মন বোঝেনা পর্ব-১০+১১

0
67

#মন_বোঝেনা
#Tahmina_Akhter

১০..

— তোমার সঙ্গে কথা বলে এখন সময় নষ্ট করার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। জলদি খেয়ে নাও। বের হব।

অথৈ প্রহরের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। ভেবেছিল বেচারা কেন তার কথা শুনে নিজের কপালে থাপ্পড় দিলো? অথৈ রেগে আছে! রাগের তাপ এখনও প্রহর অব্দি পৌঁছায়নি। দেবীর আদলে গড়া সুণিপণ মুখটায় রাগের আভাস ফুটে ওঠে অথৈর। প্রহর আড়চোখে তাকিয়ে তার বউটার রেগে যাওয়া মুখটাকে দেখছিল। দেখতে অবশ্য খারাপ লাগছে না। বরং আরও চমৎকার দেখাচ্ছে।

কোনোমতে খাবার শেষ করল অথৈ। প্রহর খাবারের বিল পরিশোধ করে অথৈকে নিয়ে বেরিয়ে পরল।

প্রহর এবং অথৈ এখন আছে তবলছড়িতে। প্রহর একটি সিএনজি ডেকে ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলল। ভাড়ার ব্যপার মিটিয়ে অথৈকে বলল সিএনজিতে উঠতে। অথৈ প্রহরের কথা মত সিএনজিতে উঠে বসল। প্রহর অথৈর পাশে বসতেই সিএনজি চলতে শুরু করল।

— আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?

অথৈ প্রহরকে জিজ্ঞেস করল। প্রহর মুচকি হেসে বলল,

—ঝুলন্ত ব্রীজের নাম শুনেছো না? ওখানেই যাচ্ছি।

— আপনি এর আগেও রাঙামাটি এসেছেন তাই না?

— হুম। মোট চারবার এলাম।

অথৈ এবার প্রকৃতির মায়ায় ডুব দিলো। কথা বলে সময় নষ্ট করা যাবে না। প্রতিটা মূহুর্তকে উপভোগ করতে চায়। প্রহর মাঝে মাঝেই অথৈর দিকে তাকাচ্ছে। গেলো তিনবার বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিল। এবার এসেছে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে। গত তিনবার এতটা আনন্দ অনুভব হয়নি এবার যতটা অনুভব করছে। রাঙামাটি শহরকে যেন নতুনই মনে হচ্ছে। হয়ত প্রেয়সী সঙ্গ দিয়েছে বলে।

— কাপ্তাই লেক কিংবা ঝুলন্ত ব্রীজ সম্পর্কে কিছু বলুন?

— বেশি সময় লাগবে না পৌঁছেতে। সিএনজি থেকে নেমে নাহয় বলি?

অথৈ প্রহরের কথায় মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বোঝালো। মিনিট দশেকর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে পৌঁছে যায় প্রহর এবং অথৈ। প্রহর ভাড়া মিটিয়ে দিলো। অথৈ চারদিকে তাকিয়ে দেখছে। কত লোকের সমাগম!

একটি হাত অথৈর হাতকে মুঠোয় বন্দি করল। অথৈ তাকিয়ে দেখল প্রহর ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অথৈ যখন প্রহরের দিকে তাকালো। ঠিক তখনি প্রহর অথৈকে বলল,

— যদি হারিয়ে যাও। তাই হাত ধরেছি।

— আমি কি বাচ্চা?

— না ; তুমি বাচ্চা হতে যাবে কেন? বাচ্চা তো আমি। আমার হাত ধরে রাখো নয়ত আমি এই ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে যাব। আমাকে কিছু দুষ্ট পাহাড়িরা এসে নিয়ে যাবে। তারপর কিডনি বেঁচে দিবে।

প্রহরের ব্যাঙ্গতক কথা শুনে অথৈ হেসে বলল,

— হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। এখন চলুন তাড়াতাড়ি যাই।

প্রহর অথৈর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতেই কাপ্তাই লেক এবং ঝুলন্ত ব্রীজ সম্পর্কে বলছে অথৈকে। অথৈ বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে প্রহরের কথা।

কথাগুলো বলতে বলতে প্রহর এবং অথৈর দুজনের ফি ৪০ টাকা দিয়ে ঝুলন্ত ব্রীজের পথে পা বাড়ালো।

— কিসের টাকা দিলেন?

