মন বোঝেনা পর্ব-০৮

0
58

#মন_বোঝেনা
#Tahmina_Akhter

৮….

শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে অথৈ। লোকটার চয়েজ আছে বলতেই হয়! ছাই রঙা পাড়ের কালো রঙের জামদানী শাড়ি। ওর মা সেই কখন ওর হাতে শাড়ি দিয়ে চলে গেছে। সে হাতে শাড়ি নিয়ে ভাবছে অন্যকিছু। একজন এমপ্লয়ি হিসেবে প্রহরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া মোটেও আশা করা যায় না। কিন্তু, অথৈ পেয়েছে উপহার। কিন্তু, কেন? প্রহর কি তাকে অন্য কিছু ভাবছে? লাইক স্পেশাল!

নানান প্রশ্নে মাথায় কুটুরমুটুর করছে। জবাব না পাওয়া অব্দি নিস্তার নেই। আল্লাহ তাআ’লা মেয়েদের একটি বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন। সেই বিশেষ ক্ষমতার জের ধরেই কিন্তু একটি মেয়ে পুরুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে। একশ মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মানুষ যদি তাকিয়েও থাকে সেটাও তারা বুঝে ফেলে। কোন চোখে লালসা আর কোন চোখে ভালোবাসা সবটাই তারা অনুমান করতে পারে।

অথৈ শাড়িটা খাটের ওপর রাখল। তারপর, মোবাইল বের করে প্রহরের নাম্বারে কল করল।

প্রহর তখন শাহবাগ চত্বরে দাঁড়িয়ে ওর বন্ধু মুয়াজের সঙ্গে অফিস ট্যুরের ব্যাপারে আলাপ করছিল। মোবাইলের রিংটোনে আলাপে ব্যাঘাত ঘটালো। প্রহর এক্সকিউজ মি বলে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো স্ক্রীণে ” বউ” নামটির সঙ্গে অথৈর ছবি ভেসে উঠেছে। প্রহরের হৃদয়ে হুট করে প্রলংকারী ঝড় উঠে। যেই ঝড় প্রহরকে কেবল নিঃশেষ করতে এসেছে। ভালোবাসা নামক ঝড়ে প্রহরের কতখানি ক্ষতি হবে জানা নেই।

কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম টিস্যুর সাহায্য মুছে ফেলল। কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরল। তারপর, মৃদু কন্ঠে বলে উঠল,

— হ্যালো ; অথৈ?

— শাড়ি কেন দিয়েছেন আমায়?

অথৈর কাটকাট গলায় বলা কথাগুলো শুনে প্রহর শুকনো গলায় জবাব দেয়,

—- আন্টিকে আমি বারণ করেছিলাম তোমাকে জানাতে!

— মা আমাকে কখনোই মিথ্যা বলে না। আজও বলেনি। একজনের উপহার নিজের নামে চালিয়ে দেয়া বদ স্বভাব আমার মায়ের নেই।

— অথৈ আমার কেন জানি মনে হলো শাড়িটা তোমায় দারুন মানাবে! কোনোকিছু না ভেবেই কিনে ফেলেছি।

— অবশ্যই আপনি ভেবেই কিনেছেন। পুরুষ মানুষ একজন নারীকে শুধু শুধু শাড়ি উপহার দিবে কেন? আপনার মনের মধ্যে কোনো অসৎ ভাবনা কাজ করছে না তো আমার জন্য?

— ছিহ্ অথৈ ; তুমি আমাকে এতটা খারাপ ভাবো!

— আপনি কাজটাই করেছেন ওরকম। খারাপ তো অবশ্যই ভাবছি। তাছাড়া আপনার সাথে তো আমার এমন সম্পর্ক নেই যে উপহার পাব আপনার কাছ থেকে।

— যদি বলি আমি তোমায় পছন্দ করি। সেই পছন্দের জোড়েই তোমাকে শাড়ি উপহার দিয়েছি। তাহলে কি বলবে তুমি?

প্রহরের কথা শুনে মোবাইলের ওপাশে থাকা অথৈর কাছে বিস্ময়কর লাগছে। আর মুয়াজ প্রহরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তার বন্ধু মোবাইলে কাকে প্রপোজ করে বসল!

