মন বোঝেনা পর্ব-০৯

0
54

#মন_বোঝেনা
#Tahmina_Akhter

৯…

— পানি, বিস্কুট, চিপস এগুলো নিয়ে এলাম। যদিও রাতে আমার খিদে পায় না তবুও কিনে রাখলাম। অথৈ আর কিছু কেনা লাগবে তোমার জন্য ?

জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল অথৈ। প্রহরের কথা শুনে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো প্রহর নানান রকমের খাবার নিয়ে এসেছে। খাবারগুলো নিচে রেখে বেশ আরাম করে ওর পাশের সীটে গা এলিয়ে বসল। অথৈ প্রহরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

— আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?

— পানি আর খাবার কিনতে গিয়েছিলাম।
এইমাত্রই তো বললাম তোমাকে।

প্রহর খানিকটা অবাক হলো অথৈর কথায়। অথৈ নিজেই নিজের কাছে লজ্জিতবোধ করছে। কি না কি ভেবে এতক্ষণ লোকটাকে মন্দকথা বলছিল। অথৈ লজ্জা আর সংকোচ উভয়ের রোষানলের স্বীকার হয়ে প্রহরের সঙ্গে স্বাভাবিক হতে পারছে না। জানালার দিকে তাকিয়ে রইল।

ধীরে ধীরে বাসের প্রত্যেকটা সীট মানুষের পরিপূর্ণতা পেলো। ঠিক দশটা বাজতেই অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা সব কটা বাস নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাস চলছে। প্রহর তাকিয়ে আছে অথৈর দিকে। অথৈ দৃষ্টি জানালাতে। ঢাকার শহর তখন নিজেকে লাল নীল হলদে আলো গায়ে মাখিয়ে রেখেছে৷ সেই রঙিন আলোতে প্রহর দেখছে তার অথৈকে। অফিসের সবচেয়ে চটপটে স্বভাবের দূরন্ত বালিকা অথৈ এখন কতটা শান্ত হয়ে বসে আছে! কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে চাইবে না।

অথৈর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে প্রহর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। অথৈর ইচ্ছে হলো চট করে প্রহরের দিকে তাকিয়ে ওকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিতে। কিন্তু, নিজেকে আজ প্রহরের সামনে ধরা দিতে ইচ্ছা করছে না। প্রহরের চোখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। প্রহরের চোখের দৃষ্টি মোটেও স্বাভাবিক নয়। কি যেন খুঁজে বেড়ায় তার মুখের দিকে তাকিয়ে!

— অথৈ?

প্রহরের ডাক শুনে অথৈ চোখ বন্ধ করে ফেলল। পরমূহুর্তে দ্বিতীয় ডাক পরল। এবার নিজেকে সামলে অথৈ প্রহরের দিকে তাকালো। প্রহর অথৈকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। অথৈ কি কাঁদছে? কিন্তু ; কেন? তড়িঘড়ি করে অথৈকে আদুরে গলায় প্রহর জিজ্ঞেস করল,

— কি হয়েছে অথৈ? কাঁদছো কেন?

আচমকা প্রহরের প্রশ্ন শুনে অথৈ স্থীর হলো। ডানহাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করল। ভেজা চোখ। কাঁদছিল কখন?

— কি হলো বলছো না কেন?

— চোখে কি যেন পরেছে! জানালা বন্ধ করে দিন ময়লা ঢুকবে না আর চোখে।

কথাটি বলেই প্রহরের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলল। প্রহর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো জানালা বন্ধ। এসি বাসে কি আর জানালা খোলা থাকে? অথচ, অথৈ অকপটে স্বীকারও করল যে জানালা খোলা ছিল তাই চোখে ময়লা ঢুকেছে। ব্যাপারটা আর ঘাটলো না প্রহর । অথৈকে নিজের মত করে ছেড়ে দিলো।

রাত একটা পয়তাল্লিশ মিনিট। বাস থেমেছে রেস্তোরাঁর সামনে। বাস থেমে গেছে। বাস থামার তীব্র ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম ভাঙল অথৈর। নিজেকে আবিষ্কার করল একটি চাদরের আড়ালে। পাশের সীটে তাকাতেই দেখতে পেলো প্রহরের মুখখানা। কি মনে করে প্রহরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। রেস্তোরাঁর বাতিগুলোর আলো এসে প্রহরের মুখের ওপর পরেছে। সেই আলোর সাহায্য অথৈ আবিষ্কার করল। প্রহর একজন সুদর্শন যুবক। যাকে এক দেখায় যে কোনো মেয়ে পছন্দ করবে। গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, জোড়া ভ্রু-যুগলের নীচে ঘন আঁখি পল্লব।

হুট করেই অথৈর নিজের কান্ডে ভীষণ লজ্জা পেয়ে দূরে সরে বসলো। যদিও দূরত্ব ছিল কেবল পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি।

— অথৈ?