— ঝুলন্ত ব্রীজে ঢোকার সময় কর্পোরেশনের লোকেদের জনপ্রতি ২০ টাকা করে দিতে হয়।

অথৈ আর কিছু বলল না। কারণ ঝুলন্ত ব্রীজের ওপরে আছে এখন ওরা। অথৈ ব্রীজের দুলুনির ভয়ে প্রহরের কনুই শক্ত করে চেপে ধরল। প্রহর অথৈর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ভয় পেয়ো না আমি আছি তো।

ব্যস এই একটি বাক্যেতে কি যেন ছিল! অথৈ সম্মোহিত হয়ে পরল। প্রহরের দিকে তাকিয়ে রইল বেশকিছু সময়। মানুষটাকে যত দেখছে ততই তার প্রতি ভালোলাগাবোধ বেড়েই চলেছে। কিন্তু, এমন তো হবার কথা ছিল না। মাত্র একটি রাতের, একটি বাক্যের জোড়ে কি সবকিছু বদলে গেলো?

—কাপ্তাই লেককে ঘিরেই মূলত রাঙামাটি জেলার পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। এই লেকের উপর রয়েছে বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ। লেকের দুই ধারই পাহাড়-টিলা দিয়ে ঘেরা। ট্রলার ভাড়া করে লেকে ভ্রমণ করা যায়। ট্রলারে করে যাওয়া যায় শুভলং জলপ্রপাতে। পর্যটনপ্রেমী মানুষের কাছে রাঙ্গামাটি জেলার একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পর্যটকদের মোহিত করতে রাঙ্গামাটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। এদের মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত ৩৩৫ ফুট লম্বা ঝুলন্ত ব্রিজ উল্লেখযোগ্য। রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণে আসা সকল পর্যটকই ‘সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি’ হিসাবে খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি দেখতে আসে। কাপ্তাই লেকের বিচ্ছিন্ন দুই পাড়ের পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে রঙিন এই ঝুলন্ত সেতু। এই যে আমাদের পায়ের নীচেই কাপ্তাই লেক। এখানে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়।

প্রহরের কথায় অথৈ তাকালো ডান বামে । আসলেই তো। কি সুন্দর মনোরম দৃশ্য! আকাশের রঙ যেন জলের সঙ্গে মিশে গেছে। লেকের দুই ধারই সবুজাভ পাহাড়-টিলা দিয়ে ঘেরা। আল্লাহর সৃষ্টির প্রশংসা না করে থাকতে পারল না অথৈ। “সুবহানাল্লাহ ” বলে উঠল। প্রহর অথৈর দিকে তাকিয়ে হাসল।

— এই বোটগুলো কোথায় যাচ্ছে?

অথৈর প্রশ্ন শুনে প্রহর নীচে তাকালো। দেখলো বেশ কয়েকটা বোট। তাতে মানুষজনও আছে ঢের।

— কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখাবে। লেকে ভ্রমণের জন্য ব্রিজের নিচে ইঞ্জিন চালিত বোট ঘন্টা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যায়। ওই যে দেখেছো কয়েকটা বোট। তুমি চাইলে একটা বোট ভাড়া করি তারপর কাপ্তাই লেক ঘুরে আসি। কি বলো? যাবে তুমি?

— আরে না না আমি যাব না। আমি সাতার জানি না।

অথৈ ভীষণ ভয় পাওয়া গলায় জবাব দিলো। প্রহর আর জোর করল না। ব্রীজের শেষপ্রান্তে চলে এলো ওরা দুজন। অথৈ বোধহয় খানিকটা ক্লান্ত হলো। প্রহরকে এখনও বেশ ঝরঝরে দেখাচ্ছে।
অথৈ ক্লান্ত গলায় প্রহরকে বলল,

— চলুন কোথাও গিয়ে বসি। আমার পা ব্যাথা করছে।

— মাত্র ব্রীজ পার হয়ে তোমার পা ব্যথা করছে? এখনও তো কিছু দেখলেই না রাঙামাটির!

