মন বোঝেনা পর্ব-০৭

0
66

#মন_বোঝেনা
#Tahmina_Akhter

৭…

অথৈ অফিস শেষে বাড়িতে ফিরল না। মার্কেটের উদ্দেশ্য রওনা হয়। পথিমধ্যে আবিরের সঙ্গে দেখাও হলো। অথৈকে দেখে আবির নিজেই এগিয়ে এসে বলল,

— কোথায় যাচ্ছিস? আই মিন কোথায় যাচ্ছো?

— এই তো মার্কেটে। আর তোর কি হলো! তুই থেকে সোজা তুমিতে নেমে এসেছিস?

আবির লজ্জিত ভাবে কপাল চুলকিয়ে কোনোমতে প্রসঙ্গ এড়াতে গিয়ে অথৈকে মিছে কপট রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,

— তুই তো আমার সব কথায় বাগড়া দিস। পরে টের পাবি কেন তুমি বলেছি? এখন চল তোকে মার্কেটে নামিয়ে দিয়ে আসি।

— কিন্তু, রিকশা…

— মামা এই নিন একশ টাকা। আপনি চলে যান। আর তুই নেমে আয়। আমার সঙ্গে বাইকে যাবি।

আবির রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে বিদায় করল। অথৈ খানিকটা বিস্মিত হলো আবিরের কান্ড দেখে। যেই আবিরকে কল করলে পাত্তা পাওয়া যেত না সেই আবির আজ যেচে অথৈকে লিফট দিতে চাইছে! ওয়াট এ্যা মিরাকেল!

আবিরকে সঙ্গে নিয়ে মার্কেটে ঘুরল। শাড়ির শো-রুমে ঢুকতেই সাদা রঙা শাড়িতে চোখ পরল অথৈর। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। শাড়িতে বাড়িতে কোনো ডিজাইন নেই তবুও যেন শাড়িটা অথৈকে টানছে । নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিতেই অথৈ শাড়িটা কিনে ফেলল। আবির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে অথৈকে বলল,

— তোর রুচি আছে মানতেই হবে। আনকমন ডিজাইনের শাড়িটা নিজের কালেকশনের মাঝে রেখে দিলি। একটা কথা রাখবি?

অথৈ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আমি এই শাড়িটার প্রাইজ পে করব। তুই মানা করিস না।

— কিন্তু.. আমার কাছে তো টাকা আছে!
তুই কেন আমার শাড়ির দাম দিবি আবির?

— তোর কাছেই আমার বাকি জীবন সমর্পণ করব। টাকা সে তো সামান্য কিছু।

আবির অথৈর মুখের দিকে কথাগুলো ভাবল।তারপর, মুচকি হেসে অথৈকে উত্তর দেয়।

— দোস্ত হিসেবে ট্রিট নে আমার কাছ থেকে। আমার চাকরি হওয়ার পর থেকেই তো খালি ট্রিট চাইতি। আজ সময় এসে গেছে তুই তোর ট্রিট বুঝে নে। আর আমিও তোর আনন্দে আনন্দিত হই।

অথৈ আর মানা করল না। আবির অথৈর শাড়ির বিল দিয়ে বের হয়ে এলো। অথৈ পেছনেই ছিল। শোরুম থেকে বের হবার সময় বেখেয়ালি হয়ে কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পরেই যাচ্ছিল। কিন্তু সময়মতো আঁকড়ে ধরায় অথৈ বেঁচে যায়। আবির দৌঁড়ে এলো। অথৈ ভয়ে ভয়ে চোখ খুলল। কারো বাহুডোরে আটকা পড়েছে! মানুষটা তাকিয়ে আছে। অথৈকে খুবই সাবধানে দাঁড় করিয়ে সর্বপ্রথম জিজ্ঞেস করল,

— আর ইউ ওকে অথৈ?

— ইয়েস আয় এম।

— তুই ঠিক আছিস অথৈ?