— তোমাকে আমার ভালোলাগে। আবার জানতে চেয়েও না কতটা ভালোলাগে? কারণ, পরিমাপ করতে পারব না তোমাকে কতটা ভালোলাগে।

—টুট…টুট..।

অথৈ কল কেটে দিলো
মোবাইলটা বুকের মাঝে চেপে ধরল। এত অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে কেন বুকটা! জীবনের চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়েও তো এত অস্থিরতা, বুকে এত কাঁপন, কিছুই ছিল না। প্রহর স্যারের কাছে কেনই তাকে ভালো লাগবে? সে তো স্যারের অপমান করতে পিছপা হয় না। পারলে পুরো ঢাকাবাসীকে শুনিয়ে শুনিয়ে স্যারের বদনাম করত। সেই প্রহর স্যার তাকে কি বলল আজ?

” তোমাকে আমার ভালোলাগে ” আর কিছুই ভাবতে পারছি না অথৈ। মোবাইলটা ড্রেসিংটেবিলের ওপরে রেখেই অথৈ কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। শীত শীত লাগছে। কারো মুখ থেকে ‘তোমাকে আমার ভালো লাগে” বাক্য শুনে যে গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে আজই টের পেলো অথৈ। ভীষণ ভয় আর লজ্জা জাপটে ধরেছে তাকে।

প্রহর মোবাইলের স্ক্রীণের ওপর তাকিয়ে আছে। মুয়াজ এসে প্রহরের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

— কি রে দোস্ত ? তলে তলে এতকিছু! মোবাইলে প্রপোজ অব্দি করে ফেলেছিস!

মুয়াজের কথায় প্রহরের মুখে অমাবস্যার আধাঁর নেমে এসেছে। চলন্ত যানবাহনের ওপর দৃষ্টি রেখে বলল,

— নিজের বৌকে প্রপোজ করেছি। জানি না বৌ আদৌও আমায় কখনো মেনে নিবে কিনা। সময় তো খুব বেশি নেই।

— আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে খুলে বল তো কি হয়েছে?

মুয়াজকে সব ঘটনা খুলে বলল প্রহর। অথৈর সঙ্গে ওর বিয়ে, অথৈর ওর অফিসে চাকরি করা, একসময় যে নিজের বাল্যাকালের বৌকে মানতে পারবে না বলে মায়ের সঙ্গে বনিবনা হত না সেই বাল্যকালের বৌয়ের জন্য এখন মায়ের কাছে কত মিনতি করতে হয়, অথৈর বাবার কাছ থেকে সাতদিনের সময় নেয়া সবকিছুই খুলে বলল। সবটা শোনার পর মুয়াজ বলল,

— তুই ভাই এখন তীরে এসে তরি ডুবে যায় অবস্থায় আছিস। বাল্যকালের বৌকে যদি আগেই মেনে নিতি তাহলে কি আজ এই দিন দেখতে হতো? এখন ডুবে ডুবে জল খা। তোর বৌ আরেকজন এসে নিয়ে যাবে আর তো এসব দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

— আমার বৌ আমারই থাকবে।

—- হ ভাই তোর বৌ তোরই থাকব। সিনেমার ডায়লগ পাইছিস! মেয়ে তোরে ভুলেও চাইব না কারণ তার পয়েন্ট অফ ভিউ অনুযায়ী তুই নেগেটিভ ক্যারেক্টারের অন্তর্ভুক্ত। ওর বাবা তোকে পছন্দ করে না কারণ তার মেয়ে তোরে পছন্দ করে না। এখন উপায় হলো তোর বৌরে যদি তুই পটাইতে পারিস তাহলে সব প্রব্লেম সল্ভ। আচ্ছা তুই যে বললি,ওরে তোর ভালো লাগে। সে প্রতিউত্তরে কি বলল,

— নাথিং। কল কেটে দিয়েছে।

— কিছুই বলে নাই!

