মন রাঙানোর পালা পর্ব-০৪

0
6

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার

মেজর অভিক চৌধুরী তখনো সুনীতিকে শক্ত করে ধরেছিল। সুনীতি এমনিতেই এই লোকটাকে ভয় পায়। এখন তার এমন ধমক শুনে এবং এত কাছে থেকে ভয় বাড়ল। কিছুতেই কিছু বলতে পারছিল না। অনেক কষ্টে বলে,”আমাকে ছে…ছেড়ে দিন।”

মেজর অভিক সুনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। এরইমধ্যে সামিউল খন্দকারও সুনীতিকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে চলে এসেছে। তিনি সুনীতিকে দেখতে পাওয়া মাত্রই ছুটে এলেন। বেশ রাগী সুরে বললেন,”কোথায় হারিয়ে গেছিলি তুই? এত কেয়ারলেস হলে চলে?”

মেজর অভিক সামিউল খন্দকারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনার মেয়েকে একটু চোখকান খোলা রেখে চলতে বলবেন আঙ্কেল। আরেকটু হলেই পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙত।”

সামিউল খন্দকার আতকে ওঠেন। সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”কি হয়েছে সুনীতি?”

সুনীতি বলে,”আসলে বাবা আমি তোমাদের খুঁজে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম..তাই দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম। সেই সময় উনি এনে আমাকে বাঁচিয়েছেন।”

সামিউল খন্দকার বলেন,”তুই আসলেই কখনো বড় হবি না।”

অতঃপর অভিকের দিকে তাকিয়ে বলেন,”তোমাকে অনেক ধন্যবাদ অভিক।”

“ধন্যবাদ দিতে হবে না আঙ্কেল। কাউকে বিপদে দেখলে আমি এমনিই সাহায্যে এগিয়ে যাই।”

সালমা খন্দকারও ততক্ষণে সাজিদকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। সাজিদ বলে ওঠে,”কি হয়েছে এখানে?”

এতদিন পর সেই প্রিয় কন্ঠস্বরটি শুনে সুনীতির হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। চোখ ঘুরিয়ে সাজিদের দিকে তাকাতেই তার মন আবেগের জোয়ারে ভেসে যায়। কতদিন পর এই প্রিয় মুখশ্রীর দর্শন ঘটল। সুনীতি হেসে সাজিদের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”কেমন আছ সাজিদ ভাই?”

সাজিদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। থতমত খেয়ে বলল,”হ্যাঁ, ভালোই৷ তুমি কেমন আছ?”

“আমিও ভালো আছি।”

“তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেলাম(মনে মনে)”

সালমা খন্দকার সাজিদ ও সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”এখানেই কি এতদিনের জমানো সব কথা বলবি নাকি? বাসায় ফিরে বিশ্রাম নে। তারপর তো অঢেল সময় পাবি কথা বলার।”

একথায় সুনীতি লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। সাজিদের চেহারায় ফুটে উঠল বিরক্তির আভাস।

এমন সময় আরাফাত সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে উঠল,”অভিক তুই এখানে? আর আমি চারিদিকে তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।”

অভিক আরাফাতের কাছে এগিয়ে যায়। তারা দুজনে একে অপরকে আলিঙ্গন করে নেয়। সামিউল খন্দকার অভিকের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”অভিক, তোমাকে আরো একবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের এখন বাসায় যেতে হবে। ”

অভিক বলে,”ঠিক আছে, আঙ্কেল। কোন ব্যাপার না।”

অভিকের দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকান সামিউল খন্দকার। তার অভিককে ভীষণ পছন্দ ছিল। ছেলেটা যেমন নির্ভীক, পরোপকারী ঠিক তেমনি সুন্দর ব্যক্তিত্বের। এমন কাউকে নিজের জামাই হিসেবে পেলে মন্দ হতো না। কিন্তু কি আর করার। তার মেয়ে খাটি হিরের কদর বুঝল না। সামিউল খন্দকার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।

এদিকে আরাফাতের চোখ যায় সাজিদের দিকে। সাজিদকে দেখে তার ভীষণ চেনা চেনা লাগে। সবাই চলে যাবার পর আরাফাত অভিককে বলে,”আচ্ছা, এখানে যেই ছেলেটা ছিল তুই কি তাকে চিনিস?”

অভিক বলল,”না, হয়তো সামিউল আঙ্কেলের রিলেটিভ হবে। কেন বল তো?”

“ছেলেটাকে আমার কেমন চেনা চেনা লাগল। মনে হয় আগে কোথাও দেখেছি।”

“যতদূর বুঝলাম উনি নিউইয়র্ক থেকেই এসেছেন। তাই হয়তো তোর চেনা চেনা লাগছে।”

“তাই হবে হয়তো।”

কিন্তু আরাফাতের মনে একটা দ্বিধা থেকেই যায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সামিউল খন্দকার ও সুনীতি সাজিদদের বাসায় এসেছে। এতদিন পর ছেলেকে পাশে পাওয়ায় সালমা খন্দকার তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে নিজের ভাই-ভাইঝির যত্নেও তিনি ত্রুটি রাখতে চান না। সাজিদ ফ্রেশ হতে নিজের কক্ষে চলে যেতেই সালমা খন্দকার সামিউল খন্দকারের পাশে সোফায় বসে পড়লেন। অতঃপর বললেন,”তোকে একটা জরুরি কথা বলার ছিল।”

“জ্বি,আপা। বলুন?”