— জি স্যার।

— প্রহর স্যারকে ডেকে তুলো। বিরতি সময় কিন্তু খুব বেশি নেই।

ইশতিয়াক নেমে যায়। অথৈ ধীরে ধীরে প্রহরকে ডাক দিলো। প্রহর অথৈর ডাক শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠল। আশেপাশে তাকাতেই যখন বুঝতে পারল বাসে কেউ নেই। তখন অথৈকে জিজ্ঞেস করল,

— সবাই কোথায় গিয়েছে?

— বাস বিরতি দিয়েছে। আপনি কি বাইরে যাবেন? আমি এখুনি বের হবো। বসে থাকতে থাকতে পা ধরে গেছে।

— মাত্র তিনঘন্টায় বলছো পা ধরে গেছে! এখনও অনেক পথ বাকি আছে।

প্রহর মুচকি হেসে সীট থেকে উঠে দাঁড়ালো৷ খেয়ার মুখ থমথম করছে। প্রহর যে তাকে খোঁচা দিয়ে কথাটি বলেছে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু, এখন ঝগড়া করার সময় নয়। অথৈ মুখ কালো করেই প্রহরের পেছনে পেছনে বাস থেকে নেমে এলো। রেস্তোরাঁর ভেতরে প্রবেশ করে প্রহর অথৈকে নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো পুরুষদের ওয়াশরুমের দিকে। অথৈ খুব দ্রুত নিজের কাজ শেষ করে হাত-মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। দরজার কাছে এসে প্রহরকে দেখতে পেলো অথৈ। অথৈকে দেখে প্রহর বলল,

— সবাই খিচুড়ি এবং মাংস ভুনা খাচ্ছে। তুমি কি খাবে?

— এত হেভি খাবার খেতে পারব না। আপনি বরং দেখুন না রুটি বা পরোটা আছে কিনা?

— এত রাতে পাব কিনা সন্দেহ আছে। আচ্ছা দেখি..

প্রহর চলে গেছে। অথৈ বসে রইলো আগের জায়গায়। পাঁচ মিনিট অতিক্রম হবার আগেই প্রহর। প্রহরের পেছনে একজন ওয়েটার। হাতে খাবার প্লেট। প্রহর অথৈর মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসল। ওয়েটার সাদা রুটি, গরুর মাংস ভুনা দিয়ে চলে গেছে। দুজন বেশ মজা করেই খাবার খেয়ে নিলো। সবশেষে দুটো কফির অর্ডার করল প্রহর। অথৈ ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল। ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেছে। অথৈ কথা বলার ফাঁকে কফির মগে চুমুক দিচ্ছিল আবার টেবিলে মগ রেখে দিচ্ছিল। প্রহরের মনে নিষিদ্ধ লোভ জেগে উঠল। অথৈর অধর ছুঁয়ে যাওয়া মগ থেকে একটু হলেও কফি খেতে হবে আজ। একটা মানুষ এত নিখুঁত ভাবে ঠোঁট গোল করে ফুঁ দিয়ে গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছে। আহ্, তেতো কফিও বুঝি আজ মিষ্টতা খুঁজে পাচ্ছে। সুযোগ বুঝে প্রহর অথৈর কফি মগের সঙ্গে নিজের কফির মগ এক্সচেঞ্জ করল। তারপর, ভীষণ আয়েশ করে কফির মগে চুমুক দিলো যেখানটায় অথৈর লিপস্টিকের দাগ লেগে আছে। বোকা অথৈ টেরও পেলো না।

যাত্রাবিরতি শেষ হলো। প্রহর – অথৈ একসাথে বাসে উঠল। নিজেদের সীটে বসল। অথৈকে এবার প্রাণবন্ত মনে হলো। প্রহর সীটে বসল না। ততক্ষণে বাস চলতে শুরু করেছে। প্রহর বাসের মাঝমাঝি অবস্থানে দাঁড়িয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— হ্যালো এভরিওয়ান? আমরা সবাই কি ট্যুরে যাচ্ছি?

প্রহরের প্রশ্ন শুনে সবাই ভারি অবাক হয়ে জবাব দিলো।

— জি, স্যার ; আমরা সবাই ট্যুরে যাচ্ছি।

— তাহলে এত চুপচাপ কেন আপনারা? কিছুটা হুই হুল্লোড় না হলে ট্যুরের মজা আছে নাকি? মি. ইমতিয়াজ আহমেদ?

— জি স্যার?

—বিনোদনের জন্য কি করা যায় বলুন তো?

