মন বোঝেনা পর্ব-০১

0
93

#মন_বোঝেনা
#Tahmina_Akhter

১….

— আপনি আনইউজড তো? প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। একচুয়ালি,, ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় অনেক মেয়ে রিলেশনে জড়িয়ে পরে, তাদের ভাষ্যমতে দিজ আর ডিপ লাভ। এন্ড দেয়ার সো কলড লাভড ফিনিশ ইন দ্যা বেডরুম। ইউ আন্ডারসেটেন্ড ওয়াট আই এম সেয়িং?

পাত্র বেশে সামনে বসে থাকা লোকটার অনর্গল বলে যাওয়া কথাগুলো শোনার পর আপাতত লজ্জায় মুখ থমথম করছে অথৈর। এতটা খোলামেলা কথাবার্তা মোটেও আশা করেনি অথৈ।

— প্লিজ,ডোন্ট হেজিটেট?? টেল মি এবাউট ইউ ?

— আব্বু? আব্বু একটু এদিকে আসবে?

অথৈ ওর বাবাকে ডাকছে। এদিকে বেচারা পাত্রপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। সে যে মৌমাছির মৌচাকে ঢিল ছুড়েছে ভালোভাবেই আন্দাজ করতে পেরেছে।

মেয়ের ডাক শুনে ছুটে এলো বাবা। এসেই মেয়েকে নরম সুরে জিজ্ঞেস করল,

— কিছু লাগবে?

— অবশ্যই। একটু শান্তি চাই আমি। তুমি কি এই মূহুর্তে এই লোকটাকে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলবে?

আলফাজ আহমেদ মেয়ের কথা শুনে পাত্রের দিকে তাকালেন। পাত্র মাথা নীচু করে বসে আছে। অথৈর বাবা ব্যাপারটাকে ঘাঁটলেন না। অথৈকে ঘরে চলে যেতে বলল। তারপর,নিজেই দৌড়ে গেলেন ড্রইংরুমের দিকে। জানাতে হবে তো যে তাদের মেয়ে ছেলেকে পছন্দ করেনি।

অথৈ চলে যাচ্ছিল কি মনে করে আবারও ফিরে এলো। পাত্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

— তুই নিজে আনইউজড কিনা আগে এটা প্রুভ কর । নিজেরা মেয়েদের ভালোবাসার দোহায় দিয়ে হোটেলে ডেকে
সর্বস্ব্য লু/ট করিস আর বৌ খুঁজতে এসে আনইউজড,আনইউজড বলে মুখে ফেনা তুলিস! আমার চোখের সামনে আবারও কোনোদিন যদি পরিস আই সয়ার সেদিন তোকে আমি জু/তা পে/টা করব। কারণ,আজকের ব্যাপারটা আমার জন্য টোটালি এম/ব্যারিসিং ছিল।

বিয়ের জন্য বেশ কদিন ধরেই ওর বাবা প্রেশার দিচ্ছিল। একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে অথৈ তার বাবাকে বলল ভালো পাত্র দেখতে। এন্ড ভালো পাত্র পাওয়া গেছে ওর বাবা আলফাজ আহমেদের ভাষ্যমতে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যাংকে চাকরী করা সুদর্শন এই লোকের মুখের কথা শুনলে আপাতত তার পারিবারিক স্ট্যাটাসের দিকে যাবে না। অথৈর জন্য সে মোটেও উপযুক্ত নয়।

অথৈ ওর ঘরে এসে ওড়নাটা বিছানায় রেখে কিছুক্ষণ পায়চারি করল। অসম্ভব রা/গ হচ্ছে। মানুষ কিভাবে পারে?একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতভাবে হ্যা/রেজ করতে পারে আজকে সেটারই ডেমো দেখল বোধহয় সে নিজেই!! পথে-ঘাটে,ঘরে-বাইরে,আত্মীয়-অনাত্মীয়,প্রতিটা মানুষের কাছে তাদের বু/লিংয়ের শিকার হতে হয়। মেয়েদের কোথাও শান্তি নেই।

ঘন্টাখানেক পর,

অথৈ মাত্রই পড়া শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছিল তখনি ওর মা সাবিনা দরজায় নক করল।

— ভেতরে এসো।

সাবিনা দরজা খুলে ভেতরে এলো। মেয়ে মশারি টাঙিয়েছে। সাবিনা মুচকি হেসে রিডিং টেবিলের কাছ থেকে চেয়ার টেনে এনে বসল।

— তোর বাবার মতো তোরও কি মশারি না টাঙালে ঘুম আসে না?