— না। তুই এসব ভাবিস না। আমি জানি আমার বৌকে কি করে আমার কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে? তুই বাসায় যা আগামীকাল সময় মতো চলে আসিস।

কথাটি বলে আর দেরি করল না প্রহর। গাড়ি নিয়ে রওনা হলো ওর বাড়ির পথে।

******************

সারাদিনের অফিসের খাটুনি শেষ করে প্রহর বিকেলের মধ্যে বাড়িতে ফিরে এলো। ট্যুরের জন্য আজ তাড়াডাড়ি অফিস আওয়ার শেষ হয়েছে। বাসায় ফিরে আগে শাওয়ার নিলো প্রহর। তারপর, খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে নিলো প্রায় দেড় ঘন্টার মত। ঘুম থেকে উঠতেই ওর মাকে জানালো কফি পাঠাতে। নাজিফা ছেলের জন্য মগে করে কফি নিয়ে এলেন। এরই ফাঁকে প্রহর ওর ব্যাগ গুছিয়ে ফেলল। নাজিফা রুমের দরজায় নক করল। প্রহর রাগ দেখিয়ে বলল,

— আম্মি আমার ঘরে, অর্থাৎ আপনার ছেলের ঘরে এসেছেন। এতে নক করার কি আছে?

— নক করা অবশ্যই জরুরি। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের মাঝে এই স্বভাবটা আয়ত্ত করা উচিত। কারো রুমে ঢুকার আগে অনুমতি নেয়া জরুরি। তাছাড়া পবিত্র কুরআন মাজিদে কিন্তু আমাদের কিছু রুলস ফলো করতে বলা হয়েছে। যা স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা আমাদের জন্য সেট করে দিয়েছেন।

নাজিফা কথাগুলো বলতে বলতে ছেলের সামনে কফির মগ বাড়িয়ে দেয়। প্রহর মুচকি হেসে কফির মগ হাতে নিয়ে ওর মা’কে বলল,

— কোন সূরাতে বলা আছে আম্মি?

নাজিফা নিজের হাতের কফির মগে চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করল ,

—কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে আল-কোরআনে সূরা আন নূর আয়াত : ২৭ নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা কখনো নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে অনুমতি ছাড়া এবং সালাম না করে প্রবেশ কর না। এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, আশা করা যায় তোমরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। এখন তুই বল আমার কি উচিত নয় আমার রবের আদেশ পালন করার?

— অবশ্যই আম্মি। এখন থেকে আমিও কাজটি করব।

নাজিফা ছেলের কথায় খুশি হয়ে গেছেন। প্রহর নিজের কফি শেষ করে ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আম্মি, আপনার পুত্রবধুকে নিয়ে আজ প্রথমবারের মত সফরে বের হচ্ছি। দোয়া করবেন যেন এই সফর থেকেই যেন আমাদের জীবনের নতুন সূচনা ঘটে।

— ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ চাইলে তোর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে৷ ক’টায় বের হবি?

— কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হয়ে যাব। অথৈকে ওদের বাসার সামনে থেকে পিক করব দ্যান অফিসে যাব। গাড়ি অফিসের পার্কিং এরিয়ায় রেখে যাব। কালাম ভাইকে বলে দিও গাড়ি বাড়িতে নিয়ে আসতে।

— আচ্ছা বলব। তাহলে তুই তৈরি হয়ে নীচে আয়।

নাজিফা চলে যায়। প্রহর কালো টিশার্টের ওপরে কালো জ্যাকেট পরে নিলো। নীল জিন্স, কড়া পারফিউম মেখে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হ’য়ে এলো। নীচে ওর বাবা এবং আম্মির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো অথৈদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

অথৈদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে অথৈর নাম্বারে কল করল প্রহর। অথৈ কল রিসিভ করছে না। বেশ কয়েকবার ট্রাই করার পরও যখন অথৈ কল রিসিভ করল না তখন প্রহর বাধ্য হয়ে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

অথৈ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারবার ঘুরে ঘুরে দেখছিল। টিয়া রঙের থ্রী-পিছ, চোখে কাজল ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, আর চুলগুলো খোঁপায় আঁটকে রাখল। ভালোই দেখাচ্ছে তাকে। এমন সময় ওর মা এলো হতদন্ত হয়ে।