ইমতিয়াজ আহমেদ ভয় পাচ্ছে প্রহরের কথা শুনে। কারণ, অফিসের প্রহর মির্জা আর আজ বাসের মধ্যে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহর মির্জার মাঝে বিস্তর ফারাক।

— স্যার? আপনি একটা গান গেয়ে শোনান। আপনার বাবা প্রায়ই বলে আপনি নাকি ছোটবেলায় গান গেয়ে পুরুষ্কার অব্দি পেয়েছেন।

ইমতিয়াজের কথায় প্রহর বেশ মিষ্টি গলায় জবাব দিলো,

— তখন বুঝতাম না গান যে অন্তরের কতটা ক্ষতি করে? আমার ধর্মে আমাকে গান শুনতে বারণ করেছে। আমি শুনব না অথবা গাইব না। কারণ, আমার গান শুনে বাসে উপস্থিত অনেক নারীর মনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু উদয় হতে পারে। আমি চাই না। আমার গান, সুর, কথা কেবল স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ। আমি গাইব সে মুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে থাকবে। সে গাইবে আমি শুনব ।

প্রহর কথা শেষ হবার পর পুরো বাসের সবাই করতালি দেয়। অথৈ মুগ্ধ হয়ে শ্রবণ করেছিল প্রহরের প্রত্যেকটি শব্দ। কাঠখোট্টা মানুষটা আড়ালে যে কতটা অমায়িক মনের মানুষ আজ তার সঙ্গ না দিলে বুঝতেই পারত না।

বেশ কিছুসময় আড্ডা চলল। তারপর, প্রহর সবাইকে বলল কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতে। রাঙামাটি পৌঁছানোর পর আর বিশ্রাম নেয়ার সময় পাওয়া যাবে না। রাত জাগা চোখ দিয়ে অন্তত প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা অসম্ভব প্রায়।

প্রহর সীটে এসে বসল। অথৈ প্রহরের দিকে তাকিয়ে আছে। অথৈকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রহর জিজ্ঞেস করল,

— কিছু বলবে?

— আপনি আজকের ন্যায় সবসময় এভাবে চলবেন? জানেন আপনাকে আজ কেউ ভয় পাচ্ছে না। সবাই আপনার সঙ্গ কতটা সাদরে গ্রহণ করছে।

— তুমি কি চাও?

প্রহর অথৈর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো। অথৈ দৃষ্টি ফেরালো না। প্রহরের চোখে চোখ রেখে জবাব দিলো,

— আমিও চাই আজকের প্রহরকে যেন সবসময় দেখতে পাই। যাকে দেখলে ভয় পাব না। যার সঙ্গে মিষ্টি হেসে দুটো কথা বলতে যেন সংকোচ বোধ না হয়। আমি সেই প্রহরকে চাই।

অথৈর কথা শেষ হয়েছে। প্রহর অথৈর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

— সামনে আমার জীবনের চ্যালেন্জিং মূহুর্ত আসছে অথৈ। আমি জানি না আমি কতটা সফল হব? যদি সফল হতে পারি তাহলে আমার চেয়ে সুখী বোধহয় আর কেউ হবে না এই পৃথিবীতে। চ্যালেন্জ জিতে গেলেই দেখবে আমি সম্পূর্ণ বদলে গেছি।

অথৈ নীরব শ্রোতা হিসেবে প্রহরের সব কথা শুনছে। ধীরে ধীরে তাদের কথার প্রসঙ্গ বদলায়। অনেক কথা হয়। কথার ফাঁকে অথৈ ঘুমিয়ে যায়। প্রহর মুচকি হেসে তাকিয়ে রইল অথৈর পানে। অথৈ প্রহরকে বুঝতে চাইছে, তাকে সঙ্গ দিচ্ছে। তাদের সম্পর্কের উন্নতির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে আজ। সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যেদিন অথৈ প্রহরকে চোখে হারাবে।

দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
বাস চট্টগ্রাম শহরকে অতিক্রম করে রাঙামাটির পথে রওনা হয়েছে। অথৈ জানালা দিয়ে দেখছে
রাঙ্গামাটি জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক।মনে মনে কেবল আল্লাহ তাআ’লার শুকরিয়া আদায় করছে। পাশে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে প্রহর অথৈর কাঁধে মাথা রেখে। অথৈ প্রহরের থেকে খানিকটা খাটো । বেচারার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে কাঁধে মাথা রাখতে। তবুও ঘুমের মাঝে কতটা এডজাস্ট করে নিয়েছে নিজেকে!

