#মন_ভেজা_শ্রাবণে
#পর্ব_২১(অন্তিম)
—————————-
মিহু,মাহতিবের দশ বছরের জে’ল হয়। প্রতারণা, খু’নে’র চেষ্টা, গহনা লুট সব রকমের আইন জারি করা হয় ওদের ওপর। পুলিশের তদারকিতে ওরা নিজেদের অ’প’রা’ধ স্বীকার করে নেয়। ওদের স্বীকারোক্তি শুনে সবথেকে বেশি শকট হয়েছিল আদ্র। কারণ মিহুর সকল ক্ষোভ আদ্র’র ওপর ছিল। তাই সে এসব করেছে। আদ্রর সঙ্গে যে বছর মিহুর প্রথম দেখা হয়েছিল তখন থেকেই মিহু আদ্রকে পছন্দ করতে শুরু করে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে প্রগাঢ় অনূভুতিতে ছেঁয়ে যায়। একসময় সে আদ্রকে প্রপোজ করে বসে কিন্তু আদ্র তাকে রিজেক্ট করে। তখন থেকেই মিহুর মনে আদ্রর প্রতি ক্ষোভ জন্মে। সেই ক্ষোভ আরও গভীর হয় যখন সে জানতে পারে আদ্র অন্তির জন্য তাকে রিজেক্ট করেছে। সকলের সামনে ক্ষমা চেয়ে বন্ধু সেজে থাকলেও মনে মনে সে চাইত আদ্রর চরম স’র্ব’না’শ। তার একটাই উদ্দেশ্য ছিল আদ্র যাতে কখনো তার ভালবাসা নিয়ে সুখী হতে না পারে। এজন্য সে তার ভাইকে ইউজ করে নিহাতকে হাত করে। তারপর নিহাতের দূ’র্যো’গের সময় তার ডক্টরকে হাত করে এতদিন ধরে ওকে ভুল ট্রিটমেন্ট করায়। যাতে করে নিহাতের সবকিছু মনে না পড়ে। সেই সুযোগে সে নিহাতকে আদ্র’র ঘাড়ে গছিয়ে দেয়৷ কিন্তু দিনশেষে সব খেলা শেষ হয়ে যায়। হয়ে যায় রহস্যের উন্মোচন। কেটে যায় অমানিশার প্রহর দেখা মেলে পূর্ণিমা তিথি।
———-
দীর্ঘ একটা সময় পেড়িয়ে সকলেই এখন নিজেদের মতো জীবন যাপন করছে। আদ্র পড়াশোনা শেষ করে একটা জব করছে। অন্তি এবারে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে এক্সাম দিয়েছে। জীবনের ঝড়-ঝাপটা পেড়িয়ে আজ তাদের বিয়ের রাত। অর্থাৎ বাসর রাত। পরিবারের সবার ইচ্ছেতেই এক হয় তারা।
ফুলের সুবাসে সুরভিত কক্ষটিতে লাল বেনারসি গায়ে জড়িয়ে গুটিশুটি মে’রে বসে আছে অন্তি। থেকে থেকে বক্ষে মৃদু কম্পন জানান দিচ্ছে আজ তার বাসর রাত। সেই শুরু থেকে আদ্র’র সঙ্গে তার রিসেশনের প্রতিটি মুহুর্ত মনে করে একা একাই আনন্দ পাচ্ছে।
অবশেষে দরজার কর্কশ শব্দ ভেসে এলো। আদ্র এসেছে। বর বেশে তাকে কেমন লাগছে জানতে ইচ্ছে হলো অন্তির। সকাল থেকে একবারও দেখা হয়নি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্তি দেখতে পারেনি। লজ্জায়, আড়ষ্টডায় মিয়িয়ে রয়েছিল সর্বক্ষণ। বেচারা অন্তি এবারে আর নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে ঘোমটার আড়াল থেকে এক পল উঁকি দিল। পরপরই চোখাচোখি হলো চারটি চোখ। অন্তি দৃষ্টি সরিয়ে নিল। পুনরায় ঘোমটা টেনে বসল। আদ্র ধীরুজ গতি অবলম্বনে এগিয়ে আসতে লাগল। আদ্র যত নিকটে আসছে অন্তি ততই মূর্তির ন্যায় শক্ত রুপ ধারণ করছে। জলজ্যান্ত পাথর মূর্তি!
আদ্র বিছানার কাছে আসতেই অন্তি দ্রুত নেমে পড়ে। মাথা ঝুকিয়ে আদ্র’র পায়ে হাত রেখে সালাম করতে যায়। দেখা যায় আদ্র তাকে থামিয়ে দিয়েছে মাঝপথেই। অন্তির মাথা থেকে একটানে ঘোমটা সরিয়ে ফেলে। চিবুকে হাত রেখে কোমল মুখশ্রী তুলে ধরে ওপরে। চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টি। অন্তি চোখ বন্ধ করে থরথর করে কাঁপছে। কেন কাঁপছে জানা নেই তবে সে চেয়েও স্থির থাকতে পারছে না। অকস্মাৎ আদ্র এক ধাক্কায় ওকে বিছানায় ছুড়ে ফেলল। অন্তি ধপ করে চোখ খুলে ফেলল। আরেকবার ধাক্কা লাগল তার ছোট্ট হৃদয়ে আদ্র’র গভীর দৃষ্টি দেখে। আদ্র একটানে নিজের গা থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে ফেলল। এটা দেখে দ্বিগুণ কেঁপে উঠল অন্তি। আদ্র ঝাপিয়ে পড়ল অন্তির ওপর। ছোট্ট কোমল শরীরটাকে নিজের আয়ত্তে এনে ফিসফিসিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“কোনো নিয়ম পালনের দরকার নেই। এই আদ্র কখনোই কোনো নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল না। শুধু থমকে ছিল তোমাতে।”
অন্তি খামচে ধরল বিছানার চাদর। ওই কন্ঠে কী যেন মিশে গেছে। তীব্র নেশা যাতীয় কিছু হয়তো। যা অন্তিকে অজানায় পৌঁছে দিচ্ছে। আদ্র একে একে অন্তির শরীর থেকে সব গহনা খুলে ফেলল। প্রতিটি গহনা খুলে খুলে সে স্থানে এঁকে দিল গাঢ় চুম্বন। অন্তি প্রতিবারই শিউরে উঠল।
আদ্র এক হাতে টেবিল ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিল। পুরো কক্ষ জুড়ে এখন আঁধারের ঘনঘটা। কেবল শোনা যাচ্ছে দুজন মানুষের উন্মাদনাময় নিঃশ্বাস। শোনা গেল আদ্রর নেশাক্ত সেই কন্ঠস্বর,
“আচ্ছা বউ! বৃষ্টির পানিতে তো শরীর ভেজানো যায়। মন ভেজানো যায় কী? যায় না। প্রেয়সীর শীতল পরশই একমাত্র মনের মলম। সেই স্পর্শেই সিক্ত হয় হৃদয়। চলো তবে আজ দুজনে হারাই।”
আজ এই #মন_ভেজা_শ্রাবণে,
ভেসে যাব দুজনে
———-
সমাপ্ত…..
সাদিয়া আফরিন নিশি ®