— আরও কিছু আছে নাকি?

— কতকিছু দেখার বাকি? চলো পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজে যাই। তুমি বসতেও পারবে। আর ওখানকার পরিবেশও চোখ ধাঁধানো। আর একটা বিশেষ কারণ আছে। যেটা ওখানে গেলেই বুঝতে পারবে।

প্রহরের শেষের কথার মানে বুঝতে পারল না অথৈ। ভ্রু কুচকে বলল,

— কিসের বিশেষ কারণ?

— আহ্ অথৈ! আগে চলো তো। তারপর সব জানতে পারবে।

পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজটি (Polwel Park and Cottage) রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ডিসি বাংলো রোডের পাশে কাপ্তাই লেকের ঠিক কোল ঘেঁষে তৈরি করা হযেছে যা সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটির অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র। বৈচিত্রময় ল্যান্ডস্কেপ, অভিনব নির্মাণশৈলী ও নান্দ্যনিক বসার স্থান পলওয়েল পার্কটিকে দিয়েছে ভিন্ন ধরনের এক মাত্রা। নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এবং চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পলওয়েল পার্ক।

মুখোশের আদলে তৈরী করা হয়েছে পার্কটির প্রবেশপথ। প্রবেশপথের পাশেই ভিন্ন আরেকটি মুখোশ আকৃতির টিকেট কাউন্টার। প্রবেশমূল্য, জনপ্রতি ৩০ টাকা।

প্রহর দুটো টিকেট কাটল। অথৈকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলো পার্কের ভেতরে।

পার্কে ঢোকার পর অথৈর চোখ পরল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) কর্তৃক পরিচালিত প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র।

— এখানে কি মেলা হচ্ছে?

— না। এটা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি কর্তৃক পরিচালিত প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র।

প্রহরকে রেখেই অথৈ সেখানে চলে গেলো। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছে। অথৈর পেছনে পেছনে প্রহর। প্রহরের ভীষণ ভালো লাগছে আজ। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততাকে একপাশে রেখে মাঝেমধ্যে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সমর্পণ করা ভীষণ জরুরি। নয়ত, একঘেয়েমি লাগে সবকিছু।

স্টলগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের স্যুভেনির, আদিবাসীদের হাতে বোনা কাপড় ইত্যাদি। অনেকেই বিনোদনের সাথে সাথে প্রিয়জনের জন্য পাহাড়ি স্মৃতি টাকা খরচ করে নিয়ে যাচ্ছে।

অথৈ ওর বাবা এবং মায়ের জন্য দুটি গায়ের চাদর কিনলো। পেছন থেকে প্রহর অথৈকে বলল,

— আমাকে দুটো চাদর পছন্দ করে দিবে অথৈ?

— কেন? আপনি চাদর দিয়ে কি করবেন?

— আম্মি – আব্বুকে দিব।

— উনারা এত সস্তা চাদর গায়ে দেবেন?

অথৈর কন্ঠে ছিল তাচ্ছিল্যতা । প্রহর অথৈর পাশে দাঁড়িয়ে চাদর হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই বলল,

— সবাইকে একই দাঁড়িপাল্লায় মাপতে নেই অথৈ। আমার আম্মি – আব্বু দুজন বিশাল মনের অধিকারী। এই যে বললে না উনারা এত সস্তা চাদর গায়ে দেবেন কিনা? উনারা এই চাদর গায়ে জড়িয়ে থাকবেন৷ কারণ, আমি। আমার দেয়া সকল কিছুই আমার আম্মি এবং আব্বুর কাছে পৃথিবীর সকল কিছুর উর্ধে।

অথৈ চুপ গেছে। প্রহর চাদর দেখছিল। ঠিক তখনি অথৈ দুটো চাদর দেখিয়ে বলল,

— এই দুটো কিনুন। আন্টি আঙ্কেলকে দারুণ মানাবে!