মশারির ভেতরে বসে হাই তুলে অথৈ দু পা ভাজ করে বসল। মায়ের কথা শুনে মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,

— বাবার মতো বললে কেন মা?পৃথিবীর সবাই মশারি টাঙিয়ে ঘুমায়। তাই বলে কি সবারও আমার বাবার মতো অভ্যেস আছে! মশার জ্বালাতনে মশারী টানানো লাগে। নয়তো প্রতিদিন কার ভালো লাগে মশারি টানাতে?

সাবিনা প্রসঙ্গ বদলে ফেললেন। অথৈ ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মা যে এখন এই ঘরে এসে বসেছে তার পেছনে বিশেষ কারণ আেছ। নয়ত,রাত এগারোটার পর ওর মা কখনোই ওর ঘরে আসে না।

— প্রহরকে তোর কেমন লাগে?

— জাস্ট ডিজ/গাস্টিং।

— অথৈ!

— প্লিজ তুমি এখন প্রহরের ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলতে এসো না। একটা চরিত্র/হীন ছেলের কথা তোমার মেয়ের সঙ্গে আলাপ করতে তোমার মুখে বাঁধছে না?

— প্রহর মোটেও খারাপ নয়। বিদেশে বড়ো হয়েছে। কিছুটা ওপেন মাইন্ডেড। বাংলাদেশের কালচারের সম্পর্কে কি’বা জানে? হয়তো সেদিন ভুল করেই…

— থাক মা জননী। তুমি আর কষ্ট করে প্রহরের ব্যাপারে আমাকে মোটিভেট করো না। আমার দিন এতটাই খা/রাপ আসেনি যে প্রহরের মতো মানুষকে নিয়ে গসিপ করতে হবে!

অথৈ গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে পরল। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। এত এত প্রহর,নীলদের মতো কা/পুরুষদের ভীড়ে অথৈর স্বপ্নের মানুষটা কই আছে কে জানে? আর কতকাল অপেক্ষা করলে দেখা মিলবে তার স্বপ্নপুরুষের?

সাবিনা মেয়ের ঘরের লাইট অফ করে দরজা বন্ধ করে বের হয়ে এলো। ডাইনিং টেবিলের কাছেই অথৈর বাবার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো সাবিনার। সাবিনা আলফাজের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

— অথৈ প্রহরের বৌ এটা জানার পরও তুমি কি করে অন্যত্রে অথৈর বিয়ে ঠিক করছো?নাজিফা আপা শুনলে…

— নাজিফা আপার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার । বাল্যকালে হওয়া প্রহর এবং অথৈর বিয়ের সমাপ্তি এবার নিজ হাতে করবেন তিনি। আগামী তিন নভেম্বর তিনি দেশে আসবেন প্রহরকে সঙ্গে নিয়ে। এবার আমার মেয়ে মুক্ত হয়ে যাবে সেই বাল্যবিয়ের সম্পর্ক থেকে।

— কিন্তু, অথৈ?

— অথৈকে সব বলব। সবটা জানাবো। তবে নাজিফা আপা দেশে আসার পর। তুমি এখুনি কিছু বলতে যেও না। নয়তো, হিতে-বিপরীত হতে পারে।

সাবিনা আর আলফাজ সারারাত ঘুমাতে পারল না মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তারা যে প্রহরের কাছে অথৈকে দেয়ার কথা ভেবেছিলেন সবটাই যে ভুল ছিল আজ তা হারে হারে টের পাচ্ছে।

******************

পাঁচ তারকা হোটেলের ফিফথ ফ্লোরে একটি কনফারেন্সে চলছিল। “বিগ ওশান” ইন্ডাস্ট্রির আজ পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গ্রান্ড পার্টি থ্রো করেছে এহসান মির্জা। সেই পার্টিতে এহসান মির্জার পাশেই হাসোচ্ছল প্রহর মির্জাকে দেখে পার্টিতে থাকা মেয়েরা মরমে মরে যাচ্ছিল। একটুখানি সুযোগ খুঁজছিল তারা কখন প্রহরকে একা পাবে।

সেই মাহেন্দ্রক্ষণ খুব দ্রুতই চলে এলো। প্রহর ওয়াশরুমে চলে যায়। বেসিনের কল ছেড়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুছে আয়নায় মুখ দেখছিল। ঠিক তখনি আয়নায় তার প্রতিবিম্বের পাশে নারী প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো। প্রহর চিনতে পারল না মেয়েটাকে। আগে দেখেছে বলে মনে পরল না।