— আমি ঠিক আছি আবির।

আবির নামটি শুনে প্রহর ভ্রু কুঁচকে ফেলল। তারমানে অথৈর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা আবির। যে কিনা অথৈকে তার জীবন থেকে ছিনিয়ে নিতে এসেছে!প্রহরের কপালের দুপাশের শিরা ফুলে ওঠেছে। রাগ চেপে রাখার অক্লান্ত চেষ্টা চলছে। কিন্তু, রাগ চেপে রাখতে পারছে না। ঠিক তখনি প্রহরের মন পরল ওর মায়ের বলা কিছু কথা। হযরত মোহাম্মদ (স) বলেছেন যখনি ভীষণ রাগ হবে ঠিক তখনি এই দোয়া পড়তে হবে,,

“আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম।’ অর্থ : ‘আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি অভিশপ্ত শয়তান থেকে।’ (বুখারি, তিরমিজি)।

এমনসময় ভেতরে ভেতরে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টারত প্রহরকে অথৈ প্রশ্ন করল,,

— স্যার আপনি এখানে?

— শাড়ি কিনতে এসেছিলাম।

কথাটি বলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয় প্রহর। আড়চোখে আবিরকে দেখছিল বারবার। আবির অথৈকে চোখে হারাচ্ছে। আর এই দৃশ্য প্রহরের মোটেও সহ্য হচ্ছে না। রাগ কমছে বৈ আরও বেড়ে যাচ্ছে।

— বাসায় ফিরতে হবে অথৈ। চল তোকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসি।

— মি.আবির ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি অথৈকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি? কারণ, ওর বাসায় যাচ্ছিলাম আমি। যেহেতু দেখে হয়ে গেছেই তাহলে আলাদা না গিয়ে একসাথেই ফিরে যাই।

প্রহরের কথা শুনে আবির এবং অথৈ দুজনেই অবাক হলো। অথৈ মনে মনে চাইছে প্রহরের সঙ্গে যেন ওর যেতে না হয়। আর আবিরও ঠিক তেমনটাই চাইছে। ক’দিন বাদেই যার সঙ্গে বিয়ে তাকে কি করে পরপুরুষের সঙ্গে যেতে দেয়া যায়? প্রহর অথৈর দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনি অথৈর মোবাইলে কল এলো। অথৈ ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখল ওর মা কল করেছে। অথৈ এক্সকিউজ মি. বলে একপাশে গিয়ে কল রিসিভ করল।

— হ্যালো?

— হ্যালো অথৈ? তোর নাজিফা আন্টি কল করেছিল বলল প্রহর নাকি আমাদের বাসায় আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। তুই একটু তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। আর শাড়ি কেনা হয়েছে তো?

— মা শাড়ি কেনা হয়েছে। প্রহর স্যারের সঙ্গে মার্কেটে দেখা হয়ে গেলো। উনি আমাকে বলছে উনার সঙ্গে যেন আমি বাড়িতে ফিরি। এদিকে আবির তো আমার সঙ্গে আগে থেকেই ছিল। আবিরকে কিভাবে না করি? আর প্রহর স্যারকে কিভাবে মানা করি বলো তো?

— আবির তোর সঙ্গে?

— মার্কেটে আসার সময় দেখা হয়েছিল।

— আবিরকে বিদায় দিয়ে প্রহরকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আয়। আমি এবং তোর আব্বু তোর জন্য অপেক্ষা করছি।

— কিন্তু, মা আবির…

— আমি কি বলেছি শুনতে পেয়েছিস?

