েন্দা স্টাইলে দৃষ্টি রেখে আছে মাহদি। আজ ছোট বলে নীচ থেকে সবাই আপাতত ওকেই পাঠিয়ে দিয়েছে। চোরা দৃষ্টি রাখার জন্য মাহদি চরম লেভেলের এক্সপার্ট, এ বিষয়ে মাহতিমও বলতে বাধ্য। রজনী খুব কায়দা করে মারজাকে রুম থেকে নিচে পাঠিয়ে দিলো, মা’কে বেরুতে দেখে সর্তক হলো মাহদি। নিজেকে চতুরতার সাথে আড়াল করার জন্য ছাদে থাকা চটের বস্তাটা গায়ে টেনে বসলো। মায়ের পদধ্বনি ক্রমশ কমে গেলে গা থেকে বস্তা সরালো মাহদি, মায়ের যাওয়ার দিকে হাসি দিয়ে নিজের কলারটা দাম্ভিকতার স্টাইলে দুবার টান মারলো। হাত ঝারা দিয়ে উঠে দাড়াতেই জানালা দিয়ে পুনরায় দৃষ্টি দিলো। তৎক্ষণাৎ ভেতরের দৃশ্য দেখে চিৎকার দিতে নিচ্ছিলো মাহদি! আৎকে উঠতেই মুখে দুহাত চাপা সাথে-সাথে নিচে বসে পরলো। মূহুর্ত্তের মধ্যে অস্থির হয়ে উঠলো মাহদি। দ্বিতীয়দফায় সাহস করে পাদুটো উঁচু করে জানালা দিয়ে ফের তাকালো, পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ মাত্রায় শিউরে উঠে ছাদের ফ্লোরেই বসে পরলো মাহদি। মাথা কাজ করছেনা ওর! ভয়ার্ত বুকটা চিপসে আসছে, কি করবে ভাবতে পারলো না। তড়িঘড়ি করে ট্রাউজারের পকেট থেকে মায়ের চুরি করা ফোনটা বের করলো, নিশ্বাসের প্রখরে হাপাতে-হাপাতে ভয়েস রের্কডই সঠিক মনে হলো। তাড়াতাড়ি হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে অডিও অপশনে বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে গড়গড় করে বলতে লাগলো মাহদি,

– ভা-ভা-ভাই-য়া, আ-আ-আপু, রর-জনী মামী ব্য-থা দিচ্ছে। ররররর-ক্ত পপ-রছে। আ-মার বব-উকে ব্য-থা দি-চ্ছে, ব্য-থা দিচ্ছে….

এটুকু বলতেই কপাল-গলা ঘেমে একাকার মাহদির। এখনো অবিরামভাবে হাপাচ্ছে সে। বুকের ধড়ফড় করা জায়গায় হাত রেখে ঢোক গিলে যাচ্ছে। কোনোমতে বৃদ্ধাঙ্গুলটা অডিও অপশন থেকে সরিয়ে সেন্ড মারলো। বাচ্চাদের মতো হামাগুরি দিতে রিষ্কজোনটা কভার করতেই একদৌড়ে নিজের রুমে ঢুকলো মাহদি, দরজা আটকে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলো। বালিশে মুখ ডুবিয়ে হাপিয়ে যাচ্ছে, নিশ্বাস ওর শান্ত হচ্ছে না। এদিকে সেন্ড অপশনের জায়গায় ভুলবশত অন্যখানে ফরওয়ার্ড হয়েছে অডিওটা। যদি ফরোয়ার্ড মেসেজটা ওই ব্যক্তি সিন করে তাহলে কেমন তাণ্ডবলীলা হবে, কেউ জানে না।

– চলবে

#FABIYAH_MOMO .

( # নোটবার্তা : এবার শুরু হবে ❤। )