“তুই তো জানিস সাজিদ যেই কোম্পানিতে জব করে সেখান থেকে ছুটি ম্যানেজ করা কত টাফ। ও মাত্র এক সপ্তাহের ছুটি জোগাড় করেছে অনেক কষ্টে। এই ছুটি শেষ হয়ে গেলে আগামী এক বছর আর কোন ছুটি পাবে না।”

“কি বলছেন আপা? তাহলে ওদের বিয়েটা হবে কখন?”

“সেই ব্যাপারেই তোর সাথে কথা বলতে চাইছি। আমি ভাবছিলাম, এই এক সপ্তাহের মধ্যেই ওদের বিয়েটা করিয়ে দেব।”

সামিউল খন্দকার অবাক হয়ে যান বোনের এমন প্রস্তাব শুনে। হতবাক সুরে বলেন,”কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে এত কিছু কিভাবে সম্ভব?”

“সম্ভব। দেখ, বিয়েটা এত জাকজমকভাবে দিতে চাইছি না। এমনি কয়েকজন পাড়া প্রতিবেশী আর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনই শুধু থাকবে। আর আয়োজন নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি অলরেডি একটা কমিউনিটি সেন্টারে কথা বলে রেখেছি। ওরা সব ডেকোরেটেড করে দেবে।”

“আমি বুঝতে পারছি আপা৷ কিন্তু সুনীতি আমার একমাত্র মেয়ে। ওর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল।”

“আহ, সামিউল। এভাবে বলছিস কেন? বিয়ে হলো একটা পবিত্র সম্পর্ক। এখানে এতো আনুষ্ঠানিকতার কি আছে? সুনীতি তোর কি মত? এই এক সপ্তাহের মাঝে বিয়ে হলে তোর কি কোন অসুবিধা আছে?”

সুনীতি বলে,”না,আমার কোন অসুবিধা নেই।”

“তাহলে তো হয়েই গেল।”

সামিউল খন্দকার বললেন,
“আমি বাসায় ফিরে নয়নার সাথে কথা বলে আপনাকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতি বাসায় ফিরে সর্বপ্রথম তার বান্ধবী অহনাকে সুখবরটা দিলো। যা শুনে অহনা খুশি হয়ে বললে,”কি বলিস দোস্ত? তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই তোর বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি?”

“হ্যাঁ, আম্মু আব্বুও রাজি হয়েছে। আগামী শুক্রবার আমার এবং সাজিদ ভাইয়ের বিয়ে।”

“তুই নিশ্চয়ই খুব খুশি?”

“অনেক।”

“খুশি তো হবারই কথা। নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে চলেছিস। আচ্ছা তোর সাজিদ ভাইয়ের একটা পিক সেন্ড কর তো।”

অহনার কথামতো সুনীতি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাজিদের খুব সুন্দর একটা ছবি পাঠিয়ে দিলো। অতঃপর বলল,”কেমন?”

“ভালো আছে কিন্তু মেজর অভিক এর থেকে ভালো ছিল।”

সুনীতি অহনার এমন কথায় বিরক্ত হয়। ঐ গম্ভীরমুখো লোকটার সাথে কিনা তার সদা হাস্যোজ্জ্বল সাজিদ ভাইয়া পিছিয়ে! তাই তো প্রতিবাদী সুরে বলে,”কোন দিক দিয়ে সাজিদ ভাইয়া মেজর অভিকের থেকে পিছিয়ে?”

“দেখ, তোর সাজিদ ভাইয়ার গায়ের রং একটু ফর্সা এবং হাসিখুশি এটাই যা। কিন্তু মেজর অভিক শ্যাম হলেও তার মুখের গঠন কিন্তু অনেক সুন্দর তাছাড়া মেজর অভিক অনেক লম্বাও।”

“আমি যাকে ভালোবাসি আমার চোখে সেই সবথেকে সুন্দর।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তোর সাথে তর্ক করতে চাই না। তা তোর সাজিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিস?”

“ওহ, ভালো কথা মনে করালি। ফুফু নাম্বারটা দিয়েছিল। এখন কল করব ভাবছি।”

“আচ্ছা কর।”

সুনীতি অহনার ফোন কেটে দিয়ে সাজিদকে কল দিলো৷ কয়েকবার রিং হবার পর সে ফোনটা রিসিভ করে বলল,”কে?”

“সাজিদ ভাইয়া, আমি সুনীতি।”

“ওহ, আসলে আমি অনেকক্ষণ জার্নি করেছি তো তাই একটু টায়ার্ড লাগছে। এখন একটা লম্বা ঘুম দেব। কাল কথা বলি?”

সাজিদের এমন কথায় সুনীতির খারাপ লাগলেও সে মেনে নেয়। বলে,”আচ্ছা ভাইয়া। আপনি বিশ্রাম করুন। শুভ রাত্রী।”

সাজিদ ফোন রেখে দিয়ে ফোনটা দূরে ছুড়ে বলে,”উফ…আমি কিভাবে এই মেয়েটাকে মেনে নেব? আমার মনে যে শুধু ইভা আছে!”

আর এদিকে সাজিদের কথায় কষ্ট পেয়ে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সুনীতি। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনাজলের স্রোত।

To be continue…….