— তোর হলো? প্রহর এসেছে।

প্রহর নামটি শুনে আবারও অথৈর বুক কাঁপছে। অথচ, গতকাল বিকেল অব্দি মানুষটা ছিল অথৈর কাছে আট দশটা মানুষের মতই। কিন্তু, গতকাল রাতের পর থেকেই অথৈর মনে হচ্ছে কোথাও কিছুই ঠিক নেই।

— কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা জলদি। দেরি হয়ে গেলে বাস ধরতে পারবি না।

অথৈ এবার নিজের অনুভূতিকে সামলে ফেলল। এমন কিছুই বলে ফেলেনি যে এতটা কুঁকড়ে যেতে হবে। মোবাইল ব্যাগে রেখে বাইরে এলো। অথৈর আব্বু এবং মা দুজনেই অথৈকে বাইরে পর্যন্ত এলো বিদায় করার জন্য।

গেটের কাছেই প্রহর দাঁড়িয়ে ছিল। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোয়ে অথৈকে দেখে প্রহরের অশান্ত হৃদয় শান্ত হলো। আজ টিয়াপাখি সেজে মাথায় আগুন ধরানো সাজে এলো তার বৌ। আল্লাহ জানে আজ কজনের কুদৃষ্টিতে পরবে তার প্রিয়া। অথৈ যখন প্রহরের কাছাকাছি এলো তখন ভীষণ শান্ত দেখালো। অন্যান্য দিনের তুলনায় খানিকটা ব্যতিক্রমী অথৈকে আজ আবিস্কার করল প্রহর।

— তোমাকে বিশ্বাস করে অথৈকে এত দূরে পাঠানোর সাহস পেয়েছি।

—দুশ্চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত থাকা অব্দি আমি অথৈকে রক্ষা করব।

আলফাজ মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন প্রহরের কথায়। সাবিনা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল,

— প্রহরকে মোটেও জ্বালাবি না। নিজের দিকে খেয়াল রাখবি। আমার সঙ্গে প্রতি ঘন্টায় এক মিনিটের জন্যে হলেও কথা বলবি। জানিসই তো মা তোকে ছাড়া একমুহূর্তের জন্যেও থাকতে পারি না।

কথাগুলো বলতে বলতেই ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেললেন সাবিনা। অথৈর ওর মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,

— আমি কি শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছি যে এভাবে কাঁদছো ? আরে বাবা মাত্র দুদিনের ব্যাপারই তো। তুমি চিন্তা করবে না। আমি জলদি ফিরে আসব তোমাদের মাঝে। আল্লাহ হাফেজ।

অথৈ ওর বাবা-মাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। প্রহর আলফাজ এবং সাবিনাকে সালাম দিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ির পেছনের সীটে বসে থাকা অথৈকে বলল,

— সামনে আমি ; পেছনে তুমি। গাড়ির ব্যালেন্স ঠিক থাকবে না। একটু স্পীডে চালাতে গেলেই দেখবা গাড়ি উল্টে গেছে। সামনে এসে বসো। আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না।

অথৈ ভ্রু কুঁচকে বলল,

— আপনি কি ইজিবাইক চালাচ্ছেন যে ব্যালেন্স রাখতে পারবেন না? সোজাসাপটা বললেই হয় সামনে এসে বসতে।

কথাগুলো শেষ করে অথৈ গাড়ি থেকে নেমে সামনের সীটে এসে বসল। প্রহর অথৈর মুখের দিকে এ হাসতে হাসতে বলল,

— আসলে আমি চেক করলাম আমি কি অথৈকে নিয়ে যাচ্ছি নাকি অথৈর রুপে থাকা বহুরূপীকে নিয়ে?

— মানে?