প্রহর মুচকি হেসে অথৈকে ধন্যবাদ জানালো। অথৈ হাসি বিনিময় করল। চাদেরর টাকা পরিশোধ করে প্রহর অথৈকে নিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

অথৈ দেখল শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে কিডস জোন। শিশুদের আনন্দ দিতে এই পার্কে বিভিন্ন রকম রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে।

বাঙালির জীবনের সাথে মিশে থাকা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে কিডস জোনের অপর প্রান্তে তৈরী করা হয়েছে ঢেঁকিঘর আদলের একটি স্থাপনা। গ্রামের নারীদের ঢেঁকিতে ধান ভানার এই ভাস্কর্য গ্রামীণ জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ভাস্কর্যের স্থাপত্য শৈলী এতটাই সুনিপুন, প্রথম দেখায় মনে হতে পারে বাস্তব কোনো দৃশ্য দেখছেন।

অথৈ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছিল সেইসব ভাস্কর্য। এরই ফাঁকে প্রহর অথৈর আড়ালে অথৈর বেশ কয়েকটা ছবি তুলে রাখল।

কিডস জোন থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পেলো রাস্তার পাশে বসার জন্য কিছু বেঞ্চ তৈরী করা আছে। এখানে বসার পর প্রহর অথৈকে ইশারা দিয়ে দেখালো কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য। যা এখানে বসেই চোখে পড়ে। সামনে যতদূর দৃষ্টি যায়, লেকের অথৈ জলের সীমানা দূরের আকাশে গিয়ে মিশেছে। আকাশ আর লেকের নীলের মাঝে পাহাড়গুলো যেন সীমারেখা হয়ে আছে। এর ঠিক পেছনেই তৈরী করা আছে কলসি কাঁখে নারী ভাস্কর্য। তাদের কলসের প্রবাহমান পানিতে তৈরী হয়েছে ঝর্ণা। দিনের আলো নিভে গেলে কৃত্তিম আলোয় এই ঝর্ণা আরও মোহময় হয়ে ওঠে।

— এত সুন্দর কেন রাঙামাটি!

— আমাদের সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি বলে কথা।

— আর কি কি আছে পার্কে?

—-এখান থেকে কিছুটা এগোলেই চটপটি আর ফুচকার দোকান পাবে। অনেকটা খোলা জায়গা জুড়ে চেয়ার টেবিল পেতে বসার ব্যবস্থা। ফুচকা আর চটপটি প্রেমীরা কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য দেখে আর ফুচকা খেয়ে বিকেলটা এখানে কাটানো যায়।
আরও একটু সামনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেই পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া। মুখরোচক খাবারের সাথে আইসক্রিম আর কফিও পাওয়া যাবে এখানে।
ক্যাফেটেরিয়া থেকে সামনে এগোলে ফিশিং পিয়ার। ফিশিং পিয়ার হচ্ছে এমন একটা স্তম্ভ বা প্ল্যাটফর্ম, যেটা উপকূল থেকে শুরু হয়ে লেক/নদী/সমুদ্রের যেখানে পানির গভীরতা অনেক বেশি, এমন দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। আসলে জাহাজ, বড় নৌকা গুলো পানির গভীরতা কম থাকায় তীরে ভিড়তে পারেনা। তাই পানি গভীর থাকে সবসময়, উপকূল থেকে এমন দূরত্ব পর্যন্ত ফিশিং পিয়ার তৈরী করা হয়। যেন জাহাজ, নৌকা গুলো সহজেই সেখানে ভিড়তে পারে এবং নোঙ্গর ফেলে অবস্থান করতে পারে। এখানে দাঁড়ালে কাপ্তাই লেকের দৃশ্য বেশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।
পলওয়েল পার্ক এর একেবারে শেষপ্রান্তে তৈরী করা হয়েছে লাভ পয়েন্ট।

— লাভ পয়েন্ট নাম শুনেছি আমি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড শীলা ওর স্বামীকে নিয়ে গতবার এসেছিল রাঙামাটি। তখন ওরা লাভ পয়েন্ট গিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট অব্দি করে।

— যাবে লাভ পয়েন্টে?