সাবিনা রাগান্বিত সুরে জবাব দেয়। অথৈ এবার ভয় পেয়ে ওর মা’কে আস্বস্ত করার জন্য বলল

— হুম। শুনেছি।

–তাহলে বাড়িতে ফিরে আয়।

— ঠিক আছে। আসছি।

অথৈ কথা শেষ করে আবারও ফিরে গেলো সেখানে। ফিরে এসে দেখল আবির এবং প্রহর দাঁড়িয়ে আছে দুই মুখী হয়ে। কেউ কাউকে দেখলেও না যেন! অথৈ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবিরের সামনে গিয়ে অপরাধী কন্ঠে বলল,

— দোস্ত, অন্য একদিন তোর সঙ্গে যাব। আজ স্যারের সঙ্গেই যেতে হবে।

আবিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অথৈ প্রহরের সামনে গিয়ে শান্তসুরে বলল,

— স্যার এখুনি যাবেন? নাকি আরও কেনাকাটা বাকি আছে?

অথৈর কথা শুনে প্রহর ভীষণ আনন্দিত হলো। যাক আজ অথৈ তবে তার সঙ্গেই ফিরবে।

— না এখুনি ফিরব। তুমি কিছু কিনবে?

— না।

— তাহলে চলো।

আবিরকে পেছনে ফেলে প্রহর এবং অথৈ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আবিরের তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। কারণ, সে অথৈর বাবার কাছে ওয়াদা বদ্ধ হয়েছে। যতদিন না তিনি অথৈকে নিজ থেকে বিয়ের খবর না জানাবেন ততদিন অব্দি আবির যেন অথৈকে কিছুই না জানায়। এমনকি আবিরের পরিবারের লোকেরাও যেন এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু, এখন আবিরের মনে হচ্ছে অথৈকে বিয়ের ব্যাপারে না বললে ওদের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে।

অথৈকে নিয়ে প্রথমবারের মত নিজের গাড়িতে প্রহর। জীবনে চলার পথে একজন সহযাত্রী যে কতটা আনন্দ দেয় তা আজই উপলব্ধি করতে পারল সে। ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে নিজের বউটাকে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখছে আর ভীষণ আনন্দ অনুভব করছে।

অথৈদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেমে যায়। অথৈ এবং প্রহর দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পরল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজাচ্ছে অথৈ। পেছনে প্রহর দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে দেয় সাবিনা। অথৈর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরকে দেখে সাবিনা খুশিতে আত্মহারা। ওদের দুজনকে ভেতরে আসতে বলে অতি দ্রুত রান্নাঘরে প্রবেশ করল সাবিনা। অথৈ আগে ওর পেছনে পেছনে প্রহর ভেতরে প্রবেশ করল। ড্রইংরুমে এসে অথৈ প্রহরকে বলল,

— স্যার আপনি বসুন। আমি আসছি।

— ওকে।

অথৈ অতি দ্রুত ওর ঘরে চলে এলো। গোসল করা দরকার। ওয়াশরুম গিয়ে চটজলদি গোসল শেষ করে কালো এবং লাল মিশেলের থ্রী-পিছ পরে নিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মাথায় খুব ভালো করে ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ড্রইংরুমের সামনে আসতেই দেখতে পেলো ওর আব্বুর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে প্রহর। অথৈ অবাক হলো প্রহরের আচরণ দেখে। গত দুইমাসে সে একবারও প্রহরকে হাসতে দেখেনি। কিন্তু, আজ প্রহরের হাসিমাখা মুখটাকে দেখলে কে বলবে অফিসে লোকটা একেবারে ডাকাতি ভাব নিয়ে চলে। যার এক চোখ রাঙানি দেখে স্টাফরা থরথর করে কাঁপে?

—- অথৈ? দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আয়।

— আসছি মা।

প্রহর তখন আলফাজের সঙ্গে কথা বলছিল। অথৈর নাম শুনে সামনে তাকাতেই তার দুটো হার্টবিট বোধহয় মিস হয়ে গেছে। লাল কালো মিশেলের থ্রী-পিছ পরা মেয়েটা যে তারই অথৈ প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। অথৈ যখন শাড়ি পরে থাকে তখন তাকে সুস্মিতা সেনের মতই দেখায়। কিন্তু, আজ থ্রী-পিছ পরনে দেখে বোধহয় অথৈর বয়স ষোলোতে এসে আটকা পরেছে। অথৈর মায়ায় সে তো কবেই আঁটকে গেছে। আজ বুঝি প্রেম সাগরে ডুবেডুবে জল খাওয়া ছাড়া উপায় রইল না।নিজের চোখের দৃষ্টিকে বেহায়া স্বীকৃতি দিয়ে শুকনো ঢোক গিলে আলফাজের কথায় মনোযোগ দিলো প্রহর।