অথৈ জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো ধীরে ধীরে পাহাড়ের দেশে তারা প্রবেশ করছে। অথৈ প্রহরকে ডেকে তুলল। প্রহর ঘুম ঘুম চোখে অথৈর দিকে তাকিয়ে আছে। অথৈ আঙুল উঁচু করে জানালার দিকে তাকাতে বলল প্রহরকে। প্রহরজ জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো পাহাড় দেখা যাচ্ছে। অথৈর মুখের দিকে তাকাতেই প্রহর আবিষ্কার করল অন্য এক অথৈকে। যে কিনা আজকের পর থেকে প্রহরের কাছে কেবল সদা হাসোজ্জল একটি মেয়ে হিসেবে পরিচিত। কতটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে পাহাড়কে!

একঘন্টার মধ্যে রাঙামাটি এসে পৌঁছালো সবাই। বাস থেকে নেমে সবাই যার যার ইচ্ছেমত দল বানিয়ে ভীড়ের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। অথৈ এবং প্রহর কেবল একা রয়ে গেছে।

অথৈ প্রহরকে বলল,

— স্যার আমরা এখন কি করব? সবাই তো যার যার ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াবে?

অথৈর কথায় মন খারাপের সুর ভেসে এলো। প্রহরের মনে হলো এ যেন তারই মন খারাপের সুর। কি মনে করেই প্রহর এগিয়ে এসে অথৈর হাত শক্ত করে ধরে বলল,

— আজ আমি তোমার গাইড। আশেপাশের কিছু এলাকা থেকে তোমাকে ঘুরিয়ে আনব। বিখ্যাত হোটেলে নিয়ে যাব। এবং রাঙামাটি সম্পর্কে কিছু গুরত্বপূর্ণ তথ্য বলব।

অথৈ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রহরের পানে। গতকাল রাত থেকে প্রহরকে নতুন করে চিনছে। যতটুকু প্রহরকে জানতে পেরেছে ততটুকু পর্যাপ্ত নয়। আরও জানতে হবে প্রহরকে।

প্রহর অথৈকে নিয়ে সবর্প্রথম একটি রেস্তোরাঁয় গেলো। ফ্রেশ হয়ে একটি টেবিলে বসল। পাশে অথৈ। খাবাড এলো আতপ চালের ভাত, লইট্টা শুটকি ভুনা। রুপচাদা মাছ ভাজা। খেতে খেতে প্রহর অথৈকে রাঙামাটি সম্পর্কে অনেককিছু বলছে,

রাঙ্গামাটি জেলার মোট আয়তন ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার। এটি আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩০৮ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে বান্দরবান জেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্য, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা ও খাগড়াছড়ি জেলা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জেলা, যার সাথে ভারত ও মিয়ানমার দুটি দেশেরই আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলার প্রধান নদী কর্ণফুলী। এ নদী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাঙ্গামাটির উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ঠেগা নদীর মোহনা হয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলী নদীর উপনদীগুলো হল কাচালং, মাইনী, চেঙ্গি, ঠেগা, সলক, রাইংখ্যং। এছাড়া এ জেলায় রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ। এ উপনদীগুলো বর্ষাকালে যথেষ্ট খরস্রোতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতাসহ পানির পরিমাণ প্রায় থাকে না।

রাঙামাটি জেলার সবোর্চ্চ গিরিশৃঙ্গ
থাং নাং (উচ্চতা- ২৪০৯ ফুট বা ৭৩৪.২৬ মিটার) বরকল উপজেলায় অবস্থিত।

এই পর্যায়ে এসে প্রহরকে থামিয়ে দেয় অথৈ। ষোড়শী কিশোরীর ন্যায় বায়না ধরল থাং নাং গিরিশৃঙ্গে যাবে। প্রহর বলল,

— আবার যখন আসব তখন তোমাকে নিয়ে থাং নাং গিরিশৃঙ্গে ঘুরতে যাব।

— আমি আপনার সঙ্গে রাঙামাটি আসব তার গ্যারান্টি কি? এমনও তো হতে পারে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আমার বর আমাকে হাতে পায়ে বেরিয়ে পরিয়ে ঘরকুনো বানিয়ে রেখে দিলো।

অথৈর কথা শুনে প্রহর স্তব্ধ হলো। বলার মত কিছুই নেই। অথৈ এত বোকা কেন? প্রহরের চোখের ভাষা কি এতই কঠিন? এই চোখের দিকে তাকালেই তো বুঝতে পারার কথা। কতটা চায় সে অথৈকে? আরে মেয়ে তোমাকে নিয়েই কেন রাঙামাটি ঘুরতে আসব তার মানেও কি বুঝো না?

প্রহরর ইচ্ছে করেই নিজের কপালে দুটো থাপ্পড় দিলো। আর অথৈ বোকার মত তাকিয়ে দেখলো প্রহরের কান্ডকারখানা।

#চলবে