প্রহর হেসেই জিজ্ঞেস করল অথৈকে। হাসিটা ভীষণ রহস্যময় মনে হলো অথৈর কাছে। পরক্ষনেই মনে হলো যে সবই স্বাভাবিক শুধু সে নিজেই গোলমেলে চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

প্রহর এবং অথৈ দাঁড়িয়ে আছে লাভ পয়েন্টে।

—- অথৈ?

— হুম?

— তুমি কি জানো লাভ পয়েন্ট (ভালোবাসার বিন্দু) হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত একটি ভালোবাসার স্মারক বিশেষ। এটি মূলত এক দম্পতির ভালোবাসার স্মরণে নির্মিত হয়েছে।

— না তো? আপনি জানেন কিভাবে? আর কাদের স্মরণে এই লাভ পয়েন্ট তৈরি হয়েছে।

প্রহর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। অথৈর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। সূর্যের আলো অথৈর মুখের ওপরে পরছে। তীব্র বাতাসে বেগে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অথৈর চুল। কপাল জুড়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো অতি যত্নসহকারে নিজের কানের পিঠে গুঁজে রাখল অথৈ। প্রহর অথৈর চোখে চোখ রেখে কম্পিত গলায় বলতে শুরু করল।

—ভালোবাসার মানুষটাকে শক্তভাবে আঁকড়ে রাখতে কতো কিছুই না করে প্রিয় মানুষটি। অনেকেই ছুটে যায় গণকের কাছে কেউবা শরণাপন্ন হন জ্যোতিষীর। এমনও হাজারও পাগলামির ইতিহাস রয়েছে পৃথিবীতে। কতো গল্প-উপন্যাসই সৃষ্টি হয়েছে ভালোবাসার এসব পাগলামো নিয়ে। কিন্তু রাঙামাটিতে ঘটেছিল এক যুগলের প্রেমের করুণ পরিণতি। সদ্যবিবাহিত আলাউদ্দিন-লিমার আলিঙ্গনে মৃত্যুর সংবাদটি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও বেশ আলোচিত-আলোড়িত হয়েছিল।
ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখ। ভাড়া করা নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পর্যটক আলাউদ্দিন পাটোয়ারী তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী আইরিন সুলতানা লিমাকে নিয়ে কাপ্তাই হূদে ঘুরতে বের হন। হঠাত্ ঝড়ের কবলে পড়েন তারা। ঝড়ে নৌকা দুলে উঠলে লিমা ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন। স্ত্রীকে বাঁচাতে আলাউদ্দিনও হূদের জলে লাফিয়ে পড়েন। কাপ্তাই হূদে নিখোঁজ হন তারা।
এ ঘটনার পর দুই দিন ধরে ঐ দম্পতির খোঁজে পুরো কাপ্তাই হৃদ চষে ফেলেন ডুবুরি আর উদ্ধারকারী দল। তৃতীয় দিন সকালে রাঙ্গামাটির অন্যতম পর্যটন স্পট ঝুলন্ত ব্রিজের অদূরে হূদে ভেসে ওঠে দুজনের মৃতদেহ। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ছিলেন তারা। মরণও যেন পারেনি দুজনকে আলাদা করতে। ভালোবাসার এমন বিরল দৃশ্য পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটির মানুষকে আপ্লুত করে।
শুধু এ দম্পতিই নয়, সারা পৃথিবীর সব প্রেমিক-প্রেমিকার চিরন্তন ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে রাঙ্গামাটির এসপি আলমগীর কবিরের উদ্যোগে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনায় নির্মিত হয় “লাভ পয়েন্ট” আলাউদ্দিন-লিমার ভালোবাসার গভীরতা তাদেরকেও যেন ছুঁয়ে যায়। পৃথিবীতে মানব-মানবীর শাশ্বত ভালোবাসার মাহাত্ম্য নতুন করে তারা উপলব্ধি এখন কেউ বা চুপিসারে কেউ বা প্রিয়জনের হাত ধরে লাভ পয়েন্টে ঝুলিয়ে দিয়ে আসে তালা। আর চাবি ছুঁড়ে ফেলে হ্রদের জলে। এভাবেই ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টায় থাকেন প্রিয় মানুষটি। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা। পূর্ণতা পাক আলাউদ্দিন-লিমার মতো অকৃত্রিম ভালোবাসা।