তার বেশকিছু সময় পর অথৈ এবং সাবিনা ট্রে ভর্তি নাশতা এনে টি-টেবিলের ওপর রাখল। সাবিনা আলফাজের পাশে বসল। অথৈকে বলে দিচ্ছে প্রহরকে কি কি দিতে হবে? প্রহর মুচকি হেসে সাবিনাকে বলল,

— আন্টি আপনাদের স্নেহের হাত আমার মাথায় থাকুক আমি সবসময় চাই। শুধু আপনারাই চান না বলেই সম্ভব নয়। তাই না আঙ্কেল?

প্রহরের কথায় আলফাজ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। সাবিনা এই কথার মমার্থ বুঝতে পেরেছে। অথৈ কথাটি খুব স্বাভাবিক অর্থেই নিয়েছে। কারণ, দুই পরিবারের মাঝে আত্মীয়তা তার জন্মের আগে থেকেই। এসব কথা স্বাভাবিক ভাবেই একজন আত্মীয় তার আত্মীয় বলতেই পারে!

প্রহর শুধু পুডিং খেলো। সাবিনা আরও কিছু দিতে চাইলে প্রহর মানা করে দেয়। সাবিনা হাসতে হাসতে অথৈকে ডাক দিয়ে বলল,

— তোর মত প্রহরেরও কিন্তু পুডিং পছন্দ।

অথৈ আড়চোখে তাকালো প্রহরের দিকে। ওমা প্রহর দেখছি ওর দিকে তাকিয়ে আছে! লজ্জা পেয়ে নিজেই দৃষ্টি নত করে রাখল। এরমাঝেই আলফাজ অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আগামীকাল তোদের অফিস থেকে নাকি সবাই ট্যুরে যাচ্ছে? তুইও যাচ্ছিস শুনলাম?

— হ্যা আব্বু। সবাই একসাথে যাব। ঘুরব ফিরব। লাল পাহাড়ের দেশ থেকে ঘুরে আসব।

কথাগুলো বলার সময় অথৈকে ভীষণ উৎফুল্ল দেখায়। প্রহর অথৈকে এতটা আনন্দিত হতে কখনো দেখেনি। মেয়েটা নিজের চেহারা মাঝে সবসময় গাম্ভীর্য ভাব বজায় রাখে। গাম্ভীর্য চেহারার আড়ালে যে হাসোজ্জল একটি মিষ্টি মনের অধিকারী বাস করে কাউকে হয়ত টের পেতে দেয় না। টের পেলেই তো সবাই মরিয়া হয়ে উঠবে তাকে জয় করার জন্য। প্রহর গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে তার অথৈকে। আজকের ন্যায় এতটা কাছ থেকে কবে দেখেছে অথৈকে?

— রাঙামাটি যেতে পারবি তবে এক শর্তে। প্রহর তোর সঙ্গেই থাকবে এজ এ বডিগার্ড। প্রহর যেভাবে চলতে বলবে ঠিক সেভাবে চলবি। প্রহরের জন্যই তোকে নিশ্চিতভাবে রাঙামাটিতে যাওয়ার অনুমতি আমি তোকে দিচ্ছি।

— আব্বু আমি কি বাচ্চা? সবাই তো যাচ্ছে। এখন কি প্রহর স্যার সবার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলবে রাখবে নাকি?