— যেভাবে মেপে কথা বলছিলে আমি তো ভেবেছি এটা অথৈ হতেই পারি না। একটু পরীক্ষা করেই দেখি। পরীক্ষা করলাম। এখন দেখছি অরিজিনাল অথৈকে নিয়ে রাঙামাটির উদ্দেশ্য রওনা হয়েছি।

প্রহরের কথা শুনে অথৈর রেগে যাবার কথা। কিন্তু অথৈ রাগ করল না। উল্টো মুখ ঘুরিয়ে জানালায় দৃষ্টি রেখে চলন্ত যানবাহনের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ কেন যেন প্রহরের সঙ্গে রেগে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

অফিসের সামনে চলে এসে দেখলো বাস এসেছে মোট পাঁচটা। সবাই যার যার মত বাসে বসে আছে। একটি বাস কেবল বড়ো বড়ো কর্মকর্তাদের জন্য। সেই বাসেই প্রহর যাবে আর এমপ্লয়িদের জন্য বরাদ্দকৃত চারটি বাসের একটিতে করে অথৈ যাবে।

প্রহর অথৈকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বলেছিল ওর জন্য অপেক্ষা করতে। গাড়িটা অফিসের ভেতরে পার্ক করে চলে আসবে সে। প্রহর অফিসের ভেতরে চলে যায় গাড়ি নিয়ে। আর অথৈ অপেক্ষা করছে প্রহরের জন্য।

এমনসময় তন্বি এসে অথৈর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

— বাহ্! আজ তো দারুণ লাগছে তোমায়! শাড়িতে যত সুন্দর দেখায় থ্রী-পিছ পরনে তোমায় ততটা পিচ্চি দেখায়।

— কেউ সরাসরি আমার প্রশ্ংসা করলে আমি ভীষণ লজ্জ্বা পাই!

— থাক লজ্জা পেতে হবে না। শুনো একটা কথা বলি।

— বলুন?

— তুমি আমাদের সঙ্গে যাচ্ছো না?

— কেন? হটাৎ করে এই কথা। এর মানে কি? কারণটা কি আমাকে বলুন ?

অথৈ উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করছে তন্বীকে। তন্বী জবাব দেবার আগে কেউ এসে অথৈর হাত থেকে ব্যাগ একহাতে নিয়ে অন্য হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

— কারণ, তুমি আমার সঙ্গে আমার পাশে বসে যাচ্ছো.

— মানে?

— রাঙামাটি থেকে ঢাকায় ফিরে আসা আগ পর্যন্ত তুমি আমার পাশে থাকবে। কি বলেছিলে মনে আছে? আমি যা বলব তাই করবে। তোমার বাবাকে তো এই কথাগুলো বলেই কনভিন্স করেছিলে?

অথৈ দাঁড়িয়ে পরলে। প্রহর অথৈর মুখোমুখি হয়ে জবাব দেয়। অথৈ প্রহরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আমি সামান্য একজন এমপ্লয়ি হয়ে অফিসের বড়ো বড়ো কর্মকর্তাদের সঙ্গে যাই কি করে?

— সামান্য কেউ নও তুমি? তোমাকে আমি চাই? তোমার এরচেয়ে বড়ো পরিচয় কি দিতে হবে তাদের কাছে?

প্রহরের শক্ত গলায় বলা কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান করে রইল অথৈ। লোকটার আবেগ প্রবণতা বেড়েছে তাই অথৈকে এতটা প্রাধাণ্য দিচ্ছে। আবেগ কমে গেলেই বিবেক কাজ করবে। প্রহরের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। প্রহর প্রতিবাদ করল না। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বাসের দিকে। বাসে উঠে নিজেদের সীটে বসে পরল। অথৈ জানালার পাশের সীটে বসল। প্রহর ওর পাশে বসল না। বাস থেকে নেমে কোথাও চলে গেল। অথৈ মেকি হাসি দিয়ে আনমনে বলল,

— বড়ো লোকেদের ভালোবাসা সবসময় লোকের আড়ালে উপচে পড়ে। তাদের সমকক্ষ নয় এমন মানুষদের ভালোবেসে যায় আড়ালে-আবডালে। প্রহরও তার ব্যতিক্রম নয়। আড়ালে তাকে কতটা চোখে হারালো আজ। আর এখন তার সে পাশেই নেই। তাকে একা বসিয়ে চলে গেছে কোথাও। হয়ত, তার প্রিয়তাদের কাছে গিয়েছে, যারা প্রহর বলতেই জ্ঞান হারায়।

#চলবে