অথৈর চোখে জল চিকচিক করছে। প্রহর অদূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। “ভালোবাসা” যতটা হৃদয়ঘটিত শব্দ। ঠিক ততটাই প্রাণঘাতিও বটে। ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়ার ভয়কে জয় করতে না পেরে কত মানুষ স্বইচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করেছে তার ইয়ত্তা নেই।

হুট করে প্রহর অথৈর সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। অথৈ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রহরের পানে। আশেপাশের অনেকের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু ওরা দুজন। অথৈ চায় না ওর জীবনে এমন একটা মূহুর্ত আসুক। সে চায় না প্রহরকে খালি ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু প্রহরকে পাশে নিয়ে সারাজীবন বয়ে বেড়ানোর মত শক্তিও যে নেই। এই দৃশ্য যেন কেবল তার চোখের ভ্রম হয়। চোখ বন্ধ করে কেবল সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেই যাচ্ছিল। ঠিক তখনি অথৈ শুনতে পেলো…..

#চলবে
#মন_বোঝেনা
#Tahmina_Akhter

১১.

— তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি অথৈ। কবে? কখন? মনের অজান্তে ওমন অঘটন ঘটে গেছে টেরই পেলাম না। তোমার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করা সাধ আছে আমার। বৈধ প্রেম চাই আমার। will you marry me othoi ?

প্রহর অথৈর সামনে হাঁটু গেড়ে প্রেম নিবেদন করল। আশেপাশের অনেক দম্পতি, কিংবা ট্যুরে আসা লোকজন তাদের দুজনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ সিটি বাজাচ্ছে।

প্রহরের ঠোঁটের কোণে হাসি আর অথৈর চোখের কোণে জল। অথৈ চায়নি কখনো ওর জীবনে এমন মূহুর্ত আসুক। কিন্তু, সেই মূহুর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই চলে এসেছে। এই যে প্রহর তার মুখ থেকে একটি “হ্যা” শোনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে এখন তাকে কি জবাব দেবে? কি জবাব দিলে মানুষটা কষ্ট পাবে না। আর সে নিজেকে কি বলে স্বান্তনা দিবে? মানুষটাকে মনের অজান্তে মন দিয়ে ফেলেছে। যেই প্রহর মির্জাকে দুচোখে সহ্য হত না সেই প্রহর মির্জাকে আজ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে তাকে নিয়ে বাকি জীবনের পথ চলা হোক।

— আ’ম সরি। আমি অন্যকারো সাথে কমিটেড।

কথাটি বলে অথৈ দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। প্রহর স্তব্ধ হয়ে গেছে। আশেপাশের সবার মাঝে নেমে এসেছে নীরবতা । অথৈ কাঁদতে কাঁদতে প্রহরকে বলছে,

— আপনি কেন আমাকে পছন্দ করলেন? আমার যে ভীষণ অপরাধ বোধ হচ্ছে।

প্রহরের মনে এতদিন একটু হলেও আশা ছিল অথৈকে সে পাবে। কোনো না কোনো একদিন অর্জন করতে পারবে। কিন্তু, আজ সেই সব আশা সবটা ধুলোয় মিশে গেছে। প্রহর উঠে দাঁড়ালো। চোখের কোণে জমে আসা জলকে মুছে ফেলল। অথৈর সামনে এসে শান্ত সুরে বলল,

— ডোন্ট ক্রাই অথৈ। প্লিজ কান্না করো না। তোমার মাঝে অপরাধবোধ থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। আমিই পাগল! কোনো কিছু না বোঝে শুনেই তোমাকে মন দিয়ে বসেছি। তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো অথৈ?

শেষের কথাগুলো অথৈর দুই বাহু ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল। অথৈ মুখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে প্রহরের চোখের দিকে তাকালো। দুজনের চোখাচোখি হলো। দুজনের চোখই ভেজা। অথৈ আবারও হু হু করে কেঁদে ফেলল। প্রহরের বুক ভেঙে আসছে। ওর জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং বিশ্রী মূহুর্ত বুঝি আজকের দিনে অথৈর চোখে জল দেখায় হলো। যেই মানুষটাকে বুকের অতি সুপ্ত জায়গায় লুকিয়ে ভালোবেসে রেখেছে। সেই মানুষটার চোখের পানি কি করে সহ্য করবে প্রহর?