কথাটি বলে বিরক্তিকর শ্বাস ছাড়ল। আলফাজ কিছুটা রাগ দেখিয়ে অথৈকে ধমকের সুরে বলল,

— আবিরের সঙ্গে আজ মার্কেটে গিয়েছিস আমি কিছুই বলিনি। কিন্তু, কাল রাঙামাটি যদি যেতে চাস আমার শর্ত মানতে হবে। নয়ত, তোকে রাঙামাটি যেতে হবে না।

— আব্বু?

আলফাজ মেয়ের দিকে আর ফিরে তাকালো না। দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। অথৈ নিজেও উঠে চলে যায় ঘরে। ড্রইংরুমে কেবল সাবিনা আর প্রহর রয়ে গেছে। বাপ-বেটির রাগ সমাচার দেখে ভেতরে ভেতরে হেসে খুন হচ্ছে সাবিনা। রাগের মাত্রা খুব বেশি না। কিন্তু বিপদসংকেত নয় নাম্বার চলছে । এখন কেউই তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। যেই যাবে ভস্ম হয়ে যাবে।

— আন্টি এটা অথৈর জন্য । আগামীকাল যদি অথৈ এই শাড়িটা পরে রাঙামাটিতে যায় আমি খুশি হব।

প্রহরের বাড়িয়ে দেয়া হাতের দিকে তাকিয়ে সাবিনা বলল,

— এক কাজ করো বাবা। তুমি না-হয় ওকে শাড়িটা দিয়ে যাও।

— আমি দিলে ও কখনোই নিবে না। শাড়ি পরবে পরের কথা। আজকে এতটুকু উপকার করুন আমার। চিরকৃতজ্ঞ থাকব আপনার প্রতি।

সাবিনা শাড়ির প্যাকেট নিয়ে প্রহরের মাথার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রহর মাথা নীচু করে ফেলে। সাবিনা প্রহরের মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ জোরানো গলায় বলল,

— যেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছো আমি চাই তুমি সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে পাশ করো।

প্রহর হাসল। বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিল। ঠিক তখনি অথৈ ওর রুম থেকে বের হয়ে বলল,

— স্যার আমি আপনার কথা মেনে চলব। আপনার সাথে সবসময় থাকব। কোনোপ্রকার ঝামেলায় জড়াব না। ট্রাস্ট মি?

প্রহর অথৈর কথাগুলো শোনার পর সাবিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আন্টি, আগামীকাল অথৈকে অফিস পাঠানোর দরকার নেই। আগামীকাল রাতে দেখা হবে ওর সঙ্গে আমার। আমি রাত নয়টায় এসে ওক পিক করব।

— কিন্তু, স্যার..।

— আমার নাম্বার আছে না তোমার কাছে? কোনো প্রয়োজন হলে রাতে কল করে জিজ্ঞেস করো। আমাকে আর্জেন্ট শাহবাগ যেতে হবে। আর চিন্তা করো না আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলব। আল্লাহ হাফেজ।

অথৈ এবং সাবিনাকে বিদায় জানিয়ে প্রহর রওনা হলো শাহবাগের উদ্দেশ্য। অথৈ দৌড়ে চলে গেলো ওর ঘরে। আনন্দিত হয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে প্রহরের চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখছিল। ঠিক তখনি সাবিনা এসে অথৈর চোখের সামনে একটি প্যাকেট তুলে ধরল। অথৈ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

— এটা কি?

— প্রহর এনেছে তোর জন্য। যদিও আমাকে বারণ করেছে তোকে ওর নাম না বলার জন্য। কিন্তু, তোকে মিথ্যা বলতে ইচ্ছে করছিল না। তাই সত্য জানিয়ে দিলাম।

অথৈর কাছে বিষয়টি এখন সবচেয়ে বিস্ময়কর লাগছে। প্রহর শাড়ি এনেছে অথৈর জন্য! কিন্তু ; কেন?

এদিকে সাবিনা ভয় পাচ্ছে। অথৈর যা রাগ! সত্য জানিয়ে আবার হিতে বিপরীত কিছু করে বসলেন না তো আবার?

#চলবে