বেশভূষা এবং চেহারার গড়ন বলে দিচ্ছে মেয়েটা এখানকার স্থানীয়। আমেরিকানদের চেহারা কখনোই মায়াময় মনে হয়নি প্রহরের কাছে। খুব সাধারণ আদলে গড়া হয়েছে তাদের।

প্রহর পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনি অভাবনীয় কান্ড ঘটিয়ে ফেলতেই যাচ্ছিল মেয়েটি। কিন্তু বাঁধ সাধে প্রহর। মেয়েটাকে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যদিও প্রহরকে স্পর্শ করতে পারেনি তবুও যেন প্রহরের ইচ্ছে করছিল মেয়েটার গলা চেপে ধরে মেরে ফেলতে। ফালতু মেয়ে কোথাকার! ছেলেদের দেখলে মরে যাই টাইপ তাদের এক্সপ্রেশন!

— হাউ ডেয়ার ইউ্যু!

— ওয়াট হ্যাপেন্ড,হানি?

প্রহর পকেট থেকে টিস্যু বের করে বারবার নিজের অধর মুছে যাচ্ছে। এদিকে মেয়েটি বেহায়ার মতো প্রহরের সামনে গিয়ে বারবার বলছে,

— আই লাভ ইউ প্রহর। এন্ড আই ওয়াজ টোটালি ফিল..।

— স্টপ দেয়ার.. এন্ড গেইট আউট অফ হিয়ার।

কিছু ডলারের নোট সেই মেয়েটির মুখের ওপর ছুঁড়ে ফেলল। মেয়েটা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারপর, ডলারের নোটগুলো কুড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

প্রহর মেয়েটাকে ভয়নাক কিছু একটা বলে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা হোটেলের নীচে চলে এলো। ড্রাইভারকে কল করলে। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে আসে। প্রহর ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে চলল ফার্ম-হাউজের দিকে।

রাত তিনটা,

প্রহরের চোখে ঘুম নেই। এত ছোট রাত অথচ আজ দীর্ঘ মনে হচ্ছে। কারণটা হয়তো বিশেষ বলেই।

কপালে স্লাইড করতে করতে প্রহর ভাবছে কারো কথা। পরনের হলদে শাড়ি,এক চিলতে হাসি, অগ্নি/মূর্তি, চোখ রা/ঙিয়ে তাকায় এমন একটি পুতুলের কথা ভাবছে সে। জীবন্ত একটি পুতুল সে দেখে এসেছে বাংলাদেশে। বিগত পনেরোদিন ধরে তার মনে হচ্ছে বাংলাদেশে সে বিশেষ কিছু রেখে এসেছে। এবং সেই বিশেষ কিছুই হলো সেই জীবন্ত পুতুলটা। কিন্তু,পুতুলটা বড্ড হিং/স্র। সহজে কথার মায়াজালে বেঁধে ফেলা যায় না তাকে। তাই তো তার মনটা বি/ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। সামান্য একটা মেয়ে প্রহর মির্জার আত্ম/সম্মানকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।

এমন সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠল। টেবিলের ওপরে থাকা মোবাইলটা তুলে দেখলো ওর আম্মি নাজিফা কল করেছে। প্রহর স্বাভাবিক ভাবেই কল রিসিভ করল,

— হ্যালো…

— আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুম আসসালাম। আম্মি কতবার বলব আপনি আমাকে সালাম জানাবেন না? তারপরও,, আপনি সেই একই কাজ করেন।

— সালাম বিনিময়ে অনেক নেকি পাওয়া যায়। আমি সেই নেকি কুড়াতে চাই, প্রহর। তাছাড়া, আমি তোর মা। তোর উচিত আমাকে প্রথমে সালাম জানানো বাট তুই..

— আম্মি ; আ’ম সরি। আসলে অন্যমনস্ক ছিলাম।

প্রহরের জবাব শুনে ফোনের ওপাশ থেকে নাজিফার দীর্ঘশ্বাসের সুর শোনা গেলো। প্রহর কিছু বলল না।

— অথৈর কথা মনে আছে তোর??

— আবারও অথৈর কথা কেন তুলছেন??

— অথৈর কথা কেন তুলছি এটা আমার চেয়ে ভালো তুই জানিস প্রহর?

— আমি জানি না এবং জানতেও চাই না আম্মি। আপনি এবং বাবা মিলে ব্যাপারটা যদি আপোষে সেটেল করতে পারেন দ্যান আমার সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলতে আসবেন।

প্রহর কল কেটে দিলো। সব মন খারাপের মূহুর্তে একসাথেই আসতে হলো।

#চলবে