প্রহর অথৈর চোখের পানি মুছে দিলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অথৈকে বলল,

— আমাদের ফিরতে হবে অথৈ। সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

প্রহর সরে দাঁড়ালো। অথৈ আকাশের দিকে তাকালো। সন্ধ্যা নামছে পৃথিবীর বুকে। পূর্ব আকাশে রক্তিম আলোয়ে ভরে উঠেছে। আজকের বিকেলটা কেমন বিষন্নতায় ঘেরা! অথৈ আর কিছু ভাবতে পারল না। ওর দুচোখ আবারও জলে ভরে উঠল।

প্রহর অথৈকে সঙ্গে নিয়ে তবলছড়ী বাজারে উদ্দেশ্য রওনা হলো। আসার পথে যতটা উৎফুল্ল ছিল দুজন। ফিরে যাবার পথে ততটাই বিষাদে ভরে গেছে তাদের জীবনে। প্রহর জানে না অথৈবিহীন জীবন কি করে কাটবে? আর অথৈ ভাবছে কোন বাঁকে এসে পৌঁছেছে ওর জীবন?

বাসে উঠার পর অথৈ ভেবেছিল প্রহর হয়ত ওর পাশে বসবে না। কিন্তু, অথৈর ধারণাকে ভুল প্রমান করে প্রহর অথৈর পাশের সীটে বসে। অথৈ যখন প্রহরের দিকে তাকিয়েছিল তখন প্রহর অম্লান বদনে বলল,

— আমাদের দুজনের সফর এইখান থেকে সমাপ্তি হবে। জানি তোমাকে পাব না। তোমার পাশে বসার এই সুযোগটাকে হারাতে চাই না। শুধু আজকের এই সফরকাল পর্যন্ত আমাকে সহ্য করো। এরপর, আর কখনোই তোমাকে জ্বালাতে আসব না অথৈ।

অথৈ ওর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে! কি বলবে প্রহরকে? কিছু কিছু মূহুর্ত কেন অসহায় করে তোলে একটি মানুষকে? আজকের মত এত অসহায়বোধ কখনো কি কাজ করেছে অথৈর মাঝে?

পুরো রাস্তা জুড়ে দুজনের মাঝে কেবল নীরবতা ছিল। যাত্রাবিরতিতে অথৈ নামল না। প্রহর নেমেছে বাস থেকে। প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে কেবল দু’ফোটা চোখের জল ফেলল৷ চন্দ্রবিহীন বিষন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আমি আপনাকে ডেকে কখনো নিরাশ হইনি। আমি চাইনি অথৈ তার বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিক। আমি চেয়েছি ও আমায় ভালোবেসে গ্রহণ করুক। আমি ব্যর্থ হয়েছি। অথৈকে আমি কখনোই পাব না। যদি তাকে নাই পাব তবে কেন ওর জন্য আমার হৃদয় হাহাকার করে? কেন ওকে পাব না জানার পর থেকে অস্থির হয়ে যাচ্ছি? আপনি আমাকে এতটাই পর করে দিলেন ইয়া আল্লাহ? আমার মনের কথা কি আপনি বুঝতে পারছেন না? আপনি তো আপনার বান্দার মনের খবর এমনিতেই জেনে যান।

প্রহরের চোখের জলে গাল ভিজে যাচ্ছে। যদি জানত ভালোবাসার তাপে কেবল জ্বলতে হয় তাহলে কখনোই কাউকে মন দেয়ার দুঃসাহস দেখাতো না।

যাত্রাবিরতির পর্ব শেষ হবার পর প্রহর বাসে উঠে এলো । সীটের কাছে আসতেই দেখতে পেলো অথৈ ঘুমিয়ে আছে। খুব সাবধানে সীটে বসল। ঘুমন্ত অথৈর দিকে তাকিয়ে প্রহর মনে মনে বলেছে,

— তোমাকে আর কোনো বাঁধনে আঁটকে রাখব না। ঢাকায় ফিরে তোমাকে ডিভোর্স দিব। মাস শেষ হতে আর চারদিন বাকি। চারদিন পর থেকে তোমাকেও আর দেখতে পারব না। তোমার চাকরির সময়সীমাও যে শেষ হয়ে আসছে।

সকাল সাতটায় বিগ ওশান অফিসের সামনে সব বাস এসে থামল। অথৈর পাশে প্রহর নেই। প্রহর আগেই বাস থেকে নেমে পরেছে। অথৈ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাস থেকে নেমে পরেছে। অফিসের গেটের কাছে পরিচিত মুখ দেখে এগিয়ে যায় সেদিকে। আলফাজ সাহেব এসেছেন। অথৈকে দেখে এগিয়ে গেলেন। অথৈর ওর আব্বুকে দেখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। আলফাজ সাহেব মেয়ের হটাৎ কান্না দেখে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

— কি হয়েছে অথৈ? এভাবে কাঁদছিস কেন? বল আব্বুকে কি হয়েছে?

— কিছুই হয়নি। তোমাকে দেখে একটু ইমোশনাল হয়ে পরেছি।

কথা ঘুরিয়ে ফেলল অথৈ। ওর আব্বুকে কি করে বলবে যে? আব্বু আমি প্রহরের জন্য কাঁদছি। আপনার পছন্দ করা পাত্রকে আমার চাই না। আমি প্রহরকে চাই।

আলফাজ সাহেব মেয়ের কথায় সন্তুষ্ট হলেন না। তবে ব্যাপারটাকে বেশি ঘাটলেন না। একটি রিকশা ডেকে বাড়ির পথে রওনা হলেন।

****★******

— আম্মি?

— কিরে আব্বু! তুই এসে পরেছিস?

নাজিফা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ছেলের মুখে হাত দিয়ে বলল। প্রহর মলিন হেসে বলল,

— আমি একটা কথা বললে রাখবে?

নাজিফার কপালে চিন্তার ভাজ পরল। কি এমন কথা? রাঙামাটি থেকে বাড়িতে এসেই কি বলতে চাইছে প্রহর? আবার কোনো বিপদ হলো না তো?

— আম্মি? আপনি রিজওয়ান আঙ্কেলকে বলুন অথৈর সঙ্গে আমার ডিভোর্স লেটার তৈরি করতে।

— ইন্না-লিল্লাহ! কি বলিস এসব প্রহর! অথৈকে ডিভোর্স দিবি কেন? আল্লাহ চাইলে তোরা দু’জন সংসার করবি।

কথাগুলো বলতে বলতেই নাজিফা প্রহরের মলিন মুখখানা দেখে যা বোঝার বুঝে ফেলল। ছেলের ওপর দিয়ে আজ বহু ঝড় গিয়েছে। বড়ো ধরণের কিছু ঘটেছে তাদের আড়ালে। যেই ছেলে অথৈকে দেখার পর থেকে কেবল অথৈকে ওর পৃথিবী বানিয়ে রেখেছে। সেই অথৈকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রহর!

অথৈদের বাড়িতে…

অথৈ সেই যে ওর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে এখনও দরজা খোলেনি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল তবুও দরজা খুলছে না অথৈ। সাবিনা বেশ কয়েকবার অথৈকে ডেকে গিয়েছে কিন্তু অথৈর দরজা খোলার নাম-গন্ধ নেই। এবার সাবিনার বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মেয়েটা ঠিক আছে তো? রাঙামাটি থেকে আসার পর এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন কে জানে? প্রহরকে কল করে জিজ্ঞেস করবে নাকি? না থাক প্রহর যদি আবার কিছু মনে করে! সাবিনা আর প্রহরকে কল করল না। আলফাজ সাহেবের নাম্বার কল করল। আলফাজ সাহেবকে বাড়িতে আসার কথা বলেই কল কেটে দিলো সাবিনা। মেয়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েকে ডাকছিলেন। ঠিক তখনি কারো গগনবিদারী চিৎকার শুনে ভয়ে সাবিনার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল।

সাবিনা গিয়ে অথৈর দরজা ধাকাচ্ছে আর বলছে